ফতোয়া: মুফতি মেরাজ তাহসিন

ফতোয়া নং: ৪৭৯৫
তারিখ: ৮-ফেব্রুয়ারি-২০১৭
বিষয়:

শরীয়তে উমরী কাযা আদায় করার বিধান ৷

প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় কিছু লোক বলে উমরি কাযা বলতে কিছু নেই৷ এগুলো ভিত্তিহীন ৷ তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা অতীত জীবনের সব গুনাহ মাফ করে দেন। অতীতের নামাযের গুনাহও মাফ করে দেন৷ উমরী কাযায় সময় ব্যয় না করে নফল ও তাহাজ্জুদ বেশি বেশি করে পড়া উচিত। কারণ সহীহ হাদীসে আছে, ‘কারো ফরয নামায কম পড়ে গেলে নফল দ্বারা তা পূরণ করা হবে।- আবু দাউদ’৷
মুফতী সাহেবের নিকট এ বিষয়ে শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধান জানতে চাই।
উত্তর
ইসলামে ঈমানের পরই নামাযের স্থান এবং তা ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ ও নিদর্শন। পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় করা ফরয। কখনো কোনো ওয়াক্তের ফরয নামায ছুটে গেলে কিংবা দীর্ঘকাল অবহেলাবশত নামায না পড়লে পরবর্তীতে এর কাযা আদায় করতে হবে। এ বিষয়টি সহীহ হাদীস,
আছার ও ইজমায় দ্বারা প্রমাণিত। হাদীস শরীফে এসেছে-
ﻣﻦ ﻧﺴﻲ ﺻﻼﺓ ﺃﻭ ﻧﺎﻡ ﻋﻨﻬﺎ ﻓﻜﻔﺎﺭﺗﻬﺎ ﺃﻥ ﻳﺼﻠﻴﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺫﻛﺮﻫﺎ
যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হল, যখন নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করা।
সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৭৬
উক্ত হাদীসে ﻧﺴﻲ শব্দটি লক্ষ্যণীয়। আরবী ভাষায় এটি যেমনিভাবে ‘ভুলে যাওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয় তদ্রূপ কোনো কাজ অবহেলা করে ছেড়ে দেওয়ার অর্থেও
ব্যবহৃত হয়।
অতএব কাযা আদায়ের বিধানটি শুধু ঘুম ও বিস্মৃতি এই দুই অবস্থার সাথে সীমাবদ্ধ করা যাবে না। বরং অবহেলাবশত ছেড়ে দিলেও কাযা জরুরি।
অন্য হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি নামায রেখে ঘুমিয়ে গেছে বা নামায থেকে গাফেল রয়েছে তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এর কাফফারা হল যখন তার নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করে নেওয়া।
সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬১৪
অন্য বর্ণনায় এসেছে, যখন তোমাদের কেউ নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকে বা নামায থেকে গাফেল থাকে তাহলে যখন তার বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ
করেছেন, আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর। সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬৮৪, ৩১৬৷
এসব হাদীসসমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোনো নামায সময়মতো আদায় না করলে পরবর্তীতে তা আদায় করা
অপরিহার্য। নামাযটি ভুলক্রমে কাযা হোক, নিদ্রার কারণে হোক অথবা গাফলতি বা অবহেলার কারণে হোক- সর্বাবস্থায় কাযা আদায় করতে হবে।
এ বিষয়ে ইজমায়ে উম্মত একটি গুরুত্বপুর্ন দলিল। চার মাযহাবে চার ইমামসহ প্রায় সকল মুজতাহিদ এ বিষয়ে একমত যে, ফরয নামায নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে না পারলে পরে হলেও তা আদায় করতে হবে। ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দেওয়া কিংবা ওজরবশত ছেড়ে দেওয়া উভয় ক্ষেত্রের একই বিধান।
-আল ইসতিযকার ১/৩০২
কুয়েতের ইসলামী বিষয় ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ইফতা বোর্ডের সম্মিলিত ফাতাওয়াও এটিই।
মাজমুয়াতুল ফাতাওয়া আশশারইয়্যাহ ১/২০৪
সুতরাং উমরী কাযা ভিত্তিহীন, কাযা আদায় না করে শুধু তাওবাই যথেষ্ট এসব কথা মোটেও সহীহ নয়, সম্পুর্ন ভিত্তিহীন মনগড়া । একথাও সহীহ নয় যে, উমরী কাযায় সময় ব্যয় না করে নফল ও তাহাজ্জুদ আদায় করা উচিত। বরং নফল নামাযের চেয়ে উমরী কাযা পড়া উত্তম ৷
তাদের স্বপক্ষে যে দলীল পেশ করা হয়েছে তাও ঠিক নয়। কারণ সুনানে আবু দাউদের হাদীসটির মূল হল-
ﺇﻥ ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﻳﺤﺎﺳﺐ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻣﻦ ﺃﻋﻤﺎﻟﻬﻢ
ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻗﺎﻝ ﻳﻘﻮﻝ ﺭﺑﻨﺎ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻟﻤﻼﺋﻜﺘﻪ ﻭﻫﻮ ﺃﻋﻠﻢ ﺍﻧﻈﺮﻭﻫﺎ
ﻓﻲ ﺻﻼﺓ ﻋﺒﺪﻱ ﺃﺗﻤﻬﺎ ﺃﻡ ﻧﻘﺼﻬﺎ؟ ﻓﺈﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﺗﺎﻣﺔ ﻛﺘﺒﺖ ﻟﻪ
ﺗﺎﻣﺔ ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﻧﺘﻘﺺ ﻣﻨﻬﺎ ﺷﻴﺌﺎ ﻗﺎﻝ ﺍﻧﻈﺮﻭﺍ ﻫﻞ ﻟﻌﺒﺪﻱ ﻣﻦ
ﺗﻄﻮﻉ؟ ﻓﺈﻥ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺗﻄﻮﻉ ﻗﺎﻝ ﺃﺗﻤﻮﺍ ﻟﻌﺒﺪﻱ ﻓﺮﻳﻀﺔ ﻣﻦ
ﺗﻄﻮﻋﻪ
কেয়ামতের দিন মানুষের সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে তা হল নামায। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, তোমরা আমার বান্দার ফরয নাময দেখো। সে পূর্ণরূপে তা আদায় করেছে, নাকি তা আদায়ে কোনো ত্রুটি করেছে? যদি পূর্ণরূপে আদায় করে থাকে তবে তার জন্য পূর্ণ নামাযের ছওয়াব লেখা হবে। আর আদায়ে কোনো ত্রুটি করে থাকলে আল্লাহ
তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখ, আমার বান্দার নফল নামায আছে কি না? যদি থাকে তবে এর দ্বারা তার ফরয নামায আদায়ে যে ত্রুটি হয়েছে তা পূর্ণ
করে দাও। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৮৬৪ ৷
উক্ত হাদীসে ‘কারো ফরয নামায কম পড়ে গেলে নফল দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে’- যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ হয়েছে-এ কথা নেই; রবং এতে রয়েছে, আদায়কৃত নামাযে ত্রুটির বিষয়।
ফয়যুল কাদীর ৩/৮৭ ৷ মুফতী মেরাজ তাহসীন মুফতী জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম ব্রাক্ষণবাড়িয়া ৷

উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মেরাজ তাহসিন
এ বিষয়ে আরো ফতোয়া:
এ বিভাতের বাকি সকল ফতোয়া এখানে পাবেন : বিভাগ আজান-নামাজ