ফতোয়া: মুফতি মেরাজ তাহসিন

ফতোয়া নং: ৫৬৪৩
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়:

কিছু দিন আগে এক দেশে আইন করা হয় যে, মহিলারা...

প্রশ্ন

কিছু দিন আগে এক দেশে আইন করা হয় যে, মহিলারা বোরকা পরতে পারবে, তবে চেহারা ঢাকতে পারবে না। তাদেরকে মুখমন্ডল খোলা রাখতে হবে। এ বিষয়ে একজন বললেন, এতে শরীয়ত-বিরোধী কিছু নেই। কারণ মহিলাদের চেহারা ঢাকতে হবে এমন কথা কুরআন-হাদীসে নেই। তাই চেহারার পর্দা জরুরি নয়। তার এ কথা কতটুকু সত্য? দলীল-প্রমাণসহ বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর

ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। পরপুরুষের সামনে নারীকে তার চেহারা ঢেকে রাখতে হবে। এটি কুরআন-সুন্নাহর বিধান। উম্মাহাতুল মুমিনীন ও অন্যান্য সাহাবিয়ার আমল দ্বারাও তা প্রমাণিত। নিম্নে কয়েকটি দলীল উল্লেখ করা হল।

কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, হে নবী! আপনি বলুন, নিজের স্ত্রী-কন্যা ও মুমিনদের স্ত্রীগণকে, তারা যেন টেনে নেয় নিজেদের উপর তাদের চাদরের কিছু অংশ। (সূরা আহযাব : ৫৯)

এ আয়াতের তাফসীরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, আল্লাহ তাআলা মুমিনদের স্ত্রীগণকে আদেশ করেছেন, তারা যখন কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে চাদর টেনে নিজেদের চেহারা ঢেকে নেয়। এবং শুধু এক চোখ খোলা রাখে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৮২৪)

ইমাম জাসসাস রাহ. বলেন, এই আয়াতে যুবতী নারীদেরকে পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখার আদেশ করা হয়েছে। (আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৭২)

আরো দেখুন : তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৫৬; জামেউল বয়ান, তবারী ১০/৩৩১; তাফসীরে রূহুল মাআনী ২২/৮৮

আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. হজ্বের সফরের বিবরণ দিয়ে বলেন, আমরা ইহরাম অবস্থায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত। তারা আমাদের সামনে এলে নিজেদের চেহারার উপর ওড়না ঝুলিয়ে দিতাম। তারা অতিক্রম করে চলে যাওয়ার পর ওড়না সরিয়ে ফেলতাম। (সুনানে আবু দাউদ ২/৪৫৭)

আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. অন্য এক সফরের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, অতপর সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল আসসুলামী সকালে আমার অবস্থানস্থলে পৌঁছল। সে একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখে আমার নিকট এল এবং আমাকে চিনে ফেলল। কেননা, পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল। তখন সে জোরে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করল, যার শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সাথে সাথে আমি ওড়না দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত করে ফেলি। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৪৮৫০)

হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, আমরা পর পুরুষের সামনে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম। (মুসতাদরাকে হাকীম ২/১০৪)

আরো দেখুন : তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৮০৪; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৬৯; সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩২৪, ৪৭৫৭, ১৮৩৮; ফাতহুল বারী ২/৫০৫, ৮/৩৪৭; উমদাতুল কারী ৪/৩০৫; মাআরিফুস সুনান ৬/৯৮; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/২৬৮; মাজমুআতুল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া ২২/১০৯, ১১৪

মোটকথা, কুরআন-হাদীসের ভাষ্য এটাই যে, মহিলারা পরপুরুষের সামনে নিজেদের মুখমন্ডল আবৃত রাখবে। এটা পর্দারই অংশ।

প্রকাশ থাকে যে, কোনো কোনো দেশে নারীর মুখমন্ডল খোলা রাখার যে আইন করা হয়েছে তা এ কারণে করা হয়নি যে, ইসলামের দৃষ্টিতে চেহারার পর্দা নেই। বরং এ আইনের পিছনে ইসলামের প্রতি তাদের অব্যাহত বিদ্বেষ এবং মুসলমানদের কোনঠাসা করার প্রবণতাও কার্যকর। এ আইন তাদেরই কথিত মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সম্পূর্ণ বিরোধী। তাই এই আইন আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও ধিকৃত হয়েছে।

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
এ বিষয়ে আরো ফতোয়া:
এ বিভাতের বাকি সকল ফতোয়া এখানে পাবেন : বিভাগ সফর