আমার ৩ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন আছে। সেটির ২য় তলায় আমি আমার পরিবারসহ থাকি। অন্য ২ তলা ভাড়া দেয়া আছে। সেগুলোর ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ৩২,০০০/- টাকা পাই। এ আয় দিয়েই আমার সংসার চলে। মাস শেষে কখনো কিছু টাকা অবশিষ্ট থাকে। কখনো থাকে না। এ অবস্থায় আমার উপর কি হজ্ব ফরয হয়েছে?
প্রশ্নের বর্ণনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এ বাড়ি থেকে অর্জিত ভাড়ার টাকা আপনার সংসার চালানোর জন্য অপরিহার্য। বিষয়টি যদি এমনই হয়ে থাকে তাহলে ঐ বাড়ির কারণে আপনার উপর হজ্ব ফরয হবে না।
-রদ্দুল মুহতার ২/৪৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৩; আন্নাহরুল ফাইক ২/৫৬
মুহতারাম, আমার স্বামী ইন্তেকালের পরে ওয়ারিশ সূত্রে যে সম্পদ পেয়েছি তাতে একজনের হজ্বের যাবতীয় খরচ বহন করা যায়। আর এ সম্পদ আমার প্রয়োজনীয় বিষয় থেকে অতিরিক্ত। কিন্তু আমার মাহরাম পুরুষদের কারো হজ্ব করার সামর্থ্য নাই। এমতাবস্থায় আমার জন্য করণীয় কী তা জানালে উপকৃত হব।
আপনার নিকট যেহেতু নিজের হজ্বে যাওয়ার মত সামর্থ্য আছে তাই আপনার উপর হজ্ব ফরয। কিন্তু মাহরাম পুরুষ ছাড়া যেহেতু নারীর হজ্বে যাওয়া জায়েয নয় তাই আপনাকে মাহরাম পুরুষের অপেক্ষা করতে হবে। মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা হলে তার সাথে গিয়ে হজ্ব করবেন। অবশেষে মাহরাম পুরুষের ব্যবস্থা না হলে নিজে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যাওয়ার পর অন্যকে দিয়ে বদলী হজ্ব করাতে পারবেন। এবং এখন থেকেই অসিয়ত করে রাখবেন। যেন হঠাৎ মৃত্যু হয়ে গেলে ওয়ারিশগণ আপনার পক্ষ থেকে কাউকে দিয়ে বদলী হজ্ব করিয়ে নেয়।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৯৪; ফতহুল কাদীর ২/৩২৬,৩৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৯; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ২৭
সাধারণত আমি কাঁথা/কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাই। হজ্বের সময় ১০ তারিখ (দিবাগত) রাতে আমি হোটেলে ঘুমাচ্ছিলাম। প্রথম দিকে শুধু গায়ের উপর কম্বল ছিল। চেহারা ও মাথা খোলা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমার অজান্তেই কম্বল মুড়ি দিই। রাত তিনটার সময় ঘুম থেকে উঠে আমি নিজেকে এভাবেই পেলাম। জানতে চাচ্ছি, আমার অনিচ্ছাকৃত এ ভুলের কারণে কি দম দিতে হবে? নাকি এক্ষেত্রে অন্য কোনো বিধান রয়েছে?
ইহরামের নিষিদ্ধ কাজসমূহ অনিচ্ছাকৃত বা ভুলে করলেও জরিমানা দিতে হয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু পূর্ণ বারো ঘণ্টা চেহারা ঢাকা ছিল না; বরং তার চেয়ে কম ছিল তাই আপনাকে ঐ দেশের এক সদকাতুল ফিতর সমপরিমাণ টাকা সদকা করে দিতে হবে। ঐ অর্থ হারামের এলাকায় দেওয়া জরুরি নয়, তবে উত্তম। নিজ এলাকার গরীবদেরকেও দেওয়া যাবে।
-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১২৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৩০; রদ্দুল মুহতার ২/৫৫৮; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ২৫৪
চুল আঁচড়ানোর সময় আমি খুব উকুন মারি। হজ্বের সময় ইহরাম অবস্থায় উকুন মারতে পারে না- এ মাসআলা আমার জানা ছিল না। হজ্বের পর এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গেলে এক প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, ইহরাম অবস্থায় উকুন মারা যায় না। কিন্তু আমি হজ্বের পাঁচ দিনেও তো অনেক উকুন মেরেছি। সে বলেছিল, আমার উপর দম ওয়াজিব হয়েছে। কিন্তু আমি তো হজ্ব শেষ করে দেশে ফিরে এসেছি। এখন এ দম কীভাবে আদায় করব। দম কি মক্কা শরীফ থাকতেই দিতে হয় নাকি পরে দেশে এসে আদায় করা যায়।
ইহরাম অবস্থায় তিনটির অধিক উকুন মারলে জরিমানা হিসাবে এক সদকা ফিতর সমপরিমাণ মূল্য দান করা ওয়াজিব। তাই প্রশ্নের বর্ণনা অনুসারে (তিনটির অধিক) উকুন মারার কারণে আপনাকে এক সদকাতুল ফিতরের সমপরিমাণ টাকা সদকা করে দিতে হবে। তবে আপনার উপর দম ওয়াজিব হয়নি। আর সদকা হেরেমের এলাকার গরীবকে দেওয়া উত্তম। তবে আপনি যেহেতু দেশে ফিরে এসছেন তাই দেশের কোনো গরীব-মিসকীনকে দিলেও আদায় হয়ে যাবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪২০; ফাতহুল কাদীর ৩/১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৪৩,৫৫৮
এ বছর হজ্বের সময় ৯ যিলহজ্ব মাগরিবের পর আমরা আরাফা থেকে হেঁটে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। এক জায়গায় এসে আমীর সাহেব বললেন, রাতে আমরা এখানেই অবস্থান করব। আমরা মনে করেছিলাম মুযদালিফার সীমানায় চলে এসেছি। কিন্তু হজ্বের পরে জানতে পারলাম যে, রাতে আমরা যে জায়গায় অবস্থান করেছি তা মুযদালিফার বাইরে ছিল। আমীর সাহেবকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রাতে মুযদালিফায় অবস্থান করা জরুরি নয়। সকালে ফজরের পর কিছু সময়ের জন্য মুযদালিফায় অবস্থান করাই যথেষ্ট।
মুফতী সাহেবের কাছে প্রশ্ন হল, আমীর সাহেবের এ কথা কি ঠিক? রাতে মুযদালিফার বাইরে অবস্থানের কারণে আমাদের উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হবে কি ?
এছাড়া সকালেও আমরা মুযদালিফায় অবস্থান করিনি। বরং মুযদালিফার উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে তা অতিক্রম করে গিয়েছি। এভাবে রাতে মুযদালিফার বাইরে অবস্থান করে সকালে হাঁটতে হাঁটতে মুযদালিফার সীমানা অতিক্রম করার দ্বারা মুযদালিফায় অবস্থানের ওয়াজিব আদায় হয়েছে কি? আর এ কারণে আমাদের উপর কোনো জরিমানা আসবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এক মুহূর্তের জন্য মুযদালিফায় অবস্থান করলেও উকূফে মুযদালিফার ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়। ওয়াজিব আদায়ের জন্য সেখানে দাঁড়ানো বা বসা জরুরি নয়; বরং পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে মুযদালিফা অতিক্রম করলেও এ ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।
সুতরাং আপনারা যদি সুবহে সাদিকের পর সূর্যোদয়ের পূর্বেই মুযদাফিলার সীমানায় প্রবেশ করে থাকেন তাহলে আপনাদের উকূফে মুযদালিফার ওয়াজিব আদায় হয়ে গেছে। আর যদি মুযদালিফার সীমানায় সূর্যোদয়ের পর প্রবেশ করে থাকেন তাহলে আপনাদের উকূফে মুযদালিফার ওয়াজিব আদায় হয়নি। এক্ষেত্রে মুযদালিফায় প্রবেশ করা সম্ভব হওয়া সত্ত্বেও যদি আপনারা সেখানে যথাসময়ে প্রবেশ না করে থাকেন তাহলে এ কারণে আপনাদের উপর দম ওয়াজিব হবে।
উল্লেখ্য যে, মুযদালিফায় ৯ তারিখ রাতে অবস্থান করা সুন্নাত এবং হজ্বের ফযীলতপূর্ণ আমল। তাই মুযদালিফায় পৌঁছা নিশ্চিত হয়েই অবস্থান করা উচিত। বিশেষ ওজর ছাড়া সেখানে রাতে অবস্থান ত্যাগ না করা উচিত।
-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৬৩, ১৬২; বাদায়েউস সনায়ে ২/৩২১, ৩৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪১-২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩০
গত রমযানে আমি ওমরা করেছি। আমি যখন ওমরার তাওয়াফ করছিলাম তখন মাতাফের এক পাশে এক ব্যক্তি আতরের বড় শিশি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। লোকদেরকে আতর মেখে দিচ্ছিল। আমার শরীরেও আতর মেখে দেয়। আমার হাতে ও কাঁধে অনেকটা আতর লাগে। কাপড়েও কিছু আতর লাগে। তাওয়াফ শেষ করে শরীর ও কাপড়ের যে অংশে আতর লেগেছিল সে অংশ ভালোবাভে ধুয়ে ফেলি।
মুফতী সাহেবের কাছে প্রশ্ন হল, এভাবে অনিচ্ছাকৃত অন্য আরেকজন আমার শরীরে আতর লাগিয়ে দেয়ার কারণে আমার উপর
কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে কি না?
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়গুলো অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটলেও জরিমানা ওয়াজিব হয়। তাই সুগন্ধির পরিমাণ যদি বেশি হয় তবে দম ওয়াজিব হবে। আর কম হলে জরিমানাস্বরূপ সদকা দিতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, সদাকাতুল ফিতর সমমূল্যের টাকা সদকা করতে চাইলে নিজ দেশের ফকীর-মিসকিনকে দিতে পারেবন। আবার হারামের ফকীরদরেও দিতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ঘটনাটি যেহেতু অনিচ্ছাকৃত ঘটেছে তাই ঐ ঘটনার জন্য আপনি গুনাহগার হবেন না।
-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪০-১৪১; মানাসিক, মুল্লা আলী আলকারী পৃ. ৩১২
আমি একটি মসজিদে ইমামতি করি। গত বছর আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আমি আমার ফরজ হজ্ব আদায় করেছি। এখন আমার মন চায় বারবার আল্লাহর ঘরের যিয়ারত করতে। কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা পারছি না। এ বছর হজ্বের অর্ধেক টাকা তথা দেড় লক্ষ টাকার ব্যবস্থা হয়েছে। একজন মুসল্লী ভাই এটা জানতে পেরে আমাকে বললেন, ‘হুজুর ! আপনি আমার বৃদ্ধ বাবার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করবেন। হজ্বের বাকী অর্ধেক টাকা তথা দেড় লক্ষ টাকা আমার বাবা আপনাকে দিবে। তিনি নিজে হজ্ব করতে অক্ষম। বর্তমানে একেবারে শয্যাশায়ী।’ তাই জানতে চাচ্ছি, এভাবে নিজের অর্ধেক এবং অন্যের অর্ধেক টাকা দিয়ে তার বদলী হজ্ব করা যাবে কি?
বর্তমানে দেড়লক্ষ টাকা দ্বারা হজ্বের যাতায়াত ও থাকার ন্যূনতম ব্যবস্থা হয়ে যায়। অন্তত অধিকাংশ খরচ তো হয়েই যায়। তাই এক্ষেত্রে আপনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ থেকে বাকী টাকা খরচ করে বৃদ্ধ লোকটির পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করলে তা জায়েয হবে। এবং বৃদ্ধলোকের হজ্ব আদায় হয়ে যাবে।
-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৪৭; ফাতহুল কাদীর ৩/৬৮; ফতাওয়া কাযীখান ১/৩১১; রদ্দুল মুহতার ২/৬০০; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ৩২৩
এ বছর আমি ও আমার স্ত্রী হজ্ব করেছি। হজ্বের সময় ১০ যিলহজ্ব মীনা থেকে কংকর নিক্ষেপ করে এসে ক্লান্ত থাকায় ঐ দিন তাওয়াফে যিয়ারত করিনি। ইচ্ছা ছিল পরের দিন আমরা তাওয়াফ করব। কিন্তু সেদিন রাতেই আমার স্ত্রীর স্রাব শুরু হয়ে যায়। প্রতিমাসের ন্যায় আট দিন তার স্রাব চলে। তার স্রাবের সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই আমরা মদীনায় চলে যাই। মদীনায় অবস্থান করার পর ফ্লাইট বিড়ম্বনার কারণে মক্কায় এসে মাত্র চারদিন অবস্থান করি। এ সময় আমার স্ত্রী পবিত্র ছিল। তাই সে তাওয়াফে যিয়ারত করে নেয়। এরপর আর কোনো তাওয়াফ করিনি। দেশে আসার পর একজন আলেম বললেন, আপনার স্ত্রীর দম দিতে হবে।
প্রশ্ন হল, আমার স্ত্রীর হজ্ব হয়েছে কি না? এবং তার উপর দম ওয়াজিব হয়েছে কি না? যদি দম ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে এখন আমাদের কী করণীয়?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্ত্রীর তাওয়াফে যিয়ারত যথাযথভাবেই আদায় হয়েছে। তবে তার হজ্বেরএকটি ওয়াজিব কাজ তাওয়াফে বিদা বাকি থেকে গেছে। আপনার স্ত্রী যেহেতু ওজর ছাড়াই এইওয়াজিব ছেড়ে দিয়েছেন তাই তার উপর একটি জরিমানা দম ওয়াজিব হয়েছে।
সুতরাং এখন কর্তব্য হল, হেরেমে অবস্থানকারী অথবা গমনকারী কারো মাধ্যমে হেরেমেরএলাকায় একটি দম আদায় করে দেওয়া।
-গুনইয়াতুন নাসিক ২৭৪; রদ্দুল মুহতার ২/৫১৯, ৫২৩; মানাসিকে মোল্লা আলী কারী ২৫০, ৩৪৯, ৩৯৩
একদিন নফল তাওয়াফ করার পর তাড়াহুড়োর কারণে তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামায পড়া হয়নি। মক্কায় থাকা অবস্থায় আর ঐ নামাযের কথা স্মরণ হয়নি। পরবর্তীতে দেশে আসার পর স্মরণ হয়। এখন কি ঐ নামাযের কাযা আদায় করতে হবে? আর এ কারণে কোনো জরিমানা বা কাফফারা দিতে হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
তাওয়াফের পর দুই রাকাত নামায পড়া ওয়াজিব। মসজিদে হারামে কিংবা হেরেমের এলাকায়পড়া মুস্তাহাব। কোনো কারণে হেরেমের এলাকায় পড়তে না পারলে অন্যত্র হলেও পড়ে নিতে হবে।তাই আপনি দেশেই ঐ দুই রাকাত নামায পড়ে নিতে পারবেন। এ কারণে কোনো জরিমানা দিতেহবে না।
আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
عَنْ عَطَاءٍ ؛ فِي رَجُلٍ طَافَ بِالْبَيْتِ وَنَسِيَ أَنْ يُصَلِّيَ الرَّكْعَتَيْنِ حَتَّى مَضَى ، قَالَ : يُصَلِّيهِمَا إِذَا ذَكَرَ ، وَلَيْسَ عَلَيْهِ شَيْءٌ.
যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করার পর (তাওয়াফের) দুই রাকাত নামাযের কথা ভুলে গিয়ে চলেযায় সে পরবর্তীতে স্মরণ হওয়ামাত্র ঐ দুই রাকাত নামায পড়ে নিবে। আর এ কারণে তার উপরকোনো জরিমানা আসবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৪৭৭৯; গুনইয়াতুন নাসিক ১১১; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১৫৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২৬
আমি সরকারী চাকরিজীবী। লাখ খানেকের মতো নগদ টাকা আমার কাছে আছে। আর গ্রামের বাড়িতে পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত দেড় বিঘা জমি আছে। যার আনুমানিক মূল্য পঞ্চাশ লক্ষ টাকা হবে। এছাড়া আমার আর কোনো অর্থ-সম্পদ নেই।
আমার জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমার উপর হজ্ব ফরয হবে কি? অথচ হজ্বে যাওয়ার মতো টাকা আমার কাছে নেই।
উল্লেখ্য, চাকরির বেতন দিয়েই আমার সংসার চলে। আর উক্ত জমি ফসলি। বর্গাচাষের ভিত্তিতে সেখান থেকে বছরে কিছু আয় আসে।
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার উপর হজ্ব ফরয। কেননা হজ্ব ফরয হওয়ার জন্য নগদ টাকা থাকা জরুরি নয়। বরং প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি ও স্বর্ণালংকার থাকলেও তার মূল্য যদি হজ্বের খরচ এবং হজ্ব থেকে ফেরা পর্যন্ত সংসারের খরচের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেই হজ্ব ফরয হবে।
তাই বিলম্ব না করে হজ্ব করে নেওয়া কর্তব্য। হজ্ব ফরয হওয়ার পর তা আদায়ে বিলম্ব করা গুনাহ।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৮
এক ব্যক্তি উমরার ইহরাম করে তাওয়াফ সায়ী করেছে। এরপর সে মাথার দুই তিন স্থান থেকে তিন/ চারটা চুল কেটে নেয় এবং পুনরায় মসজিদে আয়েশা থেকে উমরার ইহরাম করে আরেকটি উমরা আদায় করে এবং শেষে মাথা মুণ্ডিয়ে নেয়। এ ব্যক্তির পূর্বের উমরা এবং পরের উমরার কী হুকুম?
ইহরাম থেকে চুল কেটে হালাল হওয়ার জন্য পুরো মাথার অন্তত চার ভাগের এক ভাগ পরিমাণ চুল কাটা জরুরি। এর কম কাটলে ইহরাম থেকে হালাল হবে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথম উমরার তাওয়াফ সায়ী করার পর কেবলমাত্র তিন/ চারটা চুল কেটে নেওয়ার দ্বারা লোকটি ইহরাম-মুক্ত হয়নি।
আর এক উমরা থেকে ইহরাম মুক্ত হওয়ার আগে আরেক উমরার ইহরাম করা জায়েয নয়। তাই প্রথম উমরা থেকে হালাল না হয়ে নতুন উমরার ইহরাম করা অনিয়ম ও গুনাহ হয়েছে এবং এ কারণে তার উপর হেরেমের এলাকায় একটি জরিমানা দম দেয়া আবশ্যক হয়েছে।
অবশ্য এক্ষেত্রে দ্বিতীয় উমরার ইহরাম করা নাজায়েয হলেও লোকটি যেহেতু দ্বিতীয় উমরা সম্পন্ন করেছে এবং শেষে মাথা মুণ্ডিয়েছে তাই এর দ্বারা সে উভয় উমরার ইহরাম থেকে হালাল হয়ে গেছে এবং উভয় উমরাই আদায় হয়েছে।
-মানাসিক, মুল্লা আলী আলকারী পৃ. ২২৯; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ২৩৭; যুবদাতুল মানাসিক পৃ. ৩৩৭
গত হজ্বে আমরা কয়েকজন মিলে এক মরুভূমিতে ঘুরতে যাই। এবং সেখানে এক রাত অবস্থানও করি। মরুভূমিটির আশপাশে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটারের মধ্যে পানির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তখন আমাদের এক সাথীর গোসলের জরুরত হয়। আর আমাদের সাথেও এত অল্প পানি ছিল, যা দিয়ে সে শুধু অযু করতে পারবে, গোসল করতে পারবে না। ফলে সে প্রথমে অযু করে এরপর তায়াম্মুম করে নামায আদায় করে নেয়।
প্রশ্ন হল, উল্লেখিত অবস্থায় এভাবে করা কি তার জন্য সঠিক হয়েছে? এবং এরপর আদায়কৃত নামাযের কী হুকুম? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের অবস্থানের জায়গা থেকে যেহেতু পানি দূরে ছিল এবং আপনাদের কাছেও পর্যাপ্ত পানি ছিল না তাই এক্ষেত্রে ফরয গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করাই নিয়ম। অযু করার প্রয়োজন ছিল না। তাই তায়াম্মুম করে নামায আদায় করার দ্বারা তা আদায় হয়ে গেছে।
عَنِ الْأَوْزَاعِيِّ، قَالَ: سَأَلْتُ الزُّهْرِيَّ، عَنِ الرَّجُلِ تُصِيبُهُ الْجَنَابَةَ وَمَعَهُ مَاءٌ يَكْفِيهِ لِلْوُضُوءِ قَالَ: يَتَيَمَّمُ .
‘আওযায়ী রাহ. বলেন, আমি যুহরী রাহ. -কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, যার গোসলের জরুরত হয়েছে এবং তার নিকট শুধু অযু করার পানি আছে। সে তখন কী করবে? তিনি বললেন, সে শুধু তায়াম্মুম করবে’।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৮৭; কিতাবুল আছল ১/৮৭; মাবসূত, সারাখসী ১/১১৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৭৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৩; আলবাহরুর রায়েক ১/১৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০
এ বছর আমার হজ্বে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। শুনেছি, ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করা যায় না। জানার বিষয় হল, এমন খাবার যা সুগন্ধিযুক্ত জিনিস দিয়ে রান্না করা হয় তা খাওয়া যাবে কি না? যেমন পোলাও, বিরানী এগুলোতে এলাচ-দারচিনি ইত্যাদি সুগন্ধিযুক্ত জিনিস দেওয়া হয়। তাই তা খাওয়া যাবে কি না?
হাঁ, ইহরাম অবস্থায় পোলাও বিরিয়ানী খাওয়া জায়েয। কেননা খাবার রান্না করার সময় সুগন্ধি মসলা দেওয়া হলে সে খাবার ইহরাম অবস্থায় খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। তবে রান্নার পর খাবারে জাফরান বা কোনো সুঘ্রাণ মেশানো হলে ইহরাম অবস্থায় তা খাওয়া নিষেধ।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৩৯; আলমুবসূত সারাখসী ৪/১২৩; ফাতহুল কাদীর ২/৪৪১; রদ্দুল মুহতার ২/৫৪৭; আলবাহরুল আমীক ২/৮৪১
ইহরাম ত্যাগ করার সময় হলক তথা মাথা মুণ্ডানোর আগে নখ-মোচ ইত্যাদি কাটা কি জায়েয? কেউ যদি এমনটি করে তবে কি তার উপর কোনো জরিমানা আসবে?
হজ্ব ও উমরার সকল কাজ আদায় হয়ে গেলেও মাথা মুণ্ডানোর আগে যেহেতু ইহরাম বহাল থাকে তাই মাথা মুণ্ডানোর আগে নখ-মোচ কাটা নিষিদ্ধ। মাথা মুণ্ডিয়ে বা চুল ছোট করে হালাল হয়ে যাওয়ার পর এগুলো করতে পারবে। হালাল হওয়ার আগে এসব কাজ করলে জরিমানা (দম বা সদকা) দিতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/৩২৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৪৭; মানাসিক, মুল্লা আলী কারী পৃ. ২২৮
আমি বাড়ি বানানোর নিয়তে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছি। আমার নিজের থাকার জন্য কোনো বাড়ি নেই। এখন হজ্বের মাস চলে এসেছে। ইচ্ছা করলে ঐ টাকা দিয়ে আমি হজ্ব করতে পারি। কিন্তু তখন আমি আর বাড়ি বানাতে পারব না। আমি জানি যে, বাড়ি হল, হাজতে আসলিয়া অর্থাৎ মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। তাই এ অবস্থায় আমার উপর কি হজ্ব ফরয হবে? ফরয হলে হাজতে আসলিয়ার অর্থ কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
নিজে ও পরিবার-পরিজনের বসবাসের ব্যবস্থা থাকা হাজতে আসলিয়া অর্থাৎ ব্যক্তির মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। এই প্রয়োজন ভাড়া বাসার দ্বারাও পূর্ণ হতে পারে। নিজের মালিকানাধীন হওয়া জরুরি নয়।
সুতরাং যার জন্য ভাড়া বাড়িতে থাকার সুব্যবস্থা আছে তার জন্য নিজস্ব বাড়ি বানানো মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা ভাড়া বাসা দ্বারা তো তার বসবাসের প্রয়োজন পূর্ণ হয়েই যাচ্ছে।
অতএব এমন ব্যক্তি যদি বাড়ি বানানোর নিয়তে টাকা জমা করে যা দিয়ে তার হজ্বের খরচ হয়ে যাবে তাহলে নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী এ টাকার কারণে তার উপর হজ্ব ফরয হয়ে যাবে। তাই হজ্বের মৌসুমে এ টাকা দিয়ে হজ্ব করা তার জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে। তবে হজ্বের মৌসুম আসার আগেই যদি ঐ টাকা বাড়ি বানানো বা অন্য কোনো প্রয়োজনে খরচ করে ফেলে এবং তার কাছে হজ্ব করার মতো আর টাকা না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে তার উপর হজ্ব ফরয হবে না।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির বসবাসের জন্য ভাড়া বাসারও ব্যবস্থা নেই এবং বসবাসের প্রয়োজন পূরণের জন্যই তাকে বাড়ি বানাতে হবে তার জন্য নিজস্ব বাড়ি মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। এমন ব্যক্তি যদি বাড়ি বানানোর জন্য টাকা জমা করে এবং হজ্বের মৌসুম আসার পর তার কাছে এ পরিমাণ টাকা থাকে, যা দিয়ে হজ্ব করলে বাড়ি বানানো যাবে না তাহলে তার উপর ঐ টাকার কারণে হজ্ব ফরয হবে না।
-গুনইয়াতুন নাসিক ২০; মানাসিক ৪৪; আলবাহরুল আমীক ১/৩৮২; মিনহাতুল খালিক ২/৩১৩
আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার উপর অনেক আগে হজ্ব ফরয হয়েছে। তখন দ্বীনের বুঝ না থাকায় অবৈধ উপার্জন দিয়ে হজ্ব করেছি। এখন আমি জানতে চাই যে, উক্ত হজ্বের মাধ্যমে আমার ফরয হজ্ব কি আদায় হয়েছে, না পুনরায় হজ্ব করতে হবে?
হজ্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যার মাধ্যমে শারীরিক ইবাদতের পাশাপাশি আর্থিক ইবাদতের বিষয়ও রয়েছে। অবৈধ সম্পদের দ্বারা হজ্ব করলে এর দ্বারা ফরয আদায় হয়ে গেলেও আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে না। তাই কবুল হজ্বের জন্য পুনরায় হালাল সম্পদ দ্বারা হজ্ব করতে হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৯; ফাতহুল কাদীর ২/৩১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৫৬
এ বছর আমরা স্বামী-স্ত্রী হজ্বে যাব। আমাদের দু বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। তাকেও নিয়ে যাব। প্রশ্ন হল এই শিশু ছেলের ইহরাম বা হজ্বের আমল কীভাবে হবে? তাকেও কি ইহরামের কাপড় পরাতে হবে? ঠা-ার দরুণ মাথা মুখ ঢাকতে হলে তা পারব কি না? তার ভুলের কারণে দম ওয়াজিব হবে কি? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শিশু সন্তানের পক্ষ থেকে তার পিতা ইহরাম করে নিবেন। আর এই শিশুকে ইহরামের কাপড় পরানো জরুরি নয়। সম্ভব হলে পরাবে এবং যথাসম্ভব ইহরামের নিষিদ্ধ জিনিস থেকেও তাকে বিরত রাখতে চেষ্টা করবে। প্রয়োজন হলে তাকে সেলাই করা পোশাক পরাতে পারবে এবং চেহারা ও মাথা ঢাকতেও পারবে।
শিশু-বাচ্চা ইহরামের নিষিদ্ধ কোনো কিছু করার দ্বারা তার উপর কিংবা তার অভিভাবকের উপর জরিমানা-দম বা অন্য কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না। অভিভাবক তাকে নিয়ে তাওয়াফ-সায়ী করবে। আর তার পক্ষ থেকে তাওয়াফের দুই রাকাতও পড়তে হবে না। মিনা, আরাফায় নিজেদের সাথে সাথে রাখবে এবং তার পক্ষ থেকে কংকর নিক্ষেপ করবে। আর তার পক্ষ থেকে দমে শোকর আদায় করতে হবে না। ইহরাম ত্যাগ করার জন্য তার মাথা মুণ্ডন করে দিবে।
-মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১১২-১১৩, ২৬৩; গুনইয়াতুন নাসিক ৮৩-৮৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৬৬
আমাদের এলাকায় কিছু লোক নিম্নোক্ত হাদীসটির ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। তাই জনাবের সমীপে আকুল আবেদন যে, নিম্নোক্ত হাদীসটি তাহকীক করে তা আমলযোগ্য কি না তা জানানোর জন্য সুমর্জি কামনা করছি। হাদীসটি হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে বলেছেন, হে আলী! প্রত্যেক রাতে পাঁচ কাজ করে ঘুমাও। যথা : ১. চার হাজার দিনার সদকা করে ঘুমাও ২. এক খতম কুরআন পড়ে ঘুমাও ৩. জান্নাতের মূল্য আদায় করে ঘুমাও। ৪. দুজনের মাঝে বিবাদ মিটিয়ে ঘুমাও ও ৫. একটি হজ্ব আদায় করে ঘুমাও। আলী রা. বললেন, এটা তো অসম্ভব। কীভাবে আমি তা আদায় করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চার বার সূরা ফাতিহা পড়ে ঘুমাও তাহলে চার হাজার দিনার সদকার সওয়াব পাবে। তিন মর্তবা সূরা ইখলাস পড়ে ঘুমাও তাহলে একবার কুরআন খতম করার সওয়াব পাবে। তিন বার দুরূদ পড়ে ঘুমাও তাহলে জান্নাতের মূল্য আদায় হয়ে যাবে। দশবার ইস্তেগফার পড়ে ঘুমাও তাহলে দুজনের বিবাদ মিটানোর সওয়াব পাবে। চারবার কালিমায়ে তামজীদ পড়ে ঘুমাও তাহলে একটি হজ্বের সওয়াব পাবে। হযরত আলী রা. বলেন, আমি প্রত্যহ রাতে এ আমল করে ঘুমাব।
প্রশ্নোক্ত বর্ণনাটি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। হাদীসের নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে উক্ত বর্ণনা নেই। এ ধরনের জাল ও ভিত্তিহীন কথা বর্ণনা করা এবং মানুষের মাঝে তা প্রচার করা মারাত্মক গুনাহ। আর রাসূলের হাদীস হিসেবে প্রচার করার গুনাহ তো আরো ভয়াবহ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,নিঃসন্দেহে আমার উপর মিথ্যারোপ করা (এর ভয়াবহতা) অন্যের উপর মিথ্যারোপ করার মতো নয়। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত আমার উপর মিথ্যারোপ করল সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামকে বানিয়ে নেয়। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৯
তাই মুসলমানের কর্তব্য হল, এ ধরনের বর্ণনা প্রচার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকা এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে তওবা-ইস্তিগফার করা।
প্রকাশ থাকে যে, সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস, দরূদ, ইস্তেগফার ও কালিমার বিভিন্ন ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বার প্রমাণিত আছে। সেসব ফযীলতসমূহই মানুষের মাঝে প্রচার করা কর্তব্য।
Ñফাতাওয়া লাজনায়ে দায়েমা ৩৭৮৯১; শায়েখ সালেহ আল উসাইমিন
আমার আব্বার বদলি হজ্ব করার জন্য আমরা যাকে নির্ধারণ করেছি তিনি পূর্বে কখনো হজ্ব করেননি। এক লোক বলল, এমন ব্যক্তিকে দিয়ে বদলি হজ্ব করালে তা সহীহ হয় না। ঐ লোক কি ঠিক বলেছে?
যে ব্যক্তি নিজের হজ্ব আদায় করেনি তাকে দিয়ে বদলি হজ্ব করানো মাকরূহ। তবে এমন ব্যক্তিকে দিয়ে বদলি হজ্ব করালেও তা আদায় হয়ে যাবে। তাই প্রশ্নের ঐ কথা ঠিক নয়।
উল্লেখ্য যে, বদলি হজ্ব এমন ব্যক্তিকে দিয়ে করানো উত্তম যে ইতিপূর্বে নিজের ফরয হজ্ব আদায় করেছে এবং হজ্বের মাসাইল সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে।
Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১৫১৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৩৫৪৪; মাবসূত, সারাখসী ৪/১৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৬; ফাতহুল কাদীর ৩/৭৯; আলবাহরুর রায়েক ৩/৬৯; রদ্দুল মুহতার ২/৬০৩
গত বছর আমি হজ্বে গিয়েছিলাম। সেখানে এক জোড়া স্বর্ণের চুড়ি ক্রয় করি এবং পছন্দের জন্য হাতে পরে দেখি এবং সাথে সাথে খুলে ফেলি। প্রশ্ন হল, ইহরাম অবস্থায় স্বর্ণের চুড়ি হাতে দেওয়ার কারণে কি আমার উপর কোনো দম ওয়াজিব হয়েছে?
ইহরাম অবস্থায় নারীদের জন্য স্বর্ণ-রূপার অলঙ্কার এবং চুড়ি পরা জায়েয। তাই চুড়ি পরার কারণে আপনার উপর কোনো দম ওয়াজিব হয়নি। হযরত নাফে রাহ. বলেন,আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর স্ত্রী ও কন্যাগণ ইহরাম অবস্থায় অলঙ্কার পরতেন।
Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৪৪১৪; ফাতহুল কাদীর ২/৩৪৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪১০; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ১১৫
আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি হজ্বে যাচ্ছেন। তার স্ত্রী ইতোপূর্বে নিজের ফরয হজ্ব আদায় করেছেন। এখন আমি কি আমার পিতার বদলি হজ্ব ঐ মহিলাকে দিয়ে করাতে পারব? কোনো মহিলা কি পুরুষের বদলি হজ্ব করতে পারে?
মহিলার সাথে মাহরাম থাকলে মহিলাকে দিয়ে বদলি হজ্ব করালেও তা আদায় হয়ে যাবে। তবে ইতোপূর্বে নিজের ফরয হজ্ব আদায় করেছে এবং হজ্বের বিধি বিধান সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে এমন পুরুষের মাধ্যমে বদলি হজ্ব করানোই উত্তম।
Ñসহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৫৫; মানাসিক ৪৫৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৭; ফাতহুল কাদীর ৩/৭২; আদ্দররুল মুখতার ২/৬০৩
আমার নানীর বোন হজ্বে যাওয়ার ইচ্ছা করেছেন। তার ছেলেদের মধ্যে দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত বা পুরা দ্বীনদার কেউ নেই। তাই তিনি আমাকে সাথে করে হজ্বে যেতে চাচ্ছেন। প্রশ্ন হল, আমি কি তার মাহরাম? তিনি কি আমার সঙ্গে হজ্বে যেতে পারবেন? দয়া করে জানাবেন।
হাঁ, নানীর বোন মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তাই তিনি আপনার সঙ্গে হজ্বে যেতে পারবেন।
Ñতাফসীরে কুরতুবী ৫/৭২; তাফসীরে রূহুল মাআনী ৪/২৫২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩০; আলবাহরুর রায়েক ৩/৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ৩/৩০
আমি ছোট বেলায় আমার আব্বার সঙ্গে হজ্ব করেছি। এখন আমি বড় হয়েছি এবং আমার কাছে হজ্বে যাওয়ার মতো সম্পদ আছে। প্রশ্ন হল, আমার ছোটবেলার ঐ হজ্বটিই কি ফরয হজ্ব হিসেবে আদায় হয়ে গেছে, নাকি আবার হজ্ব করতে হবে? দয়া করে জানাবেন।
আপনার ছোটবেলার হজ্বটি নফল হিসেবে আদায় হয়েছে। তাই আপনাকে ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে।
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে বালক হজ্ব করবে অতপর প্রাপ্তবয়স্ক হবে তাকে আরেকটি হজ্ব করতে হবে ।
-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৭২৫২; মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/৪৭৩ (হাদীস ৫২৫৪); মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৫১০৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৩; আলবাহরুল আমীক ১/৩৬২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৭
গত বছর আমার আব্বা-আম্মার হজ্ব করার ইচ্ছা ছিল এবং টাকাও জমা দিয়েছিলেন। হঠাৎ রমযান মাসের শেষ দিকে আব্বা মারা যান। এ অবস্থায় আমার আম্মার হজ্বে যাওয়ার হুকুম কী? এক্ষেত্রে তার জন্য ইদ্দত পালন করাই জরুরি, না হজ্বে যাওয়া?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার আম্মার জন্য ইদ্দত পালন করা আবশ্যক। ইদ্দত অবস্থায় হজ্বে যাওয়া জায়েয নয়। খলিফায়ে রাশেদ হযরত ওমর ও ওসমান রা.সহ অনেক সাহাবী থেকে প্রমাণিত আছে যে, তাঁরা এমন অনেক মহিলাকে হজ্ব ও উমরা থেকে বারণ করেছেন, যারা ইদ্দত পালন করা অবস্থায় হজ্ব ও উমরার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৯১৭৮, ১৯১৭৯, ১৯১৮০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৯; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪৮৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬৫
কেউ যদি হজ্বের সায়ী ১২ যিলহজ্বের ভিতর আংশিক বা পুরোই আদায় না করে তাহলে তার কী করণীয়? ১২ যিলহজের পর যদি সে তা আদায় করে নেয় তবে কি তার উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হবে?
না, হজ্বের সায়ী আংশিক বা পুরোটা ১২ যিলহজ্বের পর আদায় করলেও কোনো জরিমানা আসবে না। কেননা হজ্বের সায়ী ১২ যিলহজ্বের ভেতর করা জরুরি নয়। তবে হজ্বের সায়ীর ক্ষেত্রে সুন্নত হল,তাওয়াফে যিয়ারতের পরপরই তা আদায় করে নেওয়া এবং পুরো সায়ী একসাথে আদায় করা। তাই কোনো ওজর ছাড়া তাওয়াফে যিয়ারতের পর সায়ী করতে বিলম্ব করা অনুত্তম।
-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৫২; মানাসিক, মুল্লা আলি কারী পৃ. ১৭০, ১৭৯, ৩৫৬
আমি গত বছর হজ্ব করেছি। আলহামদু লিল্লাহ। সবগুলো আমল নিজে সুন্দরভাবে আদায় করেছি। কিন্তু ১০ যিলহজ্ব বড় জামারায় প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে নিজে কংকর মারতে পরিনি। যে কারণে আমি স্বামীকে দিয়ে ঐ দিন কংকর নিক্ষেপ করাই। আর ১১ ও ১২ যিলহজ্বের কংকর নিজেই মারি।
দেশে আসার পর জানতে পারলাম, স্বামীকে দিয়ে কংকর মারানো নাকি বৈধ হয়নি। যদি তাই হয় তাহলে এখন আমার করণীয় কী?
জামারাতে (কংকর মারার স্থান) বর্তমানে কংকর মারার জন্য ব্যাপক প্রশস্ত ব্যবস্থা রয়েছে। তাই শুধু ভিড়ের অযুহাতে নিজে কংকর না মেরে অন্যকে দিয়ে তা নিক্ষেপের সুযোগ নেই। আর দিনে ভীড় থাকলেও রাতে তেমন ভিড় থাকে না। তাই রাতে খুব সহজেই কংকর মারা যায়।
অতএব উক্ত অবস্থায় অন্যকে দিয়ে কংকর মারানোর কারণে তা আদায় হয়নি। এ কারণে আপনার উপর জরিমানা দম ওয়াজিব হয়েছে। এখন আপনার কর্তব্য হল, কারো মাধ্যমে হেরেমের এলাকায় ন্যূনতম এক বছর বয়সী একটি ছাগল বা দুম্বা অথবা ভেড়া যবাই করিয়ে দেয়া।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ১৫৩৯৪; গুনইয়াতুন নাসিক ১৮৮; যুবদাতুল মানাসিক ১৮৪; হজ্ব ওয়া উমরা কে জাদীদ মাসাইল আওর উনকা হল, ইসলামিক ফিকহ একাডেমী, ভারত, ৫৯৯
বৃদ্ধ লোকদের জন্য কালো খেযাব বা অন্য রঙের খেযাব ব্যবহারের হুকুম কী? দলিলসহ বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব। এছাড়া যুবকদের অসুস্থতা বা কোনো কারণে চুল সাদা হয়ে গেলে তারা কালো খেযাব ব্যবহার করতে পারবে কি?
বার্ধক্যের কারণে চুল-দাড়ি পেকে গেলে তাতে কালো খেযাব ব্যবহার করা নাজায়েয। একাধিক হাদীসে এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ার এসেছে।
হাদীস শরীফে এসেছে, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর পিতা আবু কুহাফা রা.-এর চুল এবং দাড়ি পাকা দেখে বললেন, এটাকে কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন কর। তবে কালো থেকে বিরত থাক।Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৪৬৬
আরেক হাদীসে আছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শেষ যমানায় কিছু লোক কবুতরের ঝুঁটির মতো কালো খেযাব ব্যবহার করবে তারা কেয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস, ৪২০৯
অবশ্য কোনো যুবকের অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে যদি চুল-দাড়ি পাকার বয়সের আগেই সাদা হয়ে যায় তবে সে কালো খেযাব ব্যবহার করতে পারবে। আহমাদ আলী সাহারানপুরী বলেন, হাদীসে কালো খেযাব ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। এর মূল কারণ অন্যদের সামনে বয়স গোপন করা এবং অন্যকে ধোঁকা দেওয়া। Ñহাশিয়া সহীহ বুখারী ১/৫৩০
যুবকের ক্ষেত্রে ধোঁকার এই দিকটি অনুপস্থিত। তাই কোনো কোনো ফকীহ যুবকদের জন্য কালো খেযাব জায়েয হওয়ার মত দিয়েছেন। (ফায়যুল কাদীর ১/৩৩৬; ইমদাদুল আহকাম ৩/৩৭৬) তাবেয়ী ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. বলেন, আমাদের চেহারা যখন সতেজ ছিল তখন আমরা কালো খেযাব ব্যবহার করতাম। আর যখন আমাদের চেহারা মলিন হয়ে গেল এবং দাঁত নড়বড়ে হয়ে গেল তখন আমরা কালো খেযাব ছেড়ে দিয়েছি।Ñফাতহুল বারী ১০/৩৬৭
অবশ্য হাদীসে যেহেতু কালো খেযাবকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে তাই যুবকদের জন্যও একেবারে কালো খেযাব ব্যবহার না করে লাল কালো মিশ্রিত খেযাব ব্যবহার করাই উচিত হবে। Ñতুহফাতুল আহওয়াযী ৫/১৫৪; ফায়যুল কাদীর ১/৩৩৬
আর বার্ধক্যের কারণে চুল পেকে গেলে কালো খেযাব ছাড়া অন্য খেযাব ব্যবহার করা মুস্তাহাব। যেমন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু কুহাফা রা.কে কালো খেযাব ছাড়া অন্য খেযাব ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
অন্য এক হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হলুদ রং ব্যবহার করতে দেখেছি তাই আমিও হলুদ রং ব্যবহার করতে পছন্দ করি।
আমরা তো জানি, ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত কাপড় পরা জায়েয নয়। প্রশ্ন হল, লুঙ্গির ক্ষেত্রেও কি একই হুকুম? না এক্ষেত্রে মাসআলা ভিন্ন?
ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য শরীরের কোন অঙ্গের আকৃতিতে সেলাই করা পোশাক পরা নাজায়েয। যেমন, পাঞ্জাবী, পায়জামা, গেঞ্জি ও মোজা ইত্যাদি। আর লুঙ্গি যেহেতু পায়জামার মত কোনো অঙ্গের আকৃতিতে বানানো নয় তাই সেলাইযুক্ত লুঙ্গি পরা নাজায়েয নয়। তবে খোলা চাদর পরলে যাদের সতরের অঙ্গগুলো বা তার অংশবিশেষ খুলে যাওয়ার আশংকা না থাকে তাদের জন্য সেলাইযুক্ত লুঙ্গি না পরাই উচিত। কেননা ইহরামের কাপড় একেবারে সেলাইমুক্ত হওয়া উত্তম। তাই সম্ভব হলে ইহরাম অবস্থায় সেলাইবিহীন চাদরই পরবে। কিন্তু সেলাইবিহীন চাদর পরলে কারো যদি সতর খুলে যাওয়ার আশংকা থাকে তবে তার জন্য সেলাই করা লুঙ্গি ব্যবহার করা অনুত্তম হবে না।
Ñমানাসিক, পৃ. ৯৮, ১২০; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৮/৭৫; আহকামে হজ্ব, মুফতী মুহাম্মাদ শফী পৃ.৩৪
মহিলাদের জন্য কি ইহরাম অবস্থায় হাত-মোজা, পা-মোজা পরা জায়েয আছে? দলীল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব। সহীহ বুখারীতে নাকি আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের হাতমোজা পরতে নিষেধ করেছেন?
মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় হাতমোজা, পা-মোজা পরা জায়েয।
হাদীস শরীফে আছে, সালেম রাহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. মুহরিম মহিলাদের পা-মোজা কেটে দিতেন। কিন্তু সফিয়া বিনতে আবু উবাইদা রা. তাঁর কাছে আয়েশা রা.-এর এ হাদীস যখন বর্ণনা করলেন যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম মহিলাদের পা-মোজা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন’ এরপর থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. মুহরিম মহিলাদের পা-মোজা আর কেটে দিতেন না। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৮৩১
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাত-মোজা ও পা-মোজা পরিধান করতে পারবে। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৪৪
সাআদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ইহরাম অবস্থায় তার কন্যাদেরকে হাত-মোজা পরার নির্দেশ দিতেন। Ñকিতাবুল উম ২/২২৩
কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ, হাসান বসরী, হাকাম ও হাম্মাদ রাহ. প্রমুখ তাবেয়ীগণ থেকেও ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের হাতমোজা পরা জায়েয হওয়ার কথা বর্ণিত আছে। Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৫৯৬৭, ১৪৪৪১
আর প্রশ্নে সহীহ বুখারীর উদ্ধৃতিতে যে হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে তা মূলত মাওক‚ফ হাদীস। অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর উক্তি। (আস সুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৪/৪৭; ফাতহুল বারী ৪/৬৪)
আর উপরে আমরা দেখেছি, একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ীর মত এক্ষেত্রে এটিই যে, মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাতমোজা পরবে। ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম শাফেয়ী রাহ.-সহ অনেক ফকীহের মতে এ অভিমতটিই অধিক শক্তিশালী।
Ñকিতাবুল উম ২/২২৩; আলমাবসূত সারাখসী ৪/৩৩
আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহ তাআলা গত বছর হজ্বে নিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় বাসার পাশের মসজিদ থেকে ইহরাম বাধি। ইহরাম বেধে যখন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হব তখন পাশের এক আত্মীয়ের বাসার সামনে নিম
গাছ থেকে মেসওয়াকের জন্য একটি ডাল ভাংতে যাই তখন কাফেলার এক সাথী বললেন, ইহরাম বাঁধার পর সব ধরনের গাছের ডাল ভাঙ্গা, প্রাণী শিকার করা নিষিদ্ধ।
জানার বিষয় হল, ঐ সাথীর কথা কি ঠিক? নিজ দেশ থেকে ইহরাম বাঁধলে তখন থেকেই কি প্রাণী শিকার করা ও যে কোনো ধরনের গাছের ডাল ভাঙ্গা নিষিদ্ধ হয়ে যায়?
আপনার সাথীর ঐ কথা ঠিক নয়। ইহরামের কারণে হারামের সীমানার বাইরে কোনো গাছ কাটা বা ডাল ভাঙ্গা নিষিদ্ধ নয়। তবে হেরেমের এলাকার গাছ কাটা বা ডাল ভাঙ্গা ইহরাম থাক বা না থাক সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। আর একথা ঠিক যে, ইহরাম বাঁধার পর যে কোনো স্থানের প্রাণী শিকার করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহরাম অবস্থায় শিকারের প্রাণী হত্যা করো না।
-সূরা মায়েদা : ৯৫; গুনইয়াতুন নাসিক ২৮১, ৩০৪; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৩৮৪
ক) আমার হজ্ব করার সামর্থ্য নেই, কিন্তু ওমরাহ করার সামর্থ্য আছে। এখন আমার জন্য কি ওমরাহ করা আবশ্যক?
খ) হজ্বের মতো ওমরার জন্য কি নির্দিষ্ট সময় আছে?
গ) শুনেছি, কাবা শরীফ দেখলে নাকি হজ্ব ফরয হয়ে যায়- এ কথা কি ঠিক? তাহলে আমি ওমরাহ করলে কি আমার উপর হজ্ব ফরয হয়ে যাবে?
উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে শরঈ সমাধান জানালে কৃতজ্ঞ হব।
ওমরারর সামর্থ্য থাকলে জীবনে একবার ওমরাহ করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। অতএব এ অবস্থায় আপনার জন্য ওমরাহ করা সুন্নত। আর ওমরার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। শুধু যিলহজ্ব মাসের ৯-১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঁচ দিন ওমরাহ করা মাকরূহ। এছাড়া বছরের যে কোনো সময় ওমরাহ করা জায়েয আছে। আর রমযান মাসে ওমরাহ করা সবচেয়ে উত্তম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমযানে একটি ওমরাহ করা আমার সাথে একটি হজ্ব করার সমতুল্য। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৮৬৩
আর কাবা শরীফ দেখলেই হজ্ব ফরয হয়ে যায়- এ ধারণা ঠিক নয়। হজ্ব ফরয হওয়ার সাথে কাবা শরীফ দেখা-না দেখার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং হজ্ব ফরয হওয়ার জন্য শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি হজ্বের মৌসুমে হজ্বে আসা-যাওয়ার খরচসহ তার অনুপস্থিতির দিনগুলোতে পরিবারের চলার মতো স্বাভাবিক খরচের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাছাড়া বাইরে থেকে ওমরার ভিসায় গিয়ে হজ্ব করা নিষেধ। তাই ওমরাহ করতে গিয়ে হজ্ব পর্যন্ত থেকে যাওয়ারও সুযোগ নেই।
-গুনইয়াতুন নাসিক ২২, ১৯৬; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪৬৩; আততাজরীদ ৪/১৬৮৮
আমি একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার মূলধন ছাড়া প্রয়োজন অতিরিক্ত হজ্ব করার মতো সম্পদ নেই। তবে ব্যবসার মূলধন বিক্রি করে হজ্ব করতে পারব। কিন্তু পরে ব্যবসা করার জন্য কোনো মূলধন বাকি থাকবে না। ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। উল্লেখ্য যে, ব্যবসার আয় থেকেই পরিবারের খরচ নির্বাহ করি। হুযুরের নিকট জানতে চাই, এ অবস্থায় আমার উপর হজ্ব ফরয হবে কি না? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ব্যবসার উপরই যেহেতু আপনার সংসারের ব্যয় নির্ভরশীল এবং ব্যবসার টাকা দিয়ে হজ্বে গেলে পুঁজিই শেষ হয়ে যাবে তাই এক্ষেত্রে ঐ ব্যবসার মূলধন প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। অতএব ঐ ব্যবসার মূলধনের কারণে আপনার উপর হজ্ব ফরয হবে না। অবশ্য সংসারের খরচ নির্বাহ হয়ে যায়- এ পরিমাণ ব্যবসার মাল রেখে অতিরিক্ত সম্পদ দ্বারা হজ্ব করা যখন সম্ভব হবে তখন হজ্ব ফরয হবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৮;
আমার এক বন্ধু তার নিজ খরচে আমাকে হজ্বে নিয়ে গেছে। আমার উপর বর্তমানে হজ্ব ফরয নয়। আমি জানতে চাই যে, পরবর্তীতে আমি যদি হজ্বের খরচ সমপরিমাণ সম্পদের মালিক হই তাহলে আমাকে কি পুনরায় হজ্ব করতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ফরয হজ্ব আদায় হওয়ার জন্য নিজ খরচে হজ্ব করা জরুরি নয়। বরং অন্যের খরচে হজ্ব করলেও ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যায়। তবে যদি কেউ ইচ্ছা করে নফল হজ্ব আদায়ের নিয়ত করে থাকে সেটা ভিন্ন কথা। এক্ষেত্রে তার ফরয হজ্ব আদায় হবে না। তবে সাধারণ হজ্বের নিয়তে করলে ফরয হজ্বই আদায় হবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইহরামের সময় আপনি নফল হজ্বের নিয়ত না করে থাকলে এর দ্বারা আপনার ফরয হজ্বই আদায় হয়েছে। পরবর্তীতে সামর্থ্যবান হলেও আপনার উপর পুনরায় হজ্ব করা ফরয হবে না। পরবর্তীতে হজ্ব করলে তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে।
- ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮১; রদ্দুল মুহতার ২/৪৬০
গত বছর আমি হজ্বে গিয়েছিলাম। দেশ থেকে ইহরাম বেঁধে যাইনি। ইচ্ছা ছিল মীকাত অতিক্রম করার আগে ইহরাম বেঁধে নেব। কিন্তু পরে আর মনে ছিল না। ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করেছি। জেদ্দা বিমান বন্দরে নামার পর আমার এক আত্মীয় জানতে পারলে বলেন, আগে মদীনায় আমার বাসায় চলে আসুন। পরে হজ্বের আগে মদীনা থেকে ইহরাম বেঁধে হজ্ব করতে পারবেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী আমি প্রথমে হারামে প্রবেশ না করে অন্য পথে সরাসরি মদীনায় গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে হজ্ব করেছি। দেশে আসার পর এক ব্যক্তি বললেন, ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করার কারণে নাকি আমার উপর দম ওয়াজিব হয়েছে।
তাই জানার বিষয় হল, ইহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করার কারণে কি আমার উপর দম ওয়াজিব হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইহরাম না বেঁধে জেদ্দায় চলে এলেও পরবর্তীতে সেখান থেকে যেহেতু আপনি সরাসরি মক্কা মুকাররমায় যাননি; বরং মদীনায় গিয়ে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে হেরেমে গিয়েছেন তাই আপনার উপর দম ওয়াজিব হয়নি।
উল্লেখ্য যে, উমরাহ বা হজ্বের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সময় নিজ এলাকা থেকেই ইহরাম বেঁধে নেওয়া উত্তম। সাহাবায়ে কেরাম সিরিয়া, বসরা, বায়তুল মাকদিস, কাদেসিয়ার মতো দূর-দূরান্ত এলাকা থেকে ইহরাম বেঁধে হজ্ব করতে আসতেন। এই মাসআলার উপর আমল করলে উক্ত জটিলতায় পড়তে হত না।
-সুনানে আবু দাউদ ২/৪১৩; মুসনাদে আহমাদ ৪৪/১৮১; আততামহীদ ১৫/১৪৫; সুনানে বায়হাকী ৫/৩১; মাবসূত, সারাখসী ৪/১৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৭৩; আলবাহরুর রায়েক ৩/৪৮; ফাতহুল কাদীর ৩/৩৩৪; ইরশাদুস সারী আলা মানাসিকি মোল্লা আলী কারী ৯৪-৯৫
আমি এ বছর হজ্বে যাওয়ার নিয়ত করেছি। আমার কাছে হজ্বের খরচ পরিমাণ টাকা আছে। তবে আমার উপর স্ত্রীর মোহর বাবদ ১ লক্ষ টাকা ঋণ আছে, যা বিয়ের সময় পরে আদায়ের কথা হয়েছিল। এখন মহরের ঐ টাকা আদায় করলে হজ্বের যথেষ্ট পরিমাণ টাকা অবশিষ্ট থাকবে না।
এ অবস্থায় আমার উপর কি হজ্ব করা ফরয হবে, নাকি আগে মোহর আদায় করতে হবে? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রীর মোহর বাকি থাকলেও তা আদায়ের আগে হজ্বে যেতে পারবেন এবং এর দ্বারা আপনার ফরয হজ্বই আদায় হবে। বকেয়া মোহর যেহেতু আপনাকে এখনই আদায় করতে হচ্ছে না তাই এ কারণে হজ্ব বিলম্বিত করা ঠিক হবে না। হ্যাঁ, আপনি যদি এ টাকা থেকেই স্ত্রীর মোহর আদায় করে দেন তাহলে অবশিষ্ট টাকা দ্বারা যেহেতু হজ্বের খরচ হবে না তাই এক্ষেত্রে হজ্বও ফরয হবে না। কিন্তু যদি এখন মোহর আদায়ের নিয়ত না থাকে তবে ঐ টাকার কারণে হজ্ব ফরয হবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬১; আলমানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪৩; আলবাহরুল আমীক ১/৩৭৭; ইরশাদুস সারী ৫৯; আলজাওহারাতুন নাইয়্যিরাহ ১৯২
আমার আব্বা অনেকগুলো জমির মালিক। বেশ কিছু জমি তার এমন রয়েছে, যেগুলোর ফসল ছাড়াই আমাদের খোরাকির প্রয়োজন পূর্ণ হয়ে যায়। জমিজমা ব্যতীত আব্বার বাড়তি কোনো আয় নেই। জানতে চাই আমার আব্বার উপর কি হজ্ব ফরয?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সংসারের খরচের জন্য প্রয়োজন হয় না এমন জমিগুলো বা তার অংশবিশেষ বিক্রি করলে যদি আপনার আব্বার হজ্বের খরচ হয়ে যায় তাহলে আপনার আব্বার উপর হজ্ব করা ফরয। এক্ষেত্রে জমি বিক্রি করে হলেও তাকে হজ্বে যেতে হবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৮
আগামী সপ্তাহে আমি জেদ্দায় একটি ব্যবসায়িক কনফারেন্সে যাব। আমার ইচ্ছা হল, মিটিং শেষ হওয়র পর সুযোগ পেলে সেখান থেকে মক্কা শরীফ গিয়ে ওমরাহ করে আসব। ইহরাম বেঁধে কনফারেন্সে যাওয়া সম্ভব নয় তাই হুযুরের কাছে জানতে চাই, এ অবস্থায় আমি ইহরাম না বেঁধে জেদ্দায় কনফারেন্সে যেতে পারব কি না? এরপর কনফারেন্স শেষে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে ওমরাহ করলে কি আমার উপর দম ওয়াজিব হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু কনফারেন্সের উদ্দেশ্যেই জেদ্দা যাচ্ছেন তাই এ অবস্থায় আপনার জন্য ইহরাম না বেঁধে জেদ্দায় যাওয়া জায়েয হবে। কনফারেন্স শেষে জেদ্দাবাসীদের মতো আপনি সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে ওমরাহ করতে পারবেন। এ কারণে আপনার উপর কোনো জরিমানা বা দম ওয়াজিব হবে না।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৭৭; আলবাহরুর রায়েক ৩/৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪১৫; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৬৮; আলবাহরুল আমীক ২/৩১৮
আমার আববা অনেকগুলো জমির মালিক। বেশ কিছু জমি তার এমন রয়েছে যেগুলোর ফসল ছাড়াই আমাদের খোরাকীর প্রয়োজন পূর্ণ হয়ে যায়। জমি-জমা ব্যতীত আববার বাড়তি কোনো সম্পদ নেই। জানতে চাই যে, এমতাবস্থায় আমার আববার উপর হজ্ব ফরয হবে কি না?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় সংসারের প্রয়োজনে আসে না এমন জমি বা তার অংশবিশেষ বিক্রি করলে যদি হজ্বের খরচ হয়ে যায় তাহলে আপনার আববার উপর হজ্ব করা ফরয। এ ক্ষেত্রে জমি বিক্রি করে হলেও তাকে হজ্বে যেতে হবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৮; কাযী খান ১/২৮২; গুনইয়াতুন নাসিক ২০
আমাদের অফিসে জামাতের সাথে নামায আদায় করা হয়। এতে ইমামতির জন্য একজন হুযুরও আছেন। অসুস্থতার কারণে একদিন তিনি না আসায় আমাদের জিএম স্যার ইমামতি করেন। তিনি কয়েক বছর আগে হজ্ব করেছেন এবং তখন থেকেই দাড়ি রাখছেন। তবে কোমরে ব্যথার কারণে তিনি চেয়ারে বসে নামায আদায় করেন এবং ইশারায় রুকু-সিজদা করেন। সেদিনও তিনি চেয়ারে বসেই নামায পড়িয়েছেন। এতে আমাদের মনে কিছুটা সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তাই জানার বিষয় হল, আমাদের ঐ নামায কি সহীহ হয়েছে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
না, ঐ নামায সহীহ হয়নি। চেয়ারে বসে নামায আদায়কারীর পিছনে সুস্থ ব্যক্তির ইকতিদা করা সহীহ নয়। কারণ চেয়ারে নামায আদায়কারী ইশারায় নামায আদায়কারীর অন্তর্ভুক্ত। আর ইশারায় নামায আদায়কারীর পিছনে সুস্থ ব্যক্তির ইকতিদা সহীহ নয়। অতএব সকল মুকতাদিকে সেদিনের ফরয নামাযটি কাযা করে নিতে হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৮০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৬০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৭৯
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন তাই আমরাও দাঁড়িয়ে পান করি। এক আলেম হজ্ব করে যমযমের পানি নিয়ে এলে আমরা তা দাঁড়িয়ে পান করলাম। তখন তিনি ধমক দিয়ে বসিয়ে দেন এবং বলেন, আল্লাহর রাসূল ভীড় থাকার কারণে যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন। তাই ভীড় থাকলে যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা জায়েয অন্যথায় জায়েয নেই।
জানার বিষয় হল, যমযমের পানি পান করার সুন্নত তরীকা কী? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।
যমযম পানি সাধারণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে-বসে দুভাবেই পান করা জায়েয। ভীড় না থাকলে দাঁড়িয়ে পান করা জায়েয নেই-প্রশ্নের এ কথা ঠিক নয়। ভীড় ছাড়াও যমযম পানি দাঁড়িয়ে পান করা যে জায়েয আছে এ সম্পর্কে ফিকহ-ফাতাওয়ার অনেক কিতাবে এবং হাদীসের শরাহগ্রন্থসমূহে উল্লেখ আছে। যেমন আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৭৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫; শরহুল মুনইয়াহ ৩৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৪; উমদাতুল কারী ৯/২৭৮; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/১৬৫-১৬৬
উপরন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমযম পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন-এ হাদীসের ভিত্তিতে বহু ফকীহ ও মুহাদ্দিস যমযম পানি দাঁড়িয়ে পান করাকে উত্তম ও আদব বলেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শামসুল আইম্মা হালওয়ানী রাহ., শাইখুল ইসলাম খাহারযাদা রাহ. (আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৭৯), ইবরাহীম হালাবী রাহ. (শরহুল মুনইয়াহ ৩৬), মোল্লা আলী কারী রাহ. (শরহুশ শামায়েল ১/২৫০), সহ প্রমুখ ফকীহ ও হাদীসবিশারদ।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূলত ভীড়ের কারণেই যমযম দাঁড়িয়ে পান করেছেন এটি কোনো সুনিশ্চিত ও চূড়ান্ত কথা নয় এবং তা হাদীস ও আছার দ্বারা প্রমাণিতও নয়; বরং ফিকহ ও হাদীসবিশারদগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাঁড়িয়ে যমযম পান করার সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে একটি ভীড়ের কারণকেও উল্লেখ করেছেন। তারা আরো যে সমস্ত কারণকে উল্লেখ করে থাকেন তা হল,
১. যমযম পানি দাঁড়িয়ে পান করাও যে জায়েয তা বুঝানোর জন্য।
২. বসার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকা অর্থাৎ পান করার স্থানটি ভেজা বা স্যঁতস্যঁতে হওয়ার কারণে তিনি দাঁড়িয়ে পান করেছেন।
সুতরাং এ সব কারণের মধ্যে শুধু একটিকে গ্রহণ করে বাকিগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া আদৌ ঠিক নয়।