আমি প্রতি রমযানেই রোযাগুলো নিয়মিত রাখি। কিন্তু অধিকাংশ রোযাতেই মুখে...
আমি প্রতি রমযানেই রোযাগুলো নিয়মিত রাখি। কিন্তু অধিকাংশ রোযাতেই মুখে রোযার নিয়ত উচ্চারণ করি না; বরং রোযা রাখার উদ্দেশ্যে সেহরীর জন্য উঠে সেহরী খেয়ে নিই এবং অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী ঠিকমতো করতে থাকি। এমন করার দ্বারা আমার রোযাগুলো সহীহ হয়েছে কি না? নাকি আবার কাযা করতে হবে?
রোযা রাখার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে ওঠা ও সাহরী খাওয়াটাই রোযার নিয়তের শামিল। নিয়ত মনের ইচ্ছার নাম, এক্ষেত্রে মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই আপনার রোযাগুলো সহীহভাবে আদায় হয়েছে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৯; আলজাওহারাতুন নায়্যিরাহ ১/১৭৬; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫
এক ব্যক্তি চোখের অসুস্থতার কারণে ড্রপ ব্যবহার করে এবং ঔষধের...
এক ব্যক্তি চোখের অসুস্থতার কারণে ড্রপ ব্যবহার করে এবং ঔষধের তিক্ততা গলায় অনুভব করে। প্রশ্ন হল, রোযা অবস্থায় এ ধরনের ড্রপ ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে কি? দয়া করে জানাবেন।
না, রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করার কারণে গলায় ঔষধের তিক্ততা অনুভূত হলেও রোযা নষ্ট হয় না। সুতরাং রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করা যাবে। কোনো সমস্যা নেই।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩
কেউ যদি শাওয়াল মাসে রমযানের কাযা রোযা রাখে এবং এর...
কেউ যদি শাওয়াল মাসে রমযানের কাযা রোযা রাখে এবং এর সাথে শাওয়ালের ছয় রোযার নিয়তও করে তাহলে ফরযের কাযা এবং শাওয়ালের ছয় রোযার সওয়াব পাওয়া যাবে কি?
রমযানের কাযা রোযার সঙ্গে শাওয়ালের ছয় রোযার নিয়ত করলে তা রমযানের কাযা হিসেবেই গণ্য হবে। এতে শাওয়ালের ছয় রোযা আদায় হবে না এবং তার সওয়াবও পাওয়া যাবে না। শাওয়ালের ছয় রোযার জন্যে পৃথকভাবে ছয়টি রোযা রাখতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৭
১. আমি লোকমুখে শুনেছি যে, রোযা অবস্থায় যদি শরীর থেকে...
১. আমি লোকমুখে শুনেছি যে, রোযা অবস্থায় যদি শরীর থেকে রক্ত বের হয় তাহলে রোযা হালকা হয়ে যায়। একথা কি ঠিক? রোযা হালকা হয়ে যাওয়া বলতে কী বোঝায়?
সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বের করলে রোযা ভেঙ্গে যায় কি না?
২. আমার দাঁতে সমস্যার কারণে মাঝে মাঝে দাঁত থেকে রক্ত বের হয়। প্রশ্ন হল, রোযা অবস্থায় যদি দাঁত থেকে রক্ত বের হয় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে কি?
১. শরীর থেকে রক্ত বের হলে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না এবং সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বের করলেও রোযা ভাঙ্গে না। তবে ইচ্ছা করে এ পরিমাণ রক্ত দেওয়া ঠিক নয়, যার কারণে রোযা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলার আশংকা হয় বা রোযা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
২. দাঁত থেকে রক্ত বের হওয়া রোযা ভঙ্গের কারণ নয়। তবে রোযা অবস্থায় রক্ত বের হলে তা যেন গলায় চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা গলায় রক্তের স্বাদ পাওয়া গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৯৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬
রোযা অবস্থায় যদি কাউকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, তাহলে এতে কি...
রোযা অবস্থায় যদি কাউকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, তাহলে এতে কি তার রোযা ভেঙ্গে যাবে? তেমনি রোযা অবস্থায় ইনসুলিন নিলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে? বিস্তারিত বুঝিয়ে দিলে আমরা অনেক উপকৃত হব।
ইঞ্জেকশন বা ইনসুলিন কোনোটার কারণেই রোযা ভাঙ্গবে না। তবে একান্ত ওজর ছাড়া গ্লুকোজ জাতীয় ইঞ্জেকশন (যা খাবারের কাজ দেয়) দেওয়া মাকরূহ তাহরীমী।
-আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; ইমদাদুল মুফতীন পৃ. ৪৮৯
রোযা অবস্থায় আমার মুখে মশা বা অন্য কোনো পোকা প্রবেশ...
রোযা অবস্থায় আমার মুখে মশা বা অন্য কোনো পোকা প্রবেশ করে গলা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আমি অনেক কাশাকাশি করেও তা বের করতে পারিনি। বর্তমানে আমি খুবই দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত। উক্ত ঘটনার কারণে আমার রোযার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না জানিয়ে বাধিত করবেন।
রোযা অবস্থায় মশা-মাছি অনিচ্ছাকৃত গলার ভেতরে প্রবেশ করলে রোযা ভাঙে না। তাই আপনার ঐ দিনের রোযা সহীহ হয়েছে। মশা ভেতরে চলে যাওয়ার কারণে রোযার ক্ষতি হয়নি।
-কিতাবুল আছল ২/১৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫
কুলি করার পর সাধারণত মুখে যে পানি লেগে থাকে তা...
কুলি করার পর সাধারণত মুখে যে পানি লেগে থাকে তা রোযা অবস্থায় থুথুর সাথে গিলে ফেললে রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি?
না, এতে রোযার কোনো ক্ষতি হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬১; মারাকিল ফালাহ পৃ.৬৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৬২
আমরা রমযান মাসে খতম তারাবীহ পড়ে থাকি। তখন আমরা সবাই...
আমরা রমযান মাসে খতম তারাবীহ পড়ে থাকি। তখন আমরা সবাই মিলে টাকা উঠিয়ে রমযানের শেষে হাফেয সাহেবকে কিছু হাদিয়া দিয়ে থাকি। এটা কি জায়েয আছে? জানালে খুশি হব।
খতম তারাবীর জন্য হাফেয সাহেবদেরকে হাদিয়ার নামে বিনিময় দেওয়া ও তাদের জন্য তা গ্রহণ করা ঠিক নয়। কেননা এটি মূলত কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত ও খতমেরই বিনিময়, যা নাজায়েয। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কুরআন পড়। তবে এর বিনিময়ে কোনো কিছু ভোগ করো না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৫৩৫) আরেক বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ ইবনে মা‘কিল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমযানে লোকদের নিয়ে তারাবীহ পড়লেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ তাঁর কাছে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ’ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া ও দিরহামগুলো এ বলে ফেরত পাঠালেন যে, আমরা কুরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস ৭৭৩৯)
-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৪৪; মাজমুআতু রাসাইলি ইবনি আবিদীন ১/১৬৭; ফাতাওয়া খালীলিয়া পৃ. ১২২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩১৫-৩২২
আমার প্রস্র্রাব আটকে যাওয়ার সমস্যা আছে। এজন্য আগে মাঝেমধ্যে ক্যাথেটারও...
আমার প্রস্র্রাব আটকে যাওয়ার সমস্যা আছে। এজন্য আগে মাঝেমধ্যে ক্যাথেটারও ব্যবহার করতে হয়েছে। সামনে রমযান আসছে। তাই আমি জানতে চাচ্ছি যে, রোযা অবস্থায় ক্যাথেটার ব্যবহার করলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?
ক্যাথেটার ব্যবহার করলে রোযার ক্ষতি হয় না। তাই আপনি রোযা অবস্থায় প্রয়োজন হলে তা ব্যবহার করতে পারবেন।
-রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৯; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা : ১০, ২/৪৫৪; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৯৭
গত রমযানে একদিন দিনের বেলা আমার স্বপ্নদোষ হয়েছিল। তখন আমি...
গত রমযানে একদিন দিনের বেলা আমার স্বপ্নদোষ হয়েছিল। তখন আমি ভেবেছিলাম আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে। তাই আমি তারপরে ইচ্ছাকৃত পানাহার করেছিলাম। এখন জানতে চাই, আমাকে কি ঐ রোযার কাযা এবং কাফ্ফারা উভয়টিই আদায় করতে হবে?
স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভাঙ্গে না। কিন্তু আপনি যেহেতু রোযা ভেঙ্গে গেছে ভেবে পানাহার করে ফেলেছেন তাই আপনাকে ঐ রোযার শুধু কাযা করলেই হবে। কাফ্ফারা দিতে হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, দ্বীনের যে কোনো বিষয়ে নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই অন্যায়। এ ব্যাপারে স্থানীয় আলেম থেকে হলেও জিজ্ঞাসা করে আমল করা জরুরী। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন,
فَسْـَٔلُوْۤا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
‘তোমরা যদি না জান তবে যারা জানে (আলেম) তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর।’(সূরা আম্বিয়া (২১): ৭)
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৬
আমি একটি প্রতিষ্ঠানের বাবুর্চি। সেখানে প্রতি বেলায় অনেক মানুষের খাবার...
আমি একটি প্রতিষ্ঠানের বাবুর্চি। সেখানে প্রতি বেলায় অনেক মানুষের খাবার রান্না হয়। রমযান মাসে আমি একটি সমস্যায় পড়ি। খাবার একেবারে না চেখে রান্না করলে অনেক সময় লবণ কিছুটা কম-বেশি হয়ে যায়। ফলে ইফতার ও খাবারের সময় সবার কষ্ট হয়। তাই রোযা অবস্থায় আমি কি শুধু জিহ্বা দিয়ে তরকারির স্বাদ চেখে নিতে পারব?
রোযা অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া জিহ্বা দ্বারা স্বাদ না দেখা উচিত। একান্ত অন্যদের কষ্ট হলে ইফতারির লবণ দেখতে পারবেন। তবে লবণ দেখে সাথে সাথে থুথু ফেলে দিবেন। প্রয়োজনে কুলিও করে নিবেন। খেয়াল রাখতে হবে, খাবারের অংশ যেন গলাতে চলে না যায়। আর তরকারীর লবণ ইফতারীর পরে দেখলেও চলে। কেননা তরকারী সাধারণত ইফতারীর পরই খাওয়া হয়।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯৩৮৫, ৯৩৮৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; তাবয়ীনুল হাকাইক ২/১৮৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯
গত রোযায় আমি একদিন শিঙ্গা লাগিয়েছিলাম। তবে এরপরে সারাদিন আর...
গত রোযায় আমি একদিন শিঙ্গা লাগিয়েছিলাম। তবে এরপরে সারাদিন আর কিছু খাইনি। কিন্তু এখন সন্দেহ হচ্ছে যে, আমার ঐ রোযা আদায় হয়েছে কি না। তাই হুযুরের কাছে জানতে চাচ্ছি, আমার ঐ রোযা কি আদায় হয়েছে?
হাঁ আপনার ঐ রোযা আদায় হয়েছে। শিঙ্গা লাগালে রোযা ভাঙ্গে না। হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: احْتَجَمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ صَائِمٌ.
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরামের হালতে রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।
-জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৭৫) -আলমাবসুত, সারাখসী ৩/৫৭; বাদায়েউস সনায়ে ২/২৭০; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৬; রদ্দুল মুহতার ২/৪২০
এক ব্যক্তি নফল রোযা রেখেছিল। পরে রোযার কথা ভুলে গিয়ে...
এক ব্যক্তি নফল রোযা রেখেছিল। পরে রোযার কথা ভুলে গিয়ে খানা খেয়ে ফেলেছিল। স্মরণ হওয়ার পর আর খায়নি। তার এ রোযা কি হবে? একজন বলছে, ফরয রোযায় ভুলে খেলে রোযা নষ্ট হয় না। কিন্তু নফল রোযায় ভুলে খেয়ে নিলে রোযা হয় না। এ কথা কি সহীহ?
রোযা নফল হোক বা ফরয ভুলে খেয়ে নিলে রোযা ভাঙ্গে না। নফল রোযায় ভুলে খেলে রোযা ভেঙ্গেযায় প্রশ্নের এ কথা ঠিক নয়। তাই ঐ ব্যক্তির রোযাটি সহীহ হয়েছে।
-মাবসূত, সারাখসী ৩/৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৪, ৪০০
সাধারণত প্রতি ২৭ দিন পরপর আমার স্রাব শুরু হয়। এটা...
সাধারণত প্রতি ২৭ দিন পরপর আমার স্রাব শুরু হয়। এটা আমার অনেক দিনের অভ্যাস। এ নিয়ম অনুযায়ী ১৪ রমযান আমার স্রাব শুরু হওয়ার দিন ছিল। তাই ১৩ রমযান দিবাগত রাতে আমি সাহরী খাইনি এবং পরের দিন রোযার নিয়তও করিনি। ফলে ১৪ রমযান সকাল থেকে আমি স্বাভাবিকভাবেই পানাহার করতে থাকি। কিন্তু সেদিন আমার স্রাব শুরু হয় রাত থেকে।
এখন জানার বিষয় হল, আমার উক্ত রোযার কী হুকুম? শুধু কাযা করলেই হবে, নাকি কাফফারাও আদায় করতে হবে? অনুগ্রহ করে জানালে উপকৃত হব।
অভ্যাস অনুযায়ী দিনের যে কোন সময় স্রাব শুরু হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় রোযার নিয়তথেকে বিরত থাকা জায়েয নয়। তাই আপনার কাজটি মারাত্মক ভুল হয়েছে। এ জন্য আল্লাহতাআলার নিকট তওবা ইসতেগফার করতে হবে। তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ঐ দিনরোযার নিয়তই করেননি তাই আপনাকে উক্ত রোযার শুধু কাযা করতে হবে। কাফফারা আদায়করতে হবে না।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮২
গত রমযানের পনের তারিখে আমাদের বাড়ির অনেকগুলো গাছ কাটা হয়।...
গত রমযানের পনের তারিখে আমাদের বাড়ির অনেকগুলো গাছ কাটা হয়। সকাল ৭টা থেকে কাজ শুরু করি। যোহর পর্যন্ত একটানা কাজ করি। আর রোদের তেজও ছিল প্রখর। ৩টার দিকে হঠাৎ মাথা ঘোরানো শুরু হয়। আমি আর সহ্য করতে পারিনি। ফলে রোযা ভেঙ্গে ফেলি।
আমার প্রশ্ন হল, এখন আমার কী করণীয়? শুধু কাযা করলেই হবে, নাকি কাফফারাও আদায় করতে হবে? অনুগ্রহ করে জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু অসুস্থতার ওজরেই রোযা ভেঙ্গেছেন তাই উক্ত রোযার শুধু কাযাকরতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, রমযানে রোযা রেখে এমন কাজ করা উচিত নয়, যা রোযাদারকে বেশি দুর্বলকরে দেয়। আর রোযা থেকে এমন কাজ করা মাকরূহে তাহরীমী, যার কারণে রোযা ভাঙ্গার মতোপরিস্থিতি হয়ে যায়।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২০-৪২১
রমযান মাসে আমাদের মসজিদে খতম তারাবীহ হয়। হাফেয সাহেবগণ খুব...
রমযান মাসে আমাদের মসজিদে খতম তারাবীহ হয়। হাফেয সাহেবগণ খুব ধীরে-সুস্থে তিলাওয়াত করেন। সময় দীর্ঘতার কারণে অনেক মুসল্লিই বসে বসে তারাবীহ আদায় করেন। জানার বিষয় হল, এভাবে কোনো প্রকার ওজর ছাড়াই বসে তারাবীহ পড়ার বিধান কী?
দীর্ঘ কিরাতের কারণে দাঁড়ানো বেশি কষ্টকর হলে তারাবীহ বসেও পড়া যাবে।
বিশেষত বৃদ্ধ ওঅসুস্থদের জন্য বসে পড়ার অবকাশ আছে।
তবে কোনো প্রকার ওজর ছাড়া তারাবীহ বসে পড়াসুন্নাহপরিপন্থী
এবং সালাফের স্বীকৃত নীতি পরিপন্থী।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৪২৯, ৩৪২৪, ৩৪২৫, ৩৪২৬; মাবসূত, সারাখসী ২/১৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫৫; রদ্দুল মুহতার ১/৪৪৫
আমাদের মহল্লার মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। তাই মসজিদের কাছাকাছি এক...
আমাদের মহল্লার মসজিদের নির্মাণ কাজ চলছে। তাই মসজিদের কাছাকাছি এক ব্যক্তির মালিকানাধীন জায়গায় মসজিদের আদলে টিন দিয়ে একটি নামাযের জায়গা বানানো হয়েছে। আগত রমযান মাসেও এখানেই হয়ত নামায পড়তে হবে। রমযানের শেষ দশকে এই অস্থায়ী মসজিদটিতে ইতিকাফ করা যাবে কি না?
ইতিকাফ শুধু মসজিদেই করা যায়। অস্থায়ী নামায ঘরে ইতিকাফ সহীহ নয়। সুতরাং যারা ইতিকাফ করতে ইচ্ছুক তারা অন্য মসজিদে গিয়ে ইতিকাফ করবেন। আর আপনাদের মসজিদ যেহেতু এখনো নির্মাণাধীন তাই সুব্যবস্থা না থাকলে সেখানে ইতিকাফ না করলেও চলবে। এতে কোনো অসুবিধা হবে না।
-সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৩১৬; কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২৬৪; মাবসূত, সারাখসী ৩/১২১; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৪/৪৬১; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮০; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৯০
গত রমযানে একদিন মসজিদে গিয়ে দেখি, এশার নামায শেষ হয়ে...
গত রমযানে একদিন মসজিদে গিয়ে দেখি, এশার নামায শেষ হয়ে তারাবী শুরু হয়ে গেছে। আমার খতম পূর্ণ হবে না- এ চিন্তা করে আমি এশা না পড়েই তারাবীতে শরিক হয়ে যাই। পরে তারাবী শেষে এশার নামায পড়ে বিতির পড়ি।
জানতে চাই, আমি যেভাবে করেছি তা কি যথার্থ হয়েছে? না হয়ে থাকলে এখন আমার কী করণীয়?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ঐ তারাবী নামায আদায় হয়নি। তা নফল হয়েছে। কেননা তারাবীর সময় হয় এশা আদায়ের পর। তাই এশা না পড়ে তারাবী পড়া সহীহ হয়নি। আপনার কর্তব্য ছিল, প্রথমে এশার ফরয পড়ে নেওয়া এরপর তারাবীতে শরিক হওয়া। আর আপনার তারাবীহ আদায় না হলেও ঐ রাত যেহেতু পার হয়ে গেছে তাই তা পুনরায় পড়তে হবে না। কেননা তারাবীর কাযা নেই।
উল্লেখ্য যে, এ ক্ষেত্রে এশার সুন্নত তারাবীহর পরেও পড়া যাবে।
-বাদায়েউস সনায়ে ১/৬৪৪, ২/৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৬৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪
গত রমযানে একদিন তারাবীহর নামাযের পূর্বে সিজদার আয়াতের কথা ঘোষণা...
গত রমযানে একদিন তারাবীহর নামাযের পূর্বে সিজদার আয়াতের কথা ঘোষণা করতে ভুলে যাই। সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করা সত্ত্বেও বিশৃঙ্খলার ভয়ে সিজদা করিনি। এরপর স্বাভাবিকভাবে নামায শেষ করেছি। জানতে চাই, আমাদের উক্ত নামায কি আদায় হয়েছে? যদি আদায় না হয় তবে এখন আমাদের করণীয় কী?
তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করা ওয়াজিব। নামাযের তিলাওয়াতের সিজদা নামাযেই আদায় করতে হয়। নামাযে আদায় না করলে পরবর্তীতে তা আদায়ের সুযোগ থাকে না। তবে উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃত তিলাওয়াতের সিজদা আদায় না করার কারণে গুনাহ হয়েছে। এজন্য আপনাকে ইস্তেগফার করতে হবে।
-শরহুল মুনইয়াহ ৫০১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪১; আলবাহরুর রায়েক ২/১২২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫১৬
রোযা অবস্থায় একবার আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। রাস্তার পাশে পাতা...
রোযা অবস্থায় একবার আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। রাস্তার পাশে পাতা পোড়ানোর জন্য আগুন জ্বালানো হচ্ছিল। অনেক ধোঁয়া বের হচ্ছিল। তখন কিছু ধোঁয়া আমার গলায় ঢুকে যায়। এখন আমি জানতে চাই, ঐ ধোঁয়া আমার গলায় যাওয়ার কারণে কি আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে?
না, আপনার রোযা ভাঙ্গেনি। কারণ রোযা অবস্থায় গলায় ধোঁয়া চলে গেলে রোযা ভঙ্গ হয় না। তবে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ধোঁয়া টেনে নিলে তার রোযা নষ্ট হয়ে যায়।
-মাবসূত, সারাখসী ৩/৯৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৪৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫
আমি গত রমযানে দু’দিন ক্ষুধার কারণে খাবার খেয়ে রোযা ভেঙে...
আমি গত রমযানে দু’দিন ক্ষুধার কারণে খাবার খেয়ে রোযা ভেঙে ফেলি। এরপর সারাদিন অন্যান্য সময়ের মতো পানাহার করি। উক্ত কর্মের জন্য আমি অনুতপ্ত। এখন সেই রোযা দু’টির কাযা আদায় করতে চাই। তাই জানতে চাচ্ছি, আমাকে কি ওই রোযা দুটির জন্য শুধু কাযা আদায় করলেই চলবে, নাকি কাফফারাও আদায় করতে হবে? প্রত্যেকটি রোযার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাফফারা আদায় করতে হবে, নাকি একটি কাফফারা আদায় করলেই চলবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে রোযা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত পানাহার করার কারণে আপনার উপর কাযা কাফফারা উভয়টিই ওয়াজিব হয়েছে। অতএব আপনি ঐ রোযা দু’টির জন্য দু’টি রোযা কাযা করবেন। আর এ ক্ষেত্রে উভয় রোযার জন্য একটি কাফফারা আদায় করলেই চলবে।
-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪১৪; আলইখতিয়ার ১/৪০৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৯
গত রমযানে একদিন আমাদের বাসার ঘড়িটি কারো অজান্তেই ১০ মিনিট...
গত রমযানে একদিন আমাদের বাসার ঘড়িটি কারো অজান্তেই ১০ মিনিট স্লো হয়ে যায়। আমরা এই ঘড়ি দেখেই সাহরি খাচ্ছিলাম। তখন পাশের বাসার একজন এসে বলল, ৮/৯ মিনিট আগেই সাহরির সময় শেষ হয়ে গেছে। সাথে সাথে আমরা খাওয়া বন্ধ করে দেই।
প্রশ্ন হল, আমাদের উক্ত রোযাটি কি সহীহ হয়েছে? না হয়ে থাকলে এখন আমাদের করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যারা ঐ সময় খাচ্ছিলেন তাদের রোযাটি সহীহ হয়নি। উক্ত রোযার কাযা করতে হবে। সায়ীদ ইবনে যুবায়ের রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
إذَا أَكَلَ بَعْدَ طُلُوعِ الْفَجْرِ مَضَى عَلَى صِيَامِهِ، وَقَضَى يَوْمًا مَكَانَهُ.
কোনো ব্যক্তি সুবহে সাদিকের পর পানাহার করলে সে রোযা অবস্থায়ই থাকবে (অর্থাৎ বাকি দিন পানাহার থেকে বিরত থাকবে) এবং এর স্থলে অন্য একদিন রোযা রাখবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯১৩৪; কিতাবুল আছল ২/১৪৫; মাবসূত, সারাখসী ৩/৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৪
গত রযমানে একদিন তারাবীহর নামাযের পূর্বে সিজদার আয়াতের কথা ঘোষণা...
গত রযমানে একদিন তারাবীহর নামাযের পূর্বে সিজদার আয়াতের কথা ঘোষণা করতে ভুলে যাই। সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করা সত্ত্বেও বিশৃঙ্খলার ভয়ে আর সিজদা করিনি। এরপর স্বাভাবিকভাবে নামায শেষ করেছি। জানতে চাই, আমাদের উক্ত নামায কি আদায় হয়েছে? যদি আদায় না হয়ে থাকে তবে এখন কী করণীয়?
তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করা ওয়াজিব। নামাযের তিলাওয়াতে সিজদা নামাযেই আদায় করতে হয়। নামাযে আদায় না করলে পরবর্তীতে তা আদায়ের সুযোগ থাকে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত তিলাওয়াতে সিজদা আদায় না করার কারণে গুনাহ হয়েছে। এখন আর তা আদায়ের সুযোগ নেই। এজন্য আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। তবে উক্ত নামায আদায় হয়ে গেছে।
-শরহুল মুনয়াহ ৫০১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪১; আলবাহরুর রায়েক ২/১২২
তারাবীহ নামাযে ১৭ নং রাকাতে হাফেয সাহেব সিজদার আয়াত না...
তারাবীহ নামাযে ১৭ নং রাকাতে হাফেয সাহেব সিজদার আয়াত না পড়েই সিজদা দেন। সিজদা থেকে উঠে সিজদার আয়াতের পর থেকে শুরু করে যথানিয়মে ১৭ রাকাত ও ১৮ রাকাত শেষ করেন। অর্থাৎ সিজদার আয়াতটুকু পড়া হয় নাই। নামায শেষে সিজদার আয়াত ছুটে গেছে জানানো হলে তিনি ১৯ নং রাকাতে প্রথমে সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা দেন। অতপর ১৮ নং রাকাতের কিরাতের পর থেকে কিরাত পড়ে যথানিয়মে ১৯ ও ২০ নং রাকাত শেষ করেন।
এখন প্রশ্ন হল, ১৭ নং রাকাতে সিজদার আয়াত না পড়েই যেহেতু সিজদা দেওয়া হয়েছে তাই ঐ দুই রাকাত নামায সহীহ হয়েছে কি না? সহীহ না হলে আমাদের করণীয় কী?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু সিজদার আয়াত পড়া হয়নি তাই তিলাওয়াতে সিজদাও ওয়াজিব হয়নি। আর ওয়াজিব হওয়া ছাড়াই সিজদা দেওয়ার কারণে সিজদায়ে সাহু করা ওয়াজিব ছিল। ইমাম সাহেব যেহেতু সিজদায়ে সাহু করেননি তাই নামাযটি মাকরূহর সাথে আদায় হয়েছে। এক্ষেত্রে ঐ রাতেই এ দুই রাকাত নামায পুনরায় পড়ে নেওয়া উচিত ছিল। অবশ্য এখন আর এ ব্যাপারে কিছু করণীয় নেই। কারণ তারাবীহর নামাযের সময় সংশ্লিষ্ট রাত পর্যন্তই সীমিত। ঐ রাতের পর আর তারাবীহ কাযা করার নিয়ম নেই।
-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪০১; মারাকিল ফালাহ ২৫০, ২২৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪, ৬৪
আমাদের এলাকার বড় মাদরাসার মুহতামিম একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম। কিছুদিন আগে...
আমাদের এলাকার বড় মাদরাসার মুহতামিম একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম। কিছুদিন আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এখনও তিনি আমাদের জামে মসজিদে জুমআ, ঈদ ও তারাবীহর নামায পড়ান। আমি শুনেছি, অন্ধ ব্যক্তির পেছনে নামায মাকরূহ হয়। জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত ইমামের পেছনে নামায মাকরূহ হবে কি?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত ইমাম যেহেতু বড় আলেম ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তি তাই তার ইমামতি করার সুযোগ আছে। পাক-নাপাকির খেয়াল না রাখতে পারলে কিংবা ইমাম অন্ধ হওয়ার কারণে মুসল্লিরা তার পেছনে নামায পড়তে অনাগ্রহ প্রকাশ করলে তখন অন্ধ ব্যক্তির ইমামতি মাকরূহ হয়। সকল অন্ধ ব্যক্তির ইমামতি মাকরূহ নয়।
এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের ইমামতির জন্য আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রা.-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন। অথচ তিনি ছিলেন দৃষ্টিহীন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৩০০০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৮২৮
আরেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ইতবান ইবনে মালিক রা. তার সম্প্রদায়ের লোকদের ইমামতি করতেন। অথচ তিনি ছিলেন দৃষ্টিহীন।
-সুনানে বাইহাকী ৩/৮৭; আলইখতিয়ার ১/২০০-২০১; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২৮৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫৬০
আমার মামা দুই বছর আগে মারা গেছেন। তার জীবদ্দশায় তিনি...
আমার মামা দুই বছর আগে মারা গেছেন। তার জীবদ্দশায় তিনি বেশ কিছু রোযা রাখেননি। তার মৃত্যুর পর আমার খালারা কি এখন তার অনাদায়ী রোযাগুলো রাখতে পারবে? রাখলে কীভাবে রাখবে? কারণ আমরা জানি, ইচ্ছাকৃত একটি রোযা ভাঙলে একটানা ৬০টি রোযা রাখতে হয়। রোযার কাযা করা অবস্থায় ১দিন ছুটে গেলে তা কি আবার শুরু থেকেই রাখতে হবে? আর রোযা কি ১টির বদলে ৬০টি নাকি ১টি রাখলেই হবে?
আপনার মামার অনাদায়ী রোযাগুলো খালারা বা অন্য কেউ রাখলে আপনার মামার পক্ষ থেকে তা আদায় হবে না।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.কে অন্যের পক্ষ থেকে রোযা রাখা কিংবা অন্যের পক্ষ থেকে নামায আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলতেন,
لاَ يَصُومُ أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ، وَلاَ يُصَلِّي أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ.
কেউ অন্যের পক্ষ থেকে রোযা রাখবে না এবং অন্যের পক্ষ থেকে নামায পড়বে না।-মুআত্তা ইমাম মালেক, পৃষ্ঠা ৯৪
তাই এক্ষেত্রেআপনার মামার কাযা রোযার জন্য ফিদয়া আদায় করতে পারেন। প্রতিটি রোযার জন্য কোনো দরিদ্রকে দু’ বেলা খাবার বা তার মূল্য দান করতে পারেন। অবশ্য ঈসালে সওয়াবের (সওয়াব পৌঁছানোর) জন্য নফল রোযা রাখার অবকাশ আছে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৩, ২/২৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬০; ইলাউস সুনান ৯/১৫৯; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪৪২
আমি এ বছর হজ্বে যাওয়ার নিয়ত করেছি। আমার প্রশ্ন হল,...
আমি এ বছর হজ্বে যাওয়ার নিয়ত করেছি। আমার প্রশ্ন হল, যদি সৌদিতে খুব ঠাণ্ডা পড়ে তবে আমি কি ইহরাম অবস্থায় হাত, পা ও চেহারা চাদর দিয়ে ঢেকে ঘুমাতে পারব?
ইহরাম অবস্থায় মাথা ও চেহারা ব্যতীত শরীরের বাকি অংশ চাদর দিয়ে ঢাকা জায়েয। আর বিনা ওজরে পূর্ণ একদিন বা এক রাত মাথা বা চেহারা ঢেকে রাখলে দম ওয়াজিব হবে। হাঁ, কোনো ওজরের কারণে ঢাকার অনুমতি আছে। যেমন প্রচণ্ড শীতের কারণে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে চেহারা ও মাথা ঢেকে রাখতে পারবে তবে এক্ষেত্রেও পূর্ণ এক দিন বা এক রাত চেহারা ঢেকে রাখলে দমে তাখয়ীর ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ তিন পদ্ধতির যেকোনো একটি পদ্ধতিতে দম আদায় করা যাবে : ১. একটি ছাগল বা দুম্বা জবাই করা ২. ছয় জন মিসকীনের প্রত্যেককে একটি সদকায়ে ফিতির পরিমাণ দেওয়া ৩. অথবা তিনটি রোযা রাখা।
উল্লেখ্য, পূর্ণ এক দিন বা পূর্ণ এক রাতের কম সময় ঢাকা থাকলে এক ফিতরা পরিমাণ টাকা সদকা করে দিবে।
-মানাসিক, মোল্লা আলী কারী পৃ. ৩০৮, ৩৯২; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২৫৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮৮; তাকরীরাতে রাফেয়ী ২/১৫৯; মিনহাতুল খালিক (আলবাহরুর রায়েক) ২/৩২৪
যদি ইমাম সাহেব কেরাতে আটকে যায় এবং এখনো নামায হয়ে...
যদি ইমাম সাহেব কেরাতে আটকে যায় এবং এখনো নামায হয়ে যায় এ পরিমাণ পূর্ণ হয়নি তাহলে কি তিনি সে স্থান ত্যাগ করে অন্য জায়গা থেকে পড়তে পারবে? হেদায়া কিতাবের এ ইবারত থেকে জায়েয হবে বুঝা যায়-
ينبغي للمقتدي أن لا يعجل بالفتح وللإمام أن لا يلجئهم إليه، بل يركع إذا جاء أوانه أو ينتقل إلى آية أخرى .
মূলত আমার উদ্দেশ্য হল আরেকটা। তা হল, কেউ যদি কেরাতে এমন কোনো অশুদ্ধ পড়ে, যার কারণে নামায ভেঙ্গে যায় সে কি অন্যস্থান থেকে নতুনভাবে কেরাত শুরু করতে পারবে বা যে স্থানে আটকে গেছে এরপর থেকে? এ কথা মনে করে যে, যা পড়েছি এবং অশুদ্ধ পড়েছি সব বাদ। যেন এখনো কেরাতই পড়িনি; বরং কেরাত এখন থেকে শুরু।
নামাযে কেরাত পড়তে গিয়ে আটকে গেলে এবং মাসনুন কেরাত পরিমাণ পড়া না হয়ে থাকলে তার জন্য লোকমা নেওয়াও জায়েয। তেমনিভাবে লোকমা না নিয়ে অন্যস্থান থেকে পড়াও জায়েয।
আর যদি মাসনুন কেরাতও পড়া হয়ে যায় তাহলে লোকমা নেওয়া এবং অন্যস্থান থেকে পড়া উভয়টি মাকরূহ। এক্ষেত্রে অন্য জায়গা থেকে না পড়ে তৎক্ষণাৎ রুকুতে চলে যাবে।
অবশ্য খতম তারাবীহর বিষয়টি এ থেকে ভিন্ন। এক্ষেত্রে লোকমা নিয়ে হলেও পড়া চালিয়ে যেতে কোনো সমস্যা নেই।
উল্লেখ্য, এ মাসআলার সাথে কেরাতের ভুলের মাসআলার কোনোই সম্পর্ক নেই। প্রশ্নে দুই মাসআলাকে মেলানো হয়েছে। কেননা বড় ছোট যে পরিমাণই কেরাত পড়া হোক তার কোনো জায়গায় নামায ভেঙ্গে যাওয়ার মতো ভুল হলে তা শোধরানো ব্যতীত অন্যস্থান থেকে পড়লেও নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মনে মনে ভাবা যে, যা পড়েছি এবং অশুদ্ধ পড়েছি সব বাদ এ কথা ধর্তব্য হবে না। বরং ভুলের অংশ শুদ্ধ করে না পড়লে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৩৭; ফাতহুল কাদীর ১/৩৪; শরহুল মুনইয়াহ ৩৬৪; রদ্দুল মুহতার ১/৬২৩, ৪৪১
মুয়াযযিন সাহেব ঘড়ি দেখে সূর্য ডোবার সময় হয়েছে মনে করে...
মুয়াযযিন সাহেব ঘড়ি দেখে সূর্য ডোবার সময় হয়েছে মনে করে মাগরিবের আযান দিয়েছেন। তার আযান শুনে মহল্লার অনেক লোক ইফতার করে ফেলেছেন। পরে মহল্লার অন্যান্য মসজিদের আযান, রেডিওর আযান ও রোযার চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে দেখা গেল যে, বাস্তবে তারা সূর্য ডোবার আগেই ইফতার করেছিলেন। জানতে চাই, যারা ইফতার করে ফেলেছেন তাদের রোযা কি ভেঙ্গে গেছে? যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে কাযা করলেই যথেষ্ট হবে নাকি কাফফারাও দিতে হবে?
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী যারা সূর্যাস্তের আগেই ইফতার করেছেন তাদের রোযা নষ্ট হয়ে গেছে। তারা রোযাটি কাযা করবেন, কাফফারা দেওয়া লাগবে না। হাদীস শরীফে আছে, হযরত আসমা রা. বলেন, ‘রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় এক মেঘলা দিনে আমরা সূর্য ডুবে গেছে নিশ্চিত জেনে ইফতার করলাম। পরক্ষণেই মেঘ সরে গিয়ে সূর্য প্রকাশিত হল।’ হাদীসের রাবী হিশামকে জিজ্ঞাসা করা হল, তাদেরকে কি রোযা কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? তিনি বললেন, কাযা ছাড়া তো উপায় নেই।-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৫৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৩৫৯
হযরত বিশর ইবনে কায়েস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক রমযানে বিকেল বেলা উমর রা.-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। উমর রা. সূর্য ডুবে গেছে মনে করে নিজেও পানি পান করলেন এবং আমাকেও পান করালেন। পরক্ষণেই সূর্য দেখা গেল। উমর রা. বললেন, ‘সমস্যা নেই। এর পরিবর্তে একটি রোযা কাযা করাই যথেষ্ট হবে।’ -সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৫৬৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯১৩৮
হযরত ইবনে জুরাইজ রাহ. বলেন, আমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞেস করলাম, রমযানের এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে সময় হয়েছে মনে করে ইফতার করেছি। এরপর সূর্য দেখা গেল। এখন আমি কি শুধু ঐ দিনের রোযার কাযা করব, না আমাকে কাফফারাও আদায় করতে হবে? আতা রাহ. বললেন, হাঁ, (শুধু কাযা করবে)। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯১৪৭)
-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩৬; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ৩৬৯
এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করছিলেন। মসজিদের পার্শ্ববর্তী মাঠে...
এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করছিলেন। মসজিদের পার্শ্ববর্তী মাঠে জানাযার নামায হচ্ছিল। তিনি তাতে শরিক হয়েছেন এবং নামায শেষ হওয়ামাত্রই মসজিদে ফিরে এসেছেন। এ কথা জানতে পেরে মসজিদের ইমাম সাহেব বলেছেন, তার ইতিকাফ ভেঙ্গে গেছে। ইমাম সাহেবের কথা কি ঠিক?
হাঁ, ইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। ইতিকাফরত অবস্থায় জানাযার নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হওয়ার কারণে তার সুন্নত ইতিকাফ ভেঙ্গে গেছে।
আয়েশা রা. বলেন,
السنة على المعتكف أن لا يعود مريضا، ولا يشهد جنازة، ولا يمس امرأة، ولا يباشرها.
‘ইতিকফকারীর নিয়ম হল, সে কোনো রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না। স্ত্রীকে (কামভাবে) স্পর্শ করবে না, ও তার সাথে সহবাস করবে না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৭৩
হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
المعتكف لا يجيب دعوة، ولا يعود مريضا، ولا يتبع جنازة.
ইতিকাফকারী কোনো দাওয়াতে যাবে না, অসুস্থ কাউকে দেখতে যাবে না, কারো জানাযায় শরিক হবে না।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩৫৭-৩৫৮
সুতরাং এ ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তিকে রোযাসহ একদিনের ইতিকাফ কাযা করতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৩, ২৮৪; মাবসূত, সারাখসী ৩/১১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৪; ২৪৫
আমাদের দেশে যে সকল মসজিদে তারাবীতে খতমে কুরআন হয় সেখানে...
আমাদের দেশে যে সকল মসজিদে তারাবীতে খতমে কুরআন হয় সেখানে দেখা যায়-
ক) যে কোনো একটি সূরার শুরুতে বড় আওয়াজে বিসমিল্লাহ পড়া হয়। বলা হয়ে থাকে, এ রকম পড়া সুন্নত।
খ) সূরা ইখলাস তিনবার পড়া হয়। বলা হয়ে থাকে, এ রকম পড়া মুস্তাহাব। অনুগ্রহপূর্বক এই দুই মাসআলার বিষয়ে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে ফয়সালা জানানোর অনুরোধ রইল।
ক) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন মাজীদের স্বতন্ত্র একটি আয়াত, যা দুই সূরার মাঝে পার্থক্য করার জন্য আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং মুসল্লিদেরকে পরিপূর্ণ খতম শোনাতে চাইলে যে কোনো একটি সূরার শুরুতে উঁচু আওয়াজে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। অন্যথায় এ কারণে মুসল্লিদের খতম অপূর্ণ থেকে যাবে। আর ইমামের জন্য সব নামাযেই সূরা ফাতিহা এবং সকল সূরার শুরুতে অনুচ্চ স্বরে বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। -আসসিআয়াহ ২/১৭০; ইহকামুল কনত্বরা ফী আহকামিল বাসমালাহ ১/৭১; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২৮; মাজমুআতুল ফাতাওয়া, লাখনভী রাহ. ১/৩১৫
খ) কুরআন মাজীদ খতম করার ক্ষেত্রে সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার কোনো বিধান শরীয়তে নেই। সাহাবা-তাবেয়ীন থেকেও এমন কোনো আমলের প্রমাণ নেই। ফিকহবিদগণ এই আমলকে অপছন্দ করেছেন। সুতরাং তারাবীতে কুরআন খতমের সময় সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার প্রচলনটি ঠিক নয়। তাই এ থেকে বিরত থাকবে এবং অন্য সূরার ন্যায় যথানিয়মে একবারই পড়বে। -ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২৬
এক হুযুরকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি একটি বিদআত করবে তার...
এক হুযুরকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি একটি বিদআত করবে তার কোনো আমল কবুল হবে না। তার নামায, রোযা, সদকা কোনো কিছু আল্লাহ কবুল করবেন না। তিনি বলেছেন, এ কথা নাকি হাদীসে আছে। বাস্তবে কি এ কথা হাদীসে আছে? দয়া করে জানাবেন।
হাঁ, এ কথা হাদীস শরীফে আছে। হাসান বসরী রাহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
مَنْ أَحْدَثَ حَدَثًا أَوْ آوَى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ، قَالُوا: وَمَا الْحَدَثُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: بِدْعَةٌ بِغَيْرِ سُنَّةٍ...
‘যে ব্যক্তি (দ্বীনের ভেতর) নতুন কোনো বিষয় উদ্ভাবন করল, অথবা নব উদ্ভাবনকারীকে আশ্রয় দিল তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সকল মানব জাতির লানত। তার ফরয-নফল কোনো আমল কবুল হবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নব উদ্ভাবন কী? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সুন্নাহ বাদ দিয়ে বেদআত অবলম্বন করা ...।
-কিতাবুল মারাসীল আবু দাউদ, হাদীস ৫৩৫
আমাদের পাড়ার মসজিদে গত রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফের জন্য কেউ...
আমাদের পাড়ার মসজিদে গত রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফের জন্য কেউ স্বেচ্ছায় রাজি হচ্ছিল না। অবশেষে গ্রামের মুরব্বিগণ একজন দ্বীনদার দরিদ্র লোককে এই বলে রাজি করেন যে, তারা তার পরিবারের এই দশ দিনের খরচ নির্বাহ করবেন। জানার বিষয় হল, এ ধরনের পরিস্থিতিতে এভাবে বিনিময় দিয়ে ইতিকাফে বসানো জায়েয আছে কি না?
বিনিময় দিয়ে কাউকে ইতিকাফে বসানো জায়েয নয়। ইতিকাফ কোনো প্রকার বিনিময় ছাড়া একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই হতে হবে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পরিবারের খরচ নির্বাহের শর্তটি বিনিময়ের অন্তর্ভুক্ত। তাই উক্ত শর্তে ইতিকাফে বসানো শরীয়তসম্মত হয়নি।
উল্লেখ্য, ইতিকাফ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ শুরু করার পর মৃত্যু পর্যন্ত প্রতি বছর ইতিকাফ করেছেন। শুধু এক বছর বিশেষ কারণে ইতিকাফ করতে না পারলেও পরবর্তী বছর কাযা হিসেবে বিশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। এছাড়া ইতিকাফ করলে লাইলাতুল কদর পওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর সকল ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিছুদিন মসজিদে থাকাটা তো এমনিতে অনেক বড় সৌভাগ্যেরও বিষয়। তাই প্রত্যেকের উচিত নিজেকে এই আমলের জন্য প্রস্তুত করা।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫৩২; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/৩০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৫
এক রমযানে অসুস্থতার কারণে আমি কিছু রোযা রাখতে পারিনি। সুস্থ...
এক রমযানে অসুস্থতার কারণে আমি কিছু রোযা রাখতে পারিনি। সুস্থ হওয়ার পরও সেগুলো কাযা করিনি। এখন বার্ধক্যের কারণে এত দুর্বল হয়ে পড়েছি যে, রোযা রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ঐ রোযাগুলো রাখতে আর সক্ষমই নন, তাই আপনি ঐ রোযাগুলোর জন্য ফিদয়া আদায় করবেন। ফিদয়া হল প্রতিটি রোযার জন্য কোনো একজন দরিদ্র লোককে তৃপ্তি সহকারে দু’ বেলা খাবার খাওয়ানো কিংবা এর মূল্য প্রদান করা।
প্রকাশ থাকে যে, অসুস্থ অবস্থায় রোযা কাযা হয়ে গেলে সুস্থ হওয়ার পর তা আদায় করে নেওয়া কর্তব্য। তা আদায় না করে বার্ধক্য পর্যন্ত ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করা ঠিক নয়।
-সূরা বাকারা (২) : ১৮৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬৩; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/২৭৬; মাবসূত, সারাখসী ৩/৮৯; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/১৭৬-১৭৯
আমি তিন বছর গ্রামের মসজিদে তারাবীহ পড়িয়েছি। সেখান থেকে আমার...
আমি তিন বছর গ্রামের মসজিদে তারাবীহ পড়িয়েছি। সেখান থেকে আমার অনিচ্ছা ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আমাকে অল্প কিছু হাদিয়া দেওয়া হয়।
আর আমার ছোট ভাইও দু’বছর এক হাসপাতাল মসজিদে তারাবীহ পড়িয়েছে এবং একইভাবে তাকেও হাদিয়া দেওয়া হয়। আর মুসল্লির একজন তাকে একটি পাঞ্জাবির কাপড়ও দিয়েছেন। জানার বিষয় হল এখন আমাদের করণীয় কী?
খতম তারাবীহতে কুরআন তিলাওয়াত ও খতম করা প্রধান উদ্দেশ্য। আর তিলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা নাজায়েয। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুরআন পাঠ করো। তাতে সীমালঙ্ঘন করো না, তা থেকে দূরে থেকো না, তা দ্বারা ভক্ষণ করো না এবং তার মাধ্যমে প্রাচুর্য কামনা করো না। -মুসনাদে আহমাদ,হাদীস ১৫৫২৯
আবু ইসহাক সাবীয়ী রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মা‘কিল রাহ. রমযান মাসে তারাবীহর নামায পড়ালেন। ঈদুল ফিতরের দিন উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ তাকে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচ শ দিরহাম হাদিয়া দিলে তিনি তা এই বলে ফিরিয়ে দিলেন যে, আমরা কুরআন তিলাওয়াতের কোনো বিনিময় গ্রহণ করি না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৮২১
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনাকে এবং আপনার ভাইকে এ সংক্রান্ত যে টাকা দেওয়া হয়েছে তা সদকা করে দিতে হবে। তবে ব্যক্তি বিশেষের পক্ষ থেকে দেওয়া ঐ জামার কাপড়টি যদ্দুর মনে হচ্ছে খালেস হাদিয়া হিসাবে দেওয়া হয়েছে। তাই আপনার ভাইয়ের জন্য এটি নেওয়া বৈধ হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৭৮২২; কিতাবুল আছল ৪/১৫; ইনকাদুল হালিকীন ৯৭
রোযা রাখাবস্থায় মুখ ভরে বমি হলে কী রোযা নষ্ট হয়?
রোযা রাখাবস্থায় মুখ ভরে বমি হলে কী রোযা নষ্ট হয়?
না, রোযা অবস্থায় মুখ ভরে বমি হলেও রোযা ভাঙ্গবে না। তবে ইচ্ছকৃত মুখ ভরে বমি করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছেÑ অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তির বমি হলে তাকে সে রোযা কাযা করতে হবে না (অর্থাৎ তার রোযা ভাঙ্গবে না)। আর যে ইচ্ছাকৃত বমি করবে সে যেন রোযার কাযা করে।
-জামে তিরমিযী, হাদীস ৭২০) -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৬/১৮০; আল বাহরুর রায়েক ২/২৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৬
গোসলের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে নাকে পানি গেলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
গোসলের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে নাকে পানি গেলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
রোযার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অযু-গোসলের সময় অনিচ্ছাকৃতও যদি গলার ভিতর পানি চলে যায় তবে রোযা ভেঙ্গে যায়। তাই নাকের ভিতর পানি প্রবেশ করার পর যদি তা গলায় চলে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং তা কাযা করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কাফফারা লাগবে না।
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, রোযা অবস্থায় কুলি করার সময় অথবা নাকে পানি দেওয়ার সময় যদি পানি ভেতরে প্রবেশ করে এবং তা গলায় চলে যায় তবে সে ঐ দিনের রোযা পূর্ণ করবে এবং পরে তা কাযা করে নিবে। Ñকিতাবুল আসার, হাদীস : ২৮৭
আর যদি শুধু নাকে পানি প্রবেশ করে, গলায় না পৌঁছে তবে রোযা ভাঙ্গবে না।
Ñকিতাবুল আসল ২/১৫০, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১৮২৫৩; মাবসূত সারাখসী ৩/৬৬
‘গীবত করলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়’ কথাটি কি সঠিক?
‘গীবত করলে রোযা নষ্ট হয়ে যায়’ কথাটি কি সঠিক?
রোযা অবস্থায় গীবত করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে না। তবে রোযার সাওয়াব ও গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাবে। গীবত কবীরা গুনাহ। কুরআন মাজীদ এবং হাদীস শরীফে এর ঘৃণ্যতা ও ভয়াবহতার কথা এসেছে। সাধারণ সময়ই এটি খুবই নিকৃষ্টতম কাজ। আর রমযান মাসে রোযা অবস্থায় এর ভয়াবহতা আরো বেশি। হাদীস শরীফে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ রোযা হল (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার) ঢাল, যে পর্যন্ত না তাকে বিদীর্ণ করা হয়। জিজ্ঞাসা করা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হল কীভাবে রোযা বিদীর্ণ হয়ে যায়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মিথ্যা বলার দ্বারা অথবা গীবত করার দ্বারা। (আলমুজামুল আওসাত, তাবারানী,হাদীস ৭৮১০; সানানে নাসায়ী, হাদীস ২২৩৫)
মুজাহিদ রহ. বলেন, দুটি অভ্যাস এমন রয়েছে, এ দুটি থেকে যে বেঁচে থাকবে তার রোযা নিরাপদ থাকবে: গীবত ও মিথ্যা।
Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৮৯৮০; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৬৭৪; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬০
ধুমপান করলে রোযা নষ্ট হবে কী না?
ধুমপান করলে রোযা নষ্ট হবে কী না?
জী হাঁ, রোযা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত ধুপমান করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। এবং কাযা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।
- ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ৩৮১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৫০
আগরবাতি ও কয়েলের ধোঁয়া নাকে গেলে রোযার কোন ক্ষতি হবে...
আগরবাতি ও কয়েলের ধোঁয়া নাকে গেলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?
Ñকিতাবুল আসল ২/১৭২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৮; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬১
আগরবাতি বা কয়েলের ধোঁয়া অনিচ্ছাকৃত নাকে বা গলার ভিতর চলে গেলে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। তবে আগরবাতি বা কয়েলের ধোঁয়া ইচ্ছাকৃত নাক দিয়ে টেনে ভিতরে নিলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু আগরবাতি বা কয়েলের ধোঁয়া ছাড়া শুধু ঘ্রাণ নিলে রোযা নষ্ট হবে না।
উল্লেখ্য যে, রোযার দিনে আগরবাতি না জ্বালানোই উচিত।
রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ দেওয়া যাবে কি?
রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ দেওয়া যাবে কি?
জী, রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ দেওয়া যাবে। এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না। এমনকি ঔষধের স্বাদ বা তিক্ততা গলায় অনুভূত হলেও অসুবিধা নেই। হাদীস শরীফে এসেছে যে, হযরত আনাস রা. রোযা অবস্থায় চোখে সুরমা ব্যবহার করতেন।
Ñসুনানে আবুদাউদ, হাদীস ২৩৭৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯৩৮৭; কিতাবুল আসল ২/১৭১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৪
শাবান মাসের ২৯ তারিখ অথবা মাস যদি ৩০ শে হয়...
শাবান মাসের ২৯ তারিখ অথবা মাস যদি ৩০ শে হয় তাহলে ৩০ তারিখে রোযা রাখতে কোন সমস্যা আছে কী?
হাদীস শরীফে এসেছেÑ আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যেন রমযান মাসে একদিন বা দুই দিন পূর্ব তেকে রোযা না রাখে। তবে কারো যদি আগে থেকে কোন নির্দিষ্ট দিন রোযা রাখার অভ্যাস থাকে এবং (ঘটনাক্রমে) সে দিনটি ২৯ বা ৩০ শে শাবান হয় তাহলে সে ঐ দিন রোযা রাখতে পারবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস:১৯১৪, জামে তিরমিযী, হাদীস: ৬৮৪)
সুতরাং বিশেষভাবে শুধু ২৯ বা ৩০ শে শাবান রোযা রাখা মাকরুহ। তবে যে ব্যক্তি পূর্ব থেকে কোন নির্দিষ্ট দিন রোযা রেখে আসছে ঘটনাক্রমে তার ঐ দিন যদি ২৯ ও ৩০ শে শাবান হয় তাহলে তার জন্য এ দিন রোযা রাখতে কোন অসুবিধা নেই।
-হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৪৪, এলাউস সুনান ৯/১২৪-১২৭
রোযা অবস্থায় রক্ত দিলে কি রোযা নষ্ট হয়ে যাবে?
রোযা অবস্থায় রক্ত দিলে কি রোযা নষ্ট হয়ে যাবে?
না, রোযা অবস্থায় রক্ত দিলে রোযা ভাঙ্গে না। তাই টেস্ট বা পরীক্ষার জন্য রক্ত দেওয়া যাবে। তবে এ পরিমাণ রক্ত দেওয়া মাকরুহ যার কারণে শরীর অধিক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোযা রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই দুর্বল লোকদের জন্য রোযা অবস্থায় অন্য রোগীকে রক্ত দেওয়া ঠিক নয়। আর এমন সবল ব্যক্তি যে রোযা অবস্থায় অন্যকে রক্ত দিলে রোযা রাখা তার জন্য কষ্টকর হবে না সে রক্ত দিতে পারবে। এতে কোন অসুবিধা নেই।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৩৬, ১৯৪০, আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; কিতাবুল আসল ২/১৬৮; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬০
গত রমযানে আমাদের এলাকার মসজিদে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হাফেয তারাবীর...
গত রমযানে আমাদের এলাকার মসজিদে একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হাফেয তারাবীর নামায পড়িয়েছে। মসজিদের ইমাম সাহেব আমাদেরকে মাসআলা বলেছেন, নাবালেগের পিছনে তারাবীর নামায পড়া জায়েয আছে। জানার বিষয় হল, তার কথা কি সঠিক?
না, তার ঐ কথা ঠিক নয়। তারাবীর নামাযেও নাবালেগের ইমামতি সহীহ নয়। উমর বিন আবদুল আযীয ও আতা রাহ. বলেন, নাবালেগ ছেলে যেন প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগে ইমামতি না করে। ফরয নামাযেও নয়, অন্য নামাযেও নয়।
Ñমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৫২৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭৭
অসুস্থতার কারণে আমি গত রমযানে দুটি রোযা রাখতে পারিনি। গতকাল...
অসুস্থতার কারণে আমি গত রমযানে দুটি রোযা রাখতে পারিনি। গতকাল সকাল দশটার দিকে হঠাৎ আমার ঐ কাযা রোযার কথা মনে পড়ে। যেহেতু আমি তখন পর্যন্ত কিছু খাইনি তাই তখনই কাযা রোযার নিয়ত করে নিই। জানার বিষয় হল, আমার ঐ রোযাটি কি কাযা রোযা হিসেবে ধর্তব্য হবে?
কাযা রোযার জন্য সুবহে সাদিকের আগে নিয়ত করা শর্ত। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু সুবহে সাদিকের আগে নিয়ত করেননি তাই ঐ রোযা নফল হয়েছে। তা দ্বারা আপনার কাযা রোযা আদায় হয়নি।
-কিতাবুল আসল ২/১৬৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮০
রমযানের শেষ দশকে সুন্নত ইতিকাফকারী ব্যক্তি জানাযার নামাযে শরিক হতে...
রমযানের শেষ দশকে সুন্নত ইতিকাফকারী ব্যক্তি জানাযার নামাযে শরিক হতে পারবে কি না?
সুন্নত ইতিকাফকারী জানাযার নামাযের জন্য মসজিদের বাইরে গেলে তার ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. বলেন, ইতিকাফকারীর জন্য নিয়ম হল, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাবে না এবং (মসজিদের বাইরে) জানাযার নামাযে শরিক হবে না। ...-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৬৫
প্রকাশ থাকে যে, ইতিকাফকারীর জন্য কোনো কারণে বাইরে অনুষ্ঠিত জানাযায় শরিক হওয়া আবশ্যক হলে সে যেতে পারবে তবে এ কারণে তার ঐ দিনের ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে এবং সুন্নত ইতিকাফও থাকবে না। এক্ষেত্রে তাকে একদিন রোযা অবস্থায় ইতিকাফের কাযা করতে হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮০ কিতাবুল আছল ২/১৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২২; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১১৮
গত রমযানে আমাদের মসজিদে এক হাফেয সাহেব তারাবীর নামাযে ভুলে...
গত রমযানে আমাদের মসজিদে এক হাফেয সাহেব তারাবীর নামাযে ভুলে দ্বিতীয় রাকাতে না বসে দাঁড়িয়ে যান এবং অতিরিক্ত দু রাকাত মিলিয়ে মোট চার রাকাত পড়ে সাহু সিজদার মাধ্যমে নামায শেষ করেন। নামায শেষে এ নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে মতবিরোধ দেখা দেয়। কেউ কেউ বলে যে, সাহু সিজদার দ্বারা চার রাকাতই তারাবী হিসেবে সহীহ হয়েছে। কেউ বলে যে, শুরুর দু রাকাত সহীহ হয়েছে, শেষের দু রাকাত নয়। আবার কেউ বলে, শেষের দু রাকাত তারাবী হিসেবে ধরা হবে।
উল্লেখ্য, যারা চার রাকাতই তারাবী হিসেবে ধরা হবে বলেছে তারা বলে যে, থানভী রাহ. নাকি ইমদাদুল ফাতাওয়াতে এক্ষেত্রে চার রাকাতই তারাবী হবে বলে ফতোয়া দিয়েছেন।
দয়া করে মাসআলাটির সঠিক সমাধান জানিয়ে আমাদের বিবাদ নিরসন করবেন।
তারাবীর নামাযে দু রাকাতের পর না বসে আরো দু রাকাত মিলিয়ে নিলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী শুধু শেষের দু রাকাতই তারাবী হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে প্রথম দু রাকাত পুনরায় পড়ে নিতে হবে এবং এতে তিলাওয়াতকৃত অংশও খতম তারাবীর ক্ষেত্রে পড়ে নিতে হবে। আর ঐ রাত অতিবাহিত হয়ে গেলে শুধু প্রথম দু রাকাতে তিলাওয়াতকৃত অংশ পরবর্তী তারাবীতে পড়ে নিবে। ঐ দু রাকাতের কাযা করতে হবে না।
আর প্রশ্নে ইমদাদুল ফাতাওয়ার যে উদ্ধৃতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ. ফকীহ আবুল লাইসের মত অনুযায়ী চার রাকাতই তারাবী হিসেবে সহীহ হবে বলে ফতওয়া দিয়েছেন। এটা কোনো কোনো হানাফী ফকীহর মত। তবে অধিকাংশ ফকীহ এ মত অনুযায়ী ফতোয়া দেননি; বরং সতর্কতামূলক তারা শেষের দু রাকাতই তারাবী হিসেবে সহীহ হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন। থানভী রাহ. নিজেও ইমদাদুল ফাতাওয়ায় এ বিষয়ের আরেকটি প্রশ্নের জবাবে শুধু দু রাকাতই সহীহ হবে বলে ফতোয়া দিয়েছেন। দেখুন : ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩৩০
আর প্রশ্নোল্লিখিত চার রাকাত হয়ে যাওয়ার কথাটি তিনি এক বিশেষ পরিস্থিতিতে ‘দুর্বল মতের’ ভিত্তিতে বলেছিলেন। এটা সাধারণ অবস্থার ফতোয়া নয়। এ কথাগুলো আল্লামা যফর আহমদ উসমানী রাহ. ইমদাদুল আহকামে (১/৬১৮-৬২০) থানভী রাহ.-এর বরাতে উল্লেখ করেছেন।
প্রকাশ থাকে যে, ইমাম যদি তারাবীর দু রাকাতে বসতে ভুলে যায় তাহলে এক্ষেত্রে নিয়ম হল, তৃতীয় রাকাতের জন্য সিজদা করার আগ পর্যন্ত স্মরণ হলে সাথে সাথে বসে পড়বেন এবং সাহু সিজদা করে নামায শেষ করবেন। তখন এ দু রাকাত নামায তারাবী হিসেবে সহীহ হবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩৯-২৪০, ১/২৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৩০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৭-১১৮; ইমদাদুল আহকাম ১/৬১৯-৬২০
আমি একজন হাফেযে কুরআন। তারাবীর নামায পড়ানোর সময় পরের রাকাতের...
আমি একজন হাফেযে কুরআন। তারাবীর নামায পড়ানোর সময় পরের রাকাতের কেরাত স্মরণ করার জন্য সিজদায় গিয়ে কিছু কুরআন পড়ি। আমার জানার বিষয় হল, এতে কি আমার নামাযের কোনো ক্ষতি হয়?
রুকু-সিজদায় কুরআন পড়া নিষেধ। সহীহ মুসলিমে আছে, হযরত আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু বা সিজদায় কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮০
তাই ফকীহগণ বলেছেন, রুকু-সিজদায় ইচ্ছাকৃত কুরআন পড়লে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আর যদি ভুলে পড়া হয় এবং তা এক আয়াত বা তার বেশি হয় তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮০; শরহুল মুনইয়াহ ৩৫৭, ৪৬০; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৫০; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৪, হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪
জনৈক ব্যক্তি রমযানে রোযা রাখার পর বিনা ওজরে একটি রোযা...
জনৈক ব্যক্তি রমযানে রোযা রাখার পর বিনা ওজরে একটি রোযা ভেঙ্গে ফেলে। এখন সে বৃদ্ধ। লাগাতার দুই মাস রোযা রেখে কাফফারা আদায় করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সে কি টাকা দিয়ে কাফফারা আদায় করতে পারবে? সে ক্ষেত্রে কি লাগাতার ৬০ দিন টাকা দিতে হবে? যদি সপ্তাহে দুজন-তিনজন করে দেয় তাহলে কী হবে?
সম্ভাব্য দ্রুত সময়ে জানানোর অনুরোধ রইল।
প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির যদি পরবর্তীতেও লাগাতার দু মাস রোযা রাখার সামর্থ্য ফিরে পাওয়ার আশা না থাকে তাহলে সে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করতে পারবে। এজন্য ৬০ জন দরিদ্রকে দু বেলা তৃপ্তি সহকারে আহার করাবে। অথবা ৬০জনের প্রত্যেককে দু বেলা আহারের মূল্য দিয়ে দিবে। (বর্তমানে জনপ্রতি দু বেলা খাবারের মূল্য হিসেবে ১০০/- টাকা করে দেওয়া যেতে পারে।)
এক্ষেত্রে ৬০ জনের টাকা বা ৬০ জনের খাবার ৬০ জনকে যেমন দেওয়া যায় তদ্রূপ ৬০ জনেরটা একজন দুজনকে দেওয়াও বৈধ। তবে শর্ত হল, একদিনে একজনকে একদিনের টাকাই দেওয়া যাবে। দুই তিন দিনের টাকা বা খাবার একসাথে দেওয়া যাবে না। দিলেও সেটা একদিনের জন্যই বিবেচিত হবে।
আর পুরো কাফফারার টাকা একজন দুইজনকে একদিন একদিন করে দেওয়া হোক অথবা ৬০ জনকেই তা দেওয়া হোক সেটা একসাথে বা লাগাতার হওয়া জরুরি নয়। সুতরাং সপ্তাহে দুজন তিনজন করে দিয়ে ৬০ জন পূর্ণ করলেও তা সহীহ হবে।
-কিতাবুল আছল ২/১৬০-১৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৬, ৪/১০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৭৮-৪৮০
এ রমযানে আমরা তিনজন মিলে তারাবীর নামায পড়েছি। প্রতিদিন পাঁচ-ছয়...
এ রমযানে আমরা তিনজন মিলে তারাবীর নামায পড়েছি। প্রতিদিন পাঁচ-ছয় পারা তিলাওয়াত করা হত। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর বিধায় কিছুক্ষণ এক পায়ে আবার কিছুক্ষণ অন্য পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতাম। জানার বিষয় হল, নামাযে এভাবে দাঁড়ানো কি মাকরূহ?
স্বাভাবিক অবস্থায় নামাযে উভয় পায়ের উপর সমান ভর দিয়ে দাঁড়ানোই সুন্নত। বিশেষত ফরয ওয়াজিব নামাযে এর গুরুত্ব আরো বেশি। তবে অনেক দীর্ঘ কেরাত পড়া হলে কিংবা মাজুর হওয়ার কারণে উভয় পায়ের উপর সমান ভর দিয়ে দাঁড়ানো কষ্টকর হলে এক পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ানো যাবে।
তবে নামাযে একবার ডান দিকে আবার বাম দিকে ঢুলতে থাকা বা লাগাতার পা পরিবর্তন করতে থাকা মাকরূহ। কেননা তা একাগ্রতা ও স্থীরতা পরিপন্থী। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, তোমরা নামাযে স্থীর থাক। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৩০৫
হযরত আতা রাহ. বলেন, আমি এটাই পছন্দ করি যে, নামাযে নড়াচড়া কম করা হবে এবং উভয় পায়ে সমান ভর দিয়ে দাঁড়ানো হবে। তবে যদি কেউ বয়োঃবৃদ্ধ হয় এবং উভয় পায়ে সমান ভর দিতে না পারে (তবে তার হুকুম ভিন্ন)। আর কিয়াম দীর্ঘ হলে তো কিছুক্ষণ এক পায়ে আবার কিছুক্ষণ অন্য পায়ে ভর দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৩০১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৪৩; ইলাউস সুনান ৫/১৪৯; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ২/৩৯০-৩৯১; শরহু মাআনিল আছার ১/১৬৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৭৫
আমাদের এলাকার মসজিদের জায়গা অনেক। মোট জমির উত্তর দিকের অংশে...
আমাদের এলাকার মসজিদের জায়গা অনেক। মোট জমির উত্তর দিকের অংশে অর্ধেকের বেশি জমিতে মূল মসজিদের দ্বিতল ভবন। মসজিদের স্থায়ী আয়ের জন্য জমির দক্ষিণ অংশে একটি পৃথক তিন তলা ভবন তৈরি করা হয়েছে। উক্ত ভবনের নিচ তলা ও দোতলায় দোকান ও মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আর তৃতীয় তলায় মসজিদ কমিটির পরিচালনায় একটি হাফিজিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু মাদরাসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মাদরাসার পক্ষ থেকে মসজিদকে কোনো ভাড়া প্রদান করা হয়নি এবং তখন ভাড়া প্রদানের মতো আর্থিক সংগতিও মাদরাসার ছিল না। পরবর্তীতে মসজিদ-মাদরাসার নতুন কমিটি মাদরাসা ফ্লোরের ভাড়া ১০,০০০/- টাকা নির্ধারণ করে দেয় এবং মাদরাসা তা পরিশোধ করতে থাকে। কিন্তু মাদরাসার উক্ত ফ্লোরের প্রকৃত ভাড়া হবে ৩০,০০০/- টাকা। যা মাদরাসা পরিশোধ করতে সক্ষম নয়।
উল্লেখ্য যে, মূল মসজিদের নিচ তলায় নামায আদায় হয়। শুক্রবারের জুমআ ও দুই ঈদের সময় নিচতলায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় মসজিদের দোতলা ও ছাদে মুসল্লিগণ জামাাতে শরিক হন।
বর্তমানে মাদরাসার বোর্ডগ্রুপ, নাজেরা এবং হিফয বিভাগে ছাত্রসংখ্যা ৬০ জন এবং শিক্ষক তিনজন। মাদরাসার জায়গায় ছাত্র সংকুলান না হওয়ায় বোর্ডগ্রুপ নাজেরা বিভাগের ছাত্রদের মসজিদের দোতলায় থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জুমা-ঈদের সময় মসজিদের দোতলা খালি করে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে মাদরাসার ভবনটিতে আরো এক তলা বৃদ্ধি করে মসজিদে অবস্থানকারী ছাত্রদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
আর অত্র মসজিদ-মাদরাসার নামে দীর্ঘদিন হতেই সরকারী অগ্রণী ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। যেখান থেকে কিছু সুদ পাওয়া যায়। এখানে প্রায় ১,২০,০০০/- টাকারও বেশি সুদ জমা হয়েছে। যা কমিটির নিয়ন্ত্রণে আছে।
উল্লেখ্য যে, বর্তমানে মসজিদ-মাদরাসার নামে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে হিসাব খুলে লেনদেন করা হচ্ছে। যেখান থেকে মুনাফা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ মসজিদ-মাদরাসায় খরচ করা হচ্ছে।
এখন জানার বিষয় হল,
ক) মসজিদের স্থায়ী আয়ের জন্য নির্মিত ভবনের একটি অংশে বিনা ভাড়ায় মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা সঠিক ছিল কি না? মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকালে ভাড়া প্রদানের মতো আর্থিক অবস্থা মাদরাসার ছিল না।
খ) মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রায় ৭ বছর পর থেকে প্রকৃত ভাড়া ৩০,০০০/- এর অধিক হওয়া সত্তে¡ও মাদরাসা থেকে ১০,০০০/- টাকা ভাড়া নেওয়া ঠিক হচ্ছে কি না?
গ) মসজিদের দোতলায় সাময়িকভাবে ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা ঠিক কি না?
ঘ) মসজিদ-মাদরাসার ব্যাংক হিসাবে যে সুদ জমা হয়েছে তা মসজিদ-মাদরাসায় স্বাভাবিক কাজে খরচ করা যাবে কি? ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হিসাব পরিচালনার জন্য পরিচালনা ফি বাবদ কিছু অর্থ কেটে নেয়। এ টাকা সুদের অংশ থেকে কাটা যাবে কি না?
ঙ) সুদের টাকা মসজিদ-মাদরাসার বাথরুম তৈরির কাজে ব্যয় করা যাবে কি না?
চ) সুদের টাকা মাদরাসার লিল্লাহ ফান্ডে খরচ করা ঠিক হবে কি না?
ছ) উক্ত মসজিদটি সরকারী ওয়াকফ প্রশাসকের দপ্তরে নিবন্ধিত। উক্ত দপ্তরে প্রতি বছর কিছু চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। সুদের টাকা দ্বারা উক্ত ফি পরিশোধ করা যাবে কি না?
জ) ইসলামী ব্যাংকগুলোর মুনাফা মসজিদ-মাদরাসার স্বাভাবিক কাজে ব্যবহার করা বৈধ হচ্ছে কি না?
ক ও খ) প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মসজিদের আয়ের উদ্দেশ্যে নির্মিত ভবনটির তৃতীয় তলায় মসজিদ কর্তৃপক্ষের মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা জায়েয হয়েছে। কেননা কুরআন মাজীদ শেখা-শেখানো, দ্বীনী ইলমের চর্চা মসজিদের মৌলিক উদ্দেশ্যাবলী ও কার্যক্রমের অংশ। বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহ. আল বাহরুর রায়েকে বলেছেন, মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল, নামায আদায় করা, ইতেকাফ, যিকর আযকার, ইলম শেখা,শেখানো এবং কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা। (আল বাহরুর রায়েক ২/৩৪)
তাই মসজিদের উক্ত উদ্দেশ্যাবলী ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের জন্য মসজিদের মালিকানাধীন ভবনে হাফিজিয়া ও নুরানী মক্তব বিভাগ চালু করা উত্তম কাজ হয়েছে। আর মসজিদভিত্তিক এধরনের দ্বীনী মাদরাসা যেহেতু মসজিদেরই অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের ন্যায় তাই মাদরাসার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মাদরাসা থেকে ভাড়া না নেওয়া অন্যায় হয়নি।
অনুরূপ পরবর্তীতে মাদরাসা থেকে ভাড়া আদায় করার সময় তুলনামূলক কম ভাড়া নেয়াও অবৈধ হচ্ছে না। মাদরাসার ভাড়া অন্য তলার ভাড়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিতে হবে তা কর্তৃপক্ষের জন্য আবশ্যক নয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কম ভাড়া নেয়া দোষণীয় নয়; বরং ভাড়া কম নেয়ার অর্থ হবে মসজিদ তার জায়গা ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে মাদরাসাকে সহযোগিতা করছে। যা মসজিদের উদ্দেশ্যেরই অন্তর্ভুক্ত।
গ) প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাদরাসা ভবনে যেহেতু সকল ছাত্রের থাকার পর্যাপ্ত জায়গা হচ্ছে না তাই এমন প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ছাত্রদের জন্য অস্থায়ীভাবে মসজিদে থাকা জায়েয হবে। তবে এক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী:
১. মসজিদের আদব এহতেরাম পূর্ণরূপে বজায় রাখতে হবে।
২. মসজিদের পবিত্রতা ক্ষুণœ হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. শোরগোল, হৈচৈ ইত্যাদি থেকে ছাত্রদেরকে নিবৃত রাখতে হবে।
৪. ছাত্ররা মসজিদে শোয়ার সময় ভারি তোশক/কাঁথা বিছিয়ে নিবে।
৫. খানা পরিবেশন যদি মাদরাসা ভবনে ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় তাহলে সেখানে
করাটাই উত্তম হবে। আর যদি মসজিদেই করতে হয় তাহলে দস্তরখান বিছিয়ে এমনভাবে পরিবেশন করবে যেন মসজিদ ময়লা না হয় এবং পরিবেশন শেষে সাথে সাথে দস্তরখান উঠিয়ে মেঝে পরিষ্কার করে নিবে। উক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা সেখানে নেগরান উস্তায রাখতে হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮৫; এলাাউস সুনান ৫/১৫৭-১৫৯
ঘ, ঙ, চ ও ছ) সুদী ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব সম্পূর্ণ সুদী চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। উক্ত হিসাব খোলা এবং মূল টাকার অতিরিক্ত গ্রহণ করা দুটোই হারাম। মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘর। মসজিদের নামে সুদী হিসাব খোলা অধিকতর অন্যায় কাজ। মসজিদ কমিটির কর্তব্য হল, অনতিবিলম্বে ঐ সুদী হিসাব বন্ধ করে মূল টাকা উঠিয়ে নেয়া। আর মূল টাকার অতিরিক্ত যে সুদ জমা হয়েছে তা উঠানো হলে গরীব মিসকীনকে সদকা করে দিতে হবে। সুদের টাকা মসজিদ মাদরাসার কাজে লাগানো জায়েয হবে না। মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘর। মাদরাসা দ্বীনী ইলমের কেন্দ্র। এগুলো মুসলমানদের হালাল ও পবিত্র দান অনুদান দ্বারা নির্মিত ও পরিচালিত হবে। সুদের মত ঘৃণিত অর্থ মসজিদ মাদরাসার মত পবিত্র জায়গাতে ব্যয়ের চিন্তা করাও ঠিক নয়। এ টাকা মসজিদ মাদরাসার সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যথা বাথরুম তৈরী বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজেও ব্যবহার করা যাবে না। অনুরূপ উক্ত টাকা দ্বারা একাউন্ট পরিচালনা ফি আদায়, শুল্ক আদায়, ওয়াকফ নিবন্ধনের চাঁদা পরিশোধ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। কারণ এমনটি করার মানে হবে প্রকারান্তরে সুদী অর্থ দ্বারা উপকৃত হওয়া। -সূরা বাকারা (২) : ২৭৫; তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৫, ২৩৭
জ) আমাদের জানা মতে এ দেশে শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার দাবীদার ইসলামী ব্যাংকগুলোর বর্তমান বিনিয়োগ পদ্ধতি ও লেনদেন যথাযথভাবে শরীয়ার নীতিমালা অনুসরণ করে বাস্তবায়িত হয়না। তাই যতদিন এ সকল ব্যাংক যথাযথ শরীয়া অনুসরণের বিষয়টি বাস্তবিকভাবে নিশ্চিত না করবে ততদিন ইসলামী নামের ব্যাংকগুলোর একাউন্ট থেকে প্রাপ্ত মুনাফা ভোগ করা বা তা থেকে একাউন্টধারীর উপকৃত হওয়া কিছুতেই নিরাপদ হবে না।
সুতরাং এ ধরনের ব্যাংক একাউন্ট থেকে প্রাপ্ত টাকাও মসজিদ মাদরাসার জেনারেল কাজে ব্যবহার করা ঠিক হচ্ছে না; বরং এগুলো গরীব মিসকীনকে বা কোন প্রতিষ্ঠানের গোরাবা ফান্ডে সদকা করে দেওয়া উচিত হবে। আপনাদের মাদরাসার গোরাবা ফান্ডেও চাইলে খরচ করতে পারবেন। তবে উত্তম হবে অন্যত্র দান করে দেওয়া।
মসজিদ-মাদরাসা পরিচালনা করতে হবে মুসলমানদের হালাল দান খয়রাতের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের মুনাফাকে আয়ের উৎস বিবেচনা করা ঠিক হবে না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮; শরহু মুসলিম, নববী ১১/২৭; ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/১৫৪; আল মাআঈরুশ শারইয়্যাহ পৃ. ১১৭, ১৪৫
রোযা অবস্থায় যদি কেউ স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন নেয় তাহলে কি...
রোযা অবস্থায় যদি কেউ স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন নেয় তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে? তেমনি অসুস্থ অবস্থায় কেউ যদি গ্লুকোজ স্যালাইন নেয় তাহলে কি তার রোযা সহীহ হবে?
স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন নিলে রোযা ভাঙ্গে না। তেমনিভাবে অসুস্থতার কারণে গ্লুকোজ স্যালাইন নিলেও রোযার ক্ষতি হবে না। তবে অসুস্থতা ছাড়া গ্লুকোজ স্যালাইন নেওয়া নাজায়েয।
-আলাতে জাদীদা কে শরঈ আহকাম ১৫৩
এতেকাফকারী কি জানাযা পড়ার জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে? এতে...
এতেকাফকারী কি জানাযা পড়ার জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে? এতে কি তার এতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে?
ইতিকাফকারী জানাযা পড়ার জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে না। জানাযার জন্য বাইরে বের হলে এতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৭৩; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী, হাদীস ৮৫৯৪; কিতাবুল আসল ২/১৮৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৪৫
রমযান মাসে রোযা অবস্থায় অসুস্থতার কারণে এক ব্যক্তির বমি হয়।...
রমযান মাসে রোযা অবস্থায় অসুস্থতার কারণে এক ব্যক্তির বমি হয়। এর দ্বারা কি তার রোযা ভেঙ্গে গেছে? এখন তার কী করণীয়?
না, একারণে তার রোযা ভাঙ্গেনি। কেননা রোযা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (যদি তা বেশিও হয়) রোযা ভাঙ্গে না। অবশ্য কেউ ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোযা অবস্থায় (অনিচ্ছাকৃত) বমি হলে তা কাযা করতে হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃত বমি করলে সে যেন তা কাযা করে নেয়।
-জামে তিরমিযী, হাদীস ৭২০; কিতাবুল আসল ২/২০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩২৬
রোযা অবস্থায় যদি শরীরের কোনো অঙ্গ থেকে রক্ত বের হয়...
রোযা অবস্থায় যদি শরীরের কোনো অঙ্গ থেকে রক্ত বের হয় কিংবা সিরিঞ্জ দিয়ে শরীর থেকে রক্ত বের করা হয় তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে রোযা ভাঙ্গে না। তদ্রƒপ সিরিঞ্জ দ্বারা বের করা হলেও রোযা ভাঙ্গে না। তবে বিশেষ ওযর ছাড়া শরীর থেকে ইচ্ছাকৃত এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যার কারণে ঐ দিন রোযা পূর্ণ করার শক্তি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৩৮, ১৯৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/৩০০
রোযা অবস্থায় কেউ যদি চোখে ড্রপ ব্যবহার করে এবং মুখেও...
রোযা অবস্থায় কেউ যদি চোখে ড্রপ ব্যবহার করে এবং মুখেও তিক্ততা অনুভব হয় তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
না, রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করলে রোযা ভাঙ্গবে না। এমনকি এর তিক্ততা মুখে বা গলায় অনুভব হলেও রোযা ভাঙ্গবে না (মাসআলাটি সাধারণ কিয়াসের বহির্ভুত সরাসরি আসার দ্বারা প্রমাণিত)।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৪
রোযা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে? এতে কি রোযা...
রোযা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে? এতে কি রোযা নষ্ট হয়ে যাবে?
রোযা অবস্থায় টুথপেস্ট বা মাজন দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা মাকরূহ। আর পেস্ট বা মাজন গলার ভেতর চলে গেলে রোযাই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই রোযা অবস্থায় টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করা যাবে না। টুথপেস্ট বা মাজন দিয়ে ব্রাশ করতে হলে সাহরীর সময় শেষ হওয়ার আগেই করে নিবে।
-ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৪১; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/৫১৮
এক ব্যক্তি ইমামের সাথে তারাবীর কয়েক রাকাত পায়নি। এখন সে...
এক ব্যক্তি ইমামের সাথে তারাবীর কয়েক রাকাত পায়নি। এখন সে কি আগে ইমামের সাথে বিতির পড়ে নিবে, এরপর তারাবীর বাকি রাকাত আদায় করবে, না সে আগে তারাবীর ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো আদায় করে নিবে এবং এরপর একাকী বিতির পড়ে নিবে? এক্ষেত্রে কোনটি সঠিক নিয়ম?
বিতিরের জামাতের আগে তারাবীর ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো আদায় করা সম্ভব হলে তা আদায় করে নিবে। কিন্তু যদি তা আদায়ের সময় না থাকে এবং বিতিরের জামাত শুরু হয়ে যায় তাহলে আগে জামাতের সাথে বিতির পড়ে নিবে। এরপর তারাবীর অবশিষ্ট রাকাতগুলো আদায় করবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৬২
আমার আম্মা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক এবং হৃদরোগে আক্রান্ত। এ কারণে...
আমার আম্মা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক এবং হৃদরোগে আক্রান্ত। এ কারণে তিনি অত্যন্তদুর্বল হয়ে পড়েছেন। ডাক্তার নিয়মিত ঔষধ খেতে বলেছেন। কোনো সময় ঔষধ না খেলে অসুস্থতা অনেক বেড়ে যায়। তাই আম্মা রমযান মাসে রোযা রাখতে পারেন না। গত রমযান মাসে কয়েকটি রোযা রাখার পর অসুস্থতা ও দুর্বলতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তাই পরে আর রোযা রাখতে পারেননি।
জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমার আম্মার জন্য রমযান মাসে রোযা না রেখে ফিদয়া দেওয়া জায়েয হবে কি? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।
হাঁ, এ অবস্থায় আপনার আম্মার জন্য রমযান মাসে রোযা না রেখে ফিদয়া দেওয়া জায়েয হবে। তবে পরবর্তীতে কখনো রোযা রাখার মতো সুস্থতা ফিরে পেলে এ রোযাগুলোর কাযা করে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে পূর্বের ফিদয়া যথেষ্ট হবে না। কারণ ফিদয়ার হুকুম ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যে পরবর্তীতে কাযা আদায়ে সক্ষম নয়।
-রদ্দুল মুহতার ২/৪২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩৭৫-৩৭৬
গত রমযানে একদিন আমি রোযা অবস্থায় ভুলে পানি পান করে...
গত রমযানে একদিন আমি রোযা অবস্থায় ভুলে পানি পান করে ফেলি। ফলে রোযা ভেঙ্গে গিয়েছে মনে করে ইচ্ছাকৃত পানাহার করি। এখন আমার করণীয় কী? আমাকে কি রোযার কাযা ও কাফফারা উভয়টা আদায় করতে হবে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ভুলে পানি পান করার কারণে আপনার রোযা ভাঙ্গেনি। কারণ রোযা অবস্থায় ভুলে পানাহার করলে রোযা ভাঙ্গে না। পরে রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত পানাহারের কারণে রোযা ভেঙে গেছে। এক্ষেত্রে রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে সংশয়ে পড়ে পানাহার করার কারণে আপনার উপর ঐ রোযার শুধু কাযা ওয়াজিব হবে, কাফফারা দিতে হবে না তবে শরীয়তের বিধিবিধানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞ কোনো আলেম থেকে সঠিক মাসআলা না জেনে নিজের ধারণা অনুযায়ী আমল করা অন্যায়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরী।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯৩৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১-৪০২; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩৬৮
গত রমযানে আমি একটি রোযা রেখে ইচ্ছাকৃত ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। আমাদের...
গত রমযানে আমি একটি রোযা রেখে ইচ্ছাকৃত ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। আমাদের ইমাম সাহেবকে ঐ রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন যে, আপনাকে একটি রোযা কাযা করে নিতে হবে এবং কাফফারাস্বরূপ লাগাতার দুই মাস রোযা রাখতে হবে। পরবর্তিতে আমি যখন রোযা রাখতে শুরু করবো তখন মনে হল যে, চান্দ্রমাস তো কখনো ঊনত্রিশে হয় আবার কখনো ত্রিশেও হয়। সুতরাং আমি দুই মাস হিসেবে রোযা ৬০ টা রাখবো না আরো কম? তো হুযুরের কাছে আমি এর সমাধান জানতে চাই।
আপনি যদি চান্দ্রমাসের প্রথম তারিখ থেকে কাফফারার রোযা রাখা শুরু করেন তবে পরপর দুই মাস রোযা রাখলেই কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কোনো চান্দ্রমাস ঊনত্রিশে হওয়ার কারণে ৬০ দিন পূর্ণ না হলেও কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু যদি প্রথম তারিখ থেকে রোযা শুরু না করেন তবে ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোযা রাখতে হবে।
-আদ দুররুল মুখতার ৩/৪৭৬; মাবসূত ৭/১৪; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/৫১২; আলবাহরুর রায়েক ৪/১০৬
আমি নতুন হাফেয। ছোট ছাত্রদের নিয়ে গত রমযানে তারাবীর নামায...
আমি নতুন হাফেয। ছোট ছাত্রদের নিয়ে গত রমযানে তারাবীর নামায পড়িয়েছি। যখন আটকে যেতাম তখন রুকুতে চলে যেতাম। এরপর রুকু এবং সিজদায় চুপে চুপে আয়াতগুলো পড়ে পরবর্তী আয়াত স্মরণ করতাম। জানার বিষয় হল, এ কারণে কি নামাযের কোনো অসুবিধা হয়েছে?
নামাযে কুরআন মাজীদ থেকে পড়ার নির্ধারিত স্থান হল কিয়াম। অর্থাৎ রুকুর আগের সময়। এই নির্ধারিত স্থান ব্যতীত রুকু-সিজদা বা অন্য কোনো সময় কুরআন থেকে পড়া মাকরূহ। আয়াত স্মরণ করার উদ্দেশ্যেও পড়া যাবে না। অবশ্য মুখে উচ্চারণ না করে মনে মনে আয়াতের খেয়াল করলে নামাযের ক্ষতি হবে না।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে রুকু-সিজদায় আয়াত পড়ার কারণে নামায মাকরূহ হয়েছে। তবে সকলের নামায আদায় হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, আয়াত স্মরণ না হলে কিংবা অন্য কারণে লোকমা নেওয়ার প্রয়োজন হলে লোকমা নিবে। মনে রাখা দরকার যে, একেবারে লোকমা ছাড়া পড়ানো জরুরি কোনো হুকুম নয়; বরং মাসআলাসম্মত পড়া এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির খেয়াল রেখে পড়াই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
-শরহুল মুনইয়াহ ৩৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২০৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১১৮
আমাদের মাদরাসার পাশে অস্থায়ীভাবে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে...
আমাদের মাদরাসার পাশে অস্থায়ীভাবে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে তা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। বর্তমানে এতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া হয়।
জানার বিষয় হল, এই মসজিদে ইতিকাফ করা সহীহ হবে কি? আর ইতিকাফের কারণে কি মসজিদটি ওয়াকফিয়া বা স্থায়ী মসজিদ হয়ে যাবে? দয়া করে বিস্তারিত দলিল-প্রমাণের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত অস্থায়ী নামাযের ঘরটি যেহেতু ‘শরঈ মসজিদ’ নয় তাই তাতে ইতিকাফ সহীহ হবে না। ইতিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য ‘শরঈ মসজিদ’ হওয়া জরুরি। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের (স্ত্রীদের) সাথে মিলিত হয়ো না। -সূরা বাকারা (২) : ১৮৭
ইমাম কুরতুবী রাহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, উক্ত আয়াতের আলোকে সকল ইমাম এ বিষয়ে একমত যে, মসজিদ ছাড়া অন্যস্থানে ইতিকাফ সহীহ হবে না।
-সূরা বাকারা (২) : ১৮৭; তাফসীরে কুরতুবী ২/২২২; কিতাবুল ইসআফ ফী আহকামিল আওকাফ ৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৪২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪০
আমি কলেজে পড়ি। ছোট থেকেই নামায-রোযার প্রতি মনোযোগী ছিলাম। কিন্তু...
আমি কলেজে পড়ি। ছোট থেকেই নামায-রোযার প্রতি মনোযোগী ছিলাম। কিন্তু এবার রমযানে কলেজে গিয়ে বন্ধুদের প্ররোচনায় পড়ে ৫টি রোযা ভেঙ্গে ফেলি। তারপর থেকে এ নিয়ে খুব চিন্তিত আছি। বারবার তাওবা ইস্তিগফার করেছি। এ অবস্থায় আমার জন্য আর কী করণীয়? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
রমযানের রোযা না রাখা বা রেখে ভেঙ্গে ফেলা মারাত্মক গুনাহ। এজন্য শুধু তওবা করা যথেষ্ট নয়; রবং এর কাযা আদায় করতে হবে এবং বিনা ওজরে ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙ্গে ফেললে কাফফারাও আদায় করতে হবে। সুতরাং আপনি ঐ ৫টি রোযার জন্য ৫টি রোযা কাযা আদায় করবেন এবং ঐ সবগুলো রোযা ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙ্গে ফেলার কারণে একটি কাফফারা আদায় করবেন। কাফফারা হল লাগাতার ৬০টি রোযা রাখা। লাগাতার ৬০টি রোযা রাখতে অক্ষম হলে পূর্ণ খাবার খেতে পারে এমন ৬০ জন মিসকীনকে তৃপ্তি সহকারে দু বেলা খাওয়াতে হবে। অথবা প্রত্যেককে এর মূল্য দিতে হবে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪১২, ৩/৪৭৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭, ৪/১০৯
গত রমযান মাসে একদিন তারাবীর পর আমার খুব বমি হয়।...
গত রমযান মাসে একদিন তারাবীর পর আমার খুব বমি হয়। ফলে শরীর প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে পরের দিন রোযা রাখার নিয়ত করিনি। এমনকি সাহরীও খাইনি। কিন্তু সকাল ৮ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে শরীর খুব হালকা বোধ হয়। তাই তখন রোযার নিয়ত করে ফেলি। প্রশ্ন হল, বিলম্বে নিয়ত করায় আমার উক্ত রোযা কি সহীহ হয়েছে? উল্লেখ্য, সুবহে সাদিক থেকে রোযার নিয়ত করা পর্যন্ত রোযা ভঙ্গের কোনো কাজ করা হয়নি।
রমযানের রোযার নিয়ত সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়ের পূর্বে করলেও রোযা সহীহ হয়ে যায়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনি এ সময়ের ভেতরেই রোযার নিয়ত করেছেন এবং এর মধ্যে রোযা ভঙ্গের কোনো কাজও করেননি তাই আপনার ঐ রোযা সহীহ হয়েছে। অবশ্য রাতেই রোযার নিয়ত করে নেওয়া উত্তম।
প্রকাশ থাকে যে, সাহরী খাওয়া সুন্নত। সাহরী না খেয়ে শুধু নিয়ত করে নিলেও রোযা সহীহ হয়ে যায়।
-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪০১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯, ২৬৬; ফাতহুল কাদীর ২/২৩৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৯
গত রোযার মাসে আমি কয়েকদিন অসুস্থ ছিলাম। একদিন দিনের বেলায়...
গত রোযার মাসে আমি কয়েকদিন অসুস্থ ছিলাম। একদিন দিনের বেলায় প্রচুর বমি হয়েছিল। তবুও আমি রোযা ভাঙতে চাইনি, কিন্তু আমার এক আত্মীয় আমাকে বললেন, তোমার রোযা তো ভেঙ্গে গেছে। অতএব তুমি উপোস না থেকে কিছু খেয়ে নাও। আমি তার কথামতো তখন খাবার খেয়ে নেই। পরে জানতে পারি, অনিচ্ছাকৃত বমির কারণে রোযা ভাঙ্গে না। হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন হল, এ কথা কি ঠিক? ঠিক হলে এ অবস্থায় আমার জন্য করণীয় কী? আমাকে কি এর কারণে কাফফারা আদায় করতে হবে?
অনিচ্ছাকৃত বমি হলে রোযা ভাঙ্গে না-এ কথা ঠিক। তাই বমি হওয়ার পর আপনার জন্য ঐদিন পানাহার করা বৈধ হয়নি। অবশ্য ঐ রোযার জন্য আপনাকে শুধু একটি রোযা কাযা করতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না।
-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৭২০; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৫৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৪; কিতাবুল আছল ২/২০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪০১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪২৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৪
জনৈক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে রাগের মাথায় বলে,...
জনৈক ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে রাগের মাথায় বলে, তোর মায়ের মতো তুইও আমার জন্য হারাম। এ কথা বলার দ্বারা স্ত্রীকে তালাক দেওয়া তার উদ্দেশ্য ছিল না। মেলামেশা হারাম বুঝোনো উদ্দেশ্য ছিল। জানতে চাই, উক্ত কথার কারণে তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক কি ছিন্ন হয়ে গেছে? শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের এখন করণীয় কী?
প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি যদি বাস্তবেই উল্লেখিত উদ্দেশ্যে স্ত্রীকে ঐ কথা বলে থাকে এবং তালাকের নিয়ত না করে থাকে তাহলে এর দ্বারা স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। তবে এ কারণে স্ত্রীর সাথে তার মেলামেশা করা হারাম হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত কাফফারা আদায় না করা পর্যন্ত তাদের জন্য মেলামেশা করা বৈধ হবে না। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন যাপনের জন্য তাকে আগে কাফফারা আদায় করতে হবে।
কাফফারা হল, লাগাতার দুই মাস রোযা রাখা। আর রোযা রাখতে সক্ষম না হলে ষাটজন মিসকীনকে দু বেলা তৃপ্তিসহকারে খানা খাওয়ানো।
প্রকাশ থাকে যে, রোযার মাধ্যমে কাফফারা আদায় করার ক্ষেত্রে এই দুই মাসও স্ত্রীর সাথে মেলামেশা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে খানা খাওয়ানোর মাধ্যমে কাফফারা আদায়কালে বিরত থাকার হুকুম নেই।
-সূরা মুজাদালা : ৩-৪; তাফসীরে কুরতুবী ১৭/১৮৫; কিতাবুল আছল ৫/১৯, ২২; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৬৭, ৩৭০; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/১৮৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/৯৪
আমার চাচা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাকে প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয়। রোযা...
আমার চাচা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাকে প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয়। রোযা অবস্থায় তিনি কি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন নিতে পারবেন?
হ্যাঁ, রোযা অবস্থায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন নেওয়া যাবে। এ কারণে রোযার ক্ষতি হবে না।
-ফাতহুল কাদীর ২/২৫৭; আলাতে জাদীদাহ কে শরয়ী আহকাম পৃষ্ঠা :১৫৩
আমার নানী একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ। তার চোখ থেকে সবসময় পানি...
আমার নানী একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ। তার চোখ থেকে সবসময় পানি ঝরে। এজন্য নিয়মিত তাকে চোখের ড্রপ বা মলম ব্যবহার করতে হয়। চোখে ড্রপ ব্যবহার করলে মুখে ঔষধের তিক্ততা অনুভূত হয়। তাই জানতে চাই, রোযা অবস্থায় তিনি চোখে ড্রপ বা মলম ব্যবহার করতে পারবেন কি? এর কারণে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ বা মলম ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে গলায় ঔষধের স্বাদ অনুভূত হলেও রোযা ভাঙ্গবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা : ১০, ২/৪৫৪; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৯৭
আমাদের এলাকায় মশার উপদ্রব খুব বেশি। তাই দিনের বেলায়ও মশার...
আমাদের এলাকায় মশার উপদ্রব খুব বেশি। তাই দিনের বেলায়ও মশার কয়েল বা ধূপ জ্বালানোর প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি মসজিদ সুরভিত রাখার জন্য মাঝেমধ্যেই আগরবাতি জ্বালানো হয়। এসবের ধোঁয়া অনিচ্ছাকৃতভাবে নাক-মুখ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি? রমযানের দিনের বেলা এগুলো জ্বালানো কি জায়েয? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
রমযান মাসে দিনের বেলা মশার কয়েল, ধূপ, আগরবাতি ইত্যাদি জ্বালানো জায়েয। এতে রোযার ক্ষতি হবে না। কারণ ধূপ, কয়েল, আগরবাতি ইত্যাদি জ্বালানোর পর আশপাশে সাধারণত এর ঘ্রাণই ছড়ায়। এর ধোঁয়া নাক পর্যন্ত পৌঁছে না। এরপরও অনিচ্ছাকৃত তা নাকে-মুখে চলে গেলে রোযা নষ্ট হবে না। তবে রোযা অবস্থায় কেউ যদি নাক বা মুখ দিয়ে এগুলোর ধোঁয়া টেনে নেয় সেক্ষেত্রে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
-রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; আশশুরুনবুলালিয়া ১/২০২; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৫০
রমযান মাসে অনেক লোককে দেখা যায়, অযুর সময় তারা কুলি...
রমযান মাসে অনেক লোককে দেখা যায়, অযুর সময় তারা কুলি করে বারবার থুথু ফেলতে থাকে যেন মুখ থেকে পানির ভেজাভাবটাও কেটে যায়। জানার বিষয় হল, কুলি করার পর মুখে স্বাভাবিকভাবে যে ভেজা থাকে তা থুথুর সাথে গিলে ফেললে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
কুলি করার পর বারবার থুথু ফেলার প্রয়োজন নেই। কেননা কুলি ক রে সব পানি ফেলে দেওয়ার পর মুখে যে ভেজা থাকে সেটা পানি নয়। কাজেই এর দ্বারা রোযার কোনো ক্ষতি হবে না।
-সহীহ বুখারী ১/২৫৯; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১৪২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৯৬; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৭২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩
অনেক মহিলা রমযানে ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রাখেন। আমি...
অনেক মহিলা রমযানে ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রাখেন। আমি জানতে চাই, এভাবে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রেখে ঐ নির্দিষ্ট দিনগুলোতে রোযা রাখা সহীহ হবে কি?
ঔষধ সেবনের মাধ্যমে কোনো মহিলা স্রাব বন্ধ রাখলে তাকে নামায, রোযা ইত্যাদি সকল হুকুমই পালন করতে হবে। অর্থাৎ এ পদ্ধতিতে বন্ধ রাখলে পবিত্রতার অবস্থার সকল বিধান তার জন্য প্রযোজ্য হবে।
উল্লেখ্য, স্রাব বন্ধের জন্য ঔষধ ইত্যাদির ব্যবহার না করাই ভালো। একান্ত কেউ করতে চাইলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যেন তা স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যার সৃষ্টি না করে।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/৩১৮; আলমওসূআতুত তিবিবয়া আলফিকহিয়্যাহ ৪১৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮
আমার লিভারে ঘা হয়েছে। ডাক্তার আমাকে একমাস পর পর চার...
আমার লিভারে ঘা হয়েছে। ডাক্তার আমাকে একমাস পর পর চার বার এন্ডোস্কপি করতে বলেছেন। সামনে রমযান। তাই জানার বিষয় হল, এন্ডোস্কপি করলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?
এন্ডোস্কপির পাইপের মাধ্যমে পাকস্থলিতে ঔষধ, পানি ইত্যাদি কোনো কিছু যদি না দেওয়া হয় তবে শুধু এন্ডোস্কপির কারণে রোযা ভাঙ্গবে না। কিন্তু এন্ডোস্কপি করার সময় রক্ত বা ময়লার কারণে পাইপের বাল্ব প্রায়ই ঘোলাটে হয়ে যায়। যার কারণে পাইপের মাধ্যমে পানি দিয়ে ঐ বাল্ব পরিষ্কার করতে হয়। এমন হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তাই যে ডাক্তার পরীক্ষা করবেন তার থেকে জেনে নিতে হবে যে, পাইপের সাথে কোনো ঔষধ দেওয়া হয়েছে কি না বা ভেতরে পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছে কি না।
উল্লেখ্য, রমযান মাসে এন্ডোস্কপি করার প্রয়োজন হলে ইফতারের পর করতে চেষ্টা করবেন।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৮০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৭
গত রমযানে আমাদের এক নির্ভরযোগ্য দ্বীনী প্রতিষ্ঠান থেকে রমযানের ক্যালেন্ডার...
গত রমযানে আমাদের এক নির্ভরযোগ্য দ্বীনী প্রতিষ্ঠান থেকে রমযানের ক্যালেন্ডার ছাপানো হয়। আর তাতে রোযার বেশ কিছু মাসাইল দেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি মাসআলা ছিল, ইঞ্জেকশন নিলে রোযা ভেঙ্গে যায়। তাই আমি ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে খাবার খেয়ে ফেলি। জানার বিষয় হল, ঐ মাসআলা কি সঠিক? যদি সঠিক না হয় তাহলে আমার সেই রোযার কাযা করলে হবে? নাকি কাফফারাও জরুরি হবে?
ইঞ্জেকশন নিলে রোযা নষ্ট হয় না। যেহেতু আপনার জানামতে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোযা ভেঙ্গে ফেলেছেন তাই আপনাকে কাফফারা দিতে হবে না। শুধু কাযা আদায় করে নিলেই চলবে।
উল্লেখ্য যে, মাসআলা জানার ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা কাম্য।
-ফাতহুল কাদীর ২/২৫৭; আননাহরুল ফায়েক ২/১৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১৭; আলাতে জাদীদাহ কে শরয়ী আহকাম ১৫৩
রোযা অবস্থায় কাঁচা ডাল দিয়ে মিসওয়াক করার হুকুম কী? আমার...
রোযা অবস্থায় কাঁচা ডাল দিয়ে মিসওয়াক করার হুকুম কী? আমার এক বন্ধু বলেছে, রোযা অবস্থায় কাঁচা ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা মাকরূহ। সঠিক বিষয়টি জানালে কৃতজ্ঞ হব।
আপনার বন্ধুর কথা ঠিক নয়। রোযা অবস্থায় কাঁচা ডাল দিয়ে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই। কাঁচা, শুকনা সব রকম ডাল দিয়েই মিসওয়াক করতে পারবে। তবে কাঁচা ডাল দিয়ে মিসওয়াক করলে সতর্ক থাকতে হবে যেন এর রস গলায় চলে না যায়।
-রদ্দুল মুহতার ২/৪১৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯; ফাতাওয়া তাতাখানিয়া ৩/৩৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৭
এ বছর রমযান মাসে আমি ইতিকাফ করার নিয়ত করেছি। কিন্তু...
এ বছর রমযান মাসে আমি ইতিকাফ করার নিয়ত করেছি। কিন্তু আমার বাসা থেকে মসজিদে খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো কেউ নেই। আমি কি বাসায় গিয়ে খাবার আনতে পারব? যদি খাবার আনতে যাই তাহলে আমার ইতিকাফ কি ভেঙ্গে যাবে?
মসজিদে খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো কেউ না থাকলে খাবার আনার জন্য আপনি বাসায় যেতে পারবেন। এ কারণে ইতিকাফ ভাঙবে না। তবে খাবার আনার জন্য মসজিদ থেকে বের হয়ে অন্য কোনো কাজে বিলম্ব করা যাবে না। অন্য কাজে অল্প সময় ব্যয় করলেও ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। অবশ্য ঘটনাক্রমে খাবার প্রস্ত্তত না হলে সেজন্য অপেক্ষা করতে পারবেন।
-আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২২৪
আমার প্রস্রাব আটকে যাওয়ার সমস্যা আছে। এজন্য আগে মাঝেমধ্যে ক্যাথেটারও...
আমার প্রস্রাব আটকে যাওয়ার সমস্যা আছে। এজন্য আগে মাঝেমধ্যে ক্যাথেটারও ব্যবহার করতে হয়েছে। সামনে রমযান আসছে, তাই আমি জানতে চাচ্ছি যে, রোযা অবস্থায় ক্যাথেটার ব্যবহার করলে কি রোযা ভেঙ্গে যায়?
ক্যাথেটার ব্যবহার করলে রোযার ক্ষতি হয় না। সুতরাং রোযা অবস্থায় প্রয়োজন হলে তা ব্যবহার করতে পারবেন।
-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী সংখ্যা : ১০, ২/৪৫৪; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৯৭; আলমাকালাতুল ফিকহিয়্যাহ ২১৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩৬২
রমযান মাসে দোকানে বেচা-কেনার ব্যস্ততার কারণে নির্ধারিত সময়ে তারাবীর নামায...
রমযান মাসে দোকানে বেচা-কেনার ব্যস্ততার কারণে নির্ধারিত সময়ে তারাবীর নামায পড়ার জন্য মসজিদে যেতে পারি না। প্রায় সময় ইমাম সাহেব তারাবীর নামায কয়েক রাকাত পড়ার পর যাই। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমি ইশা এবং তারাবীর নামায কীভাবে আদায় করব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রথমে ইশার ফরয ও সুন্নত আদায়ের পর ইমাম সাহেবের সাথে তারাবীর নামাযে শরিক হবে। তারাবীর জামাত শেষে ইমাম সাহেবের সাথে বিতর নামাযও জামাতে পড়ে নিবেন। এরপর তারাবীর বাকি নামায আদায় করবেন।
উল্লেখ্য যে, রমযান মাস অধিক গুরুত্বপূণৃ ও ফযীলতপূর্ণ মাস এই মাসে ইবাদতের ছাওয়াব অনেক বেশি। তাই এই মাসে নামায ও জামাতের প্রতি আরো বেশি যত্নবান হওয়া উচিত এবং নির্ধারিত সময়ের আগে আগে মসজিদে চলে যাওয়া উচিত।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৭; শরহুল মুনইয়াহ ৪১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৭
গত রমযানে এক হাফেয সাহেবের পিছনে তারাবীহ নামায পড়ছিলাম। তিনি...
গত রমযানে এক হাফেয সাহেবের পিছনে তারাবীহ নামায পড়ছিলাম। তিনি এক রাকাতে সিজদার আয়াত পড়ে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করলেন। সিজদায়ে তিলাওয়াত থেকে উঠে ভুলে আবার সূরা ফাতিহা পড়ে আয়াতে সিজদার পর থেকে কিরাত শুরু করলেন। জানার বিষয় হল, সূরা ফাতিহা দুইবার পড়লে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
না, উক্ত কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। কারণ সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানোর পর ভুলে আবার সূরা ফাতিহা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। কিন্তু কেউ যদি সূরা মিলানোর আগেই পর পর দুবার সূরা ফাতিহা পড়ে তবে তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯১; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০
আমি প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার পর এক রমযান মাসে বিনা ওজরে ইচ্ছাকৃত...
আমি প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার পর এক রমযান মাসে বিনা ওজরে ইচ্ছাকৃত ৫টি রোযা ভেঙ্গে ফেলি। পরে আমি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করি এবং ঐ রোযাগুলোর কাযা করি। পরবর্তীতে জানতে পারি যে, ইচ্ছাকৃত রোযা ভাঙলে কাফফারা ওয়াজিব হয়। তাই হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন হল, আমাকে প্রতিটি রোযার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাফফারা দিতে হবে নাকি একটি কাফফারা দিলেই যথেষ্ট হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সবগুলো রোযার জন্য একটি কাফফারা দেওয়াই যথেষ্ট। কাফফারা হল, চন্দ্রমাস হিসেবে পূর্ণ দুই মাস কিংবা ধারাবাহিক ৬০ টি রোযা রাখা। রোযা রাখতে সক্ষম না হলে ৬০ জন ফকির-মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে। অথবা প্রত্যেককে এর মূল্য দিয়ে দিতে হবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৯৪
ইতিকাফের ফযীলত সম্পর্কিত নিম্নোক্ত হাদীসটি সহীহ কি না জানিয়ে বাধিত...
ইতিকাফের ফযীলত সম্পর্কিত নিম্নোক্ত হাদীসটি সহীহ কি না জানিয়ে বাধিত করবেন। হাদীসটি হল, যে ব্যক্তি রমযানের দশদিন ইতিকাফ করল সে যেন দুই হজ্ব ও দুই উমরাহ করল। একজন আলেম বলেছেন, এই বর্ণনাটি উৎসাহ দেওয়ার জন্য কেউ হয়ত বলেছেন এটি হাদীস নয়।
প্রশ্নোক্ত বর্ণনাটি ঠিক নয়। এটি একটি মুনকার বর্ণনা। এটি ইমাম তবারানী রাহ.-এর আলমুজামুল কাবীর গ্রন্থে (বর্ণনা নং ২৮৮৮) এবং ইমাম বায়হাকী রহা.-এর শুআবুল ঈমান গ্রন্থে (বর্ণনা নং ৩৯৬৬-৬৭) উলেখ আছে।
কিন্তু হাদীস বিশারদগণের নিকট বর্ণনাটি সনদের বিচারে মানোত্তীর্ণ নয়। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনে যাযান ও আনবাসা ইবনে আবদুর রহমান নামে দু’জন ব্যক্তি রয়েছে, যাদের সম্পর্কে জরহ-তাদীল শাস্ত্রের ইমামগণের বিভিন্ন আপত্তি আছে।
আলামা মুনাবী রাহ. উক্ত হাদীস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ফয়যুল কাদীর গ্রন্থে বলেছেন, উক্ত বর্ণনায় মুহাম্মাদ ইবনে যাযান নামে একজন রাবী আছেন, যিনি মাতরুক (পরিত্যাজ্য)। এছাড়া এতে আনবাসা ইবনে আবদুর রহমান রয়েছে, যাকে ইমাম বুখারী রাহ. মাতরুক বলেছেন। আর ইমাম যাহাবী রাহ. তাকে জাল বর্ণনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।
সুতরাং ইতিকাফের ফযীলত সম্পর্কিত প্রশ্নোক্ত বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এটি মানুষের মাঝে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে রমযানের শেষ দশকের ইতিকাফ অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ সুন্নত আমল। রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত। এক রমযানে কোনো কারণে তিনি ইতিকাফ করতে পারেননি। তাই পরবর্তী বছর তিনি বিশদিন ইতিকাফ করেছেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৬৮
তাই প্রশ্নোক্ত ফযীলতের বর্ণনাটি বিশুদ্ধ না হলেও ইতিকাফ যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ ইবাদত তা রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম-এর বাস্তব আমল দ্বারা সহজেই অনুমেয়।
আমি ইন্টারে পড়ি। কোনো কোনো রমযানে আমাদের পরীক্ষা হয়ে থাকে।...
আমি ইন্টারে পড়ি। কোনো কোনো রমযানে আমাদের পরীক্ষা হয়ে থাকে। আমার অনেক বন্ধুরা রোযা রাখে না। তাদের অভিভাবকরা নাকি বলে যে, পরীক্ষার সময় রোযা না রাখলে কিছু হয় না।
আমি জানতে চাই, বন্ধুদের অভিভাবকদের ঐ কথা ঠিক কি না। পরীক্ষার সময় রোযা না রাখার সুযোগ আছে কি? দয়া করে আলকাউসারে উত্তরটি ছাপলে আমাদের সকলের উপকার হবে। আল্লাহ আপনাদের কবুল করুন।
অভিভাবকদের ঐ কথা ঠিক নয়। প্রাপ্তবয়ষ্ক, সুস্থ ব্যক্তির উপর রমযানের রোযা ফরয। পরীক্ষার কারণে রোযা বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পরীক্ষার অজুহাতে রোযা না রাখলে ফরয ছেড়ে দেওয়ার গুনাহ হবে। তাই রমযানে পরীক্ষা হলে পূর্বে থেকেই পরীক্ষার জন্য প্রস্ত্ততি নিবে যেন রোযা রেখে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে না হয়।
উল্লেখ্য, রমযান মাস রোযা ও ইবাদত-বন্দেগীর মাস। তাই রোযা রেখে ছাত্ররা যেন ভারি পরীক্ষার চাপে না পড়ে সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও খেয়াল রাখা দরকার।
-সূরা বাকারা : ১৮৩
আমার নানা ও নানী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ইন্তিকাল করেন।...
আমার নানা ও নানী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ইন্তিকাল করেন। তাদের নামায ও রোযার কাফফারা বাবদ প্রায় ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা কাফফারা আসে। এখন তাদের সন্তানরা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, আমরা কাফফারা বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা সমমূল্যের এক খন্ড জমি মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দিব। আর সেই জমিটি আমরা আবাদ করে তার ফসল মাদরাসায় জমা দিব।
এখন প্রশ্ন হল, নামায-রোযার কাফফারা হিসেবে মাদরাসার নামে জমি ওয়াকফ করার দ্বারা কাফফারা আদায় সঠিক হবে কি না এবং সেই ওয়াকফকৃত জমি ওয়াকফকারীদের নিয়ন্ত্রনে রাখা সঠিক হবে কি না? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উল্লেখ্য যে, আমার নানা-নানী তাদের কাফফারা আদায়ের জন্য অসিয়ত করে যাননি।
কাফফারা বা ফিদয়া আদায়ের জন্য ফকীর-মিসকীনকে মালিক বানিয় দিতে হয়। কিন্তু যেহেতু উনারা কাফফারার জন্য অসিয়ত করে যাননি সেজন্য প্রশ্নোক্ত প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এতে ব্যয়কৃত অর্থ কাফফারা হিসেবে ধর্তব্য না হলেও মৃতদ্বয়ের জন্য সদকায়ে জারিয়া বিবেচিত হবে।
আর মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দিতে চাইলে তাতে মাদরাসার পূর্ণ কর্তৃত্ব ও ভোগদখলের পূর্ণ স্বাধীনতার সাথে দিয়ে দেওয়া উচিত।
উল্লেখ্য যে, ব্যয়কৃত অর্থ-সম্পদ যদি আপনার নানা-নানীর মীরাসের অংশ হয়ে থাকে তাহলে তা ব্যয় করার জন্য সকল ওয়ারিশদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি জরুরি এবং কোনো ওয়ারিশ নাবালেগ থাকলে তার অংশ থেকে কিছু নেওয়া যাবে না।
-রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; কিফায়াতুল মুফতী ৬/৩৮৯
মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর ছেহেনে রমযান মাসে দানশীল ব্যক্তিগণ...
মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর ছেহেনে রমযান মাসে দানশীল ব্যক্তিগণ রোযাদারদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ইফতারের ব্যবস্থা করে থাকেন। বিশাল-বিশাল দস্তরখান বিছানো হয়। তাতে রোযাদারদেরকে উন্মুক্ত ও ব্যাপক আমন্ত্রণ জানানো হয়। জানার বিষয় হল, যদি কেউ সেখানে সুন্নত ইতিকাফে বসেন তাহলে তার জন্য কি এসব ইফতার ছেড়ে ছেহেনের বাইরে একটু দূরে গিয়ে হোটেলে ইফতার করা জায়েয হবে?
ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদের ছেহেনের ইফতারিতে অংশগ্রহণ করা জরুরি নয়। ছেহেনের খাবার থাকা সত্ত্বেও ইতিকাফকারী চাইলে বাইরে হোটেলে গিয়ে ইফতার নিয়ে আসতে পারবে। এ কারণে তার ইতিকাফ নষ্ট হবে না বা ত্রুটিপূর্ণও হবে না।
উল্লেখ্য, ইতিকাফকারীর জন্য খাবার এনে দেওয়ার কোনো লোক থাকলে তখন খাবারের জন্য ইতিকাফকারী নিজে মসজিদের বাইরে যেতে পারবে না।
-রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২; আলবাহরু রায়েক ২/৩০৩
হস্তমৈথুনের কারণে রোযা নষ্ট হবে কি না? যদি রোযা নষ্ট...
হস্তমৈথুনের কারণে রোযা নষ্ট হবে কি না? যদি রোযা নষ্ট হয় তাহলে রমযানে কেউ এমনটি করলে উক্ত রোযার কাযা ও কাফফারা উভয়টি দেওয়া লাগবে নাকি শুধু কাযা করে নিলেই যথেষ্ট হবে?
হাত বা অন্য কোনো বস্ত্তর মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটালে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে এর কাযা আদায় করা জরুরি হবে। তবে কাফফারা আদায় করতে হবে না।
উল্লেখ্য, হস্তমৈথুন মারাত্মক গুনাহের কাজ। আর রোযা অবস্থায় এর ভয়াবহতা আরো বেশি। সর্বদা এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫০; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৩৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৫
আমি গত রমযানে আমাদের মহল্লার মসজিদে ইতিকাফ করার ইচ্ছা করি।...
আমি গত রমযানে আমাদের মহল্লার মসজিদে ইতিকাফ করার ইচ্ছা করি। কিন্তু সমস্যা হল মসজিদের কোনো ইস্তেঞ্জাখানা নেই। এ অবস্থায় বাসায় এসে জরুরত সারা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। তাই বাসা থেকে ইস্তেঞ্জা সেরে মসজিদে এসে অযু করি এবং এভাবে দশ দিন অতিবাহিত করি। জানতে চাই, এভাবে আমার ইতিকাফ কি আদায় হয়েছে?
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ইতিকাফ সহীহ হয়েছে। কেননা ইস্তেঞ্জার জরুরুতে মসজিদের বাইরে যাওয়া জায়েয। আর মসজিদের ইস্তেঞ্জাখানা না থাকলে এজন্য বাসা-বাড়িতে যাওয়াও জায়েয। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফরত অবস্থায় ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না।
-সহীহ বুখারী ১/২৭২; সহীহ মুসলিম ১/১৪২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২
এক মহিলা কোনো কারণবশত রমযানের একটি রোযা ভেঙ্গে ফেলেছিল। এখন...
এক মহিলা কোনো কারণবশত রমযানের একটি রোযা ভেঙ্গে ফেলেছিল। এখন সে এর কাফফারা আদায় করবে। কিন্তু মহিলাদের তো মাঝে বিরতির দিন থাকে। তখন তারা রোযা রাখতে পারে না। অথচ আমরা জানি, কাফফারার রোযা বিরতি না দিয়ে লাগাতার ষাট দিন রাখা জরুরি। এখন প্রশ্ন হল, ঐ মহিলা কীভাবে কাফফারার রোযা রাখবে?
কাফফারার রোযা আদায়ের মাঝে যদি হায়েয (মাসিক স্রাব) এসে যায় তাহলে পবিত্র হওয়ার পর কোনো দিন বাদ না দিয়ে লাগাতার ষাটটি রোযা পূর্ণ করবে। তাই কাফফারার রোযা শুরু করার পর থেকে শেষ পর্যন্ত হায়েযের দিনগুলো ছাড়া মাঝে অন্য কোনো দিন বিরতি না দিলে তার কাফফারার রোযা আদায় হয়ে যাবে।
-কিতাবুল আছল ২/১৬০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭
শাওয়াল মাসের ছয় রোযা রাখার নিয়ম কী? এগুলো এক সাথে...
শাওয়াল মাসের ছয় রোযা রাখার নিয়ম কী? এগুলো এক সাথে লাগাতার ছয় দিন রাখা জরুরি, না মাঝে বিরতি দিয়ে রাখা যাবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
শাওয়ালের ছয় রোযা ধারাবাহিকভাবে একত্রে রাখা যায়, আবার বিরতি দিয়েও রাখা যায়। যেভাবেই রাখা হোক তা আদায় হয়ে যাবে এবং নির্ধারিত ফযীলতও লাভ হবে।
-লাতাইফুল মাআরিফ ৪৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২১৫; আলমাজমূ ৬/৪২৬-৪২৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬২; ফাতহুল মুলহিম ৩/১৮৭; আলমুগনী ৪/৪৩৮
আমি ধুমপানে অভ্যস্ত। গত রমযান মাসে রোযা অবস্থায়ও যখন ধুমপান...
আমি ধুমপানে অভ্যস্ত। গত রমযান মাসে রোযা অবস্থায়ও যখন ধুমপান না করার কারণে অস্থিরতা অনুভব হয়েছে তখন একদিন সামান্য ধুমপান করেছি। এতে কি আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে?
হ্যাঁ, ঐ রোযা ভেঙ্গে গেছে। কেননা সামান্য পরিমাণ ধুমপান করলেও রোযা ভেঙ্গে যায়। আর স্বেচ্ছায় ধুমপান করার কারণে আপনার উপর ঐ রোযার কাযা এবং কাফফারা উভয়টি আদায় করা ওয়াজিব হয়েছে।
(দেখুন : আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৫০; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৮১
আমাদের মসজিদের মুয়াযযিন সাহেব প্রতি বছর ইতিকাফে বসেন। এবারও তার...
আমাদের মসজিদের মুয়াযযিন সাহেব প্রতি বছর ইতিকাফে বসেন। এবারও তার ইতিকাফে বসার ইচ্ছা আছে। আমাদের মসজিদের বাইরে মুয়াযযিন সাহেবের কামরা। সে কামরায় মসজিদের মাইক আছে। আযান দিলে সেখানে গিয়ে দিতে হবে। প্রশ্ন হল, ইতিকাফ অবস্থায় মুয়াযযিন সাহেব আযান দেওয়ার জন্য তার কামরায় যেতে পারবে কি?
হ্যাঁ, আযান দেওয়ার জন্য ইতিকাফকারী মুয়াযযিনের কামরায় যাওয়া জায়েয। এ কারণে ইতিকাফ নষ্ট হবে না।
(দেখুন : আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮০; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩)
রোযা অবস্থায় কেউ যদি টিকা বা ইঞ্জেকশন নেয় তাহলে এতে...
রোযা অবস্থায় কেউ যদি টিকা বা ইঞ্জেকশন নেয় তাহলে এতে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
টিকা বা ইঞ্জেকশন নেওয়ার কারণে রোযা ভাঙ্গে না। তবে অসুস্থতা ছাড়া গ্লুকোজ জাতীয় ইঞ্জেকশন (যা খাবারের কাজ দেয়) নেওয়া মাকরূহ তাহরীমী।
(দেখুন : আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫; মাজাল্লা মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ১০, ২/৯৪)
এক ব্যক্তি গত রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফে বসে। কয়েকদিন পর...
এক ব্যক্তি গত রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফে বসে। কয়েকদিন পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে ইতিকাফ ছেড়ে বাড়িতে চলে আসতে হয়েছে। যার কারণে পরবর্তী দিনগুলোতে ইতিকাফ করা সম্ভব হয়নি। জানার বিষয় হল, এখন তার কী করণীয়? ইতিকাফটি তাকে কাযা করতে হবে কি না? কাযা করতে হলে সামনের রমযানে বা অন্য কোন সময় কাযা করতে পারবে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তিকে একদিনের ইতিকাফ কাযা করতে হবে। আর তা সামনের রমযানেও কাযা করতে পারবে। এজন্য সে কোন একদিন সূর্যাস্তের পর থেকে পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করবে। অবশ্য রমযানের বাইরে ইতিকাফটি কাযা করতে চাইলে দিনের বেলা নফল রোযাও রাখতে হবে।
(দেখুন : রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৪-৪৪৫; আহকামে ইতিকাফ ৫০)
রোযা অবস্থায় গোসল করতে গিয়ে আমার কানে পানি ঢুকে গেছে।...
রোযা অবস্থায় গোসল করতে গিয়ে আমার কানে পানি ঢুকে গেছে। এতে আমার রোযার কোন সমস্যা হয়েছে কি? দয়া করে জানাবেন।
রোযা অবস্থায় কানের ভেতর পানি, তেল ইত্যাদি গেলে রোযার ক্ষতি হয় না। তাই আপনার ঐ রোযা আদায় হয়ে গেছে।
(দেখুন : আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৮-২৭৯); ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৯৭; যাবিতুল মুফাততিরাত, পৃ. ৫৮
এক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে চোখে ড্রপ ব্যবহার করে এ সময়...
এক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে চোখে ড্রপ ব্যবহার করে এ সময় ওষুধের তিক্ততা গলায় অনুভব করে। প্রশ্ন হল, রোযা অবস্থায় এ ধরনের ড্রপ ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে কি? দয়া করে জানাবেন।
রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করার কারণে গলায় ওষুধের তিক্ততা অনুভূত হলেও রোযা নষ্ট হয় না। সুতরাং রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই।
(দেখুন : ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৪
নাবালেগ ছেলে মেয়ে যদি রমযানের রোযা রেখে তা ভেঙ্গে ফেলে...
নাবালেগ ছেলে মেয়ে যদি রমযানের রোযা রেখে তা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে কাযা করতে হবে কি না? জানালে কৃতার্থ হব।
না, নাবালেগ ছেলে মেয়ের উপর যেহেতু রোযা ফরয নয় তাই তারা রমযানেও কোন রোযা রেখে ভেঙ্গে ফেললে তা কাযা করতে হবে না।
-জামেউ আহকামিস সীগার ১/৫৯; হেদায়া ১/২২৩; আলইনায়াহ ২/২৮৩
গত রমযানে একদিন আমি অসুস্থ ছিলাম। রোযা অবস্থায় হঠাৎ আমার...
গত রমযানে একদিন আমি অসুস্থ ছিলাম। রোযা অবস্থায় হঠাৎ আমার বমি এসে যায়। তখন এক লোক বলল, আপনার রোযা ভেঙ্গে গেছে। তার কথা শুনে আমি সন্দিহান হয়ে পড়ি। আসলেই কি আমার ঐ রোযাটি ভেঙ্গে গেছে?
না, আপনার ঐ রোযা ভাঙ্গেনি। কেননা রোযা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে রোযা নষ্ট হয় না।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২১৫; কিতাবুল আসল ২/১৯২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৬
গত রমযানের দশ তারিখ দুপুরে আমার ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। বাধ্য...
গত রমযানের দশ তারিখ দুপুরে আমার ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে বিকেলে ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন গ্রহণ করি। জানতে চাই, এতে কি আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে?
না, এ কারণে আপনার রোযা ভাঙ্গেনি।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫; মাজাল্লা মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা : ১০, ২/৯৪; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩
রমযানের প্রথম কয়দিন আমার খুবই পিপাসা লাগে। তখন আমি ঘন...
রমযানের প্রথম কয়দিন আমার খুবই পিপাসা লাগে। তখন আমি ঘন ঘন কুলি করি। ফলে কষ্ট কিছুটা কমে। আমার জন্য তা করা কি ঠিক?
রোযার কারণে পিপাসায় কষ্ট হলে সওয়াবও বেশি হবে। এ সময় বেশি অস্থিরতা প্রকাশ করা ঠিক নয়। তদ্রূপ রোযা অবস্থায় ঘন ঘন কুলি করা বা বারবার মুখে পানি দেওয়াও অনুচিত। অবশ্য এ কারণে গলাতে পানি না গেলে রোযা নষ্ট হবে না।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৩৮; সুনানে আবু দাউদ ৩/১৫৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/২৪১; সুনানে আবু দাউদ ৩/১৫২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৯৫; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া ৯৯
আমি নরওয়ের প্রবাসী। আমি যে অঞ্চলে থাকি সেখানের শীত ও...
আমি নরওয়ের প্রবাসী। আমি যে অঞ্চলে থাকি সেখানের শীত ও গ্রীষ্মে টানা দু মাস রাত ও দু মাস দিন থাকে। তাই জানার বিষয় হল, রমযানে কীভাবে রোযা রাখব?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের নিকটতম পার্শ্ববর্তী যেদেশে চবিবশ ঘণ্টা হিসাবে স্বাভাবিক নিয়মে দিন রাত হয় সে দেশের সময়সূচি অনুযায়ী নামায রোযা আদায় করবেন।
-রদ্দুল মুহতার ১/৩৬৬; তুহফাতুল মুহতাজ ২/১৯; আলমাজমূ ৩/৪৩; হাশিয়াতুশ শারওয়ানী ২/১৯; মাজমুআতুল ফাতাওয়াশ শারঈয়াহ ১৪/১০৩; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/১৫২
জনৈক হাফেয সাহেব তারাবীর নামাযে সিজদার আয়াত তিলাওয়াতের পর তখনই...
জনৈক হাফেয সাহেব তারাবীর নামাযে সিজদার আয়াত তিলাওয়াতের পর তখনই সিজদা আদায় করে। কিন্তু সিজদা থেকে উঠার পর ভুলে ঐ সিজদার আয়াত আবারও তিলাওয়াত করে। এখন এর জন্য কি পুনরায় সিজদা করা ওয়াজিব হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
না, এক্ষেত্রে পুনরায় সিজদায়ে তিলাওয়াত করতে হবে না। কেননা নামাযের কোন রাকাতে একটি সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা করার পর পরবর্তীতে ঐ আয়াত পুনরায় পড়লেও নতুন করে সিজদা ওয়াজিব হয় না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৩/৩৮৫; কিতাবুল আসল ১/৩১২; আলজামিউল কাবীর ১০; শরহুল মুনইয়া ৫০৩; রদ্দুল মুহতার ২/১১৭
আমি শুনেছি, রোযা অবস্থায় আগর বাতির ধোঁয়া নাকে গেলে রোযা...
আমি শুনেছি, রোযা অবস্থায় আগর বাতির ধোঁয়া নাকে গেলে রোযা ভেঙ্গে যায়। এ কথা কি সঠিক?
না, ঐ কথা ঠিক নয়। রোযা অবস্থায় নাকে বা মুখে ধোঁয়া চলে গেলে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। তবে ইচ্ছাকৃত আগর বাতি কিংবা অন্য কিছুর ধোঁয়া কেউ নাক বা মুখ দিয়ে টেনে নিলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। অবশ্য আগর বাতি, কয়েল ইত্যাদির শুধু ঘ্রাণ নিলে কোনো অবস্থাতেই রোযা ভাঙবে না।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫; মারাকিল ফালাহ ৩৬১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৫০; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬১
চক্ষুপীড়ার কারণে রোযা থাকা সত্ত্বেও চোখে ঔষুধ ব্যবহার করেছি। জানার...
চক্ষুপীড়ার কারণে রোযা থাকা সত্ত্বেও চোখে ঔষুধ ব্যবহার করেছি। জানার বিষয় হল, এতে আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে কি?
না। এ কারণে আপনার রোযা ভাঙ্গেনি। কারণ চোখে ঔষুধ ব্যবহার করলে রোযা নষ্ট হয় না। এমনকি চোখে ব্যবহৃত ওষধের স্বাদ বা তিক্ততা গলায় অনুভূত হলেও রোযার ক্ষতি হবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩
প্রশ্ন : আমি ছোটবেলা থেকেই প্রতিবছর রমযানের সবকটি রোযা রেখে...
প্রশ্ন : আমি ছোটবেলা থেকেই প্রতিবছর রমযানের সবকটি রোযা রেখে আসছি। কিন্তু গতবছর বন্ধুদের তালে পড়ে দুদিন রোযা অবস্থায় খেয়ে ফেলি। এর জন্য আমি খুবই অনুতপ্ত। এখন আমাকে এ দুটির পরিবর্তে কয়টি রোযা রাখতে হবে? এবং কীভাবে রাখতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে দুটি রোযা কাযা করতে হবে এবং উভয়ের জন্য একটি কাফফারা আদায় করতে হবে। কাফফারার পদ্ধতি হল, রমযান ছাড়া লাগাতার পূর্ণ দু’ মাস রোযা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে চান্দ্র মাসের প্রথম তারিখ থেকে রোযা রাখলে কোনো মাস ত্রিশ দিনের কম হলেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। আর এ দু’ মাসের মধ্যে ইচ্ছাকৃত কিংবা ওজরবশত কোনো রোযা ভেঙ্গে ফেললে কাফফারা আদায় হবে না। এক্ষেত্রে পুনরায় নতুন করে দু’ মাস রোযা রাখতে হবে। আর যদি কারো লাগাতার দু মাস রোযা রাখার শক্তি-সামর্থ্য না থাকে তাহলে ষাটজন মিসকীনকে দু’ বেলা খাওয়াবে অথবা তার মূল্য প্রদান করবে।
প্রকাশ থাকে যে, রমযানুল মুবারকে ইচ্ছাকৃত রোযা ভাঙ্গা অনেক বড় গুনাহ। এর জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে
ইস্তিগফার করা আবশ্যক।
হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ওজর ও অসুস্থতা ছাড়া ইচ্ছাকৃত রমযানের কোনো রোযা ভেঙ্গে ফেলে সে আজীবন রোযা রাখলেও তার সমতুল্য হবে না।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১০০৮১; সহীহ বুখারী ১/২৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৩, ৩/৪৭৬; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ৩০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ৩৬৬
শাওয়াল মাসের ছয় রোযার নিয়ম কী? এগুলো একসাথে লাগাতার ছয়...
শাওয়াল মাসের ছয় রোযার নিয়ম কী? এগুলো একসাথে লাগাতার ছয় দিনে রাখা হবে, না মাঝে বিরতি দিয়ে রাখা যাবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
শাওয়ালের ছয় রোযা একত্রে ধারাবাহিকভাবেও রাখা যায়, আবার মাঝে বিরতি দিয়েও রাখা যায়। যেভাবেই রাখা হোক নির্ধারিত ফযীলত পাওয়া যাবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৬৪; মুসনাদে আহমদ ৩৭/৯৪; লাতায়েফুল মাআরিফ ৪৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬২; ফাতহুল মুলহিম ৩/১৮৭; আলইনসাফ ৩/৩৪৩
ক) এ বিভাগের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, খতম তারাবীহর বিনিময়ে টাকা...
ক) এ বিভাগের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, খতম তারাবীহর বিনিময়ে টাকা দেয়া-নেয়া নাজায়েয। কোনো কোনো মসজিদে এশার নামায ও বিতর নামায আদায় করার শর্ত রেখে হাফেয সাহেবগণকে টাকা দেওয়া হয় এবং এ পদ্ধতিকে জায়েয মনে করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে হাদিয়া/টাকা দেওয়া জায়েয হবে কি? আর যে সমস্ত মসজিদে সূরা তারাবীহ হয় সে সমস্ত মসজিদেও তারাবীর হাদিয়া স্বরূপ টাকা পয়সা কালেকশন করা এবং টাকা দেওয়া হলে তা কি জায়েয হবে?
খ) মসজিদে ঘড়ি থাকলে এবং সময়সূচিতে জামাতের সময় নির্ধারিত থাকলে ঐ সময় অনুযায়ী নামায না পড়িয়ে ইমাম ২/৩ মিনিট দেরিতে নামায শুরু করার অথবা ইমামের জন্য ২/৫ মিনিট অপেক্ষা করার সুযোগ কি শরীয়তে আছে? একজন ইমাম সাহেব বলেছেন, ইমামের জন্য ৩/৫ মিনিট অপেক্ষা করার নিয়ম রয়েছে। কথাটি কি ঠিক?
ক) তারাবীহর হাফেয সাহেবদেরকে দিয়ে ইশা ও বিতর পড়িয়ে হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া লেনদেনের একটি অপকৌশলমাত্র। একজন লোক শুধু এক ওয়াক্ত নামায পড়ালে তাকে এতগুলো টাকা বেতন দেওয়া হয় না-এ কথা সবাই বুঝে। এ ধরনের হীলা-বাহানার পথ পরিহার করাই কর্তব্য।-ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২২; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৬৪
আর আমাদের মতে সূরা তারাবীহর ইমামতির ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। সুতরাং এর জন্যও পৃথক কোনো হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া যাবে না।
খ) জামাতের নির্ধারিত সময়ের রেয়ায়েত করা ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মুসল্লী সকলের দায়িত্ব। বিশেষ কোনো ওজর ছাড়া এর ব্যত্যয় ঘটানো এক ধরনের দায়িত্বে অবহেলার শামিল। তাই এ ব্যাপারে সকলের সচেতন থাকা উচিত। অবশ্য কোনো ইমাম সাহেব কখনো একটু বিলম্বে আসলে অথবা দেরিতে নামায শুরু করলে মুসল্লীগণের উচিত তা সহজে মেনে নেওয়া। এ নিয়ে ইমামের সাথে তর্কে লিপ্ত হওয়া মুসল্লীর জন্য অনাধিকার চর্চা।
আমার ছোট মামার ছেলে গত বছর হেফয শেষ করেছে। বর্তমানে...
আমার ছোট মামার ছেলে গত বছর হেফয শেষ করেছে। বর্তমানে তার বয়স এগার বছর। গত রমযানে সে গ্রামের মসজিদে তারাবীহ পড়িয়েছে। সে বাড়িতে আসলে তাকে কেউ কেউ ওয়াক্তিয়া নামাযেও ইমামতি করতে বলে। কিন্তু আমি বাধা দেই। তাকে ইমাম বানানো যাবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
নাবালেগের ইমামতি সহীহ নয়। তারাবীহ এবং ওয়াক্তিয়া কোনো নামাযেই নাবালেগকে ইমাম বানানো যাবে না। হযরত আতা রাহ. এবং ওমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ইমামতি করবে না। ফরয নামাযেও নয় এবং অন্য নামাযেও নয়।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৫২৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৫৯; হেদায়া ১/১২৪; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭৭; আততাজরীদ ২/৮৫৮
এক ব্যক্তি রমযানুল মুবারকের শেষ দশকে মহল্লার মসজিদে ইতিকাফে বসেছে।...
এক ব্যক্তি রমযানুল মুবারকের শেষ দশকে মহল্লার মসজিদে ইতিকাফে বসেছে। তার খাবার দাবারের ব্যবস্থা তার নিজ ঘর থেকেই হয়। এছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। আর মসজিদে তার খাবার এনে দেওয়ার মতোও কেউ নেই। এমতাবস্থায় সে কি সাহরী ও ইফতার দু’ বেলা খাবার তার ঘরে গিয়ে খেয়ে আসতে পারবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু ইতিকাফকারী লোকটির জন্য খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো কেউ নেই তাই সে খাবার আনার জন্য ঘরে যেতে পারবে। কিন্তু ঘরে বসে খাবার খাবে না; বরং সঙ্গে করে নিয়ে এসে মসজিদে বসে খাবে। আর খাবারের জন্য ঘরে গিয়ে বিলম্ব করতে পারবে না; বরং খানা নিয়ে তৎক্ষণাত ফিরে আসবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী ৩৮৪; ইমদাদুল আহকাম ২/১৪৯
আমি রোযা অবস্থায় অযু করে কিংবা কুলি করে যখন মুখের...
আমি রোযা অবস্থায় অযু করে কিংবা কুলি করে যখন মুখের পানি ফেলে দিই তখন কয়েকবার থুথু ফেলি। যেন মুখের পানি পুরোপুরি বের হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও আমার মনে হয় মুখে পানি রয়ে গেছে। তখন আবারও কয়েকবার থুথু ফেলি। কখনো আবার তা করি না।
প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী? কুলি করার পর কতবার থুথু ফেলতে হবে?
রোযা অবস্থায় কুলি করার পর মুখের পানি ফেলে দেওয়াই যথেষ্ট। থুথু ফেলতে হবে না। কুলির পানি ফেলে দেওয়ার পর মুখে যে ভেজা ভাব থাকে এতে রোযার কোনো ক্ষতি হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩; মারাকিল ফালাহ ৩৬১
জনৈক মহিলা অন্তঃসত্তা হওয়ার কারণে রোযা রাখতে কষ্ট হয় এবং...
জনৈক মহিলা অন্তঃসত্তা হওয়ার কারণে রোযা রাখতে কষ্ট হয় এবং ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে কি?
রোযা রাখার কারণে যদি মহিলাটি স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কা হয় তাহলে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তবে পরবর্তীতে এ রোযাগুলোর কাযা করে নিতে হবে। কাফফারা দেওয়া লাগবে না।
-সূরা বাকারা : ১৮৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৯০৪৭; কিতাবুল আছল ২/২৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২২
আমার পিতা অসুস্থতা ও বার্ধক্যের কারণে দীর্ঘ সময় নামাযে দাঁড়িয়ে...
আমার পিতা অসুস্থতা ও বার্ধক্যের কারণে দীর্ঘ সময় নামাযে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। তাই রমযানে ইশা ও তারাবীহ আদায় করার সময় মাঝেমধ্যে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে নামায পড়েছেন। এতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
আপনার পিতার ঐ নামাযগুলো সহীহ হয়েছে। অসুস্থতা বা বার্ধক্যের কারণে স্বাভাবিকভাবে নামাযে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর হলে দেয়ালে হেলান দিয়ে কিংবা লাঠি বা অন্য কিছুর উপর ভর করে দাঁড়ানো জায়েয আছে।
উম্মে কায়েস বিনতে মিহসান রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষ বয়সে যখন তাঁর শরীর মুবারক ভারী হয়ে যায় তখন তিনি নামাযের স্থানে একটি লাঠি রাখতেন যার উপর ভর দিয়ে তিনি নামায আদায় করতেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৯৪৫
বিশিষ্ট তাবেঈ ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, কোন ব্যক্তির জন্য দেয়ালে হেলান দিয়ে নামায পড়া মাকরূহ; তবে ওজর হলে পারবে।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/২৭৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৪২৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১১০
রমযানের কাযা রোযা এবং শাওয়ালের ছয় রোযা একত্রে রাখলে উভয়টি...
রমযানের কাযা রোযা এবং শাওয়ালের ছয় রোযা একত্রে রাখলে উভয়টি আদায় হবে কি? এবং কাযা ও নফল রোযার সওয়াব পাওয়া যাবে কি?
অনুরূপভাবে মাগরিবের পরের দুই রাকাত সুন্নত আদায়ের সময় আওয়াবিনের দুই রাকাত নিয়ত করলে উভয় নামাযের সওয়াব হবে কি? দলিলসহ জানতে চাই।
রযমানের কাযা রোযা এবং শাওয়ালের ছয় রোযা একত্রে নিয়ত করলে শুধু রমযানের কাযা রোযা আদায় হবে। শাওয়ালের ছয় রোযা আদায় হবে না। এবং ছয় রোযার সওয়াবও পাওয়া যাবে না। শাওয়ালের ছয় রোযা রাখতে হলে পৃথকভাবে শুধু এর নিয়তে রোযা রাখতে হবে।
আর মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নতের সাথে আওয়াবিনের নিয়ত করলে সুন্নতের পাশাপাশি আওয়াবিনেরও সওয়াব পাওয়ার কথা কোনো কোনো আলেম বলেছেন। তবে এমন না করে পৃথকভাবে পড়ে নেওয়াই ভালো।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৪০, ২/১৩; ফাতহুল কাদীর ২/২৪৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০১
আমাদের মসজিদের মুয়াযযিন সাহেব প্রতি বছর ইতিকাফে বসেন। এবারও তার...
আমাদের মসজিদের মুয়াযযিন সাহেব প্রতি বছর ইতিকাফে বসেন। এবারও তার ইতিকাফে বসার ইচ্ছা আছে। আমাদের মসজিদের বাইরে মুয়াযযিন সাহেবের কামরা। সে কামরায় মসজিদের মাইক আছে। আযান দিলে সেখানে গিয়ে দিতে হবে। প্রশ্ন হল, ইতিকাফ অবস্থায় মুয়াযযিন সাহেব আযান দেওয়ার জন্য তার কামরায় যেতে পারবে কি?
হ্যাঁ, আযান দেওয়ার জন্য মুয়াযযিনের কামরায় যাওয়া জায়েয। এ কারণে ইতিকাফ নষ্ট হবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮০; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩
রোযা অবস্থায় কাউকে যদি টীকা বা ইঞ্জকশন দেওয়া হয় তাহলে...
রোযা অবস্থায় কাউকে যদি টীকা বা ইঞ্জকশন দেওয়া হয় তাহলে এতে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
টিকা বা ইঞ্জেকশন-এর কারণে রোযা ভাঙ্গে না। তবে একান্ত ওজর ছাড়া গ্লুকোজ জাতীয় ইঞ্জেকশন (যা খাবারের কাজ দেয়) নেওয়া মাকরূহ তাহরিমি।
এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছিল। তিন দিন পর...
এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছিল। তিন দিন পর তিনি অযু ইস্তেঞ্জার প্রয়োজন ছাড়া শুধু সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হন এবং মসজিদের অযুখানায় গোসল করেন। জানার বিষয় হল, ইতিকাফ অবস্থায় সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয আছে কি না? বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হবে কি না?
রমযান মাসের শেষ দশকের ইতিকাফ অবস্থায় সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নয়। বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়ার কারণে তার সুন্নত ইতিকাফ নষ্ট হয়ে গেছে। যেদিন গোসলের জন্য বের হয়েছে ঐ দিনের ইতিকাফ কাযা করে নেওয়া জরুরি। আর এই ইতিকাফটি নফল ইতিকাফ হিসাবে গন্য হবে।
-মারাকিল ফালাহ ৩৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২
আমি মাইগ্রেনে আক্রান্ত। গত রমযানে একদিন হঠৎ প্রচন্ড মাথা ব্যথা...
আমি মাইগ্রেনে আক্রান্ত। গত রমযানে একদিন হঠৎ প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হলে আমার প্রচুর পরিমাণে বমি হয়। তারপর একজন (মাওলানা) সাহেবকে মাসআলা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, মুখ ভরে বমি হওয়ার কারণে আপনার রোযা ভেঙ্গে গেছে। মাওলানা সাহেবের উক্ত কথা কি ঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ঐ কথা ঠিক নয়। অনিচ্ছাকৃত মুখভরে বমি হলেও রোযা ভাঙ্গে না। অবশ্য ইচ্ছাকৃত মুখভরে বমি করলে রোযা ভেঙ্গে যায়। হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোযা অবস্থায় (অনিচ্ছাকৃত) বমি হলে কাযা করতে হয় না। আর ইচ্ছাকৃত বমি করলে সে যেন তা কাযা করে নেয়।
-মুসনাদে আহমদ ২/৪৯৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৩৭৩; কিতাবুল আছল ২/৩১০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪১; তুহফাতুল ফুকাহা ১/৩৫৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩২৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৪
আমি একদিন ঘুম থেকে দেরিতে উঠি এবং তখনো সাহরীর সময়...
আমি একদিন ঘুম থেকে দেরিতে উঠি এবং তখনো সাহরীর সময় বাকি আছে ধারণা করে সাহরী খেতে থাকি। খাওয়া শেষে জানতে পারি তখন সুবহে সাদিক হয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, উপরোক্ত কারণে আমার রোযা সহীহ হবে কি না? না হলে এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় আপনার রোযাটি ভেঙ্গে গেছে, তা সহীহ হয়নি। তাই আপনাকে রোযাটির কাযা আদায় করে নিতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না।
উল্লেখ্য যে, রমযানের কোন রোযা নষ্ট হয়ে গেলেও নিয়ম হল, ঐ দিন ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত রোযাদারের ন্যায় কাটাবে। বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে, তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন, যে ব্যক্তি এখনো রাত্র বাকি আছে ভেবে সাহরী খেতে থাকে, অতপর স্পষ্ট হয় যে, তখন সুবহে সাদিক হয়ে গেছে, সে যেন তার রোযাটিকে পূর্ণ করে (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/১৪৯-১৫০, হাদীস : ৯১৩২) এবং হযরত সায়ীদ ইবনে যুবাইর রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যদি কেউ সুবহে সাদিক হওয়ার পর খানা খেয়ে ফেলে তখন সে যেন ঐ দিন পানাহার থেকে বিরত থাকে এবং অন্য একদিন একটি রোযা কাযা করে নেয়।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯১৩৪; সুনানে বায়হাকী ৪/২১৬; কিতাবুল আসল ২/১৮৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৫
গত রমযানে আমি একদিন অযু করছিলাম। অসতর্কতাবশত সামান্য পরিমাণ পানি...
গত রমযানে আমি একদিন অযু করছিলাম। অসতর্কতাবশত সামান্য পরিমাণ পানি পেটে চলে যায়। প্রশ্ন হল, এতে আমার রোযার কি কোনো ক্ষতি হয়েছে? এবং কাযা বা কাফফারা কি আদায় করতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী পানি পেটে চলে যাওয়ায় ঐ রোযাটি ভেঙ্গে গেছে। তাই আপনাকে ঐ রোযার কাযা আদায় করতে হবে। তবে কাফফারা লাগবে না।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/২৬০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১
আমি একজন শ্বাসকষ্টের রোগী। শীত-গ্রীষ্ম সারা বছর আমাকে ইনহেলার ব্যবহার...
আমি একজন শ্বাসকষ্টের রোগী। শীত-গ্রীষ্ম সারা বছর আমাকে ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। রাতে এবং দিনে মোট চার বার ইনহেলার নিতে হয়। তাই জানতে চাই, ইনহেলার নেওয়ার দ্বারা রোযার কোনো ক্ষতি হয় কি না? যদি রোযা ভেঙ্গে যায় তাহলে আমার কী করণীয়? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যায়। তাই সাহরীর শেষ সময় এবং ইফতারের প্রথম সময় ইনহেলার ব্যবহার করলে যদি তেমন অসুবিধা না হয় তবে রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। কিন্তু অসুস্থতা বেশি হওয়ার কারণে যদি দিনেও ব্যবহার করা জরুরি হয় তাহলে তখন ব্যবহার করতে পারবে। সেক্ষেত্রে করণীয় হল :
১. উক্ত ওজরে দিনের বেলা ইনহেলার করলেও অন্যান্য পানাহার থেকে বিরত থাকবে।
২. পরবর্তীতে রোগ ভালো হলে এর কাযা করে নিবে।
৩. আর ওজর যদি আজীবন থাকে তাহলে ফিদয়া আদায় করবে।
-সূরা বাকারা (২) : ১৮৪; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬৬; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; মাজাল্লা মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা : ১০, ২/৩১-৬৫
আমি লোকমুখে শুনেছি যে, রোযা অবস্থায় যদি শরীর থেকে রক্ত...
আমি লোকমুখে শুনেছি যে, রোযা অবস্থায় যদি শরীর থেকে রক্ত বের হয় তাহলে রোযা হালকা হয়ে যায়। এ কথা কি সঠিক? আর সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বের করলে রোযা ভেঙ্গে যায় কি না?
শরীর থেকে রক্ত বের হলে কিংবা সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বের করলে রোযা ভাঙ্গে না। তবে ইচ্ছা করে এ পরিমাণ রক্ত বের করা ঠিক নয়, যার কারণে রোযা রাখার শক্তি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়। বা রোযা রাখা বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯৩৮, ১৯৪০; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৩৬৪; বযলুল মাজহূদ ১১/১৭৭; ফতহুল বারী ৪/২০৬
খতম তারাবীর ইমামতি করে বিনিময় বা হাদিয়া নেওয়া জায়েয় কি...
খতম তারাবীর ইমামতি করে বিনিময় বা হাদিয়া নেওয়া জায়েয় কি না? এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন দিলে জায়েয হবে কি না? কেউ কেউ বলেন, ফরয নামাযের ইমামতির বিনিময় গ্রহণ যখন জায়েয তাই খতম তারাবীর বিনিময় গ্রহণও জায়েয হবে। এছাড়া হাফেয সাহেবকে যদি দু’ এক ওয়াক্ত ফরয নামাযের দায়িত্ব দেওয়া হয় তবে তো নাজায়েয হওয়ার প্রশ্নই থাকে না। তাদের একথা ঠিক কি না? ইমামতির হীলা হোক বা অন্য কোনো উপায়ে তারাবীর বিনিময় বৈধ হবে কি না? দলিল-প্রমাণসহ বিস্তারিত জানতে চাই।
খতম তারাবীর বিনিময় দেওয়া-নেওয়া দুটোই নাজায়েয। হাদিয়ার নামে দিলেও তা জায়েয হবে না। এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন হিসেবে দিলেও জায়েয নয়। কারণ এক্ষেত্রেও প্রদেয় বেতন তারাবীহ এবং খতমের বিনিময় হওয়া স্বীকৃত। মোটকথা, খতম তারাবীর বিনিময় গ্রহণের জন্য কোনো হীলা অবলম্বন করলেও তা জায়েয হবে না। কারণ খতম তারাবী খালেস একটি ইবাদত, যা নামায-রোযার মতো ইবাদতে মাকসূদার অন্তর্ভুক্ত। আর এ ধরনের ইবাদতের বিনিময় বা বেতন দেওয়া-নেওয়া উম্মতে মুসলিমার ঐক্যমতের ভিত্তিতে নাজায়েয। এতে না কোনো মাযহাবের মতপার্থক্য আছে, না পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ফকীহগণের মাঝে কোনো মতভেদ আছে।
ইমামতির বেতন ঠিক করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী ফকীহগণের দৃষ্টিতে জায়েয। কিন্তু খতম তারাবীর বিনিময়টা ইমামতির জন্য হয় না। বরং তা মূলত কুরআন খতমের বিনিময়ে হয়ে থাকে। আর তেলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা সকল ফকীহের নিকট হারাম। অধিকন্তু পরবর্তী ফকীহগণ যে ইমামতির বেতন জায়েয বলেছেন সেটা হল ফরয নামাযের ইমামতি। সুন্নত নামাযের ইমামতি এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
আর হাফেযদের দেওয়া বিনিময়কে জায়েয করার জন্য এই হীলা অবলম্বন করা যে, শুধু রমযান মাসের জন্য তার উপর দু এক ওয়াক্ত নামাযের ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া হবে-এটা একটা বাহানামাত্র। যা পরিহার করা জরুরি। কারণ এই হীলার অর্থ হল যে, এ বিনিময়টা তাকে ফরয নামাযের ইমামতির জন্য দেওয়া হচ্ছে। আর খতম তারাবী সে বিনিময়হীনভাবেই করে দিচ্ছে। কিন্তু নিজের মনকে একটু প্রশ্ন করে দেখুন, যদি ওই হাফেয সাহেব তার দায়িত্বে অর্পিত ফরয নামাযের ইমামতি যথাযথ গুরুত্বের সাথেই আদায় করেন, কিন্তু খতম তারাবীর ইমামতি না করেন তবে কি তাকে ওই বিনিময় দেওয়া হত? এ কথা সুস্পষ্ট যে, কখনো তা দেওয়া হত না। বোঝা গেল, বিনিময়টা মূলত খতম তারাবীর, ফরযের ইমামতির নয়।
এজন্যই আকাবিরদের অনেকে এই হীলা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর দলিলের ভিত্তিতেও তাঁদের ফতওয়াই সহীহ। দেখুন : ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২২; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৬৪
এ বিষয়ে কিছু হাদীস আছারের অনুবাদ ও ফিকহের কিতাবের উদ্ধৃতি পেশ করা হল।
১. আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন পড়। তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না। এর প্রতি বিরূপ হয়ো না। কুরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না।-মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৮, হাদীস : ১৫৫২৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫/২৪০
২. ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পড় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা কর। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে।-মুসনাদে আহমদ ৪/৪৩৭, হাদীস : ১৯৯১৭
৩. আবদুল্লাহ ইবনে মা’কিল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমযানে লোকদের নিয়ে তারাবীহ পড়লেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ রাহ. তার কাছে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া এবং দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন যে, আমরা কুরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫/২৩৭, হাদীস : ৭৮২১ আরো দেখুন : ফাতাওয়া শামী ৬/৫৭; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামীদিয়া ২/১৩৭-১৩৮; আলইখতিয়ার লিতালীল মুখতার ২/৬২; শিফাউল আলীল ওয়া বাল্লুল গালীল (মাজমুআ রাসায়েল ইবনে আবেদীন) ১/১৫৪-১৫৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩১৫-৩১৯; রাফেউল ইশকালাত আনহুমাতিল ইস্তিজার আলাত্তাআত, মুফতীয়ে আযম হযরত মাওলানা মুফতী ফয়যুল্লাহ রাহ.
আমি রোযা অবস্থায় মিসওয়াক করছিলাম। হঠাৎ দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত...
আমি রোযা অবস্থায় মিসওয়াক করছিলাম। হঠাৎ দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়ে থুথুর সাথে পেটে চলে যায়। এতে কি আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গলায় যদি রক্তের স্বাদ অনুভূত হয় কিংবা রক্ত যদি থুথুর সমপরিমাণ বা বেশি হয়েথাকে তাহলে তা গিলে ফেলার দ্বারা রোযাটি ভেঙ্গে গেছে।
এক্ষেত্রে ঐ রোযা কাযা করতে হবে। আর যদি থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমাণ কম হয় এবং গলায়স্বাদও অনুভূত না হয় তাহলে রোযাটি ভাঙ্গেনি, তা সহীহ হয়েছে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৯৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ফাতাওয়াত হিন্দিয়া ১/২০৩; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৮
আমি ধুমপানে অভ্যস্ত। গত রমযান মাসে রোযা রাখা অবস্থায়ও যখন...
আমি ধুমপানে অভ্যস্ত। গত রমযান মাসে রোযা রাখা অবস্থায়ও যখন ধুমপান না করার কারণে অস্থিরতা অনুভব হয়েছে তখন একটু ধুমপান করেছি। এতে কি আমার রোযা ভেঙ্গে গেছে ?
হ্যাঁ, সামান্য পরিমাণ ধুমপান করলেও রোযা ভেঙ্গে যায়। আর স্বেচ্ছায় ধুমপান করার কারণে কাযা-কাফফারা উভয়টি আদায় করা আবশ্যক হয়।
অতএব আপনি রোযা অবস্থায় যে কয়দিন ধুমপান করেছেন প্রত্যেক রোযার ভিন্ন ভিন্ন কাযা আদায় করবেন এবং সবগুলোর জন্য একটি কাফফারাও আদায় করবেন। কাফফারার পদ্ধতি জানা না থাকলে পুনরায় প্রশ্ন করে জেনে নিন।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৫০; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৮১
আমি এ বছর রমযানে বাস এক্সিডেন্টে পায়ে খুব ব্যথা পেয়েছিলাম।...
আমি এ বছর রমযানে বাস এক্সিডেন্টে পায়ে খুব ব্যথা পেয়েছিলাম। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোযা অবস্থায় ১০ রমযান থেকে ১৫ রমযান পর্যন্ত তিন বেলা ব্যথানাশক ইনজেকশন নিতে হয়েছে। এতে আমার ঐ দিনগুলোর রোযা কি ভেঙ্গে গেছে? সেগুলো কি কাযা করতে হবে?
ইনজেকশন নেওয়ার কারণে রোযার ক্ষতি হয় না। তাই আপনার ঐ রোযাগুলো নষ্ট হয়নি। অতএব ওগুলোর কাযাও করতে হবে না।
উল্লেখ্য, রোযা অবস্থায় গ্লুকোজজাতীয় ইনজেকশন (যা খাদ্যের কাজ দেয়) ব্যবহার করা মাকরূহে তাহরীমী। বিশেষ প্রয়োজন, যেমন-মারাত্মক অসুস্থতা ছাড়া তা নেওয়া বৈধ নয়।
-ফাতহুল কাদীর ২/২৫৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৬৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; যাবিতাতুল মুফাততিরাত ফী মাজালিত তাদাবী ৬৯; মাজমূআতুল ফাতাওয়াশ শরইয়াহ ১/২৪৫; জাওয়াহিরুল ফিকহ ১/৩৭৯
এক ব্যক্তি চোখের অসুস্থতার কারণে ড্রপ ব্যবহার করে এবং ঔষধের...
এক ব্যক্তি চোখের অসুস্থতার কারণে ড্রপ ব্যবহার করে এবং ঔষধের তিক্ততা গলায় অনুভব করে। প্রশ্ন হল, রোযা অবস্থায় এ ধরনের ড্রপ ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে কি? দয়া করে জানাবেন।
না, রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করার কারণে গলায় ঔষধের তিক্ততা অনুভূত হলেও রোযা নষ্ট হয় না। সুতরাং রোযা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহার করার সুযোগ আছে।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৪; ফাতহুল কাদীর ২/২৬৯
আমি প্রতি বছর রমযানের শেষ দশ দিন শহরের জামে মসজিদে...
আমি প্রতি বছর রমযানের শেষ দশ দিন শহরের জামে মসজিদে ইতিকাফ করে থাকি। সাধারণত সেখানে প্রতি সপ্তাহে ২/১টি জানাযা আসে। মসজিদের সামনে একটি ছোট্ট মাঠ আছে। সেখানেই জানাযার নামায হয়। আমি ইতিকাফ অবস্থায় ঐ জানাযার নামাযগুলোতে শরিক হতে পারব কি না জানিয়ে বাধিত করবেন।
জানাযার উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হলেও ইতিকাফ থাকে না। তাই আপনি ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদের বাইরের জানাযার নামাযে শরিক হতে পারবেন না। বের হলে সুন্নত ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৬৫; মাবসূত, সারাখসী ১/১১৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২২
আমি এক রমযানে ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছিলাম। গাড়িতে খুব দুর্গন্ধ...
আমি এক রমযানে ঢাকা থেকে বাড়ি যাচ্ছিলাম। গাড়িতে খুব দুর্গন্ধ থাকায় অস্বস্তি বোধ করি এবং একপর্যায়ে বমির ভাব হয়। বমি না হওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করা সত্ত্বেও বমি হয়ে যায়। জানতে চাই, এ কারণে আমার রোযা কি ভেঙ্গে গেছে? কাযা বা কাফফারা কোনটি ওয়াজিব হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।
উল্লেখ্য, আমার বমিটা মুখ ভরে হয়েছিল। বমি হওয়ার পরও সারা দিন আমি কিছু খাইনি। একেবারে ইফতারির সময় খেয়েছি।
অনিচ্ছাকৃত বমি হলে রোযা ভাঙ্গে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার ঐ রোযা নষ্ট হয়নি; বরং তা আদায় হয়ে গেছে।
-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৭২০; কিতাবুল আসল ২/১৯২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪১
গত রমযানের ২৭ তারিখ দিবাগত রাতে আমার ঘুম থেকে উঠতে...
গত রমযানের ২৭ তারিখ দিবাগত রাতে আমার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায়। সেহরীর সময় বাকি আছে ধারণা করে সেহরী খেয়ে নেই। কিন্তু পরে জানতে পারি যে, ঐ সময় সুবহে সাদিক হয়ে গিয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, উক্ত অবস্থায় আমার উপর কি রোযা বা কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার ঐ রোযা সহীহ হয়নি। তাই রোযাটি কাযা করে নেওয়া জরুরি। তবে কাফফারা আদায় করতে হবে না। উল্লেখ্য, এ ধরনের ক্ষেত্রে রোযা সহীহ না হলেও পুরো দিন রোযা অবস্থায় থাকতে হবে।
-কিতাবুল আসল ২/১৮৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৬
শুনেছি, হাদীসে আরাফার দিনে রোযা রাখার যে কথা এসেছে তা...
শুনেছি, হাদীসে আরাফার দিনে রোযা রাখার যে কথা এসেছে তা হল যারা হজ্বে যায়নি তাদের জন্য। আর যারা হজ্বে আছেন তাদের জন্য এদিন রোযা রাখা ঠিক নয়। জানতে চাই, এ কথাটি কি সঠিক?
আরাফার দিনের রোযা সম্পর্কিত হাদীসটির তরজমা নিম্নরূপ : আবু কাতাদা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, এর বিনিময়ে তিনি ঐ দিনের পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।-সহীহ মুসলিম ১/৩৬৭
উপরোক্ত হাদীসটিতে আরাফার বাইরে অবস্থানকারী বা আরাফায় অবস্থানকারী কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অতএব যারা হজ্বে যাননি শুধু তাদের জন্য এ হাদীস প্রযোজ্য-এমনটি নয়। সকলের জন্যই এই হাদীসের উপর আমল করার সুযোগ রয়েছে। তবে যারা হজ্বে আছেন তাদের যেহেতু এদিন আরাফায় লম্বা সময় দুআ-মুনাজাতে ব্যস্ত থাকতে হয় এবং এর পরবর্তী দিনগুলোতেও হজ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল আদায় করতে হয় যেগুলো বেশ কষ্টসাধ্য তাই হাজীদের জন্য বিশেষ হুকুম হল, রোযা রাখার কারণে দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তারা রোযা রাখবে না। এমন লোকদের জন্য রোযা রাখা মাকরূহ। কেননা এই দিনের রোযার চেয়ে হজ্বের আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উম্মতকে এই মাসআলা শিক্ষা দেওয়ার জন্য স্বয়ং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বে আরাফার রোযা রাখেননি। খুলাফায়ে রাশেদীনসহ অনেক সাহাবী আরাফায় অবস্থানকালে রোযা রাখেননি।
অবশ্য সুস্থ, সামর্থ্যবান ব্যক্তি, যে এই দিনে রোযা রাখলেও দুর্বল হবে না এবং হজ্বের কোনো কাজে ব্যাঘাত ঘটবে না বলে আশ্বস্ত থাকে তার জন্য রোযা রাখার অনুমতি রয়েছে। কেউ কেউ তাদের জন্যও রোযা রাখাকে উত্তমও বলেছেন। সুতরাং যারা হজ্বে আছেন তাদের জন্য রোযা রাখা ঠিক নয়-এই কথাটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রা., উসমান ইবনে আবুল আস রা., আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের রা. এবং আতা রাহ. প্রমুখ
সাহাবা-তাবেয়ী থেকে এই দিন আরাফায় অবস্থানকালে রোযা রাখার প্রমাণ রয়েছে। এবং তাদের থেকে এটিও স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, শরীর দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে এদিন রোযা রাখতে কোনো অসুবিধা নেই। নিম্নে এ সংক্রান্ত আছারগুলো পেশ করা হল।
১. কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. (হজ্ব করতে গিয়ে) আরাফার দিনে রোযা রাখতেন।-মুয়াত্তা মালেক, পৃ. ১৪৬; আলইসতিযকার ৩/৫৩৪
২. আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর আরাফার দিনে আয়েশা রা-এর নিকট গেলেন তখন আয়েশা রা. রোযা ছিলেন। তিনি তাকে বললেন, আপনি ইফতার করুন (রোযা ভাঙুন)। আয়েশা রা. জবাবে বললেন, আমি কীভাবে ইফতার করব। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই আরাফার দিনের রোযার বিনিময়ে পূর্বের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৪৭৭০
৩. ইবনে জুরাইজ বলেন, আমি আতা রাহ.কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি হজ্বের সময় আরাফার দিনে রোযা রাখেন? তিনি বললেন, আমি শীতকালে রোযা রাখি। গ্রীষ্মকালে এই দিন রোযা রাখি না।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৮২২
হাফেয ইবনে আবদুল বার রাহ. বলেন, গ্রীষ্মকালে তিনি এজন্য রোযা রাখতেন না যে, এদিন যেন দুআ (ও হজ্বের অন্যান্য আমল আদায়ে) তিনি দুর্বল না হন।-আলইসতিযকার
৪. কাতাদাহ বলেন, আরাফার দিন দুআ (ও অন্যান্য আমল) আদায়ে যদি সমস্যা না হয় তবে এদিন রোযা রাখতে অসুবিধা নেই।
-প্রাগুক্ত মাবসূত সারাখসী ৩/৮১; বাদায়েউস সানায়ে ২/২১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬২; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১০০
আমাদের মসজিদে একটি নাবালেগ ছেলে ইতিকাফ করেছে। ঐ নাবালেগ ছেলে...
আমাদের মসজিদে একটি নাবালেগ ছেলে ইতিকাফ করেছে। ঐ নাবালেগ ছেলে ব্যতীত অন্য কেউ ইতিকাফ করেনি। জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় এলাকাবাসী কি সুন্নত ইতিকাফ না করায় গুনাহগার হয়েছে? শুধু নাবালেগ ইতিকাফ করার দ্বারা কি সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে?
বুঝমান নাবালেগের ইতিকাফ সহীহ। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্য থেকেই ইতিকাফে বসা উচিত। কেননা রমযানের শেষ দশকের ইতিকাফ অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। তাই এ ব্যাপারে উদাসীনতা মোটেই ভালো নয়।
-বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭৭
গত রমযানে একবার শেষ রাতে আমার খুব বমি হয়। এজন্য...
গত রমযানে একবার শেষ রাতে আমার খুব বমি হয়। এজন্য আমি সাহরী খেতে পারিনি। রোযা রাখারও ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু সকাল দশটার দিকে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর বেশ হালকা বোধ হতে থাকে। তখন আমি আমার বড় ভাইয়ের পরামর্শ মতো নিয়ত করে ঐ দিনের রোযা পূর্ণ করি। এতে আমার রোযা সহীহ হয়েছে কি না জানালে উপকৃত হব।&
হ্যাঁ, আপনার উক্ত রোযা আদায় হয়ে গেছে। কেননা সাহরী খাওয়া সুন্নত, এটি রোযার অংশ নয়। সাহরী না খেলেও রোযা হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ ২/৩৭৭; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৯৭) আর রমযান মাসে কোনো কারণে রাতে নিয়ত করতে না পারলে এবং সুবহে সাদিকের পর থেকে রোযা ভঙ্গের কোনো কারণ পাওয়া না গেলে মধ্যাহ্নের পূর্ব (অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়ের আগ) পর্যন্ত নিয়ত করার সুযোগ থাকে। তবে রাতে নিয়ত করে নেওয়াই উত্তম।
-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৪০৪; কিতাবুল আছল ২/২২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৯; ফাতহুল কাদীর ২/২৩৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৭
আমি ২৫ রমযানে দিনের বেলা ভুলক্রমে খেয়ে ফেলি। খাওয়া শেষে...
আমি ২৫ রমযানে দিনের বেলা ভুলক্রমে খেয়ে ফেলি। খাওয়া শেষে রোযা ভেঙ্গে গেছে ধারণা করে ইচ্ছাকৃত খেয়ে নেই। প্রশ্ন হল এমতাবস্থায় আমাকে ঐ রোযার কাযা এবং কাফফারা দুটোই আদায় করতে হবে কি না? নাকি শুধু কাযা আদায় করে নিলেই চলবে? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
আপনাকে ঐ রোযাটির কাযা আদায় করতে হবে। কাফফারা আদায় করতে হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, রোযা অবস্থায় ভুলবশত খাওয়ার পর রোযা ভেঙ্গে ফেলা ঠিক হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে কোনো আলেম থেকে মাসআলা জেনে নেওয়া আবশ্যক ছিল।
-জামেউস সগীর ১৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১-৪০৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৭; ফাতহুল কাদীর ২/২৯৩
আমাদের দেশে যে সকল মসজিদে তারাবীতে খতমে কুরআন হয় সেখানে...
আমাদের দেশে যে সকল মসজিদে তারাবীতে খতমে কুরআন হয় সেখানে দেখা যায়-
ক) যে কোনো একটি সূরার শুরুতে বড় আওয়াজে বিসমিল্লাহ পড়া হয়। বলা হয়ে থাকে, এ রকম পড়া সুন্নত।
খ) সূরা ইখলাস তিনবার পড়া হয়। বলা হয়ে থাকে, এ রকম পড়া মুস্তাহাব। অনুগ্রহপূর্বক এই দুই মাসআলার বিষয়ে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে ফয়সালা জানানোর অনুরোধ রইল।
ক) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কুরআন মজীদের স্বতন্ত্র একটি আয়াত, যা দুই সূরার মাঝে পার্থক্য করার জন্য আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং মুসল্লিদেরকে পরিপূর্ণ খতম শোনাতে চাইলে যে কোনো একটি সূরার শুরুতে উঁচু আওয়াজে বিসমিল্লাহ পড়তে হবে। অন্যথায় এ কারণে মুসল্লিদের খতম অপূর্ণ থেকে যাবে। আর ইমামের জন্য সব নামাযেই সূরা ফাতিহা এবং সকল সূরার শুরুতে অনুচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ বলা
মুস্তাহাব।-আসসিআয়াহ ২/১৭০; ইহকামুল কানত্বরা ফী আহকামিল বাসমালাহ ১/৭১; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২৮; মাজমুআতুল ফাতাওয়া, লাখনভী রাহ. ১/৩১৫
খ) কুরআন মজীদ খতম করার ক্ষেত্রে সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার কোনো বিধান শরীয়তে নেই। সাহাবা-তাবেয়ীন থেকেও এমন কোনো আমলের প্রমাণ নেই। ফিকহবিদগণ এই আমলকে অপছন্দ করেছেন। সুতরাং তারাবীতে কুরআন খতমের সময় সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার প্রচলনটি ঠিক নয়। তাই এ থেকে বিরত থাকবে এবং অন্য সূরার ন্যায় যথানিয়মে একবারই পড়বে।-ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২৬; আহসানুল ফাতাওয়া ৩/৫০৯; ফাতাওয়া উসমানী ১/৫১০
আমার নানু ঢাকার একটি ফ্ল্যাট বাসায় থাকেন। বাসাটি চার রুমবিশিষ্ট।...
আমার নানু ঢাকার একটি ফ্ল্যাট বাসায় থাকেন। বাসাটি চার রুমবিশিষ্ট। তিনি যে রুমটিতে থাকেন সাধারণত সে রুমেরই এক পার্শ্বে নামায পড়েন। তবে গরমের কারণে কখনো ড্রইং রুমেও নামায আদায় করেন। তিনি আগামী রমযানে ইতিকাফ করার নিয়ত করেছেন। উক্ত দুই রুম ব্যতীত অপর আরেকটি রুমে ইতিকাফ করা তার জন্য সুবিধাজনক। যে রুমে সাধারণত নামায পড়েন না। এখন সে রুমে ইতিকাফ করা তার জন্য কি সহীহ হবে?
আপনার নানু বাসাটির অন্য কক্ষেও ইতিকাফ করতে পারবেন। তবে যে কক্ষে ইতিকাফ করতে চাচ্ছেন ঐ কক্ষকে আপাতত তার নামায-ঘর হিসেবে নির্দিষ্ট করে নিতে হবে এবং ইতিকাফের পূর্ণ সময় এ ঘরেই অবস্থান করতে হবে।
-মাবসূত, সারাখসী ৩/১১৯; আলবিনায়াহ ৪/৩৮৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৭৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪১
যায়েদ এক রমযানের ১০ টি রোযা রাখার পর শয়তানের ধোকায়...
যায়েদ এক রমযানের ১০ টি রোযা রাখার পর শয়তানের ধোকায় সুস্থ অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করে তা ভেঙ্গে ফেলে। সে ঐ রোযাগুলোর কাফফারাও আদায় করেনি। কিন্তু এখন সে অনুতপ্ত এবং এ বিষয়ে শরীয়তের সমাধান জানতে আগ্রহী। ঐ ব্যক্তির উপর কি ইচ্ছাকৃত পানাহার করার কারণে কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে? যদি ওয়াজিব হয়ে থাকে তবে সে কি প্রত্যেকটি রোযার পরিবর্তে পৃথক পৃথক কাফফারা আদায় করবে, না সবগুলো রোযার পরিবর্তে একটি কাফফারা আদায় করলেই যথেষ্ট হবে?
রোযাগুলো ভেঙ্গে ফেলার কারণে তার উপর প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে একটি করে কাযা আদায় করা ওয়াজিব হয়েছে। আর একই রমযানে কয়েকটি রোযার কাফফারা ওয়াজিব হওয়ায় এখন সবগুলোর জন্য একটি কাফফারা আদায় করলেই যথেষ্ট হয়ে যাবে।
হাদীস শরীফে আছে, জনৈক ব্যক্তি রমযান মাসে দিনের বেলা আহার করে ফেলার পর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে একটি গোলাম আযাদ করা বা ধারাবাহিক ষাটটি রোযা রাখা অথবা ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানোর আদেশ দিয়েছেন।
-সুনানে দারাকুতনী ২/১৯১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১৩, ২১৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৬, ২৬০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৪, ২৫৯; ফাতহুল কাদীর ২/২৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৩
রবিউল আওয়াল, রবিউস সানী, জুমাদাল উলা, জুমাদাল উখরা, যিলকদ-এই মাসগুলোতে...
রবিউল আওয়াল, রবিউস সানী, জুমাদাল উলা, জুমাদাল উখরা, যিলকদ-এই মাসগুলোতে বিশেষ কোনো রোযা-নামাযের কথা কুরআন-হাদীসে আছে কি না?
প্রশ্নোক্ত মাসগুলোতে বিশেষ কোনো নামায বা রোযার কথা কুরআন-হাদীসে নেই। তবে যিলকদ মাস যেহেতু আশহুরে হুরূম তথা চার সম্মানিত মাসের অন্যতম তাই এ মাসে নফল রোযা রাখা মুস্তাহাব। কেননা আশহুরে হুরূমে নফল রোযা রাখার কথা হাদীসে রয়েছে।
একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে লক্ষ্য করে বলেছেন, তুমি আশহুরে হুরূমে রোযা রাখ।
-লাতাইফুল মাআরিফ পৃ. ২৮৫, ২৮৬; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ২৪২৫; বাযলুল মাজহূদ ১১/২৯০; আউনুল মাবুদ ৭/৫৮; নায়লুল আওতার ৪/৩১৮; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৭৪১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৫; আলফাযাইলু ওয়াল আহকাম লিশশুহূরি ওয়াল আইয়াম, আল্লামা আবদুল করীম গুমথালভী পৃ. ২০
মেহরাব কি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত? এক ব্যক্তি বলছেন, মেহরাব মসজিদের অংশ...
মেহরাব কি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত? এক ব্যক্তি বলছেন, মেহরাব মসজিদের অংশ নয়। তাই এতেকাফকারী এখানে যেতে পারবে না। গেলে এতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। সঠিক বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন।
মেহরাব মসজিদের অন্তর্ভুক্ত। মসজিদের অংশ না হওয়ার কথা ঠিক নয়। এটা যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা তা ফিকহের নির্ভরযোগ্য কিতাবে উল্লেখ হয়েছে। সুতরাং এতেকাফকারী মেহরাবেও যেতে পারবে। এ কারণে তার এতেকাফ নষ্ট হবে না।
-শরহুল মুনইয়া ৩৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৬; রদ্দুল মুহতার ১/৬৪৬; জামিউর রুমূয ১/১৯৫
রমযান মাসে মহিলারা হায়েয-নেফাস অবস্থায় পানাহার ত্যাগ করে রোযাদারের মতো...
রমযান মাসে মহিলারা হায়েয-নেফাস অবস্থায় পানাহার ত্যাগ করে রোযাদারের মতো না খেয়ে থাকবে কি? কেউ কেউ বলেন, এভাবে রোযাদারের সাদৃশ্য অবলম্বন করলে নাকি গুনাহ হবে। এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা জানিয়ে বাধিত করবেন।
রমযান মাসে হায়েয-নেফাস অবস্থায় মহিলারা পানাহার থেকে বিরত থাকবে না। তবে লোকচক্ষুর আড়ালে পানাহার করবে। রোযাদারের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে না। রোযাদারের মতো পানাহার বর্জন করাকে শরীয়তের বিধান মনে করলে গুনাহ হবে।
-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২০৫; আলকিফায়া ২/২৯০
কোনো কোনো এলাকায় দেখা যায়, রমযানের শেষ দশ দিনে এলাকাবাসী...
কোনো কোনো এলাকায় দেখা যায়, রমযানের শেষ দশ দিনে এলাকাবাসী কেউ এতেকাফ না করলে অন্য এলাকা থেকে কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে খানা ও পারিশ্রমিক দিয়ে এতেকাফ করানো হয়।
প্রশ্ন হল, ক) এরূপ করলে এলাকাবাসী সুন্নত তরকের গুনাহ থেকে বাঁচতে পারবে কি না?
খ) ঐ ব্যক্তির জন্য এতেকাফকালীন দিনগুলোর পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয হবে কি না?
ক) রমযান মাসের শেষ দশ দিন এতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়াহ। যদি কোনো মসজিদে এক জনও ইতেকাফে বসে তাহলে এলাকাবাসী সুন্নত তরকের গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। আর যদি একজনও এতেকাফ না করে তাহলে ঐ এলাকার সকলেই গুনাহগার হবে।
খ) এতেকাফ একটি ইবাদত, যা বিনিময়যোগ্য নয়। তাই এতেকাফের জন্য পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয নয়। কাউকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এতেকাফ করালে সে এতেকাফ সহীহ হবে না। অতএব এ জাতীয় এতেকাফ দ্বারা এলাকাবাসী দায়িত্বমুক্ত হতে পারবে না।
-হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/৩০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; ইলাউস সুনান ১৬/১৭২-৭৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৫
জনৈক ব্যক্তি রোযা অবস্থায় চোখে ওষুধ লাগিয়েছে। এ কারণে তার...
জনৈক ব্যক্তি রোযা অবস্থায় চোখে ওষুধ লাগিয়েছে। এ কারণে তার রোযার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি?
না, চোখে ওষুধ দিলে রোযার ক্ষতি হয় না। এক্ষেত্রে ওষুধের স্বাদ গলায় অনুভূত হলেও রোযা নষ্ট হবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৪; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫
রবিউল আউয়াল, রবিউস সানী, জুমাদাল উলা, জুমাদাল উখরা ও যিলকদ...
রবিউল আউয়াল, রবিউস সানী, জুমাদাল উলা, জুমাদাল উখরা ও যিলকদ এ মাসগুলোতে বিশেষ কোনো রোযা-নামাযের কথা কুরআন-হাদীসে আছে কি?
প্রশ্নোক্ত মাসগুলোতে বিশেষ কোনো নামায বা রোযার কথা কুরআন-হাদীসে নেই। তবে যিলকদ মাস যেহেতু আশহুরে হরম তথা চারটি সম্মানিত মাসের একটি তাই এ মাসে নফল রোযা রাখা মুস্তাহাব। কেননা, আশহূরে হুরুমে নফল রোযা রাখার কথা হাদীসে রয়েছে। একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে লক্ষ্য করে বলেন, (হাতের আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে) তুমি হরম মাসে ৩দিন রোযা রাখবে। এরপর তিন দিন রোযা রাখবে না। এরপর আবার তিন দিন রোযা রাখবে। এরপর তিন দিন রাখবে না। (এভাবে শেষ পর্যন্ত) (সূনানে আবু দাউদ ১/৩৩০)
আমি প্রতি রমযানেই রোযাগুলো নিয়মিত রাখি। কিন্তু অধিকাংশ রোযাতেই মুখে...
আমি প্রতি রমযানেই রোযাগুলো নিয়মিত রাখি। কিন্তু অধিকাংশ রোযাতেই মুখে রোযার নিয়ত উচ্চারণ করি না; বরং রোযা রাখার উদ্দেশ্যে সেহরীর জন্য উঠে সেহরী খেয়ে নেই এবং অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী ঠিক মতো করতে থাকি। এমন করার দ্বারা আমারা রোযাগুলো সহীহ হয়েছে কি না? নাকি আবার কাযা করতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার রোযা রাখার উদ্দেশ্যে ঘুম থেকে ওঠা ও সেহরী খাওয়াটাই রোযার নিয়তের শামিল। নিয়ত মনের ইচ্ছার নাম, এক্ষেত্রে মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই আপনার রোযাগুলো সহীহভাবে আদায় হয়েছে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/৪৫২; আলজাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ ১/১৭৬; রদ্দুল মুহতার ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫
রোযা অবস্থায় ছিলাম। হাই তোলার সময় একটি মশা গলায় চলে...
রোযা অবস্থায় ছিলাম। হাই তোলার সময় একটি মশা গলায় চলে গেছে। এতে কি আমার রোযার কোনো ক্ষতি হয়েছে?
না। এতে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. এক লোকের কণ্ঠনালিতে মাছি ঢুকে গেলে তাকে বললেন, এতে তোমার রোযা ভঙ্গ হয়নি।
মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৩৪৯; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৮
কিছুদিন হল আমার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। সে বাবার বাড়িতে...
কিছুদিন হল আমার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। সে বাবার বাড়িতে ছিল এবং শাওয়ালের নফল রোযা রাখছিল। ইত্যবসরে তার শ্বশুর-শাশুড়ি সকাল বেলা তাকে দেখতে এল। আপ্যায়নের সময় তারা বলল, বউকে তাদের সাথে খেতে হবে নতুবা তারা মনে কষ্ট পাবে। তাদের পীড়াপীড়িতে আমার বোন রোযা ভেঙ্গে তাদের সাথে দস্তরখানে শরীক হয়েছে। জানার বিষয় হল, শ্বশুর-শাশুড়ির মন রক্ষার্থে রোযা ভাঙ্গা কি তার ঠিক হয়েছে? তাকে কি এ রোযা কাযা করতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে রোযা ভঙ্গ করা অন্যায় হয়নি। মেহমানের মন রক্ষার্থে নফল রোযা ভাঙ্গার অনুমতি আছে। অবশ্য তাকে এ রোযা কাযা করতে হবে।
আবু জুহাইফা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান রা. ও আবুদ দারদা রা.-এর মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেছিলেন। একদিন সালমান রা. আবুদ দারদা রা.-এর সাথে সাক্ষাত করতে গেলেন। আবুদ দারদা রা. সালমান রা.-এর জন্য খাবার প্রস্ত্তত করলেন। সালমান রা. তাকেও খাবারে শামিল হতে বললেন। উত্তরে তিনি বললেন, আমি রোযা রেখেছি। এ কথা শুনে সালমান রা. বললেন, আপনি না খেলে আমি খাব না। তখন আবুদ দারদা রা. (রোযা ভেঙ্গে) তার সাথে খাবার খেয়েছেন।
সহীহ বুখারী ১/২৬৪; ফাতহুল কাদীর ২/২৮০, ২৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৮
একজন ব্যক্তি রোযা অবস্থায় ভুলবশত পানি পান করেছিল। এরপর রোযা...
একজন ব্যক্তি রোযা অবস্থায় ভুলবশত পানি পান করেছিল। এরপর রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে পানাহার করেছে। জানার বিষয় হল, এখন তাকে কী করতে হবে?
রোযা রেখে ভুলবশত (অর্থাৎ রোযার কথা স্মরণ না থাকায়) পানাহার করলে রোযা ভঙ্গ হয় না। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ভুলে আহার করল বা পান করল সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে। কারণ আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম ১/৩৬৪)
এক্ষেত্রে নিয়ম হল, রোযার কথা স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানাহার বন্ধ করবে এবং সারাদিন আর কিছু খাবে না। কিন্তু প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সে যেহেতু ভুলবশত পানি পান করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করেছে তাই তার রোযা ভেঙ্গে গেছে। অতএব তাকে ঐ রোযাটি কাযা করতে হবে। কাফফারা দিতে হবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করে সে গুনাহ করেছে। এজন্য তাকে ইস্তিগফার করতে হবে।
ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৩; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/১০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৬; রদ্দুল মুহতার ২/৪০১, ৪০২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলামারাকী ৩৬৮
রমযানে দিনের বেলা কারো যদি স্বপ্নদোষ হয় তাহলে কি রোযা...
রমযানে দিনের বেলা কারো যদি স্বপ্নদোষ হয় তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
না। স্বপ্নদোষের কারণে রোযা ভাঙ্গে না। হাদীসে আছে, আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি বস্ত্ত রোযা ভঙ্গের কারণ নয়, বমি, শিঙ্গা লাগানো ও স্বপ্নদোষ।
সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৪/২৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬
জনৈক মুয়াযযিন সাহেব ঘড়ি দেখে সূর্য ডোবার সময় হয়েছে মনে...
জনৈক মুয়াযযিন সাহেব ঘড়ি দেখে সূর্য ডোবার সময় হয়েছে মনে করে মাগরিবের আযান দিয়েছেন। তার আযান শুনে মহল্লার অনেক লোক ইফতার করে ফেলেছেন। পরে মহল্লার অন্যান্য মসজিদের আযান, রেডিওর আযান ও রোযার চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে দেখা গেল যে, বাস্তবে তারা সূর্য ডোবার আগেই ইফতার করেছিলেন। জানতে চাই, যারা ইফতার করে ফেলেছেন তাদের রোযা কি ভেঙ্গে গেছে? যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে কাযা করলেই যথেষ্ট হবে নাকি কাফফারাও দিতে হবে?
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী যারা সূর্যাস্তের আগেই ইফতার করেছেন তাদের রোযা নষ্ট হয়ে গেছে। তারা রোযাটি কাযা করবেন, কাফফারা দেওয়া লাগবে না। হাদীস শরীফে আছে, হযরত আসমা রা. বলেন, ‘রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যমানায় এক মেঘলা দিনে আমরা সূর্য ডুবে গেছে নিশ্চিত জেনে ইফতার করলাম। পরক্ষণেই মেঘ সরে গিয়ে সূর্য প্রকাশিত হল।’ হাদীসের রাবী হিশামকে জিজ্ঞাসা করা হল, তাদেরকে কি রোযা কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? তিনি বললেন, অবশ্যই রোযা কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
হযরত বিশর ইবনে কায়েস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক রমযানে বিকেল বেলা উমর রা.-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। উমর রা. সূর্য ডুবে গেছে মনে করে নিজেও পানি পান করলেন এবং আমাকেও পান করালেন। পরক্ষণেই সূর্য দেখা গেল। উমর রা. বললেন, ‘সমস্যা নেই। এর পরিবর্তে একটি রোযা কাযা করাই যথেষ্ট হবে।’-সুনানে কুবরা ৪/৫৬৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯১৩৮
হযরত ইবনে জুরাইজ রা. বলেন, আমি আতা রাহ.কে জিজ্ঞাসা করলাম, রমযানের এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে সময় হয়েছে মনে করে ইফতার করেছি। এরপর সূর্য দেখা গেল। এখন আমি কি শুধু ঐ দিনের রোযার কাযা করব, না আমাকে কাফফারাও আদায় করতে হবে? আতা রাহ. বললেন, হ্যাঁ, (শুধু কাযা করবে)। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯১৪৭)
বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩৬; হাশিয়াতুত তহতাবী আলামারাকী ৩৬৯
এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করছিলেন। মসজিদের পার্শ্ববর্তী মাঠে...
এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করছিলেন। মসজিদের পার্শ্ববর্তী মাঠে জানাযার নামায হচ্ছিল। তিনি তাতে শরিক হয়েছেন এবং নামায শেষ হওয়ামাত্রই মসজিদে ফিরে এসেছেন। একথা জানতে পেরে মসজিদের ইমাম সাহেব বলেছেন, তার ইতিকাফ ভেঙ্গে গেছে। ইমাম সাহেবের কথা কি ঠিক?
হ্যাঁ, ইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। ইতিকাফরত অবস্থায় জানাযার নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হওয়ার কারণে তার সুন্নত ইতিকাফ ভেঙ্গে গেছে। হযরত হিশাম ইবনে ওরওয়াহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ইতিকাফকারী কোনো দাওয়াতে যাবে না, অসুস্থ কাউকে দেখতে যাবে না, কারো জানাযায় শরিক হবে না। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩৫৭-৩৫৮)
সুতরাং এ ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তিকে রোযাসহ একদিনের ইতিকাফ কাযা করতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, যদি কোনো ব্যক্তি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে (যেমন অযু-ইস্তিঞ্জা) বা জুমআর নামায আদায়ের উদ্দশ্যে মসজিদ থেকে বের হয়ে পথিমধ্যে জানাযায় শরিক হয় এবং নামায শেষে সেখানে বিলম্ব না করে মসজিদে ফিরে আসে তাহলে তার ইতিকাফ ভাঙ্গবে না।
বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৩, ২৮৪; মাবসূত, সারাখসী ৩/১১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৪; ২৪৫
এক ব্যক্তি রমযান মাসে রোযা অবস্থায় ভাইকে রক্ত দিয়েছে। এতে...
এক ব্যক্তি রমযান মাসে রোযা অবস্থায় ভাইকে রক্ত দিয়েছে। এতে কি তার রোযা ভেঙ্গে গেছে বা কোনো ক্ষতি হয়েছে?
রোযা অবস্থায় রক্ত দিলে রোযা নষ্ট হয় না। কারণ শরীর থেকে রক্ত বের হওয়া রোযা ভঙ্গের কারণ নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। সুতরাং রোযা অবস্থায় প্রয়োজনে রক্ত দেওয়া যাবে। তবে রক্ত দেওয়ার কারণে কারো যদি এত দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয় যে, সে রোযা পূর্ণ করতে পারবে না। তাহলে তার জন্য রক্ত দেওয়া মাকরূহ হবে। তাই এ ধরনের ব্যক্তি অতীব প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলা রক্ত দিবে না।
-সহীহ বুখারী ১/২৬০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫
গত রমযানে আমি ইমামের সাথে তারাবী আদায় করার পর ইস্তেঞ্জার...
গত রমযানে আমি ইমামের সাথে তারাবী আদায় করার পর ইস্তেঞ্জার জরুরতে বাইরে যাই। এসে ইমামকে বিতরের শেষ রাকাতে পাই। জানার বিষয় হল, আমি ইমামের সাথে শেষ রাকাতে একবার কুনুত পড়েছি, আমার নামাযের শেষে কি আবার কুনূত পড়ব?
না, নামাযের শেষে আর দুআ কুনূত পড়তে হবে না। কেননা, আপনি ইমামের সাথে কুনূতসহ এক রাকাত আদায় করেছেন। এখন আগের ছুটে যাওয়া দুই রাকাত স্বাভাবিক নিয়মে পড়ে নিতে হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১১৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৬৪
ক) আশুরার রোযার তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাই।খ) আশুরার দিনের ফযীলত...
ক) আশুরার রোযার তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাই।
খ) আশুরার দিনের ফযীলত কী এবং এই দিনে রোযা রাখলে কী সওয়াব?
গ) শুনেছি, এই দিনে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। যেমন ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ইউসুফ আ. জেল থেকে মুক্ত হয়েছেন। মুসা আ. দলবলে সমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন আর ফেরআউন তার দলসহ ডুবে মরেছে। এ ঘটনাগুলি কি ঠিক?
ক) আশুরার তাৎপর্য সম্পর্কে একটি হাদীস উল্লেখ করছি।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরত করার পর দেখলেন, ইহুদীরা আশুরার দিন রোযা রাখে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রোযার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তারা বলেছিল, এটি মহিমান্বিত একটি দিন। এই দিনে মুসা আ. ও তার কওম নিস্তার পান। আর ফেরআউন ও তার দল ডুবে মারা যায়। সেই থেকে মুসা আ. শুকরিয়াস্বরূপ এই দিনে রোযা রাখতেন। সে হিসেবে আমরাও রোযা রাখি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুসা আ.-এর ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে আমরা অধিক হকদার। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও রোযা রাখলেন এবং অন্যদেরকে রোযা রাখার নির্দেশ করলেন।’
- (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৩৯০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ২৬৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১২৫
খ) আশুরার দিনটি মহিমান্বিত। হাদীস শরীফে এসেছে-এই দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তাওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যদের তাওবা কবুল করবেন। (জামে তিরমিযী ১/১৫৭)
আর এই দিনে রোযা রাখলে পেছনের এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম ১/৩৬৭; জামে তিরমিযী ১/১৫৮)
গ) এই দিনে মুসা আ. তার কওমসহ ফেরআউনের হাত থেকে রক্ষা পান এবং ফেরআউন তার দলবলসহ সমুদ্রে ডুবে মারা যায়-একথা সত্য। এ উত্তরের ‘ক’ অংশে সহীহ বুখারীর যে বর্ণনাটি উল্লেখ করা হয়েছে তাতে একথা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। কিন্তু প্রশ্নের অন্যান্য ঘটনা লোকমুখে প্রসিদ্ধ থাকলেও এ সম্পর্কে কোনো বিশুদ্ধ বর্ণনা নেই। প্রখ্যাত হাদীস বিশারদগণ বলেন, এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। দেখুন : আলআছারুল মারফূআ পৃষ্ঠা : ৯৪-১০০; মা সাবাতা বিসসুন্নাহ ফী আইয়ামিস সানাহ, পৃষ্ঠা : ২৫৩-২৫৭
জনৈক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে রমযানের একটি রোযা রাখতে পারেনি। রমযানের...
জনৈক ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে রমযানের একটি রোযা রাখতে পারেনি। রমযানের পর ঐ রোযাটি কাযা করার জন্য সাহরী খেয়ে রোযার নিয়ত করে। কিন্তু বেলা ১২টার দিকে কোনো শরয়ী কারণ ছাড়াই রোযাটি ভেঙ্গে ফেলে। জানার বিষয় হল, উক্ত ব্যক্তিকে কি কাফফারা আদায় করতে হবে, না শুধু কাযা করলেই চলবে। কাযা করতে হলে কয়টি রোযা কাযা করতে হবে?
রোযাটি ভেঙ্গে ফেলার দ্বারা তার উপর কোনো কিছু ওয়াজিব হয়নি। কাফফারাও ওয়াজিব হয়নি। তবে বিনা ওজরে কোনো ইবাদত নষ্ট করা ঠিক নয়। এখন রমযানের ঐ কাযা রোযাটি রাখলেই চলবে।
-আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৮; মুলতাকাল আবহুর ১/৩৫৪; আননাহরুল ফায়েক ২/২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৫;আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩০
ক) রমযান মাসে দেখা যায় অনেকে কিয়ামুল লায়ল (তাহাজ্জুদ) নামায...
ক) রমযান মাসে দেখা যায় অনেকে কিয়ামুল লায়ল (তাহাজ্জুদ) নামায জামাতের সাথে আদায় করেন। এমনকি মসজিদে হারামেও এই নামায জামাতের সাথে আদায় করা হয়। এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী?
খ) তারাবীর নামায ২০ রাকাত, না ৮ রাকাত? সহীহ হাদীস অনুসারে কোনটা ঠিক? রমযান মাসে তারাবীর নামায পড়লে তাহাজ্জুদ নামায পড়ার দরকার আছে কী? বা তাহাজ্জুদ নামায পড়লে তারাবী পড়তে হবে কি? উল্লেখিত বিষয়ে সহীহ মাসআলা হাদীস শরীফের বাংলা তরজমাসহ জানালে খুশি হব।
(ক) পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায, জুমআ ও দুই ঈদের নামায জামাতে আদায় করা হল ইসলামের শিআর। এছাড়া তারাবী, রমযানের বিতর, ইস্তিসকা ও সূর্যগ্রহণের নামায জামাতে আদায় করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ও সুন্নত। কিন্তু তাহাজ্জুদসহ অন্যান্য সুন্নত ও নফল নামায শরীয়তের দৃষ্টিতে একাকী ও ঘরে আদায় করার মতো নামায। যে কারণে এগুলোতে আযান-ইকামত এবং জামাতের আয়োজনের বিধান নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরামের সাধারণ আমল এমনই ছিল। তারা তাহাজ্জুদ ও নফল ঘরে একাকী আদায় করতেন। আমাদের জানামতে হাদীস ও সীরাতের বর্ণনানুযায়ী গোটা নবী-যুগে একটি অথবা দুটি ঘটনাই এমন পাওয়া যায় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের নামায শুরু করার পর, কোনো সাহাবী এসে ইক্তিদা করেছেন। এ জাতীয় এক দুটি ঘটনা ছাড়া, (জামাত যেখানে ঘটনাচক্রে হয়ে গিয়েছিল। উপরন' তা ছিল মাত্র এক দুই জনের।) তাহাজ্জুদের জামাতের অন্য কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না।
তাই ফিকহে হানাফীর ফাতাওয়া হল, তাহাজ্জুদের নামায, তা রোযার মাসে পড়া হোক কিংবা অন্য মাসে,একাকী পড়া উচিত। এতে জামাতর পাবন্দি করা ঠিক নয়। তবে কেউ যদি তাহাজ্জুদ নামাযে রত কোনো ব্যক্তির ইক্তিদা করে ফেলে তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু এটাকে নিয়মে পরিণত করা খেলাফে সুন্নত।
আর হারামাইন শরীফাইনে তাহাজ্জুদের নামায জামাতে পড়া হয় হাম্বলী মাযহাব অনুযায়ী। কেননা, হাম্বলী মাযহাবে যেকোনো নফল নামায জামাতে পড়া যায়।
মোটকথা, এ প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের ফাতাওয়া এই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরীকা এবং খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কেরাম ও খাইরুল কুরূনের সাধারণ নিয়ম থেকে সরে তাহাজ্জুদ নামাযে জামাতের প্রচলন করা, বিশেষত কোনো মসজিদে, সঠিক নয়।
নিম্নে নফল নামায জামাতবিহীন একাকী ঘরে পড়া সম্পর্কে কিছু হাদীস পেশ করা হল।
১. হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা ঘরে নামায আদায় কর, ঘরকে কবর বানিও না।’-সহীহ মুসলিম ১/২৬৫
২. হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা ঘরে নামায আদায় কর। কেননা, মানুষের সর্বোত্তম নামায হল ঘরের নামায। তবে ফরয নামায ব্যতিত।’
৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সাআদ রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘরে নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমার ঘর মসজিদের কত নিকটে তারপরও আমি ঘরে নামায পড়তে ভালবাসি। তবে ফরয নামায মসজিদে পড়ি।’ (শামায়েলে তিরমিযী ২০)
খ) তারাবী বিশ রাকাত। এটাই সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। চার মাযহাবের ইমামগণ এ বিষয়ে একমত। সাহাবা-যুগ থেকে আজ পর্যন্ত হারামাইন শরীফাইনে এভাবেই তারাবী পড়া হয়েছে। বিশ রাকাতের কম কখনো পড়া হয়নি। বর্তমানে যারা তারাবীর নামায আট রাকাত বলে দাবি করে তারা কিছু ‘মুনকার’রেওয়ায়েত দ্বারা দলিল দিয়ে থাকে, কিংবা তাহাজ্জুদের হাদীসকে তারাবীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে। মারকাযুদ দাওয়াহর দারুত তাসনীফ থেকে এ বিষয়ে একটি পুসি-কা প্রকাশিত হয়েছে। যাতে বিস্তারিত দালিলিক আলোচনা রয়েছে।
তারাবীর নামাযে দীর্ঘ কিরাত পড়ার কারণে তাহাজ্জুদের সময় হয়ে গেলে ভিন্নভাবে তাহাজ্জুদ পড়ার প্রয়োজন নেই। তখন তারাবীহ এর স'লাভিষিক্ত হয়ে যাবে। এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল।
১. হযরত নোমান ইবনে বাশীর রা. বলেন, আমরা তেইশ রোযার দিবাগত রাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অর্ধ রাত পর্যন্ত নামায পড়ি। অতপর সাতাইশ রোযার দিবাগত রাতে এত দীর্ঘ নামায পড়ি যে, আমাদের সাহরী ছুটে যাওয়ার আশংকা হল।’ (কিয়ামুল লাইল, শায়খ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে নসর ১৯৬)
২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর রা. বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, আমরা রোযার মাসে রাতের নামায থেকে এমন সময় ফিরতাম যে, সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার আশংকায় খাদেমকে দ্রুত খানা আনতে বলতাম।
৩. হযরত ওমর রা., তাঁর খেলাফত আমলে উবাই ইবনে কা’ব রা. ও তামীম দারী রা.কে রমযানের রাতের নামায পড়াতে আদেশ করলেন। কারীগণ এত লম্বা কিরাত পড়তেন যে, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে আমরা লাঠির উপর ভর করে দাঁড়াতাম। আর আমরা বাড়ি ফিরতাম সুবহে সাদিকের কিছু পূর্বে। (কিয়ামুল লাইল ২০৩)
যদি তারাবী ইশার পর প্রথম রাতে পড়া হয় তাহলে শেষ রাতে অন্যদিনের মতো তাহাজ্জুদ পড়া উচিত। তাহাজ্জুদ পুরো বছরের নামায এবং তারাবী থেকে ভিন্ন নামায।
রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রাহ.-এ বিষয়ে স্বতন্ত্র একটি রিসালাহ লিখেছেন। বিষয়টি দীর্ঘ আলোচনার দাবি রাখে। আগামী কোনো সংখ্যায় এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখা হবে ইনশাআল্লাহ।
একটি রেওয়ায়েতে আছে, হযরত ওমর রা.-এর যুগে একদিন মুসল্লীরা তারাবী শেষ করে মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন তখন হযরত ওমর রা. বললেন, রাতের যে অংশ বাকি রয়ে গেছে তা অধিক উত্তম। অর্থাৎ শেষ রাতেও ইবাদত করা উচিত। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/২৩১)
হযরত ওমর রা.-এর যুগে যখন তারাবীর ছোট ছোট জামাতগুলোকে এক...
হযরত ওমর রা.-এর যুগে যখন তারাবীর ছোট ছোট জামাতগুলোকে এক ইমামের পিছনে বড় জামাতে রূপান্তরিত করা হয় তখন তারাবী বিশ রাকাত ছিল-এটিই প্রসিদ্ধ। আমরাও এতদিন এমনটিই জানতাম। কিন্তু আমার এক বন্ধু বলল, এই বিষয়ে বিভিন্ন রকমের রেওয়ায়েত আছে। কিছু রেওয়ায়েতে তো বিশ রাকাতের কথাই আছে, যা ‘হাসান’ পর্যায়ের। কিন্তু অন্য রেওয়ায়েতে আট রাকাত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিতরসহ মোট এগার রাকাতের কথা আছে। আর এই রেওয়ায়েতটি হল ‘সহীহ’ এবং তা মুয়াত্তার রেওয়ায়েত। সে আরো বলল, যেহেতু ‘সহীহ’-এর স্থান ‘হাসান’-এর উপরে তাই আট রাকাত তারাবীহ পড়াই উচিত। আমার বন্ধুর কথা কি ঠিক? জানিয়ে বাধিত করবেন।
আপনার বন্ধুর কথা ঠিক নয়; বরং উসূলে হাদীসের আলোকে বিশ রাকাত তারাবীর রেওয়ায়েতটি ‘মুতাওয়াতির’। খিলাফতে রাশেদা থেকে আজ পর্যন্ত সকল যুগে হারামাইন শরীফাইনে অবিচ্ছিন্নভাবে এই আমল চলে আসছে। সেখানে তারাবীর নামায বিশ রাকাত পড়া হয়। তবে মসজিদে নববীতে কখনো বিশ রাকাতের বেশি পড়া হলেও কম কখনো পড়া হয়নি। তাআমুল ও তারীখের আলোকে এই রেওয়ায়েত মুতাওয়াতির হওয়া-একটি স্বীকৃত বিষয়। এই ধরনের ‘মুতাওয়াতির’কে পরিভাষায় মুতাওয়াতির বিতাওয়াতুরিত তাবাকা’ অথবা ‘মুতাওয়াতির বিতাওয়াতুরিল আমালিল মুতাওয়ারাছ’ বলা হয়। শুধু সনদের বিচারে রেওয়ায়েতটি ‘হাসান লিগায়রিহী’। তবে এমন ‘হাসান লিগায়রিহী’, যা শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’য় বর্ণিত উসূল মোতাবেক ‘মুতাওয়াতির।’ সে হিসেবে এই মুতাওয়াতির (মা’নাবী) কে মুতাওয়াতির বিতাওয়াতুরিল ইসনাদও বলা যায়।
তাছাড়া সকল যুগের ফকীহ ও সব ধরনের আলেমের স্বতঃস্ফূর্ত গ্রহণের কারণে এই রেওয়ায়েতটি ‘মুতালাক্কা বিলকবূল’ও বটে।
এই তিন প্রকার রেওয়ায়েত অর্থাৎ মুতাওয়াতির বিতাওয়াতুরিত তবাকা, মুতাওয়াতির বিতাওয়াতুরিল ইসনাদ ও খাবারুল ওয়াহিদ আলমুতালাক্কা বিল কবূল হচ্ছে অকাট্যভাবে প্রমাণিত রেওয়ায়েতের অন্তর্ভুক্ত। এর তুলনায় ‘খাবারে ওয়াহিদে সহীহ’ অনেক অনেক নিচের পর্যায়ের বর্ণনা।
আপনার বন্ধু যে রেওয়ায়েতটির কথা বলেছে, তা সহীহ নয়; ‘মা’লুল’ ও ‘মুযতারিব’। কারণ এই হাদীসের মুল রাবী হল, ‘সাইব ইবনে ইয়াযিদ।’ তাঁর সূত্রে এই হাদীসের বর্ণনাকারী তিনজন : ১. হারিস ইবনে আবদুর রহমান ২. ইয়াযিদ ইবনে খুসাইফা ৩. মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ।
প্রথমোক্ত দুই শাগরিদ সাইব ইবনে ইয়াযিদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, সে সময় তারাবীহ বিশ রাকাত ছিল।
তবে তৃতীয় শাগরিদ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ তাঁর উস্তাদ সাইব ইবনে ইয়াযিদ-এর সূত্রে কী বর্ণনা করেছেন তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফের শাগরিদদের কেউ এগার রাকাত, কেউ তের রাকাত আবার কেউ একুশ রাকাতের কথা বর্ণনা করেন।
আপনার বন্ধু এগার রাকাতের রেওয়ায়েতটি গ্রহণ করে তা সহীহ বানিয়ে দিয়েছেন। অথচ রেওয়ায়েতটি ‘মুযতারিব।’ কেননা, মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফের অন্যান্য শাগরিদদের রেওয়ায়েত এর বিপরীত।
অতএব মূল রাবী সাইব ইবনে ইয়াযিদ কী বলেছেন তা নির্ণয় করার জন্য মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফের এই রেওয়ায়েতের পরিবর্তে-যাতে রাকাতসংখ্যা অনির্দিষ্ট-অন্য শাগরিদদের রেওয়ায়েত গ্রহণ করতে হবে। এতে কোনো ধরনের ইখতিলাফ ও ইযতিরাব বাকি থাকে না।
পুরো আলোচনাটি ‘ফন্নী’ ভাষায় লেখা হল। কারণ প্রশ্নে আপনি ‘ফন্নী’ পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। আপনি আলেম না হলেও আপনার বন্ধু সম্ভবত আলেম। তিনি ইনশাআল্লাহ বুঝতে পারবেন। আলকাউসারের আগামী শাবান-রমযান ১৪৩২ হি. সংখ্যায় এই উত্তরের ব্যাখ্যা সম্বলিত দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখার ইচ্ছা রইল। আল্লাহই তাওফীকদাতা।
আমি এ বছর হজ্বে যাওয়ার নিয়ত করেছি। ৫ যিলহজ্ব আমার...
আমি এ বছর হজ্বে যাওয়ার নিয়ত করেছি। ৫ যিলহজ্ব আমার ফ্লাইট। যেহেতু হজ্বের আগে দীর্ঘ সময় থাকতে হবে না তাই আমি হজ্বে কিরান করতে চাচ্ছি। যদি সৌদিতে খুব ঠাণ্ডা পড়ে তবে আমি কি ইহরাম অবস্থায় হাত, পা ও চেহারা চাদর দিয়ে ঢেকে ঘুমাতে পারব?
ইহরাম অবস্থায় মাথা ও চেহারা ব্যতীত শরীরের বাকি অংশ চাদর দিয়ে ঢাকা জায়েয। আর বিনা ওজরে পূর্ণ একদিন বা এক রাত মাথা বা চেহারা ঢেকে রাখলে দম ওয়াজিব হবে। হ্যাঁ, কোনো ওজরের কারণে ঢাকার অনুমতি আছে। যেমন প্রচণ্ড শীতের কারণে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে চেহারা ও মাথা ঢেকে রাখতে পারবে তবে এক্ষেত্রেও পূর্ণ এক দিন বা এক রাত চেহারা ঢেকে রাখলে দমে তাখয়ীর ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ তিন পদ্ধতির যেকোনো একটি পদ্ধতিতে দম আদায় করা যাবে : ১. বকরি বা দুম্বা জবাই করা ২. তিন সা’ অর্থাৎ ৯.৮১৬ কেজি গম, আটা বা তার সমপরিমাণ মূল্য ছয় জন মিসকীনকে সদকা করে দেওয়া ৩. অথবা তিনটি রোযা রাখা।
উল্লেখ্য, পূর্ণ এক দিন বা পূর্ণ এক রাতের কম সময় ঢাকা থাকলে এক ফিৎরা পরিমাণ টাকা সদকা করে দিবে।
-মানাসিক, মোল্লা আলী পৃ. ৩০৮, ৩৯২; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২৫৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৮৮; তাকরীরাতে রাফেয়ী ২/১৫৯; মিনহাতুল খালিক (আলবাহরুর রায়েক) ২/৩২৪; উমদাতুল ফিকহ ৫/১১৩
আমাদের মসজিদের হাফেজ সাহেব তারাবীর সময় ঘোষণা করলেন যে, প্রথম...
আমাদের মসজিদের হাফেজ সাহেব তারাবীর সময় ঘোষণা করলেন যে, প্রথম রাকাতে সিজদা আছে। কিন্তু তিনি সেজদার আয়াত পর্যন্ত পৌঁছার আগেই আয়াত ভুলে যান। যেহেতু তিনি সেজদার কথা ঘোষণা করেছেন তাই সেজদার আয়াত না পড়েও ইচ্ছা করে সেজদা করেছেন। তারপর অন্য আয়াত থেকে পড়ে নামায শেষ করেন এবং সাহু সেজদাও করেননি। জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত নামায সহীহ হয়েছে কি না?
সেজদার আয়াত পড়া ছাড়া ইচ্ছাকৃত সেজদা করা গুনাহের কাজ হয়েছে। তবে এর কারণে নামায ভঙ্গ হবে না; বরং সকলের নামায আদায় হয়ে গেছে। ইমামের উচিত তার ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করা।
আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৭৫; রদ্দুল মুহতার ১/৬২৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৯১; আলমিনহাতুল খালিক ২/৯১
হাফেয সাহেবগণ রমযান মাসে তারাবীর নামাযে কুরআন খতম করার পর...
হাফেয সাহেবগণ রমযান মাসে তারাবীর নামাযে কুরআন খতম করার পর সূর বাকারার কিছু অংশ পড়ে থাকেন। এ ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী?
হাদীস শরীফে কুরআন মজীদ একবার খতম হলে পুনরায় তা শুরু করার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এ নিয়মটি নামাযের বাইরের তেলাওয়াতে যেমন মুস্তাহাব তেমনিভাবে নামাযের খতমেও অনুসরণীয়। অবশ্য ১৯ তম রাকাতে খতম করে ২০ তম রাকাতে শুরু থেকে পড়ার চেয়ে উত্তম হল, ১৮ তম রাকাতে খতম করে শেষ দুই রাকাতে শুরু থেকে কিছু অংশ তিলাওয়াত করা। যেন প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের ধারাবাহিকতা বহাল থাকে।
-জামে তিরমিযী ২/১৪৩; আলইতকান ১/৩০০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৪৬
রমযান মাসে তারাবীর নামায নাবালেগ হাফেযের পিছনে পড়া জায়েয আছে...
রমযান মাসে তারাবীর নামায নাবালেগ হাফেযের পিছনে পড়া জায়েয আছে কি? যদি না থাকে তাহলে যে নামাযগুলো নাবালেগ হাফেযের পিছনে পড়া হয়েছে তা কি কাযা করতে হবে কি? গত রমযানে আমাদের দুই হাফেযের একজন নাবালেগ ছিল।
তারাবীর নামাযেও নাবালেগের পিছনে বালেগের ইকতিদা সহীহ নয়। অবশ্য তারাবীর যেহেতু কাযা নেই তাই বিগত দিনের তারাবী কাযা করতে হবে না।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৩/২০৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৯৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৪৬; হাশিয়া তাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ২৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫৮
আমি একজন শ্বাসকষ্টের রোগী। শীত-গ্রীষ্ম সারা বছর আমাকে ইনহেলার ব্যবহার...
আমি একজন শ্বাসকষ্টের রোগী। শীত-গ্রীষ্ম সারা বছর আমাকে ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। রাতে এবং দিনে মোট চারবার ইনহেলার নিতে হয়। তাই জানতে চাই, ইনহেলার ব্যবহারের দ্বারা রোযার কোনো ক্ষতি হয় কি না? যদি রোযা ভেঙ্গে যায় তাহলে আমি কি রোযা রাখতে পারব না? আমি কি দিনের বেলা খানাপিনা করতে পারব? এ বিষয়ে আমি খুবই চিন্তিত। একেকজন একেক ধরনের মত দিয়ে থাকে।
রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যায়। তাই সাহরীর শেষ সময় এবং ইফতারের প্রথম সময় ইনহেলার ব্যবহার করলে যদি চলে তবে রোযা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। তবে অসুস্থতা বেশি হওয়ার কারণে দিনেও ব্যবহার করা জরুরি হলে তখন ব্যবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় হল :
১. আপনি রমযানের রোযা রাখবেন।
২. উক্ত উযরে ইনহেলার ব্যবহার করলেও অন্যান্য পানাহার থেকে বিরত থাকবেন।
৩. পরবর্তীতে রোগ ভালো হলে এর কাযা করে নিবেন।
৪. ওজর যদি সারা বছর থাকে তাহলে ফিদয়া আদায় করবেন।
সূরা বাকারা : ১৮৪; ফাতহুল কাদীর ২/২৮২; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬১;রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; মাজাল্লাতুল মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ১০, ভলিয়ম ২, পৃষ্ঠা ৩১-৬৫
সামনে রমযান মাস। এ মাসের পরিপূর্ণ বরকত, রহমত ও ফযীলত...
সামনে রমযান মাস। এ মাসের পরিপূর্ণ বরকত, রহমত ও ফযীলত কীভাবে হাসিল করা যাবে সে ব্যাপারে জানতে চাই।
মাহে রমযান বছরের বাকি এগারো মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে ইরশাদ করেন, (তরজমা) রমযান মাসই হল সে মাস যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত।-সূরা বাকারা : ১৮৫
হাদীস শরীফে এসেছে, যখন রমযানের আগমন হয় তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। -সহীহ বুখারী হাদীস : ১৮৯৯
অন্য হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।- মুসনাদে আহমদ হাদীস ২১৬৯৮
তাই এ মাস হচ্ছে হেদায়েত লাভের মাস, আল্লাহ তাআলার রহমত লাভের মাস এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত হাসিলের মাস। সুতরাং বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা এবং তাওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে মুক্তির সনদ লাভে সচেষ্ট হওয়া কর্তব্য।
এ মাসের রোযাকে আল্লাহ তাআলা ফরয করেছেন। তাই প্রত্যেক সুস্থ ও বালিগ মুসলিম নর-নারীর জন্য রোযা রাখা অপরিহার্য। বলাবাহুল্য যে, ফরয ইবাদতের মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহ তাআলার সর্বাধিক নৈকট্য অর্জন করে।
রমযানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে তারাবী। রমযানের বরকতময় রজনীতে বিশ রাকাত তারাবীর নামায আদায়ে যত্নবান হওয়া উচিত। রমযান মাস হচ্ছে কুরআন নাযিলের মাস। তাই কুরআন মজীদ শ্রবণের জন্য এবং এই পুণ্যময় রজনীতে আল্লাহর সান্নিধ্যে দণ্ডায়মান হওয়ার জন্য তারাবী নামাযের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া কর্তব্য। অন্য সময়ও ব্যক্তিগতভাবে অধিক পরিমাণে কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা উচিত।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাহাজ্জুদ নামায। এ মাসে যেহেতু সাহরী খাওয়ার সুবাদে সুবহে সাদিকের পূর্বেই সবাইকে উঠতে হয় তাই এ সুযোগে তাহাজ্জুদের ইহতিমাম করা সহজ। হাদীস শরীফে তাহাজ্জুদের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। তদ্রূপ সাধ্যমতো দান-সদকা করা উচিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে অনেক বেশি দান-সদকা করতেন।
এসব নেক আমলের পাশাপাশি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করাও অপরিহার্য। রমযান মাস হচ্ছে তাকওয়া ও পরহেযগারী অর্জনের মাস। আল্লাহ তাআলা রোযাকে ফরয করেছেন তাকওয়া অর্জনের জন্য। হাদীস শরীফ থেকে জানা যায় যে, গুনাহ থেকে সর্বোতভাবে বেঁচে থাকা ছাড়া রোযা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই রোযাকে নিখুঁতভাবে আদায়ের উদ্দেশ্যে মুমিন যখন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে তখন আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে তাকে তাকওয়া ও পরহেযগারীর শক্তি দান করেন। এজন্য সকল গুনাহ থেকে, বিশেষ করে গীবত, শেকায়েত, কুদৃষ্টি, কুচিন্তা, হারাম পানাহার ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলিমের একান্ত কর্তব্য।
খতম তারাবীর ইমামতি করে বিনিময় বা হাদিয়া নেওয়া জায়েয কি...
খতম তারাবীর ইমামতি করে বিনিময় বা হাদিয়া নেওয়া জায়েয কি না? এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন দিলে জায়েয হবে কি না? কেউ কেউ বলেন, ফরয নামাযের ইমামতির বিনিময় যখন জায়েয তখন খতম তারাবীর বিনিময় গ্রহণও জায়েয হবে। এছাড়া হাফেজ সাহেবকে যদি দু’এক ওয়াক্ত ফরয নামাযের দায়িত্ব দেওয়া হয় তবে তো নাজায়েয হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাদের একথা ঠিক কি না? ইমামতির হীলা হোক বা অন্য কোনো উপায়ে তারাবীর বিনিময় বৈধ কি না?
খতম তারাবীর বিনিময় দেওয়া-নেওয়া দুটোই নাজায়েয। হাদিয়ার নামে দিলেও জায়েয হবে না। এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন হিসাবে দিলেও জায়েয নয়। কারণ এক্ষেত্রেও প্রদেয় বেতন খতমের বিনিময় হওয়া স্বীকৃত। মোটকথা, খতম তারাবীর বিনিময় গ্রহণের জন্য হিলা অবলম্বন করলেও তা জায়েয হবে না। কারণ খতমে তারাবীহ খালেস একটি ইবাদত, যা নামায ও রোযার মতো ইবাদতে মাকসূদা’-এর অন্তর্ভুক্ত। আর এ ধরনের ইবাদতের বিনিময় বা বেতন দেওয়া-নেওয়া উম্মতে মুসলিমার ঐকমত্যের ভিত্তিতে নাজায়েয। এতে না কোনো মাযহাবের মতপার্থক্য আছে, না পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ফকীহগণের মাঝে কোনো মতভেদ আছে।
ইমামতির বেতন ঠিক করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী ফকীহগণের দৃষ্টিতে জায়েয, কিন্তু খতম তারাবীর বিনিময়টা ইমামতির জন্য হয় না; বরং তা মূলত খতমের বিনিময়ে হয়ে থাকে। আর তেলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা সকল ফকীহ্র নিকট হারাম। অধিকন্তু পরবর্তী ফকীহ্গণ যে ইমামতির বেতন জায়েয বলেছেন সেটা হল ফরযের ইমামতি। সুন্নাত জামাতের ইমামতি এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
আর হাফেযদের দেওয়া বিনিময়কে জায়েয করার জন্য এই হিলা অবলম্বন করা যে, শুধু রমযান মাসের জন্য তার উপর দু-এক ওয়াক্ত নামাযের দায়িত্ব দেওয়া হবে-এটা একটা বাহানামাত্র; যা পরিহার করা জরুরি। কারণ এই হিলার যে বিমিনয়টা তাকে ফরযের ইমাতির জন্য দেওয়া হচ্ছে আর তারাবীর খতম সে বিনিময়হীনভাবেই করে দিচ্ছে। কিন' আপনার মনকে একটু প্রশ্ন করে দেখুন, যদি ওই হাফেয সাহেব তার দায়িত্বে অর্পিত ফরয নামাযের ইমামতি যথাযথ গুরুত্বের সাথেও আদায় করেন আর খতম তারাবীতে অংশগ্রহণ না করেন তবে কি তাঁকে ওই বিনিময় দেওয়া হবে, যা খতম তারাবী পড়ালে দেওয়া হত? এ কথা সুস্পষ্ট যে, কখনো তা দেওয়া হবে না। বোঝা গেল, বিনিময়টা মূলত খতম তারাবীর, ফরযের ইমামতির নয়।
এ জন্যই আকাবিরের অনেকে এই হিলা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর দলীলের ভিত্তিতেও তাঁদের ফতওয়াই সহীহ।
দেখুন : ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২২; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৬৪
নিচে এ বিষয়ে কিছু হাদীস, আছারের অনুবাদ ও ফিকহের উদ্ধৃতি পেশ করা হল।
১. হযরত আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পড় তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না এবং তার প্রতি বিরূপ হয়ো না। কুরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না।’-মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/২৪০; কিতাবুত তারাবীহ
২. ইমরান ইবনে হোসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পড় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা কর। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে।’-মুসনাদে আহমদ ৪/৪৩৭; জামে তিরমিযী ২/১১৯
৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মা’কিল থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমযান মাসে লোকদের নিয়ে তারাবীহ পড়লেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ রাহ. তাঁর কাছে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া ও দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন যে, আমরা কুরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/২৩৭
আরো দেখুন : ফাতাওয়া শামী ৬/৫৭; তানকীহুল ফাতাওয়া হামীদিয়া ২/১৩৭-১৩৮; আলইখতিয়ার লিতা’লীলিল মুখতার ২/৬২; শিফাউল আলীল ওয়াবাল্লুল গালীল (রাসায়েলে ইবনে ইবনে আবেদীন) ১/১৫৪-১৫৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩১৫-৩১৯ ও ৩২২; রাফেউল ইশকালাত আনহুরমাতিল ইস্তিজার আলাত্তাআত, মুফতিয়ে আযম হযরত মাওলানা মুফতী ফয়যুল্লাহ রাহ.।
অনেকে শবে বরাতের পরদিন রোযা রাখেন। এ বিষয়ে শরীয়তের হুকুম...
অনেকে শবে বরাতের পরদিন রোযা রাখেন। এ বিষয়ে শরীয়তের হুকুম কী জানতে চাই।
শা’বানের এক তারিখ থেকে সাতাইশ তারিখ পর্যন্ত রোযা রাখার বিশেষ ফযীলতের কথা হাদীস শরীফে আছে। তাছাড়া আইয়ামে বীয তথা প্রতি মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখে রোযা রাখার ব্যাপারে হাদীস শরীফে উৎসাহিত করা হয়েছে। সেই সাথে যয়ীফ সনদে বর্ণিত একটি হাদীসে বিশেষভাবে পনেরো তারিখের রোযা রাখার নির্দেশনাও পাওয়া যায়। (তরজমা) পনেরো শা’বানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা তা ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং পরদিন রোযা রাখ।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৩৮৪
আগেই বলা হয়েছে যে, যেহেতু বিভিন্ন সহীহ হাদীসে শা’বান মাসের রোযার সাধারণ ফযীলত এবং আইয়ামে বীযের রোযার ফযীলত উল্লেখিত হয়েছে পাশাপাশি যয়ীফ সনদে উপরোক্ত হাদীসটিও বিদ্যমান রয়েছে তাই কেউ যদি এই সকল বিষয় বিবেচনায় রেখে পনেরো শা’বানের রোযা রাখেন তাহলে তিনি ছওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ।
রবিউল আওয়াল, রবিউস সানী, জুমাদাল উলা, জুমাদাল উখরা, যিলকদ-এই মাসগুলোতে...
রবিউল আওয়াল, রবিউস সানী, জুমাদাল উলা, জুমাদাল উখরা, যিলকদ-এই মাসগুলোতে বিশেষ কোনো রোযা-নামাযের কথা কুরআন-হাদীসে আছে কি না?
প্রশ্নোক্ত মাসগুলোতে বিশেষ কোনো নামায বা রোযার কথা কুরআন-হাদীসে নেই। তবে যিলকদ মাস যেহেতু আশহুরে হুরূম তথা চারটি সম্মানিত মাসের অন্যতম তাই এ মাসে নফল রোযা রাখা মুস্তাহাব। কেননা আশহুরে হুরূমে নফল রোযা রাখার কথা হাদীসে রয়েছে।
একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে লক্ষ্য করে বলেছেন, তুমি আশহুরে হুরূমে রোযা রাখ।
লাতাইফুল মাআরিফ পৃ. ২৮৫, ২৮৬; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ২৪২৫; বাযলুল মাজহূদ ১১/২৯০; আউনুল মাবুদ ৭/৫৮; নায়লুল আওতার ৪/৩১৮; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৭৪১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৭৫; আলফাযাইলু ওয়াল আহকাম লিশশুহূরি ওয়াল আইয়াম, আল্লামা আবদুল করীম গুমথালভী পৃ. ২০
আমার ছোট ভাইয়ের বয়স ১৭ বছর। দীর্ঘদিন ধরে রোগাক্রান্ত। খাওয়া-দাওয়া...
আমার ছোট ভাইয়ের বয়স ১৭ বছর। দীর্ঘদিন ধরে রোগাক্রান্ত। খাওয়া-দাওয়া খুবই অল্প। তাই দুর্বলতা খুবই বেশি। সে রমযানের প্রথম রোযা রেখে সম্পূর্ণ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পেটের ব্যাথা ও অন্যান্য রোগ চরমে পৌঁছে যায়। এমতাবস্থায় রোযা রাখতে হবে কি? নাকি না রেখে পরে কাযা করবে? নাকি ফিদয়া দিবে?
অসুস্থতার কারণে রোযা রাখা কষ্টকর হলে রোযা রাখবে না। সুস্থ হলে রমযানের পর এই রোযাগুলো কাযা করে নিতে হবে। কাযা করার সামর্থ্য ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ফিদয়া দেওয়া যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে কাযাই করতে হবে।
সূরা বাকারা : ১৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯; আলমাবসূত সারাখসী ৩/৮৯
আমি একটি মসজিদের মুআযযিন। আমার কামরা মসজিদের বাইরে উত্তর পার্শ্বে...
আমি একটি মসজিদের মুআযযিন। আমার কামরা মসজিদের বাইরে উত্তর পার্শ্বে মসজিদের সাথে লাগানো। আযান দেওয়ার জন্য মাইক্রোফোন আমার কামরায় স্থাপন করা হয়েছে। আমি কি ইতেকাফ অবস্থায় আযান দেওয়ার জন্য মসজিদ হতে বের হয়ে আমার কামরায় যেতে পারব?
হ্যাঁ, ইতিকাফ অবস্থায় আযান দেওয়ার জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবেন এবং আযান শেষ হলে অন্য কাজে লিপ্ত না হয়ে আবার মসজিদে ফিরে আসবেন। এতে আপনার ইতেকাফ নষ্ট হবে না।
বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪১২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৩; আলমাবসূত সারাখসী ৩/১২৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩; ফাতহুল কাদীর ২/৩১১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৯
কোনো মসজিদে একবার তারাবী হয়ে গেলে পুনরায় তারাবীর জামাত করা...
কোনো মসজিদে একবার তারাবী হয়ে গেলে পুনরায় তারাবীর জামাত করা সহীহ কি না?
মসজিদে তারাবীর দ্বিতীয় জামাত করাও মাকরূহ।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩৪; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৪০৮
আমি একদিন তারাবীর নামায আদায় করছিলাম। মাঝে একটি জরুরতে মসজিদ...
আমি একদিন তারাবীর নামায আদায় করছিলাম। মাঝে একটি জরুরতে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসি। পুনরায় মসজিদে গিয়ে দেখি যে, ইমাম সাহেব নামাযরত। তবে তারাবীহ না বিতর এ বিষয়ে সংশয়ে পড়ি। তখন আমি এভাবে নিয়ত করি যে, যদি ইমাম সাহেব বিতরের মধ্যে থাকেন তবে বিতরের নিয়ত করলাম আর তারাবীতে হলে তারাবীর। প্রকৃতপক্ষে তা ছিল বিতরের নামায। আমার জানার বিষয় হল, এমতাবস্থায় আমার উক্ত নিয়ত ও নামায সহীহ হয়েছে কি না?
জ্বী, এক্ষেত্রে ঐভাবে নিয়ত করা সহীহ হয়েছে এবং বিতরের নামায আদায় হয়েছে।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮২; ফাতহুল কাদীর ১/২৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৩০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ১২০
এক ব্যক্তি গত রমযানে রোযা রাখার নিয়তে রাত্রিবেলায় সাহরী খেয়েছে।...
এক ব্যক্তি গত রমযানে রোযা রাখার নিয়তে রাত্রিবেলায় সাহরী খেয়েছে। দিনের বেলায় যখন সূর্য উদিত হয় এবং চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়ে তখন লোকটি ভাবল আজ আমি রোযা রাখব না। তাই আমি আমার রাত্রের নিয়ত ত্যাগ করলাম। এই বলে সে ইচ্ছাকৃত পানাহার করে ফেলে। জানার বিষয় এই যে, তার এই কাজটি ঠিক হয়েছে কি? এর কারণে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে কি? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
লোকটির বিনা ওজরে এভাবে ইচ্ছাকৃত রোযা ভঙ্গ করা সম্পূর্ণ না-জায়েয হয়েছে। তাকে উক্ত রোযার কাযা ও কাফফারা উভয়টি আদায় করতে হবে এবং কায়মনোবাক্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে তওবা-ইসি-গফার করতে হবে।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৬১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৮০, (ইচ্ছাকৃত রোযা ভঙ্গ করা :) সহীহ বুখারী ১/২৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১২
জনৈক রোযাদার ব্যক্তির রোযা অবস্থয় হঠাৎ অনিচ্ছায় অল্প পরিমাণ বমি...
জনৈক রোযাদার ব্যক্তির রোযা অবস্থয় হঠাৎ অনিচ্ছায় অল্প পরিমাণ বমি মুখে চলে আসে। অতঃপর তা আবার ভিতরে চলে যায়। জানার বিষয় হল, উক্ত কারণে কি তার রোযা ভেঙ্গে গেছে?
না, ঐ ব্যক্তির রোযা নষ্ট হয়নি।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৬৩; ফাতহুল কাদীর ২/২৬০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১১; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৪
জনৈক অসুস্থ মাযূর ব্যক্তি যিনি রোযা রাখতে পারেন না তিনি...
জনৈক অসুস্থ মাযূর ব্যক্তি যিনি রোযা রাখতে পারেন না তিনি তার রোযার ফিদয়া পুরা রমযানেরটা এক সাথে রমযানের শুরুতেই আদায় করে দিতে পারবেন কি না?
হ্যাঁ, রমযানের শুরুতেই পুরা রমযানের ফিদইয়া একত্রে আদায় করে দিতে পারবে।
আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; হাশিয়া তাহতাবী আলালমারাকী পৃ. ৩৭৬; হাশিয়া তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭
আমাদের মহল্লার মসজিদে রমযান মাসে অনেক সময় গরমের কারণে তারাবীর...
আমাদের মহল্লার মসজিদে রমযান মাসে অনেক সময় গরমের কারণে তারাবীর নামায পড়া কষ্টকর হয়ে যায়। তখন মসজিদের ছাদে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হয়। এ অবস্থায় আমাদের জন্য মসজিদ ছেড়ে ছাদে গিয়ে তারাবীহর নামায পড়া জায়েয হবে কি না?
জামাতে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, মসজিদের ভিতরে মূল অংশে তা আদায় করা। বিনা ওজরে বা সামান্য ওজরে মসজিদের মূল অংশ খালি রেখে ছাদে জামাত করা অনুচিত। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সামান্য গরমের কারণে আপনাদের জন্য মসজিদ ছেড়ে ছাদে গিয়ে তারাবীহর জামাত করা ঠিক হবে না।
তবে যদি গরম এত বেশি হয় যে, দীর্ঘ সময় ধরে নামায পড়তে গিয়ে মুসল্লীদের নামাযে একাগ্রতা ব্যাহত হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে মসজিদের ছাদে গিয়ে তারাবীহর জামাত করা যেতে পারে।
আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৬৪; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৬৭০; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৪১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২২; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৬; জামেউর রুমূয ১/১৬৮
আমি সাহরী খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করি। প্রায়ই দেখা যায়,...
আমি সাহরী খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করি। প্রায়ই দেখা যায়, এ অবস্থায় আযান হয়ে যায়। জানতে চাই এতে কি আমার রোযার কোনো ক্ষতি হবে?
রোযা অবস্থায় টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করা মাকরূহ তানযীহী। আর যদি তা গলায় বা পেটের ভেতর চলে যায় তবে তো রোযা নষ্টই হয়ে যাবে। তাই সাহরীর সময় শেষ হয়ে গেলে পেস্ট বা মাজন জাতীয় কোনো কিছু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
রদ্দুল মুহতার ২/৪১৫-৪১৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৪; হিদায়া ১/২২০
আমি এক মসজিদে রমযানের শেষের দশ দিন সুন্নতে মুয়াক্কাদার নিয়তে...
আমি এক মসজিদে রমযানের শেষের দশ দিন সুন্নতে মুয়াক্কাদার নিয়তে ইতিকাফ করেছি। সে মসজিদে অনেক লোক ইতিকাফ করেন। তাই আমরা কিছু লোক দ্বিতীয় তলায় ইতিকাফ করেছি। সে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় যাতায়াতের সিড়ি মসজিদের অংশ থেকে বাইরে। প্রশ্ন হল, আমরা যারা দোতলায় ইতিকাফ করেছি নামাযের জন্য কি প্রথম তলায় খালি কাতার থাকা অবস্থায় আসতে পারব? না আসলে আমাদের নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ইতিকাফকারী ব্যক্তি ঐ সিড়ি ব্যবহার করে নিচ তলায় এসে কাতারের সাথে মিলে দাঁড়াতে পারবে। এক্ষেত্রে মসজিদের বাইরের সিড়ি ব্যবহার করার কারণে তার ইতিকাফ নষ্ট হবে না।
মাবসূত সারাখসী ৩/১১৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৫০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪১১; ফাতহুল কাদীর ২/৩০৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫
আমি রমযান মাসে দিনের বেলায় মেসওয়াক করছিলাম। এ অবস্থায় মেসওয়াকের...
আমি রমযান মাসে দিনের বেলায় মেসওয়াক করছিলাম। এ অবস্থায় মেসওয়াকের একটি ছোট আঁশ গলার ভিতর চলে যায়। প্রশ্ন হল, আমার ঐ রোযাটি কি সহীহ হয়েছে? নাকি এর কাযা করতে হবে?
ঐ কারণে আপনার রোযা নষ্ট হয়নি। তাই কাযাও করতে হবে না।
মাবসূত সারাখসী ৩/৯৩; মাজমাউল আনহুর ১/৩৬২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৮; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৬১; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫
আমাদের মসজিদের প্রধান গেটের বাইরে রাস্তার অপর পার্শ্বে আনুমানিক ২৫...
আমাদের মসজিদের প্রধান গেটের বাইরে রাস্তার অপর পার্শ্বে আনুমানিক ২৫ হাত দূরে অবসি'ত মসজিদের ওয়াকফকৃত একটি চার তলা বিল্ডিং রয়েছে। যার ৩য় তলায় একটি হেফযখানা মাদরাসা রয়েছে। উক্ত মসজিদের ওয়াকফকৃত বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। উক্ত হোটেল রমযান মাসে দিনের বেলা খোলা রাখা হয়। উল্লেখ্য চুড়িহাট্টা মহল্লার সবাই মুসলমান। আমাদের জানার বিষয় হল, মসজিদের উক্ত বিল্ডিংয়ে রোযার মাসে দিনের বেলা প্রকাশ্যে হোটেল খোলা রেখে খাওয়া দাওয়া করানো জায়েয হবে কি না? রোযার মাসে দিনের বেলা হোটেল খোলা রাখতে নিষেধ না করা ও প্রকাশ্যে আল্লাহর নাফরমানি প্রতিরোধ না করার কারণে মসজিদ কমিটি গুনাহগার হবে কি না?
রোযা ইসলামের পাঁচটি রোকনের অন্যতম। ইসলামের মৌলিক ফরযের অন-র্ভুক্ত। বিনা ওজরে রোযা না রাখা কবীরা গুনাহ। আখেরাতে এর জন্য কঠিন শাসি- রয়েছে। আর রমযান মাসে রোযা না রেখে প্রকাশ্যে পানাহার করা আরো ভয়াবহ গুনাহ। এটা আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট হুকুমের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন, যা মূলত কুফরীতুল্য গুনাহ। তাই রমযানে দিনের বেলা হোটেল খোলা রাখা এবং পানাহার করানো সম্পূর্ণ হারাম।
উপরন্তু মসজিদ হল আল্লাহর ঘর, শেয়ারে ইসলাম ও ইসলামের হুকুম আহকাম হেফাযত ও সংরক্ষণের পবিত্র কেন্দ্র। তাই মসজিদের ওয়াকফিয়া ভবনে এরূপ শরীয়ত বিরোধী কর্মকাণ্ড হওয়া আরো কঠিন গুনাহ। সুতরাং এ নিয়ম বন্ধ করা জরুরি। অন্যথায় মসজিদ কমিটি ও সংশ্লিষ্ট সবাই গুনাহগার হবে। এলাকাবাসীরও দায়িত্ব তা বন্ধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা।
সূরা বাকারা : ১৮৩; সূরা আলইমরান : ১০৪; সূরা মায়েদা : ২; সূরা হজ্ব : ৩২; আহকামুল কুরআন জাসসাস ২/২৯৯; সহীহ মুসলিম হাদীস : ৭৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/১০১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৩
জনৈক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের লোকজন স্বেচ্ছায় চাচ্ছে...
জনৈক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের লোকজন স্বেচ্ছায় চাচ্ছে যে, তার কাযা নামায ও রোযার ফিদয়া আদায় করবে। প্রশ্ন হল, ফিদয়ার এ টাকা কি মসজিদ ও মাদরাসার নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা যাবে?
মৃত ব্যক্তি যেহেতু কাযা নামায ও রোযার ফিদয়া আদায়ের অসিয়ত করে যায়নি তাই ওয়ারিসদের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছায় আদায়কৃত টাকা মসজিদ-মাদরাসার নির্মাণ কাজেও ব্যবহার করা যাবে। কারণ এক্ষেত্রে টাকাগুলো নফল সদকা হিসাবে গণ্য হবে।
হিদায়া ১/২২২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৬; খানিয়া ১/২০৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৩৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৮৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৪; রদ্দুল মুহতার ২/৭২, ৪২৫
হুজুর আমার বড় ভাই হাফেয ও আলেম। আমার আব্বা ও...
হুজুর আমার বড় ভাই হাফেয ও আলেম। আমার আব্বা ও আম্মা ভাইয়ার পিছনে তারাবীর নামায পড়তে চান। বাড়িতে আমার ছোট দুই বোন ও এক ভাই আছে। তারা কি একত্রে জামাত করে তারাবীর নামায পড়তে পারবেন? এক্ষেত্রে জামাতে কীভাবে দাঁড়াবে জানিয়ে বাধিত করবেন। প্রকাশ থাকে যে, জামাতে কোনো গায়রে মাহরাম পুরুষ বা মহিলা থাকে না।
আপনার ভাই বাবা, মা ও মাহরাম মহিলাদের নিয়ে বাড়িতে জামাতের সাথে তারাবীর নামায পড়তে পারবেন। এক্ষেত্রে ইমামের পিছনে পুরুষদের কাতার হবে। এর পরবর্তী কাতারে মহিলাগণ দাঁড়াবে।
দাঁড়াবে।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৪০৭; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৩/১০৭; আলইসতিযকার ৫/৩৭৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৭২
আমার পিতা বার্ধক্যের দরুণ রোযা রাখার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছেন। জানতে...
আমার পিতা বার্ধক্যের দরুণ রোযা রাখার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছেন। জানতে চাই, এক রোযার ফিদয়া একাধিক ব্যক্তিকে দেওয়া জায়েয হবে কি না?
হ্যাঁ, এক রোযার ফিদয়া একাধিক ব্যক্তিকেও দেওয়া জায়েয। তবে একজনকে পুরো একটি ফিদয়া দেওয়া উত্তম।
আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭
রমযান মাসে অনেক সময় কোনো কোনো রোযাদারকে ভুলে পানাহার করতে...
রমযান মাসে অনেক সময় কোনো কোনো রোযাদারকে ভুলে পানাহার করতে দেখা যায়। পানাহারের সময় তাদেরকে বারণ করা বা না করা সম্পর্কে করণীয় কী জানিয়ে বাধিত করবেন।
রমযান মাসে কোনো সুস' সবল লোককে ভুলে পানাহার করতে দেখলে তাকে রোযার কথা স্মরণ করিয়ে দিবে। তবে কোনো দুর্বল বা বৃদ্ধকে ভুলে পানাহার করতে দেখলে রোযার কথা স্মরণ না করানোই উত্তম।
আলবাহরুর রায়েক ২/২৭১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৮৪; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩২২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫
এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছিলেন। তিন দিন পর...
এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছিলেন। তিন দিন পর তিনি অযু-ইসে-ঞ্জার প্রয়োজন ছাড়া শুধূ সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হলেন এবং মসজিদের অযুখানায় গোসল করলেন। জানার বিষয় হল, ইতিকাফ অবস'ায় সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয আছে কি না? বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হবে কি না?
রমযান মাসের শেষ দশকের ইতিকাফ অবস'ায় সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নেই। বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি সাধারণ গোসলের জন্য বের হওয়ার কারণে তার সুন্নত ইতিকাফ নষ্ট হয়ে গেছে। যেদিন গোসলের জন্য বের হয়েছে ঐ দিনের ইতিকাফ কাযা করে নেওয়া জরুরি। আর এই ইতিকাফটি নফল ইতিকাফ হিসাবে গণ্য হবে।
মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০১; আননাহরুল ফায়েক ২/৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪৫
খতম তারাবীর ইমামতি করে বিনিময় বা হাদিয়া নেওয়া জায়েয কি...
খতম তারাবীর ইমামতি করে বিনিময় বা হাদিয়া নেওয়া জায়েয কি না? এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন দিলে জায়েয হবে কি না? কেউ কেউ বলেন, ফরয নামাযের ইমামতির বিনিময় যখন জায়েয তখন খতম তারাবীর বিনিময় গ্রহণও জায়েয হবে। এছাড়া হাফেজ সাহেবকে যদি দু’এক ওয়াক্ত ফরয নামাযের দায়িত্ব দেওয়া হয় তবে তো নাজায়েয হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাদের একথা ঠিক কি না? ইমামতির হীলা হোক বা অন্য কোনো উপায়ে তারাবীর বিনিময় বৈধ কি না?
খতম তারাবীর বিনিময় দেওয়া-নেওয়া দুটোই নাজায়েয। হাদিয়ার নামে দিলেও জায়েয হবে না। এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন হিসাবে দিলেও জায়েয নয়। কারণ এক্ষেত্রেও প্রদেয় বেতন তারাবীহ এবং খতমের বিনিময় হওয়া স্বীকৃত। মোটকথা, খতম তারাবীর বিনিময় গ্রহণের জন্য হিলা অবলম্বন করলেও তা জায়েয হবে না। কারণ খতমে তারাবীহ খালেস একটি ইবাদত, যা নামায ও রোযার মতো ‘ইবাদতে মাকসূদা’-এর অন্তর্ভুক্ত। আর এ ধরনের ইবাদতের বিনিময় বা বেতন দেওয়া-নেওয়া উম্মতে মুসলিমার ঐকমত্যের ভিত্তিতে নাজায়েয। এতে না কোনো মাযহাবের মতপার্থক্য আছে, না পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ফকীহগণের মাঝে কোনো মতভেদ আছে।
ইমামতির বেতন ঠিক করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী ফকীহগণের দৃষ্টিতে জায়েয, কিন্তু খতম তারাবীর বিনিময়টা ইমামতির জন্য হয় না; বরং তা মূলত খতমের বিনিময়ে হয়ে থাকে। আর তেলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা সকল ফকীহ্র নিকট হারাম। অধিকন্তু পরবর্তী ফকীহ্গণ যে ইমামতির বেতন জায়েয বলেছেন সেটা হল ফরযের ইমামতি। সুন্নাত জামাতের ইমামতি এর অন-র্ভুক্ত নয়।
আর হাফেযদের দেওয়া বিনিময়কে জায়েয করার জন্য এই হিলা অবলম্বন করা যে, শুধু রমযান মাসের জন্য তার উপর দু-এক ওয়াক্ত নামাযের দায়িত্ব দেওয়া হবে-এটা একটা বাহানামাত্র; যা পরিহার করা জরুরি। কারণ এই হিলার যে বিমিনয়টা তাকে ফরযের ইমাতির জন্য দেওয়া হচ্ছে আর তারাবীর খতম সে বিনিময়হীনভাবেই করে দিচ্ছে। কিন' আপনার মনকে একটু প্রশ্ন করে দেখুন, যদি ওই হাফেয সাহেব তার দায়িত্বে অর্পিত ফরয নামাযের ইমামতি যথাযথ গুরুত্বের সাথেও আদায় করেন আর খতম তারাবীতে অংশগ্রহণ না করেন তবে কি তাঁকে ওই বিনিময় দেওয়া হবে, যা খতম তারাবী পড়ালে দেওয়া হত? এ কথা সুস্পষ্ট যে, কখনো তা দেওয়া হবে না। বোঝা গেল, বিনিময়টা মূলত খতম তারাবীর, ফরযের ইমামতির নয়।
এ জন্যই আকাবিরের অনেকে এই হিলা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর দলীলের ভিত্তিতেও তাঁদের ফতওয়াই সহীহ।
দেখুন : ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২২; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৬৪
সারকথা হল, কুরআন তেলাওয়াত, বিশেষত যখন তা নামাযে পড়া হয়, একটি খালেস ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন'ষ্টির জন্যই হওয়া চাই। তাতে কোনো দুনিয়াবী উদ্দেশ্য শামিল করা গুনাহ। নিচে এ বিষয়ে কিছু হাদীস, আছারের অনুবাদ ও ফিকহের উদ্ধৃতি পেশ করা হল।
১. হযরত আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পড় তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না এবং তার প্রতি বিরূপ হয়ো না। কুরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না।’-মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/২৪০; কিতাবুত তারাবীহ
২. ‘ইমরান ইবনে হোসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পড় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা কর। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে।’-মুসনাদে আহমদ ৪/৪৩৭; জামে তিরমিযী ২/১১৯
৩. ‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মা’কিল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমযান মাসে লোকদের নিয়ে তারাবীহ পড়লেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ রাহ. তাঁর কাছে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া ও দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন যে, আমরা কুরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/২৩৭
আরো দেখুন : ফাতাওয়া শামী ৬/৫৭; তানকীহুল ফাতাওয়া হামীদিয়া ২/১৩৭-১৩৮; আলইখতিয়ার লিতা’লীলিল মুখতার ২/৬২; শিফাউল আলীল ওয়াবাল্লুল গালীল (রাসায়েলে ইবনে ইবনে আবেদীন) ১/১৫৪-১৫৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩১৫-৩১৯ ও ৩২২; রাফেউল ইশকালাত আনহুরমাতিল ইসি-জার আলাত্তাআত, মুফতিয়ে আযম হযরত মাওলানা মুফতী ফয়যুল্লাহ রাহ.।
একজন বলল, রমযান মাসে রোযা অবস'ায় মাসিক শুরু হলে বাকি...
একজন বলল, রমযান মাসে রোযা অবস'ায় মাসিক শুরু হলে বাকি দিন অনাহার থাকা জরুরি। একথা কি ঠিক?
না, ঐ কথা ঠিক নয়। রোযা অবস'ায় মাসিক শুরু হলে বাকি দিন পানাহার করতে পারবে। তদ্রূপ যতদিন মাসিক চলবে ততদিন রমযানের দিনের বেলায় পানাহার করা জায়েয। তবে অন্যদের সামনে খাবে না। অবশ্য রমযান মাসে দিনের বেলায় মাসিক বন্ধ হলে বাকি দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা জরুরি।
মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৬/২২০; আলজাওয়াহারা ১/১৮৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৫
এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশদিন ইতিকাফে বসেছিলেন। কয়েকদিন পর তিনি...
এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশদিন ইতিকাফে বসেছিলেন। কয়েকদিন পর তিনি অসুস' হয়ে পড়লেন এবং রোযা ভেঙে ফেললেন। জানতে চাই যে, রোযা ভেঙে ফেলার কারণে তার ইতিকাফ নষ্ট হয়ে গেছে কি না?
রমযানের শেষ দশদিনের সুন্নত ইতিকাফের জন্য রোযা শর্ত। রোযা ব্যতীত সুন্নত ইতিকাফ আদায় হয় না। তাই উক্ত ব্যক্তি রোযা ভেঙে ফেলার কারণে তার সুন্নত ইতিকাফ নষ্ট হয়ে গেছে। অবশ্য তিনি যেহেতু মসজিদ থেকে বের হয়ে যাননি তাই তার ইতিকাফ নফল হিসাবে গণ্য হবে। নফল ইতিকাফের জন্য রোযা শর্ত নয়।
মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩৫৪; হিদায়া ১/২২৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ৩১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪১০,৪১৩; আলবাহরুল রায়েক ২/২৯৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪২
জনৈক ব্যক্তি রমযানের প্রথম রোযার দিন এই নিয়ত করে যে,...
জনৈক ব্যক্তি রমযানের প্রথম রোযার দিন এই নিয়ত করে যে, আমি পূর্ণ এক মাসের রোযা রাখার নিয়ত করলাম। জানার বিষয় হল, উক্ত ব্যক্তির এই নিয়তের দ্বারা পূর্ণ এক মাসের রোযা আদায় হবে কি না? রমযান মাসে আমরা সেহরী খাই কিন্তু রোযার নিয়ত করি না। সেহরী খাওয়ার দ্বারাই কি রোযার নিয়ত হয়ে যাবে?
রমযান মাসের প্রত্যেক রোযার জন্য প্রতিদিন পৃথক পৃথক নিয়ত করা শর্ত। এক সাথে পুরো মাসের নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। তবে রোযার উদ্দেশ্যে সেহরী খাওয়াও রোযার নিয়তের অন্তর্ভুক্ত। মৌখিক নিয়ত করা জরুরি নয়।
-সহীহ বুখারী ১/২; ফাতাওয়া হিন্দিয় ১/১৯৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০০-২০১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৭৯
এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফে বসে। কয়েকদিন পর অসুস্থ...
এক ব্যক্তি রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফে বসে। কয়েকদিন পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে ইতিকাফ ছেড়ে বাড়িতে চলে আসতে হয়েছে। যার কারণে পরবর্তী দিনগুলোতে ইতিকাফ করা সম্ভব হয়নি। জানার বিষয় হল, এখন তার কী করণীয়? ইতিকাফটি তাকে কাযা করতে হবে কি না?
ঐ ব্যক্তিকে নফল রোযাসহ একদিনের ইতিকাফ কাযা করে নিতে হবে। এজন্য সে কোনো একদিন সূর্যাস্ত থেকে পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করবে এবং দিনের বেলা রোযা রাখবে।
-রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৪; আহকামে ইতিকাফ পৃ. ৫০
গত বছর শাবান মাসের ২৯ তারিখ দুপুরে আমার পিতা সড়ক...
গত বছর শাবান মাসের ২৯ তারিখ দুপুরে আমার পিতা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। আঘাত পেয়ে তিনি এক দিনেরও কিছু বেশি সময় অচেতন থাকেন। পরের দিন শুরু হয়েছিল রমযান মাস। পহেলা রমযানে আসরের কিছুক্ষণ আগে জ্ঞান ফিরে পেয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবশিষ্ট সময় পানাহার না করে কাটান। এখন প্রশ্ন হল, আমার পিতার ঐ রোযাটি আদায় হয়েছে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার পিতার ঐ দিনের রোযা আদায় হয়নি। ঐ রোযা পরে কাযা করে নিতে হবে। কেননা তিনি ঐ দিন অনাহারে থাকলেও অচেতন থাকার কারণে যথাসময়ে তার রোযার নিয়ত করা হয়নি। আর রোযা সহীহ হওয়ার জন্য যথাসময়ে নিয়ত করা জরুরি। নিয়ত ছাড়া শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকা যথেষ্ট নয়। আর রমযানের রোযা সহীহ হওয়ার জন্য রোযার পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে রোযার দিনের অর্ধেকের আগে আগে নিয়ত করা আবশ্যক।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩০; মাবসূত, সারাখসী ৩/৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩২
আমি গত রমযানে একদিন দিনের বেলা ভুলক্রমে খেয়ে ফেলি। খাওয়া...
আমি গত রমযানে একদিন দিনের বেলা ভুলক্রমে খেয়ে ফেলি। খাওয়া শেষে রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে আরো খাই। প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় আমাকে ঐ রোযার কাযা এবং কাফফারা দুটোই আদায় করতে হবে, নাকি শুধু কাযা আদায় করে নিলেই চলবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নে বর্ণিত অবস্থায় আপনাকে রোযাটির কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা আদায় করতে হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, রোযা অবস্থায় ভুলবশত পানাহার করলে রোযা নষ্ট হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ভুলবশত খাওয়ার পর ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করা ঠিক হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে নিজ থেকে সিদ্ধান্ত না নিয়ে কোনো আলিম থেকে মাসআলা জেনে নেওয়া আবশ্যক ছিল।
-আলজামিউস সগীর, ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. ১৪১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৩; বাদয়েউস সানায়ে ২/২৫৭
আমার দাদা প্রায় প্রতি বছরই রমযানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ...
আমার দাদা প্রায় প্রতি বছরই রমযানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করেন। গত বছরও ইতিকাফ করেছেন। কিন্তু তিনি এত অসুস্থ ছিলেন যে, রোযা রাখতে সক্ষম হননি। তাই রোযা ছাড়াই ইতিকাফ পূর্ণ করেছেন। জানতে চাই, দাদার ইতিকাফ কি আদায় হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার দাদার ইতিকাফটি সুন্নত ইতিকাফ হয়নি। নফল ইতিকাফ হয়েছে। কারণ সুন্নত ইতিকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোযা ছাড়া ইতিকাফ হয় না।-সুনানে বায়হাকী ৪/৩১৭; মুসতাদরাকে হাকেম ২/৮১
অন্য বর্ণনায় আছে, সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, ইতিকাফকারীর জন্য রোযা রাখা আবশ্যক।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৩০০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২১; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/২৪৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪২
রোযা রাখা অবস্থায় গোসল করতে গিয়ে আমার কানে পানি ঢুকে...
রোযা রাখা অবস্থায় গোসল করতে গিয়ে আমার কানে পানি ঢুকে গেছে। এতে আমার রোযার কোনো সমস্যা হয়েছে কি? দয়া করে জানাবেন।
রোযা অবস্থায় কানের ভেতর পানি গেলে রোযার ক্ষতি হয় না। তাই আপনার ঐ রোযা আদায় হয়ে গেছে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৯
পিঠে তীব্র ব্যথার কারণে গত মহররমের রোযা অবস্থায় আমি শিঙ্গা...
পিঠে তীব্র ব্যথার কারণে গত মহররমের রোযা অবস্থায় আমি শিঙ্গা লাগিয়েছি। এতে আমার রোযা ভঙ্গ হয়েছে কি? জানালে উপকৃত হব।
শিঙ্গা লাগালে বা শরীর থেকে রক্ত বের হলে রোযা ভঙ্গ হয় না। তাই আপনার রোযাও ভঙ্গ হয়নি।
উল্লেখ্য, শিঙ্গা লাগানোর দ্বারা যদি এত বেশি দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা হয়, যার দরুণ রোযা রাখা কষ্টকর হয়ে যায়, তবে সেক্ষেত্রে তা মাকরূহ হবে।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৫৯৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৫
আমার কয়েক রাকাত তারাবীর নামায ছুটে যায়। ছুটে যাওয়া রাকাতগুলি...
আমার কয়েক রাকাত তারাবীর নামায ছুটে যায়। ছুটে যাওয়া রাকাতগুলি ইমামের সাথে বিতর আদায়ের পর পড়ে নিয়েছি। কিন্তু আমার জানা নেই যে, ছুটে যাওয়া তারাবীর নামাযগুলো বিতরের আগে পড়তে হয় না পরে পড়তে হয়। সুতরাং আমার জানার বিষয় হল, আমার নামায সহীহ হয়েছে কী?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় বিতর নামায জামাতে পড়ার পর ছুটে যাওয়া তারাবী পড়া নিয়মসম্মতই হয়েছে এবং পরবর্তী তারাবীগুলোও সহীহ হয়েছে। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী যদিও বিতর নামায তারাবীর পরে পড়াই উত্তম; কিন্তু এক্ষেত্রে জামাতের সাথে বিতর পড়ার স্বার্থে তারাবির বাকি অংশ বিতরের পরে পড়ে নেওয়া ঠিকই হয়েছে।
- হিদায়া ১/১৫১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/২৯; শরহুল মুনইয়াহ পৃ. ৪০৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৭, বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৫২
জনৈকা মহিলা নিজ ঘরেই সুন্নত ইতিকাফ শুরু করেছে। তিন দিন...
জনৈকা মহিলা নিজ ঘরেই সুন্নত ইতিকাফ শুরু করেছে। তিন দিন পর তার মাসিক শুরু হয়ে যায়। এখন তার করণীয় কী? পরবর্তী সময়ে এই ইতিকাফের অবশিষ্ট দিনগুলো কাযা করতে হবে কি না?
মাসিক শুরু হওয়ার কারণে তার ইতিকাফ ভেঙ্গে গেছে। যে দিন মাসিক শুরু হয়েছে শুধু সেই একদিনের ইতিকাফ কাযা করে নেওয়া জরুরি। এই এক দিন কাযা করার নিয়ম হল, একদিন সূর্যাস্তের আগে ইতিকাফ শুরু করতে হবে। পরবর্তী দিন রোযা থাকতে হবে। সূর্যাস্তের পর ইতিকাফ শেষ হবে। এভাবে একদিন রোযাসহ ইতিকাফ করলেই কাযা আদায় হয়ে যাবে। পুরো দশ দিনের ইতিকাফ কাযা করতে হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; জামিউর রুমুয ১/৩৮৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫; আলজাওহারা পৃ. ১৮৬; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৭/২৮৬
মক্কায় অবস্থানকারী এক ব্যক্তি যার বাড়ি বাংলাদেশে সে জুমাদাল উলা...
মক্কায় অবস্থানকারী এক ব্যক্তি যার বাড়ি বাংলাদেশে সে জুমাদাল উলা মাসে বাংলাদেশ থেকে মক্কা মুকাররমা যায়। উমরার নিয়ত করে প্রবেশ করে। এরপর সে রমযানে মদীনা মুনাওয়ারা যায়। সেখানে ইতিকাফ করে। এরপর সে শাওয়াল মাসে মক্কা মুকাররমা যেতে চায়। এ ব্যক্তির এ বছর হজ্ব করার ইচ্ছা। যেহেতু হজ্বের আর মাত্র দুই মাস বাকি আছে, আর মক্কাতে প্রবেশের সময় ইহরাম করে প্রবেশ করেতে হবে, তাই তামাত্তুর উদ্দেশ্যে ওমরার ইহরাম করতে পারবে কি না? তার জন্য কি তামাত্তু করা জায়েয হবে? শুনেছি, মক্কীদের জন্য নাকি তামাত্তু করা জায়েয নেই। তামাত্তু করলে দমে জেনায়েত ও দমে শোকর দেওয়া লাগবে কি না?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তির জন্য তামাত্তু করা জায়েয। অর্থাৎ শাওয়াল মাসে মক্কা মুকাররমা প্রবেশের সময় তামাত্তুর নিয়তে উমরা করতে পারবে এবং এক্ষেত্রে তার উপর তামাত্তুর দমে শোকর ওয়াজিব হবে। জেনায়েত আসবে না। কারণ মক্কায় অবস্থানকারী ব্যক্তি যদি শাওয়ালের আগেই মীকাত থেকে বের হয়ে যায় তাহলে আফাকী তথা মক্কার বাইরে অবস্থানকারীদের হুকুমে হয়ে যায়। তাই ওই ব্যক্তি মক্কীর হুকুমে থাকবে না। তার জন্য কিরান-তামাত্তু সবই করা জায়েয।
-মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ৮/৬৯০ হাদীস : ১৫৬৩২; মানাসিকে মোল্লা আলী পৃ. ১৭৬, ২৮১; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৫/৩৫৭
আমাদের বাড়ি থেকে জামে মসজিদ কিছুটা দূরে। সেখানে ইতিকাফে বসলে...
আমাদের বাড়ি থেকে জামে মসজিদ কিছুটা দূরে। সেখানে ইতিকাফে বসলে খানা আনা-নেওয়ার সমস্যা। তাই বাড়ি সংলগ্ন একটি পাঞ্জেগানা নামায-ঘরে ইতিকাফে বসতে চাই। এ নামায-ঘরটি আমাদের জায়গায়। মসজিদ দূরে হওয়ার কারণে আমার বাবা অস্থায়ী নামাযের ব্যবস্থা করেছেন। এখানে ইতিকাফে বসলে ইতিকাফ সহীহ হবে কি?
পুরুষের ইতিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য শরয়ী মসজিদ হওয়া জরুরি। নামায-ঘরে ইতিকাফ সহীহ হবে না। তাই ইতিকাফে বসতে চাইলে মসজিদেই বসতে হবে। খানা আনা-নেওয়ার জন্য কেউ না থাকলে ইতিকাফ অবস্থায় খানা নেওয়ার জন্য বাড়ি যেতে পারবেন। তবে খানা নিয়ে দ্রুত মসজিদে ফিরে যেতে হবে। বাইরে বিলম্ব করা যাবে না।
-সূরা বাকারা ১৮৭; সুনানে আবু দাউদ ৩৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪০
জনৈক ব্যক্তি ভোরে ঘুম থেকে উঠতে না পারায় সেহরী না...
জনৈক ব্যক্তি ভোরে ঘুম থেকে উঠতে না পারায় সেহরী না খেয়েই সকালে নফল রোযা রাখার নিয়ত করেছে। আমার প্রশ্ন হল, সেহরী না খেয়ে রোযা রাখার দ্বারা রোযাটি হয়েছে কি?
রোযার জন্য সেহরী খাওয়া জরুরি নয়; বরং মুস্তাহাব। সেহরী না খেলেও রোযা হয়ে যায়। রোযার কোন ক্ষতি হয় না।
-সহীহ বুখারী ১৯২৩; উমদাতুল কারী ১০/৩০০; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৯
আমি গত রমযানে রোযা রেখে বিনা ওজরে তা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম।...
আমি গত রমযানে রোযা রেখে বিনা ওজরে তা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। ফলে আমার উপর কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে। আমি অত্যন্ত মাজুর বিধায় ষাটটি রোযা রাখতে সমর্থ নই। তাই মিসকীনদেরকে সদকা ফিতর পরিমাণ খাদ্য দিতে চাচ্ছি। এখন জানার বিষয় হল, ষাটজন মিসকীনকেই দিতে হবে? নাকি ঐ পরিমাণ খাদ্য একজনকে দিলেও চলবে?
রোযার কাফফারা আদায়ের সামর্থ্য না থাকলে ষাট রোযার পরিবর্তে ষাটজন প্রাপ্তবয়স্ক মিসকীনকে দু’ বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াতে হবে কিংবা ষাটজনের প্রত্যেককে এক ফিতরা পরিমাণ খাদ্য বা তার মূল্য দিতে হবে। এই ষাট রোযার পরিবর্তে একজনকে খাদ্য দিতে চাইলে এক ফিৎরা করে ষাট দিনে দিতে হবে। এক দিনে এক ব্যক্তিকে ষাট ফিতরা পরিমাণ একত্রে দিলে তার দ্বারা ষাট রোযার ফিদয়া আদায় হবে না।
-সহীহ বুখারী ১/২৬০; উমদাতুল কারী ১১/৩১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/১২; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৭৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫১৩
من صام رمضان وأتبعه ستا من شوال كان كصيام الدهرএই...
من صام رمضان وأتبعه ستا من شوال كان كصيام الدهر
এই হাদীসটির সঠিক তরজমা কী? কেউ যদি الدهر শব্দের অর্থ ‘এক যুগ’ করে তাহলে তা কি সহীহ হবে?
হাদীসটির অর্থ-‘যে ব্যক্তি পুরো রমযান এবং এর পরে শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখল সে যেন পুরো এক বছর রোযা রাখল।’
প্রশ্নোক্ত হাদীসে الدهر শব্দটি দ্বারা এক বছর বুঝানো হয়েছে। কেননা শাওয়ালের ছয় রোযার ফযিলত সম্পর্কে বর্ণিত ‘সুনানে নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ’-এর এক বর্ণনায় الدهر এর পরিবর্তে আসসানাহ অর্থাৎ এক বৎসর এসেছে। অতএব এখানেও الدهر দ্বারা আসসানাহ বা এক বৎসরই উদ্দেশ্য হবে। এক যুগ নয়।
উল্লেখ্য, আভিধানিকভাবে الدهر শব্দটি কোনো নির্দিষ্ট সময় বুঝায় না। তাই الدهر এর অর্থ যুগ নয়। আভিধানিকভাবে الدهر শব্দের যে সব অর্থ পাওয়া যায় তা নিম্নরূপ :
(১) পুরো জীবন।
(২) দীর্ঘ সময়।
(৩) উল্লেখযোগ্য অনির্দিষ্ট সময়।
(৪) হাজার বছর
(৫) এক লক্ষ বছর।
উল্লেখ্য যে, হাদীসটিতে الدهر এর অর্থ যেমনিভাবে ১ বছর করা হয়েছে তেমনি কেউ কেউ পুরো জীবন অর্থেও তা ব্যবহার করেছেন। মূলত : এ দুটি কথায় কোনো বিরোধ নেই। কারণ একটি নেক আমলের ছওয়াব দশগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। সে হিসেবে শাওয়ালের ছয়টিসহ ছত্রিশটি রোযা রাখা মানে তিনশ ষাট দিনই অর্থাৎ ১ বছর রোযা রাখা। অতএব যে ব্যক্তি এভাবে প্রতি বছর ছত্রিশটি রোযা রাখল সে বস্ত্তত পুরো জীবনই রোযা রাখল।
-ইকমালুল মু’লিম ৪/১৩৯; মাআরিফুস সুনান ৫/৪৪৪; ফয়যুল কাদীর ৬/১৬১; ফাতহুল মুলহিম ৩/১৮৭; আউনুল মা’বুদ ৭/৬৩
এক ব্যক্তি বার্ধক্যের কারণে রমযানের রোযা রাখতে অক্ষম। অপরদিকে সে...
এক ব্যক্তি বার্ধক্যের কারণে রমযানের রোযা রাখতে অক্ষম। অপরদিকে সে দরিদ্র ও অসচ্ছল। যার দরুণ রোযার ফিদয়া আদায় করাও তার পক্ষে সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় তার জন্য রোযার দায়মুক্ত হওয়ার কোনো পন্থা আছে কি?
এ পরিস্থিতিতে ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফার করবে। পরবর্তীতে কখনও কাযা করার কিংবা ফিদয়া আদায়ের সামর্থ্য ফিরে পেলে তখন কাযা বা ফিদয়া আদায় করে নিতে হবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৩৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭
আমাদের গ্রামে রমযান মাসে সাহরীর সময় লোকদেরকে জাগ্রত করার জন্য...
আমাদের গ্রামে রমযান মাসে সাহরীর সময় লোকদেরকে জাগ্রত করার জন্য সাইরেন ও বেল বাজানো হয়। এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি? আর ঐ আওয়াজ শুনে সাহরী খাওয়া সহীহ আছে কি?
সাহরীর জন্য সাইরেন বা বেল বাজানো দোষনীয় নয়। তাই তা অনুসরণও নাজায়েয নয়। তবে এ কাজ কোনো বিচক্ষণ লোক দ্বারা করানো চাই। কেননা, এক্ষেত্রে ভুল হলে অনেকের রোযা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৩৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৫০
আমাদের এলাকায় এক রমযানে ইতিকাফের জন্য কোনো লোক পাওয়া যাচ্ছিল...
আমাদের এলাকায় এক রমযানে ইতিকাফের জন্য কোনো লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে মহল্লাবাসী মিলে একজন দিনমজুরকে ঠিক করল যে, সে মসজিদে ইতিকাফ করবে। বিনিময়ে তাকে ঐ দিনগুলোতে কাজ করলে যে পরিমাণ মজুরি সে পেত তাকে তা দেওয়া হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে টাকা দিয়ে ইতিকাফে বসানোর দ্বারা ইতিকাফের দায়িত্ব আদায় হবে কি না?
বিনিময় নিয়ে ইতিকাফ করা বা করানো সম্পূর্ণ নাজায়েয। কারণ ইতিকাফ একটি ইবাদত। আর ইবাদতের বিনিময় দেওয়া-নেওয়া নাজায়েয। ঐ লোকের ইতিকাফ দ্বারা সুন্নতে মুয়াক্কাদা (কেফায়া) এর দায়িত্ব আদায় হবে না।
জামে তিরমিযী ১/৫১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১১৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৪; মাবসূত,সারাখসী ১৬/৩৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩২৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৩৭
আশুরার রোযার বিধান ও রাখার পদ্ধতি৷
ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ” ﺻُﻮﻣُﻮﺍ ﻳَﻮْﻡَ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻭَﺧَﺎﻟِﻔُﻮﺍ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻟْﻴَﻬُﻮﺩَ، ﺻُﻮﻣُﻮﺍ ﻗَﺒْﻠَﻪُ ﻳَﻮْﻣًﺎ،ﺃَﻭْ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ﻳَﻮْﻣًﺎ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা আশুরার রোযা রাখ ইহুদীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে; আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোযা রাখ।
-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২১৫৪; সহিহ মুসলিম হাদীস নং ১১৩৪৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী: জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
শাওয়াল মাসের ছয় রোযার ফযীলত, হুকুম ও রাখার পদ্ধতি ৷
এ ছয়টি রোযা রাখলে সারা বছর নফল রোযা রাখার সাওয়াব আল্লাহ তায়ালা বান্দার আমল নামায় লিখে দেন ৷ কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, আবু আয়্যুব আনসারী রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমযান মাসে রোযা রাখল, অতপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা রাখল সে যেন সারা বৎসর রোযা রাখল ৷
-সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নং: ১১৬৪৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
রোযা অবস্থায় ফরজ গোসলে গড়গড়া ও নাকের নরম জায়গায় পানি পৌছানো ৷
আমি একজন মসজিদের ইমাম৷ গতকাল আমার গোসল ফরজ হওয়ার পর সেহরীর আগে গোসল করতে পারিনি৷ আযানের পর যখন গোসলে যাই রোযা থাকার কারণে নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌছাইনি ৷ এবং গড়গড়াও করি নি ৷ আর এভাবে গোসল করে ই নামায পড়াই ৷ জানার বিষয় হল, আমার গোসল কি হয়েছে? গোসল পরবর্তি নামাযগুলোর কি হুকুম? স্বাবিস্তারে জানতে চাই৷
বিঃদ্রঃ কারো সুবহে সাদিকের পুর্বে গোসল ফরজ হলে সুবহে সাদিকের পুর্বেই গোসল করে নেয়া উচিত ৷ এমতাবস্থায় গড়গড়া ও নাকের নরম জায়গায় পানি পৌছিয়ে গোসল করতে হবে ৷ কারণ তখন রোযা ভেঙ্গে যাওয়া আশংকা নেই ৷
-মারাকিল ফালাহ, পৃ: ৩৯; ফাতাওয়ায়ে রহীমীয়া, ৫/১৯৮; মাসায়েলে রোযা, পৃ:১৬১৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
ইতেকাফকারী ইস্তেঞ্জার জরুরতে বাসা-বাড়িতে যাওয়া৷
আর মসজিদের ইস্তেঞ্জাখানা না থাকলে বাসা-বাড়িতে গিয়ে ইস্তেঞ্জা করা জায়েয।
-সহীহ বুখারী ১/২৭২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২৷
উত্তর প্রদানে মুফতীঃ মেরাজ তারসীৱ মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
বিশে রমযান ইফতারীর পর মসজিদে প্রবেশ করলে ইতিকাফের হুকুম ৷
সহীহ বোখারী, হাদীস: ২০২০; ফতওয়ায়ে শামী, ৩/৪৪৪৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
টাকার বিনিময়ে এতেকাফে বসানোর বিধান ৷
-জামে তিরমিযী ১/৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪; খানিয়া ২/৩২৫৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
প্রবাসীদের ফিতরার পরিমান ও দেশে আদায়ের বিধান ৷
-রদ্দুল মুহতার, ৩/৩২১; ফতওয়ায়ে রহীমীয়া ৭/১৯৫; মাসায়েলে রোযা,পৃ: ২১৭৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
রোযা অবস্থায় ডুস দিলে রোযার হুকুম ৷
অবশ্য, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোযা ভাঙ্গার অনুমতি আছে ৷ তাই প্রচন্ড জ্বর হলে ডুস ছাড়া অন্য ওষধে কাজ না হলে বা রোগীর বেশি কষ্ট হলে রোযা ভেঙ্গে ডুস ব্যবহার করতে পারবে ৷ এবং উক্ত রোযাটি রমযানের পরে কাযা করে নিতে হবে ৷
-ত্বাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ:৫৫৭; ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২০৪৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
রোযা অবস্থায় তৈল, বাম, আতর, সেন্ট, স্প্রে ইত্যাদি ব্যবহার করা ৷
কেননা, এসব জিনিষ ব্যবহার করলে কোনো কিছু প্রবেশ করলেও তা লোমকূপ দ্বারা প্রবেশ করে ৷ আর লোমকূপ দ্বারা কোন জিনিস শরীরের ভিতর প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয় না।
-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস, ৭৪৬৮ ; ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া:১/২০৩ ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
সাহরী না খেয়ে রোযা রাখার হুকুম ৷
-সহীহ বুখারী ১৯২৩; উমদাতুল কারী ১০/৩০০; রদ্দুল মুহতার ২/৪১৯; ফতওয়ায়ে দারুল উলুম ৬/৪৯৬; "মাসায়েলে রোযা ৫৭৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
রোযা অবস্থায় নখ চুল ও শরীরের অন্যান্য লোম পরিস্কার করা ৷
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৪৬৮৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
রোযা অবস্থায় টিকা নেওয়া ৷
-ইমদাদুল ফাতওয়া-২/১৪৪; ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১৫/১৭৩; আহসানুল ফাতওয়া-৪/৪২২; ফাতওয়া উসমানী-২/১৮১৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
আযান শুরু হওয়ার পর পানাহার করলে রোযার হুকুম৷
সুতরাং যিনি বলেছেন আযান শেষ হওয়া পর্যন্ত সাহরী খাওয়া যায় তার কথা সম্পুর্ন ভুল ৷
-আদদুররুল মুখতার ২/৪০৬; ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৯৪; তাহতাবী আলাল মারাকী ৫৫৬; ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৫/১৬৫ ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
রোযা অবস্থায় সপ্নদোষ বা অশ্লীল জিনিষ দেখে বীর্যপাত হলে রোযার হুকুম ৷
বলা বাহুল্য যে, এসব অশ্লীল জিনিষ দেখা জঘন্নতম গুনাহের কাজ ৷ তাই সর্বাবস্থায় এধরনের জঘন্ন কাজ থেকে সকলের জন্য বিরত থাকা অপরিহার্য৷
-কিতাবুল আসল ২/২০৩; হেদায়া ১/২১৭; ফতহুল কাদির ২/৩৩৭; বাহরুর রায়েক ২/৪৭৬৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
রোযা অবস্থায় হস্তমৈথুন করলে রোযার হুকুম ৷
বলা বাহুল্য যে, হস্তমৈথুন করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি নাজায়েয ও অত্যান্ত গর্হিত কাজ ৷ তাই এ বদ অভ্যাস থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য ৷
-আল বাহরুর রায়েক, ১/২৪৭৫; ফতওয়ায়ে শামী, ১/১৪২; ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২০৫; ফতওয়ায়ে দারুল উলুম, ৬/৪১৭৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত দেয়া ৷
-সহীহ বুখারী, হাদীস: ১৯৩৮,আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; আল ইসলাম ওয়াত্তীব্বুল হাদীস পৃ: ৩২৫ ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
রোযা অবস্থায় ইনসুলিন, স্যালাইন, গ্লুকোজ স্যালাইন, ইঞ্জেকশন নেয়া ৷
ইঞ্জেকশন নেয় তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে? অথবা অসুস্থ অবস্থায় কেউ যদি গ্লুকোজ স্যালাইন নেয় তাহলে কি তার রোযা সহীহ হবে? বিস্তারিত জানালে খুশি হব ৷
-আ'লাতে জাদীদা কি শরঈ আহকাম, পৃ: ১৫৩ ৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
{\rtf1\ansi\ansicpg1252\cocoartf1504\cocoasubrtf830 {\fonttbl\f0\fnil\fcharset0 .SFNSText;} {\colortbl;\red255\green255\blue255;\red22\green25\blue31;\red255\green255\blue255;} {\*\expandedcolortbl;;\cssrgb\c11373\c12941\c16078;\cssrgb\c100000\c100000\c100000;}
\deftab720
\pard\pardeftab720\partightenfactor0
\f0\fs28 \cf2 \cb3 \expnd0\expndtw0\kerning0 \outl0\strokewidth0 \strokec2 \uc0\u2474 \u2509 \u2480 \u2488 \u2457 \u2509 \u2455 \u2435 \cb1 \
\cb3 \uc0\u2480 \u2507 \u2479 \u2494 \u2437 \u2476 \u2488 \u2509 \u2469 \u2494 \u2479 \u2492 \u2472 \u2494 \u2453 , \u2453 \u2494 \u2472 , \u2458 \u2507 \u2454 \u2503 \u2465 \u2509 \u2480 \u2474 \u2476 \u2509 \u2479 \u2476 \u2489 \u2494 \u2480 \u2453 \u2480 \u2494 \u2551 \cb1 \
\cb3 \uc0\u2474 \u2509 \u2480 \u2486 \u2509 \u2472 \u2435 \cb1 \
\cb3 \uc0\u2489 \u2479 \u2480 \u2468 \u2480 \u2507 \u2479 \u2494 \u2437 \u2476 \u2488 \u2509 \u2469 \u2494 \u2479 \u2492 \u2472 \u2494 \u2453 \u2453 \u2494 \u2472 \u2503 \u2465 \u2509 \u2480 \u2474 \u2476 \u2509 \u2479 \u2476 \u2489 \u2494 \u2480 \u2503 \u2480 \u2489 \u2497 \u2453 \u2497 \u2478 \u2453 \u2495 ? \u2438 \u2480 \u2453 \u2503 \u2441 \u2479 \u2470 \u2495 \u2458 \u2507 \u2454 \u2503 \u2465 \u2509 \u2480 \u2474 \u2476 \u2509 \u2479 \u2476 \u2489 \u2494 \u2480 \u2453 \u2480 \u2494 \u2480 \u2475 \u2482 \u2503 \u2478 \u2497 \u2454 \u2503 \u2468 \u2495 \u2453 \u2509 \u2468 \u2468 \u2494 \u2437 \u2472 \u2497 \u2477 \u2476 \u2489 \u2479 \u2492 \u2468 \u2494 \u2489 \u2482 \u2503 \u2453 \u2495 \u2480 \u2507 \u2479 \u2494 \u2477 \u2503 \u2457 \u2509 \u2455 \u2503 \u2479 \u2494 \u2476 \u2503 ? \u2460 \u2494 \u2472 \u2494 \u2482 \u2503 \u2441 \u2474 \u2453 \u2499 \u2468 \u2489 \u2476 \u2551 \cb1 \
\cb3 \uc0\u2441 \u2468 \u2509 \u2468 \u2480 \u2435 \cb1 \
\cb3 \uc0\u2480 \u2507 \u2479 \u2494 \u2437 \u2476 \u2488 \u2509 \u2469 \u2494 \u2479 \u2492 \u2458 \u2507 \u2454 \u2503 \u2465 \u2509 \u2480 \u2474 \u2476 \u2509 \u2479 \u2476 \u2489 \u2494 \u2480 \u2453 \u2480 \u2482 \u2503 \u2480 \u2507 \u2479 \u2494 \u2477 \u2494 \u2457 \u2509 \u2455 \u2476 \u2503 \u2472 \u2494 \u2404 \u2479 \u2470 \u2495 \u2451 \u2468 \u2495 \u2453 \u2509 \u2468 \u2468 \u2494 \u2478 \u2497 \u2454 \u2503 \u2476 \u2494 \u2455 \u2482 \u2494 \u2479 \u2492 \u2437 \u2472 \u2497 \u2477 \u2476 \u2489 \u2479 \u2492 \u2551 \u2438 \u2480 \u2458 \u2507 \u2454 \u2503 \u2480 \u2447 \u2476 \u2495 \u2487 \u2479 \u2492 \u2463 \u2495 \u2488 \u2494 \u2471 \u2494 \u2480 \u2467 \u2453 \u2495 \u2479 \u2492 \u2494 \u2488 \u2476 \u2489 \u2495 \u2480 \u2509 \u2477 \u2497 \u2468 \u2488 \u2480 \u2494 \u2488 \u2480 \u2495 \u2438 \u2488 \u2494 \u2480 \u2470 \u2509 \u2476 \u2494 \u2480 \u2494 \u2474 \u2509 \u2480 \u2478 \u2494 \u2467 \u2495 \u2468 \u2551 \cb1 \
\cb3 \uc0\u2438 \u2471 \u2497 \u2472 \u2495 \u2453 \u2465 \u2494 \u2453 \u2509 \u2468 \u2494 \u2480 \u2470 \u2503 \u2480 \u2438 \u2471 \u2497 \u2472 \u2495 \u2453 \u2441 \u2472 \u2509 \u2472 \u2468 \u2478 \u2494 \u2472 \u2503 \u2480 \u2469 \u2495 \u2441 \u2480 \u2496 \u2437 \u2472 \u2497 \u2479 \u2494 \u2479 \u2492 \u2496 \u2453 \u2494 \u2472 \u2503 \u2480 \u2477 \u2495 \u2468 \u2480 \u2503 \u2447 \u2478 \u2472 \u2453 \u2507 \u2472 \u2507 \u2480 \u2494 \u2488 \u2509 \u2468 \u2494 \u2472 \u2503 \u2439 \u2479 \u2494 \u2470 \u2495 \u2479 \u2492 \u2503 \u2488 \u2480 \u2494 \u2488 \u2480 \u2495 \u2455 \u2482 \u2494 \u2479 \u2492 \u2453 \u2507 \u2472 \u2507 \u2453 \u2495 \u2459 \u2497 \u2474 \u2508 \u2459 \u2503 \u2551 \u2437 \u2468 \u2447 \u2476 \u2453 \u2494 \u2472 \u2503 \u2465 \u2509 \u2480 \u2474 \u2476 \u2509 \u2479 \u2476 \u2489 \u2494 \u2480 \u2453 \u2480 \u2494 \u2480 \u2453 \u2494 \u2480 \u2467 \u2503 \u2480 \u2507 \u2479 \u2494 \u2477 \u2494 \u2457 \u2509 \u2455 \u2476 \u2503 \u2472 \u2494 \u2551 \u2437 \u2476 \u2486 \u2509 \u2479 \u2453 \u2494 \u2472 \u2503 \u2480 \u2474 \u2480 \u2509 \u2470 \u2494 \u2475 \u2494 \u2463 \u2494 \u2469 \u2494 \u2453 \u2482 \u2503 \u2480 \u2507 \u2460 \u2494 \u2477 \u2503 \u2457 \u2509 \u2455 \u2503 \u2479 \u2494 \u2476 \u2503 \u2551 \cb1 \
\cb3 \uc0\u2438 \u2480 \u2472 \u2494 \u2453 \u2503 \u2465 \u2509 \u2480 \u2474 \u2476 \u2509 \u2479 \u2476 \u2489 \u2494 \u2480 \u2453 \u2480 \u2482 \u2503 \u2479 \u2503 \u2489 \u2503 \u2468 \u2497 \u2488 \u2480 \u2494 \u2488 \u2480 \u2495 \u2455 \u2482 \u2494 \u2479 \u2492 \u2474 \u2508 \u2459 \u2503 \u2468 \u2494 \u2439 \u2480 \u2507 \u2479 \u2494 \u2437 \u2476 \u2488 \u2509 \u2469 \u2494 \u2479 \u2492 \u2472 \u2494 \u2453 \u2503 \u2465 \u2509 \u2480 \u2474 \u2476 \u2509 \u2479 \u2476 \u2489 \u2494 \u2480 \u2453 \u2480 \u2494 \u2479 \u2494 \u2476 \u2503 \u2472 \u2494 \u2551 \u2447 \u2468 \u2503 \u2480 \u2507 \u2479 \u2494 \u2477 \u2503 \u2457 \u2509 \u2455 \u2503 \u2479 \u2494 \u2476 \u2503 \u2551 \cb1 \
\cb3 -\uc0\u2475 \u2494 \u2468 \u2494 \u2451 \u2479 \u2492 \u2494 \u2468 \u2494 \u2468 \u2494 \u2480 \u2454 \u2494 \u2472 \u2495 \u2479 \u2492 \u2494 \u2537 /\u2537 \u2541 \u2543 ; \u2476 \u2494 \u2470 \u2494 \u2479 \u2492 \u2503 \u2441 \u2488 \u2488 \u2494 \u2472 \u2494 \u2479 \u2492 \u2503 \u2536 /\u2536 \u2538 \u2538 ; \u2438 \u2482 \u2439 \u2488 \u2482 \u2494 \u2478 \u2451 \u2479 \u2492 \u2494 \u2468 \u2509 \u2468 \u2496 \u2476 \u2509 \u2476 \u2497 \u2482 \u2489 \u2494 \u2470 \u2496 \u2488 , \u2474 \u2499 : \u2537 \u2536 \u2536 \u2551 \cb1 \
\cb3 \uc0\u2441 \u2468 \u2509 \u2468 \u2480 \u2474 \u2509 \u2480 \u2470 \u2494 \u2472 \u2503 \cb1 \
\cb3 \uc0\u2478 \u2497 \u2475 \u2468 \u2496 \u2478 \u2503 \u2480 \u2494 \u2460 \u2468 \u2494 \u2489 \u2488 \u2496 \u2472 \cb1 \
\cb3 \uc0\u2478 \u2497 \u2475 \u2468 \u2496 \u2435 \u2460 \u2494 \u2478 \u2495 \u2479 \u2492 \u2494 \u2470 \u2494 \u2480 \u2497 \u2482 \u2441 \u2482 \u2497 \u2478 \u2470 \u2503 \u2476 \u2455 \u2509 \u2480 \u2494 \u2478 \cb1 \
\cb3 \uc0\u2476 \u2509 \u2480 \u2494 \u2489 \u2509 \u2478 \u2467 \u2476 \u2494 \u2465 \u2492 \u2495 \u2479 \u2492 \u2494 \u2551 }
রোযা অবস্থায় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা ৷
-জাদীদ ফিকহী মাসায়েল, ১/১০২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৪১; মাসায়েলে রোযা, পৃ: ৬৭৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার বা গ্যাস নেয়া৷
যারা বলেন, ইনহেলার অতি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয় তাই এতে রোজা ভঙ্গ হবে না৷ তাদের এ কথাটি একেবারেই হাস্যকর৷ কেননা কেহ যদি ক্ষুধায় মৃত্যুমুখে পতিত হয় অতি প্রয়োজনে কিছু খেয়ে ফেলে তাহলে কি রোজা ভঙ্গ হবে না? অবশ্যই হবে৷ অতি প্রয়োজনে রোজা ভাঙ্গলে পরবর্তিতে রোজা কাযা করা ও গুনাহ না হওয়া ভিন্ন কথা, আর রোজা ভঙ্গ না হওয়া ভিন্ন কথা৷ সুতরাং তাদের কথা মোটেও সঠিক নয় ৷ বরং অতি প্রয়েজনে হলেও রোজা ভেঙ্গে যাবে ৷ তবে তার উক্ত রোজা কাফ্ফারা দিতে হবে না ৷ পরে কাযা করলেই চলবে ৷
অবশ্য যদি মুখে ইনহেলার স্প্রে করার পর না গিলে থুথু দিয়ে তা বাইরে ফেলে দেয়া হয়, এবং গ্যাসটি গলদকরন না হয়ে থাকে, তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না৷
-আল ইসলাম ওয়াত্তীব্বুল হাদীস, পৃ: ২২৩-৩২৪ ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
তারাবীর নামাযে এক রাকাতে তিনবার সূরা ইখলাস পড়া কি মুস্তাহাব?
-ফাতাওয়া উসমানী ১/৫১০; আহসানুল ফাতাওয়া ৩/৫০৯ ৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
তারাবীহ নামায বিশ রাকাতের কম পড়লে তারাবীর সুন্নত আদায় হবে কি?
-ফতওয়ায়ে শামী,২/৪৯৫; আল মুহীতুল বুরহানী ২/২৪৯; তাতারখানিয়া ১/৬৫৪; আল বাহরুর রায়েক ২/৬৬ ; ফতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১১/৩৩৫ ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
তারাবীর নামাযে দ্রুতগতিতে কুরআন তিলাওয়াত করা ৷
-রদ্দুল মুহতার: ১/৫৪১; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১১৭ ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
কোনো কারণে পিছন থেকে হাফেয সাহেবের তিলাওয়াত শুনতে না পেলে খতম আদায় হবে কি না?
কেউ যদি হাফেয সাহেবের তিলাওয়াত বা তিলাওয়াতের কোনো অংশ শুনতে না পায় তাহলে কি তার খতম আদায় হবে? সে কি পরিপূর্ণ খতমের সাওয়াব পাবে?
-আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল: ৩/৬৮; নিজামুল ফাতাওয়া: ৫/৯৪৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
মহিলাদের জন্য জামাতের সহিত তারাবীহ পড়ার বিধান ৷
-সহিহ বোখারি, হাদিস: ৮৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৭০৯০৷
অতএব মহিলারা নিজ ঘরে একাকি নামায পড়বে এটা ই শরিয়তের বিধান ৷ এবং এর বিপরীত করা জায়েয নয়। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মহিলাদেরকে বলবেন যে, মহিলাদের জন্য জামাতে নামায পড়ার চেয়ে নিজ ঘরে একাকী নামায পড়ার সাওয়াব বেশি ৷ তাই আপনারা ঘরে একাকি নামায পড়বেন ৷ অবশ্য কেউ যদি জামাতে নামায পড়ে ফেলে তাহলে তার নামায আদায় হয়ে যাবে৷
-আল বাহরুর রায়েক: ১/৬২৭, রদ্দুল মুহতার:
২/৪৬ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
ক্বেরাত স্মরণ করার জন্য তারাবীর নামাযের সিজদায় গিয়ে তিলাওয়াত করা ৷
আর আমার একটি প্রশ্ন, আমি একজন হাফেয । রমজানে তারাবী পড়াই ৷ তারাবীর নামায পড়ানোর সময় পরের রাকাতের কেরাত স্মরণ করার জন্য সিজদায় গিয়ে আমি অনেক সময় নিম্নস্বরে একটু কুরআন তিলাওয়াত করি । আমার জানার বিষয় হল,
এতে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে কি না?
আপনার মসয়ালার উত্তরঃ রুকু ও সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা নিষেধ। মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে, হযরত আলী রা. থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাকে রুকু বা সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন। তাই রুকু-সিজদায় ইচ্ছাকৃত কুরআন পড়লে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। সুতরাং তা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক ৷ আর যদি ভুলে কেউ পড়ে ফেলে এবং তা এক আয়াত বা তার বেশি হয় তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮০; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩১৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
শবে বরাতের ফযিলত, করনীয় ও বর্জনীয়।
শবে বরাত সপম্পর্কে সহিহ হাদিস উল্লেখ করছি। -হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ)থেকে বর্ণিত,রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন- আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে(শবে বরাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন।এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে মাফ করে দেন।
-সহীহ ইবনে হিব্বান ১২/৪৮১;আত-তারগীব ওয়াত- তারহীবে ২/১৩২ ৷
আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা'বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ
নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বণী কালবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন"।
সুনানে তিরমিযি ২/১২১,১২২; মুসনাদে আহমাদ ৬/২৩৮ ৷
এছাড়াও বহু হাদীস দ্বারা এরাতের ফযিলত প্রমানিত ৷ তাই এ রাতের ফযিলত ও মর্যাদা কোন ভাবেই অস্বিকার করা যাবে না ৷ তবে এরাতে নির্ধারিত পরিমান বা নির্ধারিত পন্থায় কোন আনল বর্নিত নেই ৷ এবং তাকে উপলক্ষ করে হালুয়া রুটি তৈরি করা আলোকসজ্জা করা আতশবাজি করা ইত্যাদি সম্পুর্ন নাজায়েয ও বাড়াবাড়ি ৷
সুতরাং যারা শবে বরাতকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন তারাও ভুল করছেন,আর যারা একেবারে অস্বীকার করছেন তারাও ভুল করছেন। কারন হাদিসের মধ্যে কোন বাড়াবাড়ির কথাও নেই আবার অস্তিত্বহীনতাও বুঝা যায়না।
সহিহ পন্থায় এই রাতে কিছু করনীয় ও বর্জনীয় ৷
এই রাতে করনিয়ঃ
১) এই রাতে আল্লাহর রাসুল অনেক দীর্ঘ নামাজ পড়তেন। তাই নামায পড়া ৷ তবে নির্ধারিত পরিমান বা পদ্ধতি জরুরী মনে না করে ৷
২) পরের দিন রোজা রাখতেন।দলীল-
ﻗﻮﻟﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ : ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻘﻮﻣﻮﻟﻴﻠﻬﺎ ﻭﺻﻮﻣﻮﺍ
ﻧﻬﺎﺭﻫﺎ
রাসুল (সাঃ) বলেছেন -যখন অর্ধ শাবানের আসে- তোমরা সেই রাতে ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং পরের দিন রোজা রাখো। তাই পরদিন রোজা রাখা
বিঃদ্রঃ শবে বরাতের রোজা একটি ৷
৩) এই রাতে পুরুষদের জন্য কবরস্থানে যাওয়া এবং তাদের মৃত আত্মীয় স্বজনদের জন্য ইসালে সাওয়াব করা মুস্তহাব।
এই সম্পর্কে মুফতি শফি সাহেব অত্যন্ত চমৎকার অভিমত ব্যাক্ত করেছেন।তিনি বলেন রাসুল (সাঃ) যেহেতু জীবনে একবার মাত্র শবে বরাতের রাত্রে কবরস্থানে গিয়েছেন,কাজেই জীবনে একবার এই রাতে কবরস্থানে গেলেই মুস্তহাব আদায় হয়ে যাবে।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল কোন ভাবেই যেন বিদআতি কোন কাজ না হয়ে যায়।
৪) এই রাতে খুব দোয়া করা। কেননা আল্লাহর রাসুল বলেছেনঃ শাবানের ১৫ তারিখ রাতে আল্লাহর পক্ষ হতে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন,- আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী,যাকে আমি ক্ষমা করবো। এমনিভাবে সকল বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়।
৫) এই রাতে নির্দিষ্ট কোন নামাজ নেই। যত নফল
নামাজ পড়া যায় পড়বে ৷ তবে যাদের কাজা নামাজ বাকি আছে তাদের জন্য উত্তম হবে কাজা নামাজ গুলো আদায় করে নেয়া। কারন হাশরের মাঠে নফলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেনা,ফরজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
এই রাতের বর্জনীয় আমল সমুহঃ ১) এই রাতে সম্মিলিত না হয়ে একাকী আমল করা
উত্তম।কারন সম্মিলিত হওয়ার ক্ষেত্রে আমলের
চাইতে ফেতনাটাই হওয়ার আশংকা বেশি। ২) আতশবাজি করা যাবেনা
৩) হালুয়া রুটি বিতরন কারা বা নিজ ঘরে তৈরি করা যাবেনা। কারন এতে অহেতুক সময় নষ্ট হয়, এবং বর্তমানে এটা একটা বড় ধরনের ফেতনার আকার ধারন করেছে।
৪) আলোকসজ্জা করা যাবেনা।
৫) মাইকে কুরআন তেলাওয়াত বা হামদ নাত পরিবেশন করে অন্যের আমলে ব্যাঘাত ঘটানো যাবেনা।
৬) কবরস্থানে ভিড় করা বা মেলা বসানো যাবেনা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে এই রাতের সকল ফজিলত দান করুণ। উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
"রমজানের প্রথম খবর দিলে জাহান্নামের আগুন মাফ" এটি কি হাদীস?
সহিহ বোখারী ১/৫২ ৷
অন্য হাদীসে হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্নিত রাসূল সঃ বলেছেন, যা শুনে তা'ই বলতে থাকা কোন ব্যক্তি মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট ৷
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯৯২ ৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
শবে মেরাজের রোজা ও রজব মাসের অন্যান্য বিশেষ আমল ৷
রজব মাসের বিভিন্ন তারিখে রোযা রাখা, সালাতুর রাগায়েব নামক বিশেষ প্রকৃতির নামায পড়া সংক্রান্ত সকল হাদীসই জাল ও বানোয়াট।
অতএব শবে মেরাজের নামায রোজা ইত্যাদি বিশেষ আমল বিদআত ৷ কারন রাসূল সাঃ সাহাবাগন ও তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীগন শবে মেরাজে বিশেষ কোন আমল করেন নি, তাই শবে মেরাজে বিশেষ আমল নেই। আর রাসূল সাঃ যা করেন নি, সেটাকে দ্বীন মনে করার নামই হল বিদআত। আর বিদআত পথভ্রষ্টতা। আর পথভ্রষ্টতা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করে।
-লাতায়েফুল মাআরিফ-১৩১; আাল মাজমাউ শরহুল মুহাযযাব-৩/৫৪৯; তাখরীজে ইহইয়া ইহইয়াউ
উলূমিদ্দীন-১/২৯৬ আল লাআলিল মাসনূআ-২/৫৫-৫৯ তানযীহুশ শরীয়া-২/৮৯-৯০ ৷
তবে রজব মাস সম্পর্কিত নিম্নের হাদীসটি দুর্বল হলেও জাল তথা বানোয়াট নয়। আর ফযিলতের ক্ষেত্রে যেহেতু দুর্বল হাদীসও আমল করা যায় তাই উক্ত হাদীস অনুযায়ী আমল করা যাবে ৷ হাদিসটি হলো,
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ রজব মাস আসলে পড়তেন- আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শা’বানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদ্বান।
-মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৪৯৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৩৪৬ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
২২ ই রজবে শিরনী পাকিয়ে বাড়ি বাড়ি বন্টন করা ৷
পালন করে থাকে।
কিন্তু এটি সঠিক নয় ৷ কারণ এদিন জাফর সাদিক জন্ম গ্রহণ করেননি। বরং তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন ৮০ বা ৮৩ হিজরীর ৮ই রমজান মাসে । সুতরাং বাইশে রজবের সাথে জাফর সাদিক রহঃ এর জন্মগ্রহনের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ৷
আসল কথা হলো, এদিন হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ ইন্তেকাল করেছেন। তাফসীরে তাবারী,৪/২৩৯ ৷
এতে স্পষ্ট বুঝা যায়, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর দুশমন শিয়ারা তাঁর ইন্তেকালে খুশি হয়ে এ জঘন্য উৎসব পালন করে থাকে। কিন্তু তাদের এ ঘৃণ্যতাকে ঢাকার
জন্য মিথ্যাচার করে বলে এদিন জাফর সাদিক জন্ম গ্রহণ করেছেন।
অতএব বুঝা গেল এটি মূলত মুয়াবিয়া রাঃ এর দুশমনদের উৎসব। মুসলমানদের নয়। তাই এ কর্ম থেকে সকলকে বিরত থাকা জরুরী।
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
নফল রোজা রেখে শিঙ্গা লাগানো৷
01756473393
সেহরী না খেয়ে নফল রোযা রাখা৷
কি?
01756473393
রোযা অবস্থায় যদি কেউ স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন নেয় তাহলে কি...
ভেঙ্গে যাবে? তেমনি অসুস্থ অবস্থায় কেউ যদি গ্লুকোজ স্যালাইন নেয় তাহলে কি তার রোযা সহীহ হবে?
রোযার
ক্ষতি হবে না। তবে অসুস্থতা ছাড়া গ্লুকোজ স্যালাইন নেওয়া নাজায়েয। -আলাতে জাদীদা কে শরঈ আহকাম ১৫৩৷
রোযা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে? এতে কি রোযা...
হয়ে
যাবে। তাই রোযা অবস্থায় টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করা যাবে না। টুথপেস্ট বা মাজন দিয়ে ব্রাশ করতে হলে সাহরীর
সময়
শেষ হওয়ার আগেই করে নিবে। -ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৪১; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/৫১৮
রোযা অবস্থায় কেউ যদি চোখে ড্রপ ব্যবহার করে এবং মুখেও...
এবং মুখেও তিক্ততা অনুভব হয় তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
রোযা অবস্থায় যদি শরীরের কোনো অঙ্গ থেকে রক্ত বের হয়...
থেকে রক্ত বের হয় কিংবা সিরিঞ্জ দিয়ে শরীর থেকে রক্ত বের করা হয় তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
রমযান মাসে রোযা অবস্থায় অসুস্থতার কারণে এক ব্যক্তির বমি হয়।...
বমি হয়। এর দ্বারা কি তার রোযা ভেঙ্গে গেছে? এখন তার কী করণীয়?
আমি একদিন রোজারত অবস্থায় টাঙ্গাইলের পিঠাঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম এমন...
যাচ্ছিলাম এমন সময় একটি মাছি আমার মুখের ভেতর দিয়ে পেটে চলে যায়। আমার জানার বিষয় হল, এতে কি আমার রোজা ভেঙ্গে গেছে এবং আমার কি ঐ রোজা কাযা করতে হবে?
রমযান মাসে দোকানে বেচা-কেনার ব্যস্ততার কারণে নির্ধারিত সময়ে তারাবীর নামায...
তারাবীর নামায পড়ার জন্য মসজিদে যেতে পারি না। প্রায় সময় ইমাম সাহেব তারাবীর নামায কয়েক রাকাত পড়ার পর যাই। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমি ইশা এবং তারাবীর নামায কীভাবে আদায় করব।
নামাযও
জামাতে পড়ে নিবেন। এরপর তারাবীর বাকি নামায আদায় করবেন। উল্লেখ্য যে, রমযান মাস অধিক গুরুত্বপূণৃ ও ফযীলতপূর্ণ মাস এই মাসে ইবাদতের ছাওয়াব অনেক বেশি। তাই এই মাসে নামায ও জামাতের প্রতি আরো বেশি যত্নবান হওয়া উচিত এবং নির্ধারিত সময়ের আগে আগে মসজিদে চলে যাওয়া উচিত। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৭; শরহুল মুনইয়াহ ৪১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৭
গত রমযানে আমার এক বন্ধু একাকী তারাবীর নামায পড়াতে গিয়ে...
চার রাকাত পড়ে ফেলে। দুই রাকাতের পর তাশাহহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে যায় এবং আরো দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরায়। এভাবে চার রাকাত পড়ার দ্বারা কত রাকাত আদায় হয়েছে?
গত রমযানে এক হাফেয সাহেবের পিছনে তারাবীহ নামায পড়ছিলাম। তিনি...
সূরা ফাতিহা দুইবার পড়লে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
সূরা মিলানোর পর ভুলে আবার সূরা ফাতিহা পড়লে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। কিন্তু কেউ যদি সূরা মিলানোর আগেই পর পর দুবার সূরা ফাতিহা পড়ে তবে তার উপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯১; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৭৩; শরহুল মুনইয়াহ ৪৬০:
আমি নরওয়ের প্রবাসী। আমি যে অঞ্চলে থাকি সেখানের শীত ও...
-রদ্দুল মুহতার ১/৩৬৬; তুহফাতুল মুহতাজ ২/১৯; আলমাজমূ ৩/৪৩; হাশিয়াতুশ শারওয়ানী ২/১৯;
মাজমুআতুল ফাতাওয়াশ শারঈয়াহ ১৪/১০৩; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/১৫২
আমাদের এলাকায় এক মসজিদে রমযানে ইতেকাফের জন্য কোনো লোক পাওয়া...
ইবাদত। আর ইবাদতের বিনিময় দেওয়া নেওয়া নাজায়েয। ঐ লোকের ইতেকাফের দ্বারা সুন্নতে মুয়াক্কাদা (কেফায়া) এর দায়িত্ব আদায় হবে না।
-জামে তিরমিযী ১/৫১; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৪; মাবসুত, সারাখসী ১৬/৩৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪; খানিয়া ২/৩২৫; বাযযাযিয়া ৫/৩৭.
এতেকাফকারী কি জানাযা পড়ার জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে? এতে...
রোজা রাখা অবস্থায় পর্নোগ্রাফি দেখার কারণে বীর্যপাত হলে রোজা কি...
(কিতাবুল আসল ২/২০৩) (হেদায়া ১/২১৭) (ফথুল কাদির ২/৩৩৭) (বাহরুর রায়েক ২/৪৭৬)
আমি গত রমযানে আমাদের মহল্লার মসজিদে ইতিকাফ করার ইচ্ছা করি।...
কিন্তু সমস্যা হল মসজিদের কোনো ইস্তেঞ্জাখানা নেই। এ অবস্থায় বাসায় এসে জরুরত সারা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। তাই বাসা থেকে ইস্তেঞ্জা সেরে মসজিদে এসে অযু করি এবং এভাবে দশ দিন অতিবাহিত করি। জানতে চাই, এভাবে আমার ইতিকাফ কি আদায় হয়েছে?
জরুরুতে মসজিদের বাইরে যাওয়া জায়েয। আর মসজিদের ইস্তেঞ্জাখানা না থাকলে এজন্য বাসা-
বাড়িতে যাওয়াও জায়েয। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইতিকাফরত অবস্থায় ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না।
-সহীহ বুখারী ১/২৭২; সহীহ মুসলিম ১/১৪২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৭৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২
জনৈক ব্যক্তি রমযানে রোযা রাখার পর বিনা ওজরে একটি রোযা...
আদায় করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সে
কি টাকা দিয়ে কাফফারা আদায় করতে পারবে? সে ক্ষেত্রে কি লাগাতার ৬০ দিন টাকা দিতে হবে? যদি সপ্তাহে দুজন-তিনজন করে দেয় তাহলে কী হবে?
সম্ভাব্য দ্রুত সময়ে জানানোর অনুরোধ রইল।
মাস রোযা রাখার সামর্থ্য ফিরে পাওয়ার আশা না থাকে তাহলে সে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করতে পারবে। এজন্য ৬০ জন
দরিদ্রকে দু বেলা তৃপ্তি সহকারে আহার করাবে।
অথবা ৬০জনের প্রত্যেককে দু বেলা আহারের মূল্য
দিয়ে দিবে। (বর্তমানে জনপ্রতি দু বেলা
খাবারের মূল্য হিসেবে ১০০/- টাকা করে দেওয়া
যেতে পারে।)
এক্ষেত্রে ৬০ জনের টাকা বা ৬০ জনের খাবার ৬০
জনকে যেমন দেওয়া যায় তদ্রূপ ৬০ জনেরটা একজন
দুজনকে দেওয়াও বৈধ। তবে শর্ত হল, একদিনে
একজনকে একদিনের টাকাই দেওয়া যাবে। দুই তিন
দিনের টাকা বা খাবার একসাথে দেওয়া যাবে
না। দিলেও সেটা একদিনের জন্যই বিবেচিত হবে।
আর পুরো কাফফারার টাকা একজন দুইজনকে একদিন একদিন করে দেওয়া হোক অথবা ৬০ জনকেই তা দেওয়া হোক সেটা একসাথে বা লাগাতার
হওয়া জরুরি নয়। সুতরাং সপ্তাহে দুজন তিনজন করে
দিয়ে ৬০ জন পূর্ণ করলেও তা সহীহ হবে। -কিতাবুল আছল ২/১৬০-১৬১; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৬, ৪/১০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৭৮-৪৮০
আমি একজন হাফেযে কুরআন। তারাবীর নামায পড়ানোর সময় পরের রাকাতের...
তার বেশি হয় তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮০; শরহুল মুনইয়াহ ৩৫৭, ৪৬০; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩১৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৫০; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৪, হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৪
গত রমযানে আমি একদিন অযু করছিলাম। অসতর্কতাবশত সামান্য পরিমাণ পানি...
আমার
রোযার কি কোনো ক্ষতি হয়েছে? এবং কাযা বা কাফফারা কি আদায় করতে
হবে?
জানিয়ে বাধিত করবেন।
রোযার
কাযা আদায় করতে হবে। তবে কাফফারা লাগবে না। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/২৬০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০২; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১
তারাবীর নামাজের হুকুম কী? তারাবীর নামাজ কত রাকাত। কোন কোন...
আমি একদিন ঘুম থেকে দেরিতে উঠি এবং তখনো সাহরীর সময়...
থাকি।
খাওয়া শেষে জানতে পারি তখন সুবহে সাদিক হয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, উপরোক্ত কারণে আমার রোযা সহীহ হবে কি না? না হলে এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রসঙ্গঃ তারাবীর রাকাত সংখ্যা!
আমি মাইগ্রেনে আক্রান্ত। গত রমযানে একদিন হঠৎ প্রচন্ড মাথা ব্যথা...
করবেন।
২/২৭৪
রোজা রাখা অবস্থায় পর্নোগ্রাফি দেখার কারণে বীর্যপাত হলে রোজা কি...
পুনরায় কাজা করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না।
(কিতাবুল আসল ২/২০৩) (হেদায়া ১/২১৭) (ফথুল কাদির ২/৩৩৭) (বাহরুর রায়েক ২/৪৭৬)
এক ব্যক্তি ইমামের সাথে তারাবীর কয়েক রাকাত পায়নি। এখন সে...
আমার আম্মা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক এবং হৃদরোগে আক্রান্ত। এ কারণে...
অত্যন্তদুর্বল হয়ে পড়েছেন। ডাক্তার নিয়মিত
ঔষধ খেতে বলেছেন। কোনো সময় ঔষধ না খেলে অসুস্থতা অনেক বেড়ে যায়। তাই আম্মা রমযান মাসে রোযা রাখতে পারেন না। গত
রমযান মাসে কয়েকটি রোযা রাখার পর অসুস্থতা ও
দুর্বলতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তাই পরে আর রোযা রাখতে পারেননি।
জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমার আম্মার জন্য
রমযান মাসে রোযা না রেখে ফিদয়া দেওয়া জায়েয হবে কি? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।
রোযা না রেখে ফিদয়া দেওয়া জায়েয হবে। তবে পরবর্তীতে কখনো রোযা রাখার মতো সুস্থতা ফিরে পেলে এ রোযাগুলোর কাযা করে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে পূর্বের
ফিদয়া যথেষ্ট হবে না। কারণ ফিদয়ার হুকুম ঐ ব্যক্তির
জন্য প্রযোজ্য, যে পরবর্তীতে কাযা আদায়ে সক্ষম নয়।
-রদ্দুল মুহতার ২/৪২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭;
হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী
৩৭৫-৩৭৬
আমি নরওয়ের প্রবাসী। আমি যে অঞ্চলে থাকি সেখানের শীত ও...
মাস রাত ও দু মাস দিন থাকে। তাই জানার বিষয় হল,
রমযানে কীভাবে রোযা রাখব?
স্বাভাবিক নিয়মে দিন রাত হয় সে দেশের সময়সূচি
অনুযায়ী নামায রোযা আদায় করবেন।
-রদ্দুল
মুহতার ১/৩৬৬; তুহফাতুল মুহতাজ ২/১৯; আলমাজমূ
৩/৪৩; হাশিয়াতুশ শারওয়ানী ২/১৯; মাজমুআতুল
ফাতাওয়াশ শারঈয়াহ ১৪/১০৩; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/১৫২
আমার নানী একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ। তার চোখ থেকে সবসময় পানি...
গত রমযানে এক হাফেয সাহেবের পিছনে তারাবীহ নামায পড়ছিলাম। তিনি...
গত রমযানে আমার এক বন্ধু একাকী তারাবীর নামায পড়াতে গিয়ে...
হয়েছে?
রমযান মাসে দোকানে বেচা-কেনার ব্যস্ততার কারণে নির্ধারিত সময়ে তারাবীর নামায...
নামাযও
জামাতে পড়ে নিবেন। এরপর তারাবীর বাকি নামায আদায় করবেন। উল্লেখ্য যে, রমযান মাস অধিক গুরুত্বপূণৃ ও ফযীলতপূর্ণ মাস এই মাসে ইবাদতের ছাওয়াব অনেক বেশি। তাই এই মাসে নামায ও জামাতের প্রতি আরো বেশি যত্নবান হওয়া উচিত এবং নির্ধারিত সময়ের আগে আগে মসজিদে চলে যাওয়া উচিত। -আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৭; শরহুল মুনইয়াহ ৪১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৭
আমি একদিন রোজারত অবস্থায় টাঙ্গাইলের পিঠাঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম এমন...
রমযান মাসে রোযা অবস্থায় অসুস্থতার কারণে এক ব্যক্তির বমি হয়।...
তার
রোযা ভেঙ্গে গেছে? এখন তার কী
করণীয়?
কেননা
রোযা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (যদি
তা
বেশিও হয়) রোযা ভাঙ্গে না। অবশ্য কেউ ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রোযা অবস্থায় (অনিচ্ছাকৃত) বমি হলে তা কাযা করতে
হবে
না। কিন্তু ইচ্ছাকৃত বমি করলে সে যেন তা কাযা করে নেয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৭২০; কিতাবুল
আসল
২/২০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩২৬
আমাদের এলাকায় এক মসজিদে রমযানে ইতেকাফের জন্য কোনো লোক পাওয়া...
আমি গত রমযানে আমাদের মহল্লার মসজিদে ইতিকাফ করার ইচ্ছা করি।...
হয়েছে?
রোযা অবস্থায় যদি শরীরের কোনো অঙ্গ থেকে রক্ত বের হয়...
অঙ্গ থেকে রক্ত বের হয় কিংবা সিরিঞ্জ দিয়ে শরীর থেকে রক্ত বের করা হয় তাহলে কি রোযা ভেঙ্গে যাবে?
হলে রোযা ভাঙ্গে না। তদ্রুপ সিরিঞ্জ দ্বারা
বের করা হলেও রোযা ভাঙ্গে না। তবে বিশেষ ওযর ছাড়া শরীর থেকে ইচ্ছাকৃত এ
পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যার কারণে ঐ দিন রোযা পূর্ণ করার শক্তি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৩৮, ১৯৪০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/৩০০
রোযা অবস্থায় কেউ যদি চোখে ড্রপ ব্যবহার করে এবং মুখেও...
২/২৪৪
রোযা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে? এতে কি রোযা...
রোযা অবস্থায় যদি কেউ স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন নেয় তাহলে কি...
এতেকাফকারী কি জানাযা পড়ার জন্য মসজিদের বাইরে যেতে পারবে? এতে...
আমি কলেজে পড়ি। ছোট থেকেই নামায-রোযার প্রতি মনোযোগী ছিলাম। কিন্তু...
এবার
রমযানে কলেজে গিয়ে বন্ধুদের প্ররোচনায় পড়ে ৫টি রোযা ভেঙ্গে ফেলি। তারপর থেকে এ নিয়ে খুব চিন্তিত আছি। বারবার তাওবা ইস্তিগফার করেছি। এ অবস্থায় আমার জন্য আর কী করণীয়? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
আমার আম্মা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক এবং হৃদরোগে আক্রান্ত। এ কারণে...
৩৭৫-৩৭৬
গত রমযানে আমি একদিন অযু করছিলাম। অসতর্কতাবশত সামান্য পরিমাণ পানি...
করবেন।
২/৪০১
আমাদের এলাকায় এক রমযানে ইতিকাফের জন্য কোনো লোক পাওয়া যাচ্ছিল...
আমাদের মাদরাসার পাশে অস্থায়ীভাবে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে...
করবেন।
হবে না।
-সূরা বাকারা (২) : ১৮৭; তাফসীরে কুরতুবী ২/২২২; কিতাবুল ইসআফ ফী আহকামিল আওকাফ ৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮০;
আমি মাইগ্রেনে আক্রান্ত। গত রমযানে একদিন হঠৎ প্রচন্ড মাথা ব্যথা...
করবেন।
২/২৭৪
আমি একদিন ঘুম থেকে দেরিতে উঠি এবং তখনো সাহরীর সময়...
থাকি।
খাওয়া শেষে জানতে পারি তখন সুবহে সাদিক হয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, উপরোক্ত কারণে আমার রোযা সহীহ হবে কি না? না হলে এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
গত রমযানে আমি একদিন অযু করছিলাম। অসতর্কতাবশত সামান্য পরিমাণ পানি...
গত রোযার মাসে আমি কয়েকদিন অসুস্থ ছিলাম। একদিন দিনের বেলায়...
গত রমযান মাসে একদিন তারাবীর পর আমার খুব বমি হয়।...
রোজা রেখা অবস্থায় পর্নোগ্রাফি দেখার কারণে বীর্যপাত হলে রোজা কি...
আমি কলেজে পড়ি। ছোট থেকেই নামায-রোযার প্রতি মনোযোগী ছিলাম। কিন্তু...
এবার
রমযানে কলেজে গিয়ে বন্ধুদের প্ররোচনায় পড়ে ৫টি রোযা ভেঙ্গে ফেলি। তারপর থেকে এ নিয়ে খুব চিন্তিত আছি। বারবার তাওবা ইস্তিগফার করেছি। এ অবস্থায় আমার জন্য আর কী করণীয়? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।