ফতোয়া: মুফতি মেরাজ তাহসিন

ফতোয়া নং: ৪৯৪২
তারিখ: ২৭-জুলাই-২০১৭
বিষয়:

মু্ল্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করলে কি ফিতরা আদায় হবে না?

প্রশ্ন
হযরতজ্বী! আমাদের সমাজে কিছু সংখক লোক বলছে গম জব খিজুর ইত্যাদির মু্ল্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করলে নাকি আদায় হবে না ৷ অথচ আমরা সারা জীবন মুল্য দ্বারা ই আদায় করে আসছি ৷ এ বিষয়ে দলিল সহ জানালে উপকৃত হব৷
উত্তর
সদকাতুল ফিতর যেমনভাবে গম,জব, খিজুর, কিসমিস ইত্যাদি দ্বারা আদায় করা যায়, তেমনি তার মু্ল্য দ্বারাও আদায় করা যায় ৷ কারণ সদকাতুল ফিতরে নির্ধারিত বস্তু উদ্দেশ্য নয়৷ যেমন কুরবানীতে নির্দিষ্ট প্রানী উদ্দেশ্য৷ বরং খাদ্য উদ্দেশ্য ৷ কেননা আল্লাহ তায়ালা কফ্ফারা সম্পর্কে কুরআনে ইরশাদ করেন,
ﻣِﻦْﺃَﻭْﺳَﻂِ ﻣَﺎ ﺗُﻄْﻌِﻤُﻮﻥَ ﺃَﻫْﻠِﻴﻜُﻢ
অনুবাদ: যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও৷
সূরা মায়েদা, আয়াত:৮৯৷
আর খাদ্য যেমনভাবে উল্যেখিত বস্তুও হতে পারে অন্য বস্তুও হতে পারে৷
অন্যত্রে ইরশাদ করেছেন,
ﺧُﺬْ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟِﻬِﻢْ ﺻَﺪَﻗَﺔً ﺗُﻄَﻬِّﺮُﻫُﻢْ ﻭَﺗُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ ﺑِﻬَﺎ
অনুবাদ: তুমি তাদের ধন-সম্পদ হতে সাদাকাহ গ্রহণ কর, যার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশোধিত করে দেবে।
সূরা তওবা, আয়াত:১০৩৷
মাল বা ধন-সম্পদ দ্বারা শুধু গম, খিজুর ই নির্দিষ্ট নয়৷ বরং স্বর্ন-রুপা, টাকা পয়সা মাল, ধন-সম্পদ৷
হাদীস শরীফে নবী করীম সাঃ ইরশাদ করেছেন, ﺃﻏﻨﻮﻫﻢ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﺴﺄﻟﺔ ﻓﻲ ﻣﺜﻞ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻴﻮﻡ
এই দিনে (ঈদুল ফিতর) তাদেরকে অন্যের নিকট হাত পাতা থেকে অমুখাপেক্ষি করে দাও৷
সুনানে দারাকুতনি, ২/১৫২; নসবুর রায়া, ২/৪৩১৷
আর মানুষ তখনি অমুখাপেক্ষি হবে যখন তাকে এমন জিনিষ দেয়া হবে যা দিয়ে তার সরল প্রকার প্রয়োজন পুরন করতে পারবে ৷ যেমন টাকা-পয়সা ৷ টাকা-পয়সা দিয়ে মানুষ তার সবধরনের প্রয়োজন পুরন করতে পারে৷ খাদ্যের প্রয়জোন হলে খাদ্য কিনে খেতে পারবে৷ পোশাকের প্রয়োজন হলে, পোশাক কিনতে পারবে৷ বাসস্থানের প্রয়োজন হলে তারও ব্যবস্থা করতে পারবে৷
আতা রহঃ উমর রাঃ থেকে বর্ণনা করেন,
ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀٍ ؛ ﺃَﻥَّ ﻋُﻤَﺮَ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺄْﺧُﺬُ ﺍﻟْﻌُﺮُﻭﺽَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻮَﺭِﻕِ ﻭَﻏَﻴْﺮِﻫَﺎ
অনুবাদ: উমর রাঃ সদকার ক্ষেত্রে টাকা ইত্যাদি গ্রহণ করতেন।
মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস:১০৫৩৯৷
প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হাসান বসরী রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন:
ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺃﻥ ﺗﻌﻄﻰ ﺍﻟﺪﺭﺍﻫﻢ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ
অনুবাদ: সদকায়ে ফিতর দিরহাম দ্বারা প্রদান করতে কোন সমস্যা নেই।
মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১০৪৭১৷
যোবায়ের রঃ থেকে বর্নিত তিনি বলেন, আমি আবু ইসহাককে বলতে শুনেছি,
ﺃﺩﺭﻛﺘﻬﻢ ﻭﻫﻢ ﻳﻌﻄﻮﻥ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺍﻟﺪﺭﺍﻫﻢ ﺑﻘﻴﻤﺔ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ
অনুবাদ: আমি সাহাবায়ে কেরামকে পেয়েছি, তারা রমযানের সদকাতে খাদ্যের মূল্য পরিমাণ দিরহাম আদায় করেছেন।
মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস: ১০৪৭২৷
অতএব গম, জব খিজুর ইত্যাদি দিয়েই সদকা আদায় করা জরুরী নয়৷ তার মুল্য দিয়েও আদায় করা যাবে ৷
অবশ্য হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাঃ যেসব বস্তু নির্ধারন করেছেন তা শুধু তাদের সহজতার জন্য ছিল৷ নির্দিষ্ট করার লক্ষে নয় ৷ তবে যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাঃ গম খেজুর ইত্যাদির পরিমান নির্ধারন করেছেন ৷ মু্ল্যের কোনো পরিমান নির্ধারন করা হয় নি৷ তাই মু্ল্যের পরিমান নির্ধারন করার ক্ষেত্রে সেসব বস্তু দ্বারা নির্ধারন করতে হবে, যেসব বস্তু দ্বারা নবীজী সাঃ নির্ধারন করেছেন৷ যেমন গম, আটা জব খেজুর ইত্যাদি৷
-বাদায়েউস সানায়ে,২/২০৫; আল বাহরুর রায়েক, ২/৪৪৩; রদ্দুল মুহতার, ২/২৮৬; ফতহুল কদীর, ২/২১৯৷ ফতওয়া মাহমুদীয়া, ১৫/১৭১; ফতওয়া রহীমীয়া, ৬/৩০৬৷
উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
এ বিষয়ে আরো ফতোয়া:
এ বিভাতের বাকি সকল ফতোয়া এখানে পাবেন : বিভাগ কুরবানী