এ বছর কোনো এক কারণে আমাদের কুরবানী বিলম্বিত হয়ে যায়। কুরবানীর ২য় দিন মাগরিবের পর আমরা কুরবানী করি। প্রশ্ন হল, রাতে কুরবানী করা সহীহ কি না? যদি সহীহ না হয় তাহলে এখন আমদের করণীয় কী?
দশ যিলহজ্ব ঈদের নামাযের পর থেকে বার তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত দিনে ও রাতে যে কোনো সময় কুরবানী করা সহীহ। আপনাদের কুরবানীও সহীহ হয়েছে।
অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকলে রাতে কোনো পশু যবাই করা অনুত্তম। কারণ অন্ধকারে করলে যবাইয়ে ভুলত্রুটি হতে পারে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে যবাই করা দোষণীয় নয়।
-কিতাবুল আছল ৫/৪১২; মাবসূত, সারাখসী ১২/১৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৮৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০
আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ের জন্য একটি গরু দিয়ে আকীকা করতে চাচ্ছি। পরিবারে অনেকে সংশয় প্রকাশ করে বলছে, গরু দিয়ে আকীকা শুদ্ধ হবে কি না? আমার জানার বিষয় হল, গরু দিয়ে কি আকীকা করা জায়েয আছে? বিস্তারিত জানাবেন।
হ্যাঁ। গরু, মহিষ ও উট দ্বারাও আকীকা করা জায়েয আছে। হযরত আনাস রা. উট দ্বারা সন্তানদের আকীকা করেছেন। -তবারানী, কাবীর, হাদীস ৬৮৫; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/৯৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৪৭৫৫
বাকি থাকলো যে, প্রত্যেক সন্তানের জন্য একেকটি পশু দ্বারা আকীকা করা হবে, না কয়েকজনের জন্য একটি গরু-মহিষ দ্বারা আকীকা করলেও তা আদায় হয়ে যাবে এটি একটি ইজতেহাদী মাসআলা। কোন কোন আলেমের মতে কুরবানীর মত আকীকাও কয়েকজনের জন্য একটি গরু বা মহীষ দ্বারা করা যাবে।
উল্লেখ্য, গরু-মহিষ দ্বারা আকীকা করা জায়েয হলেও ছাগল দ্বারা আকীকা করা উত্তম। কেননা ছাগল দিয়ে আকীকা করার কথা হাদীস শরীফে বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে।
উম্মে কুরয ও আবু কুরয থেকে বর্ণিত আছে, তারা বলেন,
نَذَرَتِ امْرَأَةٌ مِنْ آلِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ إِنْ وَلَدَتِ امْرَأَةُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ نَحَرْنَا جَزُورًا، فَقَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: لَا بَلِ السُّنَّةُ أَفْضَلُ عَنِ الْغُلَامِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ، وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ.
আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর এর বংশের এক মহিলা এই বলেছিলেন যে, আবদুর রহমানের স্ত্রী সন্তান প্রসব করলে আমরা একটি উট যবাই করব। তখন আয়েশা রা. বললেন, না; বরং সুন্নাহর অনুসরণ উত্তম। ছেলের জন্য উপযুক্ত দুটি ছাগল আর মেয়ের জন্য একটি ছাগল। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৬৬৯
হযরত উম্মে কুরয রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
عَنِ الغُلَامِ شَاتَانِ، وَعَنِ الأُنْثَى وَاحِدَةٌ
পুত্রসন্তানের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর কন্যাসন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল যবাই করবে। (জামে তিরমিযী ১/১৮৩)
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৪৭২৫; ইলাউস সুনান ১৭/১১৭; ফাতহুল বারী ৯/৫০৭; আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৮/৪৩১
আমাদের এলাকায় দুটি মসজিদ আছে। নিকটস্থ মসজিদে ঈদের দুটি জামাত হয়েছে। একটি ৭:৩০ মিনিটে, অপরটি ৮:৩০ মিনিটে।
আমরা সাত শরিকে কুরবানী দিয়েছি। এক শরিক দ্বিতীয় জামাতে নামায পড়েছে। আমাদের কথা ছিল সকলে প্রথম জামাতে নামায পড়ে এসে কুরবানীর পশু যবাই করব। সে অনুপাতে আমরা প্রথম জামাতে নামায পড়ে এসেই পশু যবাই করে দেই। পরে জানা গেল আমাদের এক শরিক তখনও ঈদের নামায পড়েনি। লোকজন বলছে শরিকের নামায পড়ার আগে কুরবানী করার কারণে আমাদের কুরবানী নাকি হয়নি। এখন আমাদের করণীয় কী?
লোকদের ঐ কথা ঠিক নয়। আপনাদের কুরবানী সহীহ হয়েছে। কারণ এলাকার কোনো স্থানে ঈদের নামায হয়ে গেলেই উক্ত এলাকাবাসীর জন্য কুরবানী করা জায়েয হয়ে যায়। এমনকি ঐ সময় যে নামায পড়েনি তারও কুরবানী সহীহ। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু এলাকার ঈদগাহে নামায হয়েছে সুতরাং কোনো একজন শরিকের নামায পড়া না হলেও সকলের কুরবানী সহীহ হয়েছে।
-বাদায়েউস সনায়ে ৪/২১১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৭৭
ক) এক ব্যক্তির ছেলে খুব অসুস্থ ছিল। এক পর্যায়ে সে মানত করল যে, আমার সন্তান সুস্থ হলে একটা কুরবানী করব। এখন সে একটা গরুতে মানতের একভাগ দিতে চাচ্ছে। ঐ গরুতে অন্যদের কুরবানীর অংশ আছে। এভাবে কুরবানী করা কি জায়েয হবে?
খ) আর ঐ মানতের কুরবানী করার পর ঐ ব্যক্তিকে নিজ কুরবানীও কি আদায় করতে হবে? নাকি ঐ মানতের দ্বারাই তার নিজের কুরবানীও আদায় হয়ে যাবে?
ক) হাঁ, কুরবানীর গরুতে মানতের অংশ দেওয়া জায়েয হবে এবং এর দ্বারা কুরবানী ও মানতসবই আদায় হবে।
খ) প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মানতের জন্য আপনাকে একটি কুরবানী দিতে হবে। আর আপনার উপরকুরবানী ওয়াজিব হলে আপনাকে ভিন্ন করে আরেকটি কুরবানীও দিতে হবে।
-বাদায়উেস সনায়ে ৪/২০৯, ১৯৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬০
আমাদের কাফেলার কয়েকজন মুযদালিফা থেকে মিনায় না গিয়ে সরাসরি মক্কায় চলে গেছে। মক্কায় গিয়ে তাওয়াফে যিয়ারত করেছে। অথচ তারা কংকর মারেনি, হালালও হয়নি। এ কারণে তাদের কি দম দিতে হবে? তাদের এ তাওয়াফে যিয়ারত কি আদায় হয়েছে?
হাঁ, তাদের তাওয়াফে যিয়ারত আদায় হয়েছে। তবে কংকর, কুরবানী ও হলক করার আগেতাওয়াফ করার কারণে মাকরূহ হয়েছে। সুন্নত হল, মুযদালিফা থেকে এসে আগে কংকর মারাএরপর কুরবানী করে হলক করে তাওয়াফে যিয়ারত করা।
-মানাসিক, মোল্লা আলি আলকারি পৃ. ২৩৩; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ১৭৮; রদ্দুল মুহতার ২/৫১৭
আম্মু বলেছিলেন এ বছর কুরবানী করবেন। তাই কয়েক মাসের টাকা জমিয়ে একটি ছাগল ক্রয় করেছি। কিন্তু কুরবানীর আগের দিন আম্মুর প্রচণ্ড পেট ব্যথা শুরু হয়। আম্মুকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করতে করতে ৫-৭ দিন চলে যায়। এমনকি কুরবানীর সময়ও শেষ হয়ে যায়। কাউকে কুরবানী করার জন্য বলব সে খেয়ালটুকুও ছিল না। এ অবস্থায় উক্ত পশু দ্বারা আমি কী করব? যবাই করে খাওয়া বা বিক্রি করা কি জায়েয আছে? নাকি গরিব-মিসকীনকে দিয়ে দিতে হবে?
এখন ছাগলটি যবাই করে খাওয়া বা বিক্রি করা কোনোটিই জায়েয হবে না। কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়ের পর কুরবানীর নির্ধারিত সময় (১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত) যেহেতু পার হয়ে গেছে এখন উক্ত পশু জীবিতই ফকির-মিসকীনকে সদকা করে দিতে হবে।
-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৭/৩৪২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০
আমি একজন লোকাল বাসচালক। কুরবানীর দিন আমার গাড়িতে কিছু গোশত পাই। যার ওজন প্রায় ১০/১১ কেজি হবে। সাথে সাথে আমি বাসস্ট্যান্ডে ঘোষণা করে দিয়েছি। কিন্তু একদিন এক রাত পার হওয়ার পরও মালিকের কোনো খোঁজ পাইনি।
পরে এ বিষয়ে এক আলেমের সাথে কথা বললে তিনি জানালেন, যদি সম্ভব হয় বিক্রি করে টাকা রাখেন। মালিক এলে তাকে দিয়ে দিবেন। না হয় কোনো গরীবকে সদকা করে দিবেন।
কিন্তু কুরবানীর সময় ঘরে ঘরে তো গোশত তাই কাউকে বিক্রি করতে পারিনি। পরে আমার এক গরিব ছেলে যার সংসার ভিন্ন তাকে দিয়ে দিয়েছি।
জানার বিষয় হল, নিজ সন্তানকে প্রাপ্ত/কুড়ানো সম্পদ দেওয়া কি ঠিক হয়েছে? তার জন্য তা বৈধ হবে কি?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু ঘোষণার পরও মালিকের খোঁজ পাওয়া যায়নি তাই গোশতগুলো আপনার গরীব সন্তানকে দিয়ে দেওয়া ঠিক হয়েছে এবং তার জন্য সেগুলো খাওয়া জায়েয।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৭/৪২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৯১; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৭৯
আমি ও আমার স্ত্রী দেশেই থাকি। কিন্তু আমাদের ছেলে-মেয়ে সবাই লন্ডনে থাকে। আমরাও মাঝে মাঝে গিয়ে তাদের সাথে কিছুদিন থেকে আসি। দেশে যেহেতু আমাদের সন্তানাদি কেউ নেই তাই এখানে আমাদের জন্য কুরবানী দেওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার। তাই আমাদের সন্তানরা চাচ্ছে আমাদের পক্ষ থেকে তারা লন্ডনে কুরবানী করে দিবে। কিন্তু তারা আমাদের থেকে একদিন আগে কুরবানী করে। অতএব তারা যদি তাদের কুরবানীর সময় আমাদের পক্ষ থেকেও কুরবানী করে দেয় তবে কি তা সহীহ হবে? এবং এর দ্বারা কি আমাদের কুরবানী আদায় হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ছেলেরা যদি আপনার পক্ষ থেকে ঐ দেশে কুরবানী করে তাহলে বাংলাদেশে কুরবানীর সময় হওয়ার পরই সেটি করা সমীচিন হবে। অবশ্য ঐ দেশে কুরবানীর সময় হয়ে যাওয়ার পরও যদি তারা সেখানে আপনার কুরবানী আদায় করে দেয় তবে তা আদায় হয়ে যাবে। কেননা কুরবানী আদায়ের জন্য পশু যেখানে যবাই করা হবে সেখানকার সময় মুখ্য। পশু যবাইকারীর স্থানে কুরবানীর সময় হয়ে গেলেই কুরবানী করা সহীহ হবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩/৩৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮; ফাতাওয়া রহীমিয়া ১০/৪০
কুরবানীর পশু কিনতে আমরা তিন ভাই হাটে গেলাম। কিন্তু পশুর দাম বেশি হওয়ায় আমরা কিনতে পারছি না। এক ভাই বলল, আমাদের দুই চাচা তো এখনো কোনো পশু ক্রয় করেনি। তাদেরকে আমাদের সাথে শরিক করলে তো হয়ে যায়। এ বলে আমরা উক্ত পশু ক্রয় করে নিলাম। কিন্তু বাসায় আসার পর এক চাচা বলল, না, এ কুরবানী সহীহ হবে না। তিনি বললেন, শরিকের মাসআলা তোমরা বুঝ? এ বলে তিনি আমাদের সাথে শরিক হতে চাইলেন না। তাই জানার বিষয় হল, আসলেই কি এ পশু দ্বারা কুরবানী হবে না? সঠিক মাসআলা জানিয়ে উপকৃত করবেন।
কুরবানীর পশুটি ক্রয়ের সময় যেহেতু আপনার দুই চাচাকে শরিক করার নিয়ত ছিল তাই তাদেরকে উক্ত পশুতে শরিক নিতে কোনো সমস্যা নেই। অবশ্য পশু ক্রয়ের সময় শরিক করার নিয়ত না থাকলে পরবর্তীতে শরিক করা উচিত নয়। তবে সেক্ষেত্রেও শরিক নিলে সকলের কুরবানী হয়ে যাবে। আর এক্ষেত্রে (অর্থাৎ শরিক নেওয়ার নিয়ত না থাকলে) শরিকদের থেকে প্রাপ্ত টাকা সদকা করে দেওয়া বাঞ্ছনীয় হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৭; মাবসূত, সারাখসী ১২/১৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭
আমি ফার্মের মুরগি বিক্রি করি। কিছুদিন আগে এক লোক ২০টা মুরগির অর্ডার দিয়েছেন। ছোট থেকেই জানতাম যে, পশু যবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলে যবাই করতে হয়। এটাই আমার বদ্ধমূল ধারণা ছিল। কিন্তু ঐদিন লোকটির সামনে মুরগিগুলো যবাইয়ের সময় শুধু বিসমিল্লাহ বলে যবাই করছিলাম। লোকটা জিজ্ঞাসাও করেছিল, আপনি কি বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলেন নাই? আমি বললাম, হাঁ, বলেছি। আমি মিথ্যা বললাম। কিন্তু পরে ভয় হল, আমি তো কাজটা ঠিক করিনি। এখন আমার কী করণীয় তাও বুঝতে পারছি না। দয়া করে আমার করণীয় কী তা জানিয়ে বাধিত করবেন।
যবাইয়ের সময় শুধু বিসমিল্লাহ বললেও যবাই সহীহ হয়ে যায়। তাই আপনার যবাই করা সহীহ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
فَكُلُوْا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللهِ عَلَیْهِ.
সুতরাং এমন সব হালাল পশু থেকে খাও, যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে। -সূরা আনআম (৬) : ১১৮
তবে ফকীহগণ নিম্নোক্ত হাদীসের আলোকে بِسْمِ اللهِ اَللهُ أَكْبَر পুরাটা বলাকেই মুস্তাহাব বলেছেন। আনাস রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
ضَحَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ، فَرَأَيْتُهُ وَاضِعًا قَدَمَهُ عَلَى صِفَاحِهِمَا، يُسَمِّي وَيُكَبِّرُ، فَذَبَحَهُمَا بِيَدِهِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি সাদা কালো রংয়ের ভেড়া দ্বারা কুরবানী করেছেন। দেখলাম, তিনি ভেড়া দুটোর গর্দানের পাশে পা রেখে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে নিজ হাতেই দুটোকে যবাই করলেন।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৫৮; ফাতহুল বারী ১০/২০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩০১
এবার কুরবানীর ঈদে আমাদের মহল্লায় ১০/১১ বছরের এক ছাত্র স্বাভাবিক নিয়মে একটি গরু যবাই করে। কিন্তু পরে একজন বলল, কুরবানীর পশু যবাইকারীর বালেগ হতে হবে। ১৫ বছরের কম বয়সের কেউ যবাই করলে কুরবানী সহীহ হয় না। জানতে চাই, এ লোকের কথা কি ঠিক? এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা কী আর উক্ত কুরবানীর কী হুকুম?
বুঝমান না-বালেগ যদি সঠিক পন্থায় পশু যবাই করে তাহলে তা সহীহ হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, বালেগ-না-বালেগ, পুরুষ-মহিলা যে-ই (পশু) যবাই করুক তা খাও। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক,হাদীস: ৮৫৫২) মুজাহিদ রাহ. বলেন, না-বালেগের জবাইয়ে কোনো সমস্যা নেই। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৮৫৫৪) তবে জবাই যেন সঠিকভাবে হয় তাই বালেগ সক্ষম ব্যক্তিরই জবাই করা উচিত।
-কিতাবুল আছল ৫/৪০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৮৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৩৯০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৯৭
গত কুরবানীর ঈদে লঞ্চে বাড়ি যাওয়ার সময় ভুলক্রমে আমি একটি টিকেট বেশি কিনে ফেলি। চারটার জায়গায় পাঁচটা কিনে ফেলি। পরে ঐ টিকেটটি কিছু বেশি টাকায় একজনের কাছে বিক্রি করি। আমি জানতে চাই, আমার জন্য অতিরিক্ত টাকাটা বৈধ হবে কি না?
ঐ টিকেটটি অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি করা জায়েয হয়নি। তাই অতিরিক্ত মূল্য ব্যবহার করা আপনার জন্য না-জায়েয। মালিক জানা থাকলে তাকে ফেরত দিতে হবে। আর মালিক জানা না থাকলে তা কোনো গরীবকে সদকা করে দিতে হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৩৭৬০, ২৩৭৫৩; মাবসূত, সারাখসী ১৫/১৩০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৬৭; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩০৪; রদ্দুল মুহতার ৬/২৮
এ বছর কুরবানীর ঈদের দিনের ঘটনা। আমি ঈদের নামায পড়তে গিয়েছি। নামায শেষ করে এসে দেখি, আমার কুরবানীর পশু কুরবানী করা হয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, একটু আগে কসাইরা গরু বানানোর জন্য এসে পড়ে। তারা বলল, গরু যেহেতু আপনাদের একারই তাই এখনই কুরবানী করে ফেলি। তাহলে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে যাবে। আপনারাও আগেভাগে রান্না বান্না করে ফেলতে পারবেন। বাসার লোকদের সম্মতিক্রমে তারা কুরবানী করে ফেলে। এখন আমার উক্ত কুরবানী সহীহ হয়েছে কি?
আপনার পশুটি কুরবানী করার আগে ঐ এলাকার কোথাও যদি ঈদের নামায হয়ে থাকে কিংবা আপনাদের নামায শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা কুরবানী করে থাকে তাহলে কুরবানী সহীহ হয়েছে। কিন্তু যদি তারা কুরবানী করার আগে আপনাদের নামায কিংবা আপনার এলাকার নামায কোনোটাই শেষ না হয়ে থাকে তবে আপনার ঐ কুরবানী সহীহ হয়নি। সেক্ষেত্রে কুরবানীর দিনগুলোর মধ্যে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। আর কুরবানীর দিনগুলো অতিক্রম হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে আপনাকে একটি কুরবানীযোগ্য পশুর মূল্য সদকা করতে হবে। তাই আপনার উচিত ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে সময়টি যাচাই করে নেওয়া। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, জুনদুব বিন সুফিয়ান রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ঈদের নামাযে শরীক হয়েছি। নামায শেষে বাইরে এসে তিনি যবাইকৃত ছাগল দেখলেন। তখন বললেন,
مَنْ كَانَ ذَبَحَ أُضْحِيَّتَهُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ -أَوْ نُصَلِّيَ- فَلْيَذْبَحْ مَكَانَهَا أُخْرَى، وَمَنْ كَانَ لَمْ يَذْبَحْ، فَلْيَذْبَحْ بِاسْمِ اللهِ.
যে নামাযের আগে যবাই করেছে সে যেন সেটির বদলে অন্য একটি ছাগল কুরবানী করে। আর যে কুরবানী করেনি সে যেন আল্লাহর নামে কুরবানী করে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬০; কিতাবুল আছল ৫/৪০৫; মাবসূত, সারাখসী ১২/১০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১১; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬১; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২০
আমরা জানি, গরুতে একাকী বা সাত শরীকে কুরবানী করা জায়েয। এর কমে জায়েয নয়। কিন্তু আমার বড় ভাই এ বছর ছয় শরীকে কুরবানী করেছেন। সুতরাং তার কুরবানী কি সহীহ হয়েছে? তাকে কি পুনরায় কুরবানী করতে হবে?
সাত শরীকের কমে গরু কুরবানী করা জায়েয নয়- এমন ধারণা ভুল। একটি গরুতে এক থেকে সাত পর্যন্ত যে কোনো অংশে কুরবানী করা যাবে। সুতরাং আপনার বড় ভাইয়ের কুরবানী আদায় হয়েছে।
-কিতাবুল আছল ৫/৪০৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৬
আমরা কয়েকজন মিলে এ বছর একটি ষাঁড় গরু কুরবানী করেছি। গরুটি খুব শক্তিশালী ছিল। তাই কুরবানীর সময় বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে। একবার শোয়ানোর পর সেটি আচমকা লাফিয়ে উঠে। এরপর পায়ে রশি বেঁধে টান দেওয়া হয়। ফলে পশুটি সামনের পায়ের উপর পড়ে পা দুটি বাঁকা হয়ে মচকে যায়। এরপর গরুটি আর পা নাড়াতে পারেনি। সম্ভবত পা দুটি ভেঙ্গে গেছে। এখন উক্ত পশু দ্বারা আমাদের কুরবানী সহীহ হয়েছে কি?
হাঁ, উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হয়েছে। কারণ যবাই করার সময় শোয়াতে গিয়ে কিংবা কোনো কারণে যদি পশুর কোনো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে সেটি কুরবানীর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয় না। ঐ পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হয়ে যায়।
-কিতাবুল আছল ৫/৪১০; মাবসূত, সারাখসী ১২/১৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬-২১৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৭; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
আমরা তিনজনে সমান টাকা দিয়ে একটি গরু কিনে কুরবানী দিই। এক ভাই বললেন আমাদের কুরবানী আদায় হয়নি। কারণ হিসাবে তিনি বললেন সপ্তম ভাগটিতে আমরা তিনজনই শরীক। আর কোনো ভাগে একাধিক ব্যক্তির অংশ থাকলে কুরবানী সহীহ হয় না। তাই আপনাদের কুরবানীও আদায় হয়নি। লোকটির কথা কি ঠিক? আসলেই কি আমাদের কুরবানী আদায় হয়নি?
আপনাদের কুরবানী সহীহ হয়েছে। লোকটির কথা ঠিক নয়। গরু, মহিষ, উটে এক সপ্তমাংশ বা তার বেশি একাধিক অংশ জোড় বেজোড় বা ভগ্নাংশেও কুরবানী দেওয়া জায়েয আছে। যেমন প্রশ্নোক্ত অবস্থায় প্রত্যেকের অংশ হয়- ২.৩৩ অংশ করে। এভাবে দেড়, আড়াই বা কমবেশী অংশ দেওয়াও জায়েয হবে। শুধু শর্ত হল কোনো শরীকের অংশ এক সপ্তমাংশের কম না হওয়া।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/১৭৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫৩
আমাদের গরুর পাল আছে। একটি গরুর বয়স দুই বছর পূর্ণ হয়নি। কিন্তু মোটা তাজা হওয়ার কারণে দুই বছর বয়সী গরুর চেয়েও বড় মনে হয়। এক ব্যক্তি বলল ঐ গরু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে। তাই তা দিয়ে আমি কুরবানী দিই। আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বিষয়টি জানতে পেরে বললেন ঐ গরু দ্বারা আপনার কুরবানী সহীহ হয়নি। জানতে চাই বাস্তবেই কি আমার কুরাবনী সহীহ হয়নি? যদি না হয় তাহলে এখন আমার করণীয় কী?
জী, ঐ গরু দ্বারা কুরবানী সহীহ হয়নি। ইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। কেননা গরু দ্বারা কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য গরুর বয়স চান্দ্রমাস হিসাবে কমপক্ষে দুই বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি। দুই বছরের কম বয়সী গরু মোটা তাজা হওয়ার কারণে বেশি বয়সের মনে হলেও তা দ্বারা কুরবানী সহীহ নয়। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
لَا تَذْبَحُوا إِلَّا مُسِنَّةً، إِلَّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ، فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنَ الضَّأْنِ.
তোমরা (কুরবানীতে ) ‘মুসিন্না’ ছাড়া যবেহ করবে না। তবে সংকটের সময় ছ’মাস বয়সী ভেড়া দুম্বা যবেহ করতে পারবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬৩
হাদীস শরীফে যে ‘মুসিন্না’ পশু যবেহ করতে বলা হয়েছে, গরু মহিষের ক্ষেত্রে মুসিন্না হল যার বয়স দু’বছর পূর্ণ হয়ে তৃতীয় বৎসরে পড়েছে।
সুতরাং ঐ গরু দ্বারা যেহেতু আপনার কুরবানী আদায় হয়নি তাই এখন আপনার কর্তব্য হল কুরবানীযোগ্য যে কোনো একটি পশুর মূল্য সদকা করে দেয়া।
-শরহুন নববী আলা সহীহি মুসলিম ১৩/১১৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৮৭
আমাদের কাফেলায় সকলেই তামাত্তু হজ্বকারী। একজন বদলি আদায়কারী ছিল। আপনাদের কাছে হজ্ব সংক্রান্ত একটি মাসআলা জানতে চাই তা হল, হাজ্বীগণ বড় জামরায় পাথর মারার পর কুরবানীর পূর্বেই কি মাথা মুণ্ডাতে পারবে? দু ধরনের কথাই শুনেছি। গতবার আমাদের সাথে এক ব্যক্তি বদলি হজ্ব করেছে সে হজ্বের কুরবানী দেয়নি। পাথর মারার পর আমাদের কুরবানীর আগেই সে মাথা মুণ্ডিয়ে নিল। তার এ কাজ কি ঠিক হয়েছে? সঠিক মাসআলা জানালে উপকৃত হব।
ইফরাদ হজ্বকারীর উপর দমে শোকর অর্থাৎ হজ্বের কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। বরং মুস্তাহাব। তাই ইফরাদ হজ্বকারী কুরবানী করলেও কুরবানীর পূর্বে তার জন্য চুল কাটা জায়েয। তবে কুরবানীর ইচ্ছা থাকলে তার জন্য কুরবানীর পরই চুল কাটা উত্তম। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বদলি আদায়কারী ইফরাদ হজ্বকারী হয়ে থাকলে তার এ কাজ ঠিক হয়েছে। আর কিরান বা তামাত্তুকারী হাজ্বী সাহেবগণের উপর দমে শোকর আদায় করা ওয়াজিব। তাদের জন্য কুরবানীর আগে চুল কাটা জায়েয নয়। তাদের জন্য চুল কাটার পূর্বে কুরবানী করা ওয়াজিব। এই ধারাবাহিকতা ভঙ্গ হলে দম দেওয়া জরুরি হবে।
-শরহু মাআনিল আছার ১/৪৪৮; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ২২৫; ফাতহুল কাদীর ২/৪৭২; মাজমাউল আনহুর ১/৪৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৫৫
ক) যদি কুরবানীর পশুর পেটে মৃত বাচ্চা পাওয়া যায় তবে তার বিধান কি? সেটা খাওয়া যাবে, নাকি ফেলে দিবে?
খ) নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি কুরবানীর সময় সাময়িক ঋণগ্রস্ত হয় তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি?
ক) কুরবানীর পশুর পেটে মৃত বাচ্চা পাওয়া গেলে বাচ্চার গোশত খাওয়া যাবে না। তা ফেলে দিতে হবে। তবে মূল পশুর গোশত খাওয়া যাবে এবং কুরবানী সহীহ হবে। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৮৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৬৫৬
প্রকাশ থাকে যে, যে পশুর গর্ভ অল্প দিনের ঐ পশু দ্বারা কুরবানী করা অনুত্তম। আর বাচ্চা হওয়ার সময় নিকটবর্তী হলে সে পশু দ্বারা কুরবানী করা মাকরূহ।
খ) নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যদি কুরবানীর দিনগুলোতে সাময়িক ঋণগ্রস্ত থাকে যা পরিশোধ করে দিলে তার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকে না তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না। আর যদি ঋণ আদায় করে দিলেও নেসাব পরিমাণ সম্পদ বাকি থাকে তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯২
আমাদের মহল্লা-মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণ কাজে অনেক অর্থ প্রয়োজন। আমার জানার বিষয় হল, চামড়ার মূল্য কি মসজিদ নির্মাণ কাজে লাগানো যাবে? শরীয়তের নির্দেশনা জানাতে অনুরোধ রইল।
কুরবানীর পশুর চামড়ার মূল্য মসজিদে দান করা জায়েয নয় এবং এ টাকা মসজিদ নির্মাণের কাজে ব্যয় করাও জায়েয নয়। কারণ, কুরবানীর পশুর চামড়ার মূল্য গরীব মিসকিনের হক। তা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে সদকা করে দেয়া জরুরি। আর মসজিদ মুসলমানদের সাধারণ দান দ্বারাই নির্মাণ করতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; ফাতহুল কাদীর ৮/৪৩৮; ইমদাদুল আহকাম ৪/২৫৭
আমাদের একটি গরু আছে। সেটির অনেক বয়স হয়েছে। যার ফলে দু’তিনটি দাঁত ছাড়া এর প্রায় সবক’টি দাঁতই পড়ে গেছে। তবে যে পরিমাণ দাঁত অবশিষ্ট আছে তা দ্বারা ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে। এ বছর এ গরুটিকে কুরবানী করতে চাচ্ছি। প্রশ্ন হল, এর দ্বারা কুরবানী করা কি সহীহ হবে?
এ অবস্থায়ও গরুটি যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তাহলে তার দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে।
-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৩৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫; ফাতওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৩
আমাদের একটা গরু আছে। কোনো এক রোগের কারণে যার লেজের সামান্য অংশ লম্বা পশমসহ ঝরে পড়েছে। আগামী ঈদুল আযহায় গরুটি কুরবানী দিতে চাচ্ছি। শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বৈধ হবে কি?
হাঁ, ঐ গরু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে। কেননা কোনো গরুর লেজ যদি অর্ধেকের বেশি অবশিষ্ট থাকে তবে তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয।
-মুখতাছারুত তহাবী ৭/৩৫৫; হেদায়া ৮/৪৩৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৩
আমাদের এলাকায় কিছু লোক আছে, যারা সামর্থ্য না থাকার কারণে কুরবানী দিতে পারে না। তাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে, যারা কুরবানীর দিন মুরগী বা হাঁস যবাই করে থাকে। আমি জানতে চাই, কুরবানীর দিন হাঁস-মুরগী ইত্যাদি যবাই করা জায়েয আছে কি?
কুরবানীর দিনেও কুরবানীর নিয়ত না করে কেবল খাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁস, মুরগী ইত্যাদি যবাই করা জায়েয। এতে দোষের কিছু নেই।
তবে কুরবানীর নিয়তে কিংবা কুরবানীর সাদৃশ্য অবলম্বনের উদ্দেশ্যে হাঁস, মুরগী যবাই করা যাবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৩/২৯০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬০
কুরবানী কার উপর ওয়াজিব হয়? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রাপ্তবয়ষ্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী মুকীম ব্যক্তি, যার মালিকানায় ১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। নেসাব হল : স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। আর অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ। স্বর্ণ বা রুপার কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হয় তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সাথে প্রয়োজন-অতিরিক্ত অন্য বস্তুর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে যায়, সেক্ষেত্রেও কুরবানী ওয়াজিব হবে। স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার,নগদ অর্থ, যে জমি বাৎসরিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র- এ সবই কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫
কুরবানীর গরু কিনতে গেলে দেখা যায়, লোকেরা গরুর দাঁত দেখে। যদি বিশেষ দু’টি দাঁত ওঠে তাহলে পছন্দ হলে কেনে, অন্যথায় ঐ গরু কেনে না। তারা মনে করে, বিশেষ দুই দাঁত না উঠলে সেই গরু দিয়ে কুরবানী করা যায় না।
এখন আমার জানার বিষয় হল, গরু কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য দু’টি দাঁত ওঠা কি জরুরি? আর যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায়, কোনো একটি গরুর দুই বছর হয়েছে, কিন্তু এখনও বিশেষ দু’টি দাঁত ওঠেনি তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করলে সহীহ হবে কি না?
গরু কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য দুই বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি। বিশেষ দাঁত ওঠা জরুরি নয়। তবে যেহেতু বিশেষ দু’টি দাঁত দুই বছর বয়স পূর্ণ হলেই উঠে থাকে তাই সাধারণত দুই দাঁত ওঠাকে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আলামত মনে করা হয়। এ কারণেই মানুষ কুরবানীর পশু কিনতে গেলে তা পরীক্ষা করে। এতে আপত্তির কিছু নেই। তবে যদি কোনো গরুর ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, দুই বছর পূর্ণ হলেও এখনও বিশেষ দু’টি দাঁত ওঠেনি তাহলে সেই গরু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৬১১-১৩
আমি কুরবানীর ঈদের তিন মাস আগে কুরবানীর উদ্দেশ্যে একটি গাভী ক্রয় করেছি। কুরবানীর আগে সেই গাভীটির একটি বাচ্চা হয়েছে। জানার বিষয় হল, এ বাচ্চাটির ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?
উক্ত বাচ্চাটি সদকা করে দিতে হবে। অবশ্য জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি জবাই করে দেয় তবে তার গোশত সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব হবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২২
গত বছর আল্লাহর রহমতে পবিত্র হজ্ব আদায় করেছি। যিলহজ্বের ১০ তারিখ আমরা কংকর নিক্ষেপ ও কুরবানী করার পর কাফেলার এক হাজ্বী ভাইয়ের মাথা মুণ্ডিয়ে দিই। তারপর তিনি আমার মাথা মুণ্ডিয়ে দেন। জানার বিষয় হল, ইহরাম অবস্থায় মাথা মুণ্ডানোর কারণে আমার উপর কি দম বা সদকা ওয়াজিব হয়েছিল?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অন্যের মাথা মুণ্ডিয়ে দেওয়া অন্যায় হয়নি এবং আপনার উপর এ কারণে কোনো কিছু ওয়াজিবও হয়নি। হলকের পূর্বের সকল কার্যাদী সম্পন্ন করার পর অন্যের মাথার চুল মুণ্ডিয়ে দেওয়া জায়েয। তাবেয়ী হযরত ইবনে জুরাইজ রাহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এক ব্যক্তি কংকর নিক্ষেপ করেছে কিন্তু হলক করেনি সে কি অন্যকে হলক করে দিতে পারবে? তিনি জবাবে বললেন, হাঁ পারবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, আসার নং ১৬১৩৯; মানসিক পৃ. ২৩০; যুবদাতুল মানাসিক ৩৭; গুনইয়াতুন নাসিক ১৭৪
আলহামদু লিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ দান করেছেন। প্রতি বছর একাই একটি গরু কুরবানী দেওয়ার তাওফীক হয়। গত কুরবানীর ঈদে একাই কুরবানী দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি গরু ক্রয় করি। আমার এক চাচা বললেন, তোমার গরুটা যেহেতু বড়। তাই আলাদাভবে গরু কিনতে চাচ্ছি না। তোমার গরুর দুই ভাগ আমি নিতে চাচ্ছি। যা মূল্য হয় দিয়ে দেব। তখন আমি চাচাকে শরিক বানিয়ে নিই। মূল্য নিতে না চাইলেও জোর করে দিয়ে দেয়। প্রশ্ন হল, পশু ক্রয়ের পর কাউকে শরিক বানানো জায়েয আছে কি না এবং আমাদের উক্ত কুরবানী সহীহ হয়েছে কি না?
ভাগে কুরবানী দিতে চাইলে পশু ক্রয়ের সময়ই অন্যকে শরিক নেওয়ার নিয়ত করা উচিত। পশু ক্রয়ের সময় অন্যকে শরিক বানানোর নিয়ত না থাকলে ক্রয়ের পর কাউকে শরিক বানানো মাকরূহ। অবশ্য কাজটা মাকরূহ হলেও এক্ষেত্রেও সকল শরিকের কুরবানী সহীহ হয়ে যাবে।
ক্রয়ের সময় শরিক নেওয়ার নিয়ত না থাকলে অন্যকে শরিক করলে শরিক থেকে প্রাপ্ত টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার চাচাকে শরিক বানানো মাকরূহ হলেও কুরবানী সহীহ হয়ে গেছে। তবে তার কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম হবে।
-কিতাবুল আছল ৫/৪০৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫১; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭
কুরবানীর ঈদের পর এক ব্যক্তি নেসাবের মালিক হয়। পরবর্তী বছর আসার আগেই বসবাসের জন্য জায়গা ক্রয় করে। এতে তার সব টাকা খরচ হয়ে যায় এবং আরো ঋণ করতে হয়। বর্তমানেও পরিপূর্ণভাবে ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এ অবস্থায় জানার বিষয় হল-
ক) নগদ টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার কারণে ঐ ব্যক্তির নেসাব বাকি আছে কি না? শুনেছি, নেসাবের মালিক হওয়ার পর ঋণের কারণে যাকাত মাফ হয় না। তাহলে যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে ঋণ বাদ দেওয়ার পর বাকি সম্পদ নেসাব পরিমাণ না হলেও কি যাকাত, কুরবানী, ফিতরা আদায় করতে হবে? আর উক্ত কথাটির মর্ম কী?
উল্লেখ্য যে, উক্ত ব্যক্তির ছোট দোকানে ৭/৮ হাজার টাকার ব্যবসার মাল থাকে।
খ) নেসাব বাকি থাকলে কি যাকাতবর্ষ শেষে অন্যান্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে ঋণ পরিশোধের জন্য জমাকৃত টাকারও যাকাত, কুরবানী আদায় করতে হবে? এবং কুরবানীর দিনগুলোতে ব্যবসার মাল ছাড়া নগদ অর্থ কুরবানীর সর্বাপেক্ষা ছোট পশুর মূল্যের পরিমাণ না হলে কি ধার করে কুরবানী করতে হবে?
ক) যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার সময় ঐ ব্যক্তির মালিকানায় যেহেতু নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকছে না তাই তার উপর এ বছরের যাকাত ফরয হবে না। কেননা প্রশ্নের বর্ণনামতে দোকানের মাত্র ৭/৮ হাজার টকার পণ্য ব্যতীত তার যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ খরচ হয়ে গেছে। পাশাপাশি তার উপর প্রচুর ঋণও রয়েছে। এমনকি এক্ষেত্রে তার উপর কুরবানী ও সদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে না। আর নেসাবের মালিক হওয়ার পর যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি ঋণ হয়ে যায় এবং এ ঋণ বাদ দিলে বছর শেষে যাকাতের নেসাব না থাকে তাহলে তার উপর যাকাত ফরয হবে না। এক্ষেত্রে নেসাবের মালিক হওয়ার পর ঋণের কারণে যাকাত মাফ হবে না- এ কথা ঠিক নয়। হাঁ, যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত ফরয হয়ে গেলে তা পরবর্তী ঋণের কারণে মাফ হবে না।
উত্তর : খ) কারো উপর ঋণ থাকলে যাকাত-বর্ষ শেষে ঐ ঋণ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট সম্পদ নেসাব পরিমাণ হলে এর যাকাত আদায় করা ফরয। ঋণের টাকার উপর যাকাত আসে না। অনুরূপ ঋণের টাকা বাদ দেওয়ার পর যদি কুরবানীর নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তার উপর কুরবানীও ওয়াজিব। আর যার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে তার নিকট কুরবানী করার মতো পর্যাপ্তÍ নগদ অর্থ না থাকলেও কুরবানী করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে প্রয়োজন-অতিরিক্ত কোনো জিনিস, জমি ইত্যাদি বিক্রি করে অথবা ঋণ করে হলেও কুরবানী করতে হবে।
-মুআত্তা মুহাম্মাদ, হাদীস ৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৯; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১০৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৭; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৫৮-৩৬০
আমার এক ভাই সৌদী আরব থাকে। গত কুরবানীর সময় সে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার জন্য ৫০ হাজার টাকা পাঠায়। আমরা আমাদের কুরবানী প্রথম দিনেই করে ফেলি। কিন্তু তার কুরবানীটা করেছি তৃতীয় দিনে। প্রশ্ন হল, আমাদের তৃতীয় দিনে তো সৌদী আরবে কুরবানীর সময় ছিল না। এ অবস্থায় আমার ভাইয়ের কুরবানী আদায় হয়েছে কি?
যেখানে কুরবানী দেওয়া হয় মূলত ঐ স্থানের সময়ই ধর্তব্য হয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যেহেতু কুরবানীর সময়েই হয়েছে তাই ঐ কুরবানী সহীহ হয়েছে। অবশ্য যার পক্ষ থেকে কুরবানী করা হচ্ছে তার ওখানেও কুরবানীর সময় থাকে- এটা লক্ষ রেখে কুরবানী করা ভালো।
Ñফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬; ফাতাওয়া শরইয়্যাহ ১১/১৫৯
আমার আব্বা যৌবনে একবার আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন। তখন একজন দয়ার্দ্র ব্যক্তি আব্বাজানকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেছিলেন। এখন সে ব্যক্তি দুনিয়াতে নেই। তার প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আব্বাজান প্রতি বছর তার নামে একটি কুরবানী দিয়ে থাকেন। প্রশ্ন হল, ঐ ব্যক্তির নামে আব্বাজান যে কুরবানী দিয়ে থাকেন তা থেকে আমরা খেতে পারবো, না পুরোটাই সদকা করে দিতে হবে?
ঐ মৃত ব্যক্তির সওয়াবের উদ্দেশ্যে আপনার পিতা যে কুরবানী করেন তা থেকে আপনার পিতা এবং আপনারা সকলেই খেতে পারবেন। এবং অন্যকেও দিতে পারবেন। কেননা অন্যের ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে নিজ অর্থ দ্বারা কুরবানী করলে এই গোশতের হুকুম সাধারণ কুরবানীর মতোই। তা নিজে খেতে পারবে এবং অন্যকে দিতে পারবে।
Ñফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২২; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ৩/২০১
আমার দাদা হজ্বে যাওয়ার আগে একটি ছাগল ক্রয় করে আমার বাবাকে দিয়ে বলেন, আমার পক্ষ থেকে তুমি কুরবানীটা আদায় করে দিও। কিন্তু আমার বাবা কুরবানীর দিন ঐ ছাগল দিয়ে আমার পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় করেন।
এখন আমার প্রশ্ন হল, উক্ত কুরবানী কার পক্ষ থেকে আদায় হবে? উল্লেখ্য যে, আমার দাদা ধনী।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বাবা আপনার পক্ষ থেকে কুরবানীর নিয়ত করলেও তা আপনার পক্ষ থেকে হয়নি। বরং তা আপনার দাদার পক্ষ থেকেই আদায় হয়েছে। কেননা ছাগলটির মালিক আপনার দাদা। তিনি কুরবানীর জন্য ক্রয় করেছেন এবং আপনার বাবাকে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার জন্য প্রতিনিধি বানিয়েছেন। তাই পশুটি আপনার দাদার পক্ষ থেকেই কুরবানী হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।
প্রকাশ থাকে যে, আপনার দাদার সুস্পষ্ট নির্দেশের পরও তার পক্ষ থেকে কুরবানী না করে আপনার পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া ঠিক হয়নি।
Ñআল মুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩০
আমি কুরবানীর সময় আমার মরহুম আব্বার পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতে ইচ্ছুক। প্রশ্ন হল, এ কুরবানীর গোশত কি সদকা করে দিতে হবে?
নিজ থেকে মৃত ব্যক্তির ইসালে সওয়াবের জন্য কুরবানী করলে ঐ গোশত সদকা করতে হবে না; বরং এই গোশত নিজেদের সাধারণ কুরবানীর মতোই নিজেরা খেতে পারবে এবং অন্যদেরকেও দিতে পারবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৪৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬
হজ্ব সম্পন্ন করার পর সাধারণত হাজ্বী সাহেবগণ মাথা মুণ্ডিয়ে থাকেন বা চুল ছোট করে থাকেন। এটা করা কি জরুরি? জরুরি হয়ে থাকলে বার্ধক্যের কারণে যাদের মাথার চুল পড়ে টাক হয়ে গেছে তাদের করণীয় কী?
হাজ্বী সাহেবদের জন্য কুরবানীর পর মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করা ওয়াজিব। কারো মাথা আগে থেকে মুণ্ডানো থাকলে অথবা পুরো মাথা টাক থাকলে হালাল হওয়ার জন্য মাথার উপর ক্ষুর ঘুরিয়ে নিতে হবে। প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত মাসরুক রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যে ব্যক্তি উমরাহ করে মাথা মুণ্ডিয়ে ফেলেছে অতপর হজ্ব করেছে (সে হালাল হওয়ার জন্য কী করবে?) তিনি উত্তরে বললেন, মাথায় ক্ষুর ঘুরিয়ে নেবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৩৭৯৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩২৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪৬; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৭০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১৫, ৪৬৮
যদি কুরবানীর গরুর সাথে আকীকার নিয়ত করে তাহলে সে মাংস বণ্টনের নিয়ম কী? যদি কুরবানী আর আকীকার উভয় ভাগ এক সাথে মিলিয়ে পরে তা তিন ভাগ করে কুরবানীর গোশতের নিয়মে বণ্টন করি তাহলে হবে কি?
আকীকার গোশত বণ্টনের হুকুম কুরবানীর মতোই।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আকীকা সংক্রান্ত একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে, ... অতপর (আকীকার গোশত থেকে) নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে এবং সদকা করবে। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৬৬৯
তাই কুরবানী ও আকীকা একই ব্যক্তির হলে গোশত পৃথক করার প্রয়োজন নেই; বরং চাইলে উভয় গোশত একত্রে মিলিয়ে তিনভাগে বণ্টন করতে পারবে।
-ইলাউস সুনান ১৭/১১৮, ১৭/১২৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৭; আলমুগনী ইবনে কুদামা ১৩/৩৯৩
আমাদের বাসায় প্রতি ৬ মাসের জন্য একজন কর্মচারী রাখা হয়। তার খাওয়ার খরচ সম্পূর্ণ আমাদের। যার কারণে তার বেতন কিছুটা কম হয়ে থাকে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সে কি আমাদের কুরবানীর গোশত খেতে পারবে? কেননা তাকে খাওয়ানো হলে তো কুরবানীর গোশত বিনিময় হিসেবে দেওয়া হয়ে গেল? দয়া করে হাওয়ালাসহ জবাব দিয়ে উপকার করবেন।
পারিশ্রমিকের উদ্দেশ্য ছাড়া কর্মচারীকে কুরবানীর গোশত খাওয়ালে তা পারিশ্রমিক হিসেবে গণ্য হবে না।
-ইমদাদুল মুফতীন পৃ. ৮০২
গত কুরবানী ঈদের আগের দিন আমার এক আত্মীয় মারা যায়। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট এক সংখ্যা পরিমাণ কালিমা পড়া হয়। সম্ভবত ১ লক্ষ পরিমাণ। যে কারণে একে লাখ কালিমা বলা হয়। এ আমলকে এতই গুরুত্ব ও এহতেমামের সাথে পালন করা হয় যে, দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জনে জনে তা বণ্টন করে দেওয়া হয় এবং এ আমলের বরকতে নাকি মৃত ব্যক্তির কবর আযাব মাফ হয়ে যায়।
হযরত মুফতী সাহেবের সমীপে আমার জানার বিষয় হল, কুরআন-হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে এ আমলের কোনো ভিত্তি আছে কি না? থাকলে তার গুরুত্ব কী পরিমাণ ও আদায়ের তরিকা কী? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
কালিমা তাইয়েবার ফযীলত, মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। এটি তাওহীদ ও ঈমানের কালেমা।
ইখলাসের সাথে এ কালেমা পাঠকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে। মীযানের পাল্লায় এ কালেমা সর্বাধিক ভারী হবে। হাদীস শরীফে বিশুদ্ধ সূত্রে এ ধরনের বিভিন্ন ফযীলত ও সওয়াবের কথা এ কালেমা সম্পর্কে এসেছে।
কিন্তু কোনো মৃতের ঈসালে সওয়াবের নিয়তে এ কালেমা এক লাখ পরিমাণ পাঠ করা হলে তার কবর আযাব মাফ হয়ে যায়-এ কথা সহীহ নয়। কুরআন-হাদীসের কোথাও এর প্রমাণ নেই।
সুতরাং মুসলমানদের এ ধরনের মনগড়া কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। মৃত ব্যক্তির ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে তার জন্য দান-খয়রাত করা, ব্যক্তিগতভাবে নফল ইবাদত করে ঈসালে সওয়াব করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই শরীয়ত নির্দেশিত পদ্ধতিতেই আমল করা কাম্য।
আলহামদুলিল্লাহ, এ বছর আমি হজ্ব করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। কিন্তু অনাকাংক্ষিতভাবে তাওয়াফে যিয়ারাতের সময় হায়েয এসে যায়। বুঝতে না পারার কারণে ঐ অবস্থাতেই আমি পূর্ণ তাওয়াফ সম্পন্ন করি। অবশ্য পরবর্তীতে ১৫ যিলহজ্ব পবিত্র হওয়ার পর তা পুনরায় আদায় করি।
হুযুরের নিকট আবেদন এই যে, এক্ষেত্রে আমার উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে কি না? মক্কায় আমাদের কাফেলার একজনকে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বলেছিলেন, একটি দুম্বা জবাই করলেই চলবে। তার কথামতো হারামে একটি দুম্বা জবাই করেছি। কিন্তু দেশে ফিরে আসার পর আরেকজন বললেন, একটি উট জবাই করা ওয়াজিব ছিল। সঠিক সমাধান ও এখন আমার করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ভুলক্রমে হায়েয-নেফাস অবস্থায় তাওয়াফে যিয়ারাত করলেও জরিমানা হিসেবে বাদানা অর্থাৎ একটি উট কিংবা একটি গরু জবাই করা ওয়াজিব হয়। অবশ্য পবিত্র অবস্থায় পুনরায় ঐ তাওয়াফ করে নিলে বাদানা মওকুফ হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের এত আগে যদি সে পবিত্র হয় যে, পবিত্রতা অর্জন করে সূর্যাস্তের আগে তাওয়াফের অন্তত চার চক্কর আদায় করা সম্ভব তাহলে তাকে এর ভেতরেই তা আদায় করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে সে যদি এসময়ের ভেতর তা আদায় না করে তাহলে তখন বিলম্ব করার কারণে একটি জরিমানা দম অর্থাৎ একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা কুরবানী করতে হবে। অবশ্য যদি ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের ঐ পরিমাণ সময় আগে পবিত্র না হয় বা ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পর পবিত্র হয় এবং এরপর সে পবিত্রতা অর্জন করে ঐ তাওয়াফ আবার আদায় করে নেয় তাহলে তার উপর কোনো জরিমানা দমও ওয়াজিব হবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ১৫ যিলহজ্ব পবিত্র হয়েছেন এবং এরপর পবিত্র অবস্থায় ঐ তাওয়াফ পুনরায় আদায় করে নিয়েছেন তাই এক্ষেত্রে আপনার উপর কোনো জরিমানা দমও ওয়াজিব হয়নি। অতএব আপনি যে দুম্বা জবাই করেছেন তা জরিমানা দম হিসাবে আদায় হয়নি। বরং তা নফল কুরবানী গণ্য হবে এবং আপনি এর সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ।
Ñমানাসিক ৪৮৮, ১১৫ রদ্দুল মুহতার ২/৫৫১; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৮; গুনইয়াতুন নাসিক ২৭২
এক ব্যক্তি কুরবানীর পশু ক্রয়ের পর ১২ যিলহজ্বের মধ্যে তা কুরবানী করতে পারেনি। এখন তার কী করণীয়? আর কেউ যদি পশু ক্রয়ই না করে এবং কুরবানীর সময় শেষ হয়ে যায় তখন তার কী করণীয়?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি ক্রয়কৃত পশুটি জীবিত সদকা করে দিবে। আর কোনো ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হওয়া সত্তে¡ও যদি সে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে এবং কুরবানীও না করে থাকে তাহলে তার উপর কুরবানীর যোগ্য একটি ছাগলের মূল্য সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব। আর উভয় ক্ষেত্রেই যথাসময়ে কুরবানী না করার কারণে তাওবা-ইস্তিগফার করবে।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪২৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১; তুহফাতুল ফুকাহা ৩/৮৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২
আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তি কুরবানী করার জন্য ঈদের দুদিন আগে হাট থেকে একটি গাভি ক্রয় করে আনে। ঘটনাক্রমে বাড়ির আরেকটা গাভির সাথে ঐ গাভির লড়াই লেগে ক্রয়কৃত গাভির একটি শিং ভেঙ্গে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এমন শিং ভাঙ্গা গাভি দ্বারা কুরবানী করলে কুরবানী হবে কি না?
গাভিটির শিং যদি একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গিয়ে থাকে, যার দরুণ মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায় তাহলে এ পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না। পক্ষান্তরে শিং ভাঙ্গার কারণে মস্তিষ্কে যদি আঘাত না পৌঁছে থাকে তাহলে এ পশু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে।
-মুসনাদে আহমদ ১/৯৫, হাদীস ৭৩৪; ইলাউস সুনান ১৭/২৩৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৭