সুদের টাকা দ্বারা ট্যাক্স বা ঘুষ দেওয়া বিধান ৷
বলা বাহুল্য যে, ঘুষ দেওয়া-নেওয়া উভয়টি হারাম ও অভিশপ্ত কাজ৷ তাই তা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য ৷
-আহকামুল কুরআন জাসসাস ১/৪৬৭; ইমদাদুল আহকাম ১/৪৭৯৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
জিপি ফান্ডে বাধ্যতামূলক বা স্বেচ্ছায় বেতনের অংশ কেটে রেখে তার উপর প্রদত্ত সুদের বিধান৷
তবে উক্ত জিপি ফান্ডে স্বেচ্ছায় কর্তন করানো জায়েয নেই। যদি কেউ স্বেচ্ছায় টাকা কর্তন করে তাহলে তার উপর প্রাপ্ত সুদের টাকা গরীবদেরকে সদকা করে দিতে হবে।
-আহকামুল কুরআন জাসসাস ১/৪৬৭; ইমদাদুল আহকাম ১/৪৭৯৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
আমরা বিশজন মিলে একটা সংগঠন করেছি। উদ্দেশ্য হল, সবাই সমানভাবে...
আমরা বিশজন মিলে একটা সংগঠন করেছি। উদ্দেশ্য হল, সবাই সমানভাবে টাকা জমা করে শিরকতের পদ্ধতিতে ব্যবসা করব এবং লাভ সমানভাবে বণ্টন হবে। ব্যবসা করার দায়িত্ব আমি বহন করেছি। এর জন্য আমি কোনো বেতন নেই না। গত বছর এক লোককে তিন মাস পর ১০ মন ধান দিবে এ চুক্তিতে চার হাজার টাকা অগ্রিম দিই। পরে ঐ লোক থেকে টাকা বা ধান কোনোটাই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এখন সংগঠনের বাকি সদস্যরা আমার কাছে এই টাকা দাবি করছে। জানার বিষয় হল, এই টাকার দায় কি শুধু আমার উপর আসবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সংগঠনের বিনিয়োগ বিষয়ক নীতি ও শর্ত মেনেই যদি যথাসাধ্য যাচাইয়ের পর ঐ ব্যক্তির সাথে লেনদেন করে থাকেন তবে এর ক্ষতি সংগঠনের সকল সদস্যকেই মূলধন অনুপাতে বহন করতে হবে। এক্ষেত্রে পুরো ক্ষতি আপনার উপর চাপানো জায়েয হবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮০; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা : ১৩৫০
আমি একজন মুদি ব্যবসায়ী। গত বছর আমি অন্য এক ব্যবসায়ীকে...
আমি একজন মুদি ব্যবসায়ী। গত বছর আমি অন্য এক ব্যবসায়ীকে দশ মন ধান করয দিয়েছিলাম। এ বছর তা আদায় করার কথা। এখন আমি চাচ্ছি, তার কাছ থেকে ধান না নিয়ে টাকা নিতে। এটা কি জায়েয হবে? জায়েয হলে কখনকার মূল্য হিসেবে সে টাকা দিবে? গত বছরের, না বর্তমান বাজারের?
করয লেনদেনের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, যে জিনিস করয দেওয়া হয় বিনিময়ে সেটাই নিবে। তাই এ বছর সমপরিমাণ ঐ ধানই আপনার প্রাপ্য। তবে হাঁ, করয দাতা-গ্রহিতা উভয়ের সম্মতিতে পাওনা বস্তুর বদলে তার মূল্যও লেনদেন করা যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি চাইলে ধানের পরিবর্তে মূল্যও নিতে পারবেন। আর এক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধের সময়ের বাজার-মূল্য ধর্তব্য হবে। অর্থাৎ তখন বাজারে ঐ মানের দশ মন ধান যত টাকায় পাওয়া যেত তত টাকা নিতে পারবেন। এর বেশি নেওয়া যাবে না।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৫৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৯৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২৩
আমি নয় লক্ষ টাকা দিয়ে একটি মুদি দোকান দিতে যাচ্ছি।...
আমি নয় লক্ষ টাকা দিয়ে একটি মুদি দোকান দিতে যাচ্ছি। যার মধ্যে চার লক্ষ নিয়েছি আমার এক বন্ধু থেকে। বন্ধুর শর্ত হল, মোট লভ্যাংশের অর্ধেক তাকে দিতে হবে। জানতে চাচ্ছি, এভাবে চুক্তি করলে সহীহ হবে কি না? ব্যবসার যাবতীয় কাজ কারবার দেখাশুনা আমার দায়িত্বে।
আপনার বন্ধুর মূলধন যেহেতু আপনার চেয়ে কম তাই সে যদি ব্যবসায় কোন শ্রম না দেয় তবে তার জন্য অর্ধেক লাভের চুক্তি করা বৈধ হবে না। সে তার মূলধন অনুপাতে সর্বোচ্চ শর্তকরা ৪৪.৪৪% লভ্যাংশ নিতে পারবে। এর বেশি লাভ নিতে পারবে না। তবে হ্যা, সেও যদি ব্যবসায় কিছু শ্রম দেয় তাহলে পুঁজি কম থাকলেও অর্ধার্ধি লাভের শর্ত করা সহীহ।
উল্লেখ্য যে, অংশিদারী ও যৌথ মূলধনী কারবারে শরঈ অনেক বিষয় থাকে, যেগুলো ব্যবসা শুরুর আগে কোনো বিজ্ঞ আলেম থেকে জেনে নেয়া উচিত।
-বাদায়েউস সনায়ে ৫/৮৩; আলমাবসূত, সারাখসী ১১/১৫৯; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৭৪
আমাদের গ্রামে শাক সবজি ইত্যাদি চাষাবাদকারী কৃষকদেরকে ঢাকার বিভিন্ন আড়তদাররা...
আমাদের গ্রামে শাক সবজি ইত্যাদি চাষাবাদকারী কৃষকদেরকে ঢাকার বিভিন্ন আড়তদাররা উৎপাদনের প্রয়োজনে ঋণ দিয়ে থাকে। কৃষিপণ্য উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষকরা সেই ঋণ পরিশোধ করে দেয়।
এতে আড়তদাররা কোনো প্রকার সুদ নেয় না। তবে আড়তদাররা কৃষকদেরকে বলে দেয় যে, শাক সবজি উৎপন্ন হওয়ার পর আমাদের আড়তেই আনতে হবে। অন্য কোথাও নিতে পারবেন না। কৃষকরাও তা মেনে নেয়। জানার বিষয় হল এ ধরনের শর্ত করে ঋণ দেওয়া বা নেওয়া জায়েয হবে কি না?
ঋণ প্রদান করে ঋণগ্রহিতা থেকে কোনো প্রকার উপকৃত হওয়া সুদের অন্তর্ভুক্ত। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঋণদাতার আড়তে শাক সবজি আনার শর্ত দ্বারা ঋণ দাতা লাভবান হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে আড়তদার কৃষককে মূল্যও কম দিয়ে থাকে। তাই এ ধরনের শর্ত দিয়ে ঋণের আদান-প্রদান করা নাজায়েয। তবে যদি ঋণদাতার পক্ষ থেকে তার আড়তেই দেওয়ার শর্ত করা না হয়; বরং অন্যত্র বিক্রির ব্যাপারে তার পক্ষ থেকে ছাড় থাকে, এরপর ঋণগ্রহিতা নিজ থেকেই কৃষিপণ্য ঋণদাতার আড়তে নিয়ে যায় তাহলে এতে অসুবিধা নেই।
-ংমুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২১০৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০২
আমি একজন সরকারী চাকুরীজীবী, আমার প্রশ্ন হল১. একজন সরকারী কর্মচারী...
আমি একজন সরকারী চাকুরীজীবী, আমার প্রশ্ন হল
১. একজন সরকারী কর্মচারী এখন চাইলে মূল বেতনের কমপক্ষে ৫% বাধ্যতামূলক এবং সর্বোচ্চ ২৫% টাকা ঐচ্ছিক কর্তন করাতে পারেন। জিপি ফান্ডের সরকার প্রদত্ব অংশ বা সুদ নেওয়া জায়েয কি না?
২. আমি জিপি ফাণ্ডের সরকার প্রদত্ত অংশ বা সুদ নেব না। কিন্তু এই টাকা দিয়ে সরকারকে ট্যাক্স দেওয়া ঠিক হবে কি না। অথবা এই টাকা দিয়ে নিতান্ত অপারগতার কারণে অন্য কোনো সরকারী কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে পারব কি না?
সরকারী প্রতিষ্ঠানে জিপি ফান্ডে বেতনের যতটুকু অংশ বাধ্যতামূলক কেটে রাখা হয় তার সাথে সরকার প্রদত্ত অতিরিক্ত অংশ কর্মচারীর জন্য ব্যবহার করা জায়েয। সরকার এটাকে সুদ বললেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা রিবা তথা সুদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত জিপি ফান্ডে কর্তন করানো জায়েয নেই। যদি কেউ অতিরিক্ত কর্তন করে তাহলে স্বেচ্ছায় জমার উপর প্রাপ্ত অতিরিক্ত সকল টাকা গরীবদেরকে সদকা করে দিতে হবে।
আর সুদের টাকা দ্বারা ট্যাক্স দেওয়া বা কাউকে ঘুষ দেওয়া জায়েয হবে না। ঐ টাকা গরীবদেরকে সদকাই করে দিতে হবে। কারণ ঐ টাকা দিয়ে টেক্স বা ঘুষ দিলে তা নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ঘুষ দেওয়া-নেওয়া যে হারাম ও অভিশপ্ত কাজ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
-আহকামুল কুরআন জাসসাস ১/৪৬৭; ইমদাদুল আহকাম ১/৪৭৯
আমাদের দুই ভাইয়ের মীরাস সূত্রে পাওয়া একটি মালবাহী কার্গো আছে।...
আমাদের দুই ভাইয়ের মীরাস সূত্রে পাওয়া একটি মালবাহী কার্গো আছে। কার্গোটি আমরা ভাড়ায় খাটাই। কার্গোটির যাবতীয় কাজ-কারবার, দেখাশোনা, গ্রাহকদের সাথে কথাবার্তা সবকিছু আমি করি। আমাদের চুক্তি হল, যা আয় হবে তার ৪০% ভাইয়ের, বাকিটা আমার, আমাদের এই বণ্টন কি সহীহ?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লভ্যাংশ বণ্টনের চুক্তি সহীহ নয়। এক্ষেত্রে দুই ভাইয়ের মালিকানা যেহেতু সমান তাই গাড়ির যাবতীয় আয় আপনাদের মাঝে সমান হারে বণ্টন হবে। আর এমন একটি গাড়ির যাবতীয় কাজ করাবার ও দেখাশোনার ন্যায্য পারিশ্রমিক যা হয় তার অর্ধেক আপনি আপনার ভাই থেকে পাওয়ার হকদার। এক্ষেত্রে আপনার পারিশ্রমিক শতকরা হারে নেওয়া সহীহ নয়। বরং পারিশ্রমিকটা অংকে নির্ধারণ করে নেয়া আবশ্যক।
-রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৬; দুরারুল হুক্কাম ৩/২৭; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ১০৭৩
দুই বছর পূর্বে আমি আমার বড় ভাই থেকে আঠারো লক্ষ...
দুই বছর পূর্বে আমি আমার বড় ভাই থেকে আঠারো লক্ষ টাকা নিয়ে একটি কাপড়ের দোকান দিয়েছি। কথা ছিল, তার মূলধন দিয়ে আমি ব্যবসা করব। আর লভ্যাংশ আমরা সমানভাবে ভাগ করে নিব। কিন্তু দুই বছরে আমি তাকে কোনো লাভ দিতে পারিনি। কারণ, ব্যবসাটা যেহেতু মাত্র শুরু তাই ডেকোরেশন ও অন্যান্য খাতে প্রচুর খরচ হয়ে গেছে। আর মানুষের মাঝে তেমন পরিচিতিও হয়ে উঠেনি। এখন আমার ভাই এই ব্যবসা বাদ দিয়ে তার মূলধন ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছেন। আমি চাচ্ছি, ব্যবসাটা ধরে রাখতে। কেননা, আমার প্রবল ধারণা, ব্যবসাটা থেকে ভবিষ্যতে লাভ আসবে। আর এখন যদি ব্যবসাটা বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে আমার এত দিনের শ্রম সম্পূর্ণ বৃথা যাবে। তাই জানার বিষয় হল, আমার ভাই যদি স্বেচ্ছায় ব্যবসাটা রাখতে না চায় তাহলে তাকে তা অব্যাহত রাখতে বাধ্য করতে পারব কি না?
আপনার ভাইয়ের সাথে ব্যবসার উক্ত চুক্তিটি মোদারাবা চুক্তি। আর মুদারাবার মধ্যে পুঁজি বিনিয়োগকারী চাইলে তার চুক্তি শেষ করে দেয়ার অধিকার রাখে। কারণ, ব্যবসা চলমান থাকলে যেমনিভাবে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তেমনিভাবে পুঁজি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। সুতরাং আপনার ভাই চাইলে তার পুঁজি ফেরত নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে চুক্তি রাখার জন্য তাকে বাধ্য করা জায়েয হবে না। বরং সে পুঁজি চাইলে দিয়ে দিতে হবে। অবশ্য সেক্ষেত্রে বর্তমানে দোকানে বিক্রিযোগ্য সে সকল মালামাল রয়েছে সেগুলো বিক্রি হওয়া ও চূড়ান্ত হিসাব হওয়া পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে।
-বাদায়েউস সনায়ে ৫/১৫২; আলমাবসূত, সারাখসী ২২/১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১৮৮; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৫৫
ক. ট্রেনে চলাচলকালে অনেক সময় টিকেট না থাকলে ড্রাইভার কিংবা...
ক. ট্রেনে চলাচলকালে অনেক সময় টিকেট না থাকলে ড্রাইভার কিংবা টিটিকে কিছু টাকা দিলে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। জানার বিষয় হল, এটা কি জায়েয?
খ. প্রচলিত ধারার ব্যাংকে চাকুরী করা কি জায়েয?
ক) টিকেট নেওয়া ব্যতীত ট্রেনে যাতায়াত করা বৈধ নয়। নিয়মতান্ত্রিক রশিদ বা টিকেট গ্রহণ না করে ড্রাইভার কিংবা টিটিকে টাকা দিলেও তা ভাড়া হিসেবে গণ্য হবে না। বরং সেটা হবে ঘুষ। যা সম্পূর্ণ নাজায়েয। সুতরাং এভাবে কখনো ট্রেনে ভ্রমন করে থাকলে সমপরিমাণ মূল্যের সিট বিহীন টিকেট কেটে ছিড়ে ফেলবেন। এতে আপনি উক্ত অপরাধ থেকে মুক্ত হতে পারবেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৩৭; ফাতহুল কাদীর৬/৩৫৯; তাফসীরে মাযহারী ৩/১৪৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৪৪৫
খ. প্রচলিত ধারার ব্যাংকের চাকরি সুদী কাজে সরাসরি সহযোগিতার শামিল। এতে চাকরি করলে শ্রমও হারাম এবং আয়ও হারাম হবে। মুসলমানদের জন্য এ ধরনের চাকরি থেকে বিরত থাক আবশ্যক। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮, আলআশবাহ ওয়াননাযায়ের ৩/২৩৪
আমরা কয়েক বন্ধু মিলে প্রায় পাঁচ বছর পূর্বে যৌথ মূলধন...
আমরা কয়েক বন্ধু মিলে প্রায় পাঁচ বছর পূর্বে যৌথ মূলধন দিয়ে একটি ব্যবসা শুরু করেছি। কথা হয়েছে দশ বছর
পূর্ণ হওয়ার পূর্বে আমরা কেউ এই ব্যবসা থেকে আলাদা হবো না। কিন্তু আমাদের একজন এখনই আলাদা হয়ে যেতে চাচ্ছে। ব্যবসাটির পরিচালনায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ অবস্থায় সে আলাদা হলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই জানার বিষয় হল, আমাদের সম্মতি ব্যতীত সে ব্যবসা থেকে আলাদা হওয়ার অধিকার রাখে কি না?
একটি নির্ধারিত মেয়াদ ঠিক করে যৌথ মূলধনী কারবার শুরু করা হলেও কোনো অংশিদার চাইলে অন্যদের সম্মতিক্রমে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে আলাদ হয়ে যেতে পারবে। এমনিভাবে ওযরবশত অন্যদের সম্মতি ছাড়াও আলাদা হতে পারবে। তবে ওযর না থাকলে চুক্তির সময়ের চুক্তিকৃত মেয়াদকালের পূর্বে আলাদা হওয়া উচিত নয়। কোনো মুসলমানের জন্য বিনা ওযরে কৃত ওয়াদা বা চুক্তি ভঙ্গ করা ঠিক নয়।
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির যদি কোনো ওযর থাকে তাহলে সে এখন আলাদা হয়ে যেতে পারবে। অন্যথায় তার উচিত- মেয়াদ পূর্ণ করা। এর পরও সে চলে যেতে চাইলে অংশিদারগণ তাকে থাকতে বাধ্য করতে পারবে না।
-বাদায়েউস সনায়ে ৫/১০৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪১৩; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৮
পূর্বকথা : মাসআলাটি জানা আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। আমর...
পূর্বকথা : মাসআলাটি জানা আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। আমর চাচা ও আমরা কয়েক বন্ধু হালাল হারাম বিবেচনা না করে সংস্থাটির সাথে জড়িয়ে পড়ি এবং আমাদের কারণে আরো কয়েকজন বিষয়টির সাথে যুক্ত হয়। তাই মাসআলাটি যত দ্রুত সম্ভব জানা জরুরি।
আমি যে কোম্পানির কথা বলছি তার নাম তিয়ানশি। কোম্পানিটি চায়নার। তারা দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করে :
১. সেবা
২. ব্যবসা
১. সেবা : মানুষকে সুস্থ রাখার জন্য কোম্পানিটির রয়েছে কয়েক শত পণ্য। যা বাস্তবিক পক্ষেই মানুষের জন্য উপকারী এবং কার্যকরী। এসব পণ্য দিয়েই এর ব্যবসা সঞ্চালিত হয়।
২. ব্যবসা : তিয়ানশির ব্যবসা হচ্ছে নেটওয়ারর্কিং সিস্টেমে। অর্থাৎ আমি সুস্থ থাকার জন্য সর্বপ্রথম ৩০০ ডলারের (২৪০০০ টাকা) পণ্য ক্রয় করে ৩* (three stars) অর্জন করব। তারপর আমি কোম্পানির যেসব পণ্য ক্রয় করব তা থেকে ঐ পণ্যের মূল্যের ২০% হারে ছাড় পাব। নিয়মটা ঠিক এরকম, আমি নির্দিষ্ট দামেই পণ্য কিনব। তবে পরবর্তীতে তা থেকে মূল্যের ২০% আমার ব্যাংক একাউন্টে চলে আসবে। আমার মাধ্যমে অন্য কেউ ক্রয় করলেও ঠিক এ রকম। এরপর আমি ৪ জনকে ৩* বানাব। আর তাদের থেকে নির্দিষ্ট পয়েন্ট পেয়ে আমি হয়ে যাব ৪* (four stars) এতে আমি সরাসরি যা কিনব তা থেকে পাব ২৪%। আর আমি যাদেরকে নিয়োগ দিয়েছি তাদের ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য থেকে পাব ৪%। এভাবে আমার ঐ ৪ জন ৪* হয়ে গেলে আমি হব ৫*। পণ্যের মূল্যের ২৪% লাভ পাব। আর আমার নিচের লোকদের থেকে পাব ৪% ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এক সময় তা ৪০% পর্যন্ত যায়। আর আমি কাজ করি না করি, জানি বা না জানি আমার নিচে যত শত শত হাজার হাজার লোক থাকবে তাদের কাছ থেকে ৪% মূল্যের দাম থেকে ওদের ভাষ্যমতে একজন ব্যক্তি ২০% থেকে ৪০% পর্যন্ত যে লাভটা পাবে সেটা হচ্ছে অন্যান্য কোম্পানি মধ্যস্তা অথবা শোরুম, টিভিতে এ্যাড, এজেন্ট, সাব এজেন্টের মত ৬/৭ টি হাত বদল হতে হতে পণ্যের দাম দ্বীগুণ অথবা তিনগুণ বেড়ে যায়। ওদের এসব মধ্যস্থতা নেই, যার ফলে ঐ বেঁচে যাওয়া টাকা থেকে তারা কোম্পানির সদস্যদের দেয়। এখন আমার প্রশ্ন হল :
১. এই সিস্টেম/পদ্ধতিতে ব্যবসা কি জায়েজ। যদি জায়েজ না হয় তবে তা কেন? (দলিলসহ)
২. যদি জায়েয না-ই বা হয় তবে আমরা যে এতদিন এর থেকে লভ্যাংশ পেয়ে এসেছি তার জন্য বর্তমানে কী করা?
৩. যদি আমরা ব্যবসা না করে ওদের কাছ থেকে পণ্য কিনি তাহলে এর বিধান কি?
১. প্রচলিত এমএলএম পদ্ধতির কারবার জায়েয নয়। প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী তিয়ানশি কোম্পানি যেহেতু এমএলএম অর্থাৎ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে পরিচালিত তাই এই পদ্ধতিতে ব্যবসা করা নাজায়েয। এমএলএম পদ্ধতি নাজায়েয হওয়ার মৌলিক ও শাখাগত অনেক কারণ রয়েছে। তন্মেধ্যে গারার, শ্রমবিহীন পারিশ্রমিক, এক চুক্তির সাথে আরেক চুক্তি শর্তযুক্ত হওয়া, অযাচিত মধ্যস্বত্ব ভোগ ও দালালদের অতিরঞ্জিত কথা বলে মানুষকে প্রভাবিত করা অন্যতম। সুতরাং উক্ত কোম্পানীর সাথে ব্যবসায় জড়িত হওয়া জায়েয হবে না। এ পদ্ধতির মার্কেটিংয়ের খারাবী ও নাজায়েযের দলীলসমূহ মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া কর্তৃক প্রকাশিত মাসিক আল কাউসারের ২০১১ সালের জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ সংখ্যায় বিস্তারিত লেখা হয়েছে। প্রয়োজনে আলকাউসার দপ্তর থেকে সংগ্রহ করে সেগুলো পড়ে নিতে পারেন।
২. যেহেতু এই পদ্ধতির ব্যবসা সম্পূর্ণ নাজায়েয, তাই এ থেকে অর্জিত লভ্যাংশও হালাল নয়। সুতরাং এ পর্যন্ত যত টাকা কমিশন পেয়েছেন তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব মিসকীনদেরকে সদকা করে দিতে হবে।
৩. এ ধরনের কোম্পানীর পণ্য নিজে পরিবেশক হওয়ার উদ্দেশ্য না থাকলেও কোনো পরিবেশকের মাধ্যমে কেনা বৈধ নয়। কেননা, এতে নিজে ব্যবসায় জড়িত না হলেও নেটে অবস্থিত অন্যান্য লোকের এবং কোম্পানীর অবৈধ ব্যবসায় সহায়তা করা হয়।
-সূরাতুন নিসা (৪) : ২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪১৩, ১৫২১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৭৮৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৭২
আমি এক লোককে একটি অটো রিকশা কিনে দিয়েছি। তার সাথে...
আমি এক লোককে একটি অটো রিকশা কিনে দিয়েছি। তার সাথে এভাবে চুক্তি হয়েছে যে, এই রিকশা চালিয়ে তার যা আয় হবে তার অর্ধেক আমি আর অর্ধেক সে পাবে।
তার সাথে এভাবে চুক্তি করা আমার জন্য কি ঠিক হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত চুক্তি বৈধ হয়নি। অটো রিকশা চালিয়ে ঐ লোক যে ভাড়া পাবে তার একক মালিক সেনিজেই। আর আপনি রিকশার ন্যায্য ভাড়া পাবেন।
এছাড়া আপনি চালকের সাথে এভাবেও চুক্তি করতে পারেন যে, সে নির্দিষ্ট সময় রিক্সা চালাবে।বিনিময়ে সে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক পাবে। এক্ষেত্রে রিক্সার যাবতীয় আয় আপনার হবে। কিন্তু এই দুইপদ্ধতি ব্যতীত উভয়ের মাঝে আয়ের অংশিদারিত্বের চুক্তি করা সহীহ হবে না।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ২৩৭৭৫; কিতাবুল আসল ৪/১৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৬; আল মুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৭
আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। রাত ৮টা পর্যন্ত ডিউটি...
আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। রাত ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় দশটা বেজে যায়। এরপর খাবার-দাবার ও অন্যান্য কাজ শেষ করে ইশার নামায পড়তে পড়তে প্রায় বারোটা, সাড়ে বারোটা বেজে যায়। এর আগে পড়াটা একটু কঠিন হয়। জানতে চাই, আমার জন্য এত দেরি করে নামায আদায় করায় কোনো সমস্যা আছে কি?
বিনা ওজরে ইশার নামায আদায়ে এত বিলম্ব করা মাকরূহ। ইশার নামায রাতের প্রথম একতৃতীয়াংশের মধ্যে আদায় করে নেওয়া উত্তম। অবশ্য মধ্যরাত পর্যন্ত পড়ে নিলে মাকরূহ হবে না।আমাদের দেশে মওসুমভেদে মধ্যরাত শুরু হয় কখনো এগারোটা থেকে, কখনো সাড়ে এগারোটাথেকে বা এর কয়েক মিনিট আগে-পরে (ঢাকার সময়ানুযায়ী)। তাই ওজর ছাড়া এর চেয়ে বিলম্বকরা মাকরূহে তানযীহী। সময়মতো নামায আদায়ের ব্যাপারে আরো যত্নশীল হওয়া কর্তব্য।
উল্লেখ্য, যে সকল দপ্তরে মুসলমান কর্মচারীগণ কাজ করে সেখানের কর্তৃপক্ষের উচিত নামাযেরনির্ধারিত সময়ে কর্মচারীদেরকে জামাতের সাথে নামায আদায়ের সুযোগ করে দেওয়া। তবেসেখানে যদি জামাতের সুযোগ নাও থাকে তবে ছুটির পর অফিসে কিংবা বাইরে কোথাও নামাযপড়ে নেওয়াই বাঞ্ছনীয় হবে।
-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২২৬; মাবসূত, সারাখসী ১/১৪৭; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৪; হালবাতুল মুজাল্লী ১/৬৪৬; রদ্দুল মুহতার ১/৩৬৮; কিতাবুল আছল ১/১২৩; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৫২২
আমি কুমিল্লা ইপিজেডে একটি কোরিয়ান ফ্যাক্টরিতে চাকরি করি। আমার দায়িত্ব...
আমি কুমিল্লা ইপিজেডে একটি কোরিয়ান ফ্যাক্টরিতে চাকরি করি। আমার দায়িত্ব হল ফ্যাক্টরির জন্য কাঁচামাল ক্রয় করা। কাঁচামালগুলে যেসব কোম্পানি থেকে ক্রয় করি তারা অনেক সময় আমাকে প্রস্তাব করে যে, আমি তাদের থেকে পণ্য ক্রয় করলে তারা আমাকে শতকরা হারে কিছু কমিশন দিবে। যেমন আমার ফ্যাক্টরির ক্যাবল প্রয়োজন। ক্যাবল বিক্রয়কারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন, বিআরবি, বিবিএস, প্যারাডাইস ক্যাবল ইত্যাদি। তো ধরুন, বিআরবি কোম্পানি আমাকে প্রস্তাব করল যে, আমি যদি তাদের থেকে ক্রয় করি তাহলে তারা আমাকে ০.৫% কমিশন দিবে। এই কমিশনটা নেওয়া আমার জন্য জায়েয হবে কি না?
আপনি যেহেতু ঐ ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে মালামাল ক্রয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তাই বিক্রয়কারী কোম্পানির কাছ থেকে কোনো কমিশন নেওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে না। নিলে সেটা সম্পূর্ণ ঘুষ ও হারাম হবে। বিক্রেতা কোম্পানি যদি কখনো কোনো গিফট বা কমিশন দেয় তা আপনার ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে হবে। এই কমিশন বা গিফট পাওয়ার হকদার ক্রেতা কোম্পানি। ক্রেতা প্রতিনিধি নয়।
উল্লেখ্য, আপনার কর্তব্য হল আপনার প্রতিষ্ঠান কোনো ব্র্যান্ড নির্ধারণ করে দিলে তাদের থেকেই মালামাল নেওয়া। আর যদি নির্ধারণ না করে দেয় তবে যাদের থেকে কিনলে আপনার ফ্যাক্টরি সার্বিকভাবে লাভবান হবে তাদের থেকেই ক্রয় করা। এর ব্যতিক্রম হলে অন্যায় ও খেয়ানত হবে।
-জামেউল ফুসুলাইন ২/২১১; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৬৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৫৬০
আমরা তিনজন মিলে ১ লক্ষ করে মোট ৩ লক্ষ টাকা...
আমরা তিনজন মিলে ১ লক্ষ করে মোট ৩ লক্ষ টাকা একজনকে ব্যবসা করার জন্য দেই। সে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রসিদ্ধ মিষ্টি, দই, রসমালাই ইত্যাদি এনে ঢাকায় বিক্রি করে। সে আমাদেরকে অর্জিত লাভের ২৩% করে দেওয়ার আর লস হলে একই হারে কেটে নেওয়ার চুক্তি করে। এক বছর পর সে নিজেও তাতে ১০,০০০/- টাকা বিনিয়োগ করে। এখন জানার বিষয় হল, আমাদের উপরোক্ত কারবারটি সহীহ আছে কি?
প্রশ্নোক্ত লাভ বণ্টনের চুক্তিটি সহীহ হয়েছে। কিন্তু লোকসানের ক্ষেত্রে একই হারে কেটে নেওয়ার চুক্তিটি সহীহ হয়নি। কেননা আপনারা তার সাথে যে চুক্তিটি করেছেন ফিকহের পরিভাষায় একে মুদারাবা বলে। মুদরাবার ক্ষেত্রে নিয়ম হল ব্যবসায় ক্ষতি হলে বিনিয়োগকারীরা নিজ নিজ বিনিয়োগের হার অনুপাতে ক্ষতি বহন করবে। কিন্তু ব্যবসা পরিচালনাকারীর ইচ্ছাকৃত ত্রুটি ছাড়া তার ক্ষতি হলে বা লোকসান হলে সে মূলধনের জরিমানা দিবে না। অবশ্য ব্যবসা পরিচালনাকারী নিজ থেকেও কিছু বিনিয়োগ করলে লোকসানের ক্ষেত্রে মূলধনের অনুপাতে সেও ক্ষতি বহন করবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ : ১৩৬৯; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৪৮
আমি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমার বেশিরভাগ সহকর্মী ঘুষ...
আমি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমার বেশিরভাগ সহকর্মী ঘুষ গ্রহণ করে বা অসৎ উপায়ে আয় করে। তারা আমাকে বিভিন্ন সময় খাবারের দাওয়াত দেয়। তাদের এ দাওয়াত গ্রহণ করা কি ঠিক হবে?
প্রশ্নোক্ত অবস্থায় দাওয়াতকারীর মূল চাকরি যদি হালাল হয় এবং তার অধিকাংশ উপার্জন হালাল হয় তবে আপনার জন্য তার দাওয়াত গ্রহণ করা এবং তার খাবার খাওয়া জায়েয। তদ্রূপ হালাল আয় থেকেই দাওয়াতের ব্যবস্থা করেছে বলে নিশ্চিত হলে তখনো দাওয়াত গ্রহণ করা যাবে। তবে হারাম অর্থ দ্বারা দাওয়াতের ব্যবস্থা করেছে জানা গেলে কোনোক্ষেত্রেই দাওয়াত গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৭৫
আমি আমার ভাইয়ের সাথে এভাবে একটি ব্যবসায়িক চুক্তিতে আবদ্ধ হই...
আমি আমার ভাইয়ের সাথে এভাবে একটি ব্যবসায়িক চুক্তিতে আবদ্ধ হই যে, তিনি ব্যবসার যাবতীয় মূলধন সরবরাহ করবেন। আর আমি ব্যবসা পরিচালনা করব। লভ্যাংশ আমাদের মাঝে সমানহারে বণ্টিত হবে। কিছুদিন যাওযার পর ব্যবসা যখন বড় হতে শুরু করে তখন ভাইয়া পর্যাপ্ত মূলধন সরবরাহ করতে পারছিলেন না। অবশেষে ভাইয়ার সাথে পরামর্শক্রমে আমি আমার কিছু টাকা ঐ ব্যবসায় খাটিয়েছি। এখন আমরা লভ্যাংশ বণ্টন কীভাবে করব?
আপনি ঐ ব্যবসায় যত টাকা বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসার খরচ বাদ দেওয়ার পর আপনার টাকা অনুপাতে যে মুনাফা আসে তার মালিক এককভাবে আপনি। তা আপনি নিয়ে নিবেন। আর আপনার ভাইয়ের বিনিয়োগকৃত অংশের লভ্যাংশ আপনারা দুজন চুক্তি অনুযায়ী সমানভাবে বণ্টন করে নিবেন।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৯; মাজাল্লাতুল আহাকমিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ১৪১৭
আমি একটি দোকান ভাড়া নিয়েছি। দোকানের সামনে বেশ কিছু জায়গা...
আমি একটি দোকান ভাড়া নিয়েছি। দোকানের সামনে বেশ কিছু জায়গা ফাঁকা আছে। সেখানকার অল্প কিছু জায়গায় এক লোক ঘড়ি মেরামতের জন্য ছোট্ট একটি দোকান দিতে চায়। মাসিক তিন শ টাকা ভাড়া দেওয়ার শর্তে আমি তার প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। প্রশ্ন হল, আমার জন্য ঐ ভাড়া নেওয়া বৈধ হবে কি না? উল্লেখ্য, ঐ দোকানের কারণে আমার বেচাকেনা বা কাস্টমারের যাতায়াতের কোনো অসুবিধা হয় না।
দোকানের সামনের জায়গার মালিক যেহেতু আপনি নন এবং জায়গাটি আপনার ভাড়ার অধীনেও নয় তাই ঐ জায়গা ভাড়া দেওয়া বা সেখান থেকে ভাড়ার নামে কোনো টাকা নেওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১০
আমি ও আমার বড় ভাই মিলে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার...
আমি ও আমার বড় ভাই মিলে একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার পরিচালানায় আছি। আমাদের এখানে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন চাকরির আবেদন, বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজে ভর্তি ইত্যাদি ফরম পূরণ করা হয়। আমার জানামতে, ব্যাংকে চাকরি করা জায়েয নয়। তবে আমাদের জন্য কি অনলাইনের মাধ্যমে কোনো ব্যাংকে চাকরির আবেদন ফরম পূরণ করা জায়েয হবে? নাকি নাজায়েয হবে? দয়া করে এর উত্তর দিয়ে আমাদের উপকৃত করবেন।
প্রচলিত ধারার ব্যাংকে চাকরি করা নাজায়েয। কেননা এ ব্যাংকগুলোর প্রধান ও মূল কাজই হল সুদের আদান-প্রদান। সুতরাং ব্যাংকের চাকরির জন্য আবেদন ফরম পূরণ করে দেওয়া নাজায়েয কাজে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা গুনাহের কাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ করেছেন-
وَ تَعَاوَنُوْا عَلَی الْبِرِّ وَ التَّقْوٰی ۪ وَ لَا تَعَاوَنُوْا عَلَی الْاِثْمِ وَ الْعُدْوَانِ ۪ .
এবং নেকি ও তাকওয়ায় পরস্পর সহযোগিতা কর এবং গুনাহের কাজ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। -সূরা মায়েদা (৫) : ২
অতএব ব্যাংকের ফরম পূরণে সহযোগিতা করা বৈধ হবে না।
একজন ইমাম সাহেব আমাকে সাথে নিয়ে পাইকারী দোকান থেকে ১...
একজন ইমাম সাহেব আমাকে সাথে নিয়ে পাইকারী দোকান থেকে ১ লক্ষ টাকার ফ্যান কিনে ইমাম সাহেবের নামেই ভাউচার করেন। অতপর ইমাম সাহেব ফ্যানগুলো নিজের আয়ত্তে দুই দিন রাখার পর উক্ত এক লক্ষ টাকার ঐ ফ্যানগুলো ছয় মাসের বাকি মেয়াদে ১ লক্ষ আঠারো হাজার টাকায় আমার কাছে বিক্রি করেন।
উক্ত বেচাকেনাতে সুদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি? দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।
আপনাদের লেনদেনটি যদি বাস্তবেই প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে হয়ে থাকে অর্থাৎ ইমাম সাহেব প্রথমে ফ্যানগুলো নিজের জন্য খরিদ করে থাকেন এবং সেগুলো নিজের আয়ত্তে নিয়ে থাকেন এরপর আপনার নিকট পৃথকভাবে নির্দিষ্ট মেয়াদে বা কিস্তিতে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করে থাকেন তাহলে আপনাদের প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি সহীহ হয়েছে। এতে সুদের সম্পৃক্ততা নেই। তবে এক্ষেত্রে আঠারো হাজার টাকার লাভের পরিমাণটা বেশি। তা আরো কম হওয়া উচিত ছিল। যদিও এ কারণে ঐ ক্রয়-বিক্রয় নাজায়েয হয়ে যায়নি। আর ভবিষ্যতেও যেন কারবারটি সুদের সম্পৃক্ততা থেকে মুক্ত থাকে সেজন্য নিম্নের বিষয়টি লক্ষ্য রাখা জরুরি।
নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে আপনাকে টাকাগুলো পরিশোধ করে দিতে হবে। নির্ধারিত মেয়াদ থেকে বিলম্ব করা গুনাহ। তবে কোনো কারণে সময়মতো মূল্য পরিশোধ করা না হলে অতিরিক্ত প্রদানের শর্ত করা যাবে না এবং কোনো ধরনের জরিমানা আরোপ করা যাবে না। অতিরিক্ত নিলেই তা সুদ হয়ে যাবে।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ২২৮৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৪৯৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩৪; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৬/১২২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৯৪; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ ২৪৫
আমি একজনের সাথে এভাবে চুক্তি করি যে, আমরা একটি ব্যবসা...
আমি একজনের সাথে এভাবে চুক্তি করি যে, আমরা একটি ব্যবসা করব। ব্যবসার সমস্ত টাকা আমি দিব। আর সে ব্যবসা পরিচালনা করবে। দুজনের ভাগ হবে ৫০%। সাথে এ চুক্তিও রয়েছে যে, যদি কোনো কারণে ব্যবসার কোনো ক্ষতি হয় তাহলে সব ক্ষতিপূরণ সে (যাকে আমি ব্যবসার জন্য টাকা দিয়েছি) বহন করবে। আমাদের এ চুক্তি সহীহ হয়েছে কি না? যদি সহীহ না হয় তাহলে আমরা চুক্তিটা কীভাবে করতে পারি? দয়া করে জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত চুক্তিতে ব্যবসায় কোনো ক্ষতি হলে তা ব্যবসায়ী বহন করবে- এ শর্তটি বৈধ হয়নি। কেননা আপনারা যে চুক্তি করেছেন ফিকহের পরিভাষায় তা হল মুদারাবা। আর মুদারাবার ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হল, ব্যবসায় কোনো ক্ষতি হলে প্রথমত লভ্যাংশ থেকে ধরা হবে। তাতেও না হলে বাকিটুকু মূলধন থেকে পূরণ করা হবে। মুদারিব তথা ব্যবসা পরিচালনাকারী বহন করবে না। তাই উক্ত শর্ত বাতিলযোগ্য।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯; আল ইখতিয়ার ২/৪৬১, তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫২১; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৮
আমার এক বন্ধুর কাপড় তৈরির মিল আছে। সে তার মিলের...
আমার এক বন্ধুর কাপড় তৈরির মিল আছে। সে তার মিলের একটি মেশিন বিক্রি করতে চাচ্ছে। আমার ইচ্ছা হল, তার থেকে মেশিনটি কিনে তার কাছেই আবার ভাড়ায় দিয়ে দিব।
আমার জন্য এটা জায়েয হবে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি সাময়িক সময়ের জন্য টাকা দিয়ে অতিরিক্ত গ্রহণই উদ্দেশ্য হয় এবং এর ছূতা হিসেবে লেনদেনটি করা হয় অর্থাৎ মেশিনটি ক্রয় করা ও ভাড়া দেওয়া সবই যদি ছূতা হিসেবে অবলম্বন করা হয় তবে তা বৈধ হবে না।
কিন্তু যদি এক্ষেত্রে লেনদেনটি ছূতা হিসেবে গ্রহণ করা না হয়; বরং প্রকৃত অর্থেই ক্রয়-বিক্রয় উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে তা করা যাবে-
১। ক্রয়ের সাথে ভাড়ার শর্ত করা যাবে না। অর্থাৎ ক্রয়ের সময় এ কথা বলা যাবে না যে, মেশিনটি কিনব তবে শর্ত হল, তোমার কারখানায় এটিকে ভাড়া হিসেবে রাখতে হবে।
২। ক্রয়ের পর মেশিনটি আগে আপনার দখলে বুঝে নিতে হবে।
ক্রয়ের পর যে কারো কাছে ভাড়া দেওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে যেমনিভাবে অন্যত্র ভাড়া দিতে পারবেন তদ্রূপ পূর্বের মালিকের নিকটও তা ভাড়া দিতে পারবেন। ক্রয়ের পর পূর্বের মালিকের কাছে ভাড়া দিতে চাইলে তার সাথে পৃথকভাবে ভাড়া চুক্তি করে নিতে হবে।
৩। কারখানার মালিক মেশিনটি ভাড়া না রাখতে চাইলে তাকে এর জন্য বাধ্য করা যাবে না।
৪। বাস্তবসম্মত মূল্যে বেচা-কেনা হতে হবে। নামমাত্র মূল্যে বিক্রি ও ভাড়া ধরা যাবে না।
-আলমাআইরুশ শরইয়াহ ১৪৫; রদ্দুল মুহতার ৫/১৪৭
বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় এক মাসের ভাড়া অগ্রিম নিতে...
বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় এক মাসের ভাড়া অগ্রিম নিতে পারবে কি না? যা ভাড়া-গ্রহিতা চলে যাওয়ার সময় শেষ মাসের ভাড়া হিসেবে কর্তিত হবে। আর এ টাকা বাড়িওয়ালা নিজের কাজেও ব্যয় করবে।
হাঁ, ভাড়াটিয়া সম্মত হলে এক দুই মাস বা আরো বেশি সময়ের অগ্রিম ভাড়া নেওয়া জায়েয। এবং অগ্রিম ভাড়া নেওয়া হলে তার মালিক বাড়িওয়ালা। তাই এ টাকা সে নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১৩; ফাতহুল কাদীর ৮/১৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১০
আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে- দুই বছর, চার বছরের জন্য সুপারি...
আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে- দুই বছর, চার বছরের জন্য সুপারি বাগান ভাড়া দেওয়া হয়। ভাড়াদাতা নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে গাছের সুপারি ভোগ করে।
আমার জানার বিষয় হল, এভাবে সুপারি বাগান (জমি ও গাছসহ) ভাড়া দেওয়া জায়েয আছে কি?
ফল গ্রহণের উদ্দেশ্যে ফলবাগান ভাড়া দেওয়া-নেওয়া নাজায়েয। সুতরাং সুপারি বাগানের প্রশ্নোক্ত ভাড়া-চুক্তি বৈধ নয়।
বাগানের ফল গ্রহণ করতে চাইলে বিক্রি চুক্তি করতে হবে। অর্থাৎ গাছে যখন ছোট ছোট সুপারি আসবে তখনই পুরো মৌসুমের সুপারি বিক্রি করা যাবে। এরপর ক্রেতা সুবিধামত সময়ে সুপারি পেড়ে নিতে পারবে। এভাবে প্রতি বছর গাছে সুপারি আসার পর তা বিক্রি করতে পারবে। তবে একত্রে কয়েক বছরের জন্য বিক্রি করে দেওয়ার কোনো সহীহ পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। কারণ গাছে ফল আসার পূর্বে তা বিক্রি করলে সেটি হবে বাইয়ে মা‘দূম তথা অস্তিত্ব নেই এমন জিনিস বিক্রি করা। হাদীস শরীফে এ ধরনের বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে।
-কিতাবুল আছল ৪/১২; দুরারুল হুককাম ১/৪৫২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৭; ফাতাওয়া খায়রিয়া ২/১৯৮
আমরা শখ করে দেশীয় বিভিন্ন মুদ্রা (কাগজের, পয়সার) সংগ্রহ করি।...
আমরা শখ করে দেশীয় বিভিন্ন মুদ্রা (কাগজের, পয়সার) সংগ্রহ করি। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রচলিত এবং অপ্রচলিত সব ধরনের মুদ্রাই সংগ্রহ করি। সে মুদ্রা যত টাকা মূল্যের আমরা তার চেয়ে কম বা বেশি মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করি। ইসলামের দৃষ্টিতে এর বিধান কী? কাজটা কি এভাবে বৈধ, নাকি অন্য কোনোভাবে এই বেচাকেনা করা যাবে?
একই দেশের চলমান মুদ্রা পরস্পর লেনদেন করলে সমান সমান হওয়া জরুরি। কমবেশি করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই চলমান টাকা বা পয়সার বিনিময়ে টাকা-পয়সার লেনদেন করলে সমান সমান করতে হবে। কমবেশি করে লেনদেন করা যাবে না।
তবে অচল নোট বা পয়সা গায়ের মূল্যের চেয়ে কমবেশি দামে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয। কিন্তু এ ধরনের অহেতুক কাজে অর্থ ব্যয় করা মুমিনের জন্য সমীচীন নয়।
-হেদায়া ৩/৮১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ২/৫; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসিরা ১/১৬০
আমাদের কিছু দোকান আছে। আমরা সেগুলো একবছর বা তার চেয়ে...
আমাদের কিছু দোকান আছে। আমরা সেগুলো একবছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য ভাড়া দিয়ে থাকি। ভাড়া দেওয়ার সময় ভাড়াগ্রহীতা থেকে দোকানের সাইজ হিসাবে দুই-তিন লক্ষ টাকা সিকিউরিটি মানি নিয়ে থাকি। শুনেছি, এ টাকা নাকি ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে এক আলেমের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সিকিউরিটির টাকা অগ্রিম ভাড়া না ধরেও ব্যবহার করা যায়। তাই জানতে চাই, সিকিউরিটি বাবৎ ভাড়াগ্রহীতা থেকে যে টাকা নেওয়া হয় তা ব্যবহারের কোনো বৈধ পদ্ধতি আছে কি? একজন পরামর্শ দিয়েছেন, সিকিউরিটি মানি না নিয়ে ভাড়াগ্রহীতা থেকে ঐ টাকা করয হিসাবে নিলে তা ব্যবহার করা যাবে। এ কাজ বৈধ হবে কি না? যদি বৈধ না হয় তাহলে অতীতে কেউ এ টাকা ব্যবহার করে থাকলে তার করণীয় কী? বিষয়গুলো দলীল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
ভাড়াগ্রহীতা থেকে ভাড়া চুক্তির সময় অগ্রিম কিছু অর্থ গ্রহণের দু’টি পদ্ধতি প্রচলিত আছে।
১. ভাড়াদাতা জামানত হিসেবে ভাড়াগ্রহীতা থেকে একটি অংকের অর্থ গ্রহণ করে থাকে। ভাড়া-চুক্তি শেষে তা আবার ভাড়াগ্রহীতাকে ফেরত দিয়ে দিতে হয়। যাকে সিকিউরিটি মানি বলে। ২. ভাড়ার অগ্রিম হিসেবে ভাড়াগ্রহীতা থেকে এককালীন কিছু অর্থ গ্রহণ করা হয় এবং প্রতি মাসেই এর থেকে কিছু কিছু করে ভাড়া কাটা হয়। যাকে এ্যাডভান্স বলে।
সিকিউরিটি মানি তথা জামানত হিসেবে যে অর্থ ভাড়াদাতার নিকট জমা রাখা হয় তা বন্ধক হিসেবে থাকে। আর বন্ধকী বস্তু ব্যবহার করা জায়েয নয়। তা ব্যবহার করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, আমার নিকট এক ব্যক্তি একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে। আমি এতে আরোহন করেছি। (এর কী হুকুম?) তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, তুমি এর পিঠ থেকে (আরোহন করে) যে উপকৃত হয়েছ তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। ( মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৫০৭১)
সুতরাং ভাড়াদাতার জন্য সিকিউরিটি মানি ব্যবহার করা কোনোভাবেই জায়েয নয়। অতীতে এ টাকা ব্যবহার করে থাকলে এজন্য আল্লাহ তাআলার নিকট তওবা-ইসতিগফার করতে হবে এবং এ টাকা দ্বারা কোনো লাভ অর্জন করে থাকলে তা সদকা করে দিতে হবে।
আর এক্ষেত্রে সিকিউরিটির টাকা ভাড়াগ্রহীতা থেকে ঋণ হিসেবে নিলে তা ব্যবহার করা যাবে বলে যে কথা প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে তা ঠিক নয়। কেননা সিকিউরিটি মানির টাকাকে ঋণ ধরা হলে যেক্ষেত্রে সিকিউরিটি মানির কারণে ভাড়া কম নেওয়া হবে সেক্ষেত্রে ঋণের কারণে ভাড়া কম নেওয়া হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। আর ঋণের কারণে কোনো সুবিধা ভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া এভাবে একটি চুক্তির সাথে আরেকটি চুক্তি শর্তযুক্ত করে কারবার করাও নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাই সিকিউরিটির টাকা ভাড়াগ্রহীতা থেকে করয হিসাবে নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। বরং ভাড়াদাতা নিজে ব্যবহারের জন্য ভাড়াগ্রহীতা থেকে এককালীন কিছু অর্থ নিতে চাইলে তা এ্যাডভান্স তথা অগ্রিম ভাড়া হিসাবে নিতে পারবে। যা চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া হিসেবে কর্তিত হবে।
উল্লেখ্য, প্রথম পদ্ধতি অর্থাৎ সিকিউরিটি মানি নিয়ে যেহেতু অনেকেই নাজায়েযভাবে তা ব্যবহার করে গুনাহে পড়েন তাই আমরা এক্ষেত্রে এ্যাডভান্স তথা অগ্রিম ভাড়ার পদ্ধতিটি গ্রহণ করার প্রতি উৎসাহিত করে থাকি। এতে করে দোকান বা বাড়ির মালিক একত্রে বেশি টাকাও নিতে পারে এবং তা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধও বটে।
Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৬৬২৮; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৩/১৪৫, ১৯৬; মাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫, ২১/১০৮; কিতাবুল আসল ৩/১৬৩; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ : ৪৬৮
আমাদের কাপড়ের দোকান আছে। ঢাকা ও বিভিন্ন স্থান হতে মাল...
আমাদের কাপড়ের দোকান আছে। ঢাকা ও বিভিন্ন স্থান হতে মাল আনা হয় ট্রাকযোগে। ট্রাক সমিতির মালিকগণ আমাদের সাথে চুক্তি করে যে, আপনাদের প্রয়োজনে পুরো বছর আমাদের থেকে ট্রাক নিবেন অন্য কারো থেকে নয়। এভাবে পুরো বছরের জন্য চুক্তি করা হয়। এ চুক্তির হুকুম কী? আর এভাবে পুরো বছর তাদের থেকে ট্রাক নিলে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লেনদেন হলে বছরান্তে কোনো মূল্যবান বস্তু গিফট দেয়। এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম জানতে চাই।
মালিক সমিতির সাথে পুরো বছরের জন্য এভাবে চুক্তিবদ্ধ হওয়া ওয়াদার অন্তর্ভুক্ত। এটা জায়েয আছে। পরবর্তীতে যখন তাদের থেকে ট্রাক নেওয়া হবে তখন ভাড়া সুনির্দিষ্ট করে নিতে হবে। যেন কোনো ধরনের অস্পষ্টতা না থাকে। আর পুরো বছর তাদের থেকে ভাড়া নেওয়ার কারণে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোন গিফট দেওয়া হলে তা নেওয়া যাবে।
কেউ যদি সন্তান ভাই বা এ জাতীয় কারো থেকে টাকা...
কেউ যদি সন্তান ভাই বা এ জাতীয় কারো থেকে টাকা কর্জ নেয় এবং দেওয়ার সময় নিজ থেকে কিছু অতিরিক্ত দেয় তাহলে সেটা বৈধ হবে কি?
যদি কর্জ দেওয়ার সময় অতিরিক্ত দেওয়ার শর্ত না থাকে এবং ঋণদাতার পক্ষ থেকে কোনো চাহিদা না থাকে এবং শর্ত ছাড়াই অতিরিক্ত দেওয়ার প্রচলনও না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে দেনা পরিশোধের সময় কর্জগ্রহণকারী যদি নিজ থেকে কিছু অতিরিক্ত দেয় তবে তা বৈধ হবে। হাদীস শরীফে এমন ব্যক্তিকে উত্তম পরিশোধকারী বলা হয়েছে। দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৯৩
আরেক হাদীসে এসেছে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম- তিনি তখন মসজিদে ছিলেন- আল্লাহর রাসূল (আমাকে) বললেন, দু’রাকাত নামায পড়ে নাও। অতপর তার কাছে আমার পাওনা ছিল সেটা তিনি পরিশোধ করলেন এবং আমাকে আরো বাড়িয়ে দিলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৯৪
তবে বর্তমান সময়ে যখন মানুষ সুদ ছাড়া ঋণ দিতে চায় না তখন এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা কাম্য। কেননা কোনো কোনো জায়গায় প্রচলন থাকে যে, ঋণ নিলে এ পরিমাণ অতিরিক্ত দিতে হবে বা অমুক সুবিধা দিতে হবে। এটাকে নীতি-নৈতিকতা মনে করা হয়। এমন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দিলে বা অন্য কোনো সুবিধা দিলে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সাহাবী ফাযালা ইবনে উবায়েদ রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, যে ঋণ কোনো মুনাফা নিয়ে আসে তা সুদের প্রকারসমূহের একটি।
-সুনানে বায়হাকী ৫/৩৫০; রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৬; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২২
আমার একটি ঘর লিজ দিয়েছিলাম এভাবে যে, লিজগ্রহীতা আমাকে ১০,০০,০০০...
আমার একটি ঘর লিজ দিয়েছিলাম এভাবে যে, লিজগ্রহীতা আমাকে ১০,০০,০০০ (দশ লক্ষ) টাকা এডভান্স দিবে এবং আমার ঘর সে ব্যবহার করবে। এজন্য আমাকে তার কোনো ভাড়া দিতে হবে না। আলকাউসারের মাধ্যমে জানতে পারলাম, এ পদ্ধতি নাজায়েয। এখন আমার জানার বিষয় হল, ক) এখন আমার কী করণীয়? খ) এ সকল ক্ষেত্রে বৈধ পন্থা কী? কারণ অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন কারণে এ রকম লেনদেনের প্রয়োজন হয়। আশা করি শরয়ী সিদ্ধান্ত জানিয়ে বাধিত করবেন।
এখন আপনাদের উভয়ের কর্তব্য উক্ত চুক্তি বাতিল করে দেওয়া। আর সামনে থেকে ঐ ঘর ব্যবহার করতে চাইলে শরীয়তসম্মতভাবে ভাড়া চুক্তি করতে হবে । ঋণের চুক্তি করা যাবে না। যেমন, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার বাড়িটি যত বছর ভাড়া দিতে হবে একসাথে তত বছরের জন্য বাড়িটি ভাড়া দিয়ে দিবেন এবং তত বছরের ভাড়ার টাকা ভাড়া গ্রহীতা থেকে অগ্রিম নিয়ে নিবেন। যেমন, আপনার বাড়ির মাসিক ভাড়া যদি ২০,০০০/- টাকা হয় তাহলে এক বছরের ভাড়া আসে ২,৪০,০০০/- টাকা। এ হিসেবে যত বছর ভাড়া দিলে আপনার প্রয়োজন পূরণ হবে তত বছরের জন্য বাড়িটি একসাথে ভাড়া দিয়ে দিবেন এবং তত বছরের সমুদয় ভাড়া একত্রে অগ্রিম নিয়ে নিবেন। এক্ষেত্রে ভাড়ার পরিমাণ স্বাভাবিক ভাড়া থেকে প্রয়োজনে কিছুটা কমও নির্ধারণ করা যাবে। আর এটি যেহেতু ভাড়া চুক্তি তাই ভাড়ার মেয়াদ শেষে ভাড়াগ্রহীতা ঐ টাকা আর ফেরত পাবে না। অবশ্য নির্ধারিত সময়ের আগেই যদি উভয়ে ভাড়া চুক্তি বাতিল করে দিতে চার তাহলে অবশিষ্ট মাসের ভাড়ার টাকা ভাড়াগ্রহীতাকে ফেরত দিতে হবে। আর এ লেনদেনে বাড়িওয়ালা সিকিউরিটি মানি বা ঋণের নামে কোনো কিছু নিতে পারবে না।
আমরা কয়েকজন মিলে একটি মেসে ভাড়া থাকি। একদিন আমাদের ঘুম...
আমরা কয়েকজন মিলে একটি মেসে ভাড়া থাকি। একদিন আমাদের ঘুম থেকে উঠতে বিলম্ব হয়। ফলে সকলেরই ফজরের নামায কাযা হয়ে যায়। তখন আমরা ঐ নামায জামাতের সাথে আদায় করি। এখন জানার বিষয় হল, আমাদের জন্য কাযা নামায জামাতের সাথে পড়া কি ঠিক হয়েছে? এবং এক্ষেত্রে কিরাত জোরে পড়তে হবে কি?
জী হাঁ। জামাতের সাথে কাযা পড়া ঠিক হয়েছে। একসাথে একাধিক ব্যক্তির নামায কাযা হয়ে গেলে জামাতের সাথেই কাযা পড়া উচিত। আর কাযা নামায জামাতের সাথে আদায় করলে উচ্চস্বরে কিরাতবিশিষ্ট নামাযে ইমামকে উচ্চস্বরেই কিরাত পড়তে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে নিয়ে সূর্যোদয়ের পর ফজরের কাযা আদায় করেছেন এবং তাতে উচ্চস্বরে কিরাত পড়েছেন। -কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ রহ. হাদীস ১৬৮
উল্লেখ্য যে, কাযা নামাযের জামাত করলে তা নির্জন স্থানে করা উচিত। যেন অন্য লোকজন নামায কাযা হওয়ার বিষয়টি জানতে না পারে।
-ফাতহুল কাদীর ১/১৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৩৩
জনৈক ব্যক্তি দেশের বাইরে থাকে। তিনি দেশের এক ধান ব্যবসায়ীর...
জনৈক ব্যক্তি দেশের বাইরে থাকে। তিনি দেশের এক ধান ব্যবসায়ীর কাছে ব্যবসার উদ্দেশ্যে এক লক্ষ টাকা দিয়ে রেখেছেন। তাদের মাঝে চুক্তি হল, ঐ ব্যবসায়ী তাকে লাভ হিসেবে প্রতি বছর পঁচিশ হাজার টাকা করে দিবে। এখন জানার বিষয় হল, ঐ ব্যবসায়ী তাকে প্রতি বছর যে পঁচিশ হাজার টাকা করে দিবে তা কি জায়েয হবে, নাকি সুদ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি বৈধ হয়নি। কেননা এভাবে নিশ্চিত লাভ দেওয়ার শর্তে কাউকে টাকা দেওয়া সুদী চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। তাই তাদের চুক্তিটি বাতিল করে দেওয়া জরুরি। আর তারা বৈধভাবে চুক্তি করতে চাইলে উভয়ের লভ্যাংশ শতকরা হারে নির্ধারণ করবে। যেমন, ব্যবসাতে যা লাভ হবে এর ৬০% পাবে টাকার মালিক আর ৪০% পাবে ব্যবসায়ী। অথবা উভয়ের সম্মতিতে লাভের অন্য যেকোনো হার নির্ধারণ করবে। ব্যবসায় লাভ হলে চুক্তিকৃত হারে উভয়ে লভ্যাংশ পাবে, লাভ না হলে কেউ কিছু পাবে না। আর ব্যবসায় লোকসান হলে পুঁজি বিনিয়োগকারী তা বহন করবে।
উল্লেখ্য যে, এ ধরনের কারবারে ব্যবসার পুরো হিসাব রাখা আবশ্যক। অনুমান করে লভ্যাংশ প্রদান করা অথবা লাভ-লোকসান যাই হোক নির্ধারিত পরিমাণ মুনাফা দেওয়া কোনোটিই বৈধ নয়।
-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দা ১৩৩
বর্তমানে আমাদের ইচ্ছা না থাকা সত্তে¡ও একরকম বাধ্য হয়েই ব্যাংকের...
বর্তমানে আমাদের ইচ্ছা না থাকা সত্তে¡ও একরকম বাধ্য হয়েই ব্যাংকের সাথে লেনদেন অর্থাৎ টাকা জমা রাখতে হয়। তাই কোন্ ব্যাংকের সাথে লেনদেন করা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ? দলিল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।
বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারার ব্যাংকসমূহে চলতি হিসাব তথা সুদবিহীন হিসাব খুলে লেনদেন করা জায়েয। তবে এসব ব্যাংকে কোনো ধরনের সঞ্চয়ী বা মেয়াদী হিসাব খোলা জায়েয হবে না। প্রাপ্ত সুদ নিজে ভোগ না করলেও এসব সুদী একাউন্ট খোলাই জায়েয নয়। কেননা সুদী ব্যাংকে যে কোনো ধরনের সঞ্চয়ী হিসাব খোলাই মূলত সুদী চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া।
আর এদেশে প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকগুলোতে নিজে মুনাফা গ্রহণ না করার প্রত্যয় নিয়ে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা যাবে। কেননা এসব ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবগুলো মুদারাবা ভিত্তিতে হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে সুদী চুক্তি হয় না। তবে যেহেতু এই ধারার ব্যাংকগুলোর যথাযথভাবে শরীয়া পালনের বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ রয়েছে তাই এ ধরনের হিসাব থেকে প্রাপ্ত মুনাফা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দেওয়াই নিরাপদ।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮, ১৫৯৯; তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৫ (সূরা বাকারা : ২৭৫); তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৬১৯
আমি বীমার মেয়াদ শেষে সুদ পেয়েছি। এই টাকাগুলো আমি কী...
আমি বীমার মেয়াদ শেষে সুদ পেয়েছি। এই টাকাগুলো আমি কী করতে পারি?
ঐ টাকাগুলো সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিব-মিসকীনকে সদকা করে দিতে হবে। আর প্রচলিত বীমায় সুদ, জুয়া উভয়টিই রয়েছে তাই এতে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। এ জন্য আপনাকে তওবা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
-সূরা বাকারা (২) : ২৭৫; সূরা মায়েদা (৫) : ৯০; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২৬৭, ২৭৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৮৬; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, জিদ্দা ২/২/৭৩১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৫
একজন ছাত্র একটি বুক সেলফ কিনেছে। সে এটি অন্য এক...
একজন ছাত্র একটি বুক সেলফ কিনেছে। সে এটি অন্য এক ছাত্রের কাছে এ বলে বিক্রি করেছে যে, সে কিছু টাকা কম নিবে এ শর্তে যে, এই সেলফে খালেদ ও আবু বকর দু’জন ছাত্রকেও বই রাখতে দিতে হবে। ছাত্রটি তার দেওয়া শর্ত মেনে নিয়েই সেটি ক্রয় করেছে।
এখন প্রশ্ন হল, এই শর্তের কারণে তারাও কি উক্ত বুক সেলফ ব্যবহার করতে পারবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অন্যের ব্যবহারের শর্তে সেলফটির বিক্রয় চুক্তি ফাসেদ তথা নাজায়েয হয়েছে। কেননা হাদীস শরীফে শর্তযুক্ত বিক্রিকে নিষেধ করা হয়েছে।
সুতরাং আপনাদের কর্তব্য হল, উক্ত ক্রয় চুক্তিটি বাতিল করে দিয়ে শর্তহীনভাবে আবার ক্রয়-বিক্রয় করা।
-ইলাউস সুনান ১৪/১৪৬; নাসবুর রায়াহ ৪/১৭-১৮; শরহুল মাজাল্লাহ, খালেদ আতাসী ২/৬০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৯০-৯১; ফাতহুল কাদীর ৬/৭৮
প্রচলিত ব্যাংকে ট্রাঞ্জেকশন করা যাবে কি না? আর এসব ব্যাংকে...
প্রচলিত ব্যাংকে ট্রাঞ্জেকশন করা যাবে কি না? আর এসব ব্যাংকে চাকরি করা যাবে কি না, দয়া করে দলিল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।
প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো সুদী অর্থনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। সুদ আদানপ্রদানই এসব ব্যাংকের মূল ও প্রধান কাজ। বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় এসব ব্যাংকই হচ্ছে সুদের প্রচার ও প্রসারের প্রধান মাধ্যম। আর ব্যাংকে কর্তব্যরত ব্যক্তি বিভিন্ন উপায়ে সুদী কারবারের সাথে সরাসরি জড়িত। সুদ দেওয়া-নেওয়া যেমন হারাম তেমনি অন্যের সুদী কারবারে জড়িত হওয়াও হারাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু সুদদাতা ও গ্রহীতাকে লানত করেননি; বরং এর লেখক (অর্থাৎ সুদের হিসাব-কিতাবকারী) ও সাক্ষীগণকেও অভিসম্পাত করেছেন।
হযরত জাবির রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ গ্রহণকারী ও সুদ প্রদানকারী এবং সুদের লেখক ও সাক্ষীদ্বয়ের উপর লানত করেছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৯৮
সুতরাং একজন মুসলমানের জন্য প্রচলিত ধারার ব্যাংকে চাকরি করা এবং এর বেতনাদি ভোগ করা বৈধ নয়।
আর সুদভিত্তিক হওয়ায় এসব ব্যাংকে সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাব বা বিভিন্ন মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব খোলা কিংবা সুদের ভিত্তিতে যে কোনো ধরনের ঋণ গ্রহণ করা হারাম। কেউ এমন হিসাব খুলে ফেললে তা দ্রæত বন্ধ করে দিতে হবে এবং এ থেকে প্রাপ্ত সুদ সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হবে।
অবশ্য প্রয়োজনের ক্ষেত্রে এসব ব্যাংকে চলতি হিসাব খোলা, টিটি, পে-অর্ডার ইত্যাদি সুদবিহীন লেনদেন করা জায়েয।
-তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৫ (সূরা বাকারা : ২৭৫); তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/২১৯
আমাদের কলেজ একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর...
আমাদের কলেজ একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর টাকা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ৫০% এবং চাকরিজীবীদের বেতন থেকে ৫০% ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। উক্ত টাকা চাকরি শেষে চাকরিজীবীদের প্রদান করার বিধান রয়েছে। বর্তমানে কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত ৫০% এর উপর এফ.ডি.আর. করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ টাকাও চাকরির শেষে মূল ও বর্ধিত অংশসহ চাকরিজীবীদেরকে প্রদান করা হবে।
অতএব এ অবস্থায় উক্ত মূল ও বর্ধিত অংশ চাকরির শেষে গ্রহণ করা যাবে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ফান্ডে টাকা জমা রাখা যদি ঐচ্ছিক হয় অর্থাৎ কেউ চাইলে উক্ত ফান্ডের জন্য বেতন থেকে টাকা কেটে রাখতে পারে, আবার চাইলে পুরো বেতন উঠিয়েও নিতে পারে তাহলে এই ফান্ডে টাকা জমা করা জায়েয হবে না। যদি কেউ জমা করে ফেলে তবে টাকা উঠানোর পর মূল জমা অর্থাৎ নিজ বেতনের অংশ নিজে ব্যবহার করতে পারবে। আর এর অতিরিক্ত যা পাবে তা সুদ। সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব-মিসকীনদেরকে তা সদকা করে দিতে হবে।
আর প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা করা যদি ঐচ্ছিক না হয়; বরং এর জন্য প্রত্যেকের বেতন থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলকভাবে টাকা কেটে রেখে দেয় তাহলে ব্যাংকে সুদীভাবে টাকা জমা রাখার দায় সরাসরি চাকরিজীবীদের উপর আসবে না। বরং এর গুনাহ কর্তৃপক্ষের হবে। আর এক্ষেত্রে তারা নিজ বেতনের অংশ ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত টাকা ব্যবহার করতে পারবে। এর অতিরিক্ত টাকা সুদ। তা সদকা করে দিতে হবে।
-মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ২৫১১, ২৫১৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৫-৪৬৯; কেফায়াতুল মুফতী ১১/২৭৫; জাদীদ মাসাইল কে শরয়ী আহকাম ৬৫
গত বছর জুন মাসে এক বাড়িওয়ালার সাথে আমার এক লক্ষ...
গত বছর জুন মাসে এক বাড়িওয়ালার সাথে আমার এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা অগ্রীম ও মাসিক তের হাজার টাকা ভাড়া হিসেবে বাড়ি ভাড়ার কথা হয়। একই সময়ে বাড়িওয়ালা ঠিক সমান মাপ ও মানের একই তলার আরেকটি ফ্ল্যাট আরেক ব্যক্তির কাছে এ চুক্তিতে ভাড়া দেয় যে, অগ্রীম এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে ভাড়া বারো হাজার আর ত্রিশ হাজার টাকা অগ্রীম জামানত দিলে মাসিক ভাড়া তের হাজার টাকা হবে। এই আলোচনার প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে অগ্রীম ত্রিশ হাজার ও মাসিক তের হাজার টাকার ভাড়ার চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু আমি যখন জুলাই মাসে অগ্রীম এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে যাই তখন তিনি সেচ্ছায় স্বপ্রণোদিত হয়ে মাসিক ভাড়া বারো হাজার টাকা করেন। প্রথম দশ মাস অগ্রীম টাকা থেকে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা কাটা যাবে। বাকী ত্রিশ হাজার টাকা জামানত হিসাবে রয়ে যাবে। কিন্তু বাড়িওয়ালা ও অন্যদের সাথে কথা বলে এই কথা প্রায় নিশ্চিত যে, আমার ভাড়া এক হাজার টাকা কম হওয়া অগ্রীম টাকা অন্যজনের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে হয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, মাসিক আলকাউসার ২০১৫ জুন-জুলাই সংখ্যায় ছাপাÑ রিবার প্রচলিত কয়েকটি রূপ শীর্ষক প্রবন্ধের তের নম্বরে বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে সিকিউরিটি বেশি দিলে ভাড়া কমিয়ে দেওয়া শিরোনামের অধীনে যে মাসআলা বলা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে এই একহাজার টাকা কম দেওয়া সুদ বলে গণ্য হবে কি? যদি সুদ হয় তাহলে এখন করণীয় কী?
মাসিক আলকাউসারের উক্ত প্রবন্ধে সিকিউরিটি মানি সম্পর্কে যে মাসআলাটি বলা হয়েছে তা প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কেননা প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক আপনার ভাড়া একহাজার টাকা কমিয়ে দিয়েছে দশ মাসের ভাড়া বাবত ১,২০,০০০/= টাকা অগ্রীম দিয়ে দেওয়ার কারণে। এই ১,২০,০০০/= টাকা সিকিউরিটি মানি নয়; বরং তা এ্যাডভান্স তথা অগ্রীম ভাড়া। আর কিছু ভাড়া অগ্রীম পরিশোধ করে দিলে ভাড়াদাতা যদি মূল ভাড়ার পরিমাণ যুক্তিসঙ্গতভাবে কিছুটা কমিয়ে দেয় তবে তা নাজায়েয নয়। আর সিকিউরিটি মানি ভাড়াদাতার নিকট ঋণ হিসাবে থাকে। তাই এই অর্থের কারণে ভাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলে তা ঋণ দিয়ে ঋণগ্রহীতা থেকে অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত, যা সুদ ও হারাম।
-আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৫/৫৭৩; আলমাবসূত, সারাখসী, ১৪/৩৫; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ ৪৬৮; আলমাআয়ীরুশ শরইয়্যাহ পৃ. ১৪৮
ঢাকা শহরের এক শপিং সেন্টারে দশ বছর যাবৎ আমি একটি...
ঢাকা শহরের এক শপিং সেন্টারে দশ বছর যাবৎ আমি একটি দোকান ভাড়া নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করছি। বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পেরেছি যে, আমার পার্শ্ববর্তী দোকানটি বিক্রি হবে। ফলে আমি বিক্রেতার কাছে গিয়ে দোকানটি কেনার প্রস্তাব দিলাম। কিন্তু তিনি কোনো সায় দিলেন না। পরবর্তীতে তিনি কোনো এক ব্যবসায়ীর কাছে দোকানটি বিক্রি করে দিলেন। আমি কি এই দোকানটি প্রি-এমশনের ভিত্তিতে অগ্রক্রয়ের অধিকার লাভ করব? এ ব্যাপারে শরয়ী সমাধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি প্রি-এমশন তথা অগ্রক্রয়ের অধিকার লাভ করবেন না। কেননা ভাড়াটিয়া অগ্রক্রয়ের অধিকারী হয় না। অগ্রক্রয়ের অধিকারী কেবলমাত্র বিক্রিত সম্পত্তির শরীকগণ কিংবা এর পার্শ্ববর্তী বাড়ি বা ভূমি মালিকগণই হতে পারে।
Ñবাদায়েউস সানায়ে ৪/১১২; মাবসূত, সারাখসী ১৪/৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২১৭
দুই বছর আগে আমরা পাঁচজন সাথী মিলে ছোট্ট একটি সমিতি...
দুই বছর আগে আমরা পাঁচজন সাথী মিলে ছোট্ট একটি সমিতি করেছিলাম। মাসে ৫০০/- টাকা করে জমা করে দুই বছরে মোটামুটি একটি সঞ্চয় হয়েছে। সাথে এককালীন কিছু টাকাও আছে। সমিতি করার সময় আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধু টাকা জমা করা। কোথাও বিনিয়োগ করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু এখন সবাই চাচ্ছে, এক বছরের জন্য এই টাকা দিয়ে ছোটখাটো একটি ব্যবসা করতে এবং সে দায়িত্বটা সবাই মিলে আমাকে দিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, লভ্যাংশ মূলধন হারেই বণ্টিত হবে। আমার জন্য অতিরিক্ত কোনো অংশ নির্ধারণ করা হয়নি। কিন্তু সমস্যা হল, এ টাকা দিয়ে ব্যবসা করার মতো এত সময় এখন আমার হাতে নেই। তাই আমি চাচ্ছি এই টাকা দিয়ে কারো সাথে ১ বছরের জন্য মুদারাবা চুক্তি করতে এবং তাতে আমার জন্য যে লাভ ধার্য করা হবে সেটা সবাই মিলে ভাগ করে নিব।
হুযুরের কাছে জানতে চাই, এভাবে কারবার করা আমার জন্য বৈধ হবে কি না?
প্রশ্নের বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে সদস্যগণ আপনাকে এ টাকা দিয়েছে যেন আপনি নিজে ব্যবসা পরিচালনা করেন। তাই এক্ষেত্রে তাদের অনুমতি ব্যতীত টাকাগুলো অন্যের নিকট মুদারাবা ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। সদস্যগণ বা পরিচালনা কর্তৃপক্ষ যদি অনুমতি দেয় তখন অন্যত্র মুদারাবা বিনিয়োগ করতে পারবেন।
Ñশরহুল মজাল্লাহ ৪/৩০৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২২৬; ফাতহুল কাদীর ৫/৪০৪; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৩০৭-৩০৮; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২০
ট্রেনে ঢাকা যাব। এজন্য টিকেট করার জন্য লাইনে দাঁড়াই। কিন্তু...
ট্রেনে ঢাকা যাব। এজন্য টিকেট করার জন্য লাইনে দাঁড়াই। কিন্তু সিরিয়াল আসার আগেই টিকেট শেষ হয়ে যায়। আর টিকেট ছাড়া কোনো যাত্রীকে ট্রেনে উঠানো হয় না। নেত্রকোণা থেকে ঢাকার ভাড়া ১৫০/- টাকা। কোনো উপায় না দেখে আরো কয়েকজন মিলে ট্রেনের ছাদে উঠে যাই এবং বিনে খরচে ঢাকা পৌঁছি।
এখন আমার প্রশ্ন হল, এভাবে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা আমার জন্য কতটুকু ঠিক হয়েছে? এবং আমার উপর এর ভাড়া আবশ্যক কি না? ভাড়া দিতে হলে কতটুকু দিতে হবে? বিস্তারিত দলিলসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
প্রশ্নোক্ত অবস্থায়ও বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করা বৈধ হয়নি। এছাড়া ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করাও আইনত নিষিদ্ধ। উভয় ক্ষেত্রেই আইন অমান্য করার কারণে গুনাহ হয়েছে। সরকারের ব্যবস্থাগত এ সকল বৈধ আইন জনগণের জন্য মেনে চলা আবশ্যক। এছাড়া ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা খুবই বিপদজনক। নিজেকে এমন বিপদজনক অবস্থার সম্মুখীন করাও জায়েয নয়।
এখন আপনার কর্তব্য হল, উক্ত কাজের জন্য তওবা করা এবং ঐ ট্রেনে নেত্রকোণা থেকে ঢাকার যা ভাড়া সে মূল্যের স্ট্যান্ডিং টিকেট (আসনবিহীন) ক্রয় করে ছিঁড়ে ফেলা। এতে আপনি ভাড়ার দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন। -ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৪৪৫
আমার এক মামা বিদেশ থাকেন। তিনি আমার একাউন্টে তার পরিবারের...
আমার এক মামা বিদেশ থাকেন। তিনি আমার একাউন্টে তার পরিবারের জন্য টাকা পাঠান। মামা ঐ টাকা আমার একাউন্টে আমানত হিসেবে রাখেন। ঐ টাকা আমার একাউন্টে দীর্ঘদিন থেকে যায়। তাই আমি মামার অনুমতি নিয়ে ঐ টাকা দিয়ে ব্যবসা করি। এতে আমার অনেক লাভ হয়েছে। তবে কিছুদিন আগে ব্যবসায় বিপুল পরিমাণ লস হলে মূলধনের অনেক ক্ষতি হয়।
জানার বিষয় হল, মামা যেহেতু আমার কাছে ঐ টাকা আমানত হিসেবে রেখেছে এবং মামার অনুমতি নিয়েই ব্যবসা করেছি তাই এ অবস্থায় মামার টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে কি না?
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার মামার সকল টাকা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। কেননা আপনার মামা ঐ টাকা প্রথমে আমানত হিসেবে রাখলেও পরবর্তীতে যেহেতু তার অনুমতি সাপেক্ষেই আপনি তা ব্যবসায় খরচ করেছেন তাই তা আমানতের টাকা থাকেনি; বরং ঋণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং এখন ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মামার সকল টাকা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৬০; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩১৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৬/৫৬
আমার সরিষার তেলের একটা ফ্যাক্টরী আছে। আমি প্রতিযোগিতায় অন্য সরিষার...
আমার সরিষার তেলের একটা ফ্যাক্টরী আছে। আমি প্রতিযোগিতায় অন্য সরিষার তেলের ফ্যাক্টরীর সাথে পাল্লা দিয়ে পারছি না। কারণ, তারা সরিষার তেলের সাথে পামঅয়েল, সয়াবিন ও রাইজ ব্রান্ড তেল মিক্স করে এবং কম দামে বিক্রি করে। আমার চেয়ে প্রতি টিনে (১৬ কেজি) একশত টাকা কমে বিক্রি করে। (উল্লেখ্য যে, তারা তেলের সাথে তেলই মিক্স করছে; তা অখাদ্য নয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য কোন ক্ষতিকর নয়।) তাই আমার ফ্যাক্টরী বন্ধের দিকে চলে যাচ্ছে। তারপরও চালু রেখেছি । এখন আর চালু রাখতে পারছি না। গত আগস্ট মাসে আমার প্রায় সাতাইশ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে। আমি আশঙ্কা করছি, এই মাসে আমাদের এই ফ্যাক্টরীতে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা লোকসান হবে।
অতএব, মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, আমিও সরিষার তেলের সাথে পামঅয়েল, সোয়াবিন ও রাইজ ব্রান্ড তেল মিক্স করে কমদামে বিক্রি করে বাজারে অন্যদের সাথে টিকে থাকতে পারি কি? অন্যথায় ফ্যাক্টরী টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না । ইসলামী আইনে এর সঠিক সমাধান কী? তা জানতে চাই।
ইসলামে আমানতদারী, সততা ও সত্যবাদীতার গুরুত্ব অনেক বেশী। ব্যবসা-বানিজ্যের ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে এগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এসব গুণাবলীর সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করা অধিক বরকতের কারণ। আর পরকালেও রয়েছে এর বড় পুরস্কার। পক্ষান্তরে ব্যবসায় মিথ্যা, ধোঁকা, খেয়ানত ইত্যাদির আশ্রয় নেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে যেমন নাজায়েয ও হারাম তেমনি দুনিয়াতেও এগুলো তাদের জন্য অনেক অকল্যাণ ও বেবরকতির কারণ।
দ্বিতীয়তঃ শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য ও মূল্য উভয়টি সুনির্ধারিত হওয়া জরুরী। এবং ক্রেতার সাথে যে নাম ও গুণগত মানের পণ্য বিক্রির কথা হবে কিংবা পণ্যের গায়ে বিক্রেতা পণ্যের যে নাম ও গুণগত মান লিখে দিবে ক্রেতাকে পুরোপুরি ঐ মানের পণ্যই দেওয়া জরুরী। এক্ষেত্রে বিক্রেতা যদি বর্ণিত বা ঘোষিত পণ্য না দেয়, অথবা তাতে মিশ্রণ করে কিংবা যা বলেছে তার থেকে নি¤œমানের পণ্য দেয় তবে তা সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ক্রেতাদেরকে সরিষার তেল বলে কিংবা তেলের টিন বা বোতলের গায়ে ‘সরিষার তেল’লিখে বিক্রি করতে চাইলে খাঁটি সরিষার তেলই দিতে হবে। সরিষার তেলের সাথে পামওয়েল বা সয়াবিন ইত্যাদি মিশিয়ে সরিষার তেল হিসাবে তা বিক্রি করা জায়েয হবে না। এই মিশ্রণের কারণে স্বাস্থ্যগতভাবে তা ক্ষতিকর না হলেও এবং মূল্য কিছু কম নিলেও সরিষার তেল বলে তা বিক্রি করা যবে না। কেননা এর দ্বারা অন্য তেল মিশানোর বিষয়টি ক্রেতা থেকে গোপন করা হয়। যা ধোঁকা ও মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত। তাই সরিষার তেলের সাথে পামঅয়েল ইত্যাদি মিশালে ক্রেতাকে বিষয়টি জানিয়ে বিক্রি করতে হবে। ক্রেতাকে জানিয়ে বিক্রি করলে অন্যায় হবে না । কিন্তু অন্য তেল মিশানোর বিষয়টি না জানিয়ে সরিষার তেল বলে বিক্রি করা জায়েয হবে না। এটি ক্রেতার সাথে প্রতারণার অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ও ধমকি এসেছে।
উকবা ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। কোন মুসলমানের জন্য পণ্যে ত্রæটি থাকা সত্তে¡ও তা উল্লেখ না করে আরেকজনের কাছে বিক্রি করা জায়েয নয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২২৪৬) আরেক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ক্রয়-বিক্রয় লেনদেনে উভয় পক্ষ যদি সত্যবাদী হয় এবং (দোষ-ত্রুটি) কোন কিছু গোপন না করে স্পষ্ট সবকিছু বলে দেয় তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয় বরকতপূর্ণ হবে। কিন্তু তারা যদি মিথ্যা বলে এবং (দোষ-ত্রুটি) গোপন করে তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয় থেকে বরকত উঠিয়ে নেওয়া হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২১১০) আরেক হাদীসে আছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, একব্যক্তি খাদ্যপণ্য সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ পণ্যের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন এবং তাতে হাত ঢুকালেন। তিনি দেখতে পেলেন, ভেতরের পণ্য নিম্নমানের। তখন তিনি বললেন, এটা পৃথকভাবে বিক্রি কর আর ওটা পৃথকভাবে বিক্রি কর। কেননা যে আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (মুসনাদে আহমাদ,হাদীস ৫১১৩)
মোটকথা, এখানে পদ্ধতি দু’টি : যদি সরিষার তেল বলেই বিক্রি করতে চান তবে ক্রেতাকে খাঁটি সরিষার তেলই দিতে হবে। এর সাথে অন্য তেল মিশানো যাবে না। আর যদি অন্য তেল মিশিয়ে বিক্রি করতে চান তাহলে বিক্রির সময়েই ক্রেতাকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া জরুরী।
উল্লেখ্য, ব্যবসায় লোকসান থেকে বাঁচার জন্য চিন্তা-ভাবনা করে জায়েয কোনো পন্থা বের করতে হবে। যেমন,ক্রেতাদেরকে আপনারা যদি বুঝাতে পারেন যে আপনাদের পণ্য বাস্তবেই খাঁটি; এর সাথে অন্য তেল মিশানো হয় না, তাহলে ক্রেতাগণ কিছুটা বেশি মূল্য দিয়েও তা ক্রয় করতে আগ্রহী হবে। আর ব্যবসায় লোকসানের অজুহাতে শরীয়ত নিষিদ্ধ কোনো পথ অবলম্বন করার কোন সুযোগ নেই।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৫০১; আল বাহরুর রায়েক ৬/৩৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১০০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৪৭; আল মাজমূ শরহুল মুহাযযাব ১২/১১৫
(ক) গরীব মানুষের জমির ফসলে ওশর/খারাজ ওয়াজিব হবে কি না?(খ)...
(ক) গরীব মানুষের জমির ফসলে ওশর/খারাজ ওয়াজিব হবে কি না?
(খ) বিভিন্ন এলাকায় প্রথা আছে যে, গরুর শরীরে পোকা লাগলে ৭জন সুদখোরের নাম লিখে তাবিজ বেঁধে দিলে পোকা বের হয়ে যায়। ঠিক ঐ রকম আরেকটা প্রথা আছে যে, হাপানি রোগ থেকে নিরাময়ের জন্য গলায় ফাঁসি দিয়ে মারা যাওয়া মানুষের গলার সাথে ফাঁসির দড়ির যে অংশটুকু লাগে সেই দড়ির অংশ দিয়ে তাবিয বানানো হয়। এ ধরনের কাজকর্ম কুফর-শিরক হবে কি না? বা এ রকম কাজ শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু সঠিক আর কতটুকু বেঠিক?
ক) দরিদ্র ব্যক্তির জমিও উশরি বা খারাজি হলে ঐ জমির ফসলের উপর উশর/খারাজ আসবে। উশর এবং খারাজের বিধান উৎপাদিত ফসল ও জমির সাথে সম্পর্কযুক্ত। এক্ষেত্রে জমির মালিক ধনী না গরীব তা লক্ষ্যণীয় নয়। এ কারণেই উশর, খারাজ নাবালেগ এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জমির উপরও ওয়াজিব হয়। কিতাবুল আছল ২/১৩৪;মাবসূত সারাখসী ৩/৪
খ) প্রশ্নোক্ত প্রথাটি সম্পূর্ণ কুসংস্কার ও অলীক ধারণার অন্তর্ভুক্ত। শরীয়তের বৈধ তাবিজ ও তদবীরের সাথে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এ থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রাণীর রোগ-বালাই হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। -মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ১৯/৬৪; শরহুন নববী আলা মুসলিম ১৪/১৮৩; আকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/৩১৭
আগাম বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতার জন্য বিক্রেতা থেকে চুক্তিকৃত পণ্য আদায়...
আগাম বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতার জন্য বিক্রেতা থেকে চুক্তিকৃত পণ্য আদায় করা পর্যন্ত কোনো কিছু বন্ধক রাখা জায়েয হবে কি?
আগাম বিক্রির ক্ষেত্রে বিক্রেতা থেকে কোনো কিছু বন্ধক রাখা জায়েয আছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা., ইবরাহীম নাখায়ী রাহ., শাবী রাহ., প্রমুখ সাহাবা-তাবেয়ী থেকে বর্ণিত আছে, তাঁরা বলেন, আগাম বিক্রিতে বিক্রেতা থেকে বন্ধক নিলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। Ñমুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ১৪০৮৬, ১৪০৮৭, ১৪০৯০; কিতাবুল আসার, হাদীস ৭৪২; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৬/১৯
তবে ক্রেতার জন্য ঐ বন্ধক থেকে কোনোভাবে উপকৃত হওয়া বৈধ হবে না।Ñকিতাবুল আছল ২/৩৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৪৪৯; শরহুল মাজাল্লাহ ৩/২১২; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২
যদি কোনো ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় তাহলে সে চাকরি...
যদি কোনো ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় তাহলে সে চাকরি থেকে যে বেতন পাবে তা তার জন্য হালাল হবে না কি হারাম? কুরআন হাদীস দ্বারা সমাধান দিলে কৃতজ্ঞ হব।
ঘুষ দেওয়া-নেওয়া হারাম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও গ্রহিতাকে অভিসম্পাত করেছেন। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৩৭
তাই ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া জায়েয হবে না। এতে একদিকে ঘুষ প্রদানের কবীরা গুনাহ হয়,অন্যদিকে ঘুষদাতা অযোগ্য হলে অন্য চাকরিপ্রার্থীর হক নষ্ট করারও গুনাহ হয়। তাই এমন কাজ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
অবশ্য কেউ যদি প্রকৃতপক্ষে চাকরির যোগ্য হয় এবং ঘুষ প্রদান হারাম হওয়া সত্তে¡ও ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় আর পরবর্তীতে সে যথাযথভাবে দায়িত্ব আঞ্জাম দেয় তাহলে এভাবে চাকরি নেওয়া নাজায়েয হলেও বেতন হালাল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সে তার কর্মক্ষেত্রের অযোগ্য হয় এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে তার জন্য ঐ চাকরিতে থাকা বৈধ হবে না। আর ঠিকমত দায়িত্ব পালন না করে বেতন নেওয়াও বৈধ হবে না।
আমাদের প্রিন্টিং প্রেসে ক্রেতাদের সাথে এভাবে লেনদেন হয়ে থাকে যে,...
আমাদের প্রিন্টিং প্রেসে ক্রেতাদের সাথে এভাবে লেনদেন হয়ে থাকে যে, যখন তারা কোনো বই-পুস্তক, ড য়েরী, পোস্টার ইত্যাদি ছাপাতে চায় তখন তাদেরকে ভালো কোয়ালিটির কাগজও বাইন্ডিং হিসাবে দাম বলা হয়। যদি তারা ঐ দামের সাথে সন্তুষ্ট না হয় বরং এর চেয়ে অনেক কম দামে দিতে চায় তখন আমরা কম দামে পণ্য বানিয়ে দেই। কিন্তু দাম হিসাবে পণ্যের মান কমিয়ে দেই। অনেক সময় নমুনা দেখিয়ে দরদাম ঠিক করা হয়। যদি তারা ঐ নমুনার ন্যায্য দামের সাথে সন্তুষ্ট না হয় এবং তারা যে দাম বলে ঐ দামে ঐ কোয়ালিটির পণ্য বানিয়ে দেওয়া যদি সম্ভব না হয় তখন আমরা তাদেরকে ঐ দামে ঐ কোয়ালিটির পণ্য বানিয়ে দিতে সম্মত হই। কিন্তু পরে সূ²ভাবে কাগজ ও বাইন্ডিং এর মান কমিয়ে দেই, যা ক্রেতারা বুঝতে পারে না। তবে দাম হিসেবে পণ্যের মান কম হয় না।
উল্লেখ্য যে, এভাবেই প্রিন্টিং প্রেসগুলোতে লেনদেন হয়ে থাকে তাই আমরাও এভাবে করতে বাধ্য হই। অন্যথায় ক্রেতা ধরে রাখা এবং ব্যবসার মান ঠিক রাখা সম্ভব হবে না। প্রায় সময় লস দিতে হবে। জানার বিষয় হল, আমাদের এভাবে কারবার করা সহীহ হচ্ছে কি না?
ক্রেতার সাথে যে মানের কাগজ, ছাপা এবং বাঁধাইয়ের চুক্তি হবে প্রেস কর্তৃপক্ষের জন্য ঐ মানেরই বই, ডায়েরী ইত্যাদি দেওয়া জরুরি। তদ্রূপ কোনো নির্দিষ্ট নমুনার উপর চুক্তি হলে তার চেয়ে নিম্ন মানের পণ্য দেওয়া জায়েয হবে না।
ক্রেতা মূল্য কম দিতে চাইলে তাকে সুস্পষ্ট জানিয়ে দিতে হবে যে, এই মূল্য দিয়ে উক্ত মানের কাগজ বা বই দেওয়া যাবে না।
মোটকথা, ক্রেতাকে চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী পণ্য না দেওয়া এবং ক্রেতাকে বাস্তব কথা না বলে ভালো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিম্ন মানের দেওয়া ধোঁকা ও মিথ্যার শামিল। খরিদ্দার ধরে রাখার স্বার্থেও এমন মিথ্যা বলা জায়েয নেই। এতে ব্যবসার বরকত নষ্ট হয়ে যায়।
অতএব সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখেই ব্যবসা করতে হবে এবং নিজেদের স্বচ্ছতার কথা সুন্দরভাবে উপস্থাপনার মাধ্যমে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সততা ও স্বচ্ছতার মধ্যেই আল্লাহ তাআলা বরকত রেখেছেন। সত্য ও আমানতদার ব্যবসায়ীদের জন্য হাদীসে সুসংবাদ এসেছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (তরজমা) ... যদি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সত্য বলে এবং সবকিছু স্পষ্ট করে (লেনদেন করে) তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি গোপন রেখে (লেনদেন করে) এবং মিথ্যা বলে তাহলে এতে তাদের ব্যবসায় বরকত থাকবে না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২১১৪
আরেক হাদীসে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সত্য ও আমানতদার মুসলিম ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন শহীদদের সাথে থাকবে।
-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২১৩৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৫/২৬৬; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ কুয়াইতিয়্যাহ ১৯/৩২;
আমাদের পড়শী এক বড় ভাই বিদেশ থাকেন। তিনি বলেছেন, আমি...
আমাদের পড়শী এক বড় ভাই বিদেশ থাকেন। তিনি বলেছেন, আমি যদি কোনো ব্যবসা করতে চাই তাহলে তিনি টাকা দিতে প্রস্তুত আছেন। সে মতে আমি তাকে জানালাম, আমি বইয়ের ব্যবসা করতে চাই। তিনি টাকা দিবেন আর আমি শ্রম দিব। কথা হল যে, মুদারাবার ভিত্তিতেই আমাদের ব্যবসা হবে। তাকে লাভের ৩০% দিব।
অতপর আমি বইয়ের ব্যবসার জন্য একটি দোকান ভাড়া নেই এবং আমার সাথে দুজন কর্মচারী নিয়োগ করি। এখন আমার প্রশ্ন হল,
ক) ব্যবসার জন্য দোকান ভাড়া, দুইজন কর্মচারীর বেতন কি ব্যবসার খরচ হিসেবে ধরা যাবে? এবং মুদারাবার মাল থেকে নেওয়া যাবে কি?
খ) ব্যবসার পরিচিতির জন্য কোনো বিজ্ঞাপণ দিতে চাইলে সেটার খরচ কি মুদারাবার মাল থেকে নিতে পারব?
ব্যবসার জন্য দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন এবং ব্যবসার প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রচলন অনুযায়ী বিজ্ঞাপনের ব্যয় ব্যবসার খরচের অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি মুদারাবার মাল থেকে এগুলো খরচ করতে পারবেন। তবে এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারীর সাথে আলোচনা করে নেওয়া উচিত।
-আলইখতিয়ার ২/৪৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৪; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৪৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৪৪৮
আমাদের এলাকায় বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক সংগঠন আছে। যারা সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক...
আমাদের এলাকায় বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক সংগঠন আছে। যারা সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি মানুষকে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করে। তাদের ঋণ দেওয়ার নিয়ম হল, তারা ঋণের পরিমাণ হিসাবে বিভিন্ন ধরনের ফরম বানিয়েছে। ঋণের পরিমাণ বাড়লে ফরমের মূল্যও বাড়ে। কেউ ঋণ নিতে চাইলে ঋণের পরিমাণ হিসেবে ফরম কিনে চুক্তি করতে হয়।
উল্লেখ্য যে, ফরমের মূল্য খরচের চেয়ে অধিক রাখা হয় এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে পুনরায় ফরম কিনে নতুনভাবে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য চুক্তি করতে হয়। এ পদ্ধতিতে ঋণ দেওয়া নেওয়া সহীহ কি না? জানালে উপকৃত হব।
ঋণ প্রদান করে ফরম বিক্রির নামে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও সুদের অন্তর্ভুক্ত। প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে ঋণের পরিমাণ হিসেবে ফরমের দাম বেশি নেওয়া এবং সময় মতো পরিশোধ করতে না পারলে পুনরায় ফরম কিনে নতুনভাবে চুক্তি করার মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া সুদ খাওয়ার একটি অপকৌশল। লোকে যাতে এটিকে সুদ না বলে এজন্যই ফরম বিক্রির উক্ত ছুতা অবলম্বন করা হয়েছে। অতএব হিলা-বাহানা করে সুদ গ্রহণের পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করতে হবে। আর বিগত দিনে এভাবে যাদের থেকে ফরমের খরচ মূল্যের অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে তাদরকে অতিরিক্ত সকল টাকা ফেরত দিতে হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২১০০৭; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ২৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮; ইলাউস সুনান ১৪/৫১৪;; শরহুল মাজাল্লাহ ১/২৬৪-২৬৫
সুদি ব্যাংক থেকে যে বৃত্তি দেওয়া হয় তা নেওয়া কি...
সুদি ব্যাংক থেকে যে বৃত্তি দেওয়া হয় তা নেওয়া কি জায়েয?
সুদি ব্যাংক থেকে প্রদত্ত বৃত্তি নেওয়া জায়েয নয়। কারণ ব্যাংকগুলোর অধিকাংশ আয় সুদ। তাই তাদের বৃত্তির মাঝে সুদের আশঙ্কাই বেশি। অতএব এ টাকা যে নামেই দেওয়া হোক তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
-রদ্দুল মুহতার ২/২৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/১৭৪
আমার ভাতিজাকে এক সিএনজির মালিক বলেছে, তোমাকে আমি একটি সিএনজি...
আমার ভাতিজাকে এক সিএনজির মালিক বলেছে, তোমাকে আমি একটি সিএনজি দিব। দিনপ্রতি তুমি আমাকে ৮০০/- টাকা দিবে। সিএনজির কোনো সমস্যা হলে সেটা আমি দেখব। আর তুমি চাইলে চুক্তিটা এভাবেও করতে পার যে, প্রতিদিন তুমি আমাকে ৬০০/- টাকা দিবে আর ছোটখাটো কোনো সমস্যা হলে সেটা তুমি দেখবে আর বড় কোনো সমস্যা হলে আমি দেখব। তোমার ইচ্ছা দুই চুক্তির যে কোনোটি আমার সাথে করতে পার। প্রশ্ন হল, আমার ভাতিজা সিএনজিটি ভাড়া নিতে চাচ্ছে। এখন কোন চুক্তিটি করা তার জন্য বৈধ হবে?
প্রশ্নোক্ত ভাড়া চুক্তির প্রথমটি শরীয়তসম্মত। তা অবলম্বন করতে পারেন। কেননা এক্ষেত্রে গাড়ির মেরামতের দায়িত্ব মালিকের উপর রাখা হয়েছে। তবে হাঁ, চালকের অবহেলা বা ত্রুটির কারণে গাড়ির কোনো সমস্যা হলে তা চালককেই ঠিক করতে হবে। এ খরচ মালিকের উপর চাপানো যাবে না। আর ভাড়া চুক্তির দ্বিতীয় প্রস্তাবটি শরীয়তসম্মত নয়। কেননা এক্ষেত্রে গাড়ির স্বাভাবিক ও ছোটখাটো সমস্যা ঠিক করার দায়ভার চালকের উপর চাপানো হয়েছে। অথচ চালকের ত্রুটির কারণে ক্ষতি না হলে ছোট বড় সকল মেরামত খরচ মালিকের দায়িত্বে।
-মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৪৯৪; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৫৮৩; কিতাবুল আছল ৪/৪১; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৮/২০-২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৫০
আমি নিজ তহবিল থেকে মুনাফার জন্য বিশ্বস্ত লোকদেরকে ঋণ প্রদান...
আমি নিজ তহবিল থেকে মুনাফার জন্য বিশ্বস্ত লোকদেরকে ঋণ প্রদান করে থাকি। ঋণগ্রহীতাকে নগদ টাকা না দিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে কোনো পণ্য (ধান, চাল, আটা ইত্যাদি পণ্য বস্তা হিসেবে) কিনে মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে নির্দিষ্ট মেয়াদে কিস্তিতে অথবা মেয়াদান্তে সকল টাকা পরিশোধের শর্তে পণ্য প্রদান করে থাকি। উক্ত গ্রহীতার পণ্যের প্রয়োজন না থাকলে তিনি পণ্য পুনরায় বিক্রি করে দিতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, ঋণ গ্রহীতার সাথে চুক্তি হওয়ার পর আমি তাকে নিয়ে বাজারে কোনো পাইকারি দোকানে গিয়ে বর্তমান বাজারদরে ১,০০,০০০/- টাকার চাল ক্রয় করি। অতপর তা ১,২০,০০০/- টাকা মূল্য নির্ধারণ করে ঋণগ্রহীতাকে প্রদান করি। ঋণ গ্রহীতা স্বস্থানে রেখেই পণ্যগুলো বাজারদর (১,০০,০০০/-) থেকে সামান্য কমবেশি (বস্তা প্রতি ১/২ টাকা) করে দোকানির নিকট বিক্রি করে দেন। উল্লেখ্য যে, এ পদ্ধতিতে একই পণ্য তিনবার বিক্রি করা হচ্ছে এবং সর্বাবস্থায় পণ্য স্বস্থানে থাকছে। তবে পণ্য চিহ্নিত করা হয়।
জানার বিষয় হল,উপরোক্ত পদ্ধতিতে বিনিয়োগ প্রদান করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না?
প্রশ্নোক্ত পদ্ধতির লেনদেনের সাথে জড়িত সকলের নিকট একথা স্পষ্ট যে, এখানে তাদের কারোই পণ্য আদান-প্রদান ও ক্রয়বিক্রয় উদ্দেশ্য নয়। এক পক্ষ টাকার বিনিময়ে অতিরিক্ত গ্রহণের জন্য ক্রয়-বিক্রয়ের ছুতা অবলম্বন করেছে। আর অন্য পক্ষ নগদ টাকার জন্য বাধ্য হয়ে তা গ্রহণ করছে। এক্ষেত্রে দুই তিন হাত বদল হলেও পণ্য যার কাছে ছিল তার কাছেই থেকে যাচ্ছে। যা শরীয়ত নিষিদ্ধ বাইয়ে ঈনার অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে লেনদেন করা সম্পূর্ণ নাজায়েয।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য হালাল উপার্জনের অনেক পথ খোলা রেখেছেন। সুতরাং মুসলমানের কর্তব্য হল, হিলা-বাহানা করে শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ পথে না চলে উপার্জনের হালাল পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৪৬২; ইলাউস সুনান ১৪/১৭৮; আননিহায়া ফী গারীবিল হাদীস ৩/৩৩৪
আমাদের এলাকার সাধারণ লোকজন ব্যাপকভাবে সুপারিতে আগাম চুক্তির লেনদেন করে...
আমাদের এলাকার সাধারণ লোকজন ব্যাপকভাবে সুপারিতে আগাম চুক্তির লেনদেন করে থাকে। অর্থাৎ মৌসুমের আগে ক্রেতা বিক্রেতাকে কিছু টাকা দিয়ে বলে যে, ১০ মাস পরে আমাকে এত পরিমাণ সুপারি দিবেন। আর সুপারি সাধারণত সব সমান হয় না। বরং তা ছোটবড় অনেক ধরনের হয়ে থাকে। ছোটবড় হওয়ার কারণে মূল্যের মাঝেও তারতম্য হয়। আর আমি জানি যে, যেসব পণ্য গণনা করে বিক্রি করা হয় তা যদি পরস্পরে ছোটবড় হওয়ার কারণে তার মূল্যেও তারতম্য হয় তাহলে তাতে আগাম বিক্রি সহীহ হয় না। তাহলে সুপারির মধ্যেও কি আগাম বিক্রি সহীহ হবে না?
উল্লেখ্য, সুপারি গণনা করেই বিক্রি করা হয়।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী সুপারি ছোটবড় হওয়ার কারণে যেহেতু তার মূল্যের মধ্যেও তারতম্য হয়ে থাকে তাই এক্ষেত্রে ছোটবড় কোন ধরনের এবং কোন মানের সুপারি দিবে তা চুক্তির সময়ই নির্ধারণ করে নিতে হবে। তাহলে প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি সহীহ হবে। কিন্তু যদি সুপারির মান ও ধরন উল্লেখ করা না হয় তাহলে এ চুক্তি সহীহ হবে না। কারণ আগাম ক্রয় চুক্তিতে পণ্যের গুণগত মান একেবারে স্পষ্ট হওয়া শর্ত। যেন পরবর্তীতে পণ্য আদান-প্রদানের সময় এ নিয়ে কোনো বিবাদের আশঙ্কা না থাকে।
-ফাতহুল কাদীর ৬/২০৮, ৬/২২১; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৫৬, ১৬০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১১; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৩৮৯
আমি এক ব্যক্তি থেকে একটি অফসেট মেশিন ১০ বছরের জন্য...
আমি এক ব্যক্তি থেকে একটি অফসেট মেশিন ১০ বছরের জন্য এই চুক্তিতে ভাড়া নিয়েছি যে, মেশিনটি আমার রিস্কে থাকবে। মেশিন নষ্ট হলে বা মেশিনের কোনো জিনিস পরিবর্তন করতে হলে তার খরচ আমি বহন করব এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা মেশিনের ভাড়া দিব।
আমার আরো একটি অফসেট মেশিনের সাথে ঐ মেশিনটি তৃতীয় ব্যক্তিকে ১০ বছরের জন্য এই চুক্তিতে ভাড়া দিতে চাচ্ছি যে, সে প্রতি মাসে আমাকে ৬০ হাজার টাকা মেশিনের ভাড়া দিবে। কোনো সময় মেশিন নষ্ট হলে ঠিক হওয়া পর্যন্ত ভাড়া মওকুফ থাকবে এবং মেশিন ঠিক করতে হলে বা মেশিনের কোনো জিনিস পরিবর্তন করতে হলে তার খরচ আমাকেই বহন করতে হবে।
তাই জানার বিষয় হল, উপরে উল্লেখিত নিয়মে মেশিন ভাড়া নেওয়া এবং তৃতীয় পক্ষকে ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ভাড়া গ্রহীতার উপর মেশিনের রিস্ক থাকা এবং মেশিন নষ্ট হলে বা মেশিনের কোনো জিনিস পরিবর্তন করতে হলে তা ভাড়া গ্রহীতার খরচে ঠিক করার শর্ত করা শরীয়তসম্মত হয়নি। ভাড়ার ক্ষেত্রে নিয়ম হল, ভাড়াকৃত বস্তুর হেফাযতের দায়িত্ব ভাড়া গ্রহীতার থাকবে। কিন্তু এর রিস্ক এবং এর মেরামত বা যন্ত্রাংশ ক্রয় ও সার্ভিসিং খরচ মালিককেই বহন করতে হবে। হ্যাঁ,ভাড়া গ্রহীতার অবহেলা বা ত্রুটির কারণে কোনো খরচ হলে তা ভাড়া গ্রহীতাকে বহন করতে হবে। এছাড়া কোনো মেরামত খরচ ভাড়া গ্রহীতার উপর চাপানো যাবে না।
তাই এখন আপনাদের কর্তব্য হল, পূর্বের চুক্তি বাতিল করে দিয়ে নতুনভাবে সঠিক নিয়মে চুক্তি করা। শরীয়তসম্মতভাবে চুক্তিটি নবায়ন করে নিলে ঐ মেশিনটির সাথে নিজের মেশিনটি প্রশ্নে বর্ণিত উপায়ে তৃতীয় ব্যক্তির নিকট ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে।
-আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ কুয়াইতিয়্যাহ ২৮/৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৩৯, ৪/৪৪২; আলবাহরুর রায়েক ৮/৩০; শরহুল মাজাল্লাহ ১/৭০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৫৫; কিতাবুল আছল ৩/৪৬৩; শরহুল মাজাল্লাহ ২/২৮৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৫৬
আমি একটি বাড়ির ২টি ফ্লোর ৩ বছর মেয়াদে বন্ধক নিয়ে...
আমি একটি বাড়ির ২টি ফ্লোর ৩ বছর মেয়াদে বন্ধক নিয়ে বাড়ির মালিককে ৪০ লক্ষ টাকা প্রদান করতে চাই। বিনিময়ে ২ ফ্লোরের ভাড়া নিয়ে আমি লাভবান হব। মেয়াদ শেষে আমি সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পাব। এখন আমি জানতে পারলাম যে, উল্লেখিত লেনদেনটি নাজায়েয। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমাদের এই লেনদেনটি সহীহ করার কোনো পদ্ধতি আছে কি? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে লেনদেন করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। কেননা ঋণ দিয়ে বিনিময়ে গ্রহীতা থেকে কোনো প্রকার উপকার গ্রহণ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণের বিপরীতে দুটি ফ্লোর বন্ধক নিয়ে তা থেকে উপকৃত হওয়া আপনার জন্য কোনোক্রমেই জায়েয হবে না।
এক্ষেত্রে বৈধভাবে লেনদেন করতে চাইলে ঋণ ও বন্ধকী চুক্তি না করে শুরু থেকেই ভাড়া চুক্তি করতে পারেন। অর্থাৎ ফ্লোর দুটি আপনি দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ভাড়া নিবেন এবং সমুদয় ভাড়া এককালীন অগ্রিম পরিশোধ করে দিবেন। আর দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ভাড়া নিলে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে কিছুটা কমেও চুক্তি করতে পারবেন। উল্লেখিত চুক্তিতে ফ্লোর দুটির মালিক অগ্রিম যে টাকা গ্রহণ করবে তা যেহেতু ভাড়া হিসেবে নিবে তাই ঐ টাকা সে নিজ কাজে লাগাতে পারবে। আর আপনিও অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় ফ্লোর দুটিতে বসবাস করতে পারবেন কিংবা ফ্লোর দুটিতে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ (যেমন টাইলস ফিটিংস, ডেকোরেশন ইত্যাদি) করে তা অন্যের নিকট অধিক টাকায় ভাড়া দিতে পারবেন।
অবশ্য পরবর্তীতে কখনো ভাড়া চুক্তি বাতিল হলে ভাড়াদাতার জন্য হিসাব করে অবশিষ্ট মাসসমূহের অগ্রিম ভাড়া ভাড়াগ্রহীতাকে ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যক হবে।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৫০৭১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৩/১৪৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৩৭৬০; কিতাবুল আছল ৩/৪৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৭/২০৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৮; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/১০৯
এক ব্যক্তি আমার থেকে তিন বছরের জন্য ২ লক্ষ টাকা...
এক ব্যক্তি আমার থেকে তিন বছরের জন্য ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছে। তার থেকে বন্ধক হিসেবে আমি একটি জমি নিয়েছি। হুজুরের কাছে জানতে চাই, ঐ জমি আমার কাছে বন্ধক থাকা অবস্থায় ভাড়া চুক্তির ভিত্তিতে ব্যবহার করতে পারব কি না? জানালে উপকৃত হব।
ঋণ দিয়ে বিনিময়ে গ্রহীতা থেকে কোনো ধরনের উপকৃত হওয়া জায়েয নেই। তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বন্ধকি জমি থেকে আপনার জন্য কোনো প্রকার উপকৃত হওয়া জায়েয হবে না। তবে বন্ধকী চুক্তি বাতিল করে ন্যায্য মূল্যে তা ভাড়া নিতে পারবেন। ঋণের কারণে ভাড়া কম করা যাবে না। তদ্রƒপ ঋণের সাথে ভাড়া চুক্তিকে সম্পৃক্তও করা যাবে না। বরং ভাড়া চুক্তিটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও ঋণের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস : ২১০৭৮ ১৩/৬৪৮; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ২৯৬;বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮;ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৫৯৬;ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৭৪;রদ্দুল মুহতার ৬/৫২৩;আলফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ৫/৬৯;মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৩৭৮৩; ফাতহুল কাদীর ৬/৮০-৮১
আমি জালালাইন জামাতের ছাত্র। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে কিতাব...
আমি জালালাইন জামাতের ছাত্র। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে কিতাব সংগ্রহ করে থাকি। অনেক সময় লাইব্রেরিওয়ালারা নতুন কোনো কিতাব প্রকাশ করার আগে (বিশেষ করে বড় কিতাব হলে) আমাদের বলে, তোমরা যদি এখন অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখ তাহলে স্বাভাবিক ক্রয়মূল্য থেকে দশ পার্সেন্ট ছাড়ে পাবে। অর্থাৎ যে কিতাব তারা স্বাভাবিকভাবে ২,০০০/- টাকায় বিক্রি করবে অগ্রিম টাকা দিলে সেটা আমরা ১,৮০০/- টাকায় পাব। কখনো আরো অধিক ছাড়ও দেয়। জানার বিষয় হল, এভাবে আমাদের চুক্তি ও কিতাব সংগ্রহ করা কি বৈধ হবে?
লাইব্রেরিওয়ালাদের থেকে ঐভাবে অগ্রিম টাকা দিয়ে কিতাব নেওয়া বৈধ। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চুক্তির সময় ক্রয়কৃত কিতাবের ছাপা, বাঁধাই, কাগজের মান ইত্যাদি বিষয় স্পষ্ট করে নিতে হবে। যাতে ক্রয়কৃত কিতাবের ব্যাপারে অস্পষ্টতা না থাকে এবং পরবর্তীতে ঝগড়া বা মনোমালিন্য হওয়ার আশঙ্কা না থাকে।
-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ : ২৮৯; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৩৮৯-৩৯০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৪৪; ইতরে হেদায়া ২০৬
আমার একটি কাপড়ের দোকান আছে। আমার সহযোগী হিসেবে দোকানে একজন...
আমার একটি কাপড়ের দোকান আছে। আমার সহযোগী হিসেবে দোকানে একজন কর্মচারী রেখেছি। তার সাথে আমার এভাবে চুক্তি হয়েছে যে, দোকানের মাল কেনা এবং ক্যাশে বসা আমার দায়িত্বে থাকবে। অবশিষ্ট কাজ, মাল বিক্রি করা, সময়মতো দোকান খোলা-বন্ধ করা ইত্যাদি তোমার দায়িত্ব এবং প্রতি মাসে মুনাফার ৫% তোমাকে দেওয়া হবে। প্রশ্ন হল, ঐ কর্মচারীর সাথে এভাবে চুক্তি করা সহীহ হয়েছে কি না? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী কর্মচারীর সাথে ঐভাবে চুক্তি করা সহীহ হয়নি। কেননা সে আপনার ব্যবসার অংশিদার নয়; বরং শ্রমদাতা। আর শ্রমদাতার সাথে চুক্তির সময়ই পারিশ্রমিকের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নেওয়া জরুরি। তাই এ লক্ষ্য মূল বেতন হিসেবে একটি ন্যূনতম পরিমাণ পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে নিবে এরপর চাইলে অতিরিক্ত হিসেবে তাকে মুনাফার নির্ধারিত অংশও দিতে পারবে। কেননা এক্ষেত্রে মূল পারিশ্রমিক আর অনির্দিষ্ট থাকে না।
-মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়া ৮৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৭
আমি ব্যবসা করতে চাচ্ছি। ব্যবসার জন্য ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন।...
আমি ব্যবসা করতে চাচ্ছি। ব্যবসার জন্য ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। বর্তমানে আমার কাছে ৬ লক্ষ টাকা আছে। বাকি ৪ লক্ষ টাকা আমার এক বন্ধু থেকে এই চুক্তিতে নিতে চাচ্ছি যে, সে ১০ বছর ব্যবসায় অংশীদার থাকবে। প্রতি মাসে মুনাফার ৩০% তাকে দেওয়া হবে। ১০ বছর পর তার টাকা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। হুযুরের কাছে জানতে চাই- এভাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাকে ব্যবসায় শরিক করে তার থেকে টাকা নেওয়া জায়েয হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।
হাঁ, নির্ধারিত মেয়াদের জন্যও অংশিদার নেওয়া জায়েয। অতএব আপনাদের প্রশ্নোক্ত চুক্তি করা সহীহ হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৫৯; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩০২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭৩-৭৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২২৬; রদ্দুল মুহতার ৪/৩১২
আমি একজন পিকআপ চালক। গাড়ির এক মালিক থেকে আমি একটি...
আমি একজন পিকআপ চালক। গাড়ির এক মালিক থেকে আমি একটি পিকআপ এ চুক্তিতে নিয়েছি যে, গাড়ির প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে বাকি আয়ের ত্রিশ শতাংশ আমি নেব। অবশিষ্ট সত্তর শতাংশ মালিক পাবে। আমাদের এ চুক্তি কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।
না, আপনাদের উক্ত চুক্তি শরীয়তসম্মত হয়নি। কারণ গাড়ির আয় চালক এবং মালিকের মাঝে শতকরা হারে বণ্টনের চুক্তি সহীহ নয়। এক্ষেত্রে সহীহভাবে চুক্তি করতে চাইলে হয়ত চালকের বেতন নির্দিষ্ট করে দিতে হবে এবং গাড়ির সকল আয় মালিকের থাকবে। অথবা চালক গাড়িটি মালিক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিবে। গাড়ি থেকে আয় হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় ভাড়ার টাকা মালিককে দিয়ে দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে গাড়ির যা আয় হবে তা সবই চালকের থাকবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১১
আমার ছেলের অপারেশনের জন্য চার লক্ষ টাকা প্রয়োজন। তাই আমি...
আমার ছেলের অপারেশনের জন্য চার লক্ষ টাকা প্রয়োজন। তাই আমি এক ব্যক্তির নিকট চার লক্ষ টাকার পরিবর্তে আমার একটি জমি বিক্রি করেছি। সে পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করেছে। তার সাথে কথা হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি টাকা পরিশোধ করলে তাকে জমির রেজিস্ট্রি দিয়ে দিব। সে এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা দেয়নি। এদিকে একদিন পর আমার ছেলের অপারেশনের তারিখ। তাকে বাকি টাকা পরিশোধ করতে বললে সে বলে, জমির প্রকৃত মূল্য তিন লক্ষ টাকা। চার লক্ষ টাকা দিয়ে আমি জমি নিব না। ইচ্ছা হলে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে জমি বিক্রি করতে পারেন। তখন আমি আরেকজনের নিকট নগদ চার লক্ষ টাকায় জমিটি বিক্রি করে জমির রেজিস্ট্রি দিয়ে দিয়েছি। প্রথম ক্রেতাকে তার টাকা দেওয়ার জন্য গেলে সে আমার সাথে অত্যন্তরাগারাগি করে। তার কথা, আমাকে না জানিয়ে অন্যের কাছে কেন জমি বিক্রি করেছেন? আমার কাছে বিক্রি করার পর অন্য কারো কাছে বিক্রি করা ঠিক হয়নি ইত্যাদি।
তাই হুযুরের কাছে জানতে চাই, উক্ত অবস্থায় অন্য ব্যক্তির নিকট জমি বিক্রি করা কি সহীহ হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী জমিটির প্রথম ক্রেতা যেহেতু চার লক্ষ টাকা দিয়ে জমি নিবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে এবং তিন লক্ষ টাকা হলে নিবে বলেছে তাই এর দ্বারাই ঐ ব্যক্তির সাথে পূর্বোক্ত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে। সুতরাং এরপর ঐ জমি অন্যত্র বিক্রি করা আপনার জন্য জায়েয হয়েছে। এ পর্যায়ে পূর্বের ক্রেতার জন্য আপনার সাথে রাগারাগি করা বা খারাপ আচরণ করা একেবারেই অন্যায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে সে শুধু তার দেওয়া টাকাগুলিই ফেরত পাবে। এর অতিরিক্ত কোনো কিছু দাবি করা তার জন্য জায়েয হবে না। আর আপনার দায়িত্ব হল, অবিলম্বে লোকটির টাকা ফেরত দেওয়া।
-হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৬/৪১৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/১৯৭; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়াহ ৩/২১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৪৪৪; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৪৫১
বিদেশে অনেকে ব্যাংক থেকে লোন নেয়। নেওয়ার সময় ব্যাংক কিছু...
বিদেশে অনেকে ব্যাংক থেকে লোন নেয়। নেওয়ার সময় ব্যাংক কিছু টাকা কেটে রাখে ইন্সুরেন্স বাবদ। যাতে লোন গ্রহীতা মারা গেলে বা কোনো কারণে দেশে চলে গেলে লোনের টাকা ইন্সুরেন্স পরিশোধ করবে।
জানার বিষয় হল, ইন্সুরেন্স যেহেতু লোন গ্রহীতার অনুপস্থিতিতে লোনের টাকা পরিশোধ করার শর্তে ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় এবং ব্যাংক ইন্সুরেন্স বাবদ একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা লোন গ্রহীতার নিকট থেকে প্রথমেই কেটে রাখে তাই লোন গ্রহীতা লোনের টাকা পরিশোধ না করে যদি দেশে চলে যায় আর চুক্তি অনুযায়ী ইন্সুরেন্স তা পরিশোধ করে তবে কি লোন গ্রহীতা এই ঋণ থেকে দায়মুক্ত হয়ে যাবে? নাকি আখিরাতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হক নষ্টের কারণে জবাবদিহি করতে হবে?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ব্যাংকের লোনের উপর ইন্সুরেন্স করা থাকলেও এবং লোন গ্রহীতা টাকা না দিলে ইন্সুরেন্স কোম্পানি তা পরিশোধ করে দিবে- এমন ব্যবস্থা থাকলেও লোন গ্রহীতার জন্য কোনো অবস্থায়ই লোনের টাকা ফেরত না দেওয়া জায়েয হবে না। সর্বাবস্থায় লোনের টাকা ফেরত দেওয়া তার জন্য জরুরি। এ টাকা ফেরত না দিলে অন্যের হক আত্মসাৎ করার গুনাহ হবে। প্রকাশ থাকে যে, সুদি লোন যেমন হারাম তেমনি ইন্সুরেন্সও হারাম। এতে সুদ ও জুয়া দুটিই রয়েছে। কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে সুদ ও জুয়ার বিষয়ে কঠোর ধমকি এসেছে। আর সুদের মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক কিছু সাময়িক ফায়েদা দেখা গেলেও এতে রয়েছে চরম বেবরকতি ও খোদায়ী অভিশাপ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদকা বৃদ্ধি করেন। (সূরা : বাকারা : ২৭৬)
তাই অনতিবিলম্বে সকল সুদি কারবার নিষ্পত্তি করা এবং এ থেকে খালেস দিলে তাওবা করা জরুরি।
-জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০০৪৬
আমি যশোরে থাকি। ঢাকার এক লাইব্রেরি থেকে ৩০,০০০/- টাকার কিতাব...
আমি যশোরে থাকি। ঢাকার এক লাইব্রেরি থেকে ৩০,০০০/- টাকার কিতাব ক্রয়ের ইচ্ছা করি। সেমতে তার সাথে এ মর্মে চুক্তি হয় যে, আমি তার ঠিকানায় টাকা পাঠাব আর তিনি কোনো ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে কিতাব পাঠাবেন। এরপর চুক্তি অনুযায়ী আমি লাইব্রেরি মালিকের ঠিকানায় ৩০,০০০/- টাকা পাঠাই। আর তিনিও তাদের নিয়ম অনুযায়ী কিতাবগুলো কার্টুনে ভরে তাদের পরিচিত ভ্যানের মাধ্যমে ট্রান্সপোর্টের জন্য পাঠায়। কিন্তু ঘটনাক্রমে ভ্যান থেকে সবগুলো কিতাব ছিনতাই হয়ে গিয়েছে। তাই জানার বিষয় হল, এ ক্ষতির দায় কার উপর বর্তাবে? লাইব্রেরি মালিক কি এই ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন? উল্লেখ্য, অন্য সময়ও এ রকম পরিচিত ভ্যানের মাধ্যমে মালামাল ট্রান্সপোর্টে পাঠানো হত।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ক্রেতা তার কিতাবাদি যেহেতু ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে পাঠানোর জন্য বলেছে এবং বিক্রেতাও তাতে সম্মত হয়েছে তাই ট্রান্সপোর্টে জমা হওয়ার আগ পর্যন্ত তা বিক্রেতার জামানত ও দখলে থাকবে। অবশ্য ট্রান্সপোর্টে জমা দিয়ে রশিদ গ্রহণ করলে বিক্রেতা এর জামানত ও দখল থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় কিতাবগুলো যেহেতু ট্রান্সপোর্টে জমা হওয়ার আগেই ভ্যান থেকে ছিনতাই হয়ে গেছে তাই এটি লাইব্রেরি মালিকের মাল নষ্ট হয়েছে বলেই ধরা হবে। অতএব লাইব্রেরি মালিককে ক্রেতার নির্দিষ্ট মাল পুনরায় পাঠাতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, ক্রেতার কথামতো ট্রান্সপোর্ট বা কুরিয়ার সার্ভিস ইত্যাদি পার্সেল প্রেরণ/বহনকারী কোনো প্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়ার পর কোনো মাল হারালে কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে বিক্রেতা দায়ী হবে না। এক্ষেত্রে মালের দায়-দায়িত্ব ক্রেতার উপরই বর্তাবে। অবশ্য ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ত্রম্নটির কারণে মাল ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর ক্ষতিপূরণ তাদের জিম্মায় থাকবে।
আমরা বিশজন মিলে একটা সংগঠন করেছি। উদ্দেশ্য হল, সবাই সমানভাবে...
আমরা বিশজন মিলে একটা সংগঠন করেছি। উদ্দেশ্য হল, সবাই সমানভাবে টাকা জমা করে তা নিয়ে শিরকতের পদ্ধতিতে ব্যবসা করবো এবং লাভ সবার মধ্যে সমানভাবে বণ্টন হবে। আর উক্ত টাকা দিয়ে ব্যবসা করার দায়িত্ব আমি বহন করেছি। এজন্য আমি কোনো বেতনও নিই না। গত বছর এক লোককে তিনমাস পর চাল দিবে এই চুক্তিতে পনের হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে দিই। পরে ঐ লোক থেকে চাউল বা টাকা কোনোটা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এখন সংগঠনের বাকি সদস্যরা আমার কাছে এই টাকা দাবি করছে।
জানার বিষয় হল, উক্ত টাকা সম্পর্কে শরীয়তে বিধান কী? এই টাকার দায় কি শুধু আমার উপরই আসবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি সংগঠনের শর্ত অনুযায়ী যথাযথ যাচাইয়ের পর ঐ ব্যক্তির সাথে লেনদেন করে থাকেন তবে ঐ ব্যক্তি থেকে টাকা উসূল করা না গেলে তার জরিমানা আপনার উপর আসবে না। বরং তার ক্ষতি সকল সদস্যকেই মূলধন অনুপাতে বহন করতে হবে। কিন্তু যদি যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই দিয়ে থাকেন এবং এ ব্যাপারে আপনার অবহেলা বা ত্রুটি প্রমাণিত হয় তবে এর ক্ষতিপূরণ আপনাকে বহন করতে হবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩১৯; আল বাহরুর রায়েক ৫/১৮০; রদ্দুল মুহতার ৪/৩০৫; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ পৃ. ২৫৯, ২৬৩
ছেলে মেয়েরা যতদিন পিতার সাথে একই সংসারে থাকে ততদিন ছেলেদের...
ছেলে মেয়েরা যতদিন পিতার সাথে একই সংসারে থাকে ততদিন ছেলেদের আয়ের মালিক পিতা হবে কি না? হাওয়ালাসহ জানাবেন।
ছেলে পিতার সংসারে থাকা অবস্থায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলে পিতার সহযোগী হিসেবে কাজকর্ম করলে এবং ছেলের প্রাপ্য সম্পর্কে পূর্ব থেকে কোনো কথা না হলে প্রতিষ্ঠানের সকল আয়-উপার্জনের মালিক পিতাই হবেন। ছেলে এ থেকে কোনো কিছুর মালিক হবে না। তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে ছেলের জন্য কোনো লভ্যাংশ বা পারিশ্রমিক দেওয়ার চুক্তি থাকলে সে এর মালিক গণ্য হবে।
আর ছেলের কর্মস্থল বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি সম্পূর্ণ পৃথক হয় তাহলে তার উপার্জনের মালিক সে নিজেই হবে। এক্ষেত্রে ছেলে পিতার সংসারে একত্রে থাকার কারণে পিতা ছেলের উপার্জনের মালিক হয়ে যাবে না।
অবশ্য এ অবস্থায় ছেলে সংসার খরচের জন্য বা এমনিতেই যে পরিমাণ অর্থ পিতাকে দিয়ে দিবে পিতা তার মালিক হবে।
-রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৫; মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়াহ, মাদ্দাহ : ১৩৯৮; ফাতাওয়া খায়রিয়া ২/৯২; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/৩২০
একটি ব্যবসার ১ম ব্যক্তি মূলধন বিনিয়োগকারী এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি তার...
একটি ব্যবসার ১ম ব্যক্তি মূলধন বিনিয়োগকারী এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করবেন। দুজনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসার মালিকানা, লাভ-লোকসান বণ্টন ৫৫% (২য় ব্যক্তি) ও ৪৫% (১ম ব্যক্তি) নির্ধারিত হয়। এই ব্যবসা থেকে ২য় ব্যক্তি কোনো বেতন অথবা অন্য কোনো বাড়তি সুবিধা (যেমন, যাতায়াত খরচ ইত্যাদি) নিতে পারবেন কি না? যথাযথ দলিলপ্রমাণসহ জানালে বিশেষ উপকৃত হব।
প্রশ্নোক্ত ব্যবসায়িক চুক্তিটিকে ফিকহে ইসলামীর পরিভাষায় ‘মুদারাবা’ চুক্তি বলে। এতে মূলধন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসা পরিচালনাকারীর জন্য শতকরা হারে লভ্যাংশ বণ্টনের চুক্তি করতে হয়। কারো জন্য নির্দিষ্ট বেতনভাতা বা নির্দিষ্ট কোনো কিছুর চুক্তি করা জায়েয নেই। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনাকারী কেবল নির্ধারিত পরিমাণ লভ্যাংশই গ্রহণ করতে পারবে। তার জন্য ভিন্নভাবে কোনো বেতনভাতার চুক্তি করা যাবে না। অবশ্য ব্যবসার স্বার্থে যে খরচ হবে যেমন, পণ্য ক্রয়বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যাতায়াত ভাড়া, থাকা-খাওয়ার বাস্তব খরচাদি গ্রহণ করতে পারবে এবং এ ধরনের খরচ পরিশোধের পরই ব্যবসার লাভ-লোকসানের হিসাব হবে। উলেস্নখ্য যে, ব্যবসা পরিচালনাকারীর নিকট পূর্ব নির্ধারিত লভ্যাংশ যদি কম মনে হয় তাহলে উভয় পক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে ভবিষ্যতের জন্য লভ্যাংশের হার পরিবর্তন করা যাবে।-
কিতাবুল আছল ৪/২৯১; মাজাল্লা মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী ১৩/৩/২৯৪; আলমাআইরুশ শরইয়াহ ২৪০, ২৪২, ২৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯
গত ছয় মাস আগে আমি এক ব্যক্তিকে তার চিকিৎসার জন্য...
গত ছয় মাস আগে আমি এক ব্যক্তিকে তার চিকিৎসার জন্য দুই লক্ষ টাকা ঋণ দেই। তিন মাস পর টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সে এখন টাকা পরিশোধে গড়িমসি করছে। বারবার তাগাদা দেওয়ার পর সে আমাকে বলে, ভাইজান! আমার তো চাকরি শেষ, তাই একটা ব্যবসা করার ইচ্ছা করছি। আপনার টাকাটা আমাকে মূলধন হিসাবে দেন, অর্ধেক লাভ আপনাকে দিব।
আমি জানতে চাচ্ছি যে, তার প্রস্তাবমত ব্যবসা করা জায়েয হবে কি?
ঋণ উসূল না করে ঐ টাকা দ্বারা তার সাথে ব্যবসা করা জায়েয হবে না। তার সাথে ঐ টাকা দ্বারা ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমে তা উসূল করতে হবে এরপর তা ব্যবসার জন্য দেওয়া যাবে।
-আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৪; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/৩৩০; আলমাআঈরুশ শরইয়্যাহ ২৪০, ২৪৯
এক ব্যক্তি আমার থেকে দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে এবং...
এক ব্যক্তি আমার থেকে দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে এবং তার মোটর সাইকেলটি আমার কাছে বন্ধক রেখেছে। ঋণ আদায়ের আগ পর্যন্ত আমি তার সাইকেলটি অন্যদের নিকট ভাড়া দিয়েছি। এতে আমার কিছু টাকা আয় হয়েছে। পরববর্তীতে সে ঋণ আদায় করে দিলে আমি তার সাইকেলটি ফেরত দিয়ে দেই। আমার প্রশ্ন হল সাইকেল দ্বারা অর্জিত টাকা আমার জন্য ভোগ করা জায়েয হবে কি? না হলে এ টাকা কী করব? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
ঋণদাতার জন্য বন্ধকি বস্ত্ত থেকে উপৃকত হওয়া নাজায়েয। তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই মোটর সাইকেলটি থেকে অর্জিত ভাড়া আপনার জন্য ভোগ করা জায়েয হবে না। আপনি যদি ঋণ গ্রহিতার অনুমতিক্রমে সাইকেলটি ভাড়া দিয়ে থাকেন তাহলে তা দ্বারা উপার্জিত সকল অর্থ মালিকের প্রাপ্য। এগুলো তাকে ফেরত দিতে হবে। আর যদি তার অনুমতি ছাড়া ভাড়া দিয়ে থাকেন তাহলে এ থেকে উপার্জিত সকল অর্থ আপনাকে সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মোটর সাইকেলের মালিকও তা ভোগ করতে পারবে না।
-রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৫৯৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৫৬২-৫৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/৮৯
এক লোকের ঘরে অনেক ধান আছে। সে চার মাস পর...
এক লোকের ঘরে অনেক ধান আছে। সে চার মাস পর ধানের দাম বাড়লে তা বিক্রি করবে। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তি এসে তাকে বলল, এই ধান আমার কাছে বিক্রি করে দাও। চার মাস পর ধানের যে বাজার মূল্য হবে সে হিসেবে তোমার ধানের মূল্য পরিশোধ করে দিব।
জানার বিষয় হল, এভাবে ক্রয়-বিক্রয় করা শরীয়তে বৈধ কি না?
না, এভাবে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয নয়। কেননা ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তির সময়ই পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে নেওয়া জরুরি। তাই কারবারটি জায়েযভাবে করতে চাইলে ধান দেওয়ার আগেই চুক্তির সময় মূল্য নির্ধারণ করে নিতে হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৫৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৬৭; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ২৩৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৫২৯
আমি একটি ফ্যাক্টরিতে চাকুরি করি। আমার দায়িত্ব হল ফ্যাক্টরির যাবতীয়...
আমি একটি ফ্যাক্টরিতে চাকুরি করি। আমার দায়িত্ব হল ফ্যাক্টরির যাবতীয় কাঁচামাল বাজার থেকে ক্রয় করে আনা। জনৈক ব্যবসায়ী আমার সাথে এই মর্মে চুক্তি করতে চাচ্ছে যে, আমি যদি তার থেকে ফ্যাক্টরির সকল কাঁচামাল ক্রয় করি তাহলে সে আমাকে শতকরা হারে কিছু কমিশন দিবে। জানতে চাই, আমার এ কমিশন গ্রহণ করা জায়েয হবে কি না? এ টাকা কি নিজের কাছে রেখে দিতে পরব? না মালিককে ফেরত দিতে হবে। জানালে উপকৃত হব।
আপনার জন্য উক্ত কমিশন ভোগ করা জায়েয হবে না। কেননা আপনি ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে ক্রয় প্রতিনিধি। বিক্রেতা এক্ষেত্রে যদি কোনো মূল্যছাড় বা কমিশন দেয় তবে তা ফ্যাক্টরি মালিকেরই প্রাপ্য। সেখান থেকে আপনার জন্য কিছুই নেওয়া জায়েয হবে না। এছাড়া বিক্রেতা যদি স্বয়ং আপনাকে দিতে চায় তবুও তা আপনার জন্য নেওয়া জায়েয হবে না। কেননা আপনি কোম্পানির পক্ষ থেকে এ কাজের জন্য মাসিক বেতন পাচ্ছেন। সুতরাং এ বাবদ দোকানদার থেকে কোনো কমিশন নেওয়া ঘুষের অন্তর্ভুক্ত হবে।
-সুনানে আবু দাউদ ৪/২১০; কিতাবুল আছল ১১/২৮৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫১৬; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৫৫; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৪৭৮
কয়েক বছর আগে আমি আইপিও এর মাধ্যমে ‘সামিট পাওয়ার’-এর কিছু...
কয়েক বছর আগে আমি আইপিও এর মাধ্যমে ‘সামিট পাওয়ার’-এর কিছু শেয়ার ক্রয় করেছিলাম। এ শেয়ার আমি এখনও বিক্রি করিনি। সামিট পাওয়ার প্রতিবছরই বোনাস শেয়ার, রাইট শেয়ার প্রভৃতি প্রদান করে থাকে। বর্তমানে আমার শেয়ার সংখ্যা আইপিও শেয়ার থেকে পাঁচগুণ বেশি। এ পদ্ধতিতে শেয়ার বৃদ্ধি করা কি জায়েয হবে।
উল্লেখ্য, আমি সেকেন্ডারি মার্কেটে ক্রয়-বিক্রয় করি না।
প্রশ্নোক্ত কোম্পানী মৌলিকভাবে জ্বালানী খাতের হলেও অন্যান্য অধিকাংশ কোম্পানির মতো তাদের মূলধনের বড় অংশও সুদের ভিত্তিতে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা। কোম্পানিটির ব্যালেন্স শীট ও বার্ষিক প্রতিবেদন দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
তাই উক্ত কোম্পানির শেয়ার কেনার অর্থ হচ্ছে এর সুদী লেনদেনে স্বীকৃতি প্রদান করা এবং শেয়ারের আনুপাতিক হারে নিজেকে সুদের সাথে জড়িত করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ গ্রহিতার পাশাপাশি সুদদাতার উপরও লানত করেছেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫৯৭
সুতরাং সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন না করলেও আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়ের দ্বারা যেহেতু সুদের সাথে জড়িত হয়ে যাচ্ছেন তাই আইপিও-এর মাধ্যমেও এ কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করা জায়েয হয়নি।
এখন এই অবৈধতা থেকে বাঁচার জন্য করণীয় হচ্ছে উক্ত শেয়ারগুলো বিক্রি করে দিয়ে বিনিয়োগকৃত মূল টাকার অতিরিক্ত সদকা করে দেওয়া।
-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সপ্তম সংখ্যা, ১/৭১২; সিদ্ধান্ত নং ৬৫/১/৭; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/১৭২; আছরে হাযের কে পেচিদা মাসাইল কা শরঈ হল ২৬৬
আমি একটি সুদী ব্যাংকে ১৫ বছর কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি।...
আমি একটি সুদী ব্যাংকে ১৫ বছর কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি। এ সময় ব্যাংক থেকে পাওয়া বেতন দিয়ে জমি, বাড়ি-গাড়ি করেছি। এখন আমি সুদী কারবারে জড়িত থাকার কারণে অনুতপ্ত হয়ে ভিন্ন চাকুরীতে যোগদান করেছি। কিন্তু আগের চাকুরীর বেতন দিয়ে আমি যে সম্পত্তির মালিক হয়েছি তা কি আমার জন্য বৈধ হবে? বৈধ না হলে আমি এখন কী করতে পারি? অনুগ্রহ করে জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে যা উপার্জন করেছেন তা হারাম। এ টাকা দিয়ে খরিদকৃত জমি ও বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করা ও তা দ্বারা উপকৃত হওয়া নাজায়েয। এখন আপনি যদি এগুলো থেকে বৈধভাবে উপকৃত হতে চান তবে যে পরিমাণ টাকা দ্বারা জমি কিনেছেন ও বাড়ি-গাড়ি করেছেন সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সে পরিমাণ টাকা গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিলে আপনি এ সম্পদের মালিক হয়ে যাবেন। তখন এগুলো থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয হবে। ক্রয়মূল্য সদকা করার আগ পর্যন্ত ঐ সম্পদ হালাল হবে না এবং এর থেকে কোনো প্রকার উপকৃত হওয়াও আপনার জন্য বৈধ হবে না।
তাই ক্রয়মূল্য সদকা করার পূর্বে বাড়িভাড়া বা জমি থেকে যা আয় হবে তাও সদকা করে দিতে হবে। আর পিছনের জীবনে হারাম উপার্জন ও তার ভোগব্যবহারের কারণে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা-ইস্তিগফারও করতে হবে।
-তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৬১৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ৬/১৫০; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৮/২৫৮
আমার নিজের মালিকানাধীন ৬ তলা বাড়ির ২য় তলার পুরো ফ্লোর...
আমার নিজের মালিকানাধীন ৬ তলা বাড়ির ২য় তলার পুরো ফ্লোর আমার কোম্পানির অফিস। ঐ ফ্লোরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধার্থে নামাযের জন্য একটি কামরা আলাদা রাখি। এতে যোহর, আসর ও মাগরিব এ তিন ওয়াক্ত নামায পড়া হয়। ঐ কামরায় অন্য কোনো কাজ করা হয় না।
আমার জানার বিষয় হল, ক) ঐ কামরা কি নামায পড়ার দরুণ মসজিদ হয়ে যাবে?
খ) আমাদের অফিস অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হলে ঐ ফ্লোর কি লিভিং রুম হিসেবে ব্যবহার করতে পারব? বা ভাড়া দিতে পারব? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো স্থান মসজিদ হওয়ার জন্য তা স্থায়ীভাবে নামাযের জন্য ওয়াকফ করে দেওয়া জরুরি। অস্থায়ীভাবে কোনো স্থানে নামায আদায়ের দ্বারা তা মসজিদ হয়ে যায় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কামরার ফ্লোরটিকে আপনি যেহেতু অস্থায়ীভাবে নামায আদায়ের জন্য নির্ধারণ করেছেন তাই তা মসজিদ হয়নি। পরবর্তীতে চাইলে ঐ ফ্লোরে নিজেরা থাকতে পারবেন এবং ভাড়াও দিতে পারবেন।
-শরহুল মুনইয়াহ ৬১৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০৪
কুরবানীর সময় গরুর হাটে গরু পছন্দ করে দামাদামি শুরু করতেই...
কুরবানীর সময় গরুর হাটে গরু পছন্দ করে দামাদামি শুরু করতেই কিছু লোক এসে উপস্থিত হয়। তারা ঐ গরুর মূল্য বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে শুরু করে। সেই গরু ক্রয় করতে চাইলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের চেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়। খোঁজখবর নিলে জানা যায় যে, ব্যবসায়ীদের সাথে তাদের যোগসাজশ থাকে। যারা মূলত ক্রেতা নয়। কিন্তু ক্রেতা সাজে শুধু দাম বাড়ানোর জন্য। শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের এ কাজের হুকুম কি?
ক্রয়ের নিয়ত ছাড়া শুধু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দামাদামি করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। প্রকৃত ক্রেতাগণ এ কারণে প্রতারিত হয়।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘নাজাশ’ থেকে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ২১৪২)
নাজাশ হল ক্রয় করার ইচ্ছা ছাড়া শুধু অন্যকে প্ররোচিত করার জন্য দামাদামি করা এবং পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বলা।
আবদুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রা. এমন ব্যক্তিকে সুদখোর ও খেয়ানতকারী বলে আখ্যা দিয়েছেন। (সহীহ বুখারী ১/২৮৭)
আর এ ব্যাপারে বিক্রেতার সম্মতি থাকলে সেও গুনাহগার হবে। বিক্রেতা তাকে কোনো কিছু দিলে তা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত ও নাজায়েয হবে।
-সহীহ মুসলিম ২/৩; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৩২৭; হেদায়া ৩/৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১০১; ফাতহুল কাদীর ৬/১০৬; আলবাহরুর রায়েক ৬/৯৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৪০৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৪০৩
আমাদের জানামতে ব্যাংকে সাধারণত সুদী লেনদেন হয়ে থাকে। এখন যারা...
আমাদের জানামতে ব্যাংকে সাধারণত সুদী লেনদেন হয়ে থাকে। এখন যারা ব্যাংকে চাকুরি করে তাদের বেতনের টাকা হালাল কি না? আর তারা কিছু হাদিয়া দিলে তা ব্যবহার করা যাবে কি না?
সুদী ব্যাংক বা শরীয়তের বিধিনিষেধ মেনে লেনদেন করে না-এমন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা নাজায়েয। এ থেকে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা হালাল নয়। এবং এর পেছনে শ্রম ব্যয় করাও জায়েয নয়। হাদীস শরীফে সুদখোর, সুদদাতা, সুদের হিসাব-কিতাবকারী ও সাক্ষ্যদাতা সকলের উপর অভিশম্পাত এসেছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত ব্যক্তির কর্তব্য হল, বৈধ কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা করা এবং দ্রুত ঐ চাকুরি ছেড়ে দেওয়া। আর তাদের চাকুরির টাকা যেহেতু হালাল নয় তাই এ থেকে কাউকে কোনো কিছু হাদিয়া দিলে জেনেশুনে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। অবশ্য তাদের কোনো বৈধ উপার্জন থেকে হাদিয়া দিলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫৯৮; তাকমিলা ফাতহিল মুলহিম ১/৬১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৩
আমি আমার ভাগিনার জন্য আমার পরিচিত এক দোকানে একটি র্যাকেট...
আমি আমার ভাগিনার জন্য আমার পরিচিত এক দোকানে একটি র্যাকেট কিনতে গেলাম। দাম জানতে চাইলে দোকানদার বলল, দাম কি এখন দিয়ে দেবেন? আমি বললাম, দু মাস পরে দেব। তখন সে বলল, এখন দাম পরিশোধ করলে ২৫০ টাকা আর দুই মাস পরে দিলে ২৬০ টাকা। এভাবে সময়ের কারণে বেশি মূল্যে বিক্রি করা জায়েয হবে কি?
নগদ বিক্রির তুলনায় বাকি বিক্রিতে মূল্য কিছু বেশি নেওয়া জায়েয আছে। তবে এ ক্ষেত্রে বৈধভাবে লেনদেন করতে চাইলে বিক্রি চুক্তির সময় পণ্যের মূল্য নগদ বা বাকি তা নির্ধারণ করতে হবে। বাকি হলে তা পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করে নিবে। ঐ সময়ের ভেতর মূল্য পরিশোধ না করলে পূর্ব মূল্যের চেয়ে বেশি নেওয়া যাবে না এবং শর্তও করা যাবে না। অন্যথায় তা সুদী কারবার হয়ে যাবে।
-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১২৩৯; ইলাউস সুনান ১৪/১৮০; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআছিরা ১/১২-১৫; আলমাবসূত, সারাখসী ১৩/৭-৮
কয়েকদিন আগে আমি এক এলাকায় বাসা ভাড়া নেই। মহল্লার মসজিদের...
কয়েকদিন আগে আমি এক এলাকায় বাসা ভাড়া নেই। মহল্লার মসজিদের ইমাম সাহেব না থাকলে মাঝেমধ্যে এক ব্যক্তি নামায পড়ান, যার দাঁড়ি একেবারে ছোট করে ছাঁটা। বিষয়টি আমাকে কষ্ট দেয়। স্থানীয় দু’ একজনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তারা ততটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু তার পিছনে নামায পড়তে আমার ভক্তি হয় না। এ অবস্থায় আমি কি একাকী নামায পড়ব? অনুগ্রহ করে জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
দাঁড়ি অন্তত এক মুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা রাখা ওয়াজিব। এক মুষ্ঠির চেয়ে ছোট করে রাখা গুনাহ। এ ব্যাপারে চারও মাযহাব একমত। একাধিক হাদীসে দাড়ি লম্বা রাখার নির্দেশ এসেছে। তাই যে ব্যক্তি এক মুষ্ঠির চেয়ে ছোট করে দাড়ি রাখে সে ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। এমন ব্যক্তির পিছনে ইকতিদা করা মাকরূহ। এ ধরনের ক্ষেত্রে কাছাকাছি কোনো মসজিদে পরহেযগার ইমাম থাকলে সেখানে গিয়ে নামায পড়তে পারেন। কাছাকাছি কোনো মসজিদ না থাকলে এই মসজিদে হলেও জামাতের সাথে নামায পড়া কর্তব্য। কেননা একাকী নামায পড়ার চেয়ে এমন ব্যক্তির পিছনে হলেও জামাতে নামায পড়া উচিত।
প্রকাশ থাকে যে, পরহেযগার মুত্তাকী আলেমের পিছনে নামায পড়তে হাদীসে উৎসাহিত করা হয়েছে।
তাই ইমামের অবর্তমানেও মুত্তাকী, পরহেযগার ব্যক্তির ইমামতি করা উচিত।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৫০; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৫৯, ১৬০
আমাদের এলাকার এক কৃষক থেকে ৪০০/- টাকা দরে ১০ মণ...
আমাদের এলাকার এক কৃষক থেকে ৪০০/- টাকা দরে ১০ মণ ইরি ধান ক্রয় করেছি। চুক্তিটি এভাবে হয়েছে যে, আমি তাকে নগদ ৪,০০০/- টাকা দিয়েছি। তিনি ছয় মাস পর পর পাঁচ মণ করে ধান দিবেন। এক বছরে সম্পূর্ণ ধান পরিশোধ করবেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম কিস্তিতে তিনি পাঁচ মণ ধান দিয়েছেন। দ্বিতীয় কিস্তি দেওয়ার সময় তিন মণ ধান দিতে চাচ্ছেন এবং বলছেন যে, ক্ষেতের ধান কম হয়েছে। তাই তিন মণ দিবেন। আর দুই মণ ধানের বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে মূল্য দিয়ে দিবেন। এখন আমার জন্য ঐ দুই মণ ধানের মূল্য নেওয়া জায়েয হবে কি?
না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য ঐ দুই মণ ধানের পরিবর্তে তার মূল্য নেওয়া জায়েয হবে না। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অগ্রিম পণ্য ক্রয় করবে সে যেন ঐ পণ্য ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ না করে।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৪৬২
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ কৃষক থেকে ধানের পরিবর্তে মূল্য নেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে ঐ কৃষক বাজার থেকে ধান কিনেও দিতে পারবেন। আর যদি আপনি টাকাই নিতে চান তবে দুই মণ ধান বাবদ প্রদত্ত মূল ৮০০/- টাকাই নিতে পারবেন। এর অতিরিক্ত নেওয়া জায়েয হবে না।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৪৬২; ইলাউস সুনান ৪/৪৩৪; ফাতহুল কাদীর ৬/২৩০; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৬; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৩৫৭
কিছুদিন আগে আমার পিতা মারা যান। মিরাস সূত্রে একটি ট্রাক...
কিছুদিন আগে আমার পিতা মারা যান। মিরাস সূত্রে একটি ট্রাক আমার মালিকানায় আসে। আমি এক ব্যক্তির সাথে এই মর্মে চুক্তি করেছি যে, এই ট্রাক তুমি চালাবে। যা আয় হবে তার অর্ধেক তুমি পাবে, আর অর্ধেক আমি। প্রশ্ন হল, আমাদের এই চুক্তি সহীহ হয়েছে কি? যদি সহীহ না হয় তাহলে এর সহীহ পন্থা কী হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ট্রাকের আয় উভয়ে ভাগ করে নেওয়ার চুক্তি সহীহ হয়নি। এক্ষেত্রে ২টি নিয়মে সহীহভাবে চুক্তি করা যায়। আপনারা এর যে কোনোটি গ্রহণ করতে পারেন। যথা-১. নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে আপনি চালকের নিকট ট্রাকটি ভাড়া দিয়ে দিবেন। এক্ষেত্রে নির্ধারিত ভাড়াই আপনার প্রাপ্য হবে। আর গাড়ির যাবতীয় আয় পাবে ভাড়া গ্রহিতা চালক। ২. আপনি চালককে নির্ধারিত পরিমাণ পারিশ্রমিক দিবেন। আর ট্রাক থেকে উপার্জিত সকল আয়ের মালিক আপনি হবেন। চালক শুধু তার নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক পাবে।
-কিতাবুল আছল ৪/১৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৮১; আলমাবসূত, সারাখসী ২২/২৩৫
আমাদের এলাকার অধিকাংশ লোক কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।...
আমাদের এলাকার অধিকাংশ লোক কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতি মৌসুমে তারা তরমুজ চাষ করে। তা ছোট অবস্থায় পুরো ক্ষেত ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেয়। পরে তরমুজ বড় হলে ব্যবসায়ীরা তা উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করে। আমার প্রশ্ন হল, এভাবে ফল বিক্রি করা বৈধ হবে কি? বিক্রয়ের পর এ তরমুজ বিক্রেতার জমিতে রাখা জায়েয হবে কি না? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
তরমুজ ছোট থাকা অবস্থায় ক্ষেত বিক্রি করে দেওয়া জায়েয আছে। তবে বিক্রয়ের সময় তরমুজ বড় হওয়া পর্যন্ত জমিতে থাকবে এমন শর্ত করা যাবে না। শর্ত ছাড়া ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর বিক্রেতার সম্মতিতে মৌসুমের শেষ পর্যন্ত রাখা যাবে।
-আদ্দুররুল মুখতার ৪/৫৫৪-৫৫৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/৩০০; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৮৩
ক) আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি মসজিদের পাশে এক খন্ড জমি...
ক) আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি মসজিদের পাশে এক খন্ড জমি ক্রয় করে মাদরাসার নামে ওয়াকফ করে দেয়। কিন্তু মাদরাসা এখনো প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। ভবিষ্যতে মাদরাসা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এলাকার কিছু লোক ঐ জমিতে কলা, পেপে ইত্যাদি চাষাবাদ করে থাকে এবং তা বিক্রি করে মসজিদের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করে।
এখন জানার বিষয় হল-
ক. এভাবে মাদরাসার সম্পদ মসজিদের জন্য ব্যয় করা জায়েয হবে কি না? যদি না হয় তবে পূর্বে ব্যয়কৃত অর্থের হুকুম কী?
খ) মসজিদের মাল মসজিদের ভিতরে বিক্রি করার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
ক) মাদরাসার জন্য ওয়াকফকৃত জমির আয়ের মালিক মাদরাসা। মাদরাসা প্রতিষ্ঠা না হলেও মাদরাসার জন্যই এ জমির আয় রেখে দেওয়া জরুরি। তাই অন্য কেউ মাদরাসার জমিতে চাষাবাদের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে-এক. মাদরাসা কর্তৃপক্ষ/মুতাওয়াল্লির অনুমতি নেওয়া।
দুই. ঐ জমি ব্যবহারের জন্য মাদরাসা ফান্ডে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা। এ টাকা কোনো আমানতদার ব্যক্তির নিকট জমা রাখতে হবে, যা ভবিষ্যতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সেখানে ব্যয় হবে। আর মসজিদ কর্তৃপক্ষের উপর কর্তব্য হল, এতদিন ধরে ঐ জমি চাষাবাদ করার কারণে এর ন্যায্য ভাড়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নিকট বুঝিয়ে দেওয়া।-রদ্দুল মুহতার ৪/৩৬০; কিতাবুল ওয়াকফ, পৃষ্ঠা : ২০৩
খ) মসজিদের মালামালও মসজিদের ভেতরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা জায়েয নেই। মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘর। ইবাদত-বন্দেগীর স্থান। ক্রয়বিক্রয়ের জায়গা মসজিদ নয়। তাই মসজিদের মালামালও বেচাকেনার প্রয়োজন হলে মসজিদের বাইরে তা সম্পন্ন করতে হবে।
হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মসজিদ আল্লাহর যিকর, নামায ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত স্থান। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৮৫)
অপর একটি বর্ণনায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ক্রয়বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১০৭৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৯
আমরা তিন ভাই একটি ঘরের সমহারে মালিক। বড় ভাই তার...
আমরা তিন ভাই একটি ঘরের সমহারে মালিক। বড় ভাই তার অংশ বিক্রয়ের প্রস্তাব করলে ছোট ভাই খরিদ করতে রাজি হয়। উভয়ে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, উক্ত ঘরের মূল্য নির্ণয় করার জন্য তাদের দুজনের পছন্দমতো দ্বীনদার লোকের সমন্বয়ে পাঁচ জনের একটি কমিটি গঠিত হবে। তারা যে মূল্য নির্ধারণ করবে উভয় পক্ষ তা মেনে নিবে বলে ওয়াদাবদ্ধ হয়। কমিটি যখন মূল্য নির্ধারণ করে তখন ক্রেতা ছোট ভাই ওয়াদা মোতাবেক তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। কিন্তু বড় ভাই ঘরের মূল্য কম হচ্ছে মনে করে কমিটির নিকট পুনরায় আরো সাত লক্ষ টাকা বেশি দাবি করেন। কমিটি মাসলাহাত মনে করে তা আমলে নিয়ে আরো পাঁচ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে দেন। তখন বড় ভাই (বিক্রেতা) বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। তখন কমিটি সকলের উপস্থিতিতে লেনদেন ও রেজিস্ট্রির সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, রেজিস্ট্রির সময় তিনি বলেন আমি উক্ত মূল্যে বিক্রি করব না। আমার বিক্রি শুদ্ধ হয়নি। আমার শরীয়া মোতাবেক ফিরে যাওয়ার এখতিয়ার আছে। আমার প্রশ্ন হল, আমাদের এই ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হয়েছে কি না এবং বিক্রেতার ফিরে যাওয়ার এখতিয়ার আছে কি না। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সালিশের পক্ষ থেকে মূল্য নির্ধারণের পর বড় ভাই কেবল আলহামদুলিল্লাহ বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এরপর লেনদেন ও রেজিস্ট্রির জন্য সামনে একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বক্তব্য দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সালিশের মধ্যে বড় ভাইয়ের অংশের কেবল মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি এবং লেনদেন কিছুই হয়নি। বরং সামনের ঐ তারিখে ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেন সম্পন্ন করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর বড় ভাই সালিশের ঐ সিদ্ধান্ত যেহেতু মেনে নিয়েছেন এবং আলহামদুলিল্লাহ বলে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন সেহেতু পরবর্তীতে তার জন্য উক্ত মূল্যে বিক্রি করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করা ঠিক হয়নি। এতে ওয়াদা ভঙ্গ করা এবং সালিশের সিদ্ধান্ত অমান্য করার গুনাহ হয়েছে। তাই বড় ভাইয়ের উচিত হবে, সালিশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক উক্ত মূল্যেই ছোট ভাইয়ের নিকট তা বিক্রি করে দেওয়া।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩১৮
আমি এবং রফিক মুদারাবা চুক্তিতে পাটের ব্যবসা শুরু করি। শ্রম...
আমি এবং রফিক মুদারাবা চুক্তিতে পাটের ব্যবসা শুরু করি। শ্রম আমার আর মূলধন রফিকের। আমরা মুকসুদপুর বাজারে একটি দোকান ও গুদাম ভাড়া নিয়েছি। পাটের সিজনে পাট ক্রয়ের জন্য অনেক সময় আমাকে নিকটে ও দূরে যেতে হয়। আমার নিজের মোটরসাইকেল আছে। আমি তাতে যাতায়াত করি। যাওয়া-আসার পথে মোটরসাইকেলে যে তেল খরচ হয় আমি তা মুদারাবা সম্পদ থেকে নিতে পারব কি? অনুরূপভাবে দোকানের সাইনবোর্ড স্থাপন এবং মাল গাড়িতে উঠানো ও নামানোর লেবার খরচ মুদারাবার সম্পদ থেকে নিতে পারব কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
পাট ক্রয়ের জন্য কোথাও গেলে বা ব্যবসার কোনো কাজে কোথাও যাতায়াতের কারণে বাস্তবে মোটর সাইকেলে যে পরিমাণ তেল খরচ হয় তা ব্যবসার সম্পদ থেকে নিতে পারবেন। খরচের অতিরিক্ত তেল নেওয়া যাবে না। আর বিনিয়োগকারী অনুমতি দিলে দোকানের সাইনবোর্ড স্থাপন করা এবং এর খরচও ব্যবসার মাল থেকে নিতে পারবেন। এ বাবদ যতটুকু অনুমতি দিবে তার বেশি খরচ করা যাবে না। আর গাড়িতে ব্যবসার মাল উঠানো ও নামানোর জন্য যে খরচ হবে তাও মুদারাবার সম্পদ থেকে নিতে পারবেন।
-আলমাবসূত, সারাখসী ২২/৬৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৪৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৫৭, ৫/৬৪৯; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৩৫৩; শরহুল মুহাযযাব ১৫/১৬৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/১৬৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৯৬
আমি মাদরাসায় পড়ি। আববা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন মাদরাসায় যাওয়ার ভাড়া,...
আমি মাদরাসায় পড়ি। আববা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন মাদরাসায় যাওয়ার ভাড়া, নাশতা বাবদ বিভিন্ন সময় টাকা দিয়ে থাকেন। ঐ টাকা থেকে যৎসামান্য বাঁচিয়ে বই কেনা, কাগজ-কলম ইত্যাদি কাজে খরচ করি। তারা যেহেতু ভাড়া, নাশতার জন্য দিচ্ছেন তাই এ সকল কাজে খরচ করা জায়েয হবে কি?
হ্যাঁ, ঐ টাকা থেকে বাঁচিয়ে বইপত্র, কাগজ-কলম ইত্যাদি কিনতে পারবেন। কেননা ঐ টাকা আপনাকে খরচের জন্যই দেওয়া হয়েছে। তাই এর মালিক আপনিই। সুতরাং যে কোনো প্রয়োজনে তা খরচ করতে পারবেন।
আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৬৯; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৫
পুরান ঢাকার কিছু এলাকায় বিগত ৩-৪ বছর আগে একটি মর্টগেজ...
পুরান ঢাকার কিছু এলাকায় বিগত ৩-৪ বছর আগে একটি মর্টগেজ ভাড়াটিয়া ব্যবস্থা চালু হয়েছে এবং ক্রমেই তা দ্রুত বিস্তার ঘটছে। মূলত বাড়িওয়ালাদের অর্থের প্রয়োজন মেটাতেই এই মর্টগেজ ভাড়াটিয়া ব্যবস্থাটি চালু হয়েছে। যার বিবরণ এই যে, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকদের তিন বা পাঁচ লক্ষ টাকা একত্রে প্রদান করে মর্টগেজ ভাড়াটিয়া বাড়ি বা ফ্ল্যাটে উঠে। ব্যবহৃত গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির বিলই তারা কেবল পরিশোধ করে। মাসিক কোনো ভাড়া তাদের দিতে হয় না। একসঙ্গে নগদ তিন-পাঁচ লক্ষ টাকা প্রদানের কারণেই বিনা ভাড়ায় বসবাসের এমন ব্যবস্থা। রীতিমতো দলিল-দস্তাবেজ করেই পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হয়। তিন বা পাঁচ বছর মেয়াদে সাধারণত চুক্তি হয়ে থাকে। চুক্তির সময়সীমা অতিক্রমের পর বাড়িওয়ালাকে শুরুতে দেওয়া তিন বা পাঁচ লক্ষ টাকা মর্টগেজ ভাড়াটিয়াকে একত্রে ফেরত দিতে হয়। অর্থাৎ চুক্তির মেয়াদকাল পর্যন্ত মর্টগেজ ভাড়াটিয়া বিনা ভাড়ায় থাকবে। কেবল গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধ করবে। চুক্তির মেয়াদ শেষে লগ্নির পুরো টাকা একত্রে ফেরত নেবে। কোনো কারণে বাড়িওয়ালা অর্থ ফেরত দিতে অক্ষম হলে তাদের মধ্যে পুনরায় নতুন করে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে আগের নিয়মেই ফ্ল্যাট বা বাড়িতে বিনা ভাড়ায় বসবাস করতে পারবে।
ব্যবস্থাটি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
মর্টগেজ ভাড়ার এ লেনদেন সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটি সুদী লেনদেন। এককালীন ফেরতযোগ্য কিছু টাকা দিয়ে বিনিময়ে বন্ধকী বাড়ি বা ফ্ল্যাটে বসবাস করাটা মূলত ঋণের বিনিময়ে সুবিধা ভোগ করা, যা হারাম। তাই মর্টগেজ ভাড়ার এ পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগযোগ্য। বাসা-বাড়ি ভাড়ার স্বাভাবিক প্রচলিত বৈধ তরিকাটাই অনুসরণযোগ্য। বেশি টাকার প্রয়োজন হলে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য এককালীন অগ্রিম ভাড়া দিয়ে দিবে। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে কমও নির্ধারণ করতে পারবে। আর মেয়াদ শেষে ভাড়ার টাকা ফেরত দিতে হবে না।
-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৫০৭১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; শরহুল মাজাল্লাহ ৩/১৯৬
আমার বড় ভাই আমাকে মুদারাবার ভিত্তিতে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছেন...
আমার বড় ভাই আমাকে মুদারাবার ভিত্তিতে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছেন এবং লভ্যাংশের ৪০% তাকে দিতে বলেছেন। আমি সে টাকা দিয়ে একটি দোকান ভাড়া নেই এবং তাতে মুদি ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে দোকানে একজন কর্মচারী প্রয়োজন। তাই প্রশ্ন হল, উক্ত দোকানের জন্য কি কর্মচারী রাখা যাবে? নাকি সব কাজ আমাকেই করতে হবে? আর কর্মচারী রাখা হলে তার খরচ কে বহন করবে? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।
মুদারাবা ব্যবসায় কর্মচারীর প্রয়োজন হলে ব্যবসার খরচ থেকে কর্মচারী নেওয়া যাবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও দোকানের জন্য কর্মচারীর প্রয়োজন হলে আপনি ব্যবসার খরচ থেকে কর্মচারী রাখতে পারবেন। তবে বিষয়টি বড় ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে নিতে হবে।
-আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৪৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৯
আমি বিগত ২০০৯ সালে ই-লিংকস নামক একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং...
আমি বিগত ২০০৯ সালে ই-লিংকস নামক একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানিতে জয়েন করি এবং ৩ বছর কাজ করি। তাতে আমার কাছে ২ লক্ষ টাকার মতো সঞ্চয় হয়েছে। প্রশ্ন হল, এই টাকা আমার জন্য হালাল হবে নাকি হারাম?
কোম্পানির প্রোডাক্ট : বায়ো এনার্জেটিক ব্রেসলেট। প্রজেক্ট সিস্টেম : কোম্পানি থেকে কেউ বেনিফিটেড হতে চাইলে তাকে প্রথমে একটা প্রোডাক্ট ক্রয় করতে হবে। প্রডাক্ট ক্রয় করলে সে কোম্পানির একজন মেম্বার হয়ে যাবে। মেম্বার হওয়ার জন্য আলাদা কোনো চার্জ দিতে হয় না বা টাকা দিয়ে মেম্বার হওয়া যায় না। বরং প্রোডাক্ট ক্রয়ের মাধ্যমেই মেম্বার হতে হয়। মেম্বার হওয়ার পর যদি একটি প্রোডাক্ট সেল করাতে পারি তাহলে সাথে সাথে এসপি (ডাইরেক্ট সেল) বাবদ ৩৫০/- টাকা দেওয়া হয়। মনে করি, আমি একটি প্রোডাক্ট সেল করার কারণে ডিরেক্ট সেল বাবদ আমাকে ৩৫০/- টাকা দিয়ে দিল কোনো শর্ত ছাড়া। আবার আরেকটি সেল করার দ্বারা আবার কোনো শর্ত ছাড়া আমাকে ৩৫০/- টাকা দিয়ে দিত। এবং আমার বাম ও ডানে জোড়া মিলার কারণে আরো ৫০০/- টাকা দিয়ে দিত।
এখন আমার নিচে যদি সেল হয় তাহলে যে স্পন্সর করবে সে সেলের জন্য ৩৫০/- টাকা পেয়ে যাবে। এবং আমার ডান-বামে জোড়া মিলে যাওয়ার কারণে আমি কমিশন পেয়ে যাব। মোটকথা হল আমি ঐ কোম্পানিতে ৩ বছর ছিলাম। তাতে যা উপার্জন করেছি তার ৯৫ ভাগ আমি সবার মাঝে খরচ করেছি (যা সবাই করে না।) এখন ৬ মাস আগে আমি তা ছেড়ে দিয়েছি। আমার কাছে আনুমানিক ২ লক্ষ টাকা লাভ আছে। আমার জন্য এ টাকা হালাল হবে নাকি হারাম? কেননা এই টাকাটা একটা ব্যবসায় লাগিয়েছি, যা থেকে প্রত্যেক মাসে কিছু লাভ আসে।
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং শরীয়ত পরিপন্থী একটি কারবার। এতে শরীয়ত নিষিদ্ধ আলগারার, উজরত বিলা-আমল ও আকলুল মাল বিলবাতিল ইত্যাদি বড় বড় খারাবি বিদ্যমান রয়েছে। একই কারণে ই-লিংকস কোম্পানির প্রশ্নে বর্ণিত কারবারও বৈধ নয়। সুতরাং এই কোম্পানির মার্কেটিং পদ্ধতিতে জড়িত হয়ে মূলধনের অতিরিক্ত যত টাকা অর্জন করেছেন তা হালাল নয়। তাই তা সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু মূলধনই নেওয়া জায়েয হবে।
প্রকাশ থাকে যে, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কেন অবৈধ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়তে পারেন মাসিক আলকাউসার, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ ২০১২ সংখ্যাগুলো। যা পরবর্তীতে মাকতাবাতুল আশরাফ থেকে ‘মাল্টি লেভেল মার্কেটিং : তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও শরয়ী হুকুম’ নামে পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
আমরা কয়েকজন ছাত্র মিলে একটি সংগঠন করতে চাই। এবং এই...
আমরা কয়েকজন ছাত্র মিলে একটি সংগঠন করতে চাই। এবং এই সংগঠনের কাজ হবে, যে মানুষের টাকা প্রয়োজন তাকে টাকা করজ দেওয়া। তো এক্ষেত্রে আমরা একটি হিলা (কৌশল) করতে চাই তা এই যে, সংগঠনটির পক্ষ থেকে কিছু নিয়মানুপাতে ফরম তৈরি করা হবে। ঋণ গ্রহিতা ফরমটি ক্রয় করবে এবং যে পরিমাণ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা লেখা রয়েছে সে পরিমাণ টাকা করজ নিবে। আর এক্ষেত্রে করজকৃত টাকার পরিমাণ যত বেশি হবে ফরমের মূল্যও তত বেশি হবে। ফরমের এই টাকা দ্বারা আমরা উপকৃত হব। যথা সময়ে টাকা না দিলে পুনরায় ফরম কেনা জরুরি। এখন জানতে চাই, এই ধরনের সংগঠন এবং এই হিলা করা জায়েয আছে কি না? দয়া করে এর সমাধান জানিয়ে আমাদেরকে উপকৃত করবেন।
প্রশ্নোক্ত হীলা সম্পূর্ণ হারাম। এটি ঋণ দিয়ে সুদ গ্রহণেরই নামান্তর। ফরম বিক্রি একটি ছুতামাত্র। কেননা ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে ফরমের দামও বাড়ে। অথচ ফরমের খরচ একই। আবার মেয়াদ শেষে ঋণের মেয়াদ বাড়াতে চাইলে সেক্ষেত্রে নতুন ফরম কিনতে হয়। এসব কিছু থেকে প্রমাণিত হয় যে, এটি প্রকৃতপক্ষে ফরম বিক্রির অন্তরালে ঋণের উপর অতিরিক্ত টাকা গ্রহণের অপকৌশলমাত্র। যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ সুদ ও হারাম।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৫১; ইলাউস সুনান ১৪/১৭৯
শেয়ারবাজার সম্পর্কে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত কী? বর্তমান শেয়ারবাজারে অংশগ্রহণ করা জায়েয...
শেয়ারবাজার সম্পর্কে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত কী? বর্তমান শেয়ারবাজারে অংশগ্রহণ করা জায়েয কি না? জায়েয হলে কি কি শর্তের সাথে জায়েয আছে জানিয়ে বাধিত করবেন।
বর্তমান শেয়ারবাজারের কারবারগুলো শরীয়তের লেনদেন সংক্রান্ত নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ব্যাপকভাবে সুদের মিশ্রণের সাথে সাথে বাজারটি অনেকটা জুয়ার মার্কেটের আকার ধারণ করেছে। তাই আরব দেশসহ বিশ্বের অনেক অঞ্চলের অধিকাংশ বড় বড় আলেম শেয়ারবাজারের কারবারকে নাজায়েয ফতওয়া দিয়েছেন। জেদ্দা ভিত্তিক ওআইসি ফিকহ একাডেমীতে বিশ্বের বড় বড় ফকীহগণের অংশগ্রহণে এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে এবং দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনার পর এটি না জায়েয হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।-মাজাল্লাতু মাজমায়িল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা : ৭, পৃষ্ঠা : ৭১১-৭১২
এ ব্যাপারে বিস্তারিত দালিলিক প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল মাসিক আলকাউসারের এপ্রিল ’১০, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল ’১১ সংখ্যায়। যা পরবর্তীতে মাকতাবাতুল আশরাফ লাইব্রেরী থেকে পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য ঐ পুস্তিকাটি দেখা যেতে পারে।
আমার বন্ধু সুহাইলের বাসা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। তার সাথে আমার...
আমার বন্ধু সুহাইলের বাসা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। তার সাথে আমার এ মর্মে চুক্তি হয় যে, সে একটি রুম দেবে এবং আমি একটি ফটোকপি মেশিন দিব। এ দিয়ে দুজনে একসাথে ফটোকপির ব্যবসা করব এবং উভয়েই শ্রম দিব। আর লাভ দুজনের মাঝে সমান হারে ভাগ হবে। জানার বিষয় হল, এ ধরনের শরিকানা কারবার কি বৈধ?
হ্যাঁ, আপনার বন্ধুর সাথে এভাবে চুক্তি করা সহীহ হবে। ব্যবসায় লাভ হলে চুক্তি অনুযায়ী তা দুজনের মাঝে সমান হারে বণ্টিত হবে।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৭/৫০৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২২; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮৬
এক লোক ঢাকা থাকে। আমার বাড়ির পাশে এক খন্ড জমি...
এক লোক ঢাকা থাকে। আমার বাড়ির পাশে এক খন্ড জমি ক্রয় করে মাটি ভরাট করেছে। ভবিষ্যতে তার সন্তানের জন্য বাড়ি তৈরি করবে। আমি তাকে প্রস্তাব দিয়েছি যে, এ জমিতে আমি মেহগনির চারা রোপন করে পরিচর্যা করব। অতপর যখন বাড়ি বানাবেন তখন গাছগুলো বিক্রি করে প্রাপ্য টাকা উভয়ে অর্ধেক করে ভাগ করে নিব। আমাদের এ চুক্তি বৈধ হবে কি না জানাবেন।
হ্যাঁ, জমির মালিকের সাথে আপনার ঐ চুক্তি বৈধ হবে, তবে এ ক্ষেত্রে কতদিন পর গাছ বিক্রি করা হবে এর একটি সময় নির্দিষ্ট করে নেওয়া আবশ্যক। গাছ বিক্রির সময় নির্ধারণ করা না হলে এ চুক্তি সহীহ হবে না।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/২৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২০২; শরহুল মাজাল্লা ৪/৩৯৭; রদ্দুল মুহতার ৬/২৮৯
আমাদের এলাকায় কয়েকটি লেনদেন খুবই প্রচলিত। কিন্তু বৈধ কিনা আমার...
আমাদের এলাকায় কয়েকটি লেনদেন খুবই প্রচলিত। কিন্তু বৈধ কিনা আমার সন্দেহ হচ্ছে। নিম্নে এগুলোর বিবরণ উল্লেখ করছি।
১ম পদ্ধতি : সমিতির কাছে ঋণের আবেদন করলে সমিতি কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীকে সরাসরি নগদ অর্থ না দিয়ে এক কৌশল অবলম্বন করে। প্রথমে সমিতির নির্ধারিত ফরম পূরণ করত: আবেদনকারীকে নিয়ে সমিতি কর্তৃক নির্ধারিত দোকানে চলে যায়। দোকানের কোন নির্দিষ্ট মালের স্ত্তপের দিকে ইঙ্গিত করে বলে যে, মালগুলি আমি (উদাহরণত) ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকায় খরিদ করলাম। অতপর ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা ব্যবসায়ীর হাতে দিয়ে আবেদনকারীকে বলে এ মালগুলি সমিতি আপনার কাছে ছয়মাস মিয়াদে ১,৪০,০০০/- (এক লক্ষ চল্লিশ) হাজার টাকায় বাকিতে বিক্রি করছে। আপনি মালগুলি দোকানীর কাছে বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়া যেতে পারেন অথবা দোকানী নিজেই ৯৯,৫০০/- (নিরানববই হাজার পাঁচশত) টাকা আবেদনকারীকে দিয়ে বলে এই মালগুলি আমি আপনার কাছ থেকে ক্রয় করলাম।
২য় পদ্ধতি : সমিতির অফিস দ্বিতীয় তলায় এবং অফিসে বিক্রয়যোগ্য কিছু মালামাল আছে। নিচ তলায় মার্কেট এবং মার্কেটে সমিতির নির্ধারিত দোকান আছে। দোকানের কাজ হল বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মাল ক্রয় করে সমিতির অফিসে পৌঁছিয়ে দেওয়া। এ সমিতির বিনিয়োগ পদ্ধতি হল সমিতির কাছে ঋণ চাইলে সমিতি তাকে নগদ অর্থ না দিয়ে তার কাছে অফিসের রক্ষিত মাল বাকির উপর অধিক মূল্যে বিক্রি করে। অতপর ঋণপ্রার্থী উক্ত মাল নিজ আয়ত্তে নিয়ে নিচ তলার মার্কেটে সমিতির নির্ধারিত দোকানে নগদ অর্থে কম মূল্যে বিক্রি করে। এতে করে সমিতির সম্পদ সমিতির কাছেই ফিরে যায়। এবং এই বাকি ও নগদ ক্রয়ের আড়ালে সমিতির মোটা অংকের মুনাফা অর্জন হয়। আবেদনকারীর প্রয়োজনও মিটে যায়।
৩য় পদ্ধতি : ঋণ প্রার্থী একজন ব্যবসায়ী। তার ঠান্ডা পানিয় এর ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এক লোকের নিকট ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা ঋণ চাইলেন। কিন্তু তিনি বিনা লাভে ঋণ দিতে প্রস্ত্তত নন। তাই তিনি এই পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন যে ঋণপ্রার্থীর দোকানের একটি ফ্রিজ ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা মূল্যে ক্রয় করলেন এবং (মালিকানা বোঝানোর জন্য) ফ্রিজে হাত রেখে ঋণপ্রার্থীর নিকট ছয় মাসের জন্য প্রতি মাসে ১২০০ (এক হাজার দুইশত) টাকা দরে ভাড়া দিলেন। এবং শর্ত করে যে, ছয় মাস পর ঋণপ্রার্থী ঐ ফ্রিজটি পুনরায় ২০,০০০/- টাকা মূল্যে ক্রয় করে নিবেন। এতে করে বিনিয়োগ দাতা ফ্রিজের ভাড়ার নামে ছয় মাসে মুনাফা পেল ৭২০০/- (সাত হাজার দুইশত) টাকা এবং ছয় মাস পর ফ্রিজের মূল্য ফেরত বাবদ পেল ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা।
৪র্থ পদ্ধতি : এই বিনিয়োগের তরিকা হল, এক ব্যক্তি ফাল্গুন-চৈত্র মাসে প্রতি হাজারে ৩/৪ মণ ধান দরে লগ্নী করেন যা আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পরিশোধ যোগ্য। সমস্যা দেখা দেয় পরিশোধের সময় গরিব বেচারা এত ধান পাবে কোথায়। অথবা যারা ১/২ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ গ্রহণ করেছেন তারা এত ধান পাবে কোথায়। সমাধান কল্পে ঐ ব্যক্তি ঋণ গ্রহীতাকে নিয়ে চলে যায় তার পূর্ব নির্ধারিত ধানের আরতে বা ধান বোঝাই নৌকায়। অতপর ঋণগ্রহীতা বাজার দর হিসাব করে ধানের যা মূল্য আসে (মনে করেন হাজারে ৩ মণ ধরে এক লক্ষ টাকার লগ্নী ধান তিন শত মণ ৫০০ (পাঁচ শত) টাকা দরে তিন শত মণ ধানের মূল্য ১,৫০,০০০/- (এক লক্ষ পঞ্চাশ) হাজার টাকা। উক্ত টাকা ঋণ গ্রহীতা নৌকা বা আড়তের ব্যাপারীকে দিয়ে বলেন যে, আমি আপনার নৌকা বা আড়ত থেকে তিনশত মণ ধান ক্রয় করিলাম। এবং তা (লগ্নীদাতাকে লগ্নী পরিশোধার্তে দিয়ে দিলাম। এবার লগ্নীদাতা যেহেতু তিন শত মণ ধানের মালিক হয়ে গেলে তাই উক্ত ধান পুনরায় নৌকা বা আড়তের ব্যাপারীর কাছে এক হাজার টাকা কমে অর্থাৎ এক লক্ষ উনপঞ্চাশ হাজার টাকায় বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে আসে। এতে করে ঐ ব্যক্তি মুনাফা ও মূলধন মিলে এক লক্ষ উনপঞ্চাশ হাজার টাকা পাইলেন। নৌকা বা আড়তের ব্যাপারী উক্ত কর্মটি সম্পাদন করে দেওয়ায় এক হাজার টাকা পেলেন। উল্লেখ্য উক্ত ক্রয়বিক্রয়ে কোন মাপ বা ওজন কিছুই করা হয় না। এমনকি উক্ত নৌকা বা আড়তে তিন শত মণ ধান আছে কি না? এ ব্যাপারেও কোন খোঁজ খবর থাকে না।
দলিলসহ পদ্ধতিগুলোর সমাধান দিয়া চির কৃতজ্ঞ করিবেন।
প্রশ্নে বর্ণিত সবকটি লেনদেনই নাজায়েয। এসব পদ্ধতি সুদ গ্রহণের অপকৌশলমাত্র। আর সুদ যেমনিভাবে সরাসরি হারাম তেমনিভাবে তা গ্রহণের জন্য হীলা বাহানা অবলম্বন করাও হারাম।
জেনে রাখা দরকার যে, ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেন বাস্তবমুখী কারবার। যা মালিকানা পরিবর্তন ও পণ্য হস্তান্তরের বাস্তবতার সাথে সম্পৃক্ত।
কিন্তু প্রশ্নোক্ত সবকটি পদ্ধতিতেই দেখা যাচ্ছে, পণ্য প্রথমে যার কাছে ছিল তার কাছেই থেকে যাচ্ছে। মাঝে শুধু বিভিন্ন লেনদেনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন প্রথম পদ্ধতি এক মাধ্যম হয়ে
এ পণ্যই আবার দোকানীর কাছে বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
অথচ পণ্য পূর্বে থেকে দোকানীর কাছেই আছে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিতেও গ্রাহক সমিতির এক প্রতিনিধি থেকে পণ্য নিয়ে সমিতিরই আরেক প্রতিনিধির নিকট বিক্রি করে দিচ্ছে। অর্থাৎ সমিতির মাল সমিতির কাছেই থেকে যাচ্ছে।
তেমনি তৃতীয় পদ্ধতিতেও ফ্রিজ যার কাছে ছিল তার কাছেই আছে। মাঝে শুধু ফ্রিজের ক্রয়-বিক্রয় ও ভাড়ার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। একইভাবে চতুর্থ পদ্ধতিতেও ধানের আড়তে বা ধানবোঝাই নৌকায় গিয়ে শুধু ধান ক্রয়-বিক্রয়ের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ধান
যার কাছে যেভাবে ছিল তার কাছেই থেকে যাচ্ছে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত কোন পদ্ধতিতেই টাকাদাতা ও গ্রহীতা কোন পক্ষেরই বাস্তবিক অর্থে পণ্য লেনদেন করা উদ্দেশ্য নয়। বরং গ্রাহককে ঋণ দিয়ে মেয়াদান্তে তার থেকে অতিরিক্ত নেওয়ার ছুতা হিসেবে এ পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা হয়েছে।
জানা কথা যে, ঋণ দিয়ে অতিরিক্ত নেওয়া সুদ। যেমনিভাবে সুদ হারাম ও ঘৃণিত তেমনিভাবে তা গ্রহণের জন্য হীলা-বাহানা অবলম্বন করাও হারাম ও ঘৃণিত। মনে রাখা দরকার যে, কোন ছুঁতা বা হীলা-বাহানা অবলম্বন করলেই সুদী লেনদেন বৈধ হয়ে যায় না। কারণ শরীয়তে মুআমালাত তথা লেনদেনের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ও হাকীকতের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই কোন সুদী কারবারের শুধু নাম বদলে দিলেই তা বৈধ হয়ে যায় না।
অতএব মুসলমানের কর্তব্য হল, এ ধরনের হীলা-বাহানার মাধ্যমে উপার্জন না করে শরীয়ত স্বীকৃত পন্থায় লেনদেন করা। এবং সামর্থ্য থাকলে করযে হাসানা প্রদান করা।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৫০০৭; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১০/৫২৫; রদ্দুল মুহতার ৫/৩২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৬৮; ফাতহুল কাদীর ৬/৩২৩; আলবাহরুর রায়েক ৬/২৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০৮; শরহুল মাজাল্লা ২/৪৫৩; ইলাউস সুনান ১৪/১৭৭
আমরা ছয়জন মিলে চুক্তি করেছি, প্রতিমাসে আমাদের প্রত্যেকে পাঁচশ টাকা...
আমরা ছয়জন মিলে চুক্তি করেছি, প্রতিমাসে আমাদের প্রত্যেকে পাঁচশ টাকা করে মোট তিন হাজার টাকা জমা করব। অতপর এই ছয়জনের নামে লটারি হবে। যার নাম উঠবে সে প্রথম মাসে এই তিন হাজার টাকা নিবে। যার নাম লটারিতে এসেছে তার নাম বাদ দিয়ে পরের মাসে বাকি পাঁচজনের নামে লটারি করা হবে। যার নাম উঠবে সে এ মাসে তিন হাজার টাকা নিবে। এভাবে তৃতীয় মাসে বাকি চারজনের নামে লটারি করা হবে। প্রত্যেক মাসে টাকা জমা হবে, লটারি হবে এবং একেকজন করে টাকা পাবে। এই পদ্ধতিতে টাকা জমা করে লটারির মাধ্যমে টাকা নেওয়া জায়েয কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে টাকা জমা করা ও ঋণ আদানপ্রদান করা জায়েয। কেননা এক্ষেত্রে কেউই জমাকৃত টাকার কম বা বেশি পায় না এবং ঋণ গ্রহীতাকেও অতিরিক্ত কিছু দিতে হয় না। বরং মেয়াদের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকে নিজের জমাকৃত পূর্ণ টাকা পেয়ে যায়। তবে লটারিতে যার নাম আসবে তাকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি সকলের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতিতে হতে হবে।
প্রকাশ থাকে যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যারা আগে আগে ঋণ পাবে তারা যেন শেষ পর্যন্ত কিস্তি দেওয়া অব্যাহত রাখে এটা নিশ্চিত করতে হবে। যেন ঋণদাতাদের জমা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
এখানে আরো উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে লটারি দ্বারা যেহেতু শুধু কাকে আগে ঋণ দেওয়া হবে এটা চিহ্নিত করা উদ্দেশ্য- তাই এই লটারি জায়েয।
-ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩২৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৫৮
আমি ও আমার বন্ধু মিলে দশ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি...
আমি ও আমার বন্ধু মিলে দশ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি চালের আড়ৎ দিয়েছি। আমার পুঁজি চার লক্ষ টাকা আর বন্ধুর ছয় লক্ষ। ব্যবসা পরিচালনা আমি একাই করি। তাই তার সাথে আমার চুক্তি হয় যে, লাভের ৩৩% তোমার, আর বাকিটা আমার। আর লোকসান হলে অর্ধেক তুমি বহন করবে আর বাকি অর্ধেক আমি। সে এতে রাজি হয়। প্রশ্ন হল, এভাবে চুক্তি করা কি আমার জন্য বৈধ হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লাভ বণ্টনের চুক্তি সহীহ হয়েছে। কিন্তু লোকসানের বণ্টন সহীহ হয়নি। কারণ যৌথমূলধনী কারবারে লোকসান হলে প্রত্যেককে মূলধন হিসাবেই দায়ভার বহন করতে হয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকসান হলে মূলধন অনুপাতে আপনি ৪০% বহন করবেন, আর আপনার বন্ধুকে ৬০% বহন করতে হবে।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/২৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৯৫; রদ্দুল মুহতার ৪/৩০৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৭৪
আমি পাশের গ্রামের এক চাষীকে এক লক্ষ টাকা দিয়েছি এই...
আমি পাশের গ্রামের এক চাষীকে এক লক্ষ টাকা দিয়েছি এই শর্তে যে, তিন মাস পর বোরো ধানের মৌসুমে সে আমাকে পাঁচশত টাকা দরে দুই শত মণ ধান দিবে। টাকা দেওয়ার একমাস পরেই আমার মা অসুস্থ হয়ে যান। ফলে চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন আমার মামা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা এ কথা বলে ধার নিলাম যে, দু মাস পরে ঐ কৃষক দুইশত মণ ধান দিলে আমরা দুজনে একশত মণ করে ভাগ করে নিব। আর এভাবে তার ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে। মামার সাথে আমার এই ঋণচুক্তিটি কি ঠিক হয়েছে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
আপনার মামা থেকে ঐভাবে টাকা নেওয়া বৈধ হয়নি। এটাকে ঋণ বলা হলেও বাস্তবে এটি ধানের আগাম খরিদচুক্তি, ঋণচুক্তি নয়। কারণ এক্ষেত্রে আপনি মামা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়েছেন এ শর্তে যে, পরবর্তীতে আপনি এর বিনিময়ে চাষী থেকে আপনার পাওনা ধানের অর্ধেক তাকে দিবেন। সুতরাং আপনার মামার সাথে ঐ টাকার বিনিময়ে ধানের আগাম ক্রয় চুক্তি করা হল। অথচ চাষী থেকে এখনো আপনি ঐ ধান হস্তগত করেননি। আর ক্রয়কৃত পণ্য হস্তগত করার আগেই তা বিক্রি করে দেওয়া জায়েয নয়। হাদীস শরীফে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করল তা হস্তগত করার আগেই যেন সে তা বিক্রি না করে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৪৩৮)
সুতরাং এ চুক্তিটি বাতিল করে দেওয়া জরুরি।
-আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৫১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৫১৬
রাজধানীর ব্যস্ততম মার্কেটগুলোর একটিতে পাঁচ বছরের জন্য একটি দোকান ভাড়া...
রাজধানীর ব্যস্ততম মার্কেটগুলোর একটিতে পাঁচ বছরের জন্য একটি দোকান ভাড়া নিয়েছি। হঠাৎ একদিন সংবাদ পেলাম, মার্কেটের মালিক কোনো কারণে আমার পাশের দোকানটি অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। সাথে সাথে মালিককে ক্রয়ের ব্যাপারে আমার আগ্রহের কথা জানালাম। কিন্তু তিনি ততটা গুরুত্ব দিলেন না। এখন আমি প্রিএমশন-এর দাবি করতে চাচ্ছি। জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে শুফআ প্রিএমশন-এর ভিত্তিতে দোকানটি ক্রয়ের দাবি করতে পারব কি?
ভাড়াটিয়া শুফআ তথা অগ্রক্রয়ের অধিকারী হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য শুফআর দাবি করা বৈধ হবে না। কেননা শুফআর দাবি একমাত্র বিক্রিত সম্পত্তির মালিকানায় শরিকগণ বা পার্শ্ববর্তী মালিকগণই করতে পারে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১১২; আলমাবসূত, সারাখসী ১৪/৯৫; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২১৭
আমার বাবা একজন রিটায়ার্ড অফিসার। তিনি বিশ লাখ টাকা পেনশন...
আমার বাবা একজন রিটায়ার্ড অফিসার। তিনি বিশ লাখ টাকা পেনশন স্কীমে সঞ্চয়পত্র কিনে রেখেছেন। এর ফলে গভঃমেন্ট তাকে তিন মাসে ৬২,৫০০/- টাকা দেয়। এটা কি সুদ?
আমার বাবা বলেন যে, এটা রিটায়ার্ড লোকদের জন্য করা হয়েছে। অন্যরা এটা করতে পারে না। এটাকে ‘‘গভঃমেন্ট পেনশন স্কীম’’ নাম দেওয়া হয়েছে। আসলেই কি এটা পেনশনের মতো হালাল, নাকি সুদ?
বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।
‘‘গভঃমেন্ট পেনশন স্কীম’’ যদিও সরকারি ব্যবস্থাপনায় রিটায়ার্ড অফিসারদের জন্য করা হয়েছে, কিন্তু এটি সম্পূর্ণ সুদি স্কীম। কারণ সরকার মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে গৃহিত টাকার উপর নির্দিষ্ট অংকে সুদ দিয়ে থাকে। তাই পেনশন নাম দেওয়ার কারণে তা হালাল হয়ে যাবে না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদুভিত্তিক মেয়াদী জমা হিসাবকেও তো ডি.পি.এস বা ডিপোজিট পেনশন স্কীম বলা হয়ে থাকে। অথচ সেটিও হারাম।
সুতরাং আপনার পিতার সঞ্চয়পত্র কেনা সম্পূর্ণ নাজায়েয হয়েছে এবং এ স্কীম থেকে তিনি অতিরিক্ত যে অর্থ গ্রহণ করেছেন তা সুদ হয়েছে। ক্রয়কৃত সঞ্চয়পত্র জমা দিয়ে এ স্কীম প্রত্যাহার করা জরুরি। অতপর মূল টাকার অতিরিক্ত অংশ ফকীর-মিসকীনকে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দেওয়া আবশ্যক। আর কৃত গুনাহের জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।
-সূরা বাকারা : ২৭৫; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৫; তাফসীরে তবারী ৩/১০৪; শরহুল মাজাল্লা ২/৪৫৫; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ২/১১০, ২৩৩
আমি একজন সাধারণ মানুষ। সরকারি বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে সম্পর্ক...
আমি একজন সাধারণ মানুষ। সরকারি বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে তাদেরকে মাধ্যম বানিয়ে আমি বিভিন্নজনকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারি। এখন প্রশ্ন হল, কোনো ব্যক্তিকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার বিনিময়ে তার থেকে টাকা গ্রহণ করা আমার জন্য বৈধ হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
আপনার প্রশ্নের বিবরণ শুনে মনে হচ্ছে, আপনি নিজে সুপারিশ করে বা কারো মাধ্যমে সুপারিশ করিয়ে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করবেন। আর সুপারিশ শরীয়তের দৃষ্টিতে বিনিময়যোগ্য নয়। সুতরাং এ কাজের জন্য আপনি কোনো টাকা গ্রহণ করতে পারবেন না।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৫৩৫; বযলুল মাজহূদ ১৫/২২২; আল মওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ২৬/১৩৪
ফেরিওয়ালারা সিলভারের পুরাতন হাড়িপাতিলের বিনিময়ে সিলভারের নতুন হাড়িপাতিল বিক্রি করে।...
ফেরিওয়ালারা সিলভারের পুরাতন হাড়িপাতিলের বিনিময়ে সিলভারের নতুন হাড়িপাতিল বিক্রি করে। নতুন সিলভারের দাম যদি হয় ১৫০/- টাকা তবে পুরাতন সিলভারের দাম হয় ১০০/- টাকা বা তার কম। সুতরাং এক কেজি ওজনের হাড়িপাতিল নিতে হলে দেড় কেজি পরিমাণ পুরাতন সিলভার দিতে হয়। প্রশ্ন হল, এক কেজি নতুন সিলভার দেড় কেজি পুরাতন সিলভারের বিনিময়ে ক্রয় করা বৈধ কি? না হলে বৈধ উপায়ে লেনদেনের পদ্ধতি কী?
সিলভারের পুরাতন হাড়িপাতিল দিয়ে সিলভারের নতুন হাড়িপাতিল নিতে হলে উভয় দিকে ওজনে সমান সমান করে লেনদেন করতে হবে। এক্ষেত্রে ওজনে কমবেশ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই পুরাতন হাড়িপাতিল বদলাতে চাইলে পুরাতনগুলি ফেরিওয়ালার কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করবে। আর সিলভারের নতুন হাড়িপাতিলও আলাদাভাবে টাকার বিনিময়ে ক্রয় করবে।
-তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৫৭৮; তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৭২; হেদায়া ৩/৭৮-৭৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৪৫৫
খতমে কুরআন, খতমে ইউনুস ইত্যাদি পড়ে টাকা-পয়সা আদানপ্রদান জায়েয আছে...
খতমে কুরআন, খতমে ইউনুস ইত্যাদি পড়ে টাকা-পয়সা আদানপ্রদান জায়েয আছে কি? মৃতের জন্য ঈসালে সওয়াব করে কিংবা বালা-মুসিবতের জন্য বা রোগমুক্তির জন্য খতম পড়ে বর্তমানে টাকাপয়সার যে লেনদেন করা হয় তার হুকুম কী? বিস্তারিত জানতে চাই।
ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন মজীদ খতম করে বা অন্য কোনো দুআ-দরূদ পড়ে বিনিময়ে টাকা-পয়সা বা কোনো কিছু আদান-প্রদান করা নাজায়েয়।
সুতরাং বর্তমান সমাজে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে দুআ দরূদ ও কুরআন খতম করিয়ে বিনিময়ে টাকা-পয়সা আদান-প্রদানের যে প্রথা কোনো কোনো জায়গায় চালু আছে তা নাজায়েয ও কু প্রথার
অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
হ্যাঁ, খতমে কুরআন, খতমে ইউনুস বা অন্য কোনো দুআ-দরূদের খতম যদি কেবলমাত্র দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে করা হয় (যেমন, রোগমুক্তি, বিপদ-আপদ থেকে হেফাযত, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি ইত্যাদি) তবে সেক্ষেত্রে বিনিময় দেওয়া-নেওয়া জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রেও বিনিময়ে কোনো কিছু না নেওয়াই শ্রেয়। আর কারো জন্য এভাবে খতম পড়াকে পেশা হিসাবে অবলম্বন করা কিছুতেই সমীচীন নয়।
প্রকাশ থাকে যে, মুসলমানদের কর্তব্য হল, অসুখ-বিসুখ, বিপদ-আপদ ও প্রয়োজনের মুহূর্তে নিজেই নফল নামায, দুআ, দরূদ ও ইস্তিগফার দ্বারা আল্লাহ তাআলার সাহায্য প্রার্থনা করা, নফল সদকা দেওয়া। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদেরকেও দুআ করতে বলা। আলেম, বুযুর্গ ব্যক্তিদের থেকে দুআ চাওয়া। সর্বোপরি সবর ও তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার রহমত কামনা করা।
এমনিভাবে মৃত আত্মীয়-স্বজনের ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে নিজেরাই কুরআন খতম ও দুআ-দরূদ পড়বে। দান-সদকা করবে। মূলত এসবই হল শরীয়তের দৃষ্টিতে উত্তম পন্থা।
আর ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকতের জন্য সবচে বড় করণীয় হল, বৈধ পন্থায় ব্যবসা করা, মিথ্যা, ধোঁকা, ভেজাল, মাপে কম দেওয়া, সুদ ইত্যাদি সকল ধরনের হারাম কাজ ও পন্থা থেকে বেঁচে থাকা এবং সততা ও সত্যবাদিতার প্রতি যত্নবান হওয়া।
-ইলাউস সুনান ১৬/১৭৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৬; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/৩১৮; বযলুল মাজহূদ ১৫/৮৪; মজমূআতু রাসাইলি ইবনে আবেদীন ১/১৫৬-১৫৭, ২৭৪
আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি তার কিছু জমি মসজিদ ও মাদরাসার...
আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি তার কিছু জমি মসজিদ ও মাদরাসার উন্নয়নের জন্য মৌখিকভাবে ওয়াকফ করেছিলেন। এবং জমিগুলো মসজিদ-মাদরাসার কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করেছিলেন। তখন থেকে কর্তৃপক্ষ ওয়াকফের স্বার্থে জমিগুলো ভাড়া দিয়ে আসছেন। কিন্তু চেষ্টা সত্ত্বেও দলিল করে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তিন-চার বছর পর ওয়াকফকারীর আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তখন তিনি নিজের বাড়ি এবং তার ওয়াকফকৃত উক্ত জমিগুলোও বিক্রি করে দেন। তবে ক্রেতাকে এখনো দলিল করে দেননি। প্রশ্ন হল, এ পরিস্থিতিতে তার জন্য ওয়াকফকৃত জমিগুলো বিক্রি করা কি বৈধ হয়েছে? আমাদের দাবি হল, সেই জমি যেন আবার ফিরিয়ে দেয়। দ্রুত উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মাদরাসার জন্য জমি দান করে দিয়ে তা আবার অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া খুবই অন্যায় হয়েছে। কারণ মসজিদ-মাদরাসার কর্তৃপক্ষের নিকট জমিটি হস্তান্তর করে দেওয়ার দ্বারা শরীয়তের দৃষ্টিতে ঐ জমির ওয়াকফ সম্পন্ন হয়ে গেছে এবং দাতার মালিকানা থেকে বেরিয়ে তা মসজিদ-মাদরাসার মালিকানায় এসে গেছে। সুতরাং ঐ জমি বিক্রি করা নাজায়েয হয়েছে। এখন তার কর্তব্য ঐ বিক্রি বাতিল করে জমিগুলো মসজিদ-মাদরাসার জন্য ফিরিয়ে দেওয়া এবং দলিলও করে দেওয়া।
-সহীহ বুখারী ১/৩৮৭; ফাতহুল কাদীর ৫/৪১৮, ৪৩২; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৯৮; রদ্দুল মুহতার ৪/৩৩৮
আমি এক জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা করি। যেখানে আছি সেখান থেকে...
আমি এক জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা করি। যেখানে আছি সেখান থেকে ঐ গন্তব্যে পৌঁছতে পায়ে হেঁটে ৩/৪ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু ঐ জায়গাটা ভালোভাবে চিনি না এবং এত কাছে তাও জানি না। আমার গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে এমন একটা অটো রিক্সাকে আমি হাত দিয়ে ইশারা দিলেই সে আমার নিকট এসে থামল। রিক্সাটি এমন, যা ৭/৮ জন লোক নিয়ে চলে। দেখলাম ভিতরে একজন লোক আছে বাকি সিটগুলো খালি। আমি তাকে বললাম, অমুক জায়গায় যাবেন? সে কয়েকবার জায়গাটির নাম জিজ্ঞাসা করার পর বলল যাব। আমি বললাম, ভাড়া কত? সে বলল ১০/- টাকা। আমি কিছু কমাতে চাইলে সে রাজি হল না। তখন আমি উঠলাম। আমাদের দুজনকে নিয়ে সে অনেক দূরে চলে গেল। এবং অপর লোকটি যেখানে নামল আমাকেও সেখানে নামতে বলল। আমি বললাম আমি তো অমুক জায়গায় যাব। সে বলল, তা তো অনেক পিছনে রেখে এসেছি। আপনি আর একটি গাড়ি নিয়ে চলে যান এবং সে আমার কাছে ভাড়া চাইল। আমি বললাম, আমার গন্তব্যে পৌঁছে দিন ভাড়া দিব। সে বলল, আমি তো মনে করেছি, আপনি এখানেই নামবেন। কেননা, যেখানে ছিলেন সেখান থেকে তো ওখানে ১ মিনিটের রাস্তা। এতটুকু কেউ গাড়িতে আসে? এরপর সে আমার সাথে তর্কে লিপ্ত হয়। আমি তাকে ৫/- টাকা দিতে চাইলাম। কিন্তু সে রাজি হল না এবং গালিগালাজ শুরু করল। আমি রাগ করে তাকে কোনো টাকা না দিয়ে চলে আসি।
প্রশ্ন হল, আমার এ কাজটি কি ঠিক হয়েছে? আমার করণীয় কী ছিল? এবং এখন আমার করণীয় কী? আমি তাকে চিনি না এবং তাকে খুঁজে পাওয়াও মনে হয় অসম্ভব।
না, আপনার জন্য এমনটি করা ঠিক হয়নি। প্রথমত আপনার গন্তব্যে নেমে যাওয়া আপনার দায়িত্ব ছিল। অথবা গাড়িতে উঠেই আপনি তাকে বলতে পারতেন আমি জায়গাটা চিনি না আপনি আমাকে নামিয়ে দিবেন, কিন্তু আপনি এর কোনোটিই করেননি। সুতরাং এ ব্যক্তির নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ না করে আপনি অন্যায় করেছেন। এখন যদি লোকটিকে পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তবে ১০/- টাকা কোনো গরীবকে সদকা করে দিন।
আরেকটি কথা মনে রাখা দরকার, তা হচ্ছে, রিক্সা, লোকাল বাস ও যাত্রীবাহী ছোট গাড়িগুলোর হেলপার, কন্ট্রাকটরদের অনেকেই থাকে অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত। গাল-মন্দ করা তাদের অনেকের কাছেই সাধারণ বিষয়। তাই এসব ক্ষেত্রে নিজের রাগ সংবরণ করা উচিত। যেন অল্প কিছু টাকার জন্য তারা গালমন্দ করার সুযোগ না পায়।
আমরা হাদীস শরীফে শুনেছি যে, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করে লোকজন...
আমরা হাদীস শরীফে শুনেছি যে, মৃত ব্যক্তিকে দাফন করে লোকজন যখন চলে আসে তখন মুনকার-নাকীর ফেরেশতা এসে মৃত ব্যক্তিকে উঠিয়ে বসায় এবং তিনটি বিষয়ে সওয়াল করে।
জানার বিষয় হল, এখানে মৃত ব্যক্তিকে উঠিয়ে বসানোর অর্থ কী? বাস্তবেই কি বসানো হয় নাকি এর অর্থ ও মর্ম অন্য কিছু? এবং বসালে তার ধরণ কীরূপ হয়? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
সহীহ হাদীসে শুধু এতটুকু আছে যে, কবরে দুইজন ফেরেশতা এসে মৃত ব্যক্তিকে বসাবে এবং কয়েকটি বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করবে।
এখানে কীভাবে বসানো হবে, বসার ধরণ কেমন হবে তা হাদীস শরীফে উল্লেখ নেই। বসার বাহ্যিক রূপ হওয়াটা অবসম্ভব কিছু নয়। এটি তো এ জগতের বিষয় নয়। বরং একটি ভিন্ন জগতের বিষয়, যার নাম ‘বারযাখ’। তাই এটাকে এ জগতের বিষয়ের সাথে তুলনা করলে চলবে না।
এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হল, সহীহ হাদীসে যতটুকু বর্ণিত হয়েছে তা-ই বর্ণনা করা ও বিশ্বাস করা। এর ধরণ বা বাস্তব রূপ কী হবে তা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্কে না জড়িয়ে বিষয়টিকে আল্লাহর উপর সোপর্দ করা।
-সহীহ বুখারী ১/১৭৮; শরহু সহীহ মুসলিম, নববী ১৭/২০১; সুনানে ইবনে মাজাহ পৃ. ৩১৫; মিরকাতুল মাফাতীহ ১/৩১৩; তাসীকনুস সুদূর, আল্লামা সরফরায খান সফদর রাহ.
আমি ঢাকা থেকে যশোর যাওয়ার জন্য ৫,০০০/- টাকায় একটি মাইক্রো...
আমি ঢাকা থেকে যশোর যাওয়ার জন্য ৫,০০০/- টাকায় একটি মাইক্রো বাস ভাড়া করি। তা ফরিদপুর গিয়ে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়, যা মেরামত করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। ড্রাইভার আমাকে ঢাকা-যশোরগামী একটি বাসে তুলে দেয়। ঐ বাসের ভাড়া আমি দিয়েছি। কিন্তু মাইক্রোবাসের ভাড়া নিতে চাইলেও আমি দেইনি। এখন জানতে চাই, মাইক্রোর ভাড়া না দেওয়া কি ঠিক হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ মাইক্রোবাসে করে যেহেতু আপনি ফরিদপুর পর্যন্ত গেছেন তাই আপনার জন্য ঐ পর্যন্তের ভাড়া আদায় করা জরুরি। তা না দেওয়া অন্যায় হয়েছে। মাইক্রোর ড্রাইভারের ঐ টাকা আপনার নিকট পাওনা রয়েছে।
-আলজামিউস সগীর ৪৫০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৮৮
আমাদের অঞ্চলে ইট ভাটাগুলোতে একটি পদ্ধতি চালু আছে যে, ভাটার...
আমাদের অঞ্চলে ইট ভাটাগুলোতে একটি পদ্ধতি চালু আছে যে, ভাটার মালিকগণ সিজনের শুরুতে বিভিন্ন জন থেকে টাকা নিয়ে সিজন শেষে অর্থাৎ ৩/৪ মাস পর ইট দেয়। অনেকেই এই কারবারে জড়িত হচ্ছে। বিশেষভাবে যারা নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণের ইচ্ছা করেছে। এ কারবারের একটি লাভজনক দিক এই যে, ইট প্রতি ৫ টাকা হলে ৫০,০০০ টাকায় ১০,০০০ ইট কেনা যাবে। কিন্তু উক্ত পদ্ধতিতে দেড় হাজার বা ততোধিক ইট বেশি পাওয়া যায়। আমি একটি বিল্ডিং তৈরি করব। এখন এই পদ্ধতিতে ইট ক্রয় করা কি বৈধ হবে, না এটা সুদী কারবারের অন্তর্ভুক্ত হবে? দয়া করে জানাবেন।
কিছু শর্ত সাপেক্ষে ঐভাবে অগ্রিম ইট ক্রয় করা জায়েয আছে। শর্তগুলো হল, ১. ইটের পূর্ণ মূল্য চুক্তির সময়ই পরিশোধ করে দেওয়া।
২. ইটের ধরণ ও গুণগত মান নির্ধারণ করা (যেমন, এক নাম্বার ইট)। ৩. ইটের পরিমাণ নির্ধারণ করা। ৪. ইট প্রদানের তারিখ ও তা হস্তান্তরের স্থান নির্ধারণ করা। ৫. বিক্রেতার নিকট পুনরায় ঐ ইট বিক্রি না করা।
উপরোক্ত শর্ত সাপেক্ষে অগ্রিম ইট ক্রয় করলে যদি নগদ লেনদেনের চেয়ে কিছু কম মূল্যে পাওয়া যায় তাতে অসুবিধা নেই। তবে এ ধরনের লেনদেনে মেয়াদান্তে ইটই গ্রহণ করতে হবে। ইট না নিয়ে এর মূল্য নেওয়া যাবে না।
-সহীহ বুখারী, হাদীস : ২২৪০; হেদায়া ৩/৯৫; ফাতাওয়া সিরাজিয়া ১০৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২০৯
আমি একজনকে দশ লক্ষ টাকা ঋণ দিই। সে আমার কাছে...
আমি একজনকে দশ লক্ষ টাকা ঋণ দিই। সে আমার কাছে একটি আম বাগান বন্ধক রেখেছে। বাগানে যে ফল হয় তা সে নিয়ে যায়। আমের সিজনে সে আমাকে দুইটি গাছের আম খাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। আমার জন্য উক্ত গাছ দুইটির আম খাওয়া জায়েয হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাগানের মালিক অনুমতি দিলেও আপনার জন্য ঐ গাছগুলোর ফল গ্রহণ করা বৈধ হবে না। কারণ ঋণদাতার জন্য বন্ধকী বস্ত্ত থেকে উপকৃত হওয়া সুদ। ফাযালা বিন উবাইদ রা. বলেন, যে ঋণ লাভ টেনে আনে তা সুদ।
-আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৫/৩৫০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২১০৭৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২
সাঈদ একটি ইট ভাটার মালিক। আমি তার সাথে এই মর্মে...
সাঈদ একটি ইট ভাটার মালিক। আমি তার সাথে এই মর্মে চুক্তিবদ্ধ হই যে, আমি এখন তাকে দুই লক্ষ টাকা দিব। তিন মাস পর সে আমাকে ২০ হাজার ইট দিবে। কিন্তু সে নির্ধারিত সময় ১০ হাজার ইট দেয় আর বলে যে, ভাটায় এখন অনেক চাপ তাই অবশিষ্ট ইট দিতে পারব না। আমাকে বলেছে, আরো এক মাস অপেক্ষা করতে অথবা বাকি ১ লক্ষ টাকা ফেরত নিতে। আমারও টাকা প্রয়োজন। জানতে চাই, এখন কি আমি ঐ টাকা ফেরত নিতে পারব?
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অবশিষ্ট দশ হাজার ইট না নিয়ে আপনার দেওয়া ১ লক্ষ টাকা ফেরত নিতে পারবেন। এর চেয়ে বেশি নেওয়া জায়েয হবে না।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৩৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১৯৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৯
আমার চাচার এক লক্ষ টাকার প্রয়োজন হলে সে তার এক...
আমার চাচার এক লক্ষ টাকার প্রয়োজন হলে সে তার এক বন্ধুকে বললেন, আমার ৫ শতাংশ জমি তোমার কাছে এক লক্ষ টাকায় বিক্রি করলাম। এক মাস পর তা আমি সাড়ে সাত হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনে নিব। সে এতে রাজি হয়ে এক লক্ষ টাকা দিয়ে দেয়। তবে এখানে কোনো দলিল রেজিস্ট্রি হয়নি। ঐ জমির দখলও বুঝিয়ে দেয়নি; বরং তা চাচার কাছেই আছে। তিনিই তা ভোগ করছেন। আর বাস্তবে ঐ জমির মূল্য এক লক্ষ টাকা নয়; বরং নিম্নে দশ লক্ষ টাকা। এ অবস্থায় তাদের এ বেচাকেনা কি বৈধ হয়েছে?
প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি নাজায়েয ও সুদী কারবারের অন্তর্ভুক্ত। কারণ এক্ষেত্রে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের কথা বলা হলেও বাস্তবে উভয় পক্ষের কারো জমি কেনা-বেচা উদ্দেশ্য নয়; বরং এখানে ঋণ দেওয়া নেওয়া করে মেয়াদান্তে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণই মূল উদ্দেশ্য। এ কারণেই এ ক্ষেত্রে জমির বাস্তব দাম নির্ধারণ করা হয়নি এবং জমির রেজিস্ট্রি ও দখল দেওয়া হয়নি।
-আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ২৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬৬
আমি এক ব্যক্তির কাছ থেকে মুদারাবা ভিত্তিতে পাঁচ লক্ষ টাকা...
আমি এক ব্যক্তির কাছ থেকে মুদারাবা ভিত্তিতে পাঁচ লক্ষ টাকা এনে একটি বইয়ের দোকান দিয়েছি। প্রাথমিকভাবে ব্যবসা পরিচিতির জন্য এ্যাডের পিছনে কিছু টাকা খরচ হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ টাকাগুলো ব্যবসার খরচ ধরে ব্যবসার টাকা থেকে নিতে পারব কি না?
ব্যবসা পরিচিতির জন্য সাধারণ বিজ্ঞাপন ব্যবসার খরচ হিসেবে ধর্তব্য। তবে বর্তমানে বহুধরনের বিজ্ঞাপন আছে। এর কোনো সীমারেখা নেই। আর বহুমুখি মিডিয়ারও কোনো শেষ নেই। তাই মুদারাবা ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন নীতি কী হবে তা বিনিয়োগকারীর সাথে আলোচনা করে ঠিক করা কর্তব্য। অবশ্য ব্যবসার স্বার্থে জরুরি প্রয়োজন রয়েছে-এমন দু একটি বিজ্ঞাপন ন্যায্য মূল্যে প্রদান করার ইখতিয়ার মুযারিবের থাকবে। এর বেশি দিতে হলে বিনিয়োগকারীর অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।
-আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৭/১৬৪; রওযাতুত তালিবীন ৫/১৩৪; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দা : ১৪১৪
আমাদের একটি ধান মাড়ানোর মেশিন আছে। আমরা এই শর্তে লোকদের...
আমাদের একটি ধান মাড়ানোর মেশিন আছে। আমরা এই শর্তে লোকদের ধান মাড়ানোর কাজ করে থাকি যে, এর দ্বারা যত মণ ধান মাড়ানো হবে প্রতি মণে এক কেজি করে ধান দিতে হবে।
প্রশ্ন হল এ পদ্ধতিতে আমাদের ধান মাড়ানো জায়েয হচ্ছে কি না? আমাদের এলাকায় ধান মাড়ানোর প্রচলন এমনই। যদি জায়েয না হয় তাহলে জায়েয কোনো পন্থা আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ধান মাড়ানোর প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি জায়েয। তবে মাড়ানো ধান থেকেই পারিশ্রমিক দেওয়ার শর্ত করা যাবে না। বরং এভাবে চুক্তি করবে যে, আমাকে আমন বা ইরি এ জাতীয় নির্দিষ্ট প্রকার ধান নির্ধারিত পরিমাণ দিবে। এভাবে চুক্তি করার পর পরবর্তীতে ঐ মেশিনের মাড়ানো ধান থেকে দিলেও কোনো অসুবিধা নেই।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৪; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩৩০
ক) যদি বিক্রেতা জমি বিক্রির জন্য কোনো দালালের সাথে এভাবে...
ক) যদি বিক্রেতা জমি বিক্রির জন্য কোনো দালালের সাথে এভাবে চুক্তি করে যে, আমি এই জমি পাঁচ লক্ষ টাকায় বিক্রি হলে সন্তুষ্ট অথবা তুমি আমাকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিবে। এরচেয়ে বেশি বিক্রি করতে পারলে তা তুমি পাবে। তাহলে কি এ চুক্তি বৈধ হবে?
খ) বিক্রেতা যদি বলে, আমার জমি এক লক্ষ টাকায় বিক্রি করব এই শর্তের উপর বিক্রয় প্রতিনিধি নির্ধারণ করে তাহলে কি তার জন্য নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করে অতিরিক্ত মূল্য নিজে গ্রহণ করা জায়েয হবে?
গ) আমাদের এলাকায় এক কাঠা জমি বিশ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়, সে হিসেবে বিক্রেতা জমি বিক্রির জন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু সে পঁচিশ হাজার টাকায় বিক্রি করে এবং পাঁচ হাজার টাকা বিক্রেতাকে প্রদান করে অথবা নিজে গ্রহণ করে তাহলে কি বৈধ হবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
ক) এভাবে চুক্তি করা শরীয়তসম্মত নয়। কেননা এতে দালালরা বিক্রয় প্রতিনিধির পারিশ্রমিকনির্ধারিত হয় না। অথচ তাদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে নেওয়া জরুরি। দ্বিতীয়ত এভাবে চুক্তিকরার কারণে প্রতিনিধি জমির স্বাভাবিক মূল্য থেকে অনেক বেশি মূল্যে বিক্রি করার প্রয়াস পায়।ফলে অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতাগণ বেশি মূল্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর মধ্যস্বত্ত্বভোগীর অবাধ সুযোগ ও
হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বাজারকে প্রভাবিত করা শরীয়তসম্মত নয়। তাই এমনচুক্তি করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি হল, প্রতিনিধি নিযুক্ত করার সময়ইতার পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে নেওয়া। যেমন-জমি বিক্রি করে দিলে কাঠা বা শতাংশ প্রতিমধ্যস্থতাকারী কত টাকা পাবে তা শুরুতেই বলে দিবে।-আলমুহীতুল
বুরহানী ১১/২১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৬
খ ও গ) বিক্রয় প্রতিনিধির জন্য জমির মালিক কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করাসমীচীন নয়। আর বাজার মূল্য থেকে অস্বাভাবিক বেশি মূল্যে বিক্রি করা নিষেধ। অবশ্য কোনোপ্রকারের ধোকার আশ্রয় না নিয়ে বাজারের স্বাভাবিক দামের ভিতর থেকেই যদি মালিকের নির্ধারিতমূল্যের চেয়ে কিছু বেশি দামে বিক্রি করে তাহলে তাতে অসুবিধা নেই। এক্ষেত্রে বিক্রিলব্ধ সকলটাকা জমির মালিক পাবে। জমির মালিক কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য থেকে বেশি দামে বিক্রি করলেওপ্রতিনিধির জন্য অতিরিক্তটুকু নেওয়া জায়েয হবে না। বরং পুরোটাই জমির মালিককে দিয়ে দেওয়াজরুরি। অবশ্য মালিক খুশি হয়ে পারিশ্রমিকের বেশি দিলে তা নেওয়া বৈধ হবে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১৫/৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৭৫
আমাদের এলাকায় একটি মসজিদ আছে। সে মসজিদের উন্নয়নের জন্য এক...
আমাদের এলাকায় একটি মসজিদ আছে। সে মসজিদের উন্নয়নের জন্য এক লোক একটি মার্কেট ওয়াকফ করেছে। প্রতি মাসে মার্কেট থেকে ভাড়া বাবদ যে টাকা আসে মসজিদের কাজে ব্যয়ের পরও অনেক টাকা অবশিষ্ট থেকে যায়। যা বর্তমানে এই মসজিদের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে ভবিষ্যতে মসজিদ সম্প্রসারণ করলে তখন প্রয়োজন হতে পারে। মুসল্লিদের যাতায়াত সুবিধার্থে মহল্লায় আরেকটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন মসজিদের নির্মাণের জন্য প্রচুর টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই নতুন মসজিদের আয়ের নির্দিষ্ট কোনো উৎস নেই। তাই পুরাতন মসজিদের জন্য যে ব্যক্তি মার্কেট ওয়াকফ করেছিল সে চাচ্ছে, পুরাতন মসজিদের খরচের পর মার্কেটের আয়ের অবশিষ্টাংশ নতুন মসজিদের নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য দিয়ে দিতে। মসজিদ কমিটিও এতে রাজি আছে। জানার বিষয় হল, উল্লেখিত অবস্থায় নতুন মসজিদের জন্য পুরাতন মসজিদের মার্কেটের আয়ের অবশিষ্ট অংশ নেওয়া বৈধ হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত পুরাতন মসজিদের মার্কেটের আয়ের উদ্ধৃত্ত অংশও নতুন মসজিদের জন্য নিতে পারবে না। প্রতিটি মসজিদ স্বতন্ত্র ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান। তাই একটির সম্পদ অন্যটিতে ব্যয় করা যাবে না। প্রত্যেক মসজিদের পুরো আয় সে মসজিদের খরচের জন্যই গচ্ছিত রাখতে হবে। বর্তমানে তা প্রয়োজন না হলেও পরবর্তীতে মসজিদের নির্মাণ-সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজে প্রয়োজন হতে পারে। তাই সে টাকা সংরক্ষণ করা জরুরি।
আর নতুন মসজিদের নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা করা মহল্লাবাসীর ঈমানী দায়িত্ব। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহ তাআলার কাছে মহা ছওয়াবের অধিকারী হবেন। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে গৃহ নির্মাণ করবেন।
-সহীহ বুখারী ১/৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩৬০; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৩৬
আমাদের এলাকার এক কৃষক থেকে ২০০/- টাকা দরে ৫০ মণ...
আমাদের এলাকার এক কৃষক থেকে ২০০/- টাকা দরে ৫০ মণ পাইজম ধান ক্রয় করেছি। চুক্তিটি এভাবে হয়েছে যে, আমি তাকে নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি প্রতি ছয়মাস পর পর ৫ মণ করে ধান দিবেন। ৫ বছরে সম্পূর্ণ ধান পরিশোধ করবেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম কিস্তি দেওয়ার সময় ৩ মণ ধান দিতে চাচ্ছেন এবং বলছেন, ক্ষেতে ধান কম হয়েছে তাই ৩ মণ ধান দিবেন। আর ২ মণ ধানের (বর্তমান বাজার মূল্য হিসেবে) মূল্য দিয়ে দিবেন। এখন আমার জন্য ঐ দুই মণ ধানের মূল্য নেওয়া জায়েয হবে কি?
না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য ধানের মূল্য নেওয়া জায়েয হবে না। বরং তার থেকে ধানই নিতে হবে। তার কাছে না থাকলে বাজার থেকে খরিদ করেও দিতে পারে।
প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কেউ আগাম খরিদ চুক্তিতে কোনো পণ্য ক্রয় করে তাহলে সে যেন ক্রয়কৃত পণ্যের পরিবর্তে অন্য কোনো বস্ত্ত গ্রহণ না করে।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৪৬৮
বিশিষ্ট সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, যদি আগাম চুক্তিতে কোনো বস্ত্ত ক্রয় কর তাহলে ক্রয়কৃত বস্ত্তটি গ্রহণ কর। অথবা (ঐ বস্ত্ত দিতে সক্ষম না হলে) যে পরিমাণ অর্থ দিয়েছিলে তা নিয়ে নাও।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/১৪
প্রকাশ থাকে যে, প্রশ্নোক্ত লেনদেনে এক মণ ধানের মূল্য ২০০/- টাকা ধরা হয়েছে। এটি বাজার মূল্য থেকে অনেক কম (এমনকি কিস্তির ক্ষেত্রেও), অথচ শরীয়তে বাজারমূল্য থেকে বেশি তারতম্য করা নিষেধ। তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের চুক্তি করতে হলে এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৪৬৮; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/১৪; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১১৯; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৮-২১৯
বি.বাড়িয়া জেলায় আমাদের (মালিক সমিতির) একটি সিএনজি-স্কুটারের গ্যারেজ আছে। সেখান...
বি.বাড়িয়া জেলায় আমাদের (মালিক সমিতির) একটি সিএনজি-স্কুটারের গ্যারেজ আছে। সেখান থেকে সিএনজি-স্কুটার ভাড়া দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ট্রাফিক আইন অনুযায়ী এক জেলার গাড়ি অন্য জেলায় যাওয়ার অনুমতি থাকলেও ট্রাফিকরা অনেক সময় দুর্নীতি করে। বি.বাড়িয়ার সিএনজি কুমিল্লা বা অন্য কোনো জেলায় গেলে ভুয়া কারণ দেখিয়ে জরিমানা করে। জরিমানা না দিলে কখনো মিথ্যা মামলা দিয়ে গাড়ি আটক করে রাখে। এজন্য আমরা মালিক কর্তৃপক্ষ আমাদের সিএনজির সকল ড্রাইভারকে (যারা সিএনজি ভাড়া নিয়ে থাকে তাদেরকে) বি.বাড়িয়া জেলার বাইরে যেতে নিষেধ করে দিয়েছি, কিন্তু ড্রাইভাররা মাঝেমধ্যে জেলার বাইরে চলে যায়, ফলে কখনো কখনো ট্রাফিকদের অন্যায় জরিমানার সম্মুখীন হয়। তখন ড্রাইভাররা বলে যে, আমরা তো ট্রাফিক আইন অমান্য করিনি। তারপরও ট্রাফিকরা জরিমানা করেছে। তাই এর কিছু অংশ আপনাদের মালিক সমিতিরও বহন করতে হবে। জানার বিষয় হল, উক্ত জরিমানা কি আমাদেরকেও বহন করতে হবে?
সিএনজি মালিক কর্তৃপক্ষ যেহেতু পূর্ব থেকেই সকল ড্রাইভারকে জেলার সীমানা অতিক্রম করতে নিষেধ করে দিয়েছে তাই ড্রাইভারদের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা বৈধ নয়। সুতরাং ড্রাইভাররা যদি মালিকদের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে জেলার সীমানা অতিক্রম করে এবং এ কারণে কোনো জরিমানার সম্মুখীন হয় তাহলে তা ড্রাইভারকেই দিতে হবে। এই জরিমানা বা তার অংশ বিশেষ মালিক পক্ষ দিতে বাধ্য থাকবে না।
উল্লেখ্য, বিনা কারণে কারো উপর জরিমানা করা মারাত্মক অন্যায় ও গুনাহর কাজ। সংশ্লিষ্ট সকলের এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি।
-মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দা : ৬০০, ৬০১; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/৩৩৯; মাজমাউল আনহুর ৩/৫২৫; শরহু মুখতাসারিত তাহাভী ৩/৩৯৪
আমার মামাতো ভাই এক সরকারী অফিসে চাকরি করে। অফিসের এক...
আমার মামাতো ভাই এক সরকারী অফিসে চাকরি করে। অফিসের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হল কাদিয়ানী। ধীরে ধীরে ঐ লোকের সাথে মামাতো ভাইয়ের বন্ধুত্ব হয়। একপর্যায়ে সেও কাদিয়ানী হয়ে যায়। (নাউযুবিল্লাহ)
কাদিয়ানী হওয়ার পর সে মসজিদের জন্য একটি জমি ওয়াকফ করেছে। কিন্তু আমাদের ইমাম সাহেব বলছেন, কাদিয়ানীর ওয়াকফ সহীহ হয় না। সুতরাং এ জমির আয় মসজিদে খরচ করা যাবে না। জানতে চাই, আসলেই কি কাদিয়ানীর ওয়াকফ সহীহ হয় না? ইমাম সাহেবের কথা কি ঠিক?
ইমাম সাহেব ঠিক বলেছেন। কোনো মুসলমান কাদিয়ানী মত গ্রহণ করলে তার ঈমান থাকে না। সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর মুরতাদের ওয়াকফ সহীহ নয়। অতএব ঐ ব্যক্তির ওয়াকফ সহীহ হবে না। তবে ওয়াকফ করার পর যদি কাদিয়ানী মতবাদ ত্যাগ করে পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে সেক্ষেত্রে উক্ত ওয়াকফ সহীহ বলে গণ্য হবে।
-কানূনুল আদল ওয়াল ইনসাফ লিল কাযা আলা মুশকিলাতুল আওকাফ পৃ. ৩৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/৭৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮৯; রদ্দুল মুহতার ৪/৪০০, ৩৪২; আহকামুল আওকাফ, মুসতাফা যারকা ৫৬
ক) ...।খ) ফিকহের কিতাবে বহু স্থানে বাইয়ে সরফ শিরোনামে অনেক...
ক) ...।
খ) ফিকহের কিতাবে বহু স্থানে বাইয়ে সরফ শিরোনামে অনেক আলোচনা আছে। যেমন বলা হয়েছে, স্বর্ণের সাথে স্বর্ণের এবং রূপার সাথে রূপার বিনিময় করতে চাইলে বেশকম করা জায়েয নেই। অর্থাৎ ক্রয়বিক্রয় করতে চাইলে সমান সামন ছাড়া অতিরিক্ত দেওয়া হারাম হবে। সেটা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এখান থেকে প্রশ্ন জাগে যে, আমাদের দেশের টাকা যেহেতু কাগজের, স্বর্ণ বা রূপার নয় তাহলে আমরা যে নষ্ট বা ছেঁড়া-ফাটা টাকা নতুন চকচকে টাকা দিয়ে পরিবর্তন করি অথচ ছেঁড়া ২০ টাকা দিলে ভালো ১৫ টাকা দেওয়া হয় অর্থাৎ সমান সমান হওয়ার যে হুকুম কিতাবে বলা হয়েছে তা ঠিক থাকে না। তাহলে আমাদের এ পদ্ধতি কি সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে? বিস্তারিত জানিয়ে সমস্যার সঠিক সমাধান দিলে সম্মানির হুজুরের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব।
ক) আপনার প্রশ্নটি অস্পষ্ট। এতে কোম্পানির কারবারের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করা হয়নি। তাই আপনি মাসআলাটি সরাসরি বা ফোনে জেনে নিন। নতুবা পুনরায় স্পষ্ট করে প্রশ্ন লিখুন।
খ) হ্যাঁ, এক দেশীয় মুদ্রার পরস্পর লেনদেনের ক্ষেত্রেও কমবেশি করা নাজায়েয এবং সুদের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং দেশীয় ছেঁড়া বা পুরাতন টাকা দিয়ে নতুন টাকা কমবেশি করে আদানপ্রদান করা নাজায়েয। কারণ বর্তমানে কাগজি নোটগুলোই আদানপ্রদানের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণ-রূপার মুদ্রার স্থান দখল করে নিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ছেঁড়া-ফাটা নোট যদি চালানো সম্ভব না হয় তাহলে ব্যাংকের মাধ্যমে পরিবর্তন করে নিবে।
-বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/১৬৪-১৬৬; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২২; আততাযাখখুমুন নকদী ফিলফিকহিল ইসলামী ৭৩; মাজাল্লাহ মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী ৩/১৯৬৫
একটি মাল নগদ মূল্যে ক্রয় করলে যে মূল্য নেওয়া হয়...
একটি মাল নগদ মূল্যে ক্রয় করলে যে মূল্য নেওয়া হয় কিস্তিতে তা ক্রয় করলে তার চেয়ে বেশি মূল্য নেওয়া হয়। এরূপ ক্রয়-বিক্রয় শরীয়তসম্মত কি না? জমি, ফ্ল্যাট ইত্যাদি এই পদ্ধতিতে ক্রয়বিক্রয় করা শরীয়তসম্মত হবে কি না?
হ্যাঁ, নগদ মূল্যের তুলনায় কিস্তিতে বিক্রির ক্ষেত্রে কিছুটা বেশি দাম নেওয়া জায়েয আছে। তবে এক্ষেত্রে বাকির মেয়াদ এবং পণ্যের মূল্য চুক্তির সময়ই নির্ধারণ করে নিতে হবে। আর পণ্য নগদে হস্তান্তর করতে হবে। উভয়টি বাকি রাখা যাবে না। এছাড়া কিস্তি আদায়ে বিলম্ব হলে চুক্তির সময় যে মূল্য ধার্য করা হয়েছিল তার চেয়ে দাম বাড়িয়ে নেওয়া জায়েয হবে না।
উল্লেখ্য যে, জমি এবং তৈরি ফ্ল্যাটও কিস্তিতে কেনা জায়েয। তবে এগুলোর ক্ষেত্রে অনেক সময় বিক্রেতার বা ক্রেতার পক্ষ থেকে শরীয়ত পরিপন্থী শর্তাবলিও আরোপ করা হয়ে থাকে। তাই এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় করতে হলে বিজ্ঞ আলেম থেকে এর শর্তাবলি সুনির্দিষ্টভাবে জেনে নেওয়া আবশ্যক।
হযরত শুবা ইবনুল হাজ্জাজ রাহ. (মৃত্যু : ১৬০ হি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাকাম ইবনে উতাইবা এবং হাম্মাদ ইবনে আবু সুলাইমকে এক ক্রেতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, সে অন্যের থেকে পণ্য ক্রয় করে আর বিক্রেতা তাকে বলে যে, নগদ মূল্যে কিনলে এত টাকা আর বাকিতে কিনলে এত টাকা। (এতে কোনো অসুবিধা আছে কি?) তারা উভয়ে বললেন, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে যদি (মজলিস ত্যাগ করার পূর্বে) কোনো একটি (মূল্য) চূড়ান্ত করে নেয় তাহলে এতে কোনো অসুবিধা নেই।
দেখুন : মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২০৮৩৬; জামে তিরমিযী ১/১৪৭; মাবসূত ১৩/৮; রদ্দুল মুহতার ৫/১৪২; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/৭-৮
জনৈক কিষাণ এক মাড়াইকলের মালিককে বলল যে, তুমি আমার এই...
জনৈক কিষাণ এক মাড়াইকলের মালিককে বলল যে, তুমি আমার এই ধানগুলো মাড়িয়ে দিবে। তোমাকে মাড়াইকৃত ধান থেকে এক মণ ধান দিব। জানার বিষয় হল, এভাবে কারবার সহীহ হবে কি না। আর যদি সহীহ না হয় তাহলে এ কারবার করার কোনো সহীহ পদ্ধতি আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাড়াইকৃত ধান থেকেই পারিশ্রমিক দেওয়ার চুক্তি করা সহীহ হয়নি। কারণ এভাবে মজুরি নির্ধারণের ব্যাপারে হাদীস শরীফে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদীসে গম পিষার বিনিময়ে পিষণকারীকে ঐ আটা থেকে এক কাফীয প্রদানের শর্ত করা থেকে বারণ করেছেন। (সুনানে বায়হাকী ৫/৩৩৯; শরহু মুশকিলুল আছার ২/১৮৬
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত হাসান বসরী রাহ. কোনো তাতীকে কাপড় বুনার জন্য এ শর্তে সুতা দেওয়া অপছন্দ করতেন যে, সে এর দ্বারা কাপড় বুনে তৈরি কাপড়ের এক তৃতীয়াংশ বা এক চতুর্থাংশ নিবে (আর বাকিটা মালিক নিবে)। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১১/২০০, হাদীস : ২১৯৭৫)
এক্ষেত্রে সহীহ তরীকায় কারবার করতে চাইলে মাড়াইকৃত ধান থেকেই দিতে হবে এমন শর্ত করা যাবে না; বরং নির্ধারিত মানের নির্দিষ্ট ধান দেওয়ার চুক্তি করবে। এরপর ধানের মালিক যে কোনো ধান দিতে পারবে। এমনকি শর্ত অনুযায়ী হলে মাড়াইকৃত ধান থেকেও তা দিতে পারবে।
-সুনানে দারাকুতনী ৩/৪৭, হাদীস : ১৯৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৭; মাবসূত ১৬/৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/২৬, ১১৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৩
আমি দুই লক্ষ টাকা দিয়ে কিছু জায়গা ক্রয় করেছি। এক...
আমি দুই লক্ষ টাকা দিয়ে কিছু জায়গা ক্রয় করেছি। এক লক্ষ টাকা নগদ দিয়েছি। আর অবশিষ্ট এক লক্ষ টাকা এক বছর পর দেওয়ার চুক্তি হয়েছে। ছয় মাস পর বিক্রেতার টাকার প্রয়োজন হলে সে আমাকে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করতে বলে। আমি বললাম, যদি বিশ হাজার টাকা কম নেন তাহলে অবশিষ্ট টাকা এখনই পরিশোধ করে দিব। নতুবা এক বছর পরই টাকা নিতে হবে। লোকটি আমার কথায় রাজি হয়ে গেল। জানার বিষয় হল, আমার জন্য এ বিশ হাজার টাকা কম দেওয়া জায়েয হবে কি?
না, এভাবে সময়ের আগে দেওয়ার শর্তে নির্ধারিত মূল্য থেকে কম দেওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে না। হযরত কায়েস রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.কে জিজ্ঞেস করলাম যে, আমরা ব্যবসার পণ্য নিয়ে বসরা ও শামে যাই। এগুলো আমরা বাকিতে বিক্রি করি। অতপর আমরা সেখান থেকে চলে আসার সময় হলে ক্রেতারা বলে, বিক্রিত মূল্য থেকে কিছু টাকা কম নিন তাহলে অবশিষ্ট টাকা আমরা এখনই আদায় করে দিব। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
একথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. তিনবার আমার বাহু চেপে ধরে মানুষকে উদ্দেশ্য করে বললেন, দেখ, এই ব্যক্তি আমাকে সুদ গ্রহণের ফতোয়া দিতে আদেশ করছে।
তখন আমি বললাম, না। আমি তো এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে শরঈ হুকুম জানতে চাচ্ছি। তখন তিনি বললেন, না। এ ধরনের কারবার বৈধ হবে না।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৪৩৬৮; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৭; হেদায়া-ফাতহুল কাদীর ৭/৩৯৬; আলইসতিযকার ৫/৫০০; আলমুগনী ৭/২১; বুহুছ ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ১/২৫
আমাদের এলাকায় ব্যাপক রেওয়াজ আছে যে, বিত্তবান লোকেরা দরিদ্র শ্রেণীর...
আমাদের এলাকায় ব্যাপক রেওয়াজ আছে যে, বিত্তবান লোকেরা দরিদ্র শ্রেণীর লোকদেরকে গরু-ছাগল পোষার জন্য ক্রয় করে দেয়। দরিদ্র লোকেরা গরু-ছাগল পালে আর বছর দেড়েক পর তা বিক্রি করে। বিক্রিলব্ধ টাকা থেকে ক্রয়মূল্য বাদ দিয়ে লাভটুকু উভয়ে সমানভাবে ভাগ করে নেয়। প্রশ্ন হল, এ ধরনের চুক্তি করা সহীহ কি না। যদি সহীহ না হয় তাহলে এ ধরনের কারবার করার কোনো সহীহ পন্থা আছে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।
গরু-ছাগল পালনের প্রশ্নোল্লেখিত পদ্ধতিটি শরীয়তের ইজারা-নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এক্ষেত্রে সহীহ তরীকায় চুক্তি করতে চাইলে নিম্নের পন্থাটি অবলম্বন করা যেতে পারে। গরুর মালিক গরু পালনকারীর সঙ্গে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে চুক্তি করবে। গরুতে অংশিদারিত্বের চুক্তি করবে না। অর্থাৎ গরুর পূর্ণ মালিকানা গরুর মালিকেরই থাকবে। গরুর সব ধরনের খরচও তাকে বহন করতে হবে। গরু বিক্রি করা হলে এর বিক্রিলব্ধ পুরো টাকা সেই পাবে। এতে গরু পালনকারীর কোনো অংশ থাকবে না। সে গরুর দেখাশুনা ও লালন-পালনের জন্য শুধু নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৩৪৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৩৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৫; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ২/৫৪২
আমাদের এলাকায় জমি বন্ধকের দুটি প্রচলন রয়েছে : এক. বন্ধকদাতা...
আমাদের এলাকায় জমি বন্ধকের দুটি প্রচলন রয়েছে : এক. বন্ধকদাতা বন্ধক গ্রহীতার নিকট থেকে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা গ্রহণ করে আর বন্ধকগ্রহীতা জমি ভোগ করতে থাকে। যখন টাকা ফিরিয়ে দেয় তখন জমি
হস্তান্তর করে।
দুই. এটিও উপরের মতোই। তবে পার্থক্য হল, এক্ষেত্রে যখন টাকা ফিরিয়ে দেয় তখন বছর হিসাব করে বন্ধকগ্রহীতা কিছু টাকা কম নেয়। যেমন-কেউ এক কাঠা জমি বন্ধক নিল দশ হাজার টাকায় এবং সে দু বছর এ জমি ভোগ করে। দু বছর পর টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সময় পাঁচশ টাকা করে এক হাজার টাকা কম নেয়। এ সুরতগুলো সহীহ কি না? উত্তম পন্থা কোনটি জানিয়ে বাধিত করবেন।
ঋণদাতার জন্য বন্ধকি জমি ভোগ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটি মূলত ঋণ প্রদান করে বিনিময়ে সুদ গ্রহণেরই একটি প্রকার। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত প্রথম পদ্ধতিটি নাজায়েয হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট। আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি মূলত ঋণ প্রদান করে বন্ধকি জমি ভোগ করার একটি অবৈধ ছুতা। কারণ এক্ষেত্রে আলাদাভাবে ইজারা চুক্তি করা হয় না; বরং জমি ভোগ করার শর্তেই ঋণ দেওয়া হয় এবং ঋণের সুবিধা পাওয়ার কারণেই জমির মালিক নামমাত্র মূল্যে ভাড়া হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত দুটি কারবারই নাজায়েয।
প্রকাশ থাকে যে, উক্ত কারবার বৈধভাবে করতে চাইলে শুরু থেকেই বন্ধকি চুক্তি না করে ভাড়া বা লীজ চুক্তি করবে। যার বিবরণ হল, জমির মালিক জমি ভাড়া দিবে। তার যত টাকা প্রয়োজন সেজন্য যত বছর ভাড়া দিতে হয় একত্রে তত বছরের জন্য ভাড়া দিবে। যেমন-এক বিঘা জমির বার্ষিক ভাড়া ৫ হাজার টাকা। মালিকের ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। তাহলে সে ৪ বছরের জন্য জমি ভাড়া দিবে। এক্ষেত্রে অগ্রিম ২০ হাজার টাকা নিয়ে নিবে। এক্ষেত্রে জমির ভাড়া স্থানীয় ভাড়া থেকে সামান্য কম বেশিও হতে পারে। এরপর ভাড়ার মেয়াদ শেষ হলে অর্থ দাতা জমি ফেরত দিবে, কিন্তু প্রদেয় টাকা ফেরত পাবে না। অবশ্য সময়ের আগে ফেরত দিলে যে কয়দিন ভাড়ায় ছিল সে পরিমাণ ভাড়া কর্তন করে অবশিষ্ট টাকা ভাড়াটিয়া ফেরত পাবে।
-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/২৪৪-২৪৫; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৩/১৪৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; শরহুল মাজাল্লা, খালেদ আতাসী ৩/১৯৬-১৯৭; ইলাউস সুনান ১৮/৬৪
আমার ছেলে সৌদী আরব চাকুরি করে। সে মোটা অংকের টাকা...
আমার ছেলে সৌদী আরব চাকুরি করে। সে মোটা অংকের টাকা পাঠিয়েছে। তা অনেক দিন যাবত আমার কাছে পড়ে আছে। তা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার মতো আমার শারীরিক অবস্থা নেই। আমার চাচাতো ভাই চাকুরি করত। হঠাৎ কোনো কারণে তার চাকুরি চলে গেলে সে আমাকে বলল, ভাই, তোমার জমা টাকা দিয়ে আমি কাপড়ের ব্যবসা করি। যা লাভ হবে তোমার অর্ধেক আমার অর্ধেক।
প্রশ্ন হল, তার প্রস্তাবিত চুক্তিটি কি শরীয়তসম্মত?
যদি আপনার ছেলের অনুমতি থাকে অথবা ঐ টাকার মালিকানা আপনার হয়ে থাকে তবে আপনার চাচাতো ভাইয়ের প্রস্তাবমতো আপনি ব্যবসা করতে পারবেন। এক পক্ষের শুধু পুঁজি, আর অপর পক্ষের শ্রম এ ধরনের কারবারকে শরীয়তের ভাষায় মুযারাবা কারবার বলা হয়।
মুযারাবা কারবারের মৌলিক নিয়ম-কানুন নিম্নে উল্লেখ করা হল:
১) পুঁজিদাতা এবং ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রত্যেকের লাভ শতকরা হারে সুনির্ধারিত হতে হবে। যেমন প্রশ্নে আপনারা অর্ধাঅর্ধি হারে ঠিক করেছেন। উভয়ের সন্তুষ্টিতে কম-বেশিও করা যায়। যেমন, এক পক্ষের ৬০%, অপর পক্ষের ৪০% ইত্যাদি। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৫১৩২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫১৪; হাশিয়াতুশ শীলবী ৫/৫১৮)
২) পুঁজিদাতা এবং ব্যবসা পরিচালনাকারী কারো জন্য লাভ বণ্টনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট (যেমন ১০ হাজার টাকা, ১৫ হাজার টাকা) অংকের টাকা নির্ধারণ করা যাবে না। এমনিভাবে লাভ হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় লাভ দিতে হবে এমন চুক্তিও করা যাবে না।-তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫১৫
৩) ব্যবসায় লোকসান হলে তা প্রথমে লাভ থেকে এরপর পুঁজি থেকে আদায় করা হবে। ব্যবসায়ী পুঁজির দায়ভার গ্রহন করবে না।
প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত কাতাদাহ রাহ. বলেন, মুযারাবা কারবারের লাভ্যাংশ চুক্তি অনুযায়ী বণ্টিত হবে এবং (লাভ না হলে) অথবা লাভের তুলনায় খরচ বেশি হলে) লোকসান পুঁজি থেকে ধর্তব্য হবে। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৫০৮১)
৪) তবে ব্যবসা পরিচালনাকারীর অবহেলা বা ত্রুটির কারণে ব্যবসা লোকসান হলে এর দায় ব্যবসায়ীর একার উপর বর্তাবে। এক্ষেত্রে পুঁজিদাতা কিছু দিতে বাধ্য না।
হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত। তিনি এক ব্যক্তিকে মুযারাবার ভিত্তিতে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে পুঁজি প্রদান করেন। এবং তার উপর কিছু শর্তারোপ করেন। .. এবং তাকে বলেন যে, এই শর্তগুলো অমান্য করলে এর দায় তুমি বহন করবে। (সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস : ৬/১১১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫৩৪
উল্লেখ্য, উপরে শুধু লাভ বণ্টন এবং লোকসান সংক্রান্ত মৌলিক নীতিমালা আলোচনা করা হল। মুযারাবা ব্যবসা পরিচালনার জন্য আরো বহু মাসআলা রয়েছে সেগুলো কোনো বিজ্ঞ আলিম থেকে জেনে নিবেন।
-সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৬/১১১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১০, ১৬১, ১৫২; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৩৫৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫১৪-৫১৮; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৩-২৬৪
আমাদের একটি সমিতি আছে। কিছুদিন পূর্বে এক লোক একটি গরু...
আমাদের একটি সমিতি আছে। কিছুদিন পূর্বে এক লোক একটি গরু ক্রয়ের জন্য আমাদের সমিতির কাছ থেকে দশ হাজার টাকা ঋণ চাইলে সমিতির পরিচালক সাহেব তাকে বলেন যে, আমরা আপনাকে ঋণ দিতে পারব না। তবে আপনার সাথে শরীকানায় গরুটি কিনতে পারি। পরে আমাদের অংশটা আপনার কাছে বাকিতে বিক্রি করে দিব। তবে এখনই বিক্রির চুক্তি নয় কেবল ওয়াদা করছি। এতে ঐ লোক রাজি হয়ে গেল। ফলে গরুটি শরীকানায় ক্রয় করে কিছুদিন পর আমাদের অংশটা কিছু লাভে ঐ লোকের কাছে বিক্রি করে দেই। জানার বিষয় হল, উল্লেখিত অবস্থায় আমাদের কারবারটি সহীহ হয়েছে কি?
হ্যাঁ, প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনাদের ঐ কারবারটি বৈধ হয়েছে। কেননা, যৌথভাবে কোনো পশু/বস্ত্ত ক্রয় করে হস্তগত হওয়ার পর তা শরীকের কাছে বিক্রি করা জায়েয আছে।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৬৬; বুহুছ ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ১/২৫১; আলমাবসূত, সারাখসী ১১/১৫১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৭/৪৫৮; ফাতহুল কাদীর ৫/৩৭৮
বর্তমান বিশ্বের প্রায় দেশে দেখা যায়, অধিকাংশ বিত্তবান ব্যক্তিরা নিজেদের...
বর্তমান বিশ্বের প্রায় দেশে দেখা যায়, অধিকাংশ বিত্তবান ব্যক্তিরা নিজেদের ছোট ছোট ছেলেমেয়ের নামে ব্যাংক-একাউন্ট খুলে টাকা জমা রাখে। যেন তারা বড় হয়ে ঐ টাকা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, জমাকৃত টাকা যদি নেসাব পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে তাদের উপর সদকাযে ফিতর ওয়াজিব হবে কি না? আর ওয়াজিব হলে কার মাল থেকে তা আদায় করতে হবে? পিতা নিজের মাল থেকে আদায় করবে, না বাচ্চার মাল থেকে?
নেসাবের মালিক নাবালেগ ছেলে-মেয়ের উপর সদকাতুল ফিতর তার সম্পদ থেকে আদায় করাই নিয়ম। তাই অভিভাবক বাচ্চার সম্পদ থেকে ফিতরা আদায় করে দিবে। তবে পিতা ইচ্ছা করলে নিজ সম্পদ থেকেও তা আদায় করে দিতে পারেন।
-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/৬৩; সহীহ বুখারী ১/২০৪; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৯৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৪৩৯-৪৪০; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১০৪; হেদায়া ২/২২১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪২৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯২; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩১২; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৪/২৮৩
এক প্রতিবেশী আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ চেয়েছে। তার...
এক প্রতিবেশী আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ চেয়েছে। তার একটি চার তলা বাড়ি আছে, যার ছাদ ও দেয়ালের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। তবে বাসোপযোগী হতে আরও কাজ বাকি আছে। আমি তাকে বলেছি, তোমার নির্মাণাধীন ভবনের একটি ফ্ল্যাট পাঁচ বছরের জন্য ৫ লক্ষ টাকায় ভাড়া দাও। এতে সে সম্মত হয়েছে। এখন আমি কি এই ফ্ল্যাটটি অন্য কারো কাছে ভাড়া দিতে পারব? আমি যে মূল্যে ভাড়া নিয়েছি তার চেয়ে বেশি মূল্যে ভাড়া দিতে পারব কি?
ভবনের নির্মাণাধীন ঐ ফ্ল্যাটটি আপনি নিজে যেমন ব্যবহার করতে পারবেন তেমনি মালিকের অনুমতি থাকলে অন্য কারো কাছে ভাড়াও দিতে পারবেন। তবে আপনি যে মূল্যে ভাড়া নিয়েছেন তার চেয়ে বেশিতে তখনই ভাড়া দিতে পারবেন যদি আপনি ফ্ল্যাটটিতে কোনো সংস্কার বা সংযোজনমূলক কাজ করেন কিংবা তা মেরামত করেন। যেমন দরজা, জানালা লাগানো, দেয়ালের প্লাস্টার বা ডেকোরেশন ইত্যাদি। আশআছ রাহ. বলেন, ‘আমি শাবী ও হাকামকে জিজ্ঞাসা করলাম, এক ব্যক্তি একটি উট ভাড়া নিয়ে যে মূল্যে ভাড়া নিয়েছে তার চেয়ে বেশি মূল্যে অন্যত্র ভাড়া দেয়-এটা কি বৈধ? জবাবে তারা বললেন, সে যদি তাতে নিজে শ্রম দেয় বা কোনো মজুর রাখে তাহলে অসুবিধা নেই।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৩৭৬৩)
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আমের রাহ. ভাড়া মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে অন্যত্র ভাড়া প্রদানকে অপছন্দ করতেন। তবে তাতে কোনো সংস্কার করা হলে অপছন্দ করতেন না।’ (প্রাগুক্ত, হাদীস : ২৩৭৬৮)
ভাড়া নেওয়ার পর ভবনটিতে কোনো কাজ না করে অধিক মূল্যে ভাড়া দিলে যা বাড়তি নেওয়া হল তা সদকা করে দিতে হবে। ইবরাহীম নাখাঈ রাহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, যে মূল্যে ভাড়া নেওয়া হয়েছে তার চেয়ে অতিরিক্ত সুদ। (প্রাগুক্ত, হাদীস : ২৩৭৫৪)
ব্যাংকে আমার ১০ লক্ষ টাকা ছিল। এগুলো দিয়ে একটি জমি...
ব্যাংকে আমার ১০ লক্ষ টাকা ছিল। এগুলো দিয়ে একটি জমি কিনেছিলাম। কিছুদিন পর জমিটি ৫ বছরের মেয়াদে বাকিতে ১৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছি, যা বর্তমান বাজারদরের চেয়ে বেশি। এই লেনদেন সম্পর্কে জানতে পেরে একজন বলল যে, এটি বৈধ হয়নি। কেননা তা সুদি কারবারের অন্তর্ভুক্ত। এখন আমি জানতে চাই, ঐ ব্যক্তির কথা কি সঠিক?
কারবারটি বৈধ হয়েছে। বাকি লেনদেনে নগদ মূল্যের চেয়ে কিছু বেশি দাম রাখা জায়েয। তবে মেয়াদ ও মূল্য নির্ধারিত হতে হবে। প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী উক্ত ক্রয়-বিক্রয়ের সময় যেহেতু জমির মূল্য ও বাকির মেয়াদ চূড়ান্ত করা হয়েছে তাই লেনদেনটি জায়েয হয়েছে। এটি সুদি কারবার নয়। হযরত শুবা ইবনুল হাজ্জাজ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাকাম ইবনে ওতাইবা এবং হাম্মাদ রাহ.কে জিজ্ঞাসা করেছি, একজন ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রয়ের সময় ক্রেতাকে বলে-নগদ মূল্যে কিনলে এত টাকা আর বাকিতে কিনলে এত টাকা (বেশি)-এটা কি বৈধ? তারা উভয়ে বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে যদি মজলিস ত্যাগ করার আগে কোনো একটিকে চূড়ান্ত করে নেয় তাহলে এতে কোনো অসুবিধা নেই।
মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১০/৫৯৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৪৪০, ৫/১৪২; আলবাহরুর রায়েক ৬/১১৪; ফাতহুল কাদীর ৬/১৩৩; বুহুছ ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআছিরা ১/১২
আমি প্রতি সপ্তাহে শহর থেকে বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী যেমন জগ,...
আমি প্রতি সপ্তাহে শহর থেকে বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী যেমন জগ, বদনা, বাটি ইত্যাদি কিনে গ্রামে নিয়ে যাই এবং কয়েকজন ছেলেকে দিয়ে তা মানুষের বাড়িতে ফেরি করে বিক্রি করতে পাঠাই। তাদেরকে মাল বুঝিয়ে দেওয়ার সময় পণ্যের দামও নির্দিষ্ট করে দেই। তাদের সাথে এ মর্মে চুক্তি হয় যে, নির্দিষ্ট দামের অতিরিক্ত যত টাকায় বিক্রি করতে পারবে তা তাদের। এ চুক্তিতে তারা সম্মত থাকে। জানার বিষয় হল, এভাবে চুক্তি করা বৈধ হয়েছে কি না?
এভাবে চুক্তি করা বৈধ নয়। কারণ এক্ষেত্রে পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট হয় না। অথচ চুক্তি সহীহ হওয়ার জন্য তা নির্দিষ্ট হওয়া জরুরি। বিশিষ্ট সাহাবী আবু সায়ীদ খুদরী রা. বলেন, ‘যখন তুমি কাউকে মজুর হিসেবে নিয়োগ কর তখন তার মজুরি নির্দিষ্ট করে দাও।’ (সুনানে নাসাঈ ৭/৩১-৩২)
এক্ষেত্রে সহীহ পদ্ধতিতে কারবার করতে চাইলে বিক্রয় মূল্যের কত অংশ বিক্রেতাগণ কমিশন হিসেবে পাবে তা সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। যেমন এভাবে বলবে যে, পণ্যটি যত টাকা বিক্রি হবে তুমি এর ৫% (বা অন্য কোনো হার) পাবে। এক্ষেত্রে একটি সর্বনিম্ন মূল্যও ঠিক করে দিতে পারবে।
আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২১৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৫১; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়াহ, মাদ্দাহ : ৪৫০; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৩
আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি, যার সুদের কারবার ছাড়াও আরো কিছু...
আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি, যার সুদের কারবার ছাড়াও আরো কিছু ব্যবসা আছে সে যখন মসজিদ বা মাদরাসার উন্নয়নকল্পে দান করে তখন বলে এটা আমার সুদের টাকা না। এই ব্যক্তির টাকা মসজিদ বা মাদরাসার কাজে ব্যবহার করা যাবে কি না?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু লোকটির সুদের কারবার ছাড়াও অন্যান্য হালাল ব্যবসা আছে এবং সে মসজিদ-মাদরাসায় দান করার সময় তা সুদের টাকা নয়-বলে উল্লেখ করছে তাই এক্ষেত্রে তার অনুদান গ্রহণ করা এবং তা মসজিদ-মাদরাসার কাজে ব্যবহার করা জায়েয হবে। আর মসজিদ-মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এবং এলাকাবাসীর দ্বীনী দায়িত্ব হল, লোকটিকে সুদের ভয়াবহতা বোঝানো এবং সুদী কারবার থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা।
সহীহ বুখারী ১/১৮৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৮
আমাদের বাসায় রংয়ের কাজ করার জন্য দুজন লোককে দৈনিক ১০০/-টাকা...
আমাদের বাসায় রংয়ের কাজ করার জন্য দুজন লোককে দৈনিক ১০০/-টাকা চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুদিন কাজ করার পর তৃতীয় দিনও তারা কাজ করার জন্য বাসায় এসেছিল। কিন্তু ঐ দিন বৃষ্টির কারণে কোনো কাজ করতে পারেনি। তারা বলছে, ঐ দিনের পারিশ্রমিকও তাদেরকে দিতে হবে। একজন বলছে, পুরো না দিলে অর্ধেক দিতে হবে। জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদেরকে ঐ দিনের মজুরি দেওয়া কি জরুরি?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী বৃষ্টির কারণে তারা যেহেতু কাজ শুরুই করতে পারেনি তাই তারা ঐ দিনের মজুরি পাবে না। সুতরাং তারা পারিশ্রমিক (পূর্ণ বা আংশিক) দাবি করলেও তা দেওয়া জরুরি নয়।
-আলবাহরুর রায়েক ৮/২৯; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৪৮৭, মাদ্দাহ : ৪২৫
আমাদের মসজিদের একটি পুকুর আছে, ঐ পুকুরে মাছ চাষ করা...
আমাদের মসজিদের একটি পুকুর আছে, ঐ পুকুরে মাছ চাষ করা হয়েছে। তা পুকুরে থাকা অবস্থায় ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। একদিনেই সকল আয়োজন সম্পন্ন করে পুকুরের সব মাছ ধরে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে ফেলেছে। পরবর্তীতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানতে পারে যে, উক্ত বেচা-কেনা সহীহ হয়নি। জানার বিষয় হল, ওই বিশ হাজার টাকা কি মসজিদের কাজে ব্যবহার করা যাবে?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী মসজিদ কর্তৃপক্ষের জন্য ঐভাবে পুকুরের মাছ বিক্রি করা জায়েয হয়নি। তাদের কর্তব্য হল এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে সকল লেনদেনের ক্ষেত্রে মাসআলা জেনে সতর্কতার সাথে আমল করা। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কারবারটি যেহেতু নাজায়েয হয়েছে এখন ঐ চুক্তি ধর্তব্য হবে না। অতএব যে পরিমাণ মাছ পাওয়া গেছে তার পাইকারি বাজার-মূল্য মসজিদ কর্তৃপক্ষ পাবে। তাই পুকুর থেকে যে পরিমাণ মাছ ধরা হয়েছে ঐ পরিমাণ মাছের ঐ দিনের বাজারদর নির্ধারণ করবে। বাজার দর যদি ২০ হাজার টাকা হয়ে যায় তবে তো ঠিক আছে। আর যদি কম হয় তাহলে বাজার দর হিসেবে যত টাকা হয় তত টাকাই মসজিদের পাওনা, অতিরিক্ত টাকা ক্রেতা মাছ ব্যবসায়ীদেরকে ফেরত দিতে হবে। আর বাজার দর যদি ২০ হাজার টাকা থেকে বেশি হয় সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা মসজিদের পাওনা। মোটকথা, যে পরিমাণ মাছ পাওয়া গেছে তার ঐ দিনের বাজার দরই মসজিদের প্রাপ্য। সে অনুযায়ী লেনদেন নিষ্পত্তি করতে হবে। এবং এভাবে গৃহীত টাকা মসজিদের কাজে ব্যবহার করা যাবে।
-ফাতহুল কাদীর ৬/৯২, ৯৮, ৪৯; জামিউল ফুছুলাইন ২/৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/১১৩; রদ্দুল মুহতার ৫/৯২, ৭১
জনৈক ওয়ায়েযকে হাদীসেরما كنت تقول هذا الرجلঅর্থাৎ এ ব্যক্তি সম্পর্কে...
জনৈক ওয়ায়েযকে হাদীসের
ما كنت تقول هذا الرجل
অর্থাৎ এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার বিশ্বাস কী ছিল?-এ অংশের ব্যাখ্যায় বলতে শুনেছি যে, ‘কবরে মৃত ব্যক্তিকে সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, ইনি কে? তুমি কি তাকে চিন?’ জানতে চাই এ ব্যাখ্যা কি সঠিক?
কবরে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে যখন জিজ্ঞাসা করা হবে তখন তাঁকে দেখানোর কথা কুরআন-হাদীসে উল্লেখ নেই। তাই হাদীস বিশারদগণ দেখানোর কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
-মাজমুআতুর রাসায়িলিল মুনীরিয়া, ইবনে হাজার আসকালানী ৪/৪১; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৬/২৪১; শরহুস সুদূর, ইমাম সুয়ূতী ১৪৫; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪/১৫৩; মিরকাত ১/১৯৯
সিএনজি অটো রিকশার ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে সরকার এবং চালকপক্ষের মাঝে...
সিএনজি অটো রিকশার ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে সরকার এবং চালকপক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব চলছে। সরকার তাদের জমা কমিয়ে মিটারের কিলোমিটার প্রতি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে মিটারে চলতে বাধ্য করছে। কিন্তু অনেক চালক আইন অমান্য করে পূর্বের ন্যায় চুক্তিতে চালাচ্ছে। অপর দিকে অনেক যাত্রী আইনের কারণে তাদেকে মিটারে যেতে বাধ্য করছে। অন্যথায় পুলিশের নিকট ধরিয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমার জানার বিষয় হল :
ক) সরকারের জন্য উক্ত আইন করা ঠিক হয়েছে কি না?
খ) ঠিক হয়ে থাকলে চালকদের জন্য আইন অমান্য করে টাকা কামানো বৈধ কি না?
গ) চালকের অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও যাত্রীদের জন্য সরকারি নিয়মে ভাড়া পরিশোধ করা ঠিক কি না?
ভাড়ায় চালিত সিএনজি অটো রিক্সাগুলো নির্ধারিত মিটারের ভাড়ায় চালানোর শর্তেই শুল্ক ইত্যাদি রেয়ায়েত দিয়ে আমদানি ও বাজারজাত করার সুযোগ হয় এবং এ শর্তেই তাদেরকে রুট পারমিট দেওয়া হয়। মালিকরা উক্ত শর্ত মেনেই তা ক্রয় করে থাকে এবং চালকগণও সে শর্ত মেনে নিয়েই রাস্তায় গাড়ি চালায়। তাই সিএনজি মালিক ও চালকদের জন্য সরকারের এ সিদ্ধান্ত মানা জরুরি। তাদের জন্য মিটার থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা ঠিক হবে না। আর যাত্রীদের জন্য মিটার অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করা বৈধ। এক্ষেত্রে চালকদের অসন্তুষ্টি গ্রহণযোগ্য নয়; বরং চালক-মালিকের জন্য যাত্রীদের সাথে অসন্তোষ প্রকাশ করা বা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করা অন্যায়।
-সূরা মায়িদা : ১০; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/২৯৫; সহীহ মুসলিম ২/১২৫; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৩/৩২৩; আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/১৮৫
আগে আমার কাপড়ের ব্যবসা ছিল। বর্তমানে নেই। পুরোনা অভিজ্ঞতার কারণে...
আগে আমার কাপড়ের ব্যবসা ছিল। বর্তমানে নেই। পুরোনা অভিজ্ঞতার কারণে আমার চাচাতো ভাই আমাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বলল যে, চট্টগ্রামে কাপড়ের ব্যবসা কর, যা লাভ হবে তার ৩০% তোমার আর ৭০% আমার। আমি সেখানে গিয়ে একটি দোকান নেই এবং এক মাস পর্যন্ত ব্যবসা করি। এতে সামান্য কিছু লাভ হয়েছে। আর এই লাভ আমাদের সেখানে থাকা-খাওয়া, দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন ইত্যাদির সমান। অতিরিক্ত আর কোনো লাভ হয়নি। আমি ঢাকায় এসে চাচাতো ভাইকে বললাম, ব্যবসায় লাভ হয়নি। কিন্তু আমি তো একমাস শ্রম দিয়েছি আমাকে কিছু মজুরী দাও। সে বলল, লাভ না হলে কিভাবে দিব? শরীয়তের দৃষ্টিতে সে আমাকে মজুরি দিতে বাধ্য কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু দেওয়া তার জন্য জরুরি নয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে আপনাদের কারবারটি মুদারাবা কারবার হয়েছে, অর্থাৎ এক পক্ষের মূলধন, অপর পক্ষের শ্রম। এক্ষেত্রে শরীয়তের নীতিমালা হল, ব্যবসা সংক্রান্ত খরচ বাদ দেওয়ার পর কোনো লাভ থাকলে তা পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী উভয় পক্ষের মাঝে বণ্টন হবে। কিন্তু যদি লাভ না হয় তাহলে শ্রমদাতা পারিশ্রমিক হিসেবে কিছুই পাবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৫২; দুরারুল হুক্কাম ৩/৪৫৮; আলমাআইরুশ শরইয়্যাহ ২৪১
আমি একজন চাকরিজীবী। চাকরির পয়সায় মাস চালাতে চরম হিমশিম খেতে...
আমি একজন চাকরিজীবী। চাকরির পয়সায় মাস চালাতে চরম হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু একটি সংস্থা সম্মেলন করার জন্য আমাদের থেকে প্রতি বছর টাকা নিয়ে থাকে। গত বছর কোনো কথা ছাড়াই বেতন থেকে টাকা কেটে নিয়েছে। পরে কর্মচারীরা তা জানতে পারে। এই বছর একটু বলা হয়েছে যে, কত টাকা নেয়া হবে। আমরা আলিমদের মুখে শুনেছি যে, কারো সম্পদ তার সন্তুষ্টি ছাড়া নেওয়া বৈধ নয়। ইসলামী সম্মেলনের জন্য এভাবে টাকা নেওয়া কতটুকু বৈধ? আশা করি জানাবেন।
মাসিক বেতনের নিরঙ্কুশ মালিক হচ্ছেন চাকুরিজীবীরা। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি ছাড়া বেতনের টাকা কেটে রাখা জায়েয হবে না। কর্তন করলে তা ফেরত দিতে হবে।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫৪৮৮, ২৩৬০৫; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ : ৪২৫; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৪
মোমেনশাহীর দুই ব্যক্তি ঢাকায় চাকরি করেন। তারা শুক্রবার সকাল ১১...
মোমেনশাহীর দুই ব্যক্তি ঢাকায় চাকরি করেন। তারা শুক্রবার সকাল ১১ টায় মোমেনশাহীর উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। রাস্তায় জুমআর নামায পড়তে পারেননি। বেলা ৩টায় বাড়ি পৌঁছে দু’জন মিলে জামাতের সাথে যোহরের নামায আদায় করেছেন। প্রশ্ন হল, তাদের জন্য জামাতের সাথে যোহরের নামায পড়া ঠিক হয়েছে নাকি একাকী পড়া উচিত ছিল? জানালে খুশি হব।
তাদের যোহরের নামায আদায় হয়েছে। তবে তাদের জন্য যোহরের নামায একাকী পড়া উত্তম ছিল। কারণ জুমার জামাত না পেলে যোহর একাকী আদায় করা উত্তম।
-কিতাবুল আসল ১/৩৬৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪৭৩; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৮৪; রদ্দুল মুহতার ২/১৫৭
আমাদের গ্রামের ঈদগাহের জন্য একটি জমি প্রায় এক শ’ বছর...
আমাদের গ্রামের ঈদগাহের জন্য একটি জমি প্রায় এক শ’ বছর পূর্বে ওয়াকফ করা হয়। এরপর থেকে সেখানে ঈদের নামায হয়ে আসছে। কিছুদিন পূর্বে ঈদগাহের সীমানা দেয়াল নির্মাণ এবং আরো কিছু প্রয়োজনে ঈদগাহের সীমানা নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখা যায়, ঈদগাহ সংলগ্ন জমির মালিক অনেকগুলো ফলদ ও কাঠের গাছ ভুলবশত ঈদগাহের সীমানার ভিতরে লাগিয়ে ফেলেছে। গাছগুলো অন্তত ২০/২৫ বছর পূর্বে লাগানো হয়েছিল এবং এতদিন যাবৎ গাছের ফল রোপনকারী ভোগ করে আসছে। এখন মুসল্লিরা দাবি করছে, যেহেতু গাছগুলো ঈদগাহের জমিতে বড় হয়েছে সুতরাং এগুলো ঈদগাহের গাছ। আর রোপনকারীর বক্তব্য, আমার গাছ আমি কেটে নিয়ে যাব। এ বিষয়ে শরঈ সমাধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির জন্য ঈদগাহে গাছ লাগানো ঠিক হয়নি। তাকে এর জন্য তাওবা-ইস্তিগফার করতে হবে আর বিগত যত বছর ঈদগাহের সীমানার ভিতরে জমিতে তার গাছ ছিল তত বছরের ন্যায্য ভাড়া ঈদগাহ ফান্ডে আদায় করতে হবে। তবে রোপনকারী গাছগুলোর মালিক। ঈদগাহ কর্তৃপক্ষ তাকে গাছগুলো কেটে নিয়ে মাঠ খালি করে দিতে বাধ্য করতে পারবে।
উল্লেখ্য, গাছের ছায়া বা অন্য কোনো সুবিধার জন্য ঈদগাহ কর্তৃপক্ষ গাছগুলো রেখে দিতে চাইলে রোপনকারীর সম্মতিতে গাছের বর্তমান মূল্য পরিশোধ করে দিতে হবে।
জামেউল ফুসূলাইন ২/১০১; কিতাবুল ওয়াকফ, পৃষ্ঠা : ৩৮৫
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক কোম্পানি আছে যারা জায়গা ও...
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক কোম্পানি আছে যারা জায়গা ও বাড়ি ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। টাকা পরিশোধের ব্যাপারে শর্ত থাকে যে, এককালীন পরিশোধ করলে কিছুটা কম আর কিস্তিতে পরিশোধ করলে কিছুটা বেশি পরিশোধ করতে হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কিস্তির অতিরিক্ত টাকা কি সুদ? এ জাতীয় ক্রয়-বিক্রয় জায়েয আছে কি?
কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করলে নগদের চেয়ে বেশি মূল্য নেওয়া জায়েয। তবে কিস্তির বিক্রির ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্তের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে-
১. পণ্যের মূল্য ও আদায়ের তারিখ সুনির্দিষ্ট হতে হবে।
২. চুক্তির সময় পণ্যের মূল্য চূড়ান্ত হওয়ার পর কিস্তি আদায়ে বিলম্ব বা পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে পুনরায় মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না।
৩. কিস্তি আদায়ের জন্য পণ্য আটকে রাখা যাবে না; বরং চুক্তির পরই পণ্য ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী জিদ্দা ৭/২/৩২-৩৬; বাইউত তাকসীত ওয়া আহকামুহু, সুলাইমান আততুরকী পৃষ্ঠা : ২২৮; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা, আল্লামা তাকী উসমানী ১/৭
চার ব্যক্তি সমান হারে অর্থ দিয়ে মাছ শিকার করার জন্য...
চার ব্যক্তি সমান হারে অর্থ দিয়ে মাছ শিকার করার জন্য একটি জাল ক্রয় করেছে। তারা এভাবে চুক্তি করেছে যে, এ জাল দিয়ে বিল ও নদী থেকে মাছ শিকার করবে এবং সমানভাবে বণ্টন করে নিবে। তবে মাছ শিকার করার জন্য সকলকে থাকতে হবে না। দু’জন মিলে শিকার করলেও চার জন ভাগ করে নিবে। প্রশ্ন হল, মাছ শিকারের উক্ত চুক্তিটি সহীহ কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চারজন একসাথে মাছ শিকার করে সমানভাবে বণ্টন করে নেওয়া জায়েয হবে। কিন্তুমাছ শিকারে কেউ অনুপস্থিত থাকলে সে মাছের ভাগ পাবে না। এক্ষেত্রে অন্যদের মতো মাছের সমান অংশ নেওয়া জায়েয হবে না। হ্যাঁ, উক্ত জালে তার যে অংশ রয়েছে সেটার ন্যায্য ভাড়া সে পাবে। অথবা ভাড়া হিসেবে ইনসাফ করে মাছও নিতে পারবে।
- হেদায়া ২/৬৩৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬২৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২২৭; ফাতহুল কাদীর ৫/৪০৯; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৫
আমাদের দাদারা আমাদের গ্রামের বাড়ির সম্মুখে দক্ষিণ পার্শ্বে ৫৩ শতাংশ...
আমাদের দাদারা আমাদের গ্রামের বাড়ির সম্মুখে দক্ষিণ পার্শ্বে ৫৩ শতাংশ জমি মসজিদ ও কবরস্থানের জন্য দান করে গিয়েছেন। জমিটি পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা। উক্ত জমির উত্তরাংশে পূর্ব দিকে একটি টিনের মসজিদ ঘর এবং মসজিদের পশ্চিম পার্শ্বে পারিবারিক কবরস্থান হিসেবে তারা ব্যবহার করে আসছেন, যার উত্তর দিকে পূর্ব পশ্চিমে লম্বা এবং পূর্ব পার্শ্ব দিয়ে উত্তর দক্ষিণে লম্বা নিজ বাড়িতে ও মসজিদে চলাচলের রাস্তা আছে। রাস্তার উত্তর পার্শ্বে প্রায় চার একর জমির উপর দাদাদের বসতবাড়ি। মসজিদ-কবরস্থানের উল্লেখিত ৫৩ শতাংশ প্লটের অবশিষ্ট প্রায় অর্ধেক অংশে পূর্ব পার্শ্বে মসজিদের জন্য বিরাট ইঁদারা এবং ইঁদারার পশ্চিম পার্শ্বের অবশিষ্ট জায়গা খালি পড়ে ছিল। পরবর্তীতে বাপ-চাচাদের আমলে ইঁদারার পশ্চিম পার্শ্বের খালি জায়গায় মসজিদ ঘরটি স্থানান্তর করা হয়। আর ঐ সময় থেকে অদ্যাবধি মসজিদের সাবেক জায়গাটি খালি পড়ে আছে।
আমাদের জামানায় ১৯৯২ ঈ.সালে এলাকায় সর্বশেষ ভূমিজরিপ হলে আমরা উক্ত ৫৩ শতাংশ জমি মসজিদ ও কবরস্থানের নামে ২৭ ও ২৬ শতাংশ করে আলাদা আলাদা ভাগ করে রেকর্ডের অন্তর্ভুক্ত করে দেই এবং যেহেতু দক্ষিণ পার্শ্বে ইঁদারা ও মসজিদ ঘর স্থানান্তরিত হয়েছে সে হিসাবে দক্ষিণের অংশ মসজিদের নামে এবং উত্তরের অংশ কবরস্থানের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতে মসজিদের সাবেক জায়গাটি কবরস্থানের অংশে পড়ে গিয়েছে। মসজিদ ও কবরের জায়গা মেপে বুঝ করতে গিয়ে দেখা গেল যে, মসজিদ ও কবরস্থানের উত্তর পার্শ্বে আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটিও সম্পূর্ণ মসজিদ ও কবরস্থানের জায়গায় পড়ে গিয়েছে। এমনকি রাস্তার উত্তর পার্শ্বে আমাদের বাড়ির সিমানা মনে করে আমাদের ভাইয়েরা (শরিক) সারিবদ্ধভাবে যে সমস্ত ফলের ও কাঠের গাছ লাগিয়েছিলেন সেগুলোও সারিবদ্ধভাবে মসজিদ-কবরস্থানের জায়গায় পড়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় ভাইয়েরা মসজিদ-কবরস্থানের উল্ল্লেখিত জায়গা ছেড়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের লাগানো কিছু গাছ কেটে কাজে লাগিয়েছেন এবং কিছু গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। অবশিষ্ট গাছগুলিও কেটে ফেলে জায়গাটি খালি করে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন। আর আমাদের বাড়িতে ও মসজিদে চলাচলের যে সরু রাস্তাটি আছে, উক্ত রাস্তাটি প্রশস্ত করে অন্য বড় এক রাস্তার সাথে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ এখন মাপের পর দেখা গেছে যে, রাস্তাটি মসজিদ-কবরস্থানের সিমানার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে।
এখন আমাদের জানার বিষয় হল :
ক) মসজিদ ও কবরস্থানের উল্লেখিত ৫৩ শতাংশ জায়গা আমরা যেভাবে ১৯৯২ সালের রেকর্ডে ভাগ করে দিয়েছি তা সঠিক হয়েছে কি না? না হয়ে থাকলে এখন করণীয় কী? আর মসজিদের সাবেক স্থানটি কবরস্থানের জায়গায় পড়ে গিয়েছে সে বিষয়ে করণীয় কী?
খ) বর্তমানে মসজিদটি বড় ও পাকা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় যদি কবরস্থানের কিছু জায়গা ব্যবহার করতে হয় তাহলে তা করা যাবে কি না?
গ) মসজিদ ও কবরস্থানের সিমানায় ভাইদের লাগানো গাছগুলো তারা কেটে ব্যবহার করেছে ও বিক্রি করেছে তা সঠিক হয়েছে কি না? না হয়ে থাকলে এখন করণীয় কী? আর অবশিষ্ট গাছের হুকুম কি?
ঘ) মসজিদ-কবরস্থানের সিমানায় পড়ে যাওয়া উল্লেখিত রাস্তাটি সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরও প্রশস্ত করে অন্য বড় রাস্তার সাথে মিলানো যাবে কি না? যদি না যায় তাহলে মসজিদ-কবরস্থানের অর্ধেক এবং আমাদের বাড়ির অংশ থেকে অর্ধেক জায়গার মাধ্যমে রাস্তাটি করা যাবে কি না? আর যদি তাও না হয় তাহলে যেভাবে রাস্তাটি ব্যবহার করে আসছি অন্তত সেভাবে ব্যবহার করতে পারব কি না?
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বিষয়গুলোর সমাধান দিলে ইনশাআল্লাহ আমরা সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ক ও খ) প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ওয়াক্ফকারীগণ যেহেতু ৫৩ শতাংশ জায়গা মসজিদ ও কবরস্থান উভয়টির জন্য যৌথভাবে ওয়াক্ফ করেছেন তাই মসজিদ এবং কবরস্থান উভয়ের জন্য সমান ভাগে অর্থাৎ সাড়ে ছাব্বিশ শতাংশ করে ভাগ করতে হবে। আর ওয়াক্ফকারীগণ প্রথমে যে স্থানে মসজিদ করেছিলেন সেটিকেই মসজিদ হিসেবে বহাল রাখা জরুরি। পাকা মসজিদ বানালে পুরাতন মসজিদের স্থানেই বানাতে হবে। সুতরাং উত্তর-পূর্ব দিকের পুরাতন মসজিদের আশপাশে উত্তর-দক্ষিণে কিংবা পূর্ব-পশ্চিমে যেভাবে সুবিধা হয় সাড়ে ছাব্বিশ শতাংশ মসজিদের জন্য রেখে বাকি অর্ধেক কবরস্থানের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। অতএব দক্ষিণ-পশ্চিমে নতুন করে যে মসজিদ বানানো হয়েছে তা মসজিদ থাকবে না। সেটা কবরস্থানের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। আর ১৯৯২ সালের রেকর্ড শুদ্ধ হয়নি। উপরে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে তা সংশোধন করে নেওয়া জরুরি।-সহীহ বুখারী ১/৩৮২; হেদায়া ২/৬৪৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৩৯
গ) ভাইদের লাগানো গাছগুলো নিজেদের ব্যবহারে নেওয়া বা বিক্রি করা সঠিক হয়েছে। অবশিষ্ট গাছগুলো দ্রুতি সরিয়ে ফেলতে হবে। আর মসজিদ ও কবরস্থানের জায়গায় গাছ লাগানোর কারণে জায়গার ন্যায্য ভাড়া দিয়ে দিতে হবে।-তানকীহুল ফাতাওয়া হামীদিয়া ২/১৮২
ঘ) ওয়াক্ফের জায়গা যথাসম্ভব রাস্তার জন্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজস্ব জমিতে রাস্তা বের করা সম্ভব হলে সেটাই করতে হবে। একান্ত ওয়াক্ফের জমি থেকে নেওয়া জরুরি হয়ে পড়লে ওয়াক্ফ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এভাবে ইনসাফ অনুযায়ী নিতে পারবে।-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৬৮
আমার একটি লন্ড্রি দোকান আছে। পূর্বে বেতনভুক্ত একজন কর্মচারী রেখেছিলাম।...
আমার একটি লন্ড্রি দোকান আছে। পূর্বে বেতনভুক্ত একজন কর্মচারী রেখেছিলাম। দু’জন মিলে কাজ করতাম। কোনো কারণে সে চলে যায়। এখন এক ব্যক্তি আমাকে প্রস্তাব করেছে যে, সে আমার দোকানে আসবে। দু’জন মিলে মানুষ থেকে কাপড় গ্রহণ করব, ধোলাই ও ইস্ত্রি করব। যা উপার্জন হবে তা অর্ধাঅর্ধি হারে বণ্টিত হবে।
জানার বিষয় এই যে, এই পদ্ধতিতে তাকে নেওয়া বৈধ হবে কি না? চাইলে তার সঙ্গে এভাবে চুক্তি করতে পারব কি না যে, যা উপার্জন হবে তার দুই ভাগ আমার, এক ভাগ তার? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দু’জনের মাঝে যা লাভ হবে তা নির্ধারিত হারে বণ্টনের চুক্তি করা জায়েয হবে। দু’জনের কে কত ভাগ পাবে তা আগে থেকে নির্ধারণ করে নিবে। উভয়ের সম্মতিতে একজনের এক ভাগ ও অপরজনের দুই ভাগও হতে পারে। আবার অন্য কোনো হারেও হতে পারে।
-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়াহ পৃ. ২৬৭, মাদ্দাহ : ১৩৮৫; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/২৫৬; ফাতহুল কাদীর ৫/৪০৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৩১; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২২
জনৈক আহলে হাদীস আলেম বলেছেন, উমর রা. মদীনায় বসে যে...
জনৈক আহলে হাদীস আলেম বলেছেন, উমর রা. মদীনায় বসে যে ‘ইয়া সারিয়াতুল জাবাল’ বলেছেন এ ঘটনাটি সত্য নয়। কারণ এটি সত্য হলে এর দ্বারা প্রমাণ হবে যে, উমর রা. গায়েব জানেন। অথচ আল্লাহ তাআলা ছাড়া কেউ গায়েব জানেন না-এটি চির সত্য। তাই উক্ত ঘটনাটি বর্ণনাযোগ্য নয়। জানতে চাই, তার কথা কি সঠিক?
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর রা.-এর জুমার খুৎবা অবস'ায় পারস্যের যুদ্ধরত মুসলিম সেনাপতিকে ইয়া সারিয়াতুল জাবাল বলে সম্বোধন করার ঘটনাটি সত্য। এ সম্পর্কিত একটা বর্ণনা সম্পর্কে ইবনে হাজার রাহ. বলেছেন, তার সনদ হাসান পর্যায়ের এবং ইবনে কাছীর রাহ. বলেছেন, হাযা ইসনাদুন জাইয়্যেদুন হাসানুন। দেখুন : আলইসাবা ৩/৫-৭; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ১০/১৭৩
অতএব ঘটনাটি বর্ণনাযোগ্য। আর এ কথাও সত্য এবং ঈমানের অংশ যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া কেউ গায়েব জানেন না। তবে আল্লাহ তাআলা যাকে গায়েবের কোনো খবর সম্পর্কে অবগত করেন তিনি ঐ বিষয়টি জানতে পারেন। যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের অনেক আলামত সম্পর্কে অবগত করেছেন। তাই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বর্ণনা করেছেন। এ সূত্রে আমরাও জেনেছি। এতে করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মত গায়েব জানেন-এ কথা বলা যায় না। তদ্রূপ আল্লাহ তাআলা হযরত উমর রা.-এর অন্তরে পারস্যের সৈন্যবাহিনীর অবস্থা ঢেলে দিয়েছিলেন এবং তার আওয়াজ সুদূর পারস্যে পৌঁছে দিয়েছিলেন-এটি আল্লাহ তাআলা কুদরতের প্রকাশ। আর তার কুদরতে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। কেয়ামতের আলামতসমূহ জানার দ্বারা যেমনিভাবে গায়েব সম্পর্কে জ্ঞাত বলা যায় না তেমনি হযরত উমর রা.-এর ঐ ঘটনাও তাঁর গায়েব জানার প্রমাণ বহন করে না; বরং আল্লাহ তাআলার কুদরতেরই প্রমাণ। এ কারণে তিনি নিজেও কখনো এ দাবি করেননি যে, তিনি গায়েব জানেন এবং তার সম্পর্কে কোনো সাহাবী, তাবেয়ী, ইমাম ও মুহাদ্দিসও এমন কথা বলেননি। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির ঐ কথা সঠিক নয়। খোঁড়া যুক্তি দিয়ে ইসলামের সোনালী ইতিহাসকে অস্বীকার করা অন্যায় এবং কম ইলমীর পরিচায়ক।
-আল ইসাবা ফী তাময়িযিস সাহাবা ৩/৫-৭, হাদীস : ৩০৩৬; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ১০/১৭৩; আলকামিল ফিততারীখ ৩/৪২; আলমুনতাযাম ফী তারীখিল মুলূক ওয়াল উমাম ৪/৩২৫-৩২৬; তারীখে তবারী পৃ. ৬৯৮; সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা ৩/১০১, হাদীস : ১১১০; তারিখে দামেশক ২০/২৪
আমার নিজস্ব একটি লাইব্রেরী আছে। তাতে বই, খাতা-কলম ইত্যাদি বিক্রি...
আমার নিজস্ব একটি লাইব্রেরী আছে। তাতে বই, খাতা-কলম ইত্যাদি বিক্রি করি। একদিন আমার এক বন্ধু এসে বলল, তার একটি ফটোস্ট্যাট মেশিন আছে। সেটি আমার দোকানে রাখবে। দু’জন মিলে ফটোস্ট্যাট করব। যা উপার্জন হবে তা উভয়ের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন হবে।জানতে চাই, চুক্তিটি শরীয়তসম্মত হবে কি না?
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি সহীহ হয়েছে।
খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৯৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৩৪; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়াহ, মাদ্দাহ : ১৩৯৫; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/৩১৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/৬২৮; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২২
আমাদের দেশে বর্তমানে শুধু পেনশনভোগী অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারি-কর্মকর্তাদের জন্য মুনাফাভিত্তিক...
আমাদের দেশে বর্তমানে শুধু পেনশনভোগী অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারি-কর্মকর্তাদের জন্য মুনাফাভিত্তিক একটা সুবিধা চালু করা হয়েছে। তা হল, অবসরপ্রাপ্তির সময় জিপি ফাণ্ড ও গ্রাচুয়িটি থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র খরিদ করতে হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদ (৩ বা ৫ বছর)। এই সঞ্চয়কৃত টাকার বিনিময়ে প্রতি তিন মাস অন্তর নির্ধারিত একটি মুনাফা দেওয়া হয়। মেয়াদকাল শেষ হলে জমা রাখা মূল টাকা সম্পূর্ণ ফেরত দেওয়া হয়। এ সুবিধা শুধু সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জন্য।
জানার বিষয় এই যে, এ মুনাফার সুবিধা গ্রহণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
প্রকাশ থাকে যে, মাসিক মদীনায় তা বৈধ বলা হয়েছে। নিম্নে মাসিক মদীনার এ সম্পর্কিত কয়েকটি উত্তর উল্লেখ করা হল :
১। সরকার কর্তৃক জিপিফাণ্ডে যে মুনাফা দেওয়া হয় সেটাকে কর্মচারীদের কল্যাণের জন্য অনুদান হিসাবে গণ্য করত ফেকাহবিদগণ হালাল সাব্যস্ত করেছেন। ইদানীং প্রবর্তিত পেনশনের সঞ্চয়পত্রকে জিপিফাণ্ডেরই একটি বর্ধিত ছুরত রূপে গণ্য করে এটাকেও হালাল বলে গণ্য করেন ফেকাহবিদগণ। (মাসিক মদীনা, জুন ২০০৭)
২। এ যুগের বিজ্ঞ আলেমগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন যে, কর্মচারীগণের জন্য সরকার কর্তৃক প্রদত্ত প্রভিডেন্ট ফাণ্ড, পেনশন, প্রাচুয়িটি এবং সর্বশেষ সুযোগ পেনশনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ইত্যাদি হালাল। এসবের মুনাফা বাহ্যত সুদ বলে মনে হলেও শরীয়তের বিধান অনুযায়ী সুদের মধ্যে গণ্য হয় না। (মাসিক মদীনা, জুলাই ২০০৭)
৩। যেহেতু এটা শুধুমাত্র সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি বিশেষ স্কীম, সে কারণে সরকারী পেনশন ভোগীদের জন্য এই স্কীম থেকে প্রাপ্ত মুনাফা নাজায়েয হবে না। (মাসিক মদীনা, ডিসেম্বর ২০০৪)
সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তার জন্য যে সরকারী সঞ্চয় ফাণ্ড করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ সুদী। এটি জিপি ফাণ্ডের মতো নয়। জিপি ফাণ্ডের সাথে এর অনেক পার্থক্য রয়েছে। এখানে দুটি মৌলিক পার্থক্য উল্লেখ করা হচ্ছে।
ক) জিপি ফান্ড বাধ্যতামূলক, কিন্তু সঞ্চয় ফাণ্ড বাধ্যতামূলক নয়। একজন চাকরিজীবী এই সুবিধা গ্রহণ করতেও পারে আবার নাও করতে পারে।
খ) বাধ্যতামূলক জিপি ফাণ্ডের টাকা চাকরিজীবীকে দেওয়া হয় না; বরং তা সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে ঐ খাতের জন্য কেটে রাখা হয়। ফলে এই সময় এ টাকার উপর চাকরিজীবীর নিরঙ্কুশ মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না। অতএব এ কথা বলা যাবে না যে, অল্প জমা দিয়ে মেয়াদান্তে বেশি নিচ্ছে; বরং মূল ও অতিরিক্ত পুরোটাই সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমের বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে। যা চাকরি শেষে একত্রে গ্রাচুয়িটি, জিপি ফাণ্ড ইত্যাদি নামে চাকুরেকে দিয়ে দেওয়া হয়। কেবল তখনই তার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সঞ্চয় ফাণ্ডের জমা এমন নয়। এ খাতে জমা টাকার উপর পূর্ব থেকেই জমাকারীর মালিকানা এসে যায়। অর্থাৎ সঞ্চয় ফাণ্ডে জমাকারী নিজ মালিকানাধীন টাকা জমা রেখে মেয়াদান্তে অতিরিক্ত নিচ্ছে, যা সুস্পষ্ট সুদ।
মাসিক মদীনার এ সংক্রান্ত জবাবগুলো সহীহ নয়। সরকার কর্তৃক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা হলেই তা আর সুদী লেনদেন হয় না-একথা ভাবা ঠিক নয়।
-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৪-৪৬৫; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩০০; রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৯; ইমদাদুল আহকাম ৩/৪৮০; জাদীদ মাসায়েল কে শরয়ী আহকাম, মুফতী শফী রাহ. পৃ. ৬৬-৬৭
পীরকে কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক মনে করা, তার কাছে গিয়ে সন্তান চাওয়া,...
পীরকে কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক মনে করা, তার কাছে গিয়ে সন্তান চাওয়া, বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি কামনা করা ইত্যাদি কাজের হুকুম কী? কিছু লোক মাজারে গিয়ে এসব চায়। আবার জিন্দা পীরকেও এসব বিষয়ে ক্ষমতাবান মনে করে। জানতে চাই এমন ধারণা করা ঠিক কি না? এতে কোনো ক্ষতি আছে কি না?
কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। রিযিকদাতা,সন্তানদাতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতিদানকারী এবং মনোবাঞ্ছা পূরণকারী একমাত্র আল্লাহ। কোনো পীর, তিনি জীবিত হোন বা মৃত এসব কাজের ক্ষমতা রাখেন না।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি আল্লাহ তাআলা আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন তবে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাক, তারা কি সেই অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি রহমত করার ইচ্ছা করলে তারা কি সে রহমত রোধ করতে পারবে? বলুন, আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁর উপরই নির্ভর করে।’ (সূরা যুমার : ৩৮)
বোঝা গেল, কল্যাণ-অকল্যাণএবং উপকার-অপকারের মালিক একমাত্র আল্লাহ।
অন্যত্র এসেছে, (তরজমা) ‘আল্লাহ ব্যতীত এমন কোনো স্রষ্টা আছে কি যে তোমাদেরকে আসমান ও জমিন থেকে রিযিক দান করে? তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। অতএব তোমরা কোথায় ঘুরপাক খাচ্ছ।’ (সূরা ফাতির : ৩)
রিযিকের বরকত একমাত্র আল্লাহ তাআলার হাতে। সন্তানসন্ততিও আল্লাহই দান করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। এ মর্মে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) আসমান ও জমিনের রাজত্ব আল্লারই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।’ (সূরা শুরা : ৪৯-৫০)
অতএব বোঝা গেল আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কারো কাছে সন্তান চাওয়া, কাউকে লাভক্ষতির মালিক মনে করা, আয়-উপার্জনে উন্নতিদানকারী মনে করা সম্পূর্ণ শিরক ও ঈমান পরিপন্থী আকীদা। কেউ যদি কখনো এমন কাজ করে থাকে তাহলে তাকে খাঁটি অন্তরে তওবা করে নতুনভাবে ঈমান আনয়ন করতে হবে এবং এগুলো যে একমাত্র আল্লাহ তাআলারই ক্ষমতা এ ব্যাপারে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে।
জনৈক ব্যক্তি পোস্ট অফিস কর্তৃক ইস্যুকৃত পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে...
জনৈক ব্যক্তি পোস্ট অফিস কর্তৃক ইস্যুকৃত পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে ইচ্ছুক। তার জন্য কি ঐ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা জায়েয হবে? জায়েয না হলে তার সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করে বাধিত করবেন। পেনশনার সঞ্চয়পত্র এর ৪র্থ পৃষ্ঠায় রয়েছে, ‘২ লক্ষ টাকায় তিন মাস অন্তর ৫৫০/- টাকা মুনাফা প্রদান করা হবে। ... এক বছরান্তে ৭.৫০%, দুই বছরান্তে ৮.২৫% হারে মুনাফা দেওয়া হবে। অর্থাৎ মূলের উপর এত হারে মুনাফা দেওয়া হবে।
পোস্ট অফিস পেনশনার সঞ্চয়পত্র-এর বিবরণ থেকে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এটি পুরোপুরি সুদী প্রকল্প। যেখানে জমাকারীকে মেয়াদান্তে নির্দিষ্ট অংকে লাভ দেওয়া হয়। বলাবাহুল্য যে, এটিই হল কুরআন মজীদের নিষিদ্ধ সুদ-রিবান নাসিআহ।
এই সুদ সম্পর্কেই কুরআন মজীদে ঘোষণা করা হয়েছে, (তরজমা) ‘ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে তা পরিত্যাগ কর যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস'ত হয়ে যাও।’ (সূরা বাকারা : ২৭৮,২৭৯) আরো দেখুন : সূরা বাকারা : ২৭৫, ২৭৬; সূরা আল-ইমরান : ১৩০; আহকামুল কুরআন, যফর আহমদ থানভী ১/৬৬৬, ৬৭০; তাফসীরে কুরতুবী ৩/২২৬; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৭
অতএব প্রশ্নোক্ত পেনশনার সঞ্চয়পত্রে জমা করা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। নিম্নে আরো কয়েকটি বরাত পেশ করা হল।
জামে তিরমিযী ১/২২৯; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৫/২৭৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ১০/৬৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৮০; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮; রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৬
জামে তিরমিযী ১/২২৯; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৫/২৭৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ১০/৬৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ২/২৮০; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮; রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৬
বর্তমানে কোনো ব্যাংকই সুদমুক্ত বলে দাবি করা যায় না। এ...
বর্তমানে কোনো ব্যাংকই সুদমুক্ত বলে দাবি করা যায় না। এ পরিস্থিতিতে টাকা-পয়সা হেফাযতের জন্য কি করণীয় আছে। সুদী ব্যাংকে আমার একটি একাউন্ট আছে। তার সুদ সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিলে একাউন্টটি ব্যবহার করা যাবে কি? বা এ উদ্দেশ্যে একাউন্ট খোলা যাবে কি?
সুদী ব্যাংকে অতিরিক্ত অংশ গ্রহণ না করলেও সেভিংস একাউন্ট খোলা মানেই সুদী চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া। পরবর্তীতে সুদ গ্রহণ না করলেও সুদী চুক্তির গুনাহ হবে। আর পরে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তাতে সুদ গ্রহণ ও ভোগ করার গুনাহ হবে ভিন্নভাবে। তাই সুদী ব্যাংকে একাউন্ট খোলা আবশ্যক হলে কারেন্ট একাউন্ট তথা চলতি হিসাব খোলা যাবে। অবশ্য আজকাল কোনো কোনো ব্যাংকে কারেন্ট একাউন্টেও কিছু সুদ দেওয়া হয় যাকে এস.টি.ডি. বলে। কোনো কোনো ব্যাংকে ভিন্ন নামও আছে। এ ধরনের কারেন্ট একাউন্ট খোলার হুকুম সুদী ব্যাংকের সেভিংস একাউন্টের মতোই। একাউন্ট করলেই সুদী চুক্তির গুনাহ হবে। তাই সুদী ব্যাংকে একাউন্ট করতে অতিরিক্ত দেয় না এমন কারেন্ট একাউন্ট করতে পারবে।
এক ব্যক্তি জমিতে ফুলকপির চাষ করেছে। তবে ফুলকপি হওয়ার আগেই...
এক ব্যক্তি জমিতে ফুলকপির চাষ করেছে। তবে ফুলকপি হওয়ার আগেই অন্য ব্যক্তির কাছে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। তার সাথে এভাবে চুক্তি হয়েছে যে, ঐ জমিতে ফুলকপি হওয়ার পর দুই হাজার টাকার বিনিময়ে ৩০০ টি ফুলকপি দিতে হবে। জানার বিষয় হল, উক্ত লেনদেনটি সহীহ হয়েছে কি না?
প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি সহীহ হয়নি। কেননা এতে ফলনের পূর্বেই নির্দিষ্ট ক্ষেতের শস্য বিক্রি করা হয়েছে। আর কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেতের শস্য ফলনের পূর্বে বিক্রি করা জায়েয নেই। হাদীস শরীফে এ ধরনের বিক্রির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এক্ষেত্রে সহীহ পদ্ধতিতে কারবার করতে চাইলে কোন ক্ষেতের শস্য নির্দিষ্ট না করে মেয়াদান্তে প্রদানের শর্তে অগ্রিম মূল্য দিয়ে খরিদ করে নিবে। ঐ শস্য কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেতের হতে হবে এমন শর্ত করা যাবে না। আর উক্ত আগাম খরিদ চুক্তিতে নিম্নে বর্ণিত শর্তগুলো থাকা আবশ্যক।
১. চুক্তির সময় পরিপূর্ণ মূল্য পরিশোধ করা।
২. কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেতের শস্য দেওয়ার শর্ত না করা।
৩. যে দ্রব্য অগ্রিম মূল্যে খরিদ করতে চাচ্ছে তার ধরন এবং গুণগত মান সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা।
৪. বিক্রিত দ্রব্যের পরিমাণ নির্ধারণ করে নেওয়া।
৫. বিক্রিত দ্রব্য সরবরাহের তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করে নেওয়া।
৬. বিক্রিত দ্রব্যটি এমন হওয়া, যা সাধারণত সব সময় বাজারে পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত পদ্ধতিতে চুক্তি করার পর বিক্রেতা যেকোনো ক্ষেতের শস্য ক্রেতাকে দিতে পারবে।
সহীহ মুসলিম ২/৭; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৩৮৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩২৬; ফাতহুল কাদীর ৬/২০৭; আননাহরুল ফায়েক ৩/৩৫৯; রদ্দুল মুহতার ৪/৫৫৫; সহীহ বুখারী ১/২৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১৮০; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/২৭৮; আলমাআইরুশ শারঈয়্যাহ পৃ. ১৭০; ইতরুল হেদায়া পৃ. ১৪২
কেউ কুমিল্লা থেকে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১০০/- টাকা ভাড়া নির্ধারণ...
কেউ কুমিল্লা থেকে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১০০/- টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে বাসে উঠল। অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর দীর্ঘ জ্যামের কারণে লোকটি ঢাকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে এবং বাস থেকে নেমে আসে। আমার জানার বিষয় হল এমতাবস্থায় লোকটি কি অর্ধেক ভাড়া দিবে, না পূর্ণ ভাড়া দিতে বাধ্য থাকবে?
পথে লোক নামায় এবং ওঠায় এমন লোকাল বাস না হলে পুরো ১০০/- টাকাই দিতে হবে। কিন্তু যদি লোকাল বাস হয় যাতে পূর্বে ভাড়া ঠিক হয়ে গেলেও পথে নামার সুযোগ থাকে এবং গন্তব্য অনুযায়ী ভাড়া কম-বেশি নেওয়া হয় তাহলে এক্ষেত্রে যতদূর এসেছে সে অনুযায়ী ন্যায্য ভাড়া দেওয়া জরুরি। যদি তা ৫০/- টাকার বেশি হয় তবে তাই দিতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত ভাড়ার অর্ধেক দেওয়া যাবে না। অবশ্য পুরো ১০০/- টাকাও দিতে হবে না।
আলআশবাহ ওয়াননাযাইর পৃ. ৩২২; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২২৩, ২২৪ ও ২২৬; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩১৫, ৩১৬ ও ৩২২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১৪, ৪৫৮; শরহুল মাজাল্লাহ, খালেদ আতাসী ২/৫৫৪, মাদ্দাহ : ৪৭০ ও ২/৬৩৫; শরহুল মাজাল্লাহ, সলীম রুস-ম বায ১/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১০, ১১
আমার বাসা উত্তরায় আর অফিস গাজীপুরে। প্রতিদিন বাসা থেকে গিয়ে...
আমার বাসা উত্তরায় আর অফিস গাজীপুরে। প্রতিদিন বাসা থেকে গিয়ে অফিস করি। যাতায়াতে ভীষণ কষ্ট হয়। এ ছাড়া খরচ তো আছেই। তাই গাজীপুরে বাসা খুজছিলাম। ইতিমধ্যে এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হল, যার বাসা গাজীপুরে আর অফিস উত্তরায় এবং আমার মতোই বাসা থেকে যাতায়াত করে অফিস করেন।
আমি তাকে প্রস্তাব করি যে, উত্তরায় আমার নিজস্ব বাসা আছে। আপনি সেখানে থাকবেন বিনিময়ে আপনার এই বাসায় আমি থাকব। যেহেতু তিনিও আমার মতোই কষ্টের শিকার তাই তিনি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।
এখন জানার বিষয় হল, এভাবে চুক্তি করা জায়েয আছে কি? যদি জায়েয না হয় তাহলে এই ধরনের ক্ষেত্রে সহীহ পদ্ধতি কী হবে?
প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি সঠিক হয়নি; বরং এই ধরনের ক্ষেত্রেও ভাড়া দেওয়ার স্বাভাবিক নিয়মেই একে অন্যের কাছে টাকার বিনিময়ে ঘর ভাড়া দিবে। এক্ষেত্রে উভয় বাড়ির ভাড়া সমান সমান হলে ভাড়ার টাকা পরস্পরে আদান প্রদান করা বা কাটাকাটি করা দুটোরই সুযোগ আছে। আর যদি ভাড়ার পরিমাণ কম-বেশি হয় তাহলে যার বাসার ভাড়া কম সে অপর ব্যক্তিকে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ করবে।
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪, ৬২; মু’জামুল মুসতালাহাত ওয়াল আলফাফিল ফিকহিয়্যাহ ৩/৩২৯; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৮/১৪; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৯৮; তাকমিলা (আলবাহরুর রায়েক) ৮/৭
আমাদের দেশের বাড়িতে অনেক সুপারি গাছ আছে। সুপারি আমরা লোকদের...
আমাদের দেশের বাড়িতে অনেক সুপারি গাছ আছে। সুপারি আমরা লোকদের দিয়ে সুপারি পাড়িয়ে থাকি। তাদের সাথে এভাবে চুক্তি হয় যে, বড় গাছ হলে ৫টি আর মাঝারি বা ছোট গাছ হলে ৪টি মাঝারি ধরনের সুপারি তাদেরকে দেওয়া হবে। জানতে চাই, উক্ত চুক্তিতে কোনো সমস্যা আছে কি না?
উল্লেখ্য যে, তাদের সাথে চুক্তি হওয়ার সময় এ কথা বলা হয় না যে, তাদের পাড়া সুপারি থেকে তাদের অংশ দেওয়া হবে।
এভাবে চুক্তি করা বৈধ হয়েছে।
সুনানে দারাকুতনী ৩/৪৭; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ২/২১৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৩; ইলাউস সুনান ১৬/১৮১
এক ব্যক্তি আমাকে গেঞ্জি তৈরির অর্ডার দিয়েছে। তার সাথে আমার...
এক ব্যক্তি আমাকে গেঞ্জি তৈরির অর্ডার দিয়েছে। তার সাথে আমার যেভাবে চুক্তি হয়েছে হিসাব করে দেখি যে, প্রতি গেঞ্জিতে (আনুমানিক) আমার খরচ হবে ১৫০/- টাকা আর আমার লাভ হবে ৩/- টাকা। কিন্তু আমার কাছে প্রতি গেঞ্জির জন্য ১০০/- টাকা করে আছে। এ কারণে আরেক ব্যক্তির সাথে এভাবে চুক্তি করেছি যে, সে আমার এ কাজে প্রতি গেঞ্জির জন্য ৫০/- টাকা করে বিনিয়োগ করবে। প্রতি গেঞ্জিতে যেহেতু লাভ ৩/- টাকা। তাই তাকে আমি ১/- টাকা করে দিব। অর্থাৎ সে প্রতি ৫০/- টাকায় ১/- টাকা পাবে।
জানার বিষয় হল বিনিয়োগকারীর সাথে ৩/- টাকা লাভ থেকে ১/- টাকা নির্ধারিত হিসাবে দেওয়ার চুক্তি সহীহ হয়েছে কি না? যদি জায়েয না হয় তাহলে শতকরা হারে লাভ দেওয়ার শর্তে চুক্তি করা জায়েয হবে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীকে প্রতি গেঞ্জি বাবদ ১/- টাকা করে দেওয়ার শর্ত করা সহীহ হয়নি। যৌথ মূলধনী কারবারে কোনো পক্ষকে নির্ধারিত অংকে লাভ দেওয়ার চুক্তি করা নাজায়েয। এটা সুদী কারবারের অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে বৈধ উপায়ে করতে চাইলে উভয়ের জন্য শতকরা হারে লভ্যাংশ ধার্য করতে হবে। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লাভের এক-তৃতীয়াংশ দেওয়ার চুক্তি করা যেতে পারে।
পারে।-হেদায়া (ফাতহুল কাদীর) ৫/৪০২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭৭; আলমাআইরুশ শারঈয়্যাহ পৃ. ২১০; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৭৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৩১২
আমরা তিন বন্ধু মিলে এ মর্মে চুক্তি করেছি যে, আমি...
আমরা তিন বন্ধু মিলে এ মর্মে চুক্তি করেছি যে, আমি ৪,০০০/- টাকা, বাকি দু’জন ৩,০০০/- টাকা করে ৬,০০০/- টাকা, মোট ১০,০০০/- টাকা দিয়ে দুটি রিকশা ক্রয় করব এবং যে দুই জন ৩,০০০/- টাকা করে দিয়েছে তারা রিকশা চালাবে। যা আয় হবে তা সবার মাঝে সমান ভাগে ভাগ হবে। আমার জানার বিষয় হল, এ ধরনের চুক্তি বৈধ হবে কি না? বৈধ না হলে বৈধ পদ্ধতি কী হবে?
উল্লেখ্য যে, তারা ৩,০০০/- টাকা করে টাকা দিয়েছে তাদের কাছে বর্তমানে টাকা না থাকায় আমি তাদেরকে ৬,০০০/- টাকা ঋণ দিয়েছি এ শর্তে যে, তারা তা ধীরে ধীরে পরিশোধ করে দিবে।
ঐভাবে চুক্তি করা বৈধ হয়নি। এক্ষেত্রে উপার্জনের মধ্যে ভাগাভাগি পদ্ধতি সহীহ নয়। সহীহ পদ্ধতি হল ভাড়া-চুক্তি অনুসরণ করা। যেমন দুটি রিকশায় আপনার যে অংশ আছে তা আপনি চালককে/অংশীদারকে টাকার নির্দিষ্ট অংকের বিনিময়ে নির্ধারিত সময়ের জন্য ভাড়া দিবেন।
ফাতহুল কাদীর ৫/৪১১; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬২৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/১২৬; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৬
এক বন্ধুর কাছে আমার ১০,০০০/- টাকা পাওনা ছিল। সে ব্যবসার...
এক বন্ধুর কাছে আমার ১০,০০০/- টাকা পাওনা ছিল। সে ব্যবসার জন্য আমার কাছে টাকা চাইলে আমি বললাম, এ মুহূর্তে আমার নিকট টাকা নেই। তোমার কাছে আমার যে ১০, ০০০/- টাকা পাওনা আছে তা দিয়ে ব্যবসা কর। ঐ টাকা এখন আমার প্রয়োজন নেই। পরবর্তীতে ব্যবসায় যা লাভ হবে এর অর্ধেক আমার অর্ধেক তোমার। এভাবে চুক্তি করা কি সহীহ হয়েছে? সহীহ না হলে কী করণীয়?
ঋণগ্রহীতা থেকে পাওনা টাকা হস্তগত করার আগে তা ঋণগ্রহীতাকে ব্যবসার পুঁজি হিসাবে দেওয়ার প্রস্তাব বৈধ নয়। তাই প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি সহীহ হয়নি। তবে ঋণদাতা যদি ঐ টাকা ঋণগ্রহীতা থেকে বুঝে নেওয়ার পর পুনরায় ব্যবসার জন্য তাকে প্রদান করে তাহলে কারবার জায়েয হবে।
ফাতহুল কাদীর ৭/৪১৭; আলইনায়া ৭/৪১৬; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৪; আশশারহুল কাবীর ৩/৪৫৫; আশশারহুছ ছগীর ৩/৬৮৫; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৭/১৮২; তুহফাতুল মুহতাজ ২/৪১৭
অনেক সময় দেখা যায়, যে সমস্ত দোকানে পণ্যের মূল্য ফিক্সড...
অনেক সময় দেখা যায়, যে সমস্ত দোকানে পণ্যের মূল্য ফিক্সড নয় সে সকল দোকানে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে পণ্যের দাম নিয়ে দরকষাকষি হয়। পণ্যের দাম মনপুত হলে ক্রেতা পণ্য ক্রয় করে। মনপুত না হলে দোকান থেকে চলে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, ক্রেতা যখন দোকান থেকে বের হয়ে কিছু দূর চলে আসে তখন বিক্রেতা ক্রেতাকে পণ্য নেওয়ার জন্য ডাকতে থাকে। ক্রেতা ফিরে না আসলে তাকে তিরস্কারমূলক কথাও বলে থাকে। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে, বিক্রেতা অনেক সময় ধরে ক্রেতাকে পণ্য দেখানোর পর ক্রেতার পছন্দ না হলে সে যখন দোকান থেকে চলে আসে তখন তাকেও তিরস্কারমূলক কথা বলা হয়। এখন আমার জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ক্রেতা ঐ পণ্যটি ক্রয় করতে বাধ্য কি না এবং উভয়ক্ষেত্রে সে ভর্ৎসনার যোগ্য হবে কি না। জানিয়ে বাধিত করবেন।
ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার জন্য একই মজলিসে প্রস্তাবও গ্রহণ সম্পন্ন হওয়া জরুরি। সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ক্রেতা পণ্যের মূল্য প্রস্তাব করার পর বিক্রেতা তা গ্রহণ না করার কারণে বিক্রি চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। অতএব এ পরিসি'তিতে প্রস্তাবকারীর চলে যাওয়া ঠিকই আছে। ঐ স্থান ত্যাগ করার পর বিক্রেতা তাকে প্রস্তাবিত দামে দিতে চাইলেও ক্রেতার জন্য তা নেওয়া জরুরি নয়। ইচ্ছা করলে নিতেও পারে আবার নাও নিতে পারে। সুতরাং এক্ষেত্রে ক্রেতা পণ্য ক্রয় না করলে তাকে ভর্ৎসনা করা অন্যায় হবে।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৭-৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩২৪; হেদায়া ৩/১৯-২০; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭২; আননাহরুল ফায়েক ৩/৩৪১; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৫২৭
আমাদের টিনশেড রুমের ছাদে কিছু ছিদ্র ছিল। বৃষ্টির সময় পানি...
আমাদের টিনশেড রুমের ছাদে কিছু ছিদ্র ছিল। বৃষ্টির সময় পানি পড়ত। একজন মিস্ত্রির সাথে চুক্তি করা হয় যে, ১,০০০/- টাকার বিনিময়ে সে ছাদটি মেরামত করে দিবে কোনো জায়গা দিয়ে যদি পানি পড়ে তাহলে সে কোনো টাকা নিবে না। মেরামতের পর দেখা গেল, কিছু জায়গা দিয়ে এখনো পানি পড়ে। জানতে চাই, তাকে টাকা দিতে হবে কি না? চুক্তিতে উল্লেখিত পারিশ্রমিক সে পাবে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মিস্ত্রি পূর্ব ধার্যকৃত পারিশ্রমিক পাবে না; বরং সে যতটুকু মেরামত করতে পেরেছে এর ন্যায্য পারিশ্রমিক পাবে। সুতরাং সে অনুযায়ী তার পাওনা দিয়ে দিতে হবে। এখনো কোনো জায়গা দিয়ে পানি পড়ার কারণে মোটেও পারিশ্রমিক না দেওয়ার সুযোগ নেই।
সহীহ বুখারী ২২২৭; আলমাবসূত সারাখসী ১৬/৪৭; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪৩; আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৭/১২২
আমি একটি ধান মাড়ানোর মেশিন কিনেছিলাম এবং প্রতি বছর আমি...
আমি একটি ধান মাড়ানোর মেশিন কিনেছিলাম এবং প্রতি বছর আমি নিজেই তা দ্বারা ধান মাড়িয়ে কিছু টাকা উপার্জন করতাম। কিন্তু এখন দুর্বলতার কারণে একা কাজ করতে পারি না। আমার এক বন্ধুর একটি রাইস মিল আছে। আমি পরিকল্পনা করেছি যে, আমার মেশিনটি তার রাইস মিলে স্থাপন করব এবং দুজনেই ঐ মেশিন দিয়ে কাজ করব। আমার যা উপার্জন হবে তা আমরা সমানভাবে ভাগ করে নিব। জানার বিষয় এই যে, আমার জন্য তার সাথে এই চুক্তি করা জায়েয হবে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি জায়েয।
আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৩৪; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২২
এক ব্যক্তি কিছু মাল জমা করে রেখেছে এই উদ্দেশ্যে যে,...
এক ব্যক্তি কিছু মাল জমা করে রেখেছে এই উদ্দেশ্যে যে, দাম বাড়লে তা বিক্রি করবে। এমতাবস্থায় একজন তার কাছে কিছু টাকা ধার চাইল। তখন সে বলল, আমার কাছে টাকা নেই তবে এই মাল আছে। তারপর তাদের মাঝে এই মর্মে চুক্তি হল যে, টাকার পরিবর্তে মাল নিবে এবং পরে তার স্টককৃত অন্যান্য মাল যে দামে বিক্রি হবে সে হিসাবে এই মালের মূল্য পরিশোধ করবে। এ রকম চুক্তিতে কোনো সমস্যা আছে কি?
প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে বেচা-কেনা জায়েয় হবে না। কারণ এতে প্রথমত মূল্য সুনির্দিষ্ট হয়নি। দ্বিতীয়ত অবশিষ্ট মালগুলো কবে বিক্রি হবে এবং কোন মূল্যে বিক্রি হবে তাও অজানা। আর শরীয়তে মেয়াদী ক্রয়-বিক্রয় সহীহ হওয়ার জন্য চুক্তির সময়ই পণ্যের মূল্য এবঙ পরিশোধের তারখ নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক।
বাকি বিক্রির কারণে নগদের চেয়ে মূল্য কিছুটা বেশি নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা নির্ধারিত করে নিতে হবে।
মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়াহ মাদ্দাহ : ২৩৮; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ২/১৫৮; আলমাদখালুল ফিকহিল আম ২/৭৬৬; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ১/৬৫; আলওসীত ফিল কানুনিল মাদানী ৪/৩২৫; আলগারার ওয়া আছারুহু ফিলউকূদ পৃ. ২৬০; রদ্দুল মুহতার ৪/৫২৯
কয়েক মাস আগে আমি কেয়ারটেকারের একটি চাকুরি নিয়েছি। আমার মালিক...
কয়েক মাস আগে আমি কেয়ারটেকারের একটি চাকুরি নিয়েছি। আমার মালিক একজন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। আমি অবগত হয়েছি যে, তার আয়ের একটি অংশ হচ্ছে সুদ-ঘুষ। জানতে চাই, এ মালিকের চাকুরি করার কী হুকুম হবে?
আপনার কর্তা যেহেতু একজন উচ্চপদস্থ অফিসার। তাই তার বেতনও বেশি হবে। যা থেকে আপনার বেতন দেওয়া সহজেই সম্ভব। এ হিসাবে সেখানে চাকুরি করা এবং তার দেওয়া বেতন গ্রহণ করা অবৈধ হবে না। হ্যাঁ, কখনো হারাম উপার্জন থেকে দেওয়া হচ্ছে এটা নিশ্চিত হলে তা গ্রহণ করা বৈধ হবে না। সেক্ষেত্রে হালাল উপার্জন থেকে আপনার প্রাপ্য দেওয়ার আবেদন জানাতে পারেন।
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৮৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪২; ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৯/২৪২; হাশিয়া শরহে বেকায়া, ফাতাহ লখনভী ৪/৫৬
আমাদের দাদারা আমাদের গ্রামের বাড়ির সম্মুখে দক্ষিণ পার্শ্বে ৫৩ শতাংশ...
আমাদের দাদারা আমাদের গ্রামের বাড়ির সম্মুখে দক্ষিণ পার্শ্বে ৫৩ শতাংশ জমি মসজিদ ও কবরস্থানের জন্য দান করে গিয়েছেন। জমিটি পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা। উত্তরাংশে পূর্ব দিকে একটি টিনের মসজিদ ঘর এবং মসজিদের পশ্চিম পার্শ্বে পারিবারিক কবরস্থান হিসেবে তারা ব্যবহার করে আসছেন। যার উত্তর দিক দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা এবং পূর্ব পার্শ্ব দিয়ে উত্তর দক্ষিনে লম্বা নিজ বাড়িতে ও মসজিদে চলাচলের রাস্তা আছে। রাস্তার উত্তর পার্শ্বে প্রায় চার একর জমির উপর দাদাদের বসতবাড়ি। মসজিদ-কবরস্থানের উল্লেখিত ৫৩ শতাংশ প্লটের অবশিষ্ট প্রায় অর্ধেক অংশে পূর্ব পার্শ্বে মসজিদের জন্য বিরাট ইঁদারা এবং ইঁদারার পশ্চিম পার্শ্বের অবশিষ্ট জায়গা খালি পড়েছিল। পরবর্তীতে ইঁদারার পশ্চিম পার্শ্বের খালি জায়গাটায় মসজিদ-ঘরটি স্থানান্তর করেন। ঐ সময় থেকে অদ্যাবধি মসজিদের সাবেক জায়গাটি খালি পড়ে আছে।
আমাদের জামানায় ১৯৯২ ঈ. সালে এলাকায় সর্বশেষ ভূমিজরিপ এলে আমরা উক্ত ৫৩ শতাংশ জমি মসজিদ ও কবরস্থানের নামে ২৭ ও ২৬ শতাংশ করে আলাদা আলাদা ভাগ করে রেকর্ডের অন্তর্ভুক্ত করে দেই এবং যেহেতু দক্ষিণ পার্শ্বে ইঁদারা এবং মসজিদ-ঘর স্থানান্তরিত করা হয়েছে সে হিসাবে দক্ষিণের অংশ মসজিদের নামে এবং উত্তরের অংশ কবরস্থানের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু মসজিদের সাবেক জায়গাটি কবরস্থানের অংশে পড়েছে। মসজিদ এবং কবরের জায়গা মেপে বুঝ করতে গিয়ে দেখা গেল যে, মসজিদ ও কবরস্থানের উত্তর পার্শ্বে আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটি সম্পূর্ণ মসজিদ ও কবরস্থানের জায়গার মধ্যে পড়ে গিয়েছে। এমনকি রাস্তার উত্তর পার্শ্বে আমাদের বাড়ির সীমা মনে করে আমাদের ভাইয়েরা (শরিক) সারিবদ্ধভাবে যে সমস্ত ফলের ও কাঠের গাছ লাগিয়েছিলেন সেগুলোও সারিবদ্ধভাবে মসজিদ-কবরস্থানের জায়গায় পড়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় ভাইয়েরা মসজিদ-কবরস্থানকে উল্লেখিত জায়গা ছেড়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের লাগানো গাছগুলোর কিছু গাছ কেটে কাজে লাগিয়েছে এবং কিছু গাছ বিক্রি করে দিয়েছে। অবশিষ্ট গাছগুলোও কেটে ফেলে জায়গাটি খালি করে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আর আমাদের বাড়িতে ও মসজিদে চলাচলের যে সরূ রাস্তাটি আছে, উক্ত রাস্তাটি প্রশস্ত করে অন্য বড় এক রাস্তার সঙ্গে সংযোগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ এখন মাপের পর দেখা যাচ্ছে যে, রাস্তাটি মসজিদ-কবরস্থানের সীমার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। এখন আমাদের জানার বিষয় হল :
১. মসজিদ ও কবরস্থানের উল্লেখিত ৫৩ শতাংশ জায়গা আমরা যেভাবে ১৯৯২ সালের রেকর্ডে ভাগ করে দিয়েছি তা সঠিক হয়েছে কি না? না হয়ে থাকলে এখন কী করণীয়? আর মসজিদের সাবেক স্থানটি কবরস্থানের জায়গায় পড়ে গিয়েছে, সে বিষয়ে করণীয় কী?
২. বর্তমানে মসজিদটি বড় ও পাকা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় যদি কবরস্থানের কিছু জায়গা ব্যবহার করতে হয় তাহলে তা করা যাবে কি না?
৩. আমার ভাইয়েরা মসজিদ-কবরস্থানের সীমায় পড়ে যাওয়া তাদের লাগানো গাছগুলো কেটে ব্যবহার করেছে ও বিক্রি করেছে। এটি সঠিক হয়েছে কি না? না হলে এখন কী করণীয়? আর অবশিষ্ট গাছের হুকুম কী?
৪. মসজিদ-কবরস্থানের সীমানায় পড়ে যাওয়া উল্লেখিত রাস্তাটি সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরও প্রশস্ত করে অন্য বড় রাস্তার সঙ্গে মিলানো যাবে কি না? যদি না যায় তাহলে মসজিদ-কবরস্থানের অর্ধেক এবং আমাদের বাড়ির অংশ থেকে অর্ধেক জায়গার মাধ্যমে রাস্তাটি করা যাবে কি না? আর যদি তাও না হয় তাহলে যেভাবে রাস্তাটি ব্যবহার করে এসেছি অন্তত সেভাবে ব্যবহার করতে পারব কি না?
কুরআন মজীদ ও হাদীসের আলোকে বিষয়গুলোর সমাধান দিলে ইনশাআল্লাহ আমরা সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
(ক ও খ) প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ওয়াকফকারীগণ যেহেতু ৫৩ শতাংশ জায়গা মসজিদ এবং কবরস্থান উভয়ের জন্য যৌথভাবে ওয়াকফ করেছেন তাই মসজিদ এবং কবরস্থান উভয়ের জন্য সমান ভাগে অর্ধাঅর্ধি অর্থাৎ সাড়ে ছাব্বিশ শতাংশ করে ভাগ করতে হবে। আর ওয়াকফকারীগণ প্রথমে যে স্থানে মসজিদ করেছিলেন সেটিকেই মসজিদ হিসাবে বহাল রাখা জরুরি। উত্তর-দক্ষিণে কিংবা পূর্ব-পশ্চিমে যেভাবে সুবিধা হয় সাড়ে ছাব্বিশ শতাংশ মসজিদের জন্য রেখে বাকি অর্ধেক কবরস্থানের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতে হবে।
অতএব দক্ষিণ-পশ্চিমে নতুন করে যে মসজিদ বানানো হয়েছে তা মসজিদ থাকবে না। সেটা কবরস্থানের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। আর ১৯৯২ সালের রেকর্ড শুদ্ধ হয়নি। উপরে যেভাবে বলা হয়েছে সে অনুযায়ী সংশোধন করে নেওয়া জরুরি।
উত্তর : (গ) আপনার ভাইদের লাগানো গাছগুলো নিজেদের ব্যবহার করা বা বিক্রি করা সঠিক হয়েছে। অবশিষ্ট গাছগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। আর মসজিদ কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের কাছ থেকে মসজিদের জমি ব্যবহারের জন্য ভাড়া নিতে পারবে।
উত্তর : (ঘ) ওয়াকফের জায়গা যথাসম্ভব রাস-ার জন্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সেহেতু ব্যক্তিগত জমিতে রাস্তা বের করা সম্ভব হলে সেটাই করতে হবে। আর সম্ভব না হলে পূর্বে যতটুকু রাস্তা ব্যবহার করা হয়েছে তা ব্যবহার করা যাবে। রাস্তা বড় করতে চাইলে আপনাদের প্রস্তাব অনুযায়ী অর্ধেক বা বাকি অংশ নিজেদের জায়গা থেকে দিতে হবে। তবে সর্বাবস্থায় লক্ষণীয় যে, ওয়াকফের জায়গা থেকে এত বেশি জমি রাস্তার জন্য নেওয়া যাবে না যা ওয়াকফের ক্ষতি হয়।
প্রথম মাসআলা : সহীহ বুখারী ১/৩৮২;হেদায়া ২/৬৪৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৩৯ তৃতীয় মাসআলা : তানকীহুল ফাতাওয়া হামীদিয়া ২/১৮২ চতুর্থ মাসআলা : ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩০৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৬৮
আমার অনেকগুলো রিকশা আছে। অনেকে দুই বেলার জন্য ভাড়া নেয়...
আমার অনেকগুলো রিকশা আছে। অনেকে দুই বেলার জন্য ভাড়া নেয় আবার অনেকে এক বেলার জন্য। আমি তাদেরকে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেই। দুই বেলা চালালে এত দিতে হবে আর এক বেলা চালালে এত দিতে হবে।
জানিয়ে বাধিত করবেন যে, এই পন্থায় ভাড়া দেওয়া-নেওয়া এবং লাভবান হওয়া জায়েয আছে?
হ্যাঁ, ঐভাবে ভাড়া দেওয়া-নেওয়া বৈধ হয়েছে।।
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪২৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৯-৩০; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া পৃ. ৩৩৮-৩৩৯; আলবাহরুর রায়েক ৮/১০২; শরহুল মাজাল্লা খালিদ আতাসী ২/৬৮৬; রদ্দুল মুহতার ৬/২৯
আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করি। অফিসিয়াল কাজের জন্য আমাকে...
আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করি। অফিসিয়াল কাজের জন্য আমাকে কোম্পানি থেকে একটি কম্পিউটার দিয়েছে। ঐ কম্পিউটারে কোম্পানির ফাইল রয়েছে, যা বিভিন্ন লোকের কাছে প্রিন্ট করে বিক্রি করা হয়। আমার জন্য তা দেখার অনুমতি আছে তাই আমি পেনড্রাইভ দিয়ে ঐ ফাইলটি নিজস্ব কম্পিউটারে তাদের অনুমতি ছাড়া কপি করে নিয়েছি।
আমার জন্য কি তা জায়েয হয়েছে? না হলে এখন করণীয় কী?
উল্লেখ্য, আমার উদ্দেশ্য ব্যবসা নয়। কোনো সময় প্রয়োজন হলে নিজের জন্য ব্যবহার করামাত্র।
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী যেহেতু তারা অফিসিয়াল কাজের জন্যই অফিসে প্রোগ্রামটি দেখার অনুমতি দিয়েছে, বাসায় বা অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার এবং কপি করার অনুমতি দেয়নি, তাই কোম্পানির অনুমতি ছাড়া নিজস্ব কম্পিউটারে ফাইলটি কপি করা জায়েয হয়নি। এখন আপনার করণীয় হল ফাইলটি নিজের কম্পিউটার থেকে ডিলিট করে দেওয়া।
আননুতাফ ফিলফাতাওয়া পৃ. ৩৫১; মাবসূত সারাখসী ১১/১১০, ১১১, ১১৯; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩১২; হেদায়া ৩/২৭৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৮০-২৮১; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২২৮
আমি একজন ব্যবসায়ী। শুনেছি যে, ব্যবসায় সুদের মিশ্রন হারাম। অনেক...
আমি একজন ব্যবসায়ী। শুনেছি যে, ব্যবসায় সুদের মিশ্রন হারাম। অনেক সময় পণ্য বাকিতে বিক্রয় করতে হয়। আর তা সাধারণত বাজারদর থেকে কিছু বেশিতে বিক্রি করি। এখানে আমার জানার বিষয় এই যে, বাকি বিক্রিতে মূল্য বৃদ্ধি কি সুদের আওতায় পড়ে? এই বর্ধিত মূল্য গ্রহণ করা কি আমার জন্য বৈধ?
নগদ বিক্রির তুলনায় বাকি বিক্রিতে মূল্য কিছু বেশি রাখা দোষের নয়। তবে সাধারণত বাকির ক্ষেত্রে যে হারে অতিরিক্ত নেওয়া হয় তার চেয়ে বেশি নেওয়া ঠিক হবে না।
প্রকাশ থাকে যে, বাকি বিক্রির ক্ষেত্রে অধিক মূল্য নেওয়া সুদ নয়। অবশ্য মূল্য চুড়ান্ত করে চুক্তি সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে বা বিলম্বে মূল্য পরিশোধের কারণে যদি অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয় তবে তা সুদ ও হারাম হিসাবে গণ্য হবে।
জামে তিরমিযী ১/২৩৩; হেদায়া ৩/৭৪; বুহুছ ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ১/১০; আলবাহরুর রায়েক ৬/১১৪; আলমাবসূত সারাখসী ১৩/৭; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৫/১৪২
পুরান ঢাকায় শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন পদার্থ দ্বারা...
পুরান ঢাকায় শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন পদার্থ দ্বারা বিভিন্ন প্রকার প্রাণীর আকৃতিতে পাউরুটি, কেক, সন্দেশ ইত্যাদি বানাতে দেখা যায়। এসব প্রাণীর মধ্যে হারাম প্রাণী যেমন কুমির, ভোদর, গুই সাপ ইত্যাদি এবং হালাল প্রাণী যেমন বিভিন্ন জাতের মাছও থাকে। এগুলোকে শবে বরাতের বিশেষ খাবার বলে গণ্য করা হয় এবং খুব চড়া মূল্যে তা বিক্রি হয়। প্রশ্ন হল, প্রাণীর আকৃতিতে এসব খাবার তৈরি করা এগুলোর ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয আছে কি না?
শবে বরাত উপলক্ষে খাবারের প্রশ্নোক্ত আয়োজন এবং প্রাণীর আকৃতিতে তা তৈরির প্রচলনটি সম্পূর্ণ নাজায়েয। শরীয়তের দৃষ্টিতে এতে দু’টি আপত্তিকর বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছে। এক. কোনো প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি করা হারাম ও কবীরা গুনাহ। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে এবং প্রতিকৃতি প্রস্তুতকারীর জন্য আখেরাতে কঠিন শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, প্রতিকৃতি প্রস্তুতকারীরা আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে কঠিন আযাবের মুখোমুখি হবে।-সহীহ বুখারী ২/৮৮০
অপর হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন, সুদ ভক্ষণকারী ও সুদ প্রদানকারীর উপর, উল্কি অঙ্কন কারীনী নারী ও উল্কি গ্রহণকারীনী নারীর উপর এবং প্রতিকৃতি প্রস্তুতকারীর উপর।-সহীহ বুখারী ২/৮৮১
অন্য হাদীসে আরো বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ফেরেশতারা ওই ঘরে প্রবেশ করে না যাতে মূর্তি বা ছবি রয়েছে।-সহীহ মুসলিম ২/২১১২
দুই. শবে বরাতকে উপলক্ষ করে এ ধরনের খাবারের আয়োজন করাকে দ্বীনী বা নেকের কাজ মনে করা হয়, যা সুস্পষ্ট বিদআত ও কুসংস্কার। অতএব শবে বরাত বা অন্য কোনো উপলক্ষে প্রাণীর আকৃতিতে কোনো ধরনের খাবার তৈরি করা হারাম। এথেকে বিরত থাকা সকল মুসলমানের জন্য জরুরি। আর এ ধরনের প্রাণীর আকৃতি সম্বলিত খাবারের ক্রয়-বিক্রয়ও জায়েয নেই। কেননা, এর দ্বারা ওই নাজায়েয কাজে প্রস'তকারীদের সহযোগিতা করা হয়।
সহীহ বুখারী ২/৮৮০-৮৮১; শরহে মুসলিম নববী ১৪/৮১; আলমাদখাল ইবনে হাজ্জ্ব ১/২৯১; কিতাবুল হাওয়াদিছ ওয়ালবিদা’ পৃ. ১১৮; ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬৩২
সুদী ব্যাংকের একজন এমডির কয়েক সন্তানকে আমি পড়াই। এতে আমার...
সুদী ব্যাংকের একজন এমডির কয়েক সন্তানকে আমি পড়াই। এতে আমার মাসে ২০ হাজার টাকা ইনকাম হয়। যা দ্বারা আমার সংসার চলে। এছাড়া ইনকামের আমার আর কোনো ব্যবস্থা নেই। আমার জানা মতে তার ঐ সুদী চাকরি ছাড়া ইনকামের আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। জানার বিষয় যে, আমার জন্য কি ঐ টিউশনির টাকা বৈধ হবে?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির আয় যেহেতু হারাম, আর আপনি সে সম্পর্কে অবগত তাই তার হারাম উপার্জন থেকে দেওয়া বেতন আপনার জন্য গ্রহণ করা বৈধ হবে না। ঐ ব্যক্তির কর্তব্য, হালাল সম্পদ দ্বারা আপনার বেতন আদায় করা। যদি এ ব্যবস্থা না হয় তাহলে আপনি অন্য চাকরি খোঁজ করতে থাকেন এবং আল্লাহর কাছে ইসি-গফার করতে থাকেন। মোটামুটি চলার ব্যবস্থা হলেই এটা ছেড়ে দিতে হবে।
আহকামুল মালিল হারাম পৃ. ৩১৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৬৩; আযযাখীরা ১৩/৩১৭; আলবায়ান ওয়াত তাহসীল ১৮/৫১৪; বুহুছ ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা পৃ. ৪২৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৫২; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০১; রদ্দুল মুহতার ৪/১৯৩
আমার এক বন্ধু বিভিন্ন জিনিস আলু, পেয়াজ, তরকারির পাইকারি ব্যবসা...
আমার এক বন্ধু বিভিন্ন জিনিস আলু, পেয়াজ, তরকারির পাইকারি ব্যবসা করে। তাকে আমি কয়েক লক্ষ টাকা এই কথা বলে দিয়েছি যে, এতে যা লাভ হবে তা থেকে তুমি কিছু নিবে, আমাকে কিছু দিবে। সে আমাকে লভ্যাংশ থেকে কোনো মাসে দুই হাজার, কোনো মাসে সাতাইশ শ’, আবার কোনো মাসে একেক রকম অংকের টাকা সে আমাকে দিয়ে থাকে।
জানার বিষয় এই যে, সে আমাকে মাসে মাসে যে টাকাগুলো দিয়েছে তা কি সুদ হবে?
এক পক্ষের পুঁজি আর অন্যের শ্রম এই কারবারের একটি মূলনীতি হল পুঁজিদাতা এবং ব্যবসায়ী উভয়ের লভ্যাংশ শতকরা হারে নির্ধারিত হতে হবে। যেমন লাভের ৬০% পাবে বিনিয়োগকারী আর ৪০% পাবে ব্যবসায়ী। অথবা কম বেশি কোনো অংশ। যেহেতু প্রশ্নোক্ত চুক্তিতে শতকরা হার নির্ধারণ করা হয়নি; বরং লাভের কিছু অংশ দেওয়ার চুক্তি হয়েছে তাই এক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী আপনাদের মাঝে লাভ অর্ধাঅর্ধি হারে ভাগ করতে হবে। অতএব আপনাকে লাভ হিসাবে যা দেওয়া হয়েছে তা যদি অর্জিত মুনাফার ৫০% হয়ে থাকে তবে তা নেওয়া বৈধ হয়েছে। আর যদি কম হয়ে থাকে তবে বাকি অংশ আপনি নিয়ে নিতে পারবেন। আর ৫০% এর বেশি দিয়ে থাকলে আপনার ফেরত দিতে হবে।
উল্লেখ্য, এ ধরনের ব্যবসার পুরো হিসাব সংরক্ষণ করা জরুরি। যেন লভ্যাংশের বণ্টন যথাযথ হয়।
বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১১; মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ১৪১১; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৪/৩৩৩; মাবসূত সারাখসী ২২/২৩; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৫; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৪৮
আমরা তিন বন্ধু হলুদ, মরিচসহ বিভিন্ন মশলার ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে...
আমরা তিন বন্ধু হলুদ, মরিচসহ বিভিন্ন মশলার ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে ৫ লক্ষ টাকা করে ১৫ লক্ষ টাকা জমা করি। আমাদের চুক্তি হয় যে, যা লাভ হবে তিন ভাগ করে তিন জন নিব। পরবর্তীতে সমস্যা দেখা দেয় যে, তারা দু’জন চাকরি করার কারণে শ্রম দিতে প্রস্তুত নয় তাই তারা আমাকে বলেছে যে, তুমি ৮-১০ ঘণ্টা শ্রম দেবে। এ বাবদ তোমাকে লভ্যাংশ থেকে ৫ হাজার টাকা প্রথমে দেওয়া হবে। এরপর প্রথমোক্ত চুক্তি অনুযায়ী আমরা বাকি টাকা ভাগ করে নিব।
জানার বিষয় এই যে, আমাদের চুক্তি কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? না হলে এর বিকল্প কী হতে পারে?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনাদের কারবারটি শরীকানা কারবারের অন্তর্ভুক্ত। শরীকানা কারবারে কোনো অংশীদারের জন্য শ্রম বাবদ নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক ধার্য করা বৈধ নয়। অবশ্য কোনো অংশীদারের দক্ষতা বা শ্রমের কারণে তার জন্য কিছু বেশি লভ্যাংশ ধার্য করা যেতে পারে। যেমন প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার জন্য লভ্যাংশের ৪০%, আর তাদের দু’জনের জন্য ৩০% করে ৬০%।
মাবসূত সারাখসী ১১/১৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭৭, ৮৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২৪৪, ২৪৫; হিদায়া (ফাতহুল কাদীর) ৫/৩৯৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৭৭; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/২৬০, ২৬৮; রদ্দুল মুহতার ৪/৩১৬
আমাদের দেশের বাড়ির সব জমি বর্গা দেওয়া। বর্গাদার ফসলের অর্ধেক...
আমাদের দেশের বাড়ির সব জমি বর্গা দেওয়া। বর্গাদার ফসলের অর্ধেক পায় আর আমরা অর্ধেক। বর্গাদারের চাষাবাদ বাবদ কোনো খরচ আমরা দিই না। এটাই প্রচলিত নিয়ম। সাধারণত বছরে ২ বার ধান চাষ হয় এবং নতুন ধান ওঠার আগ পর্যন্ত পুরানো ধান বিক্রি করা হয় না। নতুন ধান উঠলে পুরানো ধান বিক্রি করে নতুন ধান গোলায় রাখা হয়। নতুন ধান ঘরে উঠতে প্রায় ৫-৬ মাস সময় লেগে যায়। এখন জানার বিষয় হল
ক) কোনো খরচ না দিয়ে বর্গা দেওয়ার বিধান কী?
খ) ধান ঘরে প্রায় ৫-৬ মাস থাকে। তারপর বিক্রি করা হয়। এটা মজুদদারীর পর্যায়ে পড়ে কি?
ক) হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে বর্গা দেওয়া জায়েয। জমির মালিকের জন্য বর্গা কারবারে খরচ দেওয়া জরুরি নয়। জমি মালিকের শুধু জমি আর চাষীর খরচ ও শ্রম এভাবে বর্গা চুক্তি বৈধ।
খ) প্রাপ্ত ফসল এভাবে রেখে দেওয়া নাজায়েয নয় এটা শরীয়তে নিষিদ্ধ মজুদদারীর অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে খাদ্যসঙ্কটের সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফসল বিক্রি না করে রেখে দেওয়া ঠিক নয়।
বর্গা চুক্তি: সহীহ মুসলিম ২/১৪; হিদায়া ৪/৪২৬; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৬০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৭৮; ফাতহুল কাদীর ৮/৩৮৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/৩৫২; ঘরে ধান রাখা : ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২১৪; হিদায়া ৪/৪৭১; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০৯; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৬/৩১৬; ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৯৯
আমরা কখনো রিকশা বা সিএনজি নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য ভাড়া করি।...
আমরা কখনো রিকশা বা সিএনজি নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য ভাড়া করি। এরপর একাকী যাত্রা করে পথিমধ্যে পরিচিত কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে ডেকে নিই। এধরনের ক্ষেত্রে রেওয়াজ আছে যে, চালক কোনো আপত্তিও করে না এবং বাড়তি ভাড়াও দেওয়া হয় না। জানার বিষয় এই যে, এভাবে পরবর্তীতে কোনো আরোহী নেওয়া শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে অনুমতি আছে কি না?
রিকশা ভাড়া নেওয়ার সময় চালকের সাথে যতজন আরোহীর চুক্তি হয় ততজনই তাতে আরোহণ করতে পারবে। পরে কাউকে নিতে চাইলে ভাড়ার সময় বলে নেওয়া উচিত। পূর্ব অবগতি ছাড়া একে তো চালকের সম্মতি নিতে হবে। আর অতিরিক্ত আরোহীর কারণে কিছু ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া কর্তব্য হবে। তবে কোনো এলাকায় যদি একজন ও দু’জন আরোহীর বেলায় কোনো তারতম্য না করা হয় তাহলে চালকের অনুমতি নিয়ে পরবর্তীতে একজনকে বিনা ভাড়ায় নিতে পারবে।
সিএনজি/অটোরিক্সায় সাধারণত যতজন যাত্রী আরোহন করা নিয়মসম্মত পরবর্তীতে সে সংখ্যক যাত্রী নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
শরহুল মাজাল্লা খালিদ আতাসী ২/৪৯০, মাদ্দা : ৪২৭-৪২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৪-৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৭২; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩৪৫
জুমার খুতবা নামাযের আগে আর ঈদের খুতবা নামাযের পরে এর...
জুমার খুতবা নামাযের আগে আর ঈদের খুতবা নামাযের পরে এর কারণ কী? এর মধ্যে কি কোনো ঘটনা ও তাৎপর্য আছে? জুমার খুতবাও নাকি পরে ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে খুতবার সময় একদিন বণিক দল আসলে খুতবা ছেড়ে মুসল্লীগণ সেখানে চলে যায়। এ ঘটনার পর থেকে নাকি খুতবাকে নামাযের আগে নেওয়া হয়েছে। এর সত্যতা কতটুকু? এ সম্পর্কিত হাদীস বরাতসহ বিস্তারিত জানাবেন।
জুমার খুতবা নামাযের পূর্বে হওয়া এবং ঈদের খুতবা পরে হওয়ার বিষয়টি শরীয়তের বহু দলীল দ্বারা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরবর্তীতে খুলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন সকলেই জুমার খুতবা নামাযের পূর্বে এবং ঈদের খুতবা নামাযের পরে প্রদান করতেন। তাদের অবিচ্ছিন্ন কর্মধারা এবং এ সম্পর্কিত হাদীস ও আছারের আলোকে জুমার খুতবা আগে হওয়া এবং ঈদের খুতবা পরে হওয়া প্রমাণিত। ঈদের খুতবা নামাযের পর : সহীহ বুখারী ১/১৩১; সহীহ মুসলিম ১/১৩১; জামে তিরমিযী ১/৭০; ফাতহুল বারী ২/৫২৬, জুমআর খুতবা নামাযের পূর্বে : সহীহ বুখারী ১/১২৮; সহীহ মুসলিম ১/২৮৩; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৪/১০৯
উল্লেখ্য, প্রশ্নে যে ঘটনাটির কথা বলা হয়েছে তা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমসহ হাদীসের অন্যান্য কিতাবে রয়েছে, যার সারমর্ম হল, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়িয়ে জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন ইতিমধ্যে হযরত দিহয়া রা.-এর ব্যবসায়ী কাফেলার আগমনের সংবাদ পেয়ে কিছু সংখ্যক সাহাবী ছাড়া সকলেই ঐ ব্যবসায়ী কাফেলার দিকে ছুটে গেলেন যার প্রেক্ষিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়, (তরজমা) যখন তারা ব্যবসা ও কৌতুক দেখল তখন তারা আপনাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে তার দিকে ছুটে গেল। বলুন, আল্লাহর নিকট যা আছে তা ক্রীড়া-কৌতুক ও ব্যবসা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা।-সূরা জুমআ : ১১
ঘটনা এ পর্যন্ত-ই। কিন্তু মারাসিলে আবু দাউদ (পৃ.৪৭) এ মুকাতিল ইবনে হাইয়ান এর বক্তব্যে রয়েছে যে, উক্ত ঘটনার পর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার খুতবা নামাযের আগে নিয়ে আসেন।
কিন্তু হাফেয ইবনে হাজার রাহ., আল্লামা আইনী রাহ. প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ মুকাতিলের এ বক্তব্য প্রমাণিত নয় বলে উল্লেখ করেছেন। তাফসীরে রুহুল মাআনীর গ্রন্থকার আল্লামা আলুসী রাহ. বলেন, (তরজমা) আমি এই বক্তব্যের সত্যতা পাইনি। প্রকাশ্য তো এটাই যে, জুমার খুতবা শুরু থেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের আগেই প্রদান করতেন।-
রুহুল মাআনী ২৮/১০৫; ফাতহুল বারী ২/৪৯৩; উমদাতুল কারী ৬/২৪৭
আমি একটি ফার্মেসির মালিক। ফার্মেসিটি হাসপাতালের পাশে হওয়ার কারণে বিভিন্ন...
আমি একটি ফার্মেসির মালিক। ফার্মেসিটি হাসপাতালের পাশে হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময় রোগীরা রক্ত নিতে আসে। তাদের প্রয়োজন পূরণের জন্য আমি ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত সংগ্রহ করি। এখন আমার জিজ্ঞাসা হল, রক্ত বিক্রি করে এর কোনো বিনিময় গ্রহণ জায়েয হবে কি না?
রক্ত বিক্রি করা জায়েয নয়। প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে তা আদান-প্রদান করা যেতে পারে। কোনো অবস'ায় একে ব্যবসার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা বৈধ হবে না। অবশ্য রক্ত সংগ্রহ করতে যা খরচ হয় তা গ্রহিতা থেকে নেওয়া যাবে। এর বেশি নেওয়া জায়েয হবে না। কেননা বেশি নিলেই তা রক্তের বিনিময়ে নেওয়া হবে। আর রক্তের বিনিময়ে কোনো কিছু গ্রহণ করা বৈধ নয়।
আহকামুল কুরআন ইবনে আরাবী ১/৫৩; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৩৪৮৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৩৩, প্রয়োজনের সময় রক্ত ক্রয় সংক্রান- : ফাতহুল কাদীর ৬/৬১; বুহুছ ও ফাতাওয়া মুআসিরা ৩/৭৬; আলবুয়ূউয যাররা পৃ. ৪০২; আলমাওসূআ তিব্বিয়্যাহ ফিকহিয়্যাহ পৃ. ৪৬৫
এক প্রবাসী আমাকে মুদারাবার ভিত্তিতে ব্যবসা করার জন্য ৫০,০০০/- টাকা...
এক প্রবাসী আমাকে মুদারাবার ভিত্তিতে ব্যবসা করার জন্য ৫০,০০০/- টাকা দিবে বলেছিলেন। অন্যদিকে তিনি ধান প্রদানের শর্তে কিছু লোককে ঋণ দিয়েছিলেন। এখন তিনি আমাকে বলেছেন যে, ঋণ গ্রহীতাদের নিকট থেকে ধান উসূল করে তা বিক্রি করে ৫০,০০০/- টাকা নেওয়ার জন্য। জানতে চাই, এভাবে মুদারাবার মূলধন নেওয়া বৈধ হবে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ প্রবাসী আপনাকে দু’টি দায়িত্ব দিয়েছে। মুদারাবার ভিত্তিতে তার ৫০,০০০/- টাকা ব্যবসায় খাটানো এবং ঋণ গ্রহীতাদের নিকট থেকে ঋণ উসূল করে তা বিক্রির মাধ্যমে এই টাকা সংগ্রহ করা। প্রত্যেকটি চুক্তি স্বতন্ত্রভাবে সহীহ। এক্ষেত্রে আপনি যদি ঐভাবে ৫০,০০০/- টাকা সংগ্রহ করতে পারেন তবে সে টাকা দ্বারা মুদারাবা ব্যবসা করতে কোনো সমস্যা নেই। টাকা সংগ্রহ করার আগে মুদারাবা কারবার শুরু হবে না। তাই এ বাবদ কোনো কিছু খরচ হলে তা ঐ প্রবাসীর কাছ থেকে নিয়ে নিতে পারবেন।
পারবেন।-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৩-১১৪; ফাতহুল কাদীর ৭/৪১৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৭
আমাদের এলাকায় বড় বড় নৌকা আছে। বর্ষাকালে লোকজন তাদের প্রয়োজনে...
আমাদের এলাকায় বড় বড় নৌকা আছে। বর্ষাকালে লোকজন তাদের প্রয়োজনে নৌকা ভাড়ায় দিয়ে থাকে। এভাবে চুক্তি করে যে, চুক্তিগ্রহণকারী নৌকা ভাড়ায় খাটাবে। যা উপার্জন হবে তা নৌকার মালিক ও তাদের মাঝে তিন ভাগে বন্টিত হবে। এক ভাগ নৌকার মালিক পাবে আর দুই ভাগ তারা পাবে। জানতে চাই, তাদের এ চুক্তি শরীয়তসম্মত কি না?
প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি বৈধ হয়নি। এভাবে চুক্তি করে নৌকা চালালে অর্জিত পুরো আয়ের মালিক হবে নৌকার মালিক। আর কর্মচারিগণ তাদের কাজের জন্য মালিক থেকে ন্যায্য পারিশ্রমিক পাবে।
পাবে।-আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮৪; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/২৬৬; আননাহরুল ফায়েক ৩/৩০৭; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৩২৬
আমার পিতা একজন কৃষক। তিনি চাষাবাদ করার জন্য তিন বিঘা...
আমার পিতা একজন কৃষক। তিনি চাষাবাদ করার জন্য তিন বিঘা জমি এক বৎসরের জন্য ২০,০০০/- টাকায় ভাড়া নিয়েছিলেন, কিন' কোনো কারণে এ বছর তার পক্ষে চাষাবাদ করা সম্ভব নয়। এজন্য তিনি উক্ত ভাড়াকৃত জমি তৃতীয় ব্যক্তির কাছে ২৫,০০০/- টাকায় ভাড়া দিয়েছেন এবং এতে মালিকের পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
উল্লেখ্য যে, আমার পিতা উক্ত জমিতে কোনো কাজ করেননি। তাই এক্ষেত্রে আমার জানার বিষয় হল, আমার পিতা তৃতীয় ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেওয়ার কারণে যে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছেন তা গ্রহণ করা বৈধ হবে কি না? যদি বৈধ না হয় তাহলে এ টাকার ব্যাপারে তার করণীয় কী?
জমি-জায়গা ভাড়া নিয়ে অন্যত্র বেশি মূল্যে ভাড়া দেওয়ার জন্য ভাড়াটিয়াকে তাতে সংস্কারমূলক কজ করা শর্ত। প্রশ্নোক্ত অবস'ায় আপনার পিতা যেহেতু ঐ জমিতে সংস্কারমূলক কিছু করেননি তাই তার জন্য ঐ জমির ভাড়া বাবদ বিশ হাজার টাকার অতিরিক্ত গ্রহণ করা বৈধ হবে না। অতিরিক্ত নিলে তা ছদকা করে দিতে হবে।
হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৬৭; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৬৮৬; মাজমাউল আনহুর ৩/৫৬৩; আলমুগনী ইবনে কুদামা ৮/৫৬; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৯১
আমাদের একটি গরু আছে। আমরা এ বছর কোনো চাষাবাদ করছি...
আমাদের একটি গরু আছে। আমরা এ বছর কোনো চাষাবাদ করছি না। অন্য এক লোক আমাদের গরুটি নিয়ে তার গরুর সাথে জুড়ে হালচাষ করে। আমরা শর্ত দিয়েছি, আমাদের গরু যতদিন নেওয়া হবে প্রতিদিন পঞ্চাশ টাকা করে দিতে হবে। জানতে চাই, এ টাকা গ্রহণ করা আমাদের জন্য বৈধ হবে কি না?
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে গরু ভাড়া দেওয়া বৈধ। অতএব এর আয় গ্রহণ করা যাবে
যাবে।-শরহুল মাজাল্লাহ খালেদ আতাসী ২/৬৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৬; মাজমাউল আনহুর ৩/৫২৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৩; ফাতহুল কাদীর ৮/২৫; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া পৃ. ৩৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৪
আমার এক খালাত ভাই মুদীব্যবসায়ী। সে কিছুদিন আগে দু’ লাখ...
আমার এক খালাত ভাই মুদীব্যবসায়ী। সে কিছুদিন আগে দু’ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করার সময় আমাকে বলে, তুমি আমার দোকানে টাকা বিনিয়োগ কর। তোমার টাকার যা লাভ হবে তার পুরোটাই তুমি পাবে এবং ব্যবসায় তোমাকে কোনো শ্রমও দিতে হবে না। আমি এ শর্তে তার ব্যবসায় এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসার এক তৃতীয়াংশের অংশীদার হয়ে যাই।
জানার বিষয় হল, আমাদের উক্ত চুক্তি বৈধ হয়েছে কি না? আর চুক্তি অনুযায়ী লাভের এক তৃতীয়াংশ আমি নিতে পারব কি না? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
প্রশ্নোক্ত চুক্তিটি বৈধ হয়েছে এবং চুক্তি অনুযায়ী পুরো ব্যবসার লাভের এক তৃতীয়াংশ আপনি নিতে পারবেন। আর ব্যবসায় লোকসান হলে আপনার মূলধন অনুযায়ী ক্ষতি বহন করতে হবে।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩২০; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮৩; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৭৭; মিনহাতুল খালেক ৫/১৭৫; রদ্দুল মুহতার ৪/৩১৩ ও ৫/৬৪৭
আমাদের দেশে একটি কোম্পানি রয়েছে, যারা এম. এল. এল. পদ্ধতি...
আমাদের দেশে একটি কোম্পানি রয়েছে, যারা এম. এল. এল. পদ্ধতি অনুযায়ী লোক ভর্তি করার মাধ্যমে তাদের কোম্পানিকে পরিচালিত করে আসছে এবং তারা সদস্যদেরকে এই আশা দিয়ে থাকে যে, তাদের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করলে প্রতি মাসে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা অর্জন করা যাবে।
আমাদের এলাকায় এর কার্যক্রম বেশ প্রচলিত। অনেকেই সদস্য হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমাকেও অনেকে এ কাজ করতে বলছে। আমারও মাসিক বেতন এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা হবে বলে আশা দিচ্ছে।
এখন আমার প্রশ্ন হল এই যে, উক্ত কোম্পানির সদস্য হয়ে তাদের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা উপার্জন করা বৈধ হবে কি? বিস্তারিত দলীল-প্রমাণসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।
এম.এল.এল. পদ্ধতি বহু কারণে শরীয়তসম্মত নয়। এ পদ্ধতির ব্যবসা শরীয়ত সমর্থন করে না। সুতরাং এ পদ্ধতি অনুসৃত সকল কোম্পানির ব্যবসা নাজায়েয।
উল্লেখ্য. দেশের বিজ্ঞ মুফতীদের সমন্বয়ে গঠিত বেফাকুল মাদারিস মুফতী বোর্ড ঢাকা দীর্ঘ গবেষণা ও পর্যালোচনার পর উক্ত এম.এল.এল কারবারকে সম্পূর্ণ শরীয়ত বিরোধী ও নাজায়েয হওয়ার ফতওয়া প্রদান করেছে। উক্ত ফতওয়া দেশের নির্ভরযোগ্য ফতওয়া বিভাগ এবং বড় বড় মাদরাসার মুফতীদের স্বাক্ষরসহ পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছে। যাত্রাবাড়ির কাজলায় অবস্থিত বেফাক অফিস থেকে পুস্তিকাটি সংগ্রহ করে পড়লে এ সম্পর্কিত শরয়ী দলিলাদি সহজেই জানা সম্ভব।
আমি এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৪০,০০০/- টাকা ঋণ নিই এবং...
আমি এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৪০,০০০/- টাকা ঋণ নিই এবং সেই টাকা নিয়ে আমার বেশ উপকার হয়। সে আমাকে বলেছে, তোমার যে পরিমান ইচ্ছা বাড়িয়ে দিও। আমার উপকারের বিনিময় হিসেবে তাকে অতিরিক্ত কিছু দেওয়া যাবে কি?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঋণদাতা যেহেতু ঋণের ৪০,০০০/- টাকা থেকে কিছু অতিরিক্ত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাই এ অতিরিক্ত দেওয়া-নেওয়া সুদ হবে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী ফুযালাহ বিন উবায়দ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ঋণের সাথে অতিরিক্ত কিছু দেওয়া নেওয়ার শর্ত থাকে তা সুদ।-আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৫/৩৫০
এমনিভাবে ইবনে সীরিন রাহ. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে তার ঘোড়ায় আরোহণের শর্তে কিছু দিরহাম ঋণ দিল। ইবনে মাসউদ রা.কে তা জানানো হলে তিনি বললেন, তার জন্য ঘোড়ায় আরোহণ করাটা সুদ হয়েছে।-প্রাগুক্ত
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা সুদ দাতা, গ্রহীতা, সাক্ষী ও লেখক সকলকে অভিসম্পাত করেন।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৩৭২৫; ইলাউস সুনান ১৪/৫১৫; মাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৩৮৮
আমি অগ্রিম ভাড়া প্রদান করে জনৈক ব্যক্তি থেকে দশ বছর...
আমি অগ্রিম ভাড়া প্রদান করে জনৈক ব্যক্তি থেকে দশ বছর মেয়াদে একটি গুদাম ভাড়া নেই। যার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন মালিক বিশেষ প্রয়োজনে ছয় মাসের জন্য ঐ গুদামটি আমার কাছ থেকে ভাড়ায় নিতে চাচ্ছে। জানার বিষয় হল, আমার জন্য গুদামটি মালিকের নিকট ভাড়া দেওয়া বৈধ হবে কি?
না, মালিকের নিটক দোকানটি ভাড়া দেওয়া বৈধ হবে না। কারণ ভাড়া নেওয়া বস্ত্ত পুনরায় মালিকের নিকট ভাড়া দেওয়া বৈধ নয়।
এক্ষেত্রে মালিককে যে ছয় মাসের জন্য দোকানটি দিতে চাচ্ছেন সেই ছয় মাসের জন্য আপনার ভাড়া চুক্তি বাতিল করতে হবে। মালিক এ কয় মাসের ভাড়া আপনাকে ফেরত দিয়ে দিবে। আপনি ছয় মাসের জন্য যত টাকা তাকে প্রদান করেছিলেন তত টাকাই ফেরত নিতে পারবেন। এর চেয়ে বেশি নেওয়া-দেওয়া জায়েয হবে না।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৫১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৯১; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪২৫
আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে যে, শীতকালে গাছিরা খেজুর গাছ ভাড়া...
আমাদের এলাকায় প্রচলন আছে যে, শীতকালে গাছিরা খেজুর গাছ ভাড়া নেয়। পুরো শীত মৌসুমে খেজুরের রস বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা থেকে তারা মালিকের ভাড়া পরিশোধ করে। প্রশ্ন হল, উক্ত কারবারটি শরীয়তের দৃষ্টিতে সহীহ কি না?
রসের উদ্দেশ্যে খেজুর গাছ ভাড়া দেওয়া-নেওয়া জায়েয নয়। উল্লেখ্য, প্রশ্নোক্ত কারবারটি শরীয়তসম্মতভাবে করতে চাইলে এভাবে করতে পারবে যে, গাছি গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে দিবে এবং তা বিক্রি করে দিবে আর তার পরিশ্রমের বিনিময়ে সে মালিক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পারিশ্রমিক নিবে। এক্ষেত্রে রস বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে তা পাবে গাছের মালিক।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৮
ঢাকা শহর ও তার আশপাশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়ানোর জন্য...
ঢাকা শহর ও তার আশপাশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়ানোর জন্য আমরা একটি মাইক্রোবাস ভাড়া নিই। চুক্তি ছিল, তেলখরচ ছাড়াও গাড়ির মালিককে এক দিনের জন্য ১৫,০০/- টাকা ভাড়া দিতে হবে। কিন্তু বিশেষ কারণে আমরা যেতে পারিনি। গাড়িটি বিকেল পর্যন্ত আমাদের বাসার সামনে অপেক্ষায় ছিল। আমাদের না যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গাড়িটি ফেরত যায়। জানতে চাই, এখন আমাদের কি ব্যবহার না করা সত্ত্বেও এর নির্ধারিত ভাড়া আদায় করতে হবে?
হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গাড়িটি ব্যবহার না হলেও চুক্তিকৃত ১৫,০০/- টাকাই আদায় করতে হবে। তবে যেহেতু গাড়ি ব্যবহার হয়নি তাই তেল খরচ দিতে হবে না।
-আলআশবাহ ওয়াননাযাইর পৃ. ৩২০; শরহুল মাজাল্লাহ খালিদ আতাসী ২/৫৫৪; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩৭১; মাজাল্লাহ পৃ. ৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১১
আমাদের এলাকায় সরিষার বিনিময়ে সরিষার তেল আদানপ্রদান করা হয়। এককেজি...
আমাদের এলাকায় সরিষার বিনিময়ে সরিষার তেল আদানপ্রদান করা হয়। এককেজি সরিষা দিলে ২০০ গ্রাম তেল দেয়। মিলে গিয়ে ভাঙ্গানো ঝামেলা, তাই এমন কারবারের প্রচলন হয়েছে। এককেজি সরিষা ভাঙ্গালে প্রায় ২২০ থেকে ২২৫ গ্রাম তেল হয়।
এখন জানতে চাই, আমাদের এলাকার কারবারটি বৈধ কি না?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনাদের এলাকার ওই কারবারটি বৈধ নয়। তা সুদি কারবারের অন্তর্ভুক্ত। কারণ সরিষার বিনিময়ে সরিষার তেল নিতে চাইলে সরিষা ভাঙ্গালে যতটুকু তেল পাওযা যাবে তার চেয়ে বেশি তেল দিয়ে লেনদেন করতে হবে। তাই এক কেজি সরিষার বিনিময়ে ২২০ বা ২২৫ গ্রামের বেশি তেল দিতে হবে। যেন সরিষার মধ্যে যতটুকু তেল আছে সেটারও বিনিময়ে সমপিরিমাণ তেল হয়ে যায়। আর অতিরিক্ত যতটুকু থাকবে তা খোলের পরিবর্তে হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আপনারা সরিষা ও তেলে লেনদেন না করে উভয়টি টাকার মোকাবেলায় বেচাকেনা করতে পারেন। অর্থাৎ সরিষার দাম নির্ধারণ করে টাকায় তা বিক্রি করবেন। এর পর তা দ্বারা তেল ক্রয় করবেন।
-আলবাহরুর রায়েক ৬/১৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪১৩; ফাতহুল কাদীর ৬/১৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৮৪
আমি একটি এনজিওতে কর্মসূচি সংগঠক পদে চাকরি করছি। এই চাকরির...
আমি একটি এনজিওতে কর্মসূচি সংগঠক পদে চাকরি করছি। এই চাকরির উপর আমার পরিবার নির্ভরশীল। আমার কাজ হল, মানুষের মাঝে টাকা ঋণ দেওয়া এবং সে টাকা কিছু বেশিতে আদায় করা। যেমন কাউকে ৫,০০০/-টাকা ঋণ দিলে তার কাছ থেকে কিস্তির মাধ্যমে ৬,০০০/- টাকা আদায় করা হয়। আর এ কাজের জন্য আমাকে মাসিক ৭,০০০/-টাকা বেতন দেওয়া হয়। আমার প্রশ্ন হল, এ বেতন ও এই ধরনের চাকরি কি বৈধ হবে? এ টাকা দিয়ে জীবন ধারণ করে ইবাদত করলে তা কি গ্রহণযোগ্য হবে?
আপনি যে পন্থায় লেনদেন করে থাকেন তা সুদেরই একটি প্রকার। আর সুদ হচ্ছে নিকৃষ্টতম হারাম। তাই এ পদে চাকরি করা জায়েয হবে না এবং এর বেতন ভোগ করাও নাজায়েয। অতএব যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে উপার্জনের কোনো বৈধ পন্থা খুঁজে বের করতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে।
-সূরা বাকারা : ২৭৫; সহীহ বুখারী ১/২৮০; সুনানে আবু দাউদ ২/১১৭; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২২; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬৬; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৬১৯; বুহুছ ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা ১/৩৩৯
আমি একজন ব্যবসায়ী। আমি আমার দোকানের কাস্টমারের কারো কাছ থেকে...
আমি একজন ব্যবসায়ী। আমি আমার দোকানের কাস্টমারের কারো কাছ থেকে বেশি মূল্য রাখি। অর্থাৎ ন্যায্যমূল্য রাখি। আবার একান্ত আপনজনদের কাছে খুব কমমূল্যে বিক্রি করি। এভাবে বেশিকম করে বিক্রি করা জায়েয হবে কি? এর জন্য কি হাশরের ময়দানে জবাবদিহি করতে হবে?
আপনজনদের থেকে ন্যায্যমূল্যের কম রাখা এবং সাধারণ ক্রেতাদের থেকে ন্যায্যমূল্য নেওয়া দোষনীয় নয়। তবে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি যেন না নেওয়া হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
-সূরা নিসা : ২৯; তাফসীরে মাযহারী ২/৮৭; হেদায়া ৩/৭৫; ফাতহুল কাদীর ৬/১৪৩; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২০
আমার একটি দোকান অনেক দিন যাবত খালি পড়ে আছে। একদিন...
আমার একটি দোকান অনেক দিন যাবত খালি পড়ে আছে। একদিন আমার এক বন্ধু বলল, তোর দোকানটি তো খালিই পড়ে আছে আমার কাছে কিছু টাকা আছে তা দিয়ে একটি ফটোস্ট্যাট মেশিন ক্রয় করে তোর দোকানে ব্যবসা করব। যা মুনাফা হবে তা থেকে ৩০% তোকে দিব। এতে আমি রাজি হয়েছি। এখন আমার প্রশ্ন হল, আমাদের উক্ত চুক্তিটি কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? না হলে শরীয়তের বিধান জানিয়ে উপকৃত করবেন।
আপনাদের উক্ত চুক্তিটি সহীহ হয়নি। কারণ একজনের দোকান ও অন্যের মেশিন এবং স্থান মিলে যৌথ মূলধনী কারবার হয় না। সুতরাং যৌথ ব্যবসার মতো লাভের অংশ থেকে আপনার পাওনা ধার্য করা ঠিক হয়নি। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি হল, দোকানের জন্য একটি ভাড়া ধার্য করা, যা মেয়াদান্তে পরিশোধ করতে হবে। চাই ব্যবসায় লাভ হোক বা না হোক।
-মাজাল্লা, মাদ্দাহ ১৩৪৪; পৃ. ২৫২; শরহুল মাজাল্লা খালিদ আতাসী ৪/২৬৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮৪
আমার একটি গাড়ির গ্যারেজ আছে। সেখানে বিভিন্ন কাজের জন্য মাসিক...
আমার একটি গাড়ির গ্যারেজ আছে। সেখানে বিভিন্ন কাজের জন্য মাসিক বেতন হিসেবে কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছি। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায় যে, মাসে ৭/৮ দিন পর্যন্ত কোনো কাজ থাকে না। ফলে কর্মচারীরা বেকার বসে থাকে। এতে কাঙ্খিত আয়ের চেয়ে অনেক কম আয় হয়। এখন জানার বিষয় হল, যদি কোনো মাসে এমন হয় তাহলে কর্মচারীদের মাসিক বেতন হতে বেকার দিনগুলোর টাকা কেটে রাখা বৈধ হবে কি?
যদি কর্মচারীগণকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তারা ডিউটির নির্দিষ্ট সময় চাকুরীস্থলে উপস্থিত থাকে ও কাজের জন্য প্রস্ত্তত থাকে তাহলে কাজ না থাকলেও পূর্ণ সময়ের বেতন দিতে হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মাস শেষে তারা পূর্ণ মাসের বেতনই পাবে। কাজ না থাকায় বেকার দিনগুলোর বেতন কম দেওয়া বৈধ হবে না।
-মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়া মাদ্দাহ ৪২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৬৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৫০০
আমি এক বাড়িতে ভাড়া থাকি। বাড়িতে কয়েকটি পুরাতন টিনের ঘর...
আমি এক বাড়িতে ভাড়া থাকি। বাড়িতে কয়েকটি পুরাতন টিনের ঘর রয়েছে। একবার ঝড়-তুফান হলে একটি ঘরে বৃষ্টির সময় পানি পড়া শুরু হয় এবং টয়লেটটি পড়ে যায়। বাড়ির মালিক শহরে থাকে। এক বছর পরপর এসে ভাড়া নিয়ে যায়। তাকে ফোন করে জানালে তিনি মিস্ত্রি এনে ঠিক করে নিতে বলেন। আমি মিস্ত্রি এনে ঠিক করে নেই। কিন্তু মালিক পরবর্তীতে এ খরচ দিতে চাচ্ছে না। জানতে চাই, এ খরচ কার দায়িত্বে হবে?
ভাড়া ঘরবাড়ি মেরামতের দায়িত্ব মালিকের। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনি যেহেতু মালিকের অনুমতিতেই মেরামতের কাজ করেছেন তাই এই খরচ মালিককেই দিতে হবে।
উল্লেখ্য, ভাড়াটিয়ার ত্রুটির কারণে কোনো কিছু নষ্ট হয়ে থাকলে শুধু এর ক্ষতিপূরণ তাকে দিতে হবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৪৮; মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ ৫২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৯
আমি এক মসজিদের ইমাম। জনৈক মুসল্লী আমাকে তার জমি চাষাবাদ...
আমি এক মসজিদের ইমাম। জনৈক মুসল্লী আমাকে তার জমি চাষাবাদ করার জন্য সাময়িক সময়ের জন্য দিয়েছে। আমি চাচ্ছি, নিজে চাষাবাদ না করে এ জমি অন্য কাউকে ভাড়ায় দিব। প্রশ্ন হল, আমার জন্য কি তা বৈধ হবে?
জমির মালিক অনুমতি দিলে জমিটি অন্যত্র ভাড়া দিতে পারবেন। মালিকের অনুমতি ছাড়া ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩২০; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮১; মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ ৮২৩-৮৩২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৯০; আলজামেউস সগীর পৃ. ৪৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৭৯
আমি গ্রামের এক লোকের নিকট বিশ শতাংশ জমি পাঁচ হাজার...
আমি গ্রামের এক লোকের নিকট বিশ শতাংশ জমি পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া দেই। তিনি সেই জমি অন্য একজনের নিকট বর্গা দেন। আমার টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আমি তাকে বললাম, আপনি বর্গা হিসাবে এই জমি থেকে যে পরিমাণ ফসল পান ঐ পরিমাণ ফসল আমি আপনাকে দিয়ে দিব। তবে এ জমিটা পুনরায় অন্য একজনকে ভাড়া দিতে চাই। জানতে চাই, এ প্রস্তাবে তিনি সম্মত হলে এমন করা জায়েয হবে কি?
প্রশ্নের বিবরণ দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, আপনাদের কারবারটি প্রকারান্তরে এমনই হয়ে যাচ্ছে যেন মালিক তার জমির ভাড়াটিয়া থেকে আবার ভাড়া নিচ্ছে। আর মালিকের জন্য নিজের জিনিস ভাড়া নেওয়ার কোনো বৈধতা ফিকহে ইসলামীতে নেই।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৭০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৯১
বর্তমানে বাজারে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে লাকি কুপন ছাড়া হয়। ক্রেতা...
বর্তমানে বাজারে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে লাকি কুপন ছাড়া হয়। ক্রেতা নির্দিষ্ট পরিমাণ মাল কিনলে তাকে একটি কুপন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে লটারির মাধ্যমে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। প্রশ্ন হল, এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা-বেচা করা কি জায়েয হবে? লটারিতে বিজয়ী হলে পুরস্কার গ্রহণ করা যাবে কি?
যদি পুরস্কারের কুপন ছাড়ার কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা না হয় কিংবা এর কারণে ক্রেতাদেরকে কোনোরূপ ধোঁকা দেওয়ার অভিপ্রায় না থাকে যথা-নিম্নমানের মাল চালিয়ে দেওয়া ইত্যাদি এবং ক্রেতা শুধু পুরস্কার পাওয়ার উদ্দেশ্যেই ক্রয় করে না থাকে। তাহলে এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা-বেচা করা এবং লটারিতে বিজয়ী হলে পুরস্কার গ্রহণ করাও জায়েয হবে। এটি মূলত মূল্যছাড়েরই একটি পদ্ধতি।
উল্লেখ্য, পণ্যের অধিক প্রচারের জন্য এভাবে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা পছন্দনীয় নয়; বরং পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য শরীয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নিয়ম হল, ব্যাপকভাবে মূল্যছাড় দেওয়া কিংবা পূর্বের মূল্য বহাল রেখে পণ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া কিংবা পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।
-বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআছিরাহ ২/২৩২; ফাতাওয়া মুআছিরাহ ২/৪২০
আমার এক বর্গা চাষী আউশ ধানের মৌসুমে আমার প্রাপ্য পাঁচ...
আমার এক বর্গা চাষী আউশ ধানের মৌসুমে আমার প্রাপ্য পাঁচ মণ ধান করজ হিসেবে রেখে দিয়েছিল। অতপর আমনের মৌসুমে করজ পরিশোধ করতে তিন মণ সাধারণ ধান আর দু’মণ পোলাওর ধান দিয়েছে। যেহেতু পোলাওর ধানের দাম অন্যান্য ধানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তাই আমি প্রথমে নিতে অসম্মতি প্রকাশ করলেও পরে এ ধানের প্রয়োজন আছে বিধায় নিয়ে নিয়েছি। এখন প্রশ্ন হল, সাধারণ ধানের পরিবর্তে এ অধিক মূল্যের ধান গ্রহণ করা আমার জন্য বৈধ হয়েছে কি না?
করজ দেওয়ার সময় যদি উন্নত জাতের ও বেশি মূল্যের ধান দেওয়ার কিংবা যে কোনোভাবে ঋণদাতাকে লাভবান করার শর্ত না হয়ে থাকে এবং সমাজে এমন কোনো প্রচলনও না থাকে; বরং ঋণগ্রহীতা করজ পরিশোধ করার সময় স্বেচ্ছায় ভালো ধান দিয়ে থাকে তাহলে ঋণদাতার জন্য তা গ্রহণ করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে তা সুদ হবে না।
-সহীহ বুখারী ১/৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৯; নুতাফ ফিলফাতাওয়া পৃ. ২৯৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/২০২; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬৫
একজন লোক নির্বাচনী ক্লাব বানানোর উদ্দেশ্যে চার মাসের জন্য আমার...
একজন লোক নির্বাচনী ক্লাব বানানোর উদ্দেশ্যে চার মাসের জন্য আমার একটি ঘর ভাড়ায় নিয়েছিল। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল মাসে তিন হাজার টাকা করে। কিন্তু ঐ লোক দু’মাসের ভাড়া সময়মতো আদায় করলেও বাকি দু’মাসের টাকা পরিশোধ করেনি। তার সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তার কাছে ভাড়া চাই। সে দিতে অস্বীকার করে। সে বলছে, ঘরটি ঠিকমতো দু’মাস ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি দু’মাস ব্যবহার হয়নি। চার মাসের টাকা কেন দিব? অন্য একজন আমাকে বলেছে, সে নাকি দলের অফিস থেকে চার মাসের ভাড়াই উঠিয়েছে। কিন্তু আমাকে দিচ্ছে না। প্রশ্ন হল, সে যেহেতু দু’মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আমার সাথে কৃত চুক্তি বাতিল করেনি। আর আমিও তার কাছে ঘরটি ভাড়ায় দেওয়ার কারণে অন্যের কাছে ভাড়া দিতে পারিনি। তাই আমি কি তার কাছ থেকে বাকি দু’মাসের ভাড়া পাব?
প্রশ্নোক্ত পুরো চার মাসই ঘরটি যদি ব্যবহারের উপযোগী থাকে এবং ভাড়া গ্রহিতার নিয়ন্ত্রনে থাকে তবে পূর্ণ সময়ের ভাড়াই পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে ভাড়াগ্রহিতা দু’মাস ব্যবহার না করলেও পুরো চার মাসের ভাড়াই আদায় করতে হবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২২৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১০৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১১
এক ফ্যাক্টরির মালিকের সাথে এক ক্রেতার (বায়ারের) একটি চুক্তি হল...
এক ফ্যাক্টরির মালিকের সাথে এক ক্রেতার (বায়ারের) একটি চুক্তি হল যে, ফ্যাক্টরি মালিক তাকে ১ লক্ষ টি-শার্ট তৈরি করে দিবে। বায়ার শার্ট তৈরি করার উপকরণ, যেমন-কাপড়, বোতাম, সুতা ইত্যাদি সরবরাহ করবে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বায়ার টি-শার্ট তৈরির উপকরণ একটু বেশি দেয়, যা দ্বারা ফ্যাক্টরি মালিক চুক্তির চেয়ে বেশি টি-শার্ট তৈরি করে। এই অতিরিক্ত শার্টের মালিক কে হবে? ফ্যাক্টরির মালিক এই অতিরিক্ত টি-শার্ট অন্যত্র বিক্রি করতে পারবে কি না? এমনিভাবে অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে তা অন্যত্র বিক্রি করে দিয়ে কমিশন নিতে পারবে কি?
প্রশ্নোক্ত চুক্তি অনুযায়ী যেহেতু ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ কেবল সেলাইয়ের কাজ আঞ্জাম দিবে, আর ওয়ার্ডার দাতা বায়ারই শার্ট তৈরির সকল উপকরণ সরবরাহ করবে তাই এক্ষেত্রে তৈরিকৃত সকল মালের মালিক ওয়ার্ডারদাতা বায়ারই হবে। তাই এক লাখ পিসের অতিরিক্ত শার্ট প্রস্ত্তত হলে সেগুলোর মালিকও ঐ বায়ার। সুতরাং তার অনুমতি ব্যতীত ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের জন্য তা অন্যত্র বিক্রি করা বৈধ হবে না। তেমনিভাবে অন্য কারো জন্য অতিরিক্ত টি-শার্টগুলো বিক্রি করে দিয়ে কমিশন নেওয়া বৈধ হবে না। তবে অর্ডারকৃত সংখ্যার অতিরিক্ত শার্টগুলোর জন্য কারখানা মালিক আলাদা চার্জ নিতে পারবে। অবশ্য যদি এ ব্যাপারে বায়ারকে অবগত করা হয় এবং তিনি দাবি ছেড়ে দেন অথবা চুক্তিতেই এমন কথা লেখা থাকে যে, অতিরিক্ত পোশাকের ব্যাপারে বায়ারের কোনো দাবি থাকবে না তাহলে তা ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের হবে। সে চাইলে তা অন্যত্র বিক্রি করতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে অন্য কেউ কমিশনের বিনিময়ে ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের পক্ষ হয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিতে পারবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১২/৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩৪১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২০০; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ১/২৬২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/২৯৭
মসজিদে জুমার নামায না পেয়ে কয়েকজন মিলে রুমে জুমা আদায় করা ৷
সম্পন্ন করে মসজিদে উপস্থিত হওয়া জরুরি। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয় তখন তোমরা আল্লাহর যিকির তথা জুমার নামাযের দিকে ধাবিত হও।
-সূরা জুম‘আ, আয়াত ৯ ৷
তাই আযানের পর জুমার নামাযের প্রস্তুতিমূলক কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হওয়া জায়েয নয় । প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের এভাবে ঘুমিয়ে থাকাটাও ঠিক হয়নি। সামনে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করবেন ৷
-শরহুল মুনইয়াহ ৫৫১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫১৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
বিনা টিকেটে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা ৷
এখন আমার প্রশ্ন হল, এভাবে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা আমাদের জন্য কতটুকু ঠিক হয়েছে? এবং আমাদের উপর এর ভাড়া আবশ্যক কি না? দিতে হলে কিভাবে কতটুকু দিব?
এখন আপনাদের কর্তব্য হল, উক্ত কাজের জন্য তওবা করা এবং ঐ ট্রেনে ঢাকা থেকে ভৈরবের যা ভাড়া সে মূল্যের স্ট্যান্ডিং টিকেট ক্রয় করে ছিঁড়ে ফেলা। তাহলে আপনাদের ভাড়া আদায় হয়ে যাবে ।
-ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৪৪৫ ৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
এনজিওতে চাকরী করা ৷ যার কাজ মানুষের মাঝে ঋণ দেওয়া ৷
করা জায়েয নয় ৷ এবং এর বেতন ভোগ করাও নাজায়েয। কারণ তা সুদের লেনদেন ৷ যা নিকৃষ্টতম হারাম ৷ অতএব যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে উপার্জনের কোনো বৈধ পন্থা খুঁজে বের করা অপরিহার্য ৷
-সহীহ বুখারী ১/২৮০; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২২; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬৬ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
বরপক্ষের দাবি ছাড়া স্বতঃফুর্তভাবে কনেপক্ষ ফার্নিচার ইত্যাদি দিলে, তা গ্রহন করা ৷
আর যদি আপনাদের দাবি কিংবা চাপের কারণে অথবা সামাজিক প্রচলনের কারণে বা অন্য কোন কারনে বাধ্য হয়ে কোনো কিছু দেয়, স্বতঃস্ফুর্তভাবে না দেয়, তাহলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে না।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৫৪৮৮; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৪৮ ৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম গেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷
প্রভিডেন্ট ফান্ড ও পেনশনের অতিরিক্ত টাকা গ্রহন করা ৷
কিন্তু যদি টাকা জমা রাখা চাকুরীজীবির ইচ্ছাধীন হয় ৷ ইচ্ছে করলে রাখতেও পারে, আবার উঠিয়েও ফেলতে পারে। এমতাবস্থায় আপনি ইচ্ছে করে টাকা জমা রেখে থাকেন ৷ মুদারাবা বা মুশারাকা বা এ জাতীয় শরয়ী কোন চুক্তি করেন নি, তাহলে অবসরের সময় জমাকৃত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা জায়েজ হবে না।
-বাহরুর রায়েক- ৭/৫১১; রদ্দুল মুহতার- ৫/১৬৬; জাদীদ ফিক্বহী মাসায়েল-১/৪৩৮; ফাতাওয়া উসমানী-৩/২৭৮।
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী:জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
হারাম উপার্জনকারীর বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া ৷
তবে যদি দাওয়াতকারীর সম্পদ এমন হয় যে, তার হালাল উপার্জনও আছে, আবার হারাম উপার্জনও আছে। এবং হারাম উপার্জনের চেয়ে হালাল উপার্জনের পরিমান বেশি। আর লোকটি এ মিশ্রিত সম্পদ দিয়ে দাওয়াত খাওয়ায় ৷ অথবা যদি হারাম উপার্জন দিয়ে দাওয়াত না খাওয়ায় । বরং নিজের হালাল উপার্জন দিয়ে বা কারো থেকে হালাল টাকা ধার করে দাওয়াত খাওয়ায়। তাহলে উক্ত ব্যক্তির বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া জায়েজ আছে।
ফতাওয়ায়ে শামী ৬/২৪৭; ফতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৩৪২৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রান ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷
রিকশা, অটো রিক্সা, সি এন জি নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য ভাড়া নিয়ে পথিমধ্যে অন্য যাত্রী উঠানো ৷
রিকশা ভাড়া নেওয়ার সময় চালকের সাথে যতজন আরোহীর চুক্তি হয় ততজনই তাতে আরোহণ করতে পারবে। পরে রাস্তায় কাউকে নিতে চাইলে ভাড়ার সময় বলে নিবে, বা উঠানোর সময় চালকের সম্মতি নিতে হবে৷ এবং অতিরিক্ত কিছু ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া কর্তব্য ৷ তবে কোনো এলাকায় যদি একজন ও দু’জন যাত্রীর ভাড়ার বেলায় কোনো তারতম্য না থাকে, একজন যত টাকা ভাড়া দুজন ততটাকা ই ভাড়া হয়, তাহলে চালকের অনুমতিতে বিনা ভাড়ায় অন্যজন যাত্রীকে নিয়ে নিতে পারবে।
সিএনজি/অটোরিক্সা রিজার্ভ ভাড়া নিলে সাধারণত
যতজন যাত্রী আরোহন করা নিয়মসম্মত, পরবর্তীতে সে সংখ্যক যাত্রী নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অতএব পরবর্তিতে অন্য যাত্রীর আরোহনের সুযোগ থাকলে নিয়ে নিতে পারবে ৷ আর যদি রিজার্ভ না নেয়া হয়৷ তাহলে প্রতি সিটের ভাড়া অনুযায়ী ভাড়া দিতে হবে ৷
শরহুল মাজাল্লা খালিদ আতাসী ২/৪৯০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৭২৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া
01756473393
শেয়ার ব্যবসা করার শরয়ী বিধান৷
শাইখুল ইসলাম মাওলানা মুহাম্মদ তাক্বী উসমানী দা.বা. হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর উদ্ধৃতিতে কয়েকটি শর্তে শেয়ারকে কমবেশি করে বিক্রি ব্যবসাকে জায়েজ বলেছেন। যথা-
১
কোম্পানীর মূল ব্যবসাটি হালাল হতে হবে। যেমন ঔষধ কোম্পানী, ইনষ্ট্রাকশন কোম্পানী ইত্যাদি।
২
মূল মূল্যের চেয়ে কমবেশি করে বিক্রি করার জন্য শর্ত হল, কোম্পানীর মূল সম্পদ শুধু টাকা হতে হবে না, বরং টাকার সাথে সাথে অন্যান্য সম্পদও থাকতে হবে। যেমন বিল্ডিং, জমি, মেশিন ইত্যাদি।
৩
যদিও মূল ব্যবসা হালাল, কিন্তু যদি উক্ত কোম্পানীতে কিছু সুদী বা হারাম লেনদেনও হয়, তবে খুবই কম। তাহলেও সেই সুদী ও হারাম লেনদেনের বিরুদ্ধে বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রতিবাদ করবে এবং সংশোধনের জন্য বলবে।
৪
কোম্পানীর যতটুকু আয় সুদ থেকে হয়, তা হিসেবে করে বের করে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দিবে।
উপরোক্ত চারটি শর্ত সঠিকভাবে মান্য করলে শেয়ার ব্যবসা জায়েজ আছে। তবে বর্তমানে শেয়ার বাজারে নানামুখী ধোঁকা, প্রতারণার বিস্তার রয়েছে। আর
উপরোক্ত শর্তগুলো সঠিকভাবে পাওয়াও কঠিন। তা’ই বর্তমানে আমাদের দেশের এ ব্যবসার বিকল্প কোন ব্যবসায় জড়ানোই অধিক নিরাপদ এবং এবং তা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য৷
- ইসলাম আওর জাদীদ মায়িশাত: ওয়া তিজারাত-১০৩-১১৪; ইসলামী ব্যাংকারী কী বুনিয়াদে-২১৬-২২১৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
সাইকেল হেফাযত করে ঘন্টা হিসেবে ভাড়া গ্রহন করা৷
01756473393
ব্যাংকে চাকরীজীবির বেতন টাকার হুকুম৷
ব্যাংকে চাকরী করা হারাম হওয়ার কারণ দুইটি।
যথা-
১-হারাম কাজে সহায়তা করা। ২-হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা
থাকা।
হারাম কাজের সহায়তার বিভিন্ন ধাপ আছে। ইসলাম সর্ব প্রকারের সহায়তাকে হারাম বলে নি। বরং ঐ সব সহায়তা হারাম যাতে সরাসরি হারাম কাজে লিপ্ত। যেমন সুদী লেনদেন করা। সুদী লেনদেন লেখা। সুদী টাকা উসুল করা ইত্যাদি।
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন।
মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯৷
তবে যদি সুদী কাজে লিপ্ত না হয়, বরং তার কাজ এমন হয় যেমন ড্রাইভার, ঝাড়ুদার, দারোয়ান, জায়েজ কারবারে বিনিয়োগ ইত্যাদি হয় তাহলে যেহেতু এসবে সরাসরি সুদের সহায়তা নেই তাই এমন চাকরী করার সুযোগ আছে।
হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার বিষয়ও একটি মূলনীতি রয়েছে তা হল- যদি বেতনটি হালাল ও হারাম মালের সাথে মিশ্রিত হয়, আর হালাল মাল বেশি হয়, তাহলে তা নেয়া জায়েজ। আর যদি হারাম মাল বেশি হয় তাহলে বেতন নেয়া জায়েজ হবে না৷
ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৪২
বর্তমানে ব্যাংকের অবস্থা হলো, তার পূর্ণ সম্পদ কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা-
১-মূলধন। ২-সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত টাকা। ৩-জায়েজ ব্যবসার আমদানী। ৪-সুদ এবং হারাম ব্যাবসার আমদানী। উক্ত চারটি বিষয়ের মধ্যে কেবল ৪র্থ সুরতটি
হারাম। বাকিগুলো যদি কোন হারাম কাজ না হয় তাহলে জায়েজ।
যেসব ব্যাংকে প্রথম ৩টি বিষয়ের লেনদেন বেশি । আর ৪র্থ বিষয়টির লেনদেনের লভ্যাংশ কম সেসব ব্যাংকে সেসব ডিপার্টমেন্টে চাকরী করা যাতে হারাম কাজ করতে না হয়, তাহলে তা জায়েজ হবে। বেতন নেওয়াও জায়েজ হবে। তবে এসব চাকরী না করাই উত্তম৷
কিন্তু যদি হারাম আমদানী হালালের তুলনায় বেশি হয়৷ বা হারাম কাজে জড়িত হতে হয়, তাহলে উক্ত ব্যাংকে চাকরী করা ও বেতন নেওয়া কোনটি ই জায়েজ নয়। উক্ত ব্যাংকের চাকরীজীবির বেতনের সমস্ত অর্থ হারাম হিসেবে বিবেচ্য হবে৷
ফাতওয়ায়ে উসমানী-৩/৩৯৪-৩৯৬৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া৷
01756473393
সন্ত্রাসীর হাত থেকে রক্ষা পেতে বাধ্য হয়ে মুক্তিপণ বা চাঁদা দেয়া৷
দলিলঃ
রদ্দুল মুহতার ৯/৬০৭; ফতহুল কাদীর ৭/২৫৫; বাহরুর রায়েক ৬/২৬২৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
ইসলামী ব্যাংকে চাকুরী করা, একাউন্ট খোলা৷
ইসলামী ব্যাংক সমূহে চাকুরী করা, একাউন্ট খোলাজায়েজ আছে কিনা । যদি জায়েজ
না থাকে তাহলে কি কারনে জায়েজ নাই তাহাবিস্তারিত জানালে উপকৃত হব৷
পরিচিত ব্যাংকগুলোর সকল কার্যক্রম আমাদের জানামতে পূর্ণ ইসলামী নীতিমালা অনুসারে
পরিচালিত হতে পারছে না। তাই ওই সব ইসলামী ব্যাংকে যে কোন পদে চাকুরী করা হালাল-হারামের দৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ। আর সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে কারেন্ট একাউন্ট কিংবা অন্য কোন সুদমুক্ত একাউন্টে টাকা
রাখা যেতে পারে। ইসলামী ব্যাংক গুলোতে টাকা রাখলে লাভ না নেওয়া উচিত।
দলিলঃ
সূরা বাকারা আঃ ২৭৫, ২৭৮, সহীহ বুখারী ১/২৮, সহীহ মুসলিম ২/২৭, রদ্দুল মুহতার ৭/৬৫৮, ফতওয়ায়ে উসমানী ৩/৩৯৪৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
02756473393
রসের উদ্দেশ্যে খেজুর গাছ ভাড়া নেওয়া দেওয়া৷
৬/৮৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
গাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যবহার না করলে ভাড়া পরিশোধ করা৷
ভাড়া নিই। চুক্তি ছিল, তেলখরচ ছাড়াও গাড়ির
মালিককে এক দিনের জন্য ১৫,০০/- টাকা ভাড়া দিতে হবে। কিন্তু বিশেষ কারণে আমরা যেতে পারিনি। গাড়িটি বিকেল পর্যন্ত আমাদের বাসার সামনে অপেক্ষায় ছিল।
আমাদের না যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর
গাড়িটি ফেরত যায়। জানতে চাই, এখন আমাদের
কি ব্যবহার না করা সত্ত্বেও এর নির্ধারিত ভাড়া
আদায় করতে হবে?
হলেও চুক্তিকৃত ১৫,০০/- টাকাই আদায় করতে হবে। তবে যেহেতু গাড়ি ব্যবহার হয়নি তাই তেল খরচ দিতে হবে না।
-আলআশবাহ ওয়াননাযাইর পৃ. ৩২০; শরহুল মাজাল্লাহ খালিদ আতাসী ২/৫৫৪; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩৭১; মাজাল্লাহ পৃ. ৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১১৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন জামিয়া মাজহারুল হক দারুল উলুম দেবগ্রাম আখাউড়া ব্রাক্ষনবাড়িয়া
01756473393
অতিরিক্ত দেয়ার শর্ত করে ঋন দেওয়া৷
01756473393
দীর্ঘ মেয়াদী ভাড়ায় বস্তু পুনারায় মালিকের নিকট ভাড়া দেওয়া৷
01756473393
শর্তহীন করজ নিয়ে বেশি পরিশোধ করা৷
01756473393
লাকি কুপন ও লটারীতে বিজয়ীদের পুরুস্কার গ্রহন৷
01756473393
কাজ না থাকলে মাসিক বেতনের কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দেওয়া৷
01756473393
বাংলাদেশে প্রচলিত গরু ছাগল বর্গা দেয়া ৷
সম্মত?
ﻓﻰ ﻣﺠﻤﻮﻋﺔ ﻓﺘﺎﻭﻯ ﺍﺑﻦ ﺗﻴﻤﺔ- ﻟﻮ ﺩﻓﻊ ﺩﺍﺑﺘﻪ ﺃﻭ ﻧﺨﻠﻪ
ﺇﻟﻰ ﻣﻦ ﻳﻘﻮﻡ ﺑﻪ ﻭﻟﻪ ﺟﺰﺀ ﻣﻦ ﺛﻤﺎﻧﻴﺔ ﺻﺢ . ﻭﻫﻮ ﺭﻭﺍﻳﺔ
ﻋﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﻋﻦ ﺍﺧﺘﻴﺎﺭﺍﺕ 145 ، 146 ﻑ /2 220 ،
( ﻣﺠﻤﻮﻋﺔ ﻓﺘﺎﻭﻯ ﺍﺑﻦ ﺗﻴﻤﺔ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺒﻴﻊ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺸﺮﻛﺔ
প্রশ্নে বর্নিত ১ম সূরতের উত্তম পদ্ধতি হলো,
যে পশুটি বর্গা দিতে চাচ্ছে, একটি নামমাত্র দাম ধরে যার কাছে বর্গা দিতে চাচ্ছে তার কাছে বিক্রি করে দিবে। আর যে টাকাটি বিক্রি হিসেবে মালিক পেল তা এক বা দুই বছর নির্ধারিত করে লালন পালনের মুজুরী হিসেবে পশু গ্রহিতাকে প্রদান করবে। এখন উভয়ে উক্ত পশুটির অর্ধেক অর্ধেক মালিক। সে হিসেবে পশুটির বাচ্চা ও দুধ ইত্যাদি সমান সমান ভোগ করতে পারবে। শরয়ী কোন সমস্যা এতে নেই। ২য় সূরতের উত্তম পদ্ধতি হলো, যার কাছে বর্গা দিতে চাচ্ছে তার সাথে এভাবে চুক্তি করবে যে, তুমি এক বছর আমার পশুটি লালন পালন কর, আমি তোমাকে কথার কথা একশত টাকা দিব। তারপর এক বছর পর যদি মালিক বাছুর নিতে চায়, তাহলে একশত টাকা পরিশোধ করে বাছুর নিয়ে নিবে। আর যদি লালনপালনকারী বাছুর নিতে চায়, তাহলে একশত টাকা নেবার বদলে বাছুরটি নিয়ে নিবে উভয়ের সন্তুষ্টিতে। এভাবে চলতে থাকলে এতে কোন শরয়ী বিধিনিষেধ নেই। ইমদাদুল ফতওয়া ৩/৩৪২, ৩৪৩৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
কোম্পানীর বস এক রেটে বিক্রি করতে বলার পর এর চেয়ে কমবেশি করে বিক্রি করা
ইরশাদ করেছেন- ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ
ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻋَﻦ
ﺗَﺮَﺍﺽٍ ﻣِّﻨﻜُﻢْ ( 29 ) অর্থাৎ হে মুমিনরা! তোমরা পরস্পরের মালকে অন্যায়ভাবে গ্রাস করনা, তবে ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে পারস্পরিক সন্তুষ্টচিত্তে হল ভিন্ন কথা। {সূরা
নিসা-২৯}
তবে আপনি যদি আপনার চাকরিকৃত কোম্পানীর কাছ থেকে এভাবে অনুমোদন নিয়ে নেন যে, আপনি কোম্পানীর নির্ধারিত রেটের চে’ বেশী যদি উসুল করতে পারেন, তাহলে কোম্পানী এতে অনুমোদন দিলে আপনার জন্য তা বৈধ হবে নতুবা নয়। আর আপনার জন্য যখন বৈধ হবে তখন তাকে দেয়াও বৈধ হবে। আর অনুমোদিত না হলে কারো জন্যই তা জায়েজ হবে না। উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
আমাদের কলেজ একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর...
প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর টাকা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ৫০% এবং চাকরিজীবীদের বেতন থেকে ৫০% ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। উক্ত টাকা চাকরি শেষে চাকরিজীবীদের প্রদান করার বিধান রয়েছে। বর্তমানে কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত ৫০% এর উপর এফ.ডি.আর. করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ টাকাও চাকরির শেষে মূল ও বর্ধিত অংশসহ চাকরিজীবীদেরকে প্রদান করা হবে। অতএব এ অবস্থায় উক্ত মূল ও বর্ধিত অংশ চাকরির শেষে গ্রহণ করা যাবে কি না?
জমা রাখা যদি ঐচ্ছিক হয় অর্থাৎ কেউ চাইলে উক্ত ফান্ডের জন্য বেতন থেকে টাকা কেটে রাখতে পারে, আবার চাইলে পুরো বেতন উঠিয়েও নিতে পারে তাহলে এই ফান্ডে টাকা জমা করা জায়েয হবে না। যদি কেউ জমা করে ফেলে তবে টাকা উঠানোর পর মূল জমা অর্থাৎ নিজ বেতনের অংশ নিজে ব্যবহার করতে পারবে। আর এর অতিরিক্ত যা পাবে তা সুদ। সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব-
মিসকীনদেরকে তা সদকা করে দিতে
হবে।
আর প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা করা যদি ঐচ্ছিক না হয়; বরং এর জন্য প্রত্যেকের বেতন থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলকভাবে টাকা কেটে রেখে দেয় তাহলে ব্যাংকে সুদীভাবে টাকা জমা রাখার দায় সরাসরি চাকরিজীবীদের উপর আসবে না। বরং এর গুনাহ কর্তৃপক্ষের হবে। আর এক্ষেত্রে তারা নিজ বেতনের অংশ ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত টাকা ব্যবহার করতে পারবে। এর অতিরিক্ত টাকা সুদ। তা সদকা করে দিতে হবে।
-মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ২৫১১, ২৫১৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৫-৪৬৯; কেফায়াতুল মুফতী ১১/২৭৫৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
যদি কোনো ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় তাহলে সে চাকরি...
পাবে তা তার জন্য হালাল হবে না কি হারাম ? কুরআন হাদীস দ্বারা সমাধান দিলে কৃতজ্ঞ হব।
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও গ্রহিতাকে
অভিসম্পাত করেছেন। জামে তিরমিযী , হাদীস ১৩৩৭৷ তাই ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া জায়েয হবে না। এতে একদিকে ঘুষ প্রদানের কবীরা গুনাহ হয় ,অন্যদিকে ঘুষদাতা অযোগ্য হলে অন্য
চাকরিপ্রার্থীর হক নষ্ট করারও গুনাহ হয়। তাই এমন
কাজ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। অবশ্য কেউ যদি প্রকৃতপক্ষে চাকরির যোগ্য
হয় এবং ঘুষ প্রদান হারাম হওয়া সত্তে ও ঘুষ দিয়ে
চাকরি নেয় আর পরবর্তীতে সে যথাযথভাবে দায়িত্ব আঞ্জাম দেয় তাহলে এভাবে চাকরি নেওয়া নাজায়েয হলেও বেতন হালাল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সে তার কর্মক্ষেত্রের অযোগ্য হয় এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে
ব্যর্থ হয় তাহলে তার জন্য ঐ চাকরিতে থাকা বৈধ
হবে না। আর ঠিকমত দায়িত্ব পালন না করে বেতন নেওয়াও বৈধ হবে না। উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473394
আগাম বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতার জন্য বিক্রেতা থেকে চুক্তিকৃত পণ্য আদায়...
করা পর্যন্ত কোনো কিছু বন্ধক রাখা জায়েয হবে কি?
না।
কিতাবুল আছল ২/৩৮৩ ; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৪৪৯ ; শরহুল মাজাল্লাহ ৩/২১২ ; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন
01756473393
কেউ যদি সন্তান ভাই বা এ জাতীয় কারো থেকে টাকা...
দেওয়ার সময় নিজ থেকে কিছু অতিরিক্ত দেয় তাহলে সেটা বৈধ হবে কি?
থেকে কোনো চাহিদা না থাকে এবং শর্ত ছাড়াই অতিরিক্ত দেওয়ার প্রচলনও না
থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে দেনা পরিশোধের সময় কর্জগ্রহণকারী যদি নিজ
থেকে কিছু অতিরিক্ত দেয় তবে তা বৈধ হবে। হাদীস শরীফে এমন ব্যক্তিকে
উত্তম পরিশোধকারী বলা হয়েছে। দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৯৩
আরেক হাদীসে এসেছে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে
এলাম- তিনি তখন মসজিদে ছিলেন- আল্লাহর রাসূল (আমাকে) বললেন, দু’রাকাত
নামায পড়ে নাও। অতপর তার কাছে আমার পাওনা ছিল সেটা তিনি পরিশোধ
করলেন এবং আমাকে আরো বাড়িয়ে দিলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৯৪
তবে বর্তমান সময়ে যখন মানুষ সুদ ছাড়া ঋণ দিতে চায় না তখন এ ব্যাপারে বিশেষ
সতর্কতা কাম্য। কেননা কোনো কোনো জায়গায় প্রচলন থাকে যে, ঋণ নিলে এ
পরিমাণ অতিরিক্ত দিতে হবে বা অমুক সুবিধা দিতে হবে। এটাকে নীতি- নৈতিকতা মনে করা হয়। এমন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দিলে বা অন্য কোনো সুবিধা
দিলে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সাহাবী ফাযালা ইবনে উবায়েদ রা. থেকে
বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, যে ঋণ কোনো মুনাফা নিয়ে আসে তা সুদের প্রকারসমূহের একটি।
-সুনানে বায়হাকী ৫/৩৫০; রদ্দুল মুহতার ৫/১৬৬; আলবাহরুর রায়েক ৬/১২২
জনৈক ব্যক্তি দেশের বাইরে থাকে। তিনি দেশের এক ধান ব্যবসায়ীর...
লাভ হিসেবে প্রতি বছর পঁচিশ হাজার টাকা করে দিবে। এখন জানার বিষয় হল, ঐ ব্যবসায়ী তাকে প্রতি বছর যে পঁচিশ
হাজার টাকা করে দিবে তা
কি জায়েয হবে, নাকি সুদ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
করবে।
উল্লেখ্য যে, এ ধরনের কারবারে ব্যবসার পুরো হিসাব রাখা আবশ্যক। অনুমান করে লভ্যাংশ প্রদান করা অথবা লাভ-লোকসান যাই হোক নির্ধারিত পরিমাণ মুনাফা দেওয়া কোনোটিই বৈধ নয়। -মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দা ১৩৩
বর্তমানে আমাদের ইচ্ছা না থাকা সত্তেও একরকম বাধ্য হয়েই ব্যাংকের...
ব্যাংকের সাথে লেনদেন অর্থাৎ টাকা জমা রাখতে হয়। তাই কোন্
ব্যাংকের সাথে লেনদেন করা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ? দলিল-প্রমাণসহ জানালে উপকৃত হব।
আমরা কয়েকজন মিলে একটি মেসে ভাড়া থাকি। একদিন আমাদের ঘুম...
ফজরের নামায কাযা হয়ে যায়। তখন আমরা ঐ নামায জামাতের সাথে আদায় করি। এখন জানার বিষয় হল, আমাদের জন্য কাযা নামায জামাতের সাথে পড়া কি ঠিক হয়েছে? এবং এক্ষেত্রে কিরাত জোরে
পড়তে হবে কি?
জামাতের সাথেই কাযা পড়া উচিত। আর কাযা নামায জামাতের সাথে আদায় করলে
উচ্চস্বরে কিরাতবিশিষ্ট নামাযে ইমামকে উচ্চস্বরেই কিরাত পড়তে হবে। হাদীস
শরীফে এসেছে যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে
নিয়ে সূর্যোদয়ের পর ফজরের কাযা আদায় করেছেন এবং
তাতে উচ্চস্বরে কিরাত পড়েছেন। -কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ রহ. হাদীস
১৬৮
উল্লেখ্য যে, কাযা নামাযের জামাত করলে তা নির্জন স্থানে করা উচিত। যেন অন্য
লোকজন নামায কাযা হওয়ার বিষয়টি জানতে না পারে।
-ফাতহুল কাদীর ১/১৮৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭২;
যদি কোনো ব্যক্তি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় তাহলে সে চাকরি...
জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৩৭
তাই ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়া জায়েয হবে না। এতে একদিকে ঘুষ প্রদানের কবীরা গুনাহ হয়,অন্যদিকে ঘুষদাতা অযোগ্য হলে অন্য চাকরিপ্রার্থীর হক নষ্ট করারও গুনাহ হয়। তাই এমন কাজ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।অবশ্য কেউ যদি প্রকৃতপক্ষে
চাকরির যোগ্য হয় এবং ঘুষ প্রদান হারাম হওয়া সত্তে¡ও ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয় আর পরবর্তীতে সে যথাযথভাবে দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়
তাহলে এভাবে চাকরি নেওয়া
নাজায়েয হলেও বেতন হালাল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সে তার কর্মক্ষেত্রের অযোগ্য হয় এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়
তাহলে তার জন্য ঐ চাকরিতে থাকা
বৈধ হবে না। আর ঠিকমত দায়িত্ব পালন না করে বেতন নেওয়াও বৈধ হবে না৷
আমি এক মসজিদের ইমাম। জনৈক মুসল্লী আমাকে তার জমি চাষাবাদ...
আমি এক বাড়িতে ভাড়া থাকি। বাড়িতে কয়েকটি পুরাতন টিনের ঘর...
রয়েছে। একবার ঝড়-তুফান হলে একটি ঘরে বৃষ্টির সময় পানি পড়া শুরু হয় এবং টয়লেটটি পড়ে যায়। বাড়ির মালিক শহরে থাকে। এক বছর পরপর এসে ভাড়া নিয়ে যায়। তাকে ফোন করে জানালে তিনি মিস্ত্রি এনে ঠিক করে নিতে বলেন। আমি মিস্ত্রি এনে ঠিক করে নেই। কিন্তু মালিক পরবর্তীতে এ খরচ দিতে চাচ্ছে না। জানতে চাই, এ খরচ কার দায়িত্বে হবে?
অনুমতিতেই মেরামতের কাজ করেছেন তাই এই খরচ মালিককেই দিতে হবে।
উল্লেখ্য, ভাড়াটিয়ার ত্রুটির কারণে কোনো কিছু নষ্ট হয়ে থাকলে শুধু এর ক্ষতিপূরণ তাকে দিতে হবে।
-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৪৮; মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ ৫২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৫৫;
আমি একটি এনজিওতে কর্মসূচি সংগঠক পদে চাকরি করছি। এই চাকরির...
ট্রেনে ঢাকা যাব। এজন্য টিকেট করার জন্য লাইনে দাঁড়াই। কিন্তু...
হব।
আমাদের এলাকায় বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক সংগঠন আছে। যারা সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক...
নাজায়েয ও সুদের অন্তর্ভুক্ত। প্রশ্নোক্ত
পদ্ধতিতে ঋণের পরিমাণ হিসেবে ফরমের দাম বেশি নেওয়া এবং সময় মতো পরিশোধ করতে না পারলে পুনরায় ফরম কিনে নতুনভাবে চুক্তি করার মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া সুদ খাওয়ার একটি অপকৌশল। লোকে যাতে এটিকে সুদ না বলে এজন্যই ফরম বিক্রির উক্ত ছুতা অবলম্বন করা হয়েছে। অতএব হিলা-বাহানা করে সুদ গ্রহণের পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করতে হবে। আর বিগত দিনে এভাবে যাদের থেকে ফরমের খরচ মূল্যের অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে তাদরকে অতিরিক্ত সকল টাকা ফেরত দিতে
হবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২১০০৭; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ২৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮; ইলাউস সুনান ১৪/৫১৪;; শরহুল মাজাল্লাহ ১/২৬৪-২৬৫
সুদের টাকা দিয়ে মাদরাসা বা মসজিদের টয়লেট নির্মাণ বা পুননির্মাণ...
বা মসজিদের টয়লেট নির্মাণ বা পুননির্মাণ করা জায়েয হবে কি?
ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যক। যদি মালিক জানা না থাকে বা মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে ঐ টাকা সদকা করা ওয়াজিব।
সেক্ষেত্রে ঐ টাকা কোনো
গরীব-মিসকীনকে সদকা করে দিতে হবে। এ টাকা মসজিদ- মাদরাসার টয়লেটের কাজেও না লাগানো উচিত।
-শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৯৭; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/১৭১
আমার একটি কাপড়ের দোকান আছে। আমার সহযোগী হিসেবে দোকানে একজন...
আমি ব্যবসা করতে চাচ্ছি। ব্যবসার জন্য ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন।...
আমি একজন পিকআপ চালক। গাড়ির এক মালিক থেকে আমি একটি...
চুক্তি সহীহ নয়। এক্ষেত্রে সহীহভাবে চুক্তি
করতে চাইলে হয়ত চালকের বেতন নির্দিষ্ট করে দিতে হবে এবং গাড়ির সকল আয় মালিকের থাকবে। অথবা চালক গাড়িটি মালিক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিবে। গাড়ি থেকে আয় হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় ভাড়ার টাকা মালিককে দিয়ে দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে গাড়ির যা আয় হবে তা সবই চালকের
থাকবে।
-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১১
আমার ছেলের অপারেশনের জন্য চার লক্ষ টাকা প্রয়োজন। তাই আমি...
করেছে। তার সাথে কথা হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে
বাকি টাকা পরিশোধ করলে তাকে জমির রেজিস্ট্রি
দিয়ে দিব। সে এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা দেয়নি।
এদিকে একদিন পর আমার ছেলের অপারেশনের তারিখ। তাকে বাকি টাকা পরিশোধ করতে বললে সে বলে, জমির প্রকৃত মূল্য তিন লক্ষ টাকা। চার
লক্ষ টাকা দিয়ে আমি জমি নিব না। ইচ্ছা হলে তিন
লক্ষ টাকা দিয়ে জমি বিক্রি করতে পারেন। তখন
আমি আরেকজনের নিকট নগদ চার লক্ষ টাকায়
জমিটি বিক্রি করে জমির রেজিস্ট্রি দিয়ে দিয়েছি।
প্রথম ক্রেতাকে তার টাকা দেওয়ার জন্য গেলে সে
আমার সাথে অত্যন্তরাগারাগি করে। তার কথা,
আমাকে না জানিয়ে অন্যের কাছে কেন জমি বিক্রি
করেছেন? আমার কাছে বিক্রি করার পর অন্য কারো কাছে বিক্রি করা ঠিক হয়নি ইত্যাদি। তাই হুযুরের কাছে জানতে চাই, উক্ত অবস্থায় অন্য ব্যক্তির নিকট জমি বিক্রি করা কি সহীহ হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।
যেহেতু চার লক্ষ টাকা দিয়ে জমি নিবে না বলে
জানিয়ে দিয়েছে এবং তিন লক্ষ টাকা হলে নিবে
বলেছে তাই এর দ্বারাই ঐ ব্যক্তির সাথে
পূর্বোক্ত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে।
সুতরাং এরপর ঐ জমি অন্যত্র বিক্রি করা
আপনার জন্য জায়েয হয়েছে। এ পর্যায়ে পূর্বের
ক্রেতার জন্য আপনার সাথে রাগারাগি করা বা
খারাপ আচরণ করা একেবারেই অন্যায়। শরীয়তের
দৃষ্টিতে সে শুধু তার দেওয়া টাকাগুলিই ফেরত পাবে।
এর অতিরিক্ত কোনো কিছু দাবি করা তার জন্য জায়েয হবে না। আর আপনার দায়িত্ব হল, অবিলম্বে লোকটির টাকা ফেরত দেওয়া। -হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৬/৪১৭; তাবয়ীনুল
হাকায়েক ৪/১৯৭; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়াহ
৩/২১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৪৪৪; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩৬; আদ্দুররুল মুখতার
৫/৪৫১
এক ব্যক্তি আমার থেকে তিন বছরের জন্য ২ লক্ষ টাকা...
লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছে। তার থেকে বন্ধক হিসেবে
আমি একটি জমি নিয়েছি। হুজুরের কাছে জানতে চাই,
ঐ জমি আমার কাছে বন্ধক থাকা অবস্থায় ভাড়া চুক্তির ভিত্তিতে ব্যবহার করতে পারব কি না? জানালে উপকৃত হব।
উপকৃত হওয়া জায়েয নেই। তা সুদের অন্তর্ভুক্ত।
অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বন্ধকি জমি থেকে
আপনার জন্য কোনো প্রকার উপকৃত হওয়া জায়েয
হবে না। তবে বন্ধকী চুক্তি বাতিল করে ন্যায্য
মূল্যে তা ভাড়া নিতে পারবেন। ঋণের কারণে ভাড়া
কম করা যাবে না। তদ্রƒপ ঋণের সাথে ভাড়া
চুক্তিকে সম্পৃক্তও করা যাবে না। বরং ভাড়া
চুক্তিটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও ঋণের প্রভাব থেকে
মুক্ত হতে হবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস : ২১০৭৮ ১৩/৬৪৮; আননুতাফ ফিলফাতাওয়া ২৯৬;বাদায়েউস সানায়ে ৬/৫১৮;ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৫৯৬;ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৭৪;রদ্দুল মুহতার ৬/৫২৩;আলফাতাওয়াল
ওয়ালওয়ালিজিয়া ৫/৬৯;মুসনাদে আহমাদ, হাদীস :
৩৭৮৩; ফাতহুল কাদীর ৬/৮০-৮১
আমি জালালাইন জামাতের ছাত্র। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে কিতাব...
বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে কিতাব সংগ্রহ করে থাকি।
অনেক সময় লাইব্রেরিওয়ালারা নতুন কোনো কিতাব প্রকাশ করার আগে (বিশেষ করে বড় কিতাব হলে) আমাদের বলে, তোমরা যদি এখন অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখ তাহলে স্বাভাবিক
ক্রয়মূল্য থেকে দশ পার্সেন্ট ছাড়ে পাবে। অর্থাৎ
যে কিতাব তারা স্বাভাবিকভাবে ২,০০০/- টাকায়
বিক্রি করবে অগ্রিম টাকা দিলে সেটা আমরা ১,৮০০/- টাকায় পাব। কখনো আরো অধিক ছাড়ও দেয়। জানার বিষয় হল, এভাবে আমাদের চুক্তি ও কিতাব সংগ্রহ করা কি বৈধ হবে?
দিয়ে কিতাব নেওয়া বৈধ। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই
চুক্তির সময় ক্রয়কৃত কিতাবের
ছাপা, বাঁধাই, কাগজের মান ইত্যাদি বিষয় স্পষ্ট
করে নিতে হবে। যাতে ক্রয়কৃত কিতাবের ব্যাপারে
অস্পষ্টতা না থাকে এবং পরবর্তীতে ঝগড়া বা মনোমালিন্য হওয়ার আশঙ্কা না থাকে।
-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ :
২৮৯; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৩৮৯-৩৯০; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৪৪; ইতরে হেদায়া ২০৬
আমি দুবাই থাকি। আমার এক প্রতিবেশী আমাকে কল করে দেশে...
আসার সময় তার জন্য একটি ভেন্ডার মেশিন কিনে
আমার আসবাবপত্রের সাথে সেটাও লাগেজের মধ্যে
বেঁধে দেই। বাড়িতে এসে লাগেজ খুলে দেখি মেশিনের
গ্লাসটা ভেঙ্গে গেছে। এখন আমার প্রতিবেশী ঐ
ভেন্ডার মেশিনটি গ্রহণ করতে চাচ্ছে না। জানার
বিষয় হল, এ অবস্থায় আমার জন্য শরীয়তের
বিধান কী? উক্ত মেশিনের ক্ষতিপূরণ আমাকে বহন
করতে হবে কি? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।
কেনার পর থেকে তা আপনার কাছে আমানত হিসেবে ছিল। মেশিনটি যত্নসহকারে নিয়ে আসা আপনার
দায়িত্ব ছিল। অতএব আপনি যদি লাগেজের মধ্যে
যত্নসহকারেই তা নিয়ে থাকেন তাহলে গ্লাসের
ক্ষতিপূরণ আপনাকে দিতে হবে না। প্রতিবেশীকে
মেশিনটি ত্রুটিসহই গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু যদি
লাগেজে যেভাবে নেওয়া দরকার ছিল সেভাবে না নেওয়ার কারণে বা আপনার ত্রুটির কারণে তা ভেঙ্গে থাকে তবে এর ক্ষতিপূরণ আপনাকে বহন
করতে হবে। ক্ষতিপূরণের সাথে আপনার প্রতিবেশী
মেশিনটি গ্রহণ করতে বাধ্য। এক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ
দেওয়ার পরও মেশিন গ্রহণ না করা বৈধ হবে না।
-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৮; মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ :
১৪৬৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৬৭; রদ্দুল মুহতার ৭/৩৬৭
একটি আধুনিক মাসালা, শেয়ার করতে ভুলবেন না।
ফেইসবুক টুইটার ইত্যাদিতে আমরা লিখিত ভাবে যে সালাম দেই, সেই সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজীব। তবে লিখিত ভাবে উত্তর দেওয়া জরুরী নয়। বরং মৌখিক ভাবে দিলেই চলবে।
দলিলঃ ফতোয়ায়ে শামী ৯/৫৫৪.
আল্লাহ তাআলা সবাইকে আমল করার তৌফীক দান করুন। আমীন।
আমি একজন কাগজ ব্যবসায়ী। দুই সপ্তাহ আগে আমি এক ব্যক্তিকে...
আগে আমি এক ব্যক্তিকে এ শর্তে দুই লক্ষ টাকা দিয়েছি যে, সে দুই মাস পর আমাকে ঐ টাকার বিনিময়ে ৭০ গ্রামের ১০০ রিম অফসেট কাগজ দিবে। এ মুহূর্তে আমার ঐ টাকার প্রয়োজন হলে
আরেক ব্যক্তি থেকে এ শর্তে এক লক্ষ টাকা নিয়েছি যে, দুই মাস পর কাগজ হস্তগত হলে তাকে চল্লিশ রিম কাগজ দিব। জানার বিষয় হল, উপরোক্ত লেনদেন দুটি শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না? জানালে উপকৃত হব।
হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তি থেকে আপনার জন্য এ
শর্তে টাকা নেওয়া জায়েয হয়নি যে, দুই
মাস পর কাগজ হস্তগত হলে সেখান থেকে ৪০ রিম কাগজ দিবেন। কেননা ক্রয়কৃত পণ্য হস্তগত করার আগে তা বিক্রি করা নাজায়েয। সুতরাং দ্বিতীয় চুক্তিটি বাতিল করে দেওয়া জরুরি।
- সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫২৫; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৫১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/১১৯; আমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ ২৫/২১৮-২১৯; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১৮
আমি এক ব্যক্তি থেকে একটি অফসেট মেশিন ১০ বছরের জন্য...
ভাড়া নিয়েছি যে, মেশিনটি আমার
রিস্কে থাকবে। মেশিন নষ্ট হলে বা মেশিনের কোনো জিনিস পরিবর্তন
করতে হলে তার খরচ আমি বহন করব এবং
প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা মেশিনের ভাড়া দিব। আমার আরো একটি অফসেট মেশিনের
সাথে ঐ মেশিনটি তৃতীয় ব্যক্তিকে ১০ বছরের জন্য এই চুক্তিতে ভাড়া দিতে চাচ্ছি যে, সে প্রতি মাসে আমাকে ৬০
হাজার টাকা মেশিনের ভাড়া দিবে। কোনো সময় মেশিন নষ্ট হলে ঠিক হওয়া
পর্যন্ত ভাড়া মওকুফ থাকবে এবং মেশিন ঠিক করতে হলে বা মেশিনের কোনো
জিনিস পরিবর্তন করতে হলে তার খরচ আমাকেই বহন করতে হবে।
তাই জানার বিষয় হল, উপরে উল্লেখিত নিয়মে মেশিন ভাড়া নেওয়া এবং তৃতীয় পক্ষকে ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।
হেফাযতের দায়িত্ব ভাড়া গ্রহীতার থাকবে। কিন্তু এর রিস্ক এবং এর মেরামত
বা যন্ত্রাংশ ক্রয় ও সার্ভিসিং খরচ মালিককেই বহন করতে হবে। হ্যাঁ,ভাড়া
গ্রহীতার অবহেলা বা ত্রুটির কারণে কোনো খরচ হলে তা ভাড়া গ্রহীতাকে বহন করতে হবে। এছাড়া কোনো মেরামত খরচ ভাড়া
গ্রহীতার উপর চাপানো যাবে না। তাই এখন আপনাদের কর্তব্য হল, পূর্বের চুক্তি বাতিল করে দিয়ে নতুনভাবে সঠিক নিয়মে চুক্তি করা। শরীয়তসম্মতভাবে
চুক্তিটি নবায়ন করে নিলে ঐ মেশিনটির
সাথে নিজের মেশিনটি প্রশ্নে বর্ণিত উপায়ে তৃতীয় ব্যক্তির নিকট ভাড়া দেওয়া জায়েয হবে।
-আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ কুয়াইতিয়্যাহ ২৮/৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৩৯, ৪/৪৪২; আলবাহরুর রায়েক ৮/৩০; শরহুল মাজাল্লাহ ১/৭০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৫৫; কিতাবুল আছল ৩/৪৬৩; শরহুল মাজাল্লাহ ২/২৮৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৫৬
আমি একটি বাড়ির ২টি ফ্লোর ৩ বছর মেয়াদে বন্ধক নিয়ে...
না।
এক্ষেত্রে বৈধভাবে লেনদেন করতে চাইলে
ঋণ ও বন্ধকী চুক্তি না করে শুরু থেকেই ভাড়া
চুক্তি করতে পারেন। অর্থাৎ ফ্লোর দুটি আপনি দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ভাড়া নিবেন এবং সমুদয় ভাড়া এককালীন অগ্রিম পরিশোধ করে দিবেন। আর দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ভাড়া নিলে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে কিছুটা কমেও চুক্তি করতে পারবেন। উল্লেখিত চুক্তিতে ফ্লোর দুটির মালিক অগ্রিম যে টাকা গ্রহণ করবে তা যেহেতু ভাড়া হিসেবে নিবে তাই ঐ টাকা সে নিজ কাজে লাগাতে পারবে। আর আপনিও
অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় ফ্লোর দুটিতে বসবাস
করতে পারবেন কিংবা ফ্লোর দুটিতে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ (যেমন টাইলস ফিটিংস, ডেকোরেশন ইত্যাদি) করে তা অন্যের নিকট অধিক টাকায় ভাড়া দিতে পারবেন। অবশ্য পরবর্তীতে কখনো ভাড়া চুক্তি বাতিল হলে ভাড়াদাতার জন্য হিসাব করে অবশিষ্ট মাসসমূহের অগ্রিম ভাড়া ভাড়াগ্রহীতাকে ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যক হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৫০৭১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৩/১৪৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৩৭৬০; কিতাবুল আছল ৩/৪৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৭/২০৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৮.
সুদি ব্যাংক থেকে যে বৃত্তি দেওয়া হয় তা নেওয়া কি...
-রদ্দুল মুহতার ২/২৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া
আমার ভাতিজাকে এক সিএনজির মালিক বলেছে, তোমাকে আমি একটি সিএনজি...
তোমাকে আমি একটি সিএনজি দিব। দিনপ্রতি তুমি আমাকে ৮০০/- টাকা দিবে। সিএনজির কোনো সমস্যা হলে সেটা আমি দেখব। আর তুমি চাইলে চুক্তিটা এভাবেও করতে পার যে, প্রতিদিন তুমি
আমাকে ৬০০/- টাকা দিবে আর ছোটখাটো কোনো সমস্যা হলে সেটা তুমি দেখবে আর বড় কোনো সমস্যা হলে আমি দেখব। তোমার ইচ্ছা দুই চুক্তির যে কোনোটি আমার সাথে করতে পার। প্রশ্ন হল, আমার ভাতিজা সিএনজিটি ভাড়া নিতে চাচ্ছে। এখন কোন চুক্তিটি করা তার জন্য বৈধ হবে?
হয়েছে। তবে হাঁ, চালকের অবহেলা বা ত্রুটির কারণে গাড়ির কোনো সমস্যা হলে তা চালককেই ঠিক করতে
হবে। এ খরচ মালিকের উপর চাপানো যাবে না। আর ভাড়া চুক্তির দ্বিতীয় প্রস্তাবটি শরীয়তসম্মত
নয়। কেননা এক্ষেত্রে গাড়ির স্বাভাবিক ও ছোটখাটো সমস্যা ঠিক করার দায়ভার চালকের
উপর চাপানো হয়েছে। অথচ চালকের ত্রুটির কারণে ক্ষতি না হলে ছোট বড় সকল মেরামত খরচ
মালিকের দায়িত্বে। -মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৪৯৪; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৫৮৩; কিতাবুল আছল ৪/৪১; আলমুগনী,
ইবনে কুদামা ৮/২০-২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া
১৫/২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৫০
আমি নিজ তহবিল থেকে মুনাফার জন্য বিশ্বস্ত লোকদেরকে ঋণ প্রদান...
করা হচ্ছে এবং সর্বাবস্থায় পণ্য স্বস্থানে
থাকছে। তবে পণ্য চিহ্নিত করা হয়। জানার বিষয় হল,উপরোক্ত পদ্ধতিতে বিনিয়োগ প্রদান করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কি না?
ক্রয়বিক্রয় উদ্দেশ্য নয়। এক পক্ষ টাকার
বিনিময়ে অতিরিক্ত গ্রহণের জন্য ক্রয়- বিক্রয়ের ছুতা অবলম্বন করেছে। আর অন্য পক্ষ নগদ টাকার জন্য বাধ্য হয়ে তা গ্রহণ করছে। এক্ষেত্রে দুই তিন হাত বদল হলেও পণ্য যার কাছে ছিল তার কাছেই থেকে যাচ্ছে। যা শরীয়ত নিষিদ্ধ বাইয়ে ঈনার অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে লেনদেন করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য হালাল উপার্জনের অনেক পথ খোলা রেখেছেন। সুতরাং মুসলমানের কর্তব্য হল, হিলা-বাহানা করে শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ পথে না চলে উপার্জনের হালাল পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৪৬২; ইলাউস সুনান ১৪/১৭৮; আননিহায়া ফী গারীবিল হাদীস ৩/৩৩৪
আমাদের এলাকার সাধারণ লোকজন ব্যাপকভাবে সুপারিতে আগাম চুক্তির লেনদেন করে...
অর্থাৎ মৌসুমের আগে ক্রেতা বিক্রেতাকে কিছু
টাকা দিয়ে বলে যে, ১০ মাস পরে আমাকে এত
পরিমাণ সুপারি দিবেন। আর সুপারি সাধারণত সব সমান হয়
না। বরং তা ছোটবড় অনেক ধরনের হয়ে থাকে।
ছোটবড় হওয়ার কারণে মূল্যের মাঝেও তারতম্য
হয়। আর আমি জানি যে, যেসব পণ্য গণনা করে
বিক্রি করা হয় তা যদি পরস্পরে ছোটবড় হওয়ার
কারণে তার মূল্যেও তারতম্য হয় তাহলে তাতে
আগাম বিক্রি সহীহ হয় না। তাহলে সুপারির মধ্যেও
কি আগাম বিক্রি সহীহ হবে না?
উল্লেখ্য, সুপারি গণনা করেই বিক্রি করা হয়।
কারণে যেহেতু তার মূল্যের মধ্যেও তারতম্য হয়ে থাকে তাই এক্ষেত্রে ছোটবড় কোন
ধরনের এবং কোন মানের সুপারি দিবে তা চুক্তির
সময়ই নির্ধারণ করে নিতে হবে। তাহলে প্রশ্নোক্ত লেনদেনটি সহীহ হবে। কিন্তু
যদি সুপারির মান ও ধরন উল্লেখ করা না হয় তাহলে এ
চুক্তি সহীহ হবে না। কারণ আগাম ক্রয় চুক্তিতে
পণ্যের গুণগত মান একেবারে স্পষ্ট হওয়া শর্ত।
যেন পরবর্তীতে পণ্য আদান-প্রদানের সময় এ নিয়ে কোনো বিবাদের আশঙ্কা না থাকে। -ফাতহুল কাদীর ৬/২০৮, ৬/২২১; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৫৬, ১৬০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২১১; শরহুল মাজাল্লাহ ২/৩৮৯
ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন লাইব্রেরির মাঝে এভাবে চুক্তি হয়ে থাকে...
এভাবে চুক্তি হয়ে থাকে যে, ঢাকার লাইব্রেরি
মালিক চট্টগ্রামের লাইব্রেরি মালিককে বলে,
প্রেস থেকে বই ছেপে আসলে আপনাকে ৪০% কমিশনে বই দিব। এখন আমাকে বইয়ের অগ্রিম মূল্য দিয়ে দেন। তখন চট্টগ্রামের
লাইব্রেরির মালিকগণ বইয়ের অগ্রিম মূল্য দিয়ে
থাকে।
এক্ষেত্রে আরো একটি লেনদেন হয়ে
থাকে। তা এই যে, চট্টগ্রামের লাইব্রেরি মালিকগণ
বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে এই বলে টাকা নিয়ে থাকে
যে, ঢাকায় অমুক লাইব্রেরি থেকে ৪০% কমিশনে বই কিনতে চাচ্ছি। এখন আমাকে বইয়ের অগ্রিম মূল্য দিতে হচ্ছে। আপনি আমাকে টাকা দেন যেন আমি বইয়ের অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করতে পারি। বই কেনার পর আপনার টাকার সাথে
১০% কমিশন পরিমাণ অতিরিক্ত টাকা আপনাকে দিব।
এখন আমার প্রশ্ন হল, উল্লেখিত লেনদেন দুটি শরীয়তসম্মত কি না? যদি শরীয়তসম্মত না হয় তাহলে কিভাবে শরীয়তসম্মত হবে?
মালিকের উক্ত চুক্তিটি বাই সালাম অর্থাৎ আগাম ক্রয়
লেনদেনের অন্তর্ভুক্ত। তাই চুক্তিটি সহীহভাবে করার জন্য বইয়ের পুরো মূল্য চুক্তির সময়ই দিয়ে দিতে হবে এবং বইয়ের
মান, পরিমাণ ও ধরন এবং বই হস্তান্তরের তারিখ চুক্তির
সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে। তাহলে এ লেনদেন জায়েয হবে। মোটকথা বাই সালামের যাবতীয় শর্ত এক্ষেত্রে পাওয়া যেতে হবে।
কিন্তু এ চুক্তির ক্ষেত্রে ক্রেতার জন্য কারো
থেকে এ ভিত্তিতে টাকা নেওয়া জায়েয হবে না যে, তাকে এর বিনিময়ে প্রাপ্ত বইয়ের ১০% বা
কিছু কমিশন দেওয়া হবে। কেননা কমিশন দেওয়ার
শর্তে কারো থেকে টাকা নেওয়া সুদী লোনের অন্তর্ভুক্ত, যা সম্পূর্ণ হারাম। উপরোক্ত পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে ক্রেতা কারো থেকে বিনিয়োগ নিতে চাইলে তাকে বই ক্রয়ে শরিক করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে
উভয়ে নিজ নিজ মূলধন অনুযায়ী বইয়ের মালিক
হবে। বই হস্তগত হওয়ার পর তা বিক্রি করে অর্জিত
লাভ তারা চুক্তি অনুযায়ী ভাগ করে নিবেন। আর
লোকসান হলে তা মূলধনের অনুপাতে ভাগ
হবে।
উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে শরিক নিজের অংশ অপর শরিককে বিক্রি করে দিতে পারবে। তবে
এই ক্রয়-বিক্রয় অবশ্যই বই হস্তগত করার পর,
হতে হবে।
-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/১২৪; আদ্দুররুল মুখতার
৫/২১৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১৭৮; আলবাহরুর রায়েক
৬/১৬০; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ :
১৩৬৭, ১৩৬৯
ছেলে মেয়েরা যতদিন পিতার সাথে একই সংসারে থাকে ততদিন ছেলেদের...
হবে।
-রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৫; মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়াহ, মাদ্দাহ : ১৩৯৮; ফাতাওয়া খায়রিয়া ২/৯২; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/৩২০
একটি ব্যবসার ১ম ব্যক্তি মূলধন বিনিয়োগকারী এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি তার...
ক্রয়বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যাতায়াত ভাড়া, থাকা-
খাওয়ার বাস্তব খরচাদি গ্রহণ করতে পারবে এবং এ ধরনের খরচ পরিশোধের পরই ব্যবসার লাভ-লোকসানের হিসাব হবে। উলেস্নখ্য যে, ব্যবসা পরিচালনাকারীর নিকট পূর্ব নির্ধারিত লভ্যাংশ যদি কম মনে হয় তাহলে উভয় পক্ষের
সম্মতি সাপেক্ষে ভবিষ্যতের জন্য লভ্যাংশের
হার পরিবর্তন করা যাবে।- কিতাবুল আছল ৪/২৯১; মাজাল্লা মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী ১৩/৩/২৯৪; আলমাআইরুশ শরইয়াহ ২৪০, ২৪২, ২৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১২৭;
গত ছয় মাস আগে আমি এক ব্যক্তিকে তার চিকিৎসার জন্য...
সে এখন
টাকা পরিশোধে গড়িমসি করছে। বারবার তাগাদা দেওয়ার পর সে আমাকে বলে, ভাইজান! আমার তো চাকরি শেষ, তাই একটা ব্যবসা করার ইচ্ছা করছি। আপনার টাকাটা আমাকে মূলধন হিসাবে দেন, অর্ধেক লাভ আপনাকে দিব। আমি জানতে চাচ্ছি যে, তার প্রস্তাবমত ব্যবসা করা জায়েয
হবে কি?
সাথে ঐ
টাকা দ্বারা ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমে তা উসূল করতে হবে এরপর তা ব্যবসার জন্য দেওয়া যাবে। -আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৪; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/৩৩০; আলমাআঈরুশ শরইয়্যাহ ২৪০, ২৪৯
বিদেশে অনেকে ব্যাংক থেকে লোন নেয়। নেওয়ার সময় ব্যাংক কিছু...
এবং লোন
গ্রহীতা টাকা না দিলে ইন্সুরেন্স কোম্পানি তা পরিশোধ করে দিবে- এমন ব্যবস্থা থাকলেও লোন গ্রহীতার জন্য কোনো অবস্থায়ই লোনের টাকা ফেরত না দেওয়া জায়েয হবে না। সর্বাবস্থায় লোনের টাকা ফেরত দেওয়া তার জন্য জরুরি। এ টাকা ফেরত না দিলে অন্যের হক আত্মসাৎ করার গুনাহ হবে। প্রকাশ থাকে যে, সুদি লোন যেমন হারাম তেমনি ইন্সুরেন্সও হারাম। এতে সুদ ও জুয়া দুটিই রয়েছে। কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে সুদ ও জুয়ার বিষয়ে কঠোর ধমকি এসেছে। আর সুদের মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক কিছু সাময়িক ফায়েদা দেখা গেলেও এতে রয়েছে চরম বেবরকতি ও খোদায়ী অভিশাপ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদকা বৃদ্ধি করেন। (সূরা : বাকারা : ২৭৬) তাই অনতিবিলম্বে সকল সুদি কারবার নিষ্পত্তি করা এবং এ থেকে খালেস দিলে তাওবা করা জরুরি। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০০৪৬
গত ছয় মাস আগে আমি এক ব্যক্তিকে তার চিকিৎসার জন্য...
হবে কি?
সাথে ঐ
টাকা দ্বারা ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমে তা উসূল
করতে হবে এরপর তা ব্যবসার জন্য দেওয়া যাবে। -আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৩; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৪; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ৪/৩৩০; আলমাআঈরুশ শরইয়্যাহ ২৪০, ২৪৯
একটি ব্যবসার ১ম ব্যক্তি মূলধন বিনিয়োগকারী এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি তার...
ক্রয়বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে যাতায়াত ভাড়া,
থাকা-খাওয়ার বাস্তব খরচাদি গ্রহণ করতে পারবে এবং এ ধরনের খরচ পরিশোধের পরই ব্যবসার লাভ-লোকসানের হিসাব হবে। উলেস্নখ্য যে, ব্যবসা পরিচালনাকারীর নিকট পূর্ব নির্ধারিত লভ্যাংশ যদি কম মনে হয় তাহলে উভয় পক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে ভবিষ্যতের জন্য লভ্যাংশের হার পরিবর্তন করা যাবে।- কিতাবুল আছল ৪/২৯১; মাজাল্লা মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী ১৩/৩/২৯৪; আলমাআইরুশ শরইয়াহ ২৪০, ২৪২, ২৫১; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/১২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২৮৭; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯
এক লোকের ঘরে অনেক ধান আছে। সে চার মাস পর...
কেননা ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তির সময়ই পণ্যের
মূল্য নির্ধারণ করে নেওয়া জরুরি। তাই কারবারটি জায়েযভাবে করতে চাইলে ধান
দেওয়ার আগেই চুক্তির সময় মূল্য নির্ধারণ
করে নিতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৫৫; ফাতহুল কাদীর ৫/৪৬৭; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ২৩৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৭৪; রদ্দুল মুহতার
৪/৫২৯
আমি একটি ফ্যাক্টরিতে চাকুরি করি। আমার দায়িত্ব হল ফ্যাক্টরির যাবতীয়...
এক ব্যক্তি আমার থেকে দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে এবং...
যদি তার
অনুমতি ছাড়া ভাড়া দিয়ে থাকেন তাহলে এ থেকে উপার্জিত সকল অর্থ আপনাকে সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মোটর সাইকেলের মালিকও তা ভোগ করতে পারবে না। -রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৫৯৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৫৬২- ৫৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/৮৯