ফতোয়া: মুফতি মেরাজ তাহসিন

ফতোয়া নং: ৫৫০৪
তারিখ: ২৭-নভেম্বর-২০১৭
বিষয়:

নিম্নে বর্ণিত ঘটনাটি সঠিক কি না জানতে চাই। একজন নবী...

প্রশ্ন

নিম্নে বর্ণিত ঘটনাটি সঠিক কি না জানতে চাই। একজন নবী তার কওমকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা সবাই পিপাসার্ত ছিল। আল্লাহ হুকুম দিলেন যে, সামনে যে নদী আছে কেউ যেন ঐ নদীর পানি তিন ঢোকের বেশি পান না করে। আর একেবারে পান না করলে আরো ভালো।

এরপর যারা আল্লাহর হুকুম মেনে পানি পান করেনি তারা জীবনে কখনো পিপাসিত হয়নি। আর যারা তিন ঢোক পান করেছে তাদের ঐ সময়ের পিপাসা মিটেছে। আর যারা বেশি পান করেছে তাদের ঐ সময়েও পিপাসা মিটেনি; বরং পানি পান করতে করতে তারা মারা গেছে।

উত্তর

মূল ঘটনাটি কুরআন মজীদে বর্ণিত হয়েছে। সূরা বাকারার ২৪৬ নং আয়াত থেকে ২৫২ নং আয়াত পর্যন্ত মোট : ৭টি আয়াতে ঘটনাটি উল্লেখ হয়েছে। তবে প্রশ্নে ঘটনাটি যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তা পুরোপুরি সহীহ নয়। ঘটনাটির বর্ণনা কুরআন মজীদে এভাবে এসেছে যে, (তরজমা) অতপর তালূত যখন সৈন্যদের নিয়ে রওনা হল, তখন সে (সৈন্যদেরকে) বলল, আল্লাহ একটি নদী দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন। যে ব্যক্তি সে নদীর পানি পান করবে সে আমার লোক নয়। আর যে তা আস্বাদন করবে না সে আমার লোক। অবশ্য কেউ নিজ হাত দ্বারা এক আঁজলা ভরে নিলে কোনো দোষ নেই। তারপর অল্পসংখ্যক লোক ছাড়া বাকি সকলে নদী থেকে (প্রচুর) পানি পান করল।

সুতরাং যখন সে (তালূত) এবং তাঁর সঙ্গের মুমিনরা নদীর ওপারে পৌঁছল তখন তারা (যারা তালূতের আদেশ মানেনি) বলতে লাগল, আজ জালূত ও তার সৈন্যদের সাথে লড়াই করার কোনো শক্তি আমাদের নেই। (কিন্তু) যাদের বিশ্বাস ছিল যে, তারা অবশ্যই আল্লাহর সঙ্গে গিয়ে মিলিত হবে, তারা বলল, এমন কত ছোট দলই না রয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুমে বড় দলের উপর জয়যুক্ত হয়েছে। আর আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন, যারা সবরের পরিচয় দেয়। (সূরা বাকারা : ২৪৯)

প্রশ্নে উল্লেখিত বিবরণ এবং কুরআন মজীদ ও তাফসীরগ্রন্থসমূহে বর্ণিত বিবরণে কয়েকটি পার্থক্য রয়েছে : ১. প্রশ্নে একজন নবীর ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ কুরআন মজীদে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম ‘তালূত’ বলা হয়েছে। তিনি বনী ইসরাঈলের বাদশাহ ছিলেন।

২. প্রশ্নে বলা হয়েছে, যারা পানি পান করেনি তারা সারা জীবন পিপাসিত হয়নি। যারা তিন ঢোক পান করেছে তাদের ঐ সময়ের পিপাসা মিটেছে। পক্ষান্তরে যারা বেশি পান করেছে তাদের ঐ সময়েও পিপাসা মিটেনি;বরং পানি পান করতে করতে তারা মারা গেছে। কুরআন মজীদ বা নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহে এভাবে বলা হয়নি। তাফসীরে শুধু এতটুকু আছে যে, যারা নিজ হাত দ্বারা এক আঁজলা ভরে পানি পান করেছে এতটুকু পানিই তাদের পিপাসা নিবারণ করেছে। কিন্তু যারা বেশি পান করেছে তাদের পিপাসা মিটেনি; বরং আরো বেড়েছে। সুতরাং এর চেয়ে বাড়িয়ে বলা উচিত নয়।-তাফসীরে কুরতুবী ৩/১৬৪, ১৬৬; তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৪৪৯, ৪৫২; তাফসীরে তাবারী ২/৬৩৩; তাফসীরে আবুস সাউদ ১/২৮৬, ২৯০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার
এ বিষয়ে আরো ফতোয়া:
এ বিভাতের বাকি সকল ফতোয়া এখানে পাবেন : বিভাগ কুরআন