আমার একজন খালা গত তিন বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করেন। এরপর থেকে তিনি আর পূর্ণ জ্ঞান ফিরে পাননি। অনেক কিছুই মনে রাখতে পারতেন না। মাঝেমধ্যে আপন-জনদেরকেও চিনতে তার বেগ পেতে হত। নামাযের সময় হলে কেউ মনে করিয়ে দিলে অজু করে এসে নামাযে দাঁড়াতেন। তবে কয় রাকাত পড়ছেন, সিজদা কয়টি করছেন মনে রাখতে পারতেন না। অর্থাৎ শুদ্ধভাবে কখনও নামায পড়তে পারতেন না। এ অবস্থায় তিন বছর যাওয়ার পর গত কিছুদিন আগে তিনি এন্তেকাল করেন। জানতে চাচ্ছি, তার উক্ত দীর্ঘ সময়ের নামাযগুলোর হুকুম কী? এ নামাযগুলোর ফিদয়া দিতে হবে কি?
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার খালার ব্রেন স্ট্রোকের পর তিনি যেহেতু পূর্ণ জ্ঞান ফিরে পাননি বরং একেবারে অস্বাভাবিক ছিলেন তাই তার ঐ সময়ের নামাযের জন্য আপনাদের কিছুই দিতে হবে না। কারণ, এমন অবস্থায় নামায ফরয থাকে না।
-জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪২৩; রদ্দুল মুহতার ২/১০০
আমি একজন মুয়াযযিন। মসজিদের নির্দিষ্ট কোনো খাদেম না থাকায় প্রায়ই মসজিদের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে দেখা যায়, কোনো কোনো সময় আযানের পূর্বে অযু করার সুযোগ হয় না। তাই অযু ছাড়াই আযান দিতে হয়।
হুযুরের নিকট জানতে চাই, অযু ছাড়া আযান দেওয়ার হুকুম কী?
অযু অবস্থায় আযান দেওয়া মুস্তাহাব। একাধিক হাদীস-আছারে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তবে আযান সহীহ হওয়ার জন্য অযু শর্ত নয়। অযু ছাড়া আযান দিলেও আযান সহীহ হয়ে যাবে।
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,
لاَ بَأْسَ أَنْ يُؤَذِّنَ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ.
অযু ছাড়া আযান দেওয়া নিষিদ্ধ নয়। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২২০২
তবে অযু ছাড়া আযান দেওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করা যাবে না।
-সুনানে কুবরা, বায়হাকী ১/৩৯৭; কিতাবুল আছল ১/১১০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৩
আমাদের মসজিদের অযুখানাটি খুবই ছোট ও সংকীর্ণ। নামাযের সময় খুব ভীড় হয়। এদিকে মসজিদ সংলগ্ন একটি পারিবারিক কবরস্থান আছে। আমরা চাচ্ছি, কবরস্থানের উপর ছাদ দিয়ে অযুখানা নির্মাণ করতে।
জানতে চাই, পারিবারিক কবরস্থানের উপর অযুখানা নির্মাণের কোনো সুযোগ আছে কি?
পারিবারিক কবরস্থানের উপরও ছাদ বা তলা বৃদ্ধি করে অযুখানা বানানো জায়েয হবে না। কেননা কবরের উপর ছাদ দেওয়া বা ভবন নির্মাণ করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ থেকে সুস্পষ্ট নিষেধ করা হয়েছে। অবশ্য কবরস্থানটি যদি ওয়াকফিয়া না হয়; বরং ব্যক্তি মালিকানাধীন হয় আর কবরস্থানের যে অংশের উপর অযুখানা বানাতে চাচ্ছে সেখানে কোনো কবর না থাকে বা সেখানের কবর পুরাতন হয়ে থাকে তাহলে জায়গার মালিকের অনুমতিক্রমে কবরকে নিশ্চিহ্ন করে সেখানে অযুখানা বানানো যাবে।
আর কবরস্থান ওয়াকফকৃত হলে সেখানে কোথাও -চাই কবর থাক বা না থাক- অযুখানা বানানো জায়েয হবে না।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭০; উমদাতুল কারী ৪/১৭৪, ১৭৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭
আমি একদিন বাসায় অযু করি। পানির লাইনে পানি কম থাকায় পুরো অযু শেষ করতে পারিনি। পা ধোয়ার আগেই পানি শেষ হয়ে যায়। এর দশ/বারো মিনিট পর পানি আসে। তখন আমি শুধু পা ধুয়ে নিই। ততক্ষণে আমার হাত মুখ শুকিয়ে গেছে। আমি যে এভাবে অযু করেছি তা কি সহীহ হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পা ধুতে বিলম্ব হলেও আপনার অযু হয়ে গেছে। তবে অযুর ক্ষেত্রে সুন্নত হল, এক অঙ্গ শোকানোর আগেই পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করা। তাই বিনা ওজরে এমনটি করা যাবে না। ওজর বশত এমনটি হলে কোনো সমস্যা নেই।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/১১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮
একদিন আমার ছোট ভাই চাকু দিয়ে ফল কাটার সময় হাত কেটে ফেলে। রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়ার আগেই টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলে। এভাবে দু’ তিনবার করার পর সেভলন লাগালে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়। জানার বিষয় হল, উক্ত অবস্থায় কি ওর অযু ভেঙেছে?
হাঁ, তার অযু ভেঙ্গে গেছে। কেননা গড়িয়ে পড়া পরিমাণ রক্ত বের হলেই অযু ভেঙ্গে যায়। টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলার কারণে গড়িয়ে না পড়লেও তার পরিমাণ যদি বেশি হয় তাহলেও অযু ভেঙ্গে যাবে।
-ফাতাওয়া খনিয়া ১/৩৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৫
একদিন আমি একটি বড় গামলা নিচে রেখে অযু করি। পরে আমার ছোট ভাই এসে সেই গামলার পানি দিয়ে অযু করে। তার সেই অযু সঠিক হয়েছে কি? সেই অযু দ্বারা যে নামায আদায় করেছে তা পুনরায় আদায় করতে হবে কি?
আপনার ভাইয়ের অযু হয়নি। কেননা অযুতে ব্যবহৃত পানি দ্বারা পুনরায় অযু করা যায় না। সুতরাং তার অযু যেহেতু হয়নি তাই ঐ অযু দ্বারা যে নামায পড়েছে তাও আদায় হয়নি। পুনরায় তা পড়ে নিতে হবে।
-কিতাবুল আছল ১/২০; মাবসূত, সারাখসী ১/৪৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২; বাদায়েউস সানায়ে ১/২০৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৮১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৮৬
একদিন মসজিদে গিয়ে দেখি জামাত শুরু হয়ে গেছে। তাই দ্রুত অযু করতে শুরু করি। তখন আমার হাতে ২টি আংটি ছিল। তাড়াহুড়োর কারণে সেগুলো খুলতে মনে ছিল না। সেগুলোসহই স্বাভাবিকভাবে অযু করি। পরে মনে হলে সন্দেহে পড়ে যাই যে, আমার অযু হয়েছে কি না। তবে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ায় নামায পুনরায় পড়িনি। আমার উক্ত অযু ও নামায হয়েছে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আংটি দুটি যদি এত ঢিলেঢালা হয় যে, খোলা বা নাড়াচাড়া করা ছাড়াই উভয় আংটির স্থান ভিজে যায় তাহলে অযু হয়ে গেছে। আর যদি কোনো এক আংটি বা উভয়টি এত সংকীর্ণ হয় যে, নাড়াচাড়া করা ছাড়া পানি ভেতরে যায় না তাহলে অযু হয়নি। এমনটি হয়ে থাকলে আপনাকে ঐ নামায আবার পড়ে নিতে হবে। হযরত আবু তামীম জায়শানী রাহ. থেকে বর্ণিত আছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. যখন অযু করতেন আংটি নাড়াচাড়া করতেন। আবু তামীমও তা করতেন। ইবনে হুবায়রাও তা করতেন।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১/৩৭১ (৪৫৬); মাবসূত, সারাখসী ১/১০; আদ্দুররুল মুখতার ১/১২৬; আলবাহরুর রায়েক ১/১৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৪২৮
রাশেদ একদিন কল ছেড়ে অযু করছিল। অযুর পানিগুলো একটি বালতিতে জমা হচ্ছিল। অযু শেষ হতেই ট্যাংকের পানিও শেষ হয়ে যায়। তার কাপড়ের একটি অংশে নাপাকি লেগে ছিল। এখন কি সে বালতির জমা পানি দিয়ে উক্ত কাপড় পবিত্র করতে পারবে?
হাঁ, বালতির ঐ জমা পানি দিয়ে কাপড় পবিত্র করা যাবে। কারণ অযুর ব্যবহৃত পানি দ্বারা নাপাকি দূর করা জায়েয। কিন্তু এ পানি দ্বারা অযু-গোসল করা জায়েয নয়।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪১; আলবাহরুর রায়েক ১/৯৬; মারাকিল ফালাহ ৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩০৯
এক ব্যক্তি তাড়াহুড়ো করে অযু করে এসে নামাযে দাঁড়িয়ে গেছে। পরক্ষণেই তার মনে হয়েছে সে মাথা মাসাহ করেনি। এখন সে কী করবে? উল্লেখ্য যে, স্মরণ হওয়ার পরও তার হাত-মুখ, দাঁড়ি ইত্যাদি অযুর অঙ্গগুলো ভেজা ছিল। হাতের অবশিষ্ট ভেজা দিয়ে বা অন্য অঙ্গ থেকে হাত ভিজিয়ে মাথা মাসাহ করে নিলে কি সঠিক হত?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটি নামায ছেড়ে দিবে। অতপর নতুন পানি দ্বারা হাত ভিজিয়ে শুধু মাসাহ করে নিবে। এরপর নামাযে শরিক হবে। দাঁড়ি বা অন্য কোনো অঙ্গ ভিজা থাকলেও তা দ্বারা হাত ভিজিয়ে মাসাহ করলে মাসাহ সহীহ হবে না। উল্লেখ্য অযু করতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করা সমীচীন নয়। মনোযোগ দিয়ে অযু করা উচিত। যেন কোনো অঙ্গ বাদ না পড়ে।
-কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২৯; মাবসূত, সারাখসী ১/৬২; ৬৩ আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৬৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬; আলবাহরুর রায়েক ১/১৪; রদ্দুল মুহতার ১/৯৯
আমি একটি মসজিদের মুয়াযযিন। সাধারণত আযানের আগেই আমি নামাযের প্রস্তুতি সেরে নেই। তবে কখনো এমন হয় যে, অযু করার আগেই আযানের সময় হয়ে যায়। তাই জানতে চাই, অযু না থাকা অবস্থায় আযান দেওয়ার হুকুম কী? এটা কি গুনাহ।?
অযু অবস্থায় আযান দেওয়া মুস্তাহাব। তাই যথাসম্ভব অযুসহ আযান দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে অযু না থাকা অবস্থায় আযান দিলেও তা আদায় হয়ে যাবে এবং গুনাহ হবে না।
Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ২০১; নাসবুর রায়াহ ১/২৯২; আততালখীসুল হাবীর ১/৫০৯; হেদায়া ১/২১৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯২
আসরের নামায শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি মসজিদের অযুখানায় অযু শেষে মনে মনে এই নিয়ত করি, এখন গিয়ে ইমামের পিছনে আসর নামায পড়ব। মসজিদে প্রবেশ করা মাত্রই ইমাম সাহেব রুকুতে চলে যান। আমি প্রায় দৌড়ে গিয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে রুকুতে শরিক হই। তবে তাড়াহুড়োর কারণে তাকবীর বলার আগ মুহূর্তে নামাযের নিয়ত করতে পারিনি। জানতে চাই, আমার ঐ নামায সহীহ হয়েছে কি না?
অন্তরের সংকল্পই হল নিয়ত। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৌখিক নিয়ত না করলেও আপনি যেহেতু আসরের নামাযের উদ্দেশ্যেই তাকবীরে তাহরীমা বলে রুকুতে গিয়েছেন তাই আপনার ঐ নামায হয়ে গেছে। নামায শুরুর আগে মৌখিক নিয়ত জরুরি নয়। অন্তরের সংকল্পই যথেষ্ট।
প্রকাশ থাকে যে, নামাযের জন্য যাওয়ার সময় ধীরস্থির ও গাম্ভীর্যের সাথে যাওয়া সুন্নত। নামায দাঁড়িয়ে গেলেও তাড়াহুড়ো করে বা দৌড়ে যাওয়া ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তোমরা ইকামত শোন তখন হেঁটে হেঁটে নামাযের দিকে আস, গাম্ভীর্য ও ধীরস্থিরতার সাথে। দৌড়ে এসো না। যতটুকু নামায পাবে তা পড়। আর যা ছুটে যাবে তা পূর্ণ করে নাও।
Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩৬; মাবসূত, সারাখসী ১/১০; আতাতজনীস ১/৪১৪; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৫৭৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮১;
আমাদের দেশে বাজারে প্রচলিত এক প্রকার মেহেদী পাওয়া যায়। যা গোল্ড মেহেদী নামে পরিচিত। উক্ত মেহেদীতে এমন এক প্রকার মেডিসিন দেওয়া হয়, যার দ্বারা মাত্র পাঁচ মিনিটে পুরোপুরি রঙ হয়ে যায় এবং যখন উক্ত মেহেদী উঠানো হয় তখন শরীর থেকে আলাদা আবরণের মতো উঠে আসে।
এখন প্রশ্ন হল, উক্ত মেহেদী লাগানোর পর অযু করলে অযু হবে কি?
গোল্ড মেহেদী বা টিউব মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয। এবং এগুলো ব্যবহার করে প্রলেপ উঠিয়ে ফেলার পর অযু-গোসল সবই সহীহ হবে। কেননা এ মেহেদী লাগানোর পর শরীরে যে রঙ অবশিষ্ট থাকে যার কোনো কোনোটিতে পরবর্তীতে আবরণের মতো উঠে তা আমাদের জানামতে চামড়ায় পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। তাই এগুলো ব্যবহার করতে সমস্যা নেই।
Ñশরহুল মুনয়া ৪৮; রদ্দুল মুহতার ১/১৫৪
আমার এক পায়ে ব্যান্ডেজ। অযু করার সময় ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করি। জানার বিষয় হল, ঐ ব্যান্ডেজের উপর মোজা পরলে কি তার উপর মাসাহ করা যাবে?
হাঁ, ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করে এবং অন্য পা ধুয়ে চামড়া জাতীয় মোজা পরা হলে পরবর্তী অযুর সময় থেকে উক্ত মোজার উপর মাসাহ করা যাবে। মাসাহর নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলে উভয় মোজা খুলে পুণরায় ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করে নিবে এবং অপর পা ধুয়ে নিবে।
-শরহুয যিয়াদাত ১/১৫৮; রদ্দুল মুহতার ১/২৮০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৫৭; কিতাবুল আসল ১/৭৩; শরহুল মুনইয়াহ ১২৩
আমার সন্দেহের রোগ আছে। অযু থেকে ফারেগ হওয়ার পর পরই মনে হয় যেন মাথা মাসাহ করিনি। এই সন্দেহ হওয়ার কারণে পুনরায় মাথা মাসাহ করি। তাছাড়া কোনোক্রমেই স্বস্তি পাই না। আমি জানতে চাই, এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী এবং এই সন্দেহের রোগ দূর করার উপায় কী?
আপনার কর্তব্য, অযু করার সময় মনোযোগ সহকারে অযু করা। অতপর অযু শেষ হওয়ার পরে মাথা মাসাহ না করার ব্যাপারে যতই সন্দেহ হোক সেদিকে মোটেই ভ্রুক্ষেপ না করা এবং কখনো সন্দেহের ভিত্তিতে পুনরায় মাথা মাসাহও না করা। এই সন্দেহ নিশ্চয়ই শয়তানের পক্ষ থেকে ওয়াসওয়াসা। কিছুদিন এভাবে করলে ওয়াসওয়াসা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২১৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫০
এক ব্যক্তির চোখে অপারেশন হয়েছে। এখন তার চোখে পানি লাগানো নিষেধ। তাই গোসলের সময় গলার উপরে ধোয়া তার জন্য সম্ভব নয়। তেমনি অযুর সময়ও সে চেহারা ধুতে পারবে না। এখন তার গোসল ফরয হলে সে কীভাবে গোসল করবে এবং এ অবস্থায় সে কীভাবে অযু করবে?
ঐ ব্যক্তির যতদিন চোখে পানি লাগানো নিষেধ থাকে ততদিন যেহেতু চেহারা ও মাথা ধুতে পারছে না তাই এ অবস্থায় গোসলের জন্য সে গলা ও ঘাড়সহ নিচের দিকে পুরো শরীর ধৌত করবে। আর চেহারা ও কানসহ পুরো মাথা ভেজা হাত দ্বারা মাসাহ করবে।
আর অযুর সময় পুরো চেহারা ভেজা হাত দ্বারা মাসাহ করবে। এছাড়া বাকি অযু যথানিয়মে করবে। অর্থাৎ হাত, পা ধুবে এবং মাথা মাসাহ করবে।
প্রকাশ থাকে যে, এ ধরনের রোগীর জন্য ভেজা হাত দ্বারা ব্যান্ডেজের উপর বা চোখের অংশে মাসাহ করাটা যদি ক্ষতিকর হয় তবে সেক্ষেত্রে ঐ অংশ মাসাহ না করলেও চলবে।
-আলবাহরুর রায়েক ১/১১৬; মারাকিল ফালাহ প্র. ৬৮
আমি একদিন জামাতে নামায পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠার সময় সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ না বলে আল্লাহু আকবার বলে ফেলেন। এতে আমার মুখ দিয়ে হাসি বের হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও চেপে রাখতে পারিনি। নামায শেষে আমার পাশের এক ভাই বললেন, নামাযে উচ্চস্বরে হাসলে অযু ভেঙ্গে যায়। তাই অযু করে আবার নামায পড়ে নাও। আমার জানার বিষয় হল, ঐ ভাইয়ের কথাটা কি ঠিক?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার হাসির আওয়াজ যদি পাশের লোক ছাড়াও অন্যরা শুনে থাকে তবে আপনার অযু নষ্ট হয়ে গেছে। নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাযে শব্দ করে হাসবে সে নতুন করে অযু করবে এবং পুনরায় নামায আদায় করবে। -কিতাবুল হুজ্জাহ ১/১৪০
আর যদি হাসির শব্দ শুধু ডান-বামের লোক শুনে, অন্যরা না শুনে তাহলে আপনার অযু ভাঙ্গেনি। তবে এতটুকু আওয়াজে হাসার কারণে নামায ভেঙ্গে গেছে। তা আবার পড়ে নিতে হবে।
-কিতাবুল আছল ১/৪৫-৪৬; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/১৩৯; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/৩৩৬; রদ্দুল মুহতার ১/১৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৬; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৮২; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৩৯৭ ইলাউস সুনান ১/১৫৮
গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে গোসল করতে অক্ষম কিন্তু অযু করতে সক্ষম এবং তার নিকট পর্যাপ্ত পানিও আছে। এ অবস্থায় শুধু তায়াম্মুম করবে নাকি অযুও করতে হবে।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি গোসলের পরিবর্তে শুধু তায়াম্মুম করবে। অযু করবে না। কারণ এক্ষেত্রে তায়াম্মুমই অযু-গোসল উভয়টির জন্য যথেষ্ট হবে। তবে গোসলের জন্য তায়াম্মুম করার পর অযু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন পবিত্রতার জন্য তাকে অযুই করতে হবে। তায়াম্মুম করলে হবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৮৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৯৪; রদ্দুল মুহতার ১/২৩২
কয়েকদিন হল, আমার সর্দি লেগেছে। একপর্যায়ে সর্দি ঘন ও শক্ত হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে সর্দির সাথে জমাট রক্তও বের হয়। এতে আমার অযু ভাঙ্গবে কি?
এভাবে জমাট রক্ত বের হওয়ার দ্বারা অযু ভঙ্গ হয় না। অবশ্য সর্দির সাথে তরল রক্ত গড়িয়ে পড়া পরিমাণ বের হলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৯, ১৩৪
অযুর সময় থুতনির নিচের অংশও কি ধোয়া জরুরি? কেউ যদি এ অংশ পুরোপুরি না ধোয় তাহলে কি তার অযু সহীহ হবে?
অযুতে থুতনির নিচের অংশ ধোয়া লাগবে না। ঐ অংশ না ধুলেও অযু হয়ে যাবে।
Ñখুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১; আস সেআয়া ১/৪৬
রোগের কারণে জনৈক ব্যক্তির পেশাবের রাস্তার সাথে ক্যাথেটার (এক প্রকার নল) লাগিয়ে পেশাবের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে তা দিয়ে সর্বক্ষণ পেশাব ঝরতে থাকে। তাই প্রশ্ন হল, ক) ঐ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জনের উপায় কী?
খ) নামায শুরুর আগে ইউরিন ব্যাগটি কি খালি করে নেওয়া জরুরি? যদি খালি করে নেওয়া হয় তবুও প্রতি মিনিটে তাতে ফোঁটায় ফোঁটায় পেশাব জমা হবে। এর ফলে কি নামায আদায়ে কোনো সমস্যা হবে? আশা করি জানিয়ে বাধিত করবেন।
ক) ক্যাথেটার লাগানোর পর থেকে ওয়াক্তের শেষ পর্যন্ত তা লাগানো থাকলে ঐ ব্যক্তি মাজুর গণ্য হবে। তাই ক্যাথেটার লাগানোর পর থেকে সে প্রতি ওয়াক্তে অযু করবে এবং ক্যাথেটার লাগানো অবস্থায় পেশাব ছাড়া অযু ভঙ্গের অন্য কোনো কারণ পাওয়া না গেলে যতক্ষণ ওয়াক্ত বাকি থাকবে ঐ অযু দিয়ে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল নামায আদায় করতে পারবে। ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগে পেশাব ঝরার কারণে অযু ভাঙ্গবে না। তবে অযু ভঙ্গের অন্য কোনো কারণ পাওয়া গেলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে।
উত্তর : খ) নামায শুরুর আগে ইউরিন ব্যাগটি খালি করে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ওজরের কারণে ঐ ব্যাগসহ নামায আদায় করা জায়েয।
-মাবসূত, সারাখসী ২/১৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩০৫; মারাকিল ফালাহ ৮০, ৮১; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২১৫, ১/২১৭
আমাদের এক সহপাঠী উচ্চস্বরে কুরআন তিলাওয়াত করে থাকেন এবং সিজদার আয়াত এলেও উচ্চস্বরে পড়েন। অথচ সে সময় আমরা অনেকেই অযু অবস্থায় থাকি না কিংবা অযু অবস্থায় থাকলেও সিজদা আদায় করতে ভুলে যাই। তাই আমরা তাকে অনুচ্চস্বরে সিজদার আয়াত পড়তে বলি। কিন্তু সে আমাদের কথায় কর্ণপাত করে না; বরং বিভিন্ন ধরনের যুক্তি দিয়ে থাকে। মুফতী সাহেবের কাছে প্রশ্ন হল, বর্ণিত অবস্থায় তিলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত আস্তে পড়ার বিধান আছে কি? আশা করি উত্তর জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সিজদার আয়াত অনুচ্চস্বরেই তিলাওয়াত করা উচিত। কেননা উপস্থিত লোকজন সিজদা আদায়ে প্রস্তুত না থাকলে কিংবা ভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকলে সিজদার আয়াত উচ্চস্বরে না পড়া উত্তম।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৫০; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫০৫
নামায চলাকালীন অনিচ্ছাকৃত মূত্র ফোঁটা নির্গত হলে কি নামায বাতিল হয়ে যাবে?
নামাযে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় প্রস্রাবের ফোঁটা বের হলে অযু নষ্ট হয়ে যাবে এবং নামাযও নষ্ট হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে অযু করে নতুনভাবে নামায পড়তে হবে। তবে নিশ্চিতভাবে প্রস্রাবের ফোঁটা বের হলেই কেবল অযু নষ্ট হবে,শুধু সন্দেহের উপর ভিত্তি করে নামায ছাড়া যাবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৮০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩১; শরহুল মুনইয়া ১২৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৪
এক ব্যক্তির কাছে শুনলাম, গোসল ফরয অবস্থায় কবর যিয়ারত করা জায়েয নেই। বিষয়টি কি সঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
নাপাক অবস্থায় কবর যিয়ারত না করাই শ্রেয়। একান্ত কখনো গোসল করতে বিলম্ব হলে যিয়ারতের আগে অন্তত অযু করে নিবে। অবশ্য গোসল ফরয অবস্থায়ও কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ নয়। তবে কেউ এ অবস্থায় যিয়ারতে গেলে কুরআন মাজীদের কোনো আয়াত পড়তে পারবে না। মৃতের জন্য দুআ-দরূদ পড়তে পারবে।
-রদ্দুল মুহতার ১/২৯৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৮১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/১৫১
জামাতে নামায আদায় করার সময় কারো অযু ছুটে গেলে নিয়ত ছেড়ে দিয়ে রুকু-সিজদায় ইমামের অনুসরণ করা হয় তাহলে তা জায়েয হবে কি?
একটি কিতাবে তা জায়েয বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মসজিদের ইমাম ছাহেব বলছেন, এটা জায়েয হবে না। সঠিক মাসআলাটি জানতে চাই।
জামাতে নামায পড়া অবস্থায় কোনো ব্যক্তির অযু ছুটে গেলে সম্ভব হলে তৎক্ষণাৎ অযুর জন্য বের হয়ে যাবে। ইমামের নামায শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকবে না। সাহাবা-তাবেয়ীদের একাধিক আছার দ্বারা এ বিষয়টি প্রমাণিত।
যেমন আমর ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাযরত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত বের হলে কী করণীয় এ সম্পর্কে উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, সে অযুর জন্য বের হয়ে যাবে এবং অযু করে আসবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৯৫০)
সালমান ফারেসী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কারো যদি নামাযে অযু ছুটে যায় তাহলে সে যেন বের হয়ে অযু করে আসে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫৯৫৪)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর নাক থেকে নামায অবস্থায় রক্ত বের হলে তিনি ফিরে গিয়ে অযু করে আসতেন। (মুআত্তা মালেক, হাদীস : ৫০)
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেছেন, নামায অবস্থায় যে ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত বের হবে অথবা অযু ছুটে যাবে সে (মসজিদ থেকে) বের হয়ে যাবে এবং অযু করে আসবে। (কিতাবুল আছার ১/১৬২)
সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে এ ধরনের আরো বর্ণনা রয়েছে। এ সকল বর্ণনা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, নামাযে অযু ছুটে গেলে অযুর জন্য বের হয়ে যাবে।
অবশ্য মসজিদে মুসল্লী সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে কাতারের মাঝখান থেকে বের হওয়া সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে নামায শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকতে পারবে। তবে এক্ষেত্রেও অযু ছুটে যাওয়ার পর লজ্জা, সংকোচ বা অন্য কোনো কারণে বিনা অযুতে ইমামের সাথে রুকু সিজদা করতে থাকা ঠিক হবে না। কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাবে এমনটি করার কথা পাওয়া যায়নি। প্রশ্নোক্ত কিতাবের ঐ বক্তব্য ঠিক নয়।
আমি দৈনন্দিন ওযিফার জন্য আয়াতুল কুরসী, সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত এবং আরো কিছু আয়াত ও ছোট ছোট কয়েকটি সূরা টাইপ করে লেমিনেটিং করে রেখেছি। সকাল-সন্ধ্যা এগুলো পাঠ করি। অনেক সময় দেখা যায়, পাঠকালে অযু থাকে না। তাই জানার বিষয় হল, বিনা ওযুতে উক্ত লেমিনেটিং করা কাগজ বা তার লেখা স্পর্শ করা জায়েয হবে কি?
কাগজটি লেমিনেটিং করা হলেও অযু ছাড়া লিখিত আয়াত বা সূরার উপর সরাসরি হাত লাগানো জায়েয হবে না। তবে এটি যেহেতু কুরআন শরীফ নয় তাই কাগজের যে অংশে আয়াত লেখা নেই তা স্পর্শ করা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে, লিখিত অংশের উপর যেন হাত না লাগে। কিন্তু উক্ত কাগজে যেহেতু শুধু আয়াতই লিখা রয়েছে তাই সাদা অংশও অযু ছাড়া স্পর্শ না করা উচিত।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭৩, ২৯৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২০১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৭৭
এক লোক গত মাসে উমরায় গিয়েছিল। তার জানা ছিল না যে, তাওয়াফের জন্য অযু জরুরি। তাই সে অযু ছাড়াই উমরার তাওয়াফ করেছে এবং উমারা সম্পন্ন করার পর সে আরো কিছু নফল তাওয়াফও করেছে। যেগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি অযু ছাড়া করেছে। এখন সে দেশে চলে এসেছে। তার এখন কী করণীয়? তাকে কি এজন্য কোনো জরিমানা দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অযু ছাড়া উমরার তাওয়াফ করার কারণে ঐ ব্যক্তির উপর একটি দম ওয়াজিব হয়েছে। এজন্য হেরেমের সীমানায় তাকে একটি ছাগল বা দুম্বা জবাই করতে হবে। আর যে কয়টি নফল তাওয়াফ অযু ছাড়া করেছে এগুলোর প্রত্যেক চক্করের জন্য একটি করে সদকাতুল ফিতর সমপরিমাণ নির্দিষ্ট খাদ্যদ্রব্য বা এর মূল্য সদকা করতে হবে। সুতরাং সে যদি দুটি নফল তাওয়াফ অযু ছাড়া করে থাকে তবে সাতটি করে মোট চৌদ্দটি সদকাতুল ফিতর সমপরিমাণ নির্দিষ্ট খাদ্য বা এর মূল্য সদকা করতে হবে। এ সদকা হেরেমের এলাকায় করা উত্তম। হেরেমের বাইরে করলেও আদায় হয়ে যাবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৫৩; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৩৫২
ছোটবেলায় মকতবে অযু ভঙ্গের কারণসমূহ শিখেছিলাম। সেগুলোর মধ্যে একটা হল, হেলান দিয়ে ঘুমানো। এখন অনেক মুসল্লি ভাইকে দেখি যে, তারা ফজরের নামাযের আগে মসজিদের দেওয়ালে বা খুঁটিতে হেলান দিয়ে ঘুমাতে থাকে। যখন ইকামত দেওয়া হয় তখন তারা পুনরায় অযু করা ছাড়াই নামাযে দাঁড়িয়ে যায়। তাদের উক্ত নামায কি সহীহ হবে? দয়া করে বিষয়টি একটু স্পষ্ট করবেন।
হেলান দিয়ে ঘুমালে সর্বাবস্থায় অযু ভেঙ্গে যায়-বিষয়টি এমন নয়; বরং কেউ যদি এভাবে হেলান দিয়ে ঘুমায় যে, তার কোমরের নিম্নাংশ জমিন থেকে পৃথক হয়ে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে অযু ভেঙ্গে যাবে। আর যদি আসন গেড়ে বা জমিনের সাথে ভালোভাবে লেগে বসে বসে ঘুমায় তাহলে হেলান দিয়ে ঘুমালেও অযু নষ্ট হবে না।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৫৪; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৯৮-৯৯; রদ্দুল মুহতার ১/১৪১
তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোতে ফরয নামায আদায় করার পর অনেক সময় আমি তাকবীর বলতে ভুলে যাই। পরে কখনো নামাযের ওয়াক্ত বাকি থাকতেই স্মরণ হয়। আবার কখনো ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর অন্য নামাযের সময় স্মরণ হয়। তখন সাথে সাথে তাকবীর পড়ে নেই।
জানতে চাই, পরবর্তীতে স্মরণ হওয়ার পর তাকবীরে তাশরীক পড়ে নিলে ওয়াজিব আদায় হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ফরয নামায আদায় করার পর তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব।
নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক না বলে (ক) মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলে
(খ) অথবা নামায ফাসেদকারী কোনো কথা বা কাজ করলে
(গ) অথবা অযু নষ্ট হয়ে যায় এমন কোনো কাজ করলে তাকবীরে তাশরীক আদায়ের সময় বাকি থাকে না। তাই এক্ষেত্রে ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার জন্য তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। আর নামাযের পর উপরোল্লিখিত কোনো কাজ না করলে বিলম্বে হলেও তাকবীরে তাশরীক পড়ে নিতে পারবে এবং এর দ্বারা ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৭-১৭৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৪৫ ফাতহুল কাদীর ২/৫০
আমাদের এলাকায় অনেকে পাট ক্ষেত করে। পাট গাছ কাটার পর এর থেকে পাট ওঠানোর জন্য এগুলো কোনো খাল বা পুকুরের পানিতে অনেকদিন রাখা হয়। তখন এগুলো পচে পানির রংও পরিবর্তন হয়ে যায় এবং পানি কিছুটা দুর্গন্ধও হয়ে যায়। প্রশ্ন হল, ঐ পানি দ্বারা কি অযু-গোসল করা যাবে?
হ্যাঁ, পাটগাছ পচানোর কারণে পানির রং ও গন্ধ পরিবর্তন হয়ে গেলেও এর দ্বারা অযু-গোসল তথা পবিত্রতা অর্জন করা যাবে। এক্ষেত্রে পানির তরলতা যতক্ষণ পর্যন্ত বাকি থাকবে এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা সহীহ হবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১; রদ্দুল মুহতার ১/১৮১
কিছুদিন আগে মসজিদে যাওয়ার পথে কাঁটাতারের আঘাতে আমার হাতের বেশ কিছু অংশের চামড়া ছিলে যায়। ফলে তা থেকে রক্ত গড়িয়ে না পড়লেও ছিলে যাওয়া অংশটি রক্তে লাল হয়ে থাকে। রক্ত গড়িয়ে না পড়ায় আমি ঐ অবস্থাতেই নামায পড়ি। কিন্তু নামাযের মাঝে ঐ অংশটির সাথে ঘষা লাগার কারণে আমার জামায় রক্তের হালকা দাগ লেগে যায়। আমার জানার বিষয় হল এভাবে নামায পড়া কি আমার জন্য শুদ্ধ হয়েছে? যখমের রক্ত যা গড়িয়ে পড়ার মতো নয় তা জামায় লাগলে কি জামা নাপাক হয়ে যাবে? এবং এ কারণে কি অযু ভেঙ্গে যাবে?
যখমের রক্ত গড়িয়ে না পড়লে অযু ভাঙ্গে না এবং এই রক্ত কাপড়ে লাগলে কাপড়ও নাপাক হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ রক্ত বাস্তবেই যদি গড়িয়ে পড়ার মতো না হয় তবে এ কারণে অযুও ভাঙ্গেনি এবং জামার হাতায় লাগার কারণে তা অপবিত্রও হয়নি। এক্ষেত্রে আপনার ঐ নামায শুদ্ধভাবেই আদায় হয়েছে।
-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৬; ফাতহুল কাদীর ১/৩৪; আসসিআয়াহ ১/২১৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৯
কিছুদিন আগে আমি অযু করার পর হঠাৎ বেহুঁশ হয়ে মাটিতে পড়ে যাই। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখি জামাত শুরু হয়ে গেছে। তখন আমি দ্রুত গিয়ে ইমামের সাথে রুকুতে শরিক হয়ে যাই। নামায শেষে পাশের এক ভাই আমাকে বললেন, আপনার নামায তো হয়নি। কারণ অজ্ঞান হলে অযু ভেঙ্গে যায়। তাই আপনি অযু করে আবার নামায পড়ে নিন। এখন জানার বিষয় হল, তার এ কথা কি ঠিক? জ্ঞান হারানোর কারণে কি অযু ভেঙ্গে যায়?
জ্বী হ্যাঁ, অল্প সময়ের জন্য বেহুঁশ বা অচেতন হয়ে পড়লেও অযু ভেঙ্গে যায়। ঐ ব্যক্তি ঠিকই বলেছে। তাই এমনটি হলে জ্ঞান ফিরার পর নতুনভাবে অযু করতে হবে।
-কিতাবুল আছল ১/১৪৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৮৯; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭১; রদ্দুল মুহতার ১/১৪৩
একবার পানি স্বল্পতার কারণে আমি অযুর ব্যবহৃত পানি দ্বারা নাপাক কাপড় ধৌত করি। জানার বিষয় হল, অযুর ব্যবহৃত পানি কি পাক না নাপাক? আর পাক হলে তা দ্বারা কি নাপাক ধৌত করা যাবে?
অযুর ব্যবহৃত পানি নাপাক নয়। এই পানি দ্বারা নাপাক কাপড় বা নাপাক বস্ত্ত ধোয়া এবং পাক করা জায়েয। তবে এই পানি দ্বারা অযু করা কিংবা ফরয গোসল করা যাবে না; করলে পবিত্রতা অর্জন হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪১; আদ্দুররুল মুখতার ১/২০১; মারাকিল ফালাহ ৮৭
এক ব্যক্তি অযু করার পর তার মুখের ব্রণ গলে যায় এবং তা থেকে সামান্য পানি বের হলে সে তা মুছে নেয়। প্রশ্ন হল এই পানি বের হওয়ার কারণে কি তার অযু ভেঙ্গে গেছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্রণের পানি যদি গড়িয়ে না পড়ে এবং যে পানি মুছে নিয়েছে তা সেখানে থাকলেও গড়িয়ে পড়ত না তাহলে ঐ ব্যক্তির অযু নষ্ট হয়নি। কিন্তু যদি পানি বা রক্ত গড়িয়ে পড়ে কিংবা না মুছলে তা গড়িয়ে পড়ত তাহলে অযু ভেঙ্গে যাবে।
-আলজামেউস সগীর, পৃষ্ঠা : ৭২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬১
আমি চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করি। অনেক সময় অযু থাকতেই মাসাহর মুদ্দত শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় আমার জন্য পুনরায় অযু করতে হবে, নাকি শুধু মোজা খুলে পা ধুয়ে নিলেই চলবে?
অযু থাকা অবস্থায় মাসহের মুদ্দত (সময়সীমা) শেষ হলে মোজা খুলে উভয় পা ধুয়ে নিলেই চলবে। পুনরায় অযু করতে হবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/২৭২; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/২১১; কিতাবুল আছল ১/৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৪৭; আলবাহরুর রায়েক ১/১৭৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৭৬
অযু-গোসলের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কাপড় দ্বারা শরীর মুছেছেন? কেউ কেউ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু-গোসলের পর কখনো কাপড় দ্বারা শরীর মোছেননি। কথাটি কতটুকু সঠিক? দলিলপ্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু ও গোসলের পর কখনো কখনো কাপড় দ্বারা শরীর মুছেছেন। আবার কখনো মোছেননি। উভয় ধরনের আমলই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমানিত আছে।
অযু ও গোসলের পর তিনি কাপড় দ্বারা শরীর মুছেছেন এ সম্পর্কিত দু’ একটি হাদীস নিম্নে পেশ করা হল।
সালমান ফারসী রা. থেকে বর্ণিত আছে, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করেন। এরপর তিনি তার গায়ের পশমী জুববা উল্টে নিয়ে চেহারা মুছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪৬৮)
প্রসিদ্ধ হাদীসগ্রন্থ সুনানে ইবনে মাজাহর অযু ও গোসলের পর রুমাল ব্যবহার করা নামক অধ্যায়ে এসেছে, কায়েছ বিন সাআদ রা. বলেন, আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন। আমরা তাঁর জন্য পানির ব্যবস্থা করলাম। তিনি গোসল করলেন। তখন আমরা তাঁকে হলুদ রঙ্গের একটি চাদর এনে দিলাম। তিনি সেটি গায়ে জড়িয়ে নিলেন। (ফলে সেটি শরীরের পানি মোছার জন্য রুমালের কাজ দিল)। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪৬৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৫১৪৩)
অবশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু ও গোসলের পর কাপড় দ্বারা শরীর মোছেননি এমন হাদীসও আছে। যেমন, উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফরয গোসল করছিলেন তখন (শরীর মোছার জন্য) একটি কাপড় এনে দিলাম। তিনি তা ফেরত দিলেন এবং শরীরের পানি (হাত দ্বারা) ঝাড়তে লাগলেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৭৪)
তবে এ হাদীস দ্বারা যেমনিভাবে না মোছা প্রমাণিত হয় তেমনিভাবে মোছার বিষয়টিও বোঝা যায়। যেমন তাইমী রাহ. উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে গোসলের পর কখনো কখনো কাপড় দ্বারা শরীর মুছতেন এ হাদীসটি তার একটি দলিল। কেননা যদি গোসলের পর শরীর একেবারেই না মুছতেন তাহলে মায়মুনা রা. শরীর মোছার জন্য রুমাল এনে দিতেন না। (ফাতহুল বারী ১/৪৩২)
আল্লামা শাববীর আহমদ উছমানী রাহ. সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফযলুল বারীতে এবং আল্লামা তকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুম ইনআমুল বারীতে এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেছেন, গোসলের পর শরীর মোছার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড় ব্যবহার অন্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত আছে।
আল্লামা আবদুল হাই লখনবী রাহ.-ও এমনটি বলেছেন।
মোটকথা উভয় ধরনের আমলই প্রমাণিত আছে। তাই নির্দিষ্টভাবে কোনো একটিকে সঠিক ও সুন্নত বলা এবং অন্যটিকে সুন্নত পরিপন্থী বলা যাবে না। বরং হাদীসের দৃষ্টিতে উভয় ধরনের আমলের সুযোগ আছে।
-আসসিআয়াহ ১/১৯১; রিসালাতুল কালামিল জালীল ফিমা ইয়াতাআল্লাকু বিলমিন্দীল ৫/৩৭০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫-১৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩১; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৩; শরহু মুসলিম নববী ১/১৪৭
একদিন বিকেলে পান খাওয়ার সময় বাম হাতের কনুইয়ের নিচে একটু সামান্য চুন লেগে যায়, যা তখন আমার চোখে পড়েনি। এরপর আমি ইস্তেঞ্জা-অযু করে মাগরিবের নামায আদায় করি। নামায শেষে বাসায় যাওয়ার পর হাতের চুন চোখে পড়ে। এখন জানার বিষয় হল, হাতে চুন থাকা অবস্থায় অযু করলে কি তা সহীহ হবে? আর আমার আদায়কৃত মাগরিবের নামাযের কী হুকুম হবে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
চুন মাটি জাতীয় পদার্থ, যা সহজেই পানিকে শোষণ করে নেয় ও ভিজে যায়। তাই শরীরের কোথাও চুন লেগে থাকলেও চামড়ায় পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে তা প্রতিবন্ধক হয় না।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার অযু এবং নামায উভয়টি সহীহ হয়েছে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫৪; শরহুল মুনইয়াহ ৪৮
অসুস্থতার কারণে আমি গোসল করতে পারি না। কিন্তু অযু করতে পারি। প্রশ্ন হল, আমি কি ফরয গোসলের পরিবর্তে অযু করতে পারব? নাকি তায়াম্মুম করব।
ফরয গোসল করতে সক্ষম না হলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবেন। এক্ষেত্রে অযু করার প্রয়োজন নেই। কেননা এক্ষেত্রে এই তায়াম্মুমই গোসল এবং অযুর জন্য যথেষ্ট। আর এই তায়াম্মুম দ্বারা তিলাওয়াত, নামায ইত্যাদি পড়তে পারবেন। অবশ্য এরপর অযু ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া গেলে তখন অযু করতে হবে। আর পরবর্তীতে যখন গোসল করার সামর্থ্য হবে তখন গোসল করে নিতে হবে।
-কিতাবুল আস্ল ১/১০৭; মাবসূত, সারাখসী ১/১১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৮; ফাতাওয়া খানিয়া ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৯; আলবাহরুর রায়েক ১/১৫২
আমি একজন কলেজছাত্রী। আমি নিয়মিত নামায আদায় করার ও ইসলামি বই-পুস্তক পড়ার চেষ্টা করি। কয়েকদিন আগে একটি কিতাবে পড়েছি, নেলপলিশ লাগালে অযু হয় না। আর অযু না হলে নামাযও হয় না। অথচ আমি নেলপলিশ লাগানো অবস্থায় অযু করে অনেক নামায আদায় করেছি। জানতে চাই, উক্ত কথাটি কি সঠিক? সঠিক হলে আমার অতীতের নামাযের হুকুম কী?
নেলপলিশ লাগানো অবস্থায় অযু করলে অযু হয় না। কেননা নেলপলিশ লাগালে নখের উপর আবরণ পড়ে যায়। ফলে নখে পানি পৌঁছে না। আর অযু না হলে নামাযও হয় না। সুতরাং নেলপলিশ লাগানো অবস্থায় অযু করে যত ওয়াক্ত ফরয ও ওয়াজিব নামায পড়েছেন সেসব নামাযের কাযা করে নিতে হবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ১/৮৮; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৭০; আলবাহরুর রায়েক ১/৪৭; আলমাওসূআহ ৪৩/৩৪৪
আমি ইস্তেঞ্জা থেকে ফারেগ হওয়ার পর অথবা অযু না থাকা অবস্থায়ই কখনো কখনো আযান শুরু হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হল, আযানের উত্তর দিতে হলে অযুর প্রয়োজন আছে কি?
আযানের জওয়াব দেওয়ার জন্য অযু জরুরি নয়। অযু না থাকলেও আযানের জওয়াব দেওয়া যাবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৯৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৯; মারাকিল ফালাহ ১১০
মাঝে মধ্যে ঘুম থেকে বিলম্বে উঠার কারণে অযু ছাড়া আযান দিয়ে দেই। জানতে চাই, অযু ছাড়া আযান দিলে কি সহীহ হবে?
বিনা অযুতে আযান দিলে আযান সহীহ হয়ে যাবে। তবে অযু অবস্থায় আযান দেওয়া মুস্তাহাব। অযুর সাথে আযান দেওয়ার ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। আবু হুরায়রা রা. বলেন, অযু অবস্থাতেই যেন আযান দেওয়া হয়।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২০১
অবশ্য সময় কম থাকলে বা কোনো অসুবিধা হলে বিনা অযুতেও আযান দেওয়া যাবে। ইবরাহীম নাখায়ী, কাতাদা, হাসান বসরী, আতা রাহ. প্রমুখ তাবেয়ীন থেকে বিনা অযুতেও আযান দেওয়ার অনুমতি বর্ণিত আছে।
-সহীহ বুখারী ১/৮৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৩৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৪; কিতাবুল মাবসূত, সারাখসী ১/১৩১; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৩