আমার এক সহপাঠী আমার পাশে বসে উঁচু আওয়াজে কুরআন মাজীদ...
আমার এক সহপাঠী আমার পাশে বসে উঁচু আওয়াজে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করছিল। তিলাওয়াতের মাঝে একটি সিজদার আয়াত এলে সেটাও সে আওয়াজ করেই পড়ল। আমি বললাম, সিজদার আয়াতখানা আস্তে পড়লেই তো পারতে। সে বলল, সব আয়াত জোরে পড়ে শুধু সিজদার আয়াত আস্তে পড়া মাকরূহ। জানার বিষয় হল, তার এ কথা কি ঠিক? সঠিক বিষয়টি জানালে উপকৃত হব।
আপনার সহপাঠীর কথা ঠিক নয়। উপস্থিত লোকজন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলে তাদের প্রতি খেয়াল করে সিজদার আয়াত আস্তে পড়াই মুস্তাহাব; মাকরুহ নয়।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৫০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮০; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৭; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৫০১
আমাদের এলাকার এক খতীব সাহেব বেশ কয়েক জুমায় প্রথম ওদ্বিতীয়...
আমাদের এলাকার এক খতীব সাহেব বেশ কয়েক জুমায় প্রথম ও
দ্বিতীয় খুতবায় কোনো আয়াত-হাদীস পাঠ করেননি। আরবীতে হামদ ও সানা পড়ার পর কিছু নসীহত করেই শেষ করে দেন।
জানার বিষয় হল, এভাবে খুতবা দিলে কি হয়ে যাবে? নাকি আয়াত-হাদীসও পড়তে হবে?
খুতবায় কিছু আয়াত তিলাওয়াত করা সুন্নত। উম্মে হিশাম রা. বলেন,
مَا حَفِظْتُ ق، إِلَّا مِنْ فِي رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَخْطُبُ بِهَا كُلَّ جُمُعَةٍ.
‘আমি তো সূরা ক্বফ শিখেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে শুনে। প্রতি জুমার খুতবায় তিনি এই সূরা পড়তেন।’-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭৩
হযরত ইয়ালা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিম্বরে ونادوا يامالكআয়াতটি পড়তে শুনেছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৭১
উবাই ইবনে কাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ بَرَاءَةٌ، وَهُوَ قَائِمٌ يُذَكِّرُ بِأَيَّامِ اللهِ
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার খুতবায় সূরা বারাআহ (তাওবা) তিলাওয়াত করলেন। তিনি আমাদেরকে তখন পূর্ববর্তী কওমসমূহের প্রতি আল্লাহর নিআমত ও শাস্তির কথা স্মরণ করাচ্ছিলেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১২৮৭) তাই খুতবায় কোনো আয়াত তিলাওয়াত না করলে খুতবার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত ছুটে যায। তবে কোনো আয়াত-হাদীস পাঠ না করলেও খুতবা আদায় হয়ে যাবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯১; মাবসূত, সারাখসী ২/৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৬৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৫৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৪৮
ইসলামী শরীয়তে শিশুর দুধপানের মেয়াদকাল কতটুকু? দয়া করে জানাবেন।
ইসলামী শরীয়তে শিশুর দুধপানের মেয়াদকাল কতটুকু? দয়া করে জানাবেন।
শিশুর দুধপানের সর্বোচ্চ সময় হল চান্দ্রমাসের হিসাবে দুই বছর। দুই বছরের অধিক দুধ পান করানো যাবে না। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
وَ الْوَالِدٰتُ یُرْضِعْنَ اَوْلَادَهُنَّ حَوْلَیْنِ كَامِلَیْنِ لِمَنْ اَرَادَ اَنْ یُّتِمَّ الرَّضَاعَةَ .ؕ
মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দু বছর দুধ পান করাবে। এ সময়কাল তাদের জন্য, যারা দুধ পান করানোর মেয়াদ পূর্ণ করতে চায়।
-সূরা বাকারা (২) : ২৩৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ১৩৯০০, ১৩৯০১; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৭/৪৬২; ফাতহুল কাদীর ৩/৩০৭-৩০৯; আল বাহরুর রায়েক ৩/২২৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২০৯
এক আলেমের বয়ানে শুনেছি, ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আকিদা হল, আলওয়ালা...
এক আলেমের বয়ানে শুনেছি, ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আকিদা হল, আলওয়ালা ওয়াল বারা। তিনি এর ব্যাখ্যা করেছেন, বন্ধুত্ব ও হৃদ্যতা হবে শুধু মুসলমানদের সাথে। কাফেরদের সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা জায়েয নেই। আমার প্রশ্ন হল, কাফেরদের সাথে কি সব ধরনের সম্পর্ক রাখা নিষেধ? স্কুল-কলেজে আমাদের অনেক বিধর্মী বন্ধু-বান্ধব থাকে। তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা, খেলাধূলা করা কি শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম? নাকি সম্পর্কের বিশেষ কোনো প্রকারকে হারাম বলা হবে? উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।
ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলনীতি হল, মুমিনের ঘনিষ্ঠতা হবে মুমিনের সাথে। কোনো মুমিনের জন্য অমুসলিমের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়া নিষিদ্ধ। প্রশ্নের আলওয়ালা ও আলবারা দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য। আলওয়ালা অর্থ অন্তরঙ্গতা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব আর আলবারা অর্থ সম্পর্কচ্ছেদ।
পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে,
وَ الْمُؤْمِنُوْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتُ بَعْضُهُمْ اَوْلِیَآءُ بَعْضٍ
আর মুমিন পুরুষরা ও মুমিন নারীরা হচ্ছে একে অন্যের বন্ধু। -সূরা তাওবা (৯) : ৭১
অন্য আয়াতে আল্লাহ মুমিনদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكٰفِرِیْنَ اَوْلِیَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِیْنَ .
হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিনদেরকে ছেড়ে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। -সূরা নিসা (৪) : ১৪৪
এমনকি ঐ কাফের বা অমুসলিম যদি তার বাবা-পুত্র, বা নিকটাত্মীয়ও হয় তারপরও তার সাথে অন্তরঙ্গতার সম্পর্ক রাখা বৈধ হবে না।
কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْۤا اٰبَآءَكُمْ وَ اِخْوَانَكُمْ اَوْلِیَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَی الْاِیْمَانِ وَ مَنْ یَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوْنَ.
হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমানের মোকাবেলায় কুফরকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখবে বস্তুত তারাই বড় নাফরমান। -সূরা তাওবা (৯) : ২৩
সুতরাং কোনো মুসলমানের জন্য অমুসলিম, কাফের-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব গড়া বা হৃদ্যতা ও অন্তরঙ্গতার সম্পর্ক রাখা বৈধ নয়। তবে সহপাঠী হিসেবে বা প্রতিবেশী কিংবা কাজের সাথী হিসেবে সাধারণ ও সৌজন্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখা জায়েয আছে। তদ্রূপ তাদের সাথে বৈধ খেলাধূলা করাও জায়েয আছে।
তাই কাফেরদের সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা জায়েয নয়- এত ব্যাপকভাবে বলা ঠিক নয়। তবে তাদের সাথে সাধারণ ও সৌজন্য সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রেও কয়েকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি-
ক) সব সময় নিজের ঈমান ও ইসলামের স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা রক্ষার প্রতি পূর্ণ যতœবান থাকতে হবে।
খ) তাদের কোনো ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা যাবে না।
গ) জীবনাচারের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব বেশভূষা ও কৃষ্টিকালচারের অনুসরণ করা যাবে না।
আমার একটি দোকান আছে। যেখানে টাইপ ও কম্পোজের কাজ করি।...
আমার একটি দোকান আছে। যেখানে টাইপ ও কম্পোজের কাজ করি। প্রায়ই মাদরাসার ছাত্র-হুযুরদের লেখা টাইপ করতে হয়। সেখানে কুরআনের আয়াত, হাদীস ইত্যাদিও থাকে। অনেক সময় সিজদার আয়াতও টাইপ করতে হয়। প্রশ্ন হল, সিজদার আয়াত টাইপ করলে কি সিজদা ওয়াজিব হবে?
সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করলে বা সরাসরি তিলাওয়াত শুনলে সিজদা ওয়াজিব হয়। সিজদার আয়াত লিখলে বা টাইপ করলে সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই শুধু টাইপ করার দ্বারা সিজদা ওয়াজিব হবে না।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৮
আমাদের এলাকায় মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর কবরের উপর পানি ছিটিয়ে...
আমাদের এলাকায় মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। জানতে চাই এভাবে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার কথা কুরআন-সুন্নাহয় কি আছে? না এটা কোনো কুসংস্কার?
না, এটি কুসংস্কার নয়। বরং কবরের উপরে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার কথা হাদীসে এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে উমর তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পুত্র ইবরাহীমের কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দিয়েছেন। Ñমারাসীলে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৭
ফকীহগণ বলেন, পানি ছিটিয়ে দেওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কবরের মাটি যেন ভালোভাবে জমে যায়।
Ñকিতাবুল আসার ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. ১/২৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৯৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৯৪
হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী নামক কিতাবে সিজদায়ে তিলাওয়াতের আয়াতসমূহ উল্লেখ...
হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী নামক কিতাবে সিজদায়ে তিলাওয়াতের আয়াতসমূহ উল্লেখ করতে গিয়ে কোনো জায়গায় তিন আয়াত আবার কোথাও চার আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সূরা নজমে চার আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। তো প্রশ্ন হল, এখানে উদ্দেশ্য কি এই যে, চার আয়াতের যেকোনো এক আয়াত পড়লে সিজদা করতে হবে, আর যেখানে তিন আয়াত, যেমন সূরা নাহল-এ সেখানে তিন আয়াতের যেকোনো এক আয়াত পড়লে সিজদা করতে হবে? নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? দয়া করে জানাবেন।
সূরা নাহল বা নাজম-এর উল্লিখিত তিন/চার আয়াতের যে কোনো আয়াত পড়লে সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে না; বরং সিজদার শব্দ সম্বলিত আয়াত পাঠ করলেই তিলাওয়াতে সিজদা ওয়াজিব হবে। আর সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য তিলাওয়াতে সিজদার পূর্ণ আয়াত পাঠ করা আবশ্যক নয়; বরং যেমনিভাবে সিজদার পূর্ণ আয়াত পাঠ করলে সিজদা ওয়াজিব হয় তদ্রƒপ সিজদার আয়াত থেকে সিজদা সম্বলিত শব্দসহ তার আগে বা পরের শব্দ মিলিয়ে পড়লেও সিজদা ওয়াজিব হয়ে যায়।
সুতরাং সূরা নাজম থেকে সিজদার পূর্ণ চার আয়াত পাঠ করা হোক বা শুধু فَاسْجُدُوْا لِلّٰهِ وَ اعْبُدُوْا পড়াহোক উভয় ক্ষেত্রে সিজদা ওয়াজিব হবে। অনুরূপ সূরা নাহল থেকে কেউ যদি তিন আয়াত পড়ে বা শুধুমাত্র
وَ لِلّٰهِ یَسْجُدُ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِ
পর্যন্ত পড়ে তার উপর সিজদা তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে।
প্রকাশ থাকে যে, হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকীসহ ফিকহের কিতাবাদিতে যে কোনো কোনো সিজদার আয়াতের পরিমাণ তিন/চার আয়াত পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে তা মূলত সিজদা সংশ্লিষ্ট মাযমূনের প্রতি লক্ষ্য রেখে বলা হয়েছে। অর্থাৎ এ সবজায়গায় বিষয়বস্তুটা তিন/চার আয়াত মিলে পূর্ণ হয়েছে।
এর অর্থ এ নয় যে, সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য পূর্ণ তিন/চার আয়াতই পড়া আবশ্যক।
-রদ্দুল মুহতার ২/১০৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ২৬১; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩৭২
মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে পাথরে বা খোদাই করে বিভিন্ন পঙক্তি,...
মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে পাথরে বা খোদাই করে বিভিন্ন পঙক্তি, আয়াত, দুআ বা বাণী লিখে রাখার হুকুম কী? এটা কি শরীয়তসম্মত? তাছাড়া কবর সনাক্ত করার জন্য কবরে নাম ও ঠিকানা লিখে রাখতে দেখা যায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে তা কি বৈধ? আশা করি সবিস্তারে জানাবেন।
মৃত ব্যক্তির কবরের উপর বা পাশে কুরআনের আয়াত, দুআ, কবিতা বা প্রশংসা-স্তুতিমূলক বাক্য লিখে রাখা নিষেধ। হাদীস শরীফে কবরে লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করা, তার উপর লেখা, কবরের উপর ঘর নির্মাণ করা এবং তা পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১০৫২
অবশ্য কখনো কবর সনাক্ত করার প্রয়োজন হলে মৃতের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় লিখে রাখার অবকাশ আছে। সাহাবী হযরত উসমান বিন মাযউন রা.-এর কবরের পাশে এ উদ্দেশ্যেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাথর রেখেছিলেন এমন বর্ণনা হাদীস শরীফে এসেছে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৯৮
এ বর্ণনার আলোকে ফকীহগণ বলেছেন, কবর পরিচয়ের স্বার্থে কবরের পাশে মৃতের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় লিখে রাখার অনুমতি রয়েছে।
Ñআদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩৩৬
আমার বাচ্চার বয়স ২ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই একজন আলেমকে...
আমার বাচ্চার বয়স ২ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই একজন আলেমকে দুধ পান করানোর সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আড়াই বছর পর্যন্ত পান করানো যাবে। তারপর হারাম হবে। এখন জানতে পারলাম, ২ বছরের পর দুধ পান করানো যাবে না।
আমার জানার বিষয় হল, দুই বছরের পর দুধ পান করানোর কোনো সুযোগ আছে কি না? এবং ঐ আলেমের কথা সঠিক কি না? দয়া করে দলিলসহকারে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী সন্তানকে দুধ পান করানোর মেয়াদ চান্দ্র বছর হিসেবে দুই বছর। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) আর মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে। (এ বিধান) তার জন্য যে দুধ পানের (মেয়াদ) পূর্ণ করতে চায়। -সূরা বাকারা : ২৩৩
আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আর তার (সন্তান) দুধ ছাড়ানো হয় দু বছরে। -সূরা লুকমান : ১৪
সুতরাং দুই বছর পূর্ণ হওয়ার পর সন্তানকে আর দুধ পান করানো যাবে না। তাই আড়াই বছর পর্যন্ত পান করানো যাবে- এ কথা ঠিক নয়।
-সূরা বাকারা : ২৩৩; তাফসীরে তবারী ৪৯৬২; মুখতাসারুত তহাবী ২২০; ফাতহুল কাদীর ৩/৩০৯; গুনইয়াতু যাবীল আহকাম শুরুম্বুলালীয়া ১/৩৫৫, ৩৫৬; আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৩
আমাদের মকতবে কিছু পুরাতন ছেঁড়া-ফাটা কুরআন শরীফ ও কায়েদা-আমপারা আছে।...
আমাদের মকতবে কিছু পুরাতন ছেঁড়া-ফাটা কুরআন শরীফ ও কায়েদা-আমপারা আছে। কিছু কুরআন শরীফের বিভিন্ন জায়াগা পোকা খেয়ে ফেলেছে। যার ফলে এগুলো আর পড়ার উপযুক্ত থাকেনি। হুযুরের নিকট জানতে চাচ্ছি, এসব কুরআন শরীফ ও কায়েদা-আমপারা কী করব? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী?
কুরআন শরীফ বা কায়েদা-আমপারা যদি ছিঁড়ে-ফেটে যায় কিংবা অন্য কোনো কারণে পড়ার উপযুক্ত না থাকে তাহলে একটি পবিত্র কাপড়ে পেঁচিয়ে ঘরবাড়িতে আলমারি বা এমন কিছুতে হেফাযতে রেখে দিবে। আর বাসাবাড়িতে নিরাপদে যত্নসহকারে রাখা সম্ভব না হলে পবিত্র কাপড় পেঁচিয়ে চলাচলমুক্ত কোনো পবিত্র স্থানে দাফন করে দিবে। অথবা ভারি কোনো বস্তুর সাথে বেঁধে প্রবহমান নদী বা জলাশয়ে কিংবা পুকুরে ডুবিয়ে দিবে।
-ফাযাইলুল কুরআন, আবু উবায়দ পৃ. ২৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪২২; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৮০; উমদাতুল কারী ২০/১৯; আলফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়াহ ১/৭৬
আমাদের দেশে প্রচলিত দুটি বিষয় সম্পর্কে হুযুরের কাছে জানতে চাই-১....
আমাদের দেশে প্রচলিত দুটি বিষয় সম্পর্কে হুযুরের কাছে জানতে চাই-
১. মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষের কয়েকটি আয়াত পড়া কি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
২. দাফনের পর বা কবর যিয়ারতের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করা এবং দুআর সময় হাত তোলাও কি সহীহ? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।
(১) : হাঁ, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার মাথার নিকট সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষের কয়েকটি আয়াত পড়া সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আলা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাকে আমার আববা বলেছেন, বৎস! আমি যখন ইন্তিকাল করব আমার জন্য একটি লাহাদ কবর খনন করবে এরপর যখন আমাকে কবরে রাখবে তখন এই দুআ পড়বে بسم الله و على ملة رسول الله (অর্থ) ‘আল্লাহর নামে এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বীনের উপর আপনাকে দাফন করছি।’ তারপর আমার কবরে মাটি দিয়ে দিবে এবং আমার শিয়রে সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষের কয়েকটি আয়াত পড়বে। কেননা আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উক্ত আয়াতগুলো পড়তে শুনেছি। -তাবারানী কাবীর ১৯ : ২২; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/১৬২; আসারুস সুনান, হাদীস ১১০৮
(২) : আর দাফন করার পর বা কবর যিয়ারতের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করা এবং দুআ করার সময় হাত তোলাও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত ওসমান রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত ব্যক্তিকে কবর দিতেন তখন তার কবরের পাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন এবং বলতেন তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফিরাতের দুআ কর এবং সওয়াল-জওয়াবের সময় অবিচল থাকার দুআ কর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২১৩
অন্য হাদীসে এসছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি আমি যেন আজও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তাবুক যুদ্ধের সময় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ যুলবিযাদাইন রা.-এর কবরে নেমেছেন, সাথে আবু বকর ও ওমর রা.-ও আছেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দাফন করার পর কেবলামুখী হয়ে দুহাত তুলে বলছেন- হে আল্লাহ আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট আপনিও তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান...। -হিলয়াতুল আউলিয়া ১: ১২২; ফাতহুল বারী ১১/১৪৯
আরেক হাদীসে এসেছে, হযরত আয়শা রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে আমার বাড়িতে ছিলেন। গভীর রাতে তিনি যখন বুঝলেন আমি ঘুমিয়ে পড়েছি তখন আস্তে আস্তে দরজা খুলে বাহিরে বের হলেন। আমি তখনও ঘুমাইনি তাই আমি তাঁর পেছনে পেছনে বের হলাম এবং দেখলাম তিনি বাকীতে গিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং (দুআর জন্য) তিনবার হাত তুললেন...। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রা. বলেন, হযরত আনাস রা. যখন কোনো মৃত ব্যক্তিকে কবর দিতেন তখন কবরের পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ! আপনার বান্দাকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সুতরাং আপনি তাকে দয়া করেন এবং রহম করেন। হে আল্লাহ! তার কবরকে তার জন্য প্রশস্ত করে দিন এবং তাকে উত্তম রূপে কবুল করে নিন। হে আল্লাহ! সে যদি আপনার নেক বান্দা হয়ে থাকে তাহলে তার ছাওয়াব আরো বাড়িয়ে দিন আর যদি সে গুনাহগার হয়ে থাকে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৩৪; সুনানে বায়হাকী ৩/১৬২; মাজমাউয যওয়ায়েদ ৩/১৬২; ইলাউস সুনান ৮/৩৪২
সূরা ফালাক ও নাস কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে? কিছু কিছু লাইব্রেরীর...
সূরা ফালাক ও নাস কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে? কিছু কিছু লাইব্রেরীর কুরআন শরীফে দেওয়া আছে মাদানী আবার কিছু কিছু লাইব্রেরীর কুরআন শরীফে দেওয়া আছে মক্কী। কোনটা সঠিক অনুগ্রহ করে জানালে খুব উপকৃত হব।
সূরা ফালাক ও নাস মক্কী না মাদানী এ বিষয়ে দুটি মত রয়েছে। হযরত জাবের রা. ও হাসান বসরীসহ কয়েকজন তাবেয়ী সূরা দুটিকে মক্কী বলেছেন। পক্ষান্তরে রঈসুল মুফাসসিরীন আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা., কাতাদাসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুফাসসিরগণ এই দুটিকে মাদানী বলেছেন। তাফসীরে রূহুল মাআনীতে আল্লামা মাহমূদ আলূসী রাহ. মাদানী হওয়ার মতটিকে সহীহ বলেছেন।
এছাড়া সূরা দুটি যে হিজরতের পর নাযিল হয়েছে এ সম্পর্কে একটি বর্ণনা ইবনে হাজার রাহ. ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন। তা হল, সপ্তম হিজরীর মুহাররম মাসে খাযরাজের শাখা গোত্র বনু যুরাইকের লাবীদ নামক এক ইহুদী অন্যান্য ইহুদী সর্দারদের নির্দেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাদু করে এবং জাদুর উপকরণসমূহকে মদীনায় অবস্থিত যারওয়ান নামক কূপের নিচে পাথর চাপা দিয়ে রাখে। ফলে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ প্রেক্ষিতেই নাযিল হয় উক্ত সূরা দুটি।
-ফাতহুল বারী ১০/২৩৭; রূহুল মাআনী ৩০/২৭৮; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৯১৭; শরহু মুশকিলুল আছার ১৫/১৮০
ঋতুমতী মহিলার জন্য দৈনন্দিনের আমল হিসেবে সকালে সূরা ইয়াসিন ও...
ঋতুমতী মহিলার জন্য দৈনন্দিনের আমল হিসেবে সকালে সূরা ইয়াসিন ও সন্ধ্যায় সূরা ওয়াকিয়া পড়া জায়েয আছে কি? একটি মাসিক পত্রিকায় তা জায়েয লিখেছে। তাই বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন।
হায়েয-নেফাস অবস্থায় কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করা জায়েয নেই। নিয়মিত আমল হিসেবেও সূরা ইয়াসিন, ওয়াকিয়া ইত্যাদি পড়া যাবে না। পত্রিকার ঐ কথাটি ঠিক নয়।
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, ঋতুমতী মহিলা এবং যার উপর গোসল ফরয হয়েছে তারা যেন সামান্য পরিমাণও কুরআন তিলাওয়াত না করে।
অবশ্য ফকীহগণ বলেছেন, যে সকল আয়াতে দুআর অর্থ রয়েছে তা দুআ হিসেবে পড়া যাবে। যেমন,
ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار
ইত্যাদি।
-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৩১; ইলাউস সুনান ১/৩৭৬; শরহুল মুনইয়াহ, পৃষ্ঠা : ৫৭; রদ্দুল মুহতার ১/২৯৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ ৭৭
গত ২১ মে ২০১৩ তারিখে নোয়াখালির এক মসজিদে বয়ানে শুনেছি...
গত ২১ মে ২০১৩ তারিখে নোয়াখালির এক মসজিদে বয়ানে শুনেছি যে, দাওয়াতের কাজে বের হয়ে এক পা ফেলার পর অপর পা ফেলার সাথে সাথেই আলাহ তাআলা তার পূর্বজীবনের গুনাহ মাফ করে দিবেন। তাদের আমলনামায় ১৭ জন আলেম, ২৩ জন মিসকীন, ৩০ জন শহীদের ছওয়াব লিখে দিবেন এবং আল্লাহ তাদেরকে নিজে হিসাব দিয়ে জান্নাতে পাঠিয়ে দিবেন। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এ বিষয়গুলি কতটুকু বাস্তব? দলিল-প্রমাণসহ বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ রইল।
প্রশ্নে ফযীলতের যে কথাগুলি বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এগুলো কুরআন-সুন্নাহর কথা নয়। নিজ থেকে বানিয়ে ফযীলতের কথা বলা এবং লোকদের মাঝে তা প্রচার করা দ্বীনের মধ্যে সংযোজনের অন্তর্ভূক্ত, যা সম্পূর্ণ হারাম ও মারাত্মক গুনাহ। আর হাদীস হিসেবে তা প্রচার করা আরো ভয়াবহ গুনাহ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনে এমন কিছু সংযোজন করল, যা দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত নয় তবে তা প্রত্যাখ্যাত।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২৬৯৭
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করবে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১০৭
প্রকাশ থাকে যে, দ্বীনের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহয় বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে। তাই দাওয়াতের গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনার ক্ষেত্রে এসব সুস্পষ্ট আয়াত ও হাদীস থেকে বর্ণনা করা কর্তব্য। দ্বীনী বিষয়ে না জেনে কিছু বলা, লোকমুখে প্রচলিত কথাবার্তা প্রচার করা দ্বীনের ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।
স্কুলের ধর্ম বইয়ে কুরআন শরীফের সূরা, দুআ-দরূদ ইত্যাদি লেখা থাকে।...
স্কুলের ধর্ম বইয়ে কুরআন শরীফের সূরা, দুআ-দরূদ ইত্যাদি লেখা থাকে। আমাদের বাসার পাশে ভাঙ্গারি দোকানগুলোতে অনেকে পুরাতন বই বিক্রির সময় ধর্ম বইগুলোও কেজি হিসেবে বিক্রি করে। যা দ্বারা তারা প্যাকেট বানিয়ে বিক্রি করে। জানতে চাই, আল্লাহ তাআলার নাম বা কোনো আয়াত কিংবা দুআ লেখা কাগজ দিয়ে প্যাকেট বানানো ও সেগুলো পণ্য দেওয়ার কাজে ব্যবহার করার হুকুম কী?
কুরআনে কারীমের আয়াত, হাদীস শরীফ অথবা আল্লাহ তাআলার নাম কিংবা কোনো যিকির লেখা কাগজ অধিক সম্মানের যোগ্য। তা সংরক্ষণ করে রাখা জরুরি। এসব কাগজ দিয়ে প্যাকেট বানানো ও তা গ্রাহককে পণ্য দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা নাজায়েয। তাই এ ধরনের বই ও কাগজ ভাঙ্গারীর কাছে বিক্রি করাও জায়েয হবে না।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২২
আমি একটি হেফযখানার শিক্ষক। আমাদের হেফযখানার অধিকাংশ ছাত্রই নাবালেগ। ছাত্রদের...
আমি একটি হেফযখানার শিক্ষক। আমাদের হেফযখানার অধিকাংশ ছাত্রই নাবালেগ। ছাত্রদের থেকে সবক শোনার সময় প্রায়ই সিজদার আয়াত শুনতে হয়। জানতে চাই, এ সকল নাবালেগ ছাত্রদের থেকে সিজদার আয়াত শোনার কারণে আমার উপর কি সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে?
বুঝমান নাবালেগ শিশু থেকে সিজদার আয়াত শুনলে শ্রোতার উপর সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হয়। হেফযখানার ছাত্ররা সাধারণত বুঝমানই হয়ে থাকে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হেফযের ছাত্র নাবালেগ হলেও তাদের থেকে সিজদার আয়াত শুনলে সিজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে।
-কিতাবুল আছল ১/৩১১; মাবসূত, সারাখসী ২/৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০৭; শরহুল মুনইয়াহ ৫০০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৯
সূরা আলেইমরান-এর ১০৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ জানতে চাই। বিশেষ করে...
সূরা আলেইমরান-এর ১০৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ জানতে চাই। বিশেষ করে ঈমানের পর কুফর দ্বারা কাদেরকে বোঝানো হয়েছে? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত আয়াতের তরজমা হল, ‘সেই দিন (কিয়ামতের দিন) কতক মুখ উজ্জ্বল হবে আর কতক মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের মুখ কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফর অবলম্বন করেছিলে? সুতরাং তোমরা এ শাস্তি আস্বাদন কর, যেহেতু তোমরা কুফরি করতে।’
অধিকাংশ তাফসীরবিদদের মতে উক্ত আয়াতে চেহারার শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতা দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঈমানের নূর। আর কৃষ্ণতা দ্বারা বুঝানো হয়েছে কুফরের অন্ধকার। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন কারো চেহারা ঈমানের নূরে আলোকিত ও উজ্জ্বল হবে। আর কুফরের অন্ধকারের কারণে কারো চেহারা হবে কালো ও অন্ধকারাচ্ছন্ন।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত সাহাবী উবাই ইবনে কাব রা. বলেছেন, কাফেরদের চেহারা কালো হবে আর মুমিনদের চেহারা হবে উজ্জ্বল ও শুভ্র।-তাফসীরে তাবারী ৩/৩৮৭
ইমাম ইবনে জারির তাবারী রাহ. এ প্রসঙ্গে কয়েকটি মত উদ্ধৃত করার পর উবাই ইবনে কাব রা.-এর উক্ত মতকে অধিক নির্ভরযোগ্য বলেছেন। আর ‘ঈমান আনয়নের পর কি তোমরা কুফরী করেছিলে?’ এই আয়াতে কাফেরদের ঈমান আনার দ্বারা উদ্দেশ্য ওই ঈমান, যার সম্পর্ক রূহের জগতের সাথে। অর্থাৎ যখন সকল রূহ আল্লাহ তাআলাকে রব হিসেবে স্বীকার করেছিল এবং বলেছিল, হ্যাঁ, আপনি আমাদের রব। অতপর দুনিয়াতে এসে তারা কুফুরি অবলম্বন করেছে।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য আরো দেখুন : তাফসীরে রূহুল মাআনী ৪/২৫; তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ২/১৪৭
আমাদের মসজিদের জন্য ওয়াকফ কৃত জমি প্রায় ২০ কাঠা। এদিকে...
আমাদের মসজিদের জন্য ওয়াকফ কৃত জমি প্রায় ২০ কাঠা। এদিকে আমাদের এলাকায় একটা হেফযখানা ও কওমী মাদরাসার খুব প্রয়োজন। এখন এলাকার লোকেরা মসজিদের জমিতে মাদরাসা করতে চাইছে। এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী? মসজিদের জমিতে মাদরাসা করা যাবে?
আপনাদের এলাকায় হেফযখানা ও কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জরুরত হলে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকেই অগ্রসর হতে হবে। এজন্য যৌথ উদ্যোগে পৃথক জায়গা রেজিস্ট্রি করে তাতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত মসজিদের ঐ পুরো জমি যদি মসজিদের কাজে না লাগে তাহলে সেখানে মসজিদের অধীনে কুরআনী তালীমের জন্য পৃথক ব্যবস্থা করা জায়েয হবে। জেনে রাখা দরকার যে, কুরআন-হাদীসের শিক্ষা, দ্বীনী শিক্ষার প্রচার-প্রসার মসজিদের উদ্দেশ্যাবলীর অন্তর্ভুক্ত। দ্বীনী তালীমের এ ধারা মসজিদে নববী থেকেই চলে আসছে। তাই মসজিদের খালি জায়গায় মসজিদের ব্যবস্থাপনায় কুরআন-হাদীস ও দ্বীনী মৌলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়া জায়েয হবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৮৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ২২৭; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪, ৩৬
আমাদের এলাকার কিছু লোক উসীলা ধরে দুআ করাকে জরুরি মনে...
আমাদের এলাকার কিছু লোক উসীলা ধরে দুআ করাকে জরুরি মনে করে। তারা মনে করে, উসীলা ছাড়া আল্লাহ তাআলা গুনাহগারদের দুআ কবুল করেন না, গুনাহ মাফ করেন না। এ ধারণা কি ঠিক?
যদি ঠিক না হয় তাহলে কিছু আয়াত ও হাদীসের সরাসরি অনুবাদ উদ্ধৃতিসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নোক্ত ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কুরআন কারীমের অনেক আয়াত এবং বহু হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, আল্লাহ তাআলা কোনো প্রকার উসীলা ছাড়াই সরাসরি গুনাহগার বান্দার দুআ কবুল করেন এবং উসীলা ছাড়া গুনাহগারদের তাওবাও কবুল করেন ও গুনাহসমূহ মাফ করে দেন। এ সম্পর্কে কিছু আয়াত ও হাদীস নিম্নে পেশ করা হল-আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে বলেছেন, (তরজমা) হে নবী! আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করে তখন আপনি তাদেরকে বলুন, আমি তো তাদের নিকটেই আছি। যখনই কোনো আহবানকারী আমাকে ডাকে তখনই আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকি।-সূরা বাকারা : ১৮৬
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, (তরজমা) হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ, তোমরা আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন।-সূরা যুমার : ৫৩
আবু যর গিফারী রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে কুদসীতে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা দিন রাত গুনাহ কর আর আমি সকল গুনাহ মাফ করি। তাই তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করব।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৭৭
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সম্বোধন করে বলেছেন, হে যুবক! তুমি যদি কোনো কিছু চাও, তবে আল্লাহর নিকট চাইবে। আর যদি সাহায্য প্রার্থনা কর তবে আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে ...।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৫১৬
উপরোল্লেখিত আয়াত ও হাদীসসমূহ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা গুনাহগারদের তাওবা, ইস্তিগফার ও দুআ কোনো প্রকার উসিলা ছাড়াই সরাসরি কবুল করেন।
অবশ্য কেউ যদি দুআ কবুল হওয়ার জন্য উসীলাকে জরুরি মনে না করে তাহলে উসীলার কোনো কোনো প্রকার কিছু শর্তের সাথে বৈধ আছে।
(বিস্তারিত জানার জন্য দেখা যেতে পারে-‘তাসাওউফ তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ’, পৃ.: ১১৪-১১৫)-আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ ১৪/১৫১; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৫/৬২৩-৬২৫
হায়েয চলাকালীন কাউকে কুরআন শিখানো জায়েয আছে কি এবং এক্ষেত্রে...
হায়েয চলাকালীন কাউকে কুরআন শিখানো জায়েয আছে কি এবং এক্ষেত্রে পূর্ণ আয়াত একত্রে তেলাওয়াত করা যাবে কি?
ঋতুস্রাব অবস্থায় মহিলাদের জন্য কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা, শিক্ষা দেওয়া ও স্পর্শ করা কোনোটিই জায়েয নয়।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঋতুমতি মহিলা ও গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি যেন কুরআন মজীদ না পড়ে।-আলইলাল, ইবনে আবী হাতিম ১/৪৯
তাই যে সকল মহিলা কুরআন মজীদ শেখা-শেখানোর সাথে সম্পৃক্ত তারা অপবিত্রতার সময় তা থেকে বিরত থাকবে। প্রয়োজনে অন্য মহিলা দ্বারা কাজ সমাধা করে নিবে। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে তারা কেবল শিার্থীদের পড়া শুনতে পারবে এবং প্রয়োজনের সময় দু-এক শব্দ বলে দিতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে পূর্ণ আয়াত একত্রে তিলাওয়াত করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৩০৩; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১০৯০; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭২; আলবাহরুর রায়েক ১/১৯৯; ফাতহুল কাদীর ১/১৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৭৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪০১
সূরা বনী ইসরাইলের ২৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, পিতামাতাকে...
সূরা বনী ইসরাইলের ২৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, পিতামাতাকে উফ শব্দটি বলা যাবে না। আর বাহ্যত এমনই বোঝা যায়। কিন্তু একজন আলেম বলেছেন, উফ শব্দ বলা যাবে না-এর অর্থ হল পিতামাতাকে এমন কোনো কথা বলা যাবে না, যার কষ্টের কারণে তারা উফ শব্দ বলেন। এ বিষয়ে দলিল-প্রমাণসহ সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
সূরা বনী ইসরাইলের উক্ত আয়াতের তরজমা এবং সঠিক তাফসীর নিম্নে পেশ করা হল।
তরজমা : পিতামাতার কোনো একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদেরকে (উফ) পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না; বরং তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো।-সূরা বনী ইসরাইল : ২৩
আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর
ইমাম ইবনে জারীর তবারী রাহ. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, পিতামাতা উভয় থেকে কিংবা কোনো একজন থেকে কষ্টদায়ক কোনো কিছু দেখলে বিরক্ত হয়ে উফ বলো না।-তাফসীরে তবারী ৮/৫৯
অর্থাৎ আলোচ্য আয়াতে পিতামাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের কোনো আচরণে কষ্ট পেয়ে সন্তানের জন্য উফ বলতে এবং বিরক্তি প্রকাশমূলক কোনো আচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে সন্তানকে উফ বলতে নিষেধ করা হয়েছে। আর উফ শব্দ বলে এমন আচরণ বোঝানো হয়েছে, যদ্দারা বিরক্তি প্রকাশ পায়। তাফসীরবিদগণ বলেন, এক্ষেত্রে পিতামাতার কথায় বা কাজে বিরক্ত হয়ে তাদেরকে শুনিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নেয়াও এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।-তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৫/৪৬৬
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পীড়াদানের ক্ষেত্রে উফ বলার চেয়ে যদি আরো হালকা কোনো শব্দ থাকত তবে তাও উল্লেখ করা হত। (অর্থাৎ উফ শব্দটি তৎকালীন আরবে সর্বনিম্ন স্তরের পীড়াদায়ক শব্দ বলে বিবেচিত হত।)-আলজামিউ লি আহকামিল কুরআন ১০/১৫৯
মোটকথা সন্তানের যে কথা বা কাজে পিতা-মাতা উভয়ে কিংবা কোনো একজন সামান্যতমও কষ্ট পান, সে কথা বা কাজ উক্ত আয়াতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যাখ্যা সঠিক নয়।
-তাফসীরে তাবারী ৮/৫৯; আলজামিউ লিআহকামিল কুরআন ১০/১৫৯; রুহুল মাআনী ১৫/৫৫; মাআরিফুল কুরআন ৫/৪৬৬; আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী ৩/১১৯৮
আমার পিতা গত কয়েক দিন আগে ইন্তিকাল করেছেন। আমরা চার...
আমার পিতা গত কয়েক দিন আগে ইন্তিকাল করেছেন। আমরা চার ভাই। চার ভাইয়ের মধ্যে ছোটজন পিতামাতার অবাধ্য এবং মদপানসহ বিভিন্ন প্রকার গুনাহর সাথে জড়িত। তাই পিতা তার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। এজন্য ইন্তিকালের এক মাস পূর্বে তাকে সামনে রেখে আমাদেরকে বললেন যে, তোমরা আমার সম্পদ থেকে তাকে কোনো অংশ দিবে না। আমি তাকে ত্যাজ্য করে দিলাম। তবে তিনি সম্পদ অন্যদের মাঝে বণ্টন করে দেননি। জানার বিষয় হল, পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে ঐ ভাই কি হিস্যা পাবে? না পিতার ত্যাজ্য করার কারণে মিরাস থেকে বঞ্চিত হয়ে গেছে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার ঐ ভাইও অন্যদের মতো সমান মিরাস পাবে। পিতা তাকে ত্যাজ্য করার কারণে তার মিরাস বাতিল হয়ে যায়নি। তাই চার ভাইয়ের মধ্যে সমানভাবে সম্পদ বণ্টন করতে হবে।
উল্লেখ্য, কোনো সন্তান যদি পিতার অবাধ্য হয় এবং শরীয়াহ অনুযায়ী না চলে তাহলে পিতার জন্য তাকে অন্যদের তুলনায় সম্পদ কম দেওয়ার অধিকার আছে। তবে সেক্ষেত্রে শর্ত হল, পিতা তার জীবদ্দশায় সকল সম্পদ বণ্টন করে প্রত্যেককে দখল বুঝিয়ে দিবে। কিন্তু কোনো ওয়ারিসকে একেবারে সমুদয় সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা বৈধ নয়।
-সূরা নিসা (৪) : ১১; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৬/২১৫; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১০০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৬৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৩৬৪; মাবসূত সারাখসী ১১/৪৮
শুনেছি, কোনো মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরের কাছে দাঁড়িয়ে...
শুনেছি, কোনো মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরের কাছে দাঁড়িয়ে দুআ করলে মৃত ব্যক্তি নিজে সাহস পান এবং ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ হয়। কুরআন-হাদীসের আলোকে জানতে চাই, উক্ত কথাগুলো সঠিক কি না?
প্রশ্নোল্লিখিত কথা দুটির প্রায় কাছাকাছি বক্তব্য নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় পাওয়া যায়। এক বর্ণনায় আছে, দাফন শেষে মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে কিছু সময় অবস্থান করলে তার নিঃসঙ্গতাভাব দূর হয়।
অপর একটি বর্ণনায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর সেখানে তার মাগফিরাতের জন্য এবং সে যেন দৃঢ়তার সাথে ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে সেজন্য দুআ করার কথা বর্ণিত হয়েছে।
বর্ণনা দুটি নিম্নে পেশ করা হল-
এক. আবদুর রহমান ইবনে শুমাছা আলমহরী রাহ. বলেন, আমর ইবনে আস রা. যখন মুমূর্ষ অবস্থায় ছিলেন তখন তার কাছে আমরা উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে (প্রথমে আমাকে কবরে রেখে) আমার উপর পর্যাপ্ত পরিমাণ মাটি দিবে। এরপর একটি উট জবাই করে তার গোশত বণ্টন করতে যে পরিমাণ সময় লাগে ততটুকু সময় আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে। যেন এর দ্বারা আমার নিঃসঙ্গতার ভীতি দূর হয়ে যায় এবং আমি আমার রবের প্রেরিত দূতকে বুঝে-শুনে জবাব দিতে পারি। (সহীহ মুসলিম ১/৭৬, হাদীস : ১২১; মুসনাদে আহমদ ৪/১৯৯)
সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার উববী রাহ. বলেন, উক্ত হাদীসে মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তার কবরের পাশে অবস্থান করার কথা এজন্য বলা হয়েছে যেন এ সুবাদে সে কবরের সওয়াল-জওয়াবে দৃঢ় থাকতে পারে।-শরহুল উববী ১/৩৮৬
অপর বর্ণনাটি হল, উসমান ইবনে আফফান রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মাইয়্যেতকে দাফন করার পর সেখানে অবস্থান করতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং দুআ কর। যেন আল্লাহ তাআলা তাকে দৃঢ়তার সাথে ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার তাওফীক দান করেন। কেননা সে এখনই জিজ্ঞাসিত হবে। (সুনানে আবু দাউদ ২/৪৫৯, হাদীস : ৩২১৩
আরো দেখুন : আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৪/৫৬; ইলাউস সুনান ৮/৩৪২
শুনেছি, সূরা তাহরীমের ৮ নং আয়াতে ‘তাওবাতান নাসূহা’-এর نصوح শব্দটি...
শুনেছি, সূরা তাহরীমের ৮ নং আয়াতে ‘তাওবাতান নাসূহা’-এর نصوح শব্দটি নাকি এক ব্যক্তির নাম এবং ‘তাওবাতান নাসূহা’ দ্বারা ঐ ব্যক্তির তাওবার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। জানতে চাই, এ কথাটি কি সঠিক? আর উক্ত শব্দের মূল অর্থ কী?
আপনার শোনা কথাটি ঠিক নয়। উক্ত আয়াতে نصوح শব্দটি কোনো ব্যক্তির নাম নয়। বরং এটি তার পূর্বের শব্দ توبة এর বিশেষণ (সিফাত)। শব্দটি نصحথেকে উদগত, যার অর্থ খাঁটি করা এবং এ অনুযায়ী ‘তাওবাতান নাসূহা’- এর অর্থ হল বিশুদ্ধ এবং খাঁটি তওবা।
হযরত নুমান বিন বশির রা. বলেন, আমি হযরত উমর রা.কে বলতে শুনেছি, ‘তাওবাতান নাসূহা’ হল কোনো গুনাহ ভবিষ্যতে না করার দৃঢ় সংকল্প করা এবং এরপর কখনো সে কাজ না করা।
-শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস : ৭০৩৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৬১২; তাফসীরে তবারী ১২/১৫৯; মাজমূ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ১৬/৫৭, ৫৯
দুই ব্যক্তির মাঝে একটি বিষয়ে মতভেদ হলে একজন অপরজনকে বলেছে,...
দুই ব্যক্তির মাঝে একটি বিষয়ে মতভেদ হলে একজন অপরজনকে বলেছে, আমি যা বলছি তা সত্য হলে তুমি আমাকে ১০০/-টাকা দিবে। আর মিথ্যা হলে আমি ১০০/-টাকা দিব। এরপর তারা তৃতীয় ব্যক্তির নিকট ২০০/-টাকা জমা দিয়েছে। জানতে চাই, এভাবে বাজি ধরা কি বৈধ হয়েছে?
এভাবে উভয় পক্ষ থেকে বাজি ধরা নাজায়েয। এটা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।
-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৪৬৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০৩
আমাদের বাড়ির পাশে একটি মাযার আছে। যাতে প্রতি বছর ওরস...
আমাদের বাড়ির পাশে একটি মাযার আছে। যাতে প্রতি বছর ওরস হয় এবং প্রচুর লোকের সমাগম হয়। এক ওরসের সময় বাড়ি থেকে শুনলাম মাইকে এক লোক বলছে, হাদীসে পাকে আছে, ‘ও আমার উম্মতেরা, যখন তোমরা কোন ব্যাপারে পেরেশান হবে তখন কবরবাসীদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবে।’ জানতে চাই, এটি বাস্তবেই হাদীস কি না।
এটি লোকমুখে হাদীস হিসেবে প্রসিদ্ধ হলেও বাস্তবে হাদীস নয়, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ., শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. ও আল্লামা আবদুল হাই লখনভী রাহ.সহ বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম সুস্পষ্ট ভাষায় একে মওযূ ও জাল বলেছেন। অতএব একে হাদীস মনে করা যাবে না এবং এ ধরনের আকীদাও পোষণ করা যাবে না। আর এমন কোনো কাজও করা যাবে না।প্রকাশ থাকে যে, কবরবাসীর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা শিরক। কবরবাসী যেই হোক না কেন সে কোনো ক্ষতি থেকে হেফাযত করতে, কোনো বিপদ হতে রক্ষা করতে কিংবা কোনো উপকার পৌঁছাতে পারে না। এগুলো কেবল আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়া যায়। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) সেই ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কেয়ামত দিবস পর্যন্ত তাতে সাড়া দিবে না এবং এগুলি তাদের প্রার্থনা সম্বন্ধেও অবহিত নয়। (সূরা আহকাফ : ৫)
হাদীস শরীফে আছে, যখন তুমি কিছু চাইবে আল্লাহর কাছে চাও। যখন তুমি সাহায্য প্রার্থনা করবে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর। জেনে রেখো, পুরো উম্মত যদি তোমার উপকার করতে একত্রিত হয় আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য যা লিখে রেখেছেন তা ব্যতীত তারা তোমার বিন্দুমাত্রও উপকার করতে পারবে না। তদ্রূপ তারা যদি তোমার ক্ষতি করতে একত্রিত হয় তবে আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য যা লিখে রেখেছেন তা ব্যতীত তারা তোমার বিন্দুমাত্রও ক্ষতি করতে পারবে না।
-জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৫১৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৬৬৯; ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ১/৩৫৬, ১১/২৯৩; মাজমুআতুল ফাতাওয়া ১/১৩৮; ইক্বতিযাউস সিরাতিল মুসতাকিম লিমুখালাফাতি আসহাবিল জাহীম ২/৬৮৩; ফাতাওয়া আযীযী ১/১৭৮
আমি একটি বইয়ে পড়েছি যে, হযরত উসমান গনী রা.কে বিদ্রোহীরা...
আমি একটি বইয়ে পড়েছি যে, হযরত উসমান গনী রা.কে বিদ্রোহীরা কুরআন মজীদ তিলাওয়াতরত অবস্থায় শহীদ করেছিল এবং সর্বশেষ যে আয়াত তিনি তিলাওয়াত করেছিলেন তার উপরই তাঁর শরীরের রক্ত ছিটকে পড়েছিল। উপরোক্ত তথ্যটি কি সঠিক? যে আয়াতটির উপর রক্ত লেগেছিল সেটি কোন আয়াত? তাঁর হত্যাকারীর নাম কী?
হ্যাঁ, এই তথ্য সঠিক। নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত আছে যে, বিদ্রোহীরা যখন হযরত উসমান রা.-এর বাসগৃহ অবরোধ করে তখন তিনি কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করছিলেন। সূরা বাকারার ১৩৭ নম্বর আয়াত
فسيكفيكهم الله، وهو السميع العليم
এ পৌঁছলে বিদ্রোহীদের মধ্য থেকে কিনানা বিন বিশর আততুজীবী নামক এক লোক ঘরে ঢুকে পড়ে এবং তীরের ধারালো ফলা দিয়ে তাঁকে আঘাত করে। ফলে উক্ত আয়াতের উপর তাঁর শরীরের রক্ত ছিটকে পড়ে।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২১/৩১৫; আলমাতালিবুল আলিয়াহ ১০/৩২; আলবিদায়াহ ওয়াননিহায়া ১০/৩১০; তারীখুল ইসলাম, যাহাবী ৩/১৩২; আলকামিল ফিততারীখ ৩/১৭৯; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/২৮০
শুনেছি, কারূনের ধনভান্ডারের চাবি সত্তরটি উট বহন করত। কথাটি কি...
শুনেছি, কারূনের ধনভান্ডারের চাবি সত্তরটি উট বহন করত। কথাটি কি সহীহ? কুরআন-হাদীসে কি এর প্রমাণ আছে?
কুরআন মজীদে কারূনের ধন সম্পদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে- اتينا من اتينا من الكنوز ما ان مفاتحه كنتوا بالعصبة أولى القوةوة অর্থ : এবং আমি তাকে এত অধিক পরিমাণ ধণভান্ডার দান করেছিলাম যে, তার চাবিসমূহ বহন করতে গিয়ে একদল শক্তিশালী মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ত। (সূরা কাছাছ : ৭৬) এ সম্পর্কে এরচেয়ে বেশি কিছু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণী তথা হাদীস শরীফে পাওয়া যায় না। তাই কুরআন মজীদে যতটুকু আছে এর বেশি কিছু বলা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। উপরন্তু বিষয়টি যেহেতু কোনো আকীদা বা আমলের সাথেও সম্পৃক্ত নয় তাই উল্লেখিত তথ্যের সত্যাসত্য যাচাইয়ের জন্য সময় ব্যয় করারও প্রয়োজ নেই।
-তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৬৩৬; তাফসীরে কুরতুবী ১৩/২০৬; তাফসীরে কাবীর ৯/১৫; তাফসীরে তাবারী ১০/১০১; তাফসীরে রুহুল মাআনী ২০/১১১; আদ্দুররুল মানসুর ৫/১৩৬
ফিকহের কিতাবে ঘোড়ার গোশত খাওয়াকে মাকরূহ বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে...
ফিকহের কিতাবে ঘোড়ার গোশত খাওয়াকে মাকরূহ বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঘোড়া জিহাদের কাজে ব্যবহার হয়। তাই সাধারণভাবে খাওয়া শুরু করলে জিহাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটবে।
বর্তমানে জিহাদে ঘোড়ার ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। বিশেষ করে আমাদের দেশে তো নেই-ই। তাহলে ঘোড়ার গোশত খাওয়া বর্তমানে জায়েয হবে কি? এ ব্যাপারে একজন মুফতী সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ঘোড়া সম্মানিত হওয়ার কারণে তা খাওয়া মাকরুহ। সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
বর্তমানে যুদ্ধক্ষেত্রে যদিও ব্যাপকভাবে ঘোড়ার ব্যবহার হয় না, কিন্তু তা একেবারে বন্ধও হয়ে যায়নি। তাই পুলিশ কেন্দ্রগুলোতে ঘোড়ার রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং নিয়মিত তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।
তাছাড়া হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত খালিদ ইবনে ওলীদ রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ার গোশত নিষেধ করেছেন। (সুনানে নাসাঈ ৮/২০৬; সুনানে আবু দাউদ ২/৫৩১)
নিষিদ্ধতার মূল সূত্র হচ্ছে উক্ত হাদীস। আর জিহাদের কাজে ব্যবহার হওয়ার বিষয়টি একটি প্রাসঙ্গিক দলিলমাত্র। অতএব জিহাদের কাজে ঘোড়ার ব্যবহার একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেও তা খাওয়া উপরোক্ত হাদীসের কারণে মাকরূহ তানযীহি থাকবে।
-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/১৮৩, ১৮৪; সহীহ বুখারী ২/৬০৬; সহীহ মুসলিম ২/১৫০; সুনানে আবু দাউদ ২/৫৩১; দারা কুতনী ৪/২৮৭; উমদাতুল কারী ১৭/২৪৮; বাযলুল মাজহূদ ১৬/১১৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৪৯; ইলাউস সুনান ১৭/১৪৩; ফাতহুল কাদীর ৮/৪১৯; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলালমারাকী ১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯০; মুলতাকাল আবহুর ৪/১৬২; আযযখীরাহ ৪/১০১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩০৫
তেলাওয়াতের সময় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নাম এলে তেলাওয়াত...
তেলাওয়াতের সময় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নাম এলে তেলাওয়াত বন্ধ করে দরূদ পড়া উচিত নাকি তেলাওয়াত শেষ করে দরূদ পড়া উচিত? জানিয়ে বাধিত করবেন।
কুরআন মজীদের আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম এলে তৎক্ষণাৎ তেলাওয়াতকারী ও শ্রবণকারী কারো উপর দরূদ পড়া ওয়াজিব নয়। এক্ষেত্রে তেলাওয়াত চালিয়ে যাওয়াই নিয়ম। তবে তেলাওয়াত শেষে দরূদ পড়ে নেওয়া উত্তম।
-রদ্দুল মুহতার ১/৫১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩১৬; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২২; আলমুহীতুল বুরহানী ৭/৫১০
আমরা কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করে রাখার সময় তা চুমু দিয়ে...
আমরা কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করে রাখার সময় তা চুমু দিয়ে থাকি। একজন বলল, এভাবে চুমু দেওয়া ঠিক নয়। জানতে চাই, কুরআন মজীদকে চুমু দেওয়া জায়েয কি না? আমরা আল্লাহ তাআলার কালামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে চুমু দিয়ে থাকি।
হ্যাঁ, কুরআন মজীদ চুমু খাওয়া জায়েয। এতে আল্লাহ তাআলার কালামের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রকাশ পায়। প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির কথা ঠিক নয়।
-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৮৪; আততিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন, পৃষ্ঠা : ২১২
আমরা জানি, প্রসিদ্ধ চার ফেরেশতার নাম হল : জিবরাঈল, ইসরাফীল,...
আমরা জানি, প্রসিদ্ধ চার ফেরেশতার নাম হল : জিবরাঈল, ইসরাফীল, মিকাঈল ও আযরাঈল আ.। জানতে চাই, এ নামগুলো কোনো সহীহ হাদীসে আছে কি না? থাকলে হাদীসটির মূল পাঠ উল্লেখ করার অনুরোধ রইল।
প্রশ্নে বর্ণিত চার ফেরেশতার আলোচনা কুরআন্তহাদীসের বহু জায়গায় আছে। কারো নামসহ আছে,কারো নাম ছাড়া তাঁর সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। সূরা বাকারার ৯৮ নং আয়াতে জিবরাঈল আ. ও মিকাঈল আ.-এর নামসহ তাদের আলোচনা রয়েছে। এছাড়া একাধিক সহীহ হাদীসে জিবরাঈল, মিকাঈল ও ইসরাফীল আ. এ তিন ফেরেশতার নাম উল্লেখ রয়েছে। যেমন্তসহীহ মুসলিম, হাদীস : ৭৭০; মুসনাদে আহমাদ ৩/২২৪
আর জান কবযকারী ফেরেশতাকে কুরআন ও হাদীসে ‘মালাকুল মাউত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার সুনির্দিষ্ট কোনো নাম উল্লেখ হয়নি। তবে কতক তাবেয়ীর বর্ণনায় আযরাঈল নামটি পাওয়া যায়।
হাফিযুল হাদীস ইবনে কাসীর রাহ. বলেন, জান কবযকারী ফেরেশতার কোনো নাম কুরআন মজীদ এবং সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়নি। তবে কিছু আছারে আযরাঈল নামটি আছে।-আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ১/১০৬
আরো দেখুন : আজবিবাতু ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. পৃ. ৯৭-১০৯; আলআযামা লিআবিশ শায়খ পৃ. ৪৪৫
উল্লেখ্য, ফেরেশতাদের উপর ঈমান আনার জন্য তাদের নাম জানা জরুরি নয়। কুরআন-হাদীসে ফেরেশতাদের যেসব গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর উপর ঈমান আনাই যথেষ্ট।
নিম্নে বর্ণিত ঘটনাটি সঠিক কি না জানতে চাই। একজন নবী...
নিম্নে বর্ণিত ঘটনাটি সঠিক কি না জানতে চাই। একজন নবী তার কওমকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা সবাই পিপাসার্ত ছিল। আল্লাহ হুকুম দিলেন যে, সামনে যে নদী আছে কেউ যেন ঐ নদীর পানি তিন ঢোকের বেশি পান না করে। আর একেবারে পান না করলে আরো ভালো।
এরপর যারা আল্লাহর হুকুম মেনে পানি পান করেনি তারা জীবনে কখনো পিপাসিত হয়নি। আর যারা তিন ঢোক পান করেছে তাদের ঐ সময়ের পিপাসা মিটেছে। আর যারা বেশি পান করেছে তাদের ঐ সময়েও পিপাসা মিটেনি; বরং পানি পান করতে করতে তারা মারা গেছে।
মূল ঘটনাটি কুরআন মজীদে বর্ণিত হয়েছে। সূরা বাকারার ২৪৬ নং আয়াত থেকে ২৫২ নং আয়াত পর্যন্ত মোট : ৭টি আয়াতে ঘটনাটি উল্লেখ হয়েছে। তবে প্রশ্নে ঘটনাটি যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা পুরোপুরি সহীহ নয়। ঘটনাটির বর্ণনা কুরআন মজীদে এভাবে এসেছে যে, (তরজমা) অতপর তালূত যখন সৈন্যদের নিয়ে রওনা হল, তখন সে (সৈন্যদেরকে) বলল, আল্লাহ একটি নদী দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন। যে ব্যক্তি সে নদীর পানি পান করবে সে আমার লোক নয়। আর যে তা আস্বাদন করবে না সে আমার লোক। অবশ্য কেউ নিজ হাত দ্বারা এক আঁজলা ভরে নিলে কোনো দোষ নেই। তারপর অল্পসংখ্যক লোক ছাড়া বাকি সকলে নদী থেকে (প্রচুর) পানি পান করল।
সুতরাং যখন সে (তালূত) এবং তাঁর সঙ্গের মুমিনরা নদীর ওপারে পৌঁছল তখন তারা (যারা তালূতের আদেশ মানেনি) বলতে লাগল, আজ জালূত ও তার সৈন্যদের সাথে লড়াই করার কোনো শক্তি আমাদের নেই। (কিন্তু) যাদের বিশ্বাস ছিল যে, তারা অবশ্যই আল্লাহর সঙ্গে গিয়ে মিলিত হবে, তারা বলল, এমন কত ছোট দলই না রয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুমে বড় দলের উপর জয়যুক্ত হয়েছে। আর আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন, যারা সবরের পরিচয় দেয়। (সূরা বাকারা : ২৪৯)
প্রশ্নে উল্লেখিত বিবরণ এবং কুরআন মজীদ ও তাফসীরগ্রন্থসমূহে বর্ণিত বিবরণে কয়েকটি পার্থক্য রয়েছে : ১. প্রশ্নে একজন নবীর ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ কুরআন মজীদে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম ‘তালূত’ বলা হয়েছে। তিনি বনী ইসরাঈলের বাদশাহ ছিলেন।
২. প্রশ্নে বলা হয়েছে, যারা পানি পান করেনি তারা সারা জীবন পিপাসিত হয়নি। যারা তিন ঢোক পান করেছে তাদের ঐ সময়ের পিপাসা মিটেছে। পক্ষান্তরে যারা বেশি পান করেছে তাদের ঐ সময়েও পিপাসা মিটেনি;বরং পানি পান করতে করতে তারা মারা গেছে। কুরআন মজীদ বা নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহে এভাবে বলা হয়নি। তাফসীরে শুধু এতটুকু আছে যে, যারা নিজ হাত দ্বারা এক আঁজলা ভরে পানি পান করেছে এতটুকু পানিই তাদের পিপাসা নিবারণ করেছে। কিন্তু যারা বেশি পান করেছে তাদের পিপাসা মিটেনি; বরং আরো বেড়েছে। সুতরাং এর চেয়ে বাড়িয়ে বলা উচিত নয়।-তাফসীরে কুরতুবী ৩/১৬৪, ১৬৬; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৪৪৯, ৪৫২; তাফসীরে তাবারী ২/৬৩৩; তাফসীরে আবুস সাউদ ১/২৮৬, ২৯০
আলকাউসার শাওয়াল ১৪৩১ হি. সংখ্যায় ‘যবীহুল্লাহ কে-এই প্রশ্ন কেন’’ শিরোনামে...
আলকাউসার শাওয়াল ১৪৩১ হি. সংখ্যায় ‘যবীহুল্লাহ কে-এই প্রশ্ন কেন’’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রবন্ধটি খুব ভালো লেগেছে। আলহামদুলিল্লাহ, এতে ইলমী ইতমিনান হয়েছে। কিন্তু প্রবন্ধটির এক স্থানে ‘তাফহীমুল কুরআন’-এর হাওয়ালা এসেছে। অথচ তা একটি বিতর্কিত কিতাব। এ সম্পর্কে আহলে হক ওলামায়ে কেরাম আপত্তি করে থাকেন। কিছু ভাই তো এমনও বলেছেন যে, দেখ, আলকাউসার তো এই কিতাবকে সমর্থন করছে! আশা করি, বিষয়টির উপর আলোকপাত করবেন। এতে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে।
যারা একথা বলেছেন তাঁরা আসলে প্রবন্ধটি ভালোভাবে পড়েননি এবং এর প্রেক্ষাপট সম্পর্কেও চিন্তা-ভাবনা করেননি। কেননা, যাদের উদ্দেশে প্রবন্ধটি লেখা হয়েছিল তারা সরাসরি ইসলামী ‘মাসাদির’ থেকে বিষয়টি বুঝতে সক্ষম নয়। তাদেরকে বোঝানোর পদ্ধতি হল, এ কথা দেখানো যে, মুসলমানদের সকল মত ও পথের মানুষ একমত যে, যবীহুল্লাহ হযরত ইসমাঈল আ., ইসহাক আ. নয়। এই বিষয়ে কোনো মাযহাব-মাসলাক ও মতবাদের ইখতিলাফ বা দ্বিমত নেই। এ হিসেবেই ‘তাফহীমুল কুরআন’-এর হাওলা দেওয়া হয়েছে। এ প্রবন্ধে আকরম খাঁর কিতাবেরও হাওলা দেওয়া হয়েছে। অথচ তার কিতাবে ফিকরী ও খতরনাক পর্যায়ের প্রচুর ভুল রয়েছে। কিন্তু উভয় কিতাবে যবীহুল্লাহ সংক্রান্ত আলোচনা ভালো লেখা হয়েছে, যা সহীহও বটে। আর কোনো প্রসঙ্গে একটি কিতাবের শুধু হাওলা দেওয়ার অর্থ কিতাবটিকে সমর্থন করা নয়। অতএব উপরোক্ত ধারণা ভুল।
ধারণা করা হয় যে, পীর হেদায়েতদাতা। পীর ধরলে সে হেদায়েত...
ধারণা করা হয় যে, পীর হেদায়েতদাতা। পীর ধরলে সে হেদায়েত পেয়ে যাবে। এ কথা কি ঠিক?
সুন্নত ও শরীয়তের অনুসারী হক্কানী পীর হেদায়েতের পথ প্রদর্শক। কোনো পীর হেদায়েতদাতা নয়। এমনকি কোনো নবীও হেদায়েতের মালিক ছিলেন না। হেদায়েতদাতা একমাত্র আল্লাহ তাআলা। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে পরিষ্কার বলা হয়েছে, (তরজমা) (হে নবী!) আপনি যাকে পছন্দ করেন তাকে সৎ পথে আনতে পারবেন না। তবে আল্লাহই যাকে ইচ্ছা করেন সৎ পথে আনয়ন করেন। কে সৎ পথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভালো জানেন। ’ (সূরা কাসাস : ৫৬)
অতএব কাউকে হেদায়েত দান করার ক্ষমতা কোনো মাখলুকের নেই। মাখলুক শুধু পথ দেখাতে পারে। হেদায়েত দেওয়ার মলিক একমাত্র আল্লাহ। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদের সূরা মায়েদা (আয়াত ৪১), সূরা জিন (আয়াত ২১-২৩) ও উল্লেখ আছে।
আমাকে একজন বলেছেন, পবিত্র কুরআনের যের, যবর, পেশ ও নুকতা...
আমাকে একজন বলেছেন, পবিত্র কুরআনের যের, যবর, পেশ ও নুকতা খলীফা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ নিজ হাতে লিখেছেন। এ কথাটি আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এত বড় অত্যাচারী শাসক এ মহৎ কাজের উদ্যোগ কীভাবে নিল? সত্যিই কি তিনি এই কাজ করেছেন?
হযরত উসমান রা. যে মুসহাফ তৈরি করেছেন তাতে হরফসমূহে নুকতা ও হরকত যের, যবর ও পেশ ছিল না। পরবর্তীতে কে এই মহৎ কাজটি করেছেন-এ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতভেদ আছে। তবে আল্লামা তকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম ‘উলূমুল কুরআন’-এ বলেন, এ সম্পর্কিত সকল বর্ণনা সামনে রাখলে প্রতীয়মান হয় যে, হরকত (যের, যবর ও পেশ) সর্বপ্রথম হযরত আবুল আসওয়াদ দুয়ালী রাহ. আবিষ্কার করেন। কিন্তু হরকতের রূপ এখন যেমন দেখা যায় তেমন ছিল না। তখন ছিল ফোঁটার মতো। যবরের জন্য উপরে এক ফোঁটা দেওয়া হত, যেরের জন্য নিচে এক ফোঁটা আর পেশের জন্য সামনে এক ফোঁটা দেওয়া হত। তানভীনের জন্য দুই ফোঁটা ব্যবহৃত হত। এরপর খলীল বিন আহমদ রাহ. হামযাহ ও তাশদীদের বর্তমান রূপটি আবিষ্কার করেন। এরপর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ইয়াহইয়া বিন ইয়ামার রাহ. ও নাসর বিন আসেম রাহ.-এর মাধ্যমে কুরআনে কারীমে হরফসমূহে নুকতা লাগানোর ব্যবস্থা করেন। এই সময়ই মূলত নুকতা ও হরকতের পার্থক্যের উদ্দেশ্যে হরকতের বর্তমান রূপটি অবলম্বন করা হয়।
আলইতকান ২/৪১৯; সুবহুল আ‘শা ৩/১৬০-১৬১; আলবুরহান ১/২৫০; উলূমুল কুরআন পৃ. ১৯৫
হযরত ইউসুফ আ.-এর ভাইরা ষড়যন্ত্র করে তাকে কূপে নিক্ষেপ করেছিল।...
হযরত ইউসুফ আ.-এর ভাইরা ষড়যন্ত্র করে তাকে কূপে নিক্ষেপ করেছিল। যার বর্ণনা কুরআন মজীদের সূরা ইউসুফে আছে। জানার বিষয় হল সেই ভাইরা কি নবী ছিলেন? তারা নবী হলে এ ঘটনা তাদের নবুওয়তপ্রাপ্তির আগের না পরের? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
নির্ভরযোগ্য বক্তব্য অনুযায়ী হযরত ইউসুফ আ.-এর যে ভাইরা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল তাদের কেউ নবী ছিলেন না। তারা ছিলেন সাধারণ মুমিন। পরবর্তীতে ইউসুফ আ. তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং তারা নিজেদের কৃতকর্মে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করেন।
সূরা ইউসুফ : ৯১-৯৮; তাফসীরে ইবনে কাছীর ২/৭২৬; রূহুল মাআনী ৭/১৮৪; মাআরিফুল কুরআন ৫/৩১; ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দাইমাহ ৩/২৮৩
আমাদের এলাকার পুরাতন টিনের মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মসজিদের...
আমাদের এলাকার পুরাতন টিনের মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মসজিদের কাছাকাছি নতুন আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন মসজিদের কারণে পুরাতন টিনসেড মসজিদটি অনাবাদ হয়ে পড়ে। এখন সে স্থান অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। জানতে চাই, এ সম্পর্কে আমাদের করণীয় কী?
কোনো স্থানে মসজিদ হয়ে গেলে ঐ স্থান কিয়ামত পর্যন্ত মসজিদের জন্য নির্ধারিত হয়ে যায়। ঐ স্থান মসজিদ ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহার করা জায়েয নয়। তাই নতুন মসজিদের কারণে পুরাতন মসজিদের প্রয়োজন না থাকলেও তা মসজিদ হিসাবে হেফাযত করতে হবে। অস্থায়ীভাবে তাতে কুরআন মজীদের তা’লীম ইত্যাদি দ্বীনী কাজ চালু রাখা যেতে পারে। তবে মসজিদের আদাব বজায় রেখে কাজ করতে হবে। পরবর্তীতে যখন নিয়মিত জামাত করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তখন তাতে জামাত চালু করবে। অবশ্য যদি সম্ভব হয় তাহলে দুই মসজিদকে মিলিয়ে একটি বড় মসজিদ বানিয়ে নিবে। কিন্তু কোনো অবস্থায় তা বে-দখল বা অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
সূরা জিন : ১৮; তাফসীরুল মুহাররারিল ওয়াজীয, ইবনে আতিয়্যাহ ১৫/১৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৪৮; আলবাহরুর রায়েক ৮/২৫০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৮৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৮৪৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪২৪; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৮/২২৩; কিতাবুল মাজমু’ ১৬/৩৩
আমরা আততরীক ইলাল কুরআন-গ্রন্থে পড়েছি যে, আযর হল হযরত ইবরাহীম...
আমরা আততরীক ইলাল কুরআন-গ্রন্থে পড়েছি যে, আযর হল হযরত ইবরাহীম আ.-এর পিতা। এ সম্পর্কে কুরআনের একটি আয়াতও পড়েছি। তা হল,
واذ قال ابراهيم لابيه آزر اتتخذ اصناما آلهة
এতে বোঝা যায় যে, আযর হযরত ইবরাহীম আ.-এর পিতা। কিন্তু আমরা শুনেছি যে, আযর নাকি ইবরাহীম আ.-এর পিতা না; বরং চাচা। তাহলে আয়াতে ‘লিআবীহি’ দ্বারা কী উদ্দেশ্য? আর আমাদের শ্রুত কথাটা কি ঠিক? বিস্তারিত দলীল-প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
কোনো কোনো মুফাসসির এ ধরনের মত ব্যক্ত করে থাকলেও তা সঠিক নয়। সঠিক কথা হল, ‘আযর’ হযরত ইবরাহীম আ.-এর পিতাই এবং কুরআন মজীদে আসল অর্থেই পিতা বলা হয়েছে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর (দারুল ফিকর) ২/২৪০; মাআরিফুল কুরআন (উর্দু) ৩/৩৭৯; কাসাসুল কুরআন ১/১০৯-১১০; তাফসীরে মাজেদী ২/৫৬
আমাদের সমাজে এই ধারণা প্রচলিত আছে যে, কোনো মৃতের জন্য...
আমাদের সমাজে এই ধারণা প্রচলিত আছে যে, কোনো মৃতের জন্য সত্তর হাজার বার কালিমা তাইয়্যেবা পড়লে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।
কেউ কেউ নিজে জীবদ্দশায় এই উদ্দেশ্যে সত্তর হাজার বার কালেমা পড়ে। তবে মৃতের জন্য পড়ানোর রেওয়াজটা বেশি। জানতে চাই, এটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত কি না?
এটি কোনো হাদীসে নেই। এটি লোকমুখে প্রচলিত কথা, যার কোনো ভিত্তি নেই। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি সহীহ বা জয়ীফ কোনো সনদেই বর্ণিত নেই।’ (মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৪/৩২৩)
প্রকাশ থাকে যে, কালিমা তাইয়্যেবা পড়া উত্তম জিকর। একাধিক হাদীসে এই কালিমা পাঠ করার ফযীলত এসেছে। এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি এখলাসের সাথে কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করবে সে জান্নাতে যাবে।-মুসনাদে আহমদ ৪/৪১১
তাই নিজের জন্য কালেমা পড়া কিংবা মৃতের ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে পড়া ভালো। কিন্তু প্রশ্নোক্ত নিয়মটি ঠিক নয়।
আর ঈসালে সওয়াবের জন্য অন্যকে পারিশ্রমিক দিয়ে কালিমা তাইয়্যেবা পড়ানো, কুরআন খতম করানো, বা কোনো জিকর করানো বৈধ নয়। এতে মৃতের নিকট কোনো সওয়াব পৌছে না। উপরন্তু ইবাদতকে অর্থোপার্জনের মাধ্যমে বানানোর কারণে গুনাহ হবে।
যদি কোনো মেয়ে ঋতুমতী হয় আর পরীক্ষার প্রশ্নে কোনো সূরার...
যদি কোনো মেয়ে ঋতুমতী হয় আর পরীক্ষার প্রশ্নে কোনো সূরার অর্থ লিখতে বলা হয় তাহলে সে যদি মনে মনে সূরা পড়ে অর্থ লেখে তাহলে জায়েয হবে কি না? আর যদি এ অবস্থায় কুরআন মজীদের আয়াত দেখে দেখে লেখে তবে কি কলমের মাঝে কোনো ব্যবধান আছে? যেমন অনেকে বলে, শীষওয়ালা কলমে লেখা যাবে, অন্য কলমের দ্বারা লেখা যাবে না। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানালে অনেক উপকৃত হব।
মাসিক চলাকালীন কুরআন মজীদ স্পর্শ করা, পড়া, লেখা সবই নাজায়েয। পরীক্ষার সময়ও একই হুকুম। তবে কুরআনের আয়াত উচ্চারণ না করে এবং লিখিত আয়াত স্পর্শ না করে শুধু অর্থ লেখা যাবে। অর্থ স্মরণ করার জন্য আয়াত মুখে উচ্চারণ না করে মনে মনে স্মরণ করতে দোষ নেই। তদ্রূপ কেউ কুরআন খুলে দিলে হাত না লাগিয়ে তা দেখা যাবে।
সুনানে দারাকুতনী ১/১১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৯; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ ১৮/৩২১; হেদায়া ১/১১৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২৩৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩২৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৪৯; ফাতাওয়া শরঈয়্যাহ ১৪/৫০; মাআরিফুস সুনান ১/৪৪৬
আমরা বিভিন্ন ওয়াজে শুনি যে, যখন হযরত নূহ আ.-কিশতীতে আরোহণ...
আমরা বিভিন্ন ওয়াজে শুনি যে, যখন হযরত নূহ আ.-কিশতীতে আরোহণ করলেন তখন তাঁর এক সন্তান, যে কাফের ছিল সে বন্যাতে ডুবে গিয়েছিল। জানতে চাই, নূহ আ.-এর ঐ সন্তানের নাম কী? কেউ বলেন, ‘ইয়াম’ কেউ বলেন, কিনআন। সঠিক কোনটি?
ঐ সন্তানের নাম কিনআন এবং ইয়াম উভয়টিই। তারীখ ও তাফসীরের গ্রন'সমূহে দুটি নামই এসেছে। কেউ কিনআন বলেছেন আবার কেউ বলেছেন ইয়াম। তবে তারীখের সুপ্রসিদ্ধ গ্রন' ‘আলকামিল ফিততারীখ’ এ বলা হয়েছে, ঐ সন্তানের নাম কিনআন, যাকে ইয়ামও বলা হয়।
আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ১/১৭৬; আলকামিল ফিততারীখ ১/৭৩; আলকাশশাফ যমখশারী ২/৩৯৬; তাফসীরে তাবারী ৭/৪৫; তাফসীরে মাযহারী ৫/৮৮; মাআরিফুল কুরআন ৪/৬২৪; তাফসীরে কুরতুবী ৯/৩৮; তাফসীরে ইবনে কাসীর ২/৪৮৯
কুরআন মজীদের সূরা কাহাফের তাফসীরে ‘আসহাবে কাহাফের’ ঘটনা বর্ণনা করতে...
কুরআন মজীদের সূরা কাহাফের তাফসীরে ‘আসহাবে কাহাফের’ ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে অনেককে বলতে শোনা যায় যে, ‘আসহাবে কাহাফের’ সঙ্গী কুকুরটি জান্নাতে যাবে। এই কথা কতটুকু সঠিক? কুরআন, হাদীস ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রনে'র আলোকে উত্তর কাম্য।
কুরআন মজীদ বা কোনো সহীহ হাদীসে এ বিষয়টি উল্লেখ নেই। কোনো সাহাবী থেকেও সহীহ সনদে তা পাওয়া যায় না।
তবে তাফসীরে আবুস সউদ, তাফসীরে মাযহারী ও রূহুল মাআনী ইত্যাদি তাফসীর-গ্রন্থের লেখকগণ প্রখ্যাত তাবেয়ী খালেদ ইবনে মা’দান রাহ. এর উদ্ধৃতিতে আসহাবে কাহাফের সঙ্গী কুকুরটির জান্নাতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এর কোনো সনদ বা সূত্র পাওয়া যায় না।
উল্লেখ্য যে, এ বিষয়টি যেহেতু কোনোকীদা বা আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় তাই এ নিয়ে প্রশ্নোত্তর, আলোচনায় মূল্যবান সময় ব্যয় করা উচিত নয়।
তাফসীরে আবুস সাউদ ৪/১৭৮; তাফসীরে মাযহারী ৬/২১; তাফসীরে রূহুল মাআনী ৮/২২৮; হায়াতুল হাইওয়ান ২/২৬২
আমরা শুনেছি যে, হযরত উসমান রা.- যে রসমে খতে কুরআন...
আমরা শুনেছি যে, হযরত উসমান রা.- যে রসমে খতে কুরআন মজীদ লিখিয়েছেন তা পরিবর্তন করা জায়েয নয়। প্রশ্ন হল, কোনো বিষয়ের উপর লিখতে গিয়ে যদি কুরআনের এক দুই আয়াত লিখতে হয় এক্ষেত্রেও কি কুরআনে যেভাবে আছে সেভাবেই লেখা জরুরি?
কুরআন মজীদের অল্প সংখ্যক আয়াত, যা উদ্ধৃতি বা কোনো প্রয়োজনে লিখতে হয় এতে উসমানী রাসমুল খত-এর অনুকরণ জরুরি নয়। অন্যান্য আরবী রাসমুল খত ব্যবহার করাও জায়েয। এছাড়া বড় সূরা বা পুরো কুরআন মজীদ লেখার ক্ষেত্রে ‘উসমানী রসমুল খত’-এর অনুকরণ অপরিহার্য। এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর ইজমা রয়েছে।
আলইতকান ২/৪০৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ১/১৮
কবরের নিকট কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা জায়েয আছে কি? তিলাওয়াত...
কবরের নিকট কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা জায়েয আছে কি? তিলাওয়াত শেষে মৃতের জন্য হাত তুলে দুআ করা জায়েয হবে কি না? দুআর সময় কোন দিকে ফিরে দুআ করা উত্তম?
কবরের নিকট কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা জায়েয। সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে করব যিয়ারতের সময় বিভিন্ন সূরা পড়া প্রমাণিত আছে। তিলাওয়াত শেষে কিবলামুখী হয়ে কবরকে পিছনে রেখে দু’হাত তুলে মৃতের জন্য দুআ করাও জায়েয।-(কবরের নিকট কুরআন তিলাওয়াত)
সুনানে আবু দাউদ ২/৮৯; ইলাউস সুনান ৮/৩২৯; ইতহাফু সাদাতিল মুত্তাকীন ১০/৩৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; মাজমাউল আনহুর ১/২৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬ (দুআয় হাত তোলা) : সহীহ মুসলিম ১/৩১৩; ফাতহুল বারী ১১/১৪৮ (দুআয় কিবলামুখী হওয়া) : সহীহ বুখারী ২/৯৩৯; ফাতহুল বারী ১১/১৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫০
মিরাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে সরাসরি দেখেছেন না শুধু...
মিরাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে সরাসরি দেখেছেন না শুধু কথা শুনেছেন? উপযুক্ত প্রমাণসহ জানতে চাই।
মেরাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলাকে স্বচক্ষে দেখেছেন কি না এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম থেকে উভয় ধরনের বক্তব্য রয়েছে। তবে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে এমন বৈশিষ্ট্যের সাথে দেখেছেন, যেভাবে দেখাটা জীবিত অবস'ায় অন্য কোনো ব্যক্তির নসীব হয়নি। কিন' এর ধরন কী ছিল, কীভাবে দেখেছেন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা নেই। তাই কোনো একটি মতকে প্রাধান্য না দিয়ে ঐ বিষয়ে মন-ব্য করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
শ্রেয়।-ফাতহুল বারী ৮/৪৭৪; সহীহ মুসলিম ১/৯৮-৯৯; মাজমুআহ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ৬/৫০৯; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৩৯১; তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৮/২০৪; ফাতহুল মুলহিম ১/৩৩৬
কুরআন শরীফ পড়ার সময় যখন সিজদার আয়াত আসে তখন মাঝে...
কুরআন শরীফ পড়ার সময় যখন সিজদার আয়াত আসে তখন মাঝে মাঝে আমি তা মনে মনে পড়ি। আমার জানার বিষয় হল, মনে মনে সিজদার আয়াত পড়ার দ্বারা সিজদায়ে তেলাওয়াত ওয়াজিব হবে কি না?
আয়াতে সিজদা মুখে উচ্চারণ না করে মনে মনে জপলে সিজদায়ে তেলাওয়াত ওয়াজিব হয় না। তাই যে সকল ক্ষেত্রে সিজদার আয়াত মনে মনে পড়েছেন ঐ সকল ক্ষেত্রে সিজদা ওয়াজিব হয়নি। উল্লেখ্য, তেলাওয়াতের মাঝে সিজদার আয়াত আসলে তা স্বাভাবিকভাবে তিলাওয়াত না করে মনে মনে পড়ে নেওয়া ঠিক নয়।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩২; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩২২; শরহুল মুনইয়্যাহ পৃ. ৫০০; রদ্দুল মুহতার ২/১০৪
ঋতুস্রাব চলাকালে গিলাফ সহকারে বা অন্য কোনো পবিত্র কাপড় দিয়ে...
ঋতুস্রাব চলাকালে গিলাফ সহকারে বা অন্য কোনো পবিত্র কাপড় দিয়ে কুরআন মজীদ স্পর্শ করতে কোনো সমস্যা আছে কি? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
ঋতুকালে বা অপবিত্র অবস্থায় কুরআন মজীদ স্পর্শ করা নাজায়েয। হ্যাঁ, এ অবস্থায় কুরআন মজীদ ধরার প্রয়োজন হলে গিলাফ বা অন্য কোনো পবিত্র কাপড় দিয়ে ধরা যাবে। তবে পরিহিত বস্ত্রের আঁচল বা তার অন্য কোনো অংশ দ্বারা স্পর্শ করা উচিত নয়।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪০২; রদ্দুল মুহতার ১/২৯৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৯
একাধিক সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে চাইলে উত্তম নিয়ম কী? প্রত্যেক...
একাধিক সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে চাইলে উত্তম নিয়ম কী? প্রত্যেক সিজদার জন্য কি দাঁড়াতে হবে? তিলাওয়াতে সিজদার তাকবীর বলা কি ফরয? দাঁড়ানোর হুকুম কী? সিজদা আদায়ের পর না দাঁড়ালে কোনো সমস্যা আছে কি? সিজদার আয়াত পড়ার পর যদি কেউ সাথে সাথে সিজদা না করে তবে কোনো অসুবিধা আছে কি? বিস্তারিত জানতে চাই।
তিলাওয়াতের সিজদার সময় দাঁড়ানো থেকে সিজদায় যাওয়া এবং সিজদা করে আবার দাঁড়িয়ে যাওয়া উভয়টিই মুস্তাহাব। তাই একাধিক তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করতে চাইলেও এভাবেই করা উচিত। তবে বসে বসে সিজদা করলেও সিজদা আদায় হয়ে যাবে। আর তিলাওয়াতের সিজদার জন্য তাকবীর অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যাওয়া সুন্নত। আর সিজদার আয়াত পড়ে তৎক্ষণাৎ সিজদা করা সম্ভব হলে তা করে নেওয়াই ভালো। পরে করলেও কোনো গুনাহ নেই।
-মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ৩/৩৮৩ হা: ৪২০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১২৬; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলালমারারকী ২৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০৭
আমাদের প্রকল্পের ভেতর সাবেক জমির মালিক থেকে কোম্পানির ক্রয়কৃত জমিতে...
আমাদের প্রকল্পের ভেতর সাবেক জমির মালিক থেকে কোম্পানির ক্রয়কৃত জমিতে প্রায় ১০/১২ বছর পূর্বে ৩টি কবর ছিল। গত ২ মাস আগে এলাকার নিরীহ লোক কোম্পানির অনুমতি ব্যতীত আরেকটি কবর স্থাপন করে। জায়গাটিতে এখন ভবন করা প্রয়োজন। আমাদের প্রকল্পে কোম্পানির নির্ধারিত কবরস্থান ও মসজিদের জায়গা রয়েছে। সেহেতু কোম্পানি উক্ত কবর ৪টি স্থানান্তর করে কোম্পানির নির্ধারিত কবরস্থানে পুনরায় দাফন করতে চাচ্ছে। অতএব এ বিষয়ে কুরআন হাদীসের সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
জমির মালিক তথা কোম্পানির অনুমতি ব্যাতীত এলাকাবাসীর জন্য সেখানে নতুন করে কবর দেওয়া বৈধ হয়নি। আর ঐ জমি যেহেতু কোম্পানির মালিকানাধীন তাই কোম্পানি কর্তৃপক্ষের জন্য নতুন কবরগুলো স্থানান্তর করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে ওয়ারেশদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে স্থানান্তরের কাজ করা ভালো।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; খানিয়া ১/১৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাল মারাকী ৩৩৭; শরহুল মুনইয়াহ ৬০৭
আমি একজন শিক্ষক। হিফয বিভাগে পড়াই। অনেক সময় নাবালেগ-অপ্রাপ্ত বয়স্ক...
আমি একজন শিক্ষক। হিফয বিভাগে পড়াই। অনেক সময় নাবালেগ-অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চার কণ্ঠে সিজদার আয়াত শুনি। প্রশ্ন হল, বুঝমান অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চার কণ্ঠে সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা করতে হবে কি?
হ্যাঁ, বুঝমান নাবালেগ বাচ্চার কণ্ঠে সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা ওয়াজিব হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪০; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৮; শরহুল মুনিয়্যা পৃ. ৫০০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৭৭৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০৭
আমাদের মসজিদে অনেক পুরাতন ছেঁড়া কুরআন শরীফ, কায়েদা, আমপারা আছে।...
-উমদাতুল কারী ২০/১৯আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪২২; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৮০; আলফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়াহ ১/৭৬ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
গ্যারান্টি ওয়ারেন্টির শর্তে পন্য ক্রয়-বিক্রয় ও নির্ধারিত সময়ের ভিতরে পন্য ফেরত বা ঠিক করে দেয়া ৷
-তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৬৩৫ ;শরহুল মাজাল্লাহ ২/৬৪; রদ্দুল মুহতার ৫/৮৮ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
পসঙ্গঃ
পড়ার অনুপযুক্ত কুরআন শরীফ, কায়দা , আমপারা কি করবে ?
কাউকে কষ্ট দেবার পর ক্ষমা চাইলে, সে ক্ষমা না করলে করণীয় ৷
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব যাকে কষ্ট দিয়েছেন তার নিকট ক্ষমা চাওয়া ৷ এবং আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা চাওয়া ও তৌবা করা ৷ এবং সর্বদা উক্ত ব্যক্তিকে খুশি করতে চেষ্টা করা। তারপরও যদি সে ক্ষমা না করে, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন। কারণ আপনার
সাধ্যে যা ছিল তা আপনি করেছেন। সাধ্যের বাইরে কিছু করার জন্য শরীয়ত ব্যক্তিকে বাধ্য করে না।
কেননা আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেছেন, যে গোনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।
-সূরা নিসা-১১০ ৷
অন্যত্রে বলেন, আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না ৷
-সূরা বাকারা-২৮৬ ৷
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসল সাঃ ইরশাদ করেছেন, গুনাহ থেকে তওবাকারী সেই ব্যক্তির মত যার কোন গোনাহ
নেই।
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০ ৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
আসহাবে কাহাফের সঙ্গী কুকুরটি কি জান্নাতে যাবে?
তবে তাফসীরে মাযহারী ও রূহুল মাআনী সহ ইত্যাদি তাফসীর-গ্রন্থে প্রখ্যাত তাবেয়ী খালেদ ইবনে মা’দান রাহ. এর উদ্ধৃতিতে আসহাবে কাহাফের সঙ্গী কুকুরটির জান্নাতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।কিন্তু এর কোনো সনদ বা সূত্র পাওয়া যায় না।
প্রকাশ থাকে যে, এ বিষয়টি যেহেতু কোনো আকীদা বা আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় তাই এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা পর্যালোচনায় সময় নষ্ট না করা উচিত ৷
তাফসীরে মাযহারী ৬/২১; তাফসীরে রূহুল মাআনী ৮/২২৮; তাফসীরে আবুস সাউদ ৪/১৭৮; হায়াতুল হাইওয়ান ২/২৬২ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী: জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
পিড়িয়ড চলাকালে গিলাফ বা কাপড় দিয়ে কুরআন শরীফ স্পর্শ করা ৷
-রদ্দুল মুহতার ১/২৯৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৯৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
মে'রাজে আল্লাহ তায়ালাকে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর দর্শনলাভ৷
দলিল সহ জানাবেন ।
১৷ সরাসরি স্বচক্ষে দেখেছেন৷
২৷ সরাসরি স্বচক্ষে দেখেন নি৷ শুধু কথা শুনেছেন৷
প্রথম মত অনুযায়ী রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে, আল্লাহকে দেখেছেন তা এমন বৈশিষ্ট্যের সাথে দেখেছেন, যেভাবে দেখাটা জীবিত অবস্থায় অন্য কোনো ব্যক্তির নসীব হয়নি, হবেও না৷ তবে রাসূলুল্লাহ সাঃ আল্লাহ কে দেখার ধরন কী ছিল, কীভাবে দেখেছেন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা নেই। তাই কোনো একটি মতকে প্রাধান্য না দিয়ে ঐ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
-ফাতহুল বারী ৮/৪৭৪; সহীহ মুসলিম ১/৯৮-৯৯; তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৮/২০৪; ফাতহুল মুলহিম ১/৩৩৬৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
01756473393
সিজদার আয়াত মনে মনে পড়া৷
01756473393
প্রচলিত মিলাদ কিয়ামের শরয়ী বিধান৷
পদ্ধতি স্বয়ং নবীজী সা., সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিয়েছেন। তারপর সাহাবায়ে কেরাম রা. তাবেঈনদের শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাবেঈনগণ পরবর্তীদের শিখিয়ে গেছেন। মনগড়া বা ভিত্তিহীন কোনো তরীকায় করলে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে না। এ জন্যই রাসূল সা. এর জীবনাদর্শ আহকামে দীন ও শরীয়ী বিধি-বিধান সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।
সুতরাং রাসূল সা.-এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করা
সওয়াব ও বরকতের বিষয় এবং মহান দীনী কাজ হলেও দেশের শরীয়তের নিয়ম-নীতি সম্পর্কে কোনো কোনো শ্রেণীর লোকেরা ‘মীলাদ শরিফ’ নামে সম্মিলিত সুরে গদভাধা কিছু পাঠের অনুষ্ঠান এবং কিয়ামের যে রীতি চালু করেছে, তার কোনো ভিত্তি কুরআন-হাদীসে, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের সোনালী যুগে পাওয়া যায় না। অথচ সর্বস্বীকৃত সত্য হলো, তারাই ছিলেন প্রকৃত নবীপ্রেমী খাঁটি আশেকে রাসূল এবং নবীজী সা. এর আদর্শের পরিপূর্ণ অনুসারি ও বাস্তব নমুনা।
প্রচলিত এই মিলাদ ও কিয়ামের উদ্ভব ঘটে ৬০৪
হিজরি সনে। ইরাকের মাসূল শহরের বাদশা আবু সাঈদ মুজাফ্ফর কাকরী এবং তার দরবারি আলেম আবু খাত্তাব উমর ইবনে দিহইয়া এদু’জন মিলে এর প্রচলন ঘটায়। এরা উভয়ে দীনের ব্যাপারে খুবই উদাসীন এবং ফাসিক প্রকৃতির লোক ছিল। পরবর্তীতে অজ্ঞতা,
মূর্খতা ও জাহালতের অন্ধকারে নিমজ্জিত শ্রেণীর লোকদের মাধ্যমে আরো অনেক কুসংস্কার, শরীয়ত
বিরোধী বিশ্বাস ও কার্যাবলী এতে সংযোজিত হতে থাকে। যার সবকিছুই কুরআন- হাদিস, ইজমা-কিয়াস তথা শরীয়তের মূল প্রমাণ পরিপন্থী। তা ছাড়া মিলাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সা.কে হাজির-নাজির মনে করে কিয়াম করা তো রীতিমতো শিরক। হাজির- নাজির মনে না করলেও শরীয়তে এর ভিত্তি নেই। এ সকল কারণে প্রচলিত মিলাদ, কিয়াম না জায়েজ ও বিদআতের অন্তর্ভুক্ত বলেই সকল হক্কানী ওলামায়ে কেরাম একবাক্যে ফতওয়া দিয়ে থাকেন। আর ইয়া নাবী সালাম আলাইকা বলে দরূদ শরীফ রাসূলে পাক সা. কে হাজির- নাজির মানে করে পাঠ করলে তো শিরক হবে।
আনাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,সাহাবাদের(রাঃ) নিকট রাসূল(সাঃ) অপেক্ষা প্রিয় কেউ ছিল না। তদুপরি হৃদয়ে এত মহব্বত পোষণ করা সত্বেও যখন তাঁরা প্রিয় রাসূল(সাঃ) কে দেখতেন তখন সাহাবায়ে কেরাম(রাঃ) দন্ডায়মান হতেন না। কেননা, তাঁরা একথা ভালভাবেই জানতেন যে, রাসূল(সাঃ) কে দেখে আমরা ‘দন্ডায়মান’ হই এটি তিনি পছন্দ করতেন না৷
তিরমিযী শরীফ ২/১০০ : মিশকাত শরীফ ২/৪০৩ : মুসনাদে আহমদ ৩/১৫১
আবু উমামা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলাল্লাহ(সাঃ)লাঠিতে ভর করে ঘর থেকে বাইরে তাশরীফ নিয়ে আসেন, আমরা উপস্থিত সকলে তাঁর সম্মানে দন্ডায়মান হই। তখন তিনি এরশাদ করেন, তোমরা আজমী(অনারব) লোকদের ন্যায় কখনো দাঁড়াবে না। আজমীগণ এমনি দাঁড়িয়ে এসে অন্যকে সম্মান প্রদর্শন করে থাকে।
মিশকাত শরীফ :
৮৮,৮৯,৯০
মু’আবিয়া(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এতে আনন্দ বোধ করে যে, লোকজন তার সম্মানে মূর্তির ন্যয় দাঁড়িয়ে থাকুক, তার জন্য উচিৎ যে, সে জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করেলনেয়।
(আবু দাউদ, তিরমিযী)
বিশ্ববরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ কোরআন ও হাদিসের অন্যতগ গবেষক সৌদি আরবের ‘গবেষনা- ইফতা-দাওয়াত ও ইরশাদ বিভাগ’ এর প্রধান শায়খ আবদুল আজীজ বিন আবদুল্লাহ বিন বায তাঁর গ্রন্থে লেখেন, আমার জেনে খুবই দুঃখ হয় যে এরুপ বিদ’আতী(মিলাদ) অনুষ্ঠান এমন সব মুসলিম দ্বারা সংঘঠিত হচ্ছে যারা তাদের রাসূল(সাঃ) এর মহব্বতের ব্যাপারে খুবই দৃঢ়তা রাখেন। মিলাদের প্রবক্তাকে বলছি যদি আপনি সুন্নি হন ও মুহাম্মাদ(সাঃ) এর অনুসারী হওয়ার দাবি রাখেন তাহলে বলুন তিনি নিজে বা তাঁর কোন সাহাবী(রাঃ) বা তাঁদের সঠিক অনুসারী কোন তাবেঈ কি এ কাজটি করেছেন, না এটা ইয়াহুদি ও খৃষ্টান বা তাদের মত অন্যান্য আল্লাহর শত্রুদের অন্ধ অনুকরণ ? এ ধরণের মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর প্রতি ভালবাসা প্রতিফলিত হয় না। যা করলে তাঁর ভালবাসা প্রতিফলিত হয় তা হল তাঁর নির্দেশের আনুগত্য করা, যা কিছু তিনি বলেছেন তা বিশ্বাস করা এবং যা কিছু তিনি নিষেধ করেছেন তা বর্জন করা। আল্লাহ যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন কেবল
সেভাবেই তাঁর উপাসনা করা। আরো দেখুন,ফাতাওয়া শামী ১/৫২৪,এমদাদুল
ফাতাওয়া ৬/৩২৭ আহসানুল ফাতাওয়া ১/৩৪৭,আল জুন্নাহ লিআহলিস সুন্নাহ, ১৭৮,দপ্তরে আউয়াল,
মাকতুবাত, ২৭৩,ফাতাওয়ায়ে আযীযী১৯৯,আশ শারআতুল ইলাহিয়্যা, ১৭৭; মাদখান ২/১০৷
যোগাযোগ
01756473393
ভিডিও গেম খেলার হুকুম৷
চান?
ﻭﻛﺮﻩ ﻛﻞ ﻟﻬﻮ ﻟﻘﻮﻟﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻛﻞ ﻟﻬﻮ
ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺣﺮﺍﻡ ﺇﻻ ﺛﻼﺛﺔ : ﻣﻼﺑﻌﺔ ﺍﻫﻠﻪ، ﻭﺗﺄﺩﻳﺒﻪ ﻟﻔﺮﺳﻪ،
ﻣﻨﺎﺿﻠﺘﻪ ﺑﻘﻮﺳﻪ … ﺃﻟﺦ
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺎﺑﺪﻳﻦ - ﻛﺮﻩ ﻛﻞ ﻟﻬﻮ ﺃﻯ ﻛﻞ ﻟﻌﺐ ﻭﻋﺒﺚ
( ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺤﻈﺮ ﻭﺍﻹﺑﺎﺣﺔ - 6/395 ، ﻭﺃﻣﺎ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﻓﻴﻪ ( ﺍﻯ ﻓﻰ ﺍﻟﻠﻬﻮ ) ﺍﻟﻨﺺ ﻋﻦ
ﺍﻟﺸﺎﺭﻉ، ﻭﻓﻴﻪ ﻓﺎﺋﺪﺓ ﻭﺻﻠﺤﺔ ﻟﻠﻨﺎﺱ، ﻓﻬﻮ ﺑﺎﻟﻨﻈﺮ
ﺍﻟﻔﻘﻬﻰ ﻋﻠﻰ ﻧﻮﻋﻴﻦ : ﺍﻷﻭﻝ ﻣﺎ ﺷﻬﺪﺕ ﺍﻟﺘﺠﺮﺑﺔ ﺑﺄﻥ
ﺿﺮﻭﺭﺓ ﺃﻋﻈﻢ ﻣﻦ ﻧﻔﻌﻪ، ﻭﻣﻔﺎﺳﺪﻩ ﺃﻏﻠﺐ ﻋﻠﻰ
ﻣﻨﺎﻓﻌﻪ، ﻭﺃﻧﻪ ﻣﻦ ﺍﺷﺘﻐﻞ ﺑﻬﺎ ﺃﻟﻬﺎﻩ ﻋﻦ ﺫﻛﺮ ﺍﻟﻠﻪ
ﻭﺣﺪﻩ، ﻭﻋﻦ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ، ﺇﻟﺘﺤﻖ ﺑﺬﺍﻟﻚ
ﺑﺎﻟﻤﻨﻬﻰ ﻋﻨﻪ ﻹﺷﺮﺍﻙ ﺍﻟﻌﻠﺔ، ﻓﻜﺎﻥ ﺣﺮﺍﻣﺎ ﺃﻭ ﻣﻜﺮﻭﻫﺎ،
( ﺗﻜﻤﻠﺔ ﻓﺘﺢ ﺍﻟﻤﻠﻬﻢ- 4/434 435- ) উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
নাবালেগ অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চার কন্ঠে সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা করা৷
হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪০; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৯; ফাতহুল কাদীর ১/৪৬৮; শরহুল মুনিয়্যা পৃ. ৫০০; তাবয়ীনুল হাকায়েক
১/২০৬৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
শুনেছি, কোনো মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরের কাছে দাঁড়িয়ে...
নিজে সাহস পান এবং ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ হয়। কুরআন-হাদীসের
আলোকে জানতে চাই, উক্ত কথাগুলো সঠিক কি না?
অপর একটি বর্ণনায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর সেখানে তার মাগফিরাতের জন্য এবং সে যেন দৃঢ়তার সাথে ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে সেজন্য দুআ করার কথা বর্ণিত হয়েছে।
বর্ণনা দুটি নিম্নে পেশ করা হল-
এক. আবদুর রহমান ইবনে শুমাছা আলমহরী রাহ. বলেন, আমর ইবনে আস রা. যখন মুমূর্ষ অবস্থায় ছিলেন তখন তার কাছে আমরা উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা যখন আমাকে দাফন করবে (প্রথমে আমাকে কবরে রেখে) আমার উপর পর্যাপ্ত পরিমাণ মাটি দিবে। এরপর একটি উট জবাই করে তার গোশত বণ্টন করতে যে পরিমাণ সময় লাগে ততটুকু সময় আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে। যেন এর দ্বারা আমার নিঃসঙ্গতার ভীতি দূর হয়ে যায় এবং আমি আমার রবের প্রেরিত দূতকে বুঝে-শুনে জবাব দিতে পারি।
(সহীহ মুসলিম ১/৭৬, হাদীস : ১২১; মুসনাদে আহমদ ৪/১৯৯)
সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার উববী রাহ. বলেন, উক্ত হাদীসে মৃত ব্যক্তিকে দাফনের পর তার কবরের পাশে অবস্থান করার কথা এজন্য বলা হয়েছে যেন এ সুবাদে সে কবরের সওয়াল-জওয়াবে দৃঢ় থাকতে পারে।
-শরহুল উববী ১/৩৮৬
অপর বর্ণনাটি হল, উসমান ইবনে আফফান রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো
মাইয়্যেতকে দাফন করার পর সেখানে অবস্থান করতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের
জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং দুআ কর। যেন আল্লাহ তাআলা তাকে দৃঢ়তার সাথে ফেরেশতাদের প্রশ্নের
উত্তর দেওয়ার তাওফীক দান করেন। কেননা সে এখনই জিজ্ঞাসিত হবে।
(সুনানে আবু দাউদ ২/৪৫৯, হাদীস : ৩২১৩
আরো দেখুন : আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৪/৫৬; ইলাউস সুনান ৮/৩৪২
কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা অবস্থায় কেউ সালাম দিলে তিলাওয়াতকারীর করণীয়...
বিঘ্ন হবে এই আশঙ্কা থাকলে সালাম দেওয়া গুনাহ। তথাপি কেউ যদি তিলাওয়াতরত
ব্যক্তিকে সালাম দেয় তাহলে তিলাওয়াত বন্ধ করে তার উত্তর দেওয়া আবশ্যক নয়। তবে
উত্তর দিতে চাইলে ওয়াফকের জায়গা পর্যন্ত পড়ে সালামের উত্তর দিবে।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬১৭-৬১৮, ৬/৪১৫
আমার বাচ্চার বয়স ২ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই একজন আলেমকে...
না।
আমার জানার বিষয় হল, দুই বছরের পর দুধ পান করানোর কোনো সুযোগ আছে কি না? এবং ঐ আলেমের কথা সঠিক কি না? দয়া করে দলিলসহকারে জানালে কৃতজ্ঞ
হব।
আমাদের মকতবে কিছু পুরাতন ছেঁড়া-ফাটা কুরআন শরীফ ও কায়েদা-আমপারা আছে।...
শরীফ ও কায়েদা-আমপারা আছে। কিছু কুরআন শরীফের বিভিন্ন জায়াগা পোকা খেয়ে ফেলেছে। যার ফলে এগুলো আর পড়ার
উপযুক্ত থাকেনি। হুযুরের নিকট জানতে চাচ্ছি, এসব
কুরআন শরীফ ও কায়েদা-আমপারা কী করব? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী?
নিরাপদে যত্নসহকারে রাখা সম্ভব না হলে পবিত্র
কাপড় পেঁচিয়ে চলাচলমুক্ত কোনো পবিত্র স্থানে দাফন করে দিবে। অথবা ভারি কোনো
বস্তুর সাথে বেঁধে প্রবহমান নদী বা জলাশয়ে
কিংবা পুকুরে ডুবিয়ে দিবে।
-ফাযাইলুল কুরআন, আবু উবায়দ পৃ. ২৪৩; আদ্দুররুল
মুখতার ৬/৪২২; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৮০; উমদাতুল
কারী ২০/১৯; আলফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়াহ ১/৭৬
আমাদের দেশে প্রচলিত দুটি বিষয় সম্পর্কে হুযুরের কাছে জানতে চাই-...
১. মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষের কয়েকটি আয়াত পড়া কি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
২. দাফনের পর বা কবর যিয়ারতের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করা এবং দুআর সময় হাত তোলাও কি সহীহ? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।
(২) : আর দাফন করার পর বা কবর যিয়ারতের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করা এবং দুআ করার সময় হাত তোলাও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত ওসমান রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত ব্যক্তিকে কবর দিতেন তখন তার কবরের পাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করতেন এবং বলতেন তোমাদের ভাইয়ের জন্য মাগফিরাতের দুআ কর এবং সওয়াল-জওয়াবের সময় অবিচল থাকার দুআ কর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২১৩
অন্য হাদীসে এসছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি আমি যেন আজও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তাবুক যুদ্ধের সময় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ যুলবিযাদাইন রা.-এর কবরে নেমেছেন, সাথে আবু বকর ও ওমর রা.-ও আছেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দাফন করার পর কেবলামুখী হয়ে দুহাত তুলে বলছেন- হে আল্লাহ আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট আপনিও তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান...। -হিলয়াতুল আউলিয়া ১: ১২২; ফাতহুল বারী ১১/১৪৯
আরেক হাদীসে এসেছে, হযরত আয়শা রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে আমার বাড়িতে ছিলেন। গভীর রাতে তিনি যখন বুঝলেন আমি ঘুমিয়ে পড়েছি তখন আস্তে আস্তে দরজা খুলে বাহিরে বের হলেন। আমি তখনও ঘুমাইনি তাই আমি তাঁর পেছনে পেছনে বের হলাম এবং দেখলাম তিনি বাকীতে গিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং (দুআর জন্য) তিনবার হাত তুললেন...। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৪
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রা. বলেন, হযরত আনাস রা. যখন কোনো মৃত ব্যক্তিকে কবর দিতেন তখন কবরের পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ! আপনার বান্দাকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সুতরাং আপনি তাকে দয়া করেন এবং রহম করেন। হে আল্লাহ! তার কবরকে তার জন্য প্রশস্ত করে দিন এবং তাকে উত্তম রূপে কবুল করে নিন। হে আল্লাহ! সে যদি আপনার নেক বান্দা হয়ে থাকে তাহলে তার ছাওয়াব আরো বাড়িয়ে দিন আর যদি সে গুনাহগার হয়ে থাকে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৩৩৪; সুনানে বায়হাকী ৩/১৬২; মাজমাউয যওয়ায়েদ ৩/১৬২; ইলাউস সুনান ৮/৩৪২
আমি একটি হেফযখানার শিক্ষক। আমাদের হেফযখানার অধিকাংশ ছাত্রই নাবালেগ। ছাত্রদের...
হবে?
হবে।
-কিতাবুল আছল ১/৩১১; মাবসূত, সারাখসী ২/৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১০৭; শরহুল মুনইয়াহ ৫০০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬৫; আলবাহরুর রায়েক
২/১১৯
সিজদার আয়াতের অর্থ পড়লে কি সিজদা দেওয়া ওয়াজিব?
দলিল; বাদায়ে ১/৪৩০[দারুল ইহয়াউত তুরাব], খুলাসা ১/১৮৪[হক্কানিয়া], আলমগিরী ১/১৩১, তাতার খানিয়া ১/৫৫৯,
স্কুলের ধর্ম বইয়ে কুরআন শরীফের সূরা, দুআ-দরূদ ইত্যাদি লেখা থাকে।...
যা দ্বারা তারা প্যাকেট বানিয়ে বিক্রি করে।
জানতে চাই, আল্লাহ তাআলার নাম বা কোনো আয়াত কিংবা দুআ লেখা কাগজ
দিয়ে প্যাকেট বানানো ও সেগুলো পণ্য দেওয়ার
কাজে ব্যবহার করার হুকুম কী?
স্কুলের ধর্ম বইয়ে কুরআন শরীফের সূরা, দুআ-দরূদ ইত্যাদি লেখা থাকে।...
যা দ্বারা তারা প্যাকেট বানিয়ে বিক্রি করে।
জানতে চাই, আল্লাহ তাআলার নাম বা কোনো আয়াত কিংবা দুআ লেখা কাগজ
দিয়ে প্যাকেট বানানো ও সেগুলো পণ্য দেওয়ার
কাজে ব্যবহার করার হুকুম কী?